মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন এবং কোশচক্র – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

জীবনের প্রবাহমানতা হল জীববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই অধ্যায়ে আমরা জীবজগতে বংশগতির ধারণা, বংশগতির বিভিন্ন প্রকার, বংশগতির নিয়ন্ত্রণকারী কারণগুলি এবং বংশগতির গুরুত্ব সম্পর্কে জানব।

Table of Contents

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন এবং কোশচক্র

ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অঙ্গসংস্থানিক বা ভৌত গঠন সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোমের বহির্গঠন উল্লেখ করো।

ক্রোমোজোম হল ডিএনএ এবং প্রোটিনের সমন্বয় দ্বারা গঠিত একটি বৈশিষ্ট্যযুক্ত অঙ্কুরানুকূল কার্যকর একক।

ক্রোমোজোমের ভৌত গঠন

কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমের বিভিন্ন অংশ সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। এই দশায় ক্রোমোজোমের যেসব অংশ দেখা যায়, সেগুলি — 1. ক্রোমাটিড, 2. মুখ্য খাঁজ ও সেন্ট্রোমিয়ার, 3. গৌণ খাঁজ, 4. স্যাটেলাইট এবং 5. টেলোমিয়ার।

ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অঙ্গসংস্থানিক বা ভৌত গঠন সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোমের বহির্গঠন উল্লেখ করো।
  • ক্রোমাটিড কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমে লম্বালম্বিভাবে (অনুদৈর্ঘ্যাভাবে) যে দুটি সময় (সমতল) অংশ দেখা যায়, তাদের প্রতিটিকে ক্রোমাটিড বলে। একই ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড দুটিকে বলে সিস্টার কোমাটিয় সিস্টার ক্রোমাটিড দুটি পরস্পর সেন্ট্রোমিয়ার অংশে যুক্ত থাকে। প্রতিটি ক্রোমাটিতে একটি DNA অণু কুণ্ডলিত হয়ে প্রোটিনসহ অবস্থান করে। প্রতিটি ক্রোমাটিড যে সুক্ষ্ম তন্তু দ্বারা গঠিত, তাদের ক্রোমোনিমা বলে। প্রতিটি ক্রোমাটিড এক বা একাধিক ক্রোমোনিমাটা দ্বারা গঠিত (একবচনে ক্রোমোনিমাটা বান ক্রোমোনিমা)। ক্রোমোনিমা সূত্রে পুঁতির মতো সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত গোলাকার সংগঠনকে ক্রোমোমিয়ার বলে।
  • মুখ্য খাঁজ ও সেন্ট্রোমিয়ার প্রত্যেক ক্রোমোজোমে একটি নির্দিষ্ট রক্ষিত সংকোচন স্থান থাকে, তাকে মুখ্য ৰাজ বা প্রাথমিক খাঁজ বলে। ক্রোমোজোে মুখ্য খাঁজ অংশে অবস্থিত যে চাকতির মতো ঘন অংশটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড দুটিকে পরস্পর যুক্ত রাখে ও কোশ বিভাজনকালে ক্রোমোজোনকে বেমওস্তুর সঙ্গে যুক্ত রাখে, তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে। সেন্ট্রোমিয়ারের DNA সাধারণত নিষ্ক্রিয় প্রকৃতির হয়।
  • গৌণ খাঁজ অনেক সময় প্রাথমিক খাঁজ ছাড়াও ক্রোমোজোমে অপর এক বা একাধিক খাঁজ দেখা যায়। একে গৌণ খাঁজ বলে। এই অংশে নিউক্লিওলাস যুক্ত থাকে। এই অংশটি কোশ বিভাজনের টেলোফেজ দশায় নিউক্লি পুনর্গঠনে সাহায্য করে বলে একে নিউক্লিওলাস সংগঠক অঞ্চল বা নিউক্লিওলার অর্গানাইজার রিজিওন (NOR) বলে। এই অংশে কাইনেটোকোর থাকে না।
  • স্যাটেলাইট গৌণ খাঁজ পরবর্তী ক্রোমোজোমীয় অংশকে স্যাটেলাইট বা SAT বডি বলে। এই অংশটি দেখতে অনেকটা বোতামের মধ্যে হয়।স্যাটেলাইটযুক্ত ক্রোমোজোমকে স্যাট ক্রোমোজোম বলে।
  • টেলোমিয়ার ক্রোমোজোমের প্রান্তদুটিকে টেলোমিয়ার বলে। এটি ক্রোমোজোমের নিষ্ক্রিয় অংশ। কোশের অধিভাজন দশায় DNA প্রতিলিপি গঠনে টেলোমিয়ার সাহায্য করে। এ ছাড়া নিকটবর্তী দুটি ক্রোমোজোমের প্রান্ত জুড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং প্রয়োজনমতো কোশের বার্ধক্য ও মৃত্যু ঘটায়।

সেস্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ করো ও বিভিন্ন প্রকারের বর্ণনা দাও।

সেস্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ করে প্রতিটি প্রকারের বর্ণনা নিম্নে আলোচনা করা হলো।

ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ ও তার বর্ণনা

সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোম চার প্রকার, যথা – 1. টেনোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম, 2. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম, 3. সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম এবং 4.মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম।

সেস্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ করো ও বিভিন্ন প্রকারের বর্ণনা দাও।
  • টেলোনেস্টিক ক্রোমোজোম যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের একেবারে প্রান্তে অবস্থান করে তাকে টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। অ্যানাফেজীয় চলনকালে এই ক্রোমোজোম দেখতে ‘I’ আকৃতি মতো হয়।
  • অ্যাক্রোসেট্রিক ক্রোমোজোম যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মধ্যবিন্দু থেকে দূরে কিন্তু কোনো একটি প্রান্তের কাছাকাছি থাকে তাদের অ্যাক্রোসেট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এর ফলে ক্রোমোজোমের একটি বাহু বেশ বড়ো এবং অন্য বাহুটি বেশ ছোটো হয়। অ্যানাফেজীয় চলনকালে এই ধরনের ক্রোমোজোম দেখতে অনেকটা ‘J’ আকৃতির মতো হয়।
  • সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোন যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মধ্যবিন্দু থেকে সামান্য দূরে অবস্থান করে এবং এর ফলে ক্রোমোজোমের বাহুদুটি পরস্পর অসমান হয় তাকে সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। অ্যানাফেজীয় চলনকালে এই ধরনের ক্রোমোজোম দেখতে অনেকটা ‘L’ আকৃতির মতো হয়।
  • মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের প্রায় মাঝখানে অবস্থান করে এবং এর ফলে ক্রোমোজোমের বাহুদুটি পরস্পর প্রায় সমান হয়, তাকে মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। অ্যানাফেজীয় চলনকালে এই প্রকার ক্রোমোজোম দেখতে অনেকটা ‘V’ আকৃতির মতো হয়।

ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে আলোচনা করো।

ক্রোমোজোম হল ডিএনএ এবং প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত অঙ্কুরানুকূল কার্যকর একক, যা জীবন বৈশিষ্ট্য এবং বৃদ্ধিশীলতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করে।

ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন

ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোম রাসায়নিকভাবে নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA ও RNA), প্রোটিন (ক্ষারীয় এবং অম্লিক) এবং ধাতর আয়ন, যেমন-ক্যালশিয়াম (Ca2+), ম্যাগনেশিয়াম (Mg2+) দ্বারা গঠিত। সমস্ত ইউক্যারিওটিক কোশে ক্রোমোজোমের 90% হল DNA ও ক্ষারীয় (হিস্টোন) প্রোটিন, বাকি 10% হল RNA ও অম্লিক প্রোটিন (নন-হিস্টোন) থাকে।

ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে আলোচনা করো।
  • ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (DNA) ডি- অক্সিরাইবোজ শর্করা, ফসফেট ও নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষার নির্মিত স্বপ্রজননক্ষম যে দ্বিতঘ্নী নিউক্লিক অ্যাসিড অণু কোশীয় কাজের নিয়ন্ত্রক এবং বংশগতি বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক, তাকে DNA বলে। দ্বিতন্ত্রী DNA অণু লোহার প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো বা হেলিক্সের আকৃতির হয়। এই সিঁড়ির হাতল শর্করা দ্বারা নির্মিত ও ধাপগুলি নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষার দ্বারা গঠিত। এই ক্ষার আবার দুই প্রকার, যথা – 1. পিউরিন — অ্যাডেনিন 1. ও গুয়ানিন (G) এবং 2. পিরিমিডিন — থাইমিন (T) ও সাইটোসিন (C)। অ্যাডেনিন, থাইমিনের সাথে ও গুয়ানিন, সাইটোসিনের সাথে যথাক্রমে দুটি ও তিনটি হাইড্রোজেন বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে।
  • রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (RNA) DNA থেকে সংশ্লেষিত রাইবোজ শর্করা, ফসফেট ও নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষার নিয়ে গঠিত একতন্ত্রী গঠনকে RNA বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বলে। প্রধানত প্রোটিন সংশ্লেষের মাধ্যমে এটি কোশের জৈবনিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। RNA-এর ক্ষারগুলি DNA-এর মতোই, কেবল RNA-তে থাইমিনের (T) পরিবর্তে ইউরাসিল (U) নামক পিরিমিডিন থাকে।
  • হিস্টোন ও নন-হিস্টোন প্রোটিন ক্রোমোজোমে অবস্থিত ক্ষারীয় প্রোটিনগুলিকে হিস্টোন বলে। ক্ষারীয় প্রকৃতির হওয়ায় এরা সহজেই আঙ্গিক DNA-এর সাথে যুক্ত হতে পারে। এই প্রোটিন পাঁচ প্রকার, যথা H1, H2A, H2B, H3, এবং H4। এ ছাড়া ক্রোমোজোমে কিছু আম্লিক প্রোটিন থাকে যাদের নন-হিস্টোন প্রোটিন বলে। এগুলি মানুষের ক্রোমোজোমে স্বল্পমাত্রায় ও মাছের ক্রোমোজোমে বেশি পাওয়া যায়।

মাইটোসিসের বিভিন্ন দশার নাম ও প্রত্যেক দশার মুখ্য ঘটনাক্রম উল্লেখ করো।

মাইটোসিস হল একটি সেল ডিভিশন প্রক্রিয়া যা সেলের ক্রোমোজোমে একটি নিখুঁত উন্নয়ন ও বিতরণ করে। এটি দুটি ধাপে বিভক্ত হয় – প্রথমে ক্রোমোজোম নিখুঁত হয় এবং তারপর দুটি নিখুঁত ক্রোমোজোম বিভক্ত হয়।

মাইটোসিসের বিভিন্ন দশা ও মুখ্য ঘটনাক্রম

মাইটোসিসের প্রধান দুটি পর্যায়, যথা — ক্যারিওকাইনেসিস বা নিউক্লিয়াসের বিভাজন এবং সাইটোকাইনেসিস বা সাইটোপ্লাজমের বিভাজন। ক্যারিওকাইনেসিস আবার প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ নামক চারটি দশায় বিভক্ত। নীচে এগুলির মুখ্য ঘটনাক্রম সারণির মাধ্যমে উল্লেখ করা হল —

মাইটোসিসের দশার নামমুখ্য ঘটনাক্রম
প্রোফেজ (প্রথম দশা)1. ক্রোমাটিন তন্তুগুলি ঘনীভূত ও স্থূল হয় এবং ক্রোমোজোম গঠন রূপে আবির্ভূত হয়।
2. ক্রোমোজোমগুলি একতন্ত্রী থেকে দ্বিতন্ত্রী অবস্থাপ্রাপ্ত হয়।
3. এই দশার শেষের দিকে নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের অবলুপ্তি ঘটে।
মেটাফেজ (দ্বিতীয় দশা)1. এই দশায় বেম ও বেমতত্ত্ব গঠিত হয়। ক্রোমোজোমগুলি ছোটো, স্ফীত ও সর্বাধিক স্পষ্ট হয়।
2. এই দশায় বেমের বিষুব অঞ্চলে ক্রোমোজোমগুলি পরপর আড়াআড়িভাবে সজ্জিত হয়ে মেটাফেজ প্লেট বা ইকুয়েটোরিয়াল প্লেট গঠন করে।
3. প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারে অবস্থিত কাইনেটোকোর নামক বিশেষ গঠন বেমতন্তুর সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এই বেমতন্তুগুলিকে ক্রোমোজোমাল বেমতন্তু বলে।
অ্যানাফেজ (তৃতীয় দশা)1. এই দশায় সেন্ট্রোমিয়ার সম্পূর্ণভাবে দ্বি-বিভাজিত হয়।
2. এক – একটি ক্রোমাটিড একতন্ত্রী অপত্য ক্রোমোজোমে রূপান্তরিত হয়।
3. অপত্য ক্রোমোজোমদ্বয় বিপরীত মেরুর দিকে যাত্রা শুরু করে। একে অ্যানাফেজীয় চলন বা ক্রোমোজোমীয় চলন বলা হয়।
টেলোফেজ(চতুর্থ তথা শেষ দশা)1. এই দশায় অপত্য ক্রোমোজোমগুলির ঘনীভবন দূর হয় এবং পাক খুলে গিয়ে পুনরায় নিউক্লীয় জালিকা গঠন করে।
2. এই দশায় নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে।
3. এই দশায় নিউক্লীয় পর্দার আবির্ভাব ও অপত্য ক্রোমোজোমকে বেষ্টন করে দুটি পূর্ণাঙ্গ নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
সাইটোকাইনেসিস1. এই দশায় সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়।
2. দুটি নিউক্লিয়াসযুক্ত মাতৃকোশ থেকে একটি করে অপত্য নিউক্লিয়াসযুক্ত দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়।
3. উদ্ভিদকোশে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট গঠনের মাধ্যমে ও প্রাণীকোশে খাঁজ সৃষ্টি বা ক্লিভেজ বা ফারোয়িং – এর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের প্রোফেজ দশার বর্ণনা দাও।

মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের প্রথম প্রোফেজ হল প্রোফেজ এর প্রথম দশা যাতে ক্রোমোজোম নিখুঁত হয়।

প্রোফেজ দশা

ক্যারিওকাইনেসিসের যে দশায় নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের অবলুপ্তি ঘটে এবং ক্রোমাটিন বস্তু কুণ্ডলীকৃত হয়ে ক্রোমোজোম রূপে আবির্ভূত হয়, তাকে প্রোফেজ বলে।

উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের প্রোফেজ দশার বর্ণনা দাও।
  • উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য 1. নিউক্লিয়াসও আকারে ও আয়তনে বৃদ্ধি পায়। 2. জল বিয়োজনের ফলে নিউক্লিয়াসের নিউক্লীয় জালক বা ক্রোমাটিন থেকে সূত্রাকার ক্রোমোজোম গঠিত হয়। 3. প্রত্যেক ক্রোমোজোম লম্বালম্বি ভাগ হয়ে দুটি ক্রোমাটিড গঠন করে এবং ক্রোমাটিডদ্বয় সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। 4. ক্রোমাটিড দুটি পরস্পরের সঙ্গে স্প্রিং-এর মতো প্যাচানো থাকে, একে স্পাইরালাই – জেশন বলে। এর ফলে ক্রোমোজোমগুলি ধীরে ধীরে ঘনীভূত ও স্থূল হতে থাকে। 5. এইসময় নিউক্লিওলাসটি ক্রমশ ছোটো হতে থাকে এবং প্রোফেজের শেষ পর্যায়ে নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাস বিলুপ্ত হয়। 6. উদ্ভিদকোশের সাইটোপ্লাজমীয় মাইক্রোটিউবিউল থেকে বেমতন্তুর আবির্ভাব ঘটে যা পরবর্তীকালে বেম গঠনে সাহায্য করে। এদের অ্যানাস্ট্রাল বেমতত্ত্ব বলে। 
  • প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য  ওপরে উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বর্ণিত ঘটনাগুলি প্রাণীকোশের মাইটোসিস বিভাজনেও ঘটে। কেবল মাইক্রোটিউবিউল থেকে বেমতন্তুর আবির্ভাব ঘটে না। এ ছাড়াও প্রাণীকোশে আরও কতগুলি ঘটনা ঘটে, এগুলি হল — 1. প্রাণীকোশে দুটি সেন্ট্রিওল প্রতিলিপি গঠনের মাধ্যমে দুটি অপত্য সেন্ট্রিওলের সৃষ্টি করে। 2. দুটি করে সেন্ট্রিওলবিশিষ্ট একজোড়া সেন্ট্রোজোম পরস্পরের থেকে ক্রমশ দূরে সরে যায় এবং নিউক্লিয়াসের দুই বিপরীত মেরুতে পৌঁছোয়। 3. সেন্টোজোম দুটির চারদিক থেকে বিচ্ছুরিত রশ্মির মতো অ্যাস্ট্রাল রশ্মির আবির্ভাব ঘটে যা থেকে পরবর্তীকালে বেমতত্ত্ব গঠিত হয়।
উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের প্রোফেজ দশার বর্ণনা দাও।

উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশার বর্ণনা দাও।

মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় দুটি নিখুঁত ক্রোমোজোম বিভক্ত হয় এবং তাদের দুটি সমান সংখ্যক ক্রোমোজোমের সঙ্গে নিকটতম কেন্দ্রীভুক্ত বিখণ্ডিত ফাইবারের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত ভাবে বিতরণ হয়।

মেটাফেজ দশা

ক্যারিওকাইনেসিসের যে দশায় ক্রোমোজোমগুলি বেমতন্তুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিষুব অঞ্চলে সজ্জিত হয়, তাকে মেটাফেজ বলে। প্রোফেজের তুলনায় এই দশা স্বল্পস্থায়ী।

  • উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য 1. নিউক্লীয় পর্দা এবং নিউক্লিওলাস বিলুপ্ত হয়। 2. উদ্ভিদকোশে সেন্ট্রোজোম না থাকলেও বেম গঠিত হয়। এক্ষেত্রে সাইটোপ্লাজমের মাইক্রোটিউবিউলগুলি একত্রিত হয়ে বেমতন্তু গঠিত হয়। পরে তন্তুগুলি মেনুপ্রান্তে একত্রিত হয়ে মাতৃ আকৃতির বেম বা স্পিন্ডল গঠন করে। সেন্ট্রোজোমের সাহায্য ছাড়া ঠিক এইরুপ বেমকে অ্যানাস্ট্রাল কেন বলা হয়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য মাকুর সুচালো প্রান্তনুটিকে মেরু বলে। এক মেরু থেকে অন্য মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত তত্ত্বগুলিকে অবিচ্ছিন্ন বেমতন্তু এবং এক মেরু থেকে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারের সঙ্গে যুক্ত বাকি তত্ত্বগুলিকে ক্রোমোজোমীয় বেমতন্তু বলে। 3. এইসময়ে প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডদ্বয় বেমের বিষুব অঞ্চলে, অর্থাৎ নিরক্ষীয় আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে। ক্রোমোজোমের এই বিন্যাসযুক্ত অবস্থাকে নিরক্ষীয় প্লেট বা মেটাফেজ প্লেট বলে। 4. এরপর, ক্রোমোজোমগুলি আরও সংকুচিত হয়ে স্থূল ও বেঁটে হয়। 5. মেটাফেজের শেষ পর্যায়ে প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার অনুদৈর্ঘাভাবে দ্বিখণ্ডিত হতে শুরু করে।
উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশার বর্ণনা দাও।
  • প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য ওপরে উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বর্ণিত ঘটনাগুলির মতো একই ঘটনা প্রাণীকোশের মেটাফেজ দশায় ঘটে। কিন্তু প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে মাইক্রোটিউবিউলের পরিবর্তে নিউক্লিয়াসের উভয় মেরুতে অবস্থিত দুটি সেন্ট্রিওলের অস্ট্রাল রশ্মি বিস্তৃত হয়ে বেমতত্ত্ব গঠন করে। বেমতত্ত্বগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মাকু-আকৃতির ৰেম বা স্পিন্ডল গঠন করে।
উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশার বর্ণনা দাও।

উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার বর্ণনা দাও।

মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশা হল দুটি নিখুঁত ক্রোমোজোমের প্রত্যেকটি বিখণ্ডিত সংযোগ থেকে একটি ক্রোমোজোম গঠিত হয়। এরপর কেশ এবং নিকটবর্তী সার্কোপ্লাজমার সাহায্যে দুটি নিখুঁত ক্রোমোজোমের সমান ভাগ কমপক্ষে দুইটি নতুন কোশ গঠিত হয়।

অ্যানাফেজ দশা

ক্যারিওকাইনেসিসের যে দশায় ক্রোমাটিডগুলি বিষুব অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে চালিত হয়, তাকে অ্যানাফেজ বলে। মাইটোসিসের এই দশা সর্বাপেক্ষা স্বল্পস্থায়ী।

  • উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য 1. এই দশার শুরুতেই ক্রোমোজোমের সেট্রোমিয়ারগুলি সমান দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। 2. এর ফলে সিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয় এক একটি সেন্ট্রোমিয়ার-এর অংশসহ পৃথক হয়ে যায় এবং দুটি অপত্য ক্রোমোজোম গঠন করে। 3. প্রতিটি অপত্য ক্রোমোজোম কাইনেটোকোরের সাহায্যে উভয়পাশের বেমের ক্রোমোজোমাল তন্তুর সঙ্গে যুক্ত থাকে। ক্রোমোজোমেনা বাহুদুটি ঝুলতে থাকে এবং সেন্ট্রোমিয়ার বেমতন্তুর সঙ্গে যুক্ত থাকে। 4. অবিচ্ছিন্ন ৰেমতন্তুগুলি বিষুব অঞ্চলে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইনটারজোনাল তত্ত্ব গঠন করে। 5. অপতা ক্রোমোজোম দুটির মধ্যে বিকর্ষণ শুরু হয়। ক্রোমোজোমীয় তত্ত্ব এবং ইনটারজোনাল তন্তুগুলির যথাক্রমে সংকোচন ও প্রসারণের ফলে অপতা ক্রোমোজোমগুলির অর্ধেক বিষুব অঞ্চল থেকে বেমের দুটি বিপরীত মেরুর দিকে যাত্রা শুরু করে। কোমোজোমের এইরূপ চলনকে ক্রোমোজোমীয় চলন বা অ্যানাফেজীয় চলন বলে। এটি অ্যানাফেজের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। 6. এই দশার শেষে অপতা ক্রোমোজোমগুলিকে ইংরেজি ‘V’, ‘L’, ‘J’, ‘I’ অক্ষরের মতো দেখায়। এদের যথাক্রমে মেটাসেন্ট্রিক সাবমেটাসেন্ট্রিক, অ্যাক্রোমেট্রিক ও টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার বর্ণনা দাও।
  • প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্য প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে অ্যানাফেজ দশায় উদ্ভিদকোশের অ্যানাফেজ দশার মতো একই ঘটনা ঘটে। তবে, এক্ষেত্রে বেমতন্তুগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে স্টেমবডি গঠন করে যা অ্যানাফেজীয় চলনে সাহায্য করে।
উদ্ভিদকোশে ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার বর্ণনা দাও।

বেতন্ত্রর গঠন ও সাইটোকাইনেসিসের ওপর নির্ভর করে উদ্ভিদকোশের মাইটোসিস ও প্রাণীকোশের মাইটোসিসের পার্থক্য লেখো। উদ্ভিদকোশের প্রাথমিক কোশপ্রাচীরের উপাদানগুলি কী কী?

উদ্ভিদ মাইটোসিস এবং প্রাণী মাইটোসিস দুটোই কোশের বিভাজন এবং নতুন কোশের গঠনে কাজ করে, তবে উদ্ভিদ মাইটোসিস কেবল উদ্ভিদে ঘটে এবং প্রাণী মাইটোসিস প্রাণীদের জীবনচক্রে ঘটে।

উদ্ভিদ মাইটোসিস ও প্রাণী মাইটোসিসের পার্থক্য

বিষয়উদ্ভিদকোশের মাইটোসিসপ্রাণীকোশের মাইটোসিস
1. বেমতন্তুর গঠনমূলত কোশীয় কঙ্কাল, যেমন — অণুনালিকা থেকে বেমতন্তু গঠিত হয়। সেন্ট্রিওল থেকে বেনতত্ত্ব গঠিত হয়।
2. অ্যাস্ট্রাল রশ্মিঅ্যাস্ট্রাল রশ্মি উৎপন্ন হয় না।সেন্ট্রিওলকে ঘিরে তারার মতো অ্যাস্ট্রাল রশ্মি বিন্যস্ত থাকে।
3. সাইটোকাইনেসিস পদ্ধতিফ্র্যাগমোপ্লাস্ট ও কোশপাত গঠনের দ্বারা এই পদ্ধতি ঘটে থাকে। এই ক্লিভেজ বা খাঁজ বা ফারোয়িং-এর মাধ্যমে এই পদ্ধতি ঘটে।
4. অপত্য কোশের সংযুক্তিউৎপন্ন অপত্য কোশগুলি পাশাপাশি সংযুক্ত থাকে।উৎপন্ন অপত্য কোশগুলি পৃথক হয়ে যায়।

উদ্ভিদকোশের প্রাথমিক কৌশপ্রাচীরের উপাদান

উদ্ভিদকোশের প্রাথমিক কোশপ্রাচীর, মধ্যচ্ছদার উভয়পাশে সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ প্রভৃতি জমা হয়ে গঠিত হয়।

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রবহমানতা সম্পর্কে শিখানো হয়, যেখানে কোশ বিভাজন এবং কোশচক্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর এই বিষয়ের গুরুত্ব ও সঠিক বোঝার দিকে ছাত্রদের সাহায্য করে নিজেদের জ্ঞান এবং বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নে সাহায্য করে।

Share via:

মন্তব্য করুন