আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণের “ব্যাকরণ ও নির্মিতি” থেকে “ধ্বনি, ধ্বনি পরিবর্তন ও সন্ধি” -এর উপবিভাগ “ধ্বনি, ধ্বনির প্রকারভেদ” নিয়ে আলোচনা করবো। এই অংশ নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

ধ্বনি কাকে বলে?
চলতি কথায় ধ্বনি বলতে আমরা বুঝি আওয়াজ। সামাজিক মানুষেরা নিজেদের মনোভাব আদানপ্রদানের জন্য কণ্ঠ, জিভ, ঠোঁট, তালু, মূর্ধা ইত্যাদি বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে যেসব আওয়াজ উৎপন্ন করে সেগুলিই ভাষার ধ্বনি বা ধ্বনি। অর্থাৎ প্রকৃতির মেঘ ডাকার আওয়াজ, বাজ পড়ার আওয়াজ, ঝরনার ঝরঝর, যন্ত্রের ঘরঘর, প্যাঁকপ্যাঁক, মানুষের নাক ডাকা, হাঁচি-কাশির আওয়াজ-এগুলির কোনোটাই ব্যাকরণ অনুসারে ধ্বনি নয়। যদি আমি বলি কাক্-তাহলে আমার দ্বারা উচ্চারিত ‘কা’ এবং ‘ক্’ দুটিই ধ্বনি।
কোন্ কোন্ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে বাগযন্ত্র গঠিত?
বাগযন্ত্রে যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি আছে, সেগুলি হল –
- কঠোঁট [ওষ্ঠ↑, অধর↓]
- দাঁতের পাটি
- দন্ত্যমূল
- অগ্রতালু
- পশ্চাদতালু
- আলজিভ
- জিভাগ্র
- সম্মুখ জিভ
- পশ্চাদ্ জিভ
- নাসিকাগহ্বর
- স্বরপল্লব
- ফুসফুস
- কণ্ঠ
- জিভ।
বাগধ্বনি কাকে বলে?
শ্বাসবায়ু তার গতিপথে বাগযন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে বাধা সৃষ্টি করে বা গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে নানা মাপের ও নানা ধরনের ঢেউ সৃষ্টি করে। এই ঢেউগুলি বাতাসে ভাসতে ভাসতে শ্রোতার কানে গিয়ে বেজে উঠলে তাদের বাগধ্বনি বলে।
ধ্বনিকেশ্বাসবায়ুর গতিপথ অনুযায়ী কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
ধ্বনিকে শ্বাসবায়ুর গতিপথ অনুযায়ী দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –
- বহির্গামী ধ্বনি (ফুসফুস থেকে বহির্গামী বায়ুতরঙ্গে সৃষ্ট ধ্বনি – অ, আ, ক্, খ্, চ্, ছ্ ইত্যাদি)।
- অন্তর্গামী ধ্বনি (বাইরের বাতাস বাগযন্ত্রে ঢুকে সৃষ্ট ধ্বনি-বাংলা ভাষায় উদাহরণ নেই)।
ধ্বনিসত্তার স্বরূপ অনুযায়ী ধ্বনিকে কয়টিভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
ধ্বনিসত্তার স্বরূপ অনুযায়ী ধ্বনিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- বিভাজ্য ধ্বনি
- অবিভাজ্য ধ্বনি
বিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে?
যে বাকপ্রবাহকে বিশ্লেষণ করে সুস্পষ্ট ক্ষুদ্রতম উপাদানগত এককের সন্ধান পাওয়া যায়, সেই বাকপ্রবাহের ধ্বনিকে বিভাজ্য ধ্বনি বলে।
বিভাজ্য ধ্বনি কত প্রকার ও কী কী?
বিভাজ্য ধ্বনি দুইপ্রকার। যথা –
- স্বরধ্বনি,
- ব্যঞ্জনধ্বনি।
বাংলা বর্ণমালায় কয়টি ধ্বনি আছে?
ধ্বনির লিখিত রূপই হল বর্ণ। কিন্তু বাংলা বর্ণমালায় এমন কিছু কিছু বর্ণ আছে যাদের মূল উচ্চারণ বা ব্যবহার বর্তমানে প্রচলিত নেই। যেমন – ঋ, ঌ ইত্যাদি। তাই বাংলা ধ্বনির সংখ্যা 40টি হলেও বাংলা বর্ণমালার সংখ্যা 51টি।
| ধ্বনি | মুখের ভাষায় আছে | বর্ণমালায় আছে |
| স্বরধ্বনি | 7 | 12 |
| ব্যঞ্জনধ্বনি | 29 | 39 |
| অর্ধস্বরধ্বনি | 4 | পৃথক চিহ্ন নেই বা বর্ণ নেই। |
বর্ণ কাকে বলে?
আমরা স্বরযন্ত্রের সাহায্যে যা উচ্চারণ করি তাই ধ্বনি, আর এই ধ্বনিই যখন লিখিত রূপ পায় অর্থাৎ বলার পরিবর্তে আমরা লিখি তখন তাকে বর্ণ বা অক্ষর বলা হয়।
শব্দ কীভাবে গঠিত হয়?
উচ্চারিত ধ্বনিগুলি যুক্ত হয়ে যখন একটি অর্থকে প্রকাশ করে তখন শব্দ গঠিত হয়। মনে রাখা দরকার শব্দের ক্ষেত্রে অর্থ প্রকাশ পাওয়াটা জরুরি। অর্থ না থাকলে তাকে শব্দ বলা যায় না।
স্বরধ্বনি
স্বরধ্বনি কাকে বলে?
যেসব ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হয় ও উচ্চারণকালে শ্বাসবায়ু বাধাহীনভাবে ফুসফুস থেকে বাইরের দিকে যায়, তাকে স্বরধ্বনি বলে। একে আশ্রয় করে অন্যধ্বনি উচ্চারিত হয়। স্বরধ্বনির লিখিত রূপ স্বরবর্ণ।
মান্য চলিত বাংলা ভাষায় উচ্চারিত স্বরধ্বনি কটি এবং লিখিত স্বরবর্ণ কটি?
মান্য চলিত বাংলা ভাষায় উচ্চারিত স্বরধ্বনি সাতটি। যথা – অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা। মান্য চলিত বাংলা ভাষায় লিখিত স্বরবর্ণ 11টি। যথা – অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।
সময় বা উচ্চারণকালের ভিত্তিতে বাংলা স্বরধ্বনিকে কটি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
সময় বা উচ্চারণকালের ভিত্তিতে বাংলা স্বরধ্বনিকে দু-ভাগে ভাগ করা চলে যথা –
- হ্রস্ব স্বরধ্বনি,
- দীর্ঘ স্বরধ্বনি।
হ্রস্ব স্বরধ্বনি কাকে বলে?
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে, তাদের হ্রস্ব স্বরধ্বনি বলে। যেমন – অ, ই, উ, ঋ, এ, ও।
দীর্ঘ স্বরধ্বনি কাকে বলে?
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে হ্রস্বধ্বনি অপেক্ষা বেশি সময় লাগে, তাদের দীর্ঘ স্বরধ্বনি বা দীর্ঘস্বর বলে। যেমন – আ, ঈ, ঊ, ঐ, ঔ, অ্যা ইত্যাদি।
প্লুতস্বর কাকে বলে?
গানে, আবৃত্তিতে, কান্নায় কিংবা দূর থেকে কোনো ব্যক্তিকে আহ্বান করার সময় মৌলিক স্বরধ্বনিকে অতিরিক্ত মাত্রায় টেনে উচ্চারণ করা হয়। এইভাবে উচ্চারিত স্বরধ্বনিকে প্লুতস্বর বলে। যেমন – মা-আ-আ-আ। এটি কমপক্ষে তিনটি মাত্রার হয় এবং এর লিখিত কোনো চিহ্ন নেই।
বিভিন্ন ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে যৌগিক স্বরের সংখ্যা কয়টি তা সংক্ষেপে লেখো।
ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে বাংলা ভাষায় মোট যৌগিক স্বর 25টি, পবিত্র সরকারের মতে 17টি। কারও মতে 27টি যৌগিক স্বর আছে। যৌগিক স্বরগুলি পূর্ণস্বর অর্ধস্বর নিয়ে গঠিত। যেমন – ‘আ’ পূর্ণস্বর ‘ই’ অর্ধস্বর নিয়ে ‘আই’ > ভাই, চাই, খাই ইত্যাদি। এরকম- কেউ, ফেউ, খাও, যাও, চাও, বয়, হয়, নয়, হাউ, মাউ, খাউ, বই, সই, কই, ছায়া, কায়া, চওড়া, গেরুয়া, কুয়ো, ধুয়ো ইত্যাদি। ‘এ’ (অ্যা) ‘অ’ দিয়ে গঠিত যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা তুলনায় কম।
উচ্চারণরীতি এবং প্রকৃতি অনুসারে বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনিকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উচ্চারণরীতি এবং প্রকৃতি অনুসারে বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় –
- জিভের ওঠানামা অনুযায়ী।
- জিভের অগ্রপশ্চাৎ গতি অনুযায়ী।
- ঠোঁটের আকৃতি অনুযায়ী।
- ঠোঁটের প্রসার বা উন্মুক্তি অনুযায়ী।
- জিহ্বার শেষ অবস্থান অনুযায়ী।
অনুনাসিক স্বর কাকে বলে?
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময়ে শ্বাসবায়ু মুখের বদলে নাক দিয়ে নির্গত হয়, তাদের অনুনাসিক স্বরধ্বনি বলা হয়। যেমন – আঁ, ই, উঁ, এঁ, ওঁ ইত্যাদি।
বিভাজনের ভিত্তিতে বাংলা স্বরধ্বনিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
বিভাজনের ভিত্তিতে বাংলা স্বরধ্বনিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- মৌলিক স্বরধ্বনি,
- যৌগিক স্বরধ্বনি।
মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে সমস্ত স্বরধ্বনিকে আর ভাঙা যায় না বা বিশ্লেষণ করা যায় না, তাদের মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। যেমন – অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।
যৌগিক স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যৌগিক স্বরধ্বনিকে বিভাজন করা যায়। একটি মৌলিক স্বরধ্বনি ও একটি অর্ধস্বর মিলে যৌগিক স্বরধ্বনি গড়ে ওঠে।
নিহিত স্বরধ্বনি কাকে বলে?
পূর্ণ ব্যঞ্জনের মধ্যে একটি ‘অ’ ধ্বনি লুকিয়ে থাকে (চ = + চ্ + অ)। উচ্চারিত হলেও তা লেখায় থাকে না বলে এদের নিহিত স্বরধ্বনি বলে।
চিত্রের সাহায্যে মৌলিক স্বরধ্বনির অবস্থান চিহ্নিত করো।
মৌলিক স্বরধ্বনিগুলির অবস্থান একটা ছবির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এর বাঁদিকটি মুখের সামনের, ডানদিকটি পেছনের, ওপরটি ঊর্ধ্ব, নীচের দিকটা নিম্ন।
স্বরতন্ত্রী মধ্যবর্তী পথের অবস্থান
- স্বাভাবিক শ্বাসগ্রহণের সময়;
- দ্রুত শ্বাসগ্রহণের সময়;
- ফিসফিস আওয়াজের সময়; ও
- ধ্বনিগঠনের সময়
জিভের ওঠানামা অনুযায়ী স্বরধ্বনি কত প্রকার ও কী কী?
জিভের ওঠানামা অনুযায়ী স্বরধ্বনি চার প্রকার। যথা –
- উচ্চ স্বরধ্বনি,
- নিম্ন স্বরধ্বনি,
- উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি,
- নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি।
উচ্চ স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ সবচেয়ে ওপরে উঠে আসে, সেগুলিকে উচ্চ স্বরধ্বনি বলে। যেমন – ই, উ।
নিম্ন স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ সবচেয়ে নীচে থাকে, তাদের নিম্ন স্বরধ্বনি বলে। যেমন – আ।
উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ উচ্চ অপেক্ষা একটু নীচে থাকে, তাদের উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন – এ, ও।
নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ উচ্চমধ্যের নীচে এবং নিম্নের ওপরে অবস্থান করে, তাকে নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন – অ্যা, অ।
জিভের অগ্রপশ্চাৎ গতি অনুযায়ী স্বরধ্বনি কত প্রকার ও কী কী?
জিভের অগ্রপশ্চাৎ গতি অনুযায়ী স্বরধ্বনি তিন প্রকার। যথা –
- সম্মুখ স্বরধ্বনি,
- পশ্চাৎ স্বরধ্বনি,
- কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি।
সম্মুখ স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ সামনে এগিয়ে আসে, সেগুলিকে সম্মুখ স্বরধ্বনি বলে। যেমন – ই, এ, অ্যা।
পশ্চাৎ স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ পিছিয়ে যায়, তাদের পশ্চাৎ স্বরধ্বনি বলে। যেমন – উ, ও, অ।
কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ এগোয় বা পিছোয় না, তাকে কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি বলে। যেমন – আ।
ঠোঁটের আকৃতি অনুযায়ী স্বরধ্বনি কত প্রকার ও কী কী?
ঠোঁটের আকৃতি অনুযায়ী স্বরধ্বনি তিনপ্রকার। যথা –
- বর্তুল বা কুঞ্চিত স্বরধ্বনি,
- বিস্তৃত বা প্রসূত স্বরধ্বনি,
- মধ্যস্থ স্বরধ্বনি।
বর্তুল বা কুঞ্চিত স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁট দুটি গোল বা বর্তুল আকার নেয়, তাকে বর্তুল বা কুঞ্চিত স্বরধ্বনি বলে। যেমন – উ, অ, ও।
বিস্তৃত বা প্রসৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁট দুটি দু-পাশে ছড়িয়ে যায়, তাদের বিস্তৃত বা প্রসৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন – ই, এ, অ্যা।
মধ্যস্থ স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় ওষ্ঠ সংকুচিত বা প্রসারিত হয় না, স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে তাকে মধ্যস্থ স্বরধ্বনি বলে। যেমন – আ।
ঠোঁটের প্রসার বা উন্মুক্তি অনুযায়ী স্বরধ্বনি কত প্রকার ও কী কী?
ঠোঁটের প্রসার বা উন্মুক্তি অনুযায়ী স্বরধ্বনি চার প্রকার। যথা –
- বিবৃত স্বরধ্বনি,
- সংবৃত স্বরধ্বনি,
- অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি,
- অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি।
বিবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁট সবচেয়ে উন্মুক্ত (হাঁ) থাকে, তাকে বিবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন – আ।
সংবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁট সবচেয়ে কম খোলা বা অপ্রশস্ত থাকে, তাকে সংবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন – ই, উ।
অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
বিবৃত স্বরধ্বনির থেকে একটু কম ঠোঁট মেলে যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করা হয়, তাকে অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন – অ্যা, অ।
অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
সংবৃত স্বরধ্বনির চেয়ে একটু বেশি ঠোঁট প্রসারিত করে যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করা হয়, তাদের অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন – এ, ও।
জিহ্বার শেষ অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনি কয়টি ও কী কী?
জিহ্বার শেষ অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনি পাঁচ প্রকার। যথা –
- কণ্ঠ্য স্বরধ্বনি,
- তালব্য স্বরধ্বনি,
- ওষ্ঠ্য স্বরধ্বনি,
- কণ্ঠ্যতালব্য স্বরধ্বনি,
- কণ্ঠ্যৌষ্ঠ্য স্বরধ্বনি।
কণ্ঠ্যস্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহ্বামূল কণ্ঠে অবস্থান করে উচ্চারিত হয়, তাকে কণ্ঠ্যস্বরধ্বনি বলে। যেমন – অ, আ।
তালব্য স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহ্বাগ্র তালুর কাছে অবস্থান করে, তাকে তালব্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন – ই, অ্যা।
ওষ্ঠ্যস্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহ্বাগ্র অধরোষ্ঠের কাছে অবস্থান করে, তাকে ওষ্ঠ্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন – উ।
কণ্ঠ্যতালব্য স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহ্বা নরম ও শক্ত তালুতে অবস্থান করে, তাকে কণ্ঠ্যতালব্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন – এ।
কণ্ঠৌষ্ঠ্য স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে জিহ্বা একইসঙ্গে তালু এবং অধরোষ্ঠের কাছে অবস্থান করে, তাকে কণ্ঠৌষ্ঠ্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন – ও।
উচ্চারণস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনির শ্রেণিবিভাগ করো।
উচ্চারণস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনির শ্রেণিবিভাগ –
| উচ্চারণস্থান | ধ্বনি | নাম |
| কণ্ঠ + জিহ্বামূল | অ, আ | কণ্ঠ্যস্বরধ্বনি |
| তালু + জিহ্বাগ্র | ই, ঈ, আ | তালব্য স্বরধ্বনি |
| ওষ্ঠ + অধর | উ, ঊ | ওষ্ঠ্যস্বরধ্বনি |
| মূর্ধা + জিহ্বাগ্র | ঋ | মূর্ধন্য স্বরধ্বনি |
| কণ্ঠ + তালু | এ, ঐ | কণ্ঠ্যতালব্য স্বরধ্বনি |
| কণ্ঠ + ওষ্ঠ | ও, ঔ | কণ্ঠ্যৌষ্ঠ্য স্বরধ্বনি |
স্বরধ্বনিগুলির উচ্চারণ অনুসারে বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
স্বরধ্বনিগুলির উচ্চারণ অনুসারে বৈশিষ্ট্য –
- অ = নিম্নমধ্য, পশ্চাৎ, বর্তুল, অর্ধবিবৃত, কণ্ঠ।
- আ = নিম্ন, কেন্দ্রীয়, বিবৃত, কণ্ঠ।
- ই = উচ্চ, সম্মুখ, প্রসূত, সংবৃত, কণ্ঠ।
- উ = উচ্চ, পশ্চাৎ, বর্তুল, সংবৃত, কণ্ঠ।
- এ = উচ্চমধ্য, সম্মুখ, প্রসূত, অর্ধসংবৃত, কণ্ঠ্যতালব্য।
- এ = উচ্চমধ্য, পশ্চাৎ, বর্তুল, অর্ধসংবৃত, কণ্ঠ্যৌষ্ঠ্য।
বাংলা ভাষায় ‘অ’ ধ্বনির বিবৃত বা স্বাভাবিকরূপে উচ্চারণের সূত্রগুলি লেখো।
- জল, বল, খল, ছল, কখন, চলন ইত্যাদিতে ‘অ’ -এর উচ্চারণ স্বাভাবিক বা স্বকীয় (জ্ অ)।
- শব্দের দ্বিতীয় স্বর অ, আ, ও হলে শব্দের আদিতে থাকা ‘অ’ উচ্চারণও স্বাভাবিক হয়। যেমন – অজয়, অমর, অচল, অমল, অলোক, অবাক, অসাড় ইত্যাদি।
- শব্দ মধ্যের ব্যঞ্জনযুক্ত ‘অ’ -এর উচ্চারণ স্বাভাবিক। যেমন – নয়ন, জনম, করম ইত্যাদি।
- ‘না’ বা ‘নেতি’ শব্দের শুরুতে থাকলে ‘অ’ -এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়। যেমন – অচল, অনড়, অপরাজিত, অস্থির ইত্যাদি।
- একদলের শব্দে ‘অ’ স্বাভাবিক কিন্তু শেষে ‘ন’ বা ‘ণ’ থাকলে তা ‘ও’ হয়ে উচ্চারিত হয়। যেমন – চল, ঘর, কিন্তু মন > মোন।
- ‘স’ এবং ‘সম্’ উপসর্গযুক্ত শব্দের আদিতে ‘অ’ স্বাভাবিক উচ্চারিত হয়। যেমন – সবিনয়, সম্পাদক, সচরাচর ইত্যাদি।
বাংলা ভাষায় ‘অ’ ধ্বনির সংবৃত বা বিকৃত উচ্চারণের সূত্রগুলি লেখো।
বাংলা ভাষায় ‘অ’ ধ্বনির সংবৃত বা বিকৃত উচ্চারণের সূত্রগুলি হল –
- ক্রিয়াপদের শুরু ও শেষে ‘অ’-‘ও’ রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন – করব (কোরব), করেছিল (কোরেছিল), করত (কোরত), চলিত (চোলিতো) ইত্যাদি।
- পরবর্তী অক্ষরে ই, উ, য-ফলা, জ্ঞ, ক্ষ থাকলে ‘অ’-‘ও’ রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন – বক্ষ (বোক্ষ), রবি (রোবি), গরু (গোরু) লক্ষ (লোকখো) ইত্যাদি।
- শব্দের আদিতে ‘র’ ফলা থাকলে ‘অ’-‘ও’ রূপে উচ্চারিত হবে। যেমন – ভ্রমণ > ভ্রোমণ, ক্রম ক্রোম, প্রবাস > প্রোবাস, প্রথম > গ্রোথম।
- অভিশ্রুত শব্দের আদি ‘অ’-‘ও’ রূপে উচ্চারিত হবে। যেমন – বসিলেন > বোসলেন, করিলেন > কোরলেন ইত্যাদি।
- ব্যক্তি নামে অন্ত্যের ‘অ’-‘ও’ হয়ে যায়। যেমন হরিপদ হরিপদো ইত্যাদি।
- দ্বিরুক্ত বিশেষণ ও অনুকার শব্দে ‘অ’-‘ও’ হয়ে যায়। যেমন – ছলছল (ছলোছলো), ঝরঝর (ঝরোঝরো), কাঁদকাঁদ (কাঁদোকাঁদো) ইত্যাদি।
- সাদৃশ্যবাচক অব্যয় ‘মত’ সর্বদাই ‘মতো’ উচ্চারিত হয়।
- শব্দান্তে ‘হ’ কিংবা যুক্তবর্ণ থাকলে ‘অ’-‘ও’ হয়। যেমন – স্নেহ, দেহ, গৃহ, রক্ত, ভক্ত, শক্ত, বর্ণ, সমৃদ্ধ ইত্যাদি।
- তদ্ভব শব্দের অন্ত্য ‘অ’ সবসময়ই ‘ও’ উচ্চারণ হয়। যেমন – ভাল > ভালো, ছোট > ছোটো, কত > কতো, শত > শতো, তের > তেরো, আঠার > আঠারো, পড়ান > পড়ানো, যাব > যাবো, খাব > খাবো ইত্যাদি।
- চলতি বাংলায় অন্ত্য ‘অ’ লুপ্ত হয়ে যায়। যেমন-ধান > ধান, কান > কান্।
‘আ’ ধ্বনির উচ্চারণ সম্পর্কে যা জান লেখো।
বাংলায় ‘আ’ -এর উচ্চারণ সবসময়ই স্বাভাবিক। ধ্বনিটি দীর্ঘ হলেও হ্রস্বরূপে উচ্চারিত হয়। একদল বিশিষ্ট ‘আ’ দীর্ঘ হয়। যেমন – আ-কার, বাক (বা-ক্), রাম (রা-ম্) ইত্যাদি। শব্দের আদিতে ‘আ’ দীর্ঘ হয়। যেমন – আবার, তাহার ইত্যাদি। কবিতা বা গানের ক্ষেত্রে ‘আ’ দীর্ঘ হয়। যেমন – “আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে”, “আমার মাথা নত করে দাও হে।”
কোন্ স্বরধ্বনির কোনো বর্ণরূপ নেই?
‘অ্যা’ স্বরধ্বনির কোনো বর্ণরূপ নেই।
বাংলায় ই-ঈ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
‘ঈ’ ধ্বনি বাংলায় সবসময় ‘ই’ রূপেই উচ্চারিত হয়। একদল শব্দে কখনো-কখনো দীর্ঘ উচ্চারণ পাওয়া যায়। যেমন – দীন, ঈশ ইত্যাদি।
উ-ঊ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
বাংলায় ‘উ’ এবং ‘ঊ’ -এর উচ্চারণ একইরকম। সবসময়ই হ্রস্ব। তদ্ভব শব্দ উচ্চারণে কখনো-কখনো ‘ঊ’ উচ্চারণের প্রবণতা আসে। যেমন – মূঢ়, সূর্য, রূঢ়, ধূর্জটি ইত্যাদি।
‘এ’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
স্বাভাবিক উচ্চারণ –
- তদ্ভব, তৎসম, দেশি, বিদেশি শব্দে মধ্য বা অন্ত্য এ-কার স্বাভাবিক উচ্চারণ হয়। যেমন – অচলে, অনলে, আবেগে, নভেম্বর, ডিসেম্বর ইত্যাদি।
- বিশেষণের শেষে ‘য়’ থাকলে ‘এ’ স্বাভাবিকভাবে উচ্চারিত হয়। যেমন – শ্রেয়, প্রেয়, অজেয় ইত্যাদি।
- তৎসম শব্দের আদি ‘এ’ স্বাভাবিক। যেমন – দেহ, মেধা, একদা, একতাল, মেঘ, দেশ, একান্নবর্তী ইত্যাদি।
- তৎসম শব্দে আদিস্বরে ‘এ’-কারের পর ই, ঈ, উ, ঊ বা এগুলির সঙ্গে ব্যঞ্জন যুক্ত থাকলে, ‘এ’-কার স্বাভাবিকভাবে উচ্চারিত হবে। যেমন – দেখি, খেদি, পেটুক, বেলুন, চেষ্টা, তেষ্টা ইত্যাদি।
বিকৃত উচ্চারণ –
- তদ্ভব, দেশি, বিদেশি শব্দে আদ্য ‘এ’ ‘অ্যা’ হয়ে যায়। যেমন – এখন > অ্যাখন, এমন > অ্যামন, দেখা > দ্যাখা ইত্যাদি।
- একদল শব্দে ‘এ’ অনেক সময় ‘অ্যা’ হয়। যেমন – এক > অ্যাক, দেখ > দ্যাখ, লেজ > ল্যাজ ইত্যাদি।
- কিছু সংখ্যাবাচক শব্দে ‘এ’ ‘অ্যা’ হিসেবে উচ্চারিত হয়। যেমন – এক > অ্যাক, এগারো> অ্যাগারো, একাত্তর > অ্যাকাত্তর, একশো > অ্যাকশো ইত্যাদি।
- ব্যাতিহারসূচক শব্দে ‘এ’ ‘অ্যা’ হয়। যেমন – ঠেলাঠেলি > ঠ্যালাঠেলি, দেখাদেখি > দ্যাখাদেখি ইত্যাদি।
স্বরধ্বনি ‘এ’ কখন ‘অ্যা’ হিসেবে উচ্চারিত হয় এবং কখন হয় না তার সূত্রগুলি লেখো।
- শব্দের মধ্যে বা শেষে কখনোই ‘এ’ (অ্যা) হয় না। যেমন – জনেক, প্রত্যেক, বলেন ইত্যাদি।
- শব্দের দ্বিতীয় অক্ষরে ‘ই’ বা ‘উ’ থাকলে অ্যা হয় না, এ হয়। যেমন – অ্যাক, অ্যাতো কিন্তু একটি, একটু, যেমনি ইত্যাদি।
- যুক্তব্যঞ্জনে ‘এ’-কার ‘এ’ হিসেবে উচ্চারিত হয়। যেমন – শ্রেয়, প্রেম, শ্রেষ্ঠ ইত্যাদি।
- কোনো বিশেষ্য বা বিশেষণ ‘হ’ বা ‘য়’ দিয়ে শেষ হলে পূর্ববর্তী ‘এ’-কার ‘এ’ উচ্চারিত হবে। যেমন – দেহ, গেয়, কেহ, দেয় ইত্যাদি। কিন্তু ক্রিয়াপদে ‘এ’ ‘অ্যা’ হিসেবে উচ্চারিত হবে। যেমন – দ্যায়, গ্যাছে, দ্যাখা ইত্যাদি।
বাংলায় ‘ঋ’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
‘ঋ’ স্বরধ্বনির স্বাভাবিক উচ্চারণ বাংলায় নেই। এটি বাংলায় ‘রি’ উচ্চারিত হয়। যেমন – ঋতি > রিতি, ঋষি > রিষি ইত্যাদি।
‘ঐ’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
বাংলায় যৌগিকস্বর (ও + ই = ঐ) কখনো-কখনো দীর্ঘস্বর হয়। যেমন – খৈ, সৈকত, বৈদেশিক। কবিতায় ছন্দমাধুর্য রক্ষার্থেও দীর্ঘস্বর হয়। যেমন – “ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে”।
‘ও’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
বাংলার ‘ও’ ধ্বনির দীর্ঘস্বরটির উচ্চারণ কোথাও বিকৃত হয় না। এর হ্রস্ব উচ্চারণও হতে পারে (যোগী, ভোগী, রোগী), তবে সাধারণত এর উচ্চারণ দীর্ঘ। যেমন – যোগ, ডোম, বোল, কোল ইত্যাদি।
‘ঔ’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
‘ও’ বাংলায় আর-একটি যৌগিক স্বর (ও + উ = ঔ)। ধ্বনিটি কখনও পূর্ণরূপে (ঔপন্যাসিক) কখনও গৌণরূপে (মৌন, পৌনে) উচ্চারিত হয়। কবিতা বা গানে একে দীর্ঘায়িত করা হয়। যেমন – “যৌবন সরসী নীরে।”
ব্যঞ্জনধ্বনি
ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে?
যেসব ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না ও উচ্চারণকালে শ্বাসবায়ু ফুসফুস থেকে বাইরে আসার পথে কোনো না কোনো বাগযন্ত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।
উচ্চারণের দিক দিয়ে ব্যঞ্জনবর্ণকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উচ্চারণের দিক দিয়ে ব্যঞ্জনবর্ণকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- উচ্চারণস্থান অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ।
- উচ্চারণের প্রকার অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ।
- বায়ুপ্রবাহের পদ্ধতিগত দিক থেকে শ্রেণিবিভাগ।
উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনির ভাগগুলি কী কী?
উচ্চারণের স্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনির ভাগগুলি হল –
- কণ্ঠ্যব্যঞ্জনধ্বনি,
- তালব্য ব্যঞ্জনধ্বনি,
- মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনি,
- দন্ত্যব্যঞ্জনধ্বনি,
- দন্ত্যমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি,
- ওষ্ঠ্যব্যঞ্জনধ্বনি,
- দন্তৌষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনি এবং
- কণ্ঠ্যনালীয় ব্যঞ্জনধ্বনি।
কণ্ঠ্যব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে জিভের পশ্চাদ্ভাগ তালুর কোমল অংশ স্পর্শ করে, তাকে কণ্ঠ্যব্যঞ্জনধ্বনি বলে। কণ্ঠ্যব্যঞ্জনধ্বনি পাঁচটি। যেমন – ক্, খ্, গ্, ঘ্, ঙ, হ্।
তালব্য ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে জিভ প্রসারিত হয়ে শক্ত তালু স্পর্শ করে, তাদের তালব্য ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – চ্, ছ্, জ্, ঝ্, ঞ, শ্, য়্, য্।
মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে জিভের প্রসারিত অগ্রভাগ উলটে গিয়ে মূর্ধাকে স্পর্শ করে, তাকে মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – ট্, ঠ্, ড্, ঢ্, ণ্, ষ্ ইত্যাদি মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনি।
দন্ত্যব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে জিভের অগ্রভাগ দন্তপত্তির পশ্চাতে জুড়ে যায়, তাকে দন্ত্যব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – ত্, থ, দ, ধ, ন, ল্, স্।
দন্ত্যমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
প্রকৃতপক্ষে এটি দন্ত্যব্যঞ্জনেরই প্রকারভেদ। যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে জিভের অগ্রভাগ দন্তপত্তির মূলকে স্পর্শ করে, তাকে দন্ত্যমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – ন্, স্, র্, ল্।
ওষ্ঠ্যব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে ধ্বনিবাহী বায়ু ওষ্ঠ ও অধরের বন্ধ বা খোলার জন্য বাধা পায়, তাকে ওষ্ঠ্যব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – প্, ফ্, ব্, ভ্, ম্।
দন্তৌষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে ওষ্ঠ দন্ত নীচের দন্তপঙক্তি স্পর্শ করে, তাকে দন্তৌষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনি বলা হয়। এটি ওষ্ঠ্যব্যঞ্জনেরই বিশেষ প্রকার। বাংলায় একটিমাত্র দন্তৌষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনি আছে। যেমন – অন্তঃস্থ ‘ব্’।
কণ্ঠ্যনালীয় ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় কণ্ঠনালির পেশি সংকুচিত হয়ে ধ্বনি উৎপন্ন হয়, তাকে কণ্ঠ্যনালীয় ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – ‘ছ’ ও ‘ঃ’ কণ্ঠ্যনালীয় ব্যঞ্জনধ্বনি।
উচ্চারণের প্রকার অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনির ভাগগুলি কী কী?
উচ্চারণের প্রকার অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনির ভাগগুলি হল –
- ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি,
- অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি।
ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
প্রতি বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ধ্বনির উচ্চারণে স্বরতন্ত্রীর কম্পনে কণ্ঠস্বর গম্ভীর হয় বলে, এদের ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – গ্, ঘ্, ঙ্, জ্, ঝ্, ঞ্, ড্, ঢ্, ণ্, দ্, ধ্, ন্, ব্, ভ্, ম্ – এগুলি ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি। ড. পবিত্র সরকার বলেছেন, র্, ড়্, ঢ়্, ই এগুলিও ঘোষ বা সঘোষ বা ঘোষবৎ ব্যঞ্জনধ্বনি। গাম্ভীর্যসম্পন্ন ধ্বনিই ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি বা নাদধ্বনি।
ঘোষীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উচ্চারণের জন্য অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনিতে রূপান্তরিত হলে, তাকে ঘোষীভবন বলেন। যেমন – কাক > কাগ, ধপধপে > ধবধবে, শাক > শাগ ইত্যাদি।
অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
প্রতি বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণের উচ্চারণে স্বরতন্ত্রীর কম্পন অতি মৃদু হওয়ায় ঘোষ বা নাদ থাকে না, তাই এদের অঘোষব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – ক্, খ্, চ্, ছ্, ট্, ঠ্, ত্, থ্, প্, ফ্। একে শ্বাসবর্ণও বলা হয়।
অঘোষীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উচ্চারণের জন্য ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনিতে রূপান্তরিত হলে, তাকে অঘোষীভবন বলে। যেমন – কাগজ > কাগচ, বাবু > বাপু, বড়ঠাকুর > বটঠাকুর ইত্যাদি।
বায়ুপ্রবাহের পদ্ধতিগত দিক অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনির ভাগগুলি কী কী?
বায়ুপ্রবাহের পদ্ধতিগত দিক অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনির ভাগগুলি হল –
- অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি,
- মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি,
- খৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি,
- নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি,
- উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি,
- কম্পিত ব্যঞ্জনধ্বনি,
- পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনি,
- তাড়নজাত ব্যঞ্জনধ্বনি,
- রণিত ব্যঞ্জনধ্বনি
- অন্তঃস্থ ব্যঞ্জনধ্বনি এবং
- আশ্রয়ভাগী ব্যঞ্জনধ্বনি।
অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
‘প্রাণ’ শব্দের অর্থ হল শ্বাসবায়ু। প্রতি বর্গের প্রথম ও তৃতীয় ধ্বনি উচ্চারণকালে প্রাণ বা শ্বাসবায়ু কম প্রয়োজন হয়। তাই এদের অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – ক্, গ্, চ্, জ্, ট্, ড্, ত্, দ্, প্, ব্। অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনিগুলির সঙ্গে ‘হ্’ যুক্ত করে একত্র উচ্চারণ করলে মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনির মতো শোনায়। যেমন – ক্ + হ্ = খ্, গ্ + হ্ = ঘ্ ইত্যাদি।
মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ ধ্বনি উচ্চারণে প্রাণ বা শ্বাসবায়ুর প্রাবল্য দেখা যায়, তাই এদের মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – খ্, ঘ্, ছ্, ঝ্, ঠ্, ঢ্, থ্, ধ্, ফ্, ভ্ ছাড়াও ‘ঢ়’ বাংলা মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি।
ক্ষীণায়ন কী? উদাহরণ দাও।
মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনির মতো উচ্চারিত হলে, তাকে ক্ষীণায়ন বলে। যেমন – মাঠ> মাট, বাঘ> বাগ, কাঁঠাল > কাঁটাল ইত্যাদি।
পীণায়ন কী? উদাহরণ দাও।
অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনির মতো উচ্চারিত হলে, তাকে পীণায়ন বলে। যেমন – থুতু > থুথু।
ঘৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে শ্বাসবায়ুর গতিপথ প্রথমে রুদ্ধ এবং পরে সামান্য মুক্ত হয়ে ঘর্ষণের মতো ধ্বনি উৎপন্ন হয়, তাকে ঘৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। সহজ কথায় বলা চলে এগুলি স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি ও উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনির যৌগিকরূপ। চ্, ছ্, জ্, ঝ্ বাংলা ভাষায় চারটি ঘৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি।
নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ধ্বনিগুলির উচ্চারণে শ্বাসবায়ু মুখবিবরের সঙ্গে সঙ্গে নাসারন্ধ্র দিয়েও নির্গত হয়, তাদের নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি বা অনুনাসিক ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। প্রত্যেক বর্গের পঞ্চম ধ্বনিটি নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন – ঙ্, ঞ, ণ, ন, ম্। তবে যথার্থ নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি ঙ, ন, ম্, কারণ বাংলা উচ্চারণে = ং, ঞ = নৃ, প্, ম্ ম্।
উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনিতে উষ্মা বা শ্বাসবায়ুর প্রাধান্য থাকে, তাদের উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। এদের উচ্চারণে বাতাস প্রলম্বিত হয়ে শিসের মতো ধ্বনি সৃষ্টি করে বলে, এদের শিসধ্বনিও বলে। বাংলায় শ্, ষ্, স্, হ্ উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি। উচ্চারণে ঠোঁট ও জিভ পিছিয়ে গেলে প্রশস্ত উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি হয়। যেমন – হ্। জিভ কুঞ্চিত হলে সংকীর্ণ উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি হয়। যেমন – শ্, স্, ষ্। বাংলার ভাষার ‘ষ্’ ‘শ্’ রূপে উচ্চারিত হয়। যুক্তব্যঞ্জন ব্যতীত ‘স্’ ‘শ্’ রূপেই উচ্চারিত হয়। যেমন – ‘স্থান’, ‘স্পৃহা’, ‘স্থল’ ইত্যাদিতে ‘স’ উচ্চারিত হয়।
কম্পিত ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে জিহ্বাগ্র কম্পিত হয়ে উচ্চারণস্থান স্পর্শ করে, তাকে কম্পিত ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – চলিত বাংলায় ‘ব্’ কম্পিত ধ্বনি।
পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে জিভের সামনের ভাগ দন্তমূল স্পর্শ করায় ধ্বনিবাহী বাতাস জিভের দু-পাশ দিয়ে বহির্গত হয়, তাকে পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – চলিত বাংলায় ‘ল্’ পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনি।
তাড়নজাত ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে জিভের নীচের অংশ দাঁতের মূলে আঘাত বা তাড়না করে, তাকে তাড়নজাত ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – চলিত বাংলায় ড়্ ও ঢ়্ -এর উদাহরণ।
রণিত ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে জিভের অগ্রভাগ কাঁপে এবং ধ্বনিবাহী বায়ু নাক ও মুখগহ্বরে বারবার প্রতিফলিত হয়ে নাক, মুখ কিংবা একসঙ্গে নাক-মুখ দিয়ে নির্গত হয়; তাকে রণিত ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। চলিত বাংলায় র্, ন, ম্, এবং ল্ রণিত ব্যঞ্জনধ্বনি।
অন্তঃস্থ ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
স্পর্শধ্বনির এবং উষ্মধ্বনির মধ্যে অবস্থিত চারটি ধ্বনি য্, র্, ল্, ব্। এদের উচ্চারণে ধ্বনিবাহী বায়ু স্বরধ্বনির মতো বাধাহীন নয়, আবার ব্যঞ্জনধ্বনির মতো কঠিন বাধাযুক্ত নয়। সেইজন্য এদের অন্তঃস্থ ধ্বনি বলে। এরা না স্বর না ব্যঞ্জন। এদের মধ্যে ‘য্’ ও ‘ব্’ অর্ধস্বর, ‘র্’ ও ‘ল্’ তরল স্বর। বাংলায় অন্তঃস্থ ‘ব্’ -এর পৃথক উচ্চারণ নেই। অন্তঃস্থ ‘ব্’, বর্গীয় ‘ব্’ রূপেই উচ্চারিত হয়।
আশ্রয়ভাগী ধ্বনি কাকে বলে উদাহরণ দাও।
যে ধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনিকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয়, তাকে আশ্রয়ভাগী ধ্বনি বলে। যেমন – ং (অনুস্বর-স্বরের অনু বা পশ্চাতে বসে বলে এমন নাম), ঃ (বিসর্গ)। ব্যঞ্জন ও স্বরের সঙ্গে এদের সংযোগ নেই কিন্তু উচ্চারণে এরা নানারকম বদল ঘটায়, সেজন্য এদের অযোগবাহ ধ্বনি বলে। এই ধ্বনি অন্য ব্যঞ্জনধ্বনির মতো উচ্চারিত হয়, স্বরধ্বনির সাহায্য নেয় না।
সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে?
দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনের মধ্যে স্বরধ্বনি না থাকলে, তাদের সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – চলিত বাংলায় প্রচলিত সংযুক্ত ব্যঞ্জনগুলি হল, ক্ষ – ক্ + ষ্ = রাক্ষস > রাক্খ্স।
ক্ষতিপূরণ দীর্ঘীভবন কাকে বলে?
শব্দের কোনো যুক্ত বা যুগ্মব্যঞ্জনের একটি লোপ পেলে তার ক্ষতিপূরণস্বরূপ পূর্ববর্তী হ্রস্বস্বরের দীর্ঘস্বরে রূপান্তর প্রক্রিয়াকে ক্ষতিপূরণ দীর্ঘীভবন বলে।
উদাহরণ – সপ্ত > সত্ত > সাত। প্ত> ত্ত >ত।
দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে?
একটিমাত্র ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের জন্য যে প্রযত্নের দরকার, তার মধ্যে দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হলে, তাকে দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি বলে। উদাহরণ – মহাপ্রাণ ধ্বনিগুলি দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি। অল্পপ্রাণ স্পৃষ্ট ব্যঞ্জনের সঙ্গে হ-কার ধ্বনির মিশ্রণেই দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি সৃষ্টি হয়। যেমন – ক্ + হ্ > খ্, গ্ + হ্ > ঘ্।
উচ্চারণস্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণিকরণ সারণির মাধ্যমে দেখাও।
| ব্যঞ্জনধ্বনি | উচ্চারণ স্থান | নাম |
| ক্, খ্, গ্, ঘ্, ঙ্, হ্, ঃ | কণ্ঠ + জিভামূল | কণ্ঠ্যব্যঞ্জনধ্বনি |
| চ্, ছ্, জ্, ঝ্, ঞ্, য্, য়্, শ্ | তালু + জিভামধ্য | তালব্য ব্যঞ্জনধ্বনি |
| ট্, ঠ্, ড্, ঢ্, ণ্, র্, ষ্ | মূর্ধা + উল্টানো জিভাগ্র | মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনি |
| ত্, থ্, দ্, ধ্, ন্, ল্, স্ | দন্ত + জিভাগ্র | দন্ত্যব্যঞ্জনধ্বনি |
| প্, ফ্, ব্, ভ্, ম্ | ওষ্ঠ + অধর | ওষ্ঠ্যব্যঞ্জনধ্বনি |
| অন্তঃস্থ ব্ | দন্ত + ওষ্ঠ | দন্তৌষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনি |
| ঙ্, ঞ্, ণ্, ন্, ম্, ং, ঁ | নাসিকা | নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি |
স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে?
‘ক’ থেকে ‘ম’ পর্যন্ত 25টি ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণকালে জিভ, কণ্ঠ, তালু, মূর্ধা, দন্ত স্পর্শ করে বা ওষ্ঠাধর যুক্ত হয়। তাই এই পঁচিশটি ধ্বনিকে স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।
উচ্চারণস্থান অনুযায়ী স্পর্শধ্বনিগুলি কয়প্রকার ও কী কী?
উচ্চারণস্থান অনুযায়ী স্পর্শধ্বনি পাঁচটি বর্গে বিভক্ত। প্রতি বর্গে পাঁচটি করে ধ্বনি আছে এবং বর্গের প্রথম ধ্বনির নামানুযায়ী বর্গ নাম করা হয়েছে। যেমন –
- ক বর্গ – ক্, খ্, গ্, ঘ্, ঙ্।
- চ বর্গ – চ্, ছ্, জ্, ঝ্, ঞ্।
- ট বর্গ – ট্, ঠ্, ড্, ঢ্, ণ্।
- ত বর্গ – ত্, থ্, দ্, ধ্, ন্।
- প বর্গ – প্, ফ্, ব্, ভ্, ম্।
বর্গানুযায়ী বিভাজিত হওয়ায় স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনিগুলির আর-এক নাম বর্গীয় ব্যঞ্জনধ্বনি।
অবর্গীয় ব্যঞ্জনধ্বনিগুলি কী কী?
য্, র্, ল্, শ্, ষ্, স্, হ্, ড়্, ঢ়্, য়্, ৎ, ং, ঁ – এই 13টি বর্ণ বাংলা ভাষায় অবর্গীয় ধ্বনি হিসেবে পরিচিত।
ক্, খ্, গ্, ঘ্ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
উচ্চারণে স্বাভাবিকতা বজায় থাকলেও মাঝে মাঝে ব্যতিক্রম হয়। যেমন – কাক > কাগ, বাঘ > বাগ ইত্যাদি।
‘ঙ’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
‘ঙ’ -র উচ্চারণ উঁ আঁ। ‘ক্’ বর্গের পঞ্চম বর্ণটি কখনই শব্দের শুরুতে বা ব্যঞ্জনের পরে বসে না। এই ব্যঞ্জনধ্বনি এককভাবে উচ্চারিত হতে পারে না। উচ্চারণে নাসিক্যিভবন ঘটে।
চ্, ছ্, জ্, ঝ্ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
চ্, ছ্, জ্, ঝ্ -এর চলিত বাংলায় উচ্চারণ স্বাভাবিক হলেও উপভাষায় উচ্চারণ বিকৃতি দেখা যায়। যেমন – বলছ > বলচ, সাঁঝ> সাজ। ‘জ’ ও ‘ঝ’ -এর প্রকৃত উচ্চারণ ইংরেজি ‘z’ ও ‘zh’ -এর মতো। বাংলায় অনেক ক্ষেত্রে ‘জ’, ‘য’ -এর মতো উচ্চারিত হয়। যেমন – মাজতে, ভাজতে, জননী ইত্যাদি।
‘ঞ’ ধ্বনির উচ্চারণ রীতি সম্পর্কে লেখো।
‘ঞ’-র উচ্চারণ ইঁঅঁ। ‘ঞ’ শব্দের আদিতে বসে না। চ্, ছ্, জ্, ঝ্ -এর আগে বসলে ‘ন্’ উচ্চারিত হয়। যেমন- ঝঞ্ঝা > ঝন্ঝা, বঞ্চনা > বন্চোনা। ‘ঞ’ এবং ‘জ’ যুক্ত হলে ‘গ’ উচ্চারিত হয়। যেমন – যজ্ঞ > যগগো, অজ্ঞান > অগ্গ্যাঁন ইত্যাদি।
ঠ্, ঢ্ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
ঠ্, ঢ্ ধ্বনির উচ্চারণ স্বাভাবিক হলেও কখনো-কখনো ব্যতিক্রম ঘটে। যেমন – কাঁঠাল > কাঁটাল। ঢ্, ‘রহ্’ উচ্চারিত হয় – মূঢ় > মুরহ্।
‘ণ্’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
বাংলা ভাষায় ‘ণ্’ ধ্বনি ‘ন্’ রূপে উচ্চারিত হয়।
ত্, থ্, দ্, ধ্ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
ত্, থ্, দ্, ধ্ -এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হলেও চলিত বাংলায় উচ্চারণে কখনও পরিবর্তন ঘটে। যেমন – কোথায় > কোতায়, কথন > কতন হয়ে থাকে।
প্, ফ্, ব্, ভ্ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
প্, ফ্, ব্, ভ্ -এর উচ্চারণ স্বাভাবিক। বাংলায় বর্গীয় ‘ব্ব’ইংরেজি ‘b’ ও অন্তঃস্থ ‘ব্’ ইংরেজি ‘w’-র মতো উচ্চারিত হয়। তবে মৌখিক বাংলায়, অন্তঃস্থ ‘ব্’ এর উচ্চারণ বর্গীয় ‘ব্’ এর মতো হয়। ব্-ফলার চারটি উচ্চারণ বাংলায় পাওয়া যায়।
- ব-ফলা যোগে ব্যাঞ্জনদ্বিত্ব- বিল্ব > বিল্ল, বিদ্বান > বিদ্দান।
- দুয়ের বেশি বা কখনও একাধিক যুক্তব্যঞ্জনে সংযুক্ত ‘ব’-ফলার উচ্চারণ নেই। যেমন – উচ্ছ্বাস, উজ্জ্বল।
- তৎসম শব্দে হ্ + ব্ উচ্চারণ ইংরেজি w (উ অ)র মতো। যেমন – বিহ্বল, জিহ্বা ইত্যাদি।
- শব্দের শুরুতে ‘ব’ ফলা থাকলে উচ্চারণে শ্বাসাঘাত পড়ে। যেমন – স্বভাব, স্বজন।
‘ম’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
‘ম’ ধ্বনির উচ্চারণ স্বাভাবিক এবং ‘ও-কার’ -এর মতো। যেমন – ক্ষমতা > ক্ষমোতা, মজবুত > মোজবুত।
- ‘ম্’ কখনো-কখনো অনুনাসিক হয়। যেমন – শ্মশান > শঁশান।
- শব্দমধ্যস্থ ম্ -এর উচ্চারণ স্বাভাবিক এবং ‘ও-কার’ এর মতো। যেমন – যুগ্ম > যুগমো, তন্ময় > তনময়।
- ‘ত’ বর্গে যুক্ত ‘ম্’ সংযুক্ত ব্যঞ্জনের উচ্চারণে দ্বিত্ব ঘটায়। যেমন – ছদ্মবেশ > ছদ্দবেশ, পদ্ম পদ্দ, আত্ম > আত্ত।
- যুক্তব্যঞ্জনে যুক্ত ‘ম্’ -এর উচ্চারণ লুপ্ত হয়। যেমন – লক্ষ্মী > লখ্খি, সূক্ষ্ম > সূখ্খো।
য্, য়্ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
বাংলায় য্ = জ্। যেমন – যদু, যদি। ‘য়্’ ইংরেজি ‘y’ জাতীয় ধ্বনি। যেমন – হয়, রয়।
‘র্’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
‘র্’ ধ্বনির উচ্চারণ স্বাভাবিক। এটি ‘র্’, ‘রেফ’ (´), ‘র’ ফলা (্র) এবং বিসর্গ (ঃ) এই চারটি রূপে পাওয়া যায়।
- শব্দের মাঝে বা শেষে ‘র’ ফলা থাকলে সংযুক্ত ব্যঞ্জনের উচ্চারণ দ্বিত্ব হয়। যেমন – বিব্রত > বিবব্রোতো।
- ‘র্’ শব্দের আদিতে থাকলে দ্বিত্ব হয় না। যেমন – কৃশ, প্রভাত।
বাংলা ব্যঞ্জন ‘র্’ ধ্বনির প্রয়োগ স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দাও।
- বর্ণরূপে – রবি, রাজা।
- রেফ (´) আকারে ব্যঞ্জনধ্বনির শীর্ষে – অর্থ, বর্ণ।
- অন্য ব্যঞ্জনের পর যুক্ত ‘র’ ধ্বনি ‘র’-ফলা (্র) রূপ – গ্রহীতা, শ্রম।
শ্, ষ্, স্ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
বাংলায় তিনটি ধ্বনিই ‘শ্’। কেবল যুক্তবর্ণে ‘স্’ উচ্চারণ হয়। যেমন – স্পষ্ট।
‘হ’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
‘হ্’ -এর উচ্চারণ কখনও স্বরশূন্য নয়। ‘হ্’ দুর্বলতম ব্যঞ্জনধ্বনি। ‘য’ ফলা যুক্ত ‘হ্’ ধ্বনি শব্দের শুরুতে থাকলে স্বাভাবিক থাকে। যেমন – হ্যাঁ, হ্যারিকেন, হ্যারিপটার ইত্যাদি। শব্দের আদিতে না থাকলে ‘হ্’ ও ‘য্’ যথাক্রমে ‘জ’, ‘ক্’ হয়ে যায়। যেমন – সহ্য > সজকো, দাহ্য > দাজঝো ইত্যাদি।
হ্ণ, হ্ন-যুক্তবর্ণ দুটির পার্থক্য কোথায়?
হ্ণ-হ্ > প্, হ্ন = হ্ + ন্।
‘ং’ ধ্বনির উচ্চারণ বাংলা ভাষায় কী হবে?
‘ং’ ধ্বনির উচ্চারণ বাংলা ‘ঙ’-র মতো। যেমন – ঢং (ঢঙ্), সং (সঙ্)।
বিসর্গ (ঃ) ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
বিসর্গ (ঃ) -এর বাংলায় উচ্চারণ নেই। শব্দের মাঝে বসলে পরের ধ্বনিটি দ্বিত্ব হয়। যেমন – দুঃখ দুখখো। পদান্তে বিসর্গ (ঃ) -এর ব্যবহার বর্তমান বাংলা ভাষায় নেই।
চন্দ্রবিন্দু ( ঁ ) ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।
উচ্চারণে চন্দ্রবিন্দু ( ঁ ) -এর স্বাভাবিক আগমন ঘটে। যেমন – ইঁট, পুঁথি। পূর্ববর্তী স্বরকে সানুনাসিক করে তোলে। যেমন – বংশ > বাঁশ, চন্দ্র > চাঁদ। সম্মানার্থে সর্বনামে ব্যবহৃত হয়। যেমন – তাঁর, যাঁরা, তাঁরা।
সঠিক উত্তর নির্বাচন করো
ব্যাকরণে মান্য ধ্বনি –
- যান্ত্রিক ধ্বনি
- প্রাকৃতিক ধ্বনি
- প্রচলিত ধ্বনি
- বাগধ্বনি
উত্তর – 4. বাগধ্বনি
ধ্বনি জুড়ে তৈরি হয় –
- অক্ষর
- বর্ণ
- শব্দ
- বাক্য
উত্তর – 3. শব্দ
মান্য বাংলা ভাষায় ধ্বনি সাধারণত –
- এক প্রকার
- দু-প্রকার
- তিন প্রকার
- চার প্রকার
উত্তর – 2. দু-প্রকার
মান্য বাংলায় স্বরধ্বনির সংখ্যা –
- 5টি
- 7টি
- 9টি
- 11টি
উত্তর – 2. 7টি
মান্য বাংলায় ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা –
- 25টি
- 27টি
- 29টি
- 31টি
উত্তর – 3. 29টি
বাংলা ব্যাকরণে অর্ধস্বরধ্বনির সংখ্যা –
- 2টি
- 3টি
- 4টি
- 5টি
উত্তর – 3. 4টি
মান্য চলিত ভাষায় মোট ধ্বনি –
- 34টি
- 40টি
- 43টি
- 44টি
উত্তর – 2. 40টি
বাংলা বর্ণমালায় মোট বর্ণ আছে –
- 40টি
- 41টি
- 50টি
- 51টি
উত্তর – 4. 51টি
ধ্বনিকে শ্বাসবায়ুর গতিপথ অনুযায়ী কটি ভাগে ভাগ করা যায়? –
- দুই ভাগে
- তিন ভাগে
- চার ভাগে
- পাঁচ ভাগে
উত্তর – 1. দুই ভাগে
স্বর ও ব্যঞ্জন –
- অবিভাজ্য ধ্বনি
- বিভাজ্য ধ্বনি
- স্ফুট ধ্বনি
- অস্ফুট ধ্বনি
উত্তর – 2. বিভাজ্য ধ্বনি
বাংলা বর্ণমালায় স্বরবর্ণ –
- দশটি
- বারোটি
- চৌদ্দটি
- ষোলোটি
উত্তর – 2. বারোটি
বিভাজনের ভিত্তিতে বাংলা স্বরধ্বনিকে ভাগ করা যায় –
- দুই ভাগে
- চার ভাগে
- ছয় ভাগে
- আট ভাগে
উত্তর – 1. দুই ভাগে
বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা –
- 6টি
- 7টি
- 8টি
- 5টি
উত্তর – 2. 7টি
উচ্চারণ প্রকৃতি অনুযায়ী যেটি যৌগিক স্বরধ্বনি –
- উ
- ই
- ঈ
- ঐ
উত্তর – 4. ঐ
‘ি’, ‘ূ’, ‘ৈ,’ ইত্যাদি স্বরধ্বনির-
- লিখিত প্রতীক
- মুখ্য বা ব্যাঞ্জন চিহ্ন
- গৌণ বা ব্যঞ্জন সংযুক্ত চিহ্ন
- বিকল্প চিহ্ন
উত্তর – 1. লিখিত প্রতীক
সময় বা উচ্চারণকালের ভিত্তিতে বাংলা স্বরধ্বনিকে ভাগ করা যায় –
- দুই ভাগে
- তিন ভাগে
- চার ভাগে
- পাঁচ ভাগে
উত্তর – 1. দুই ভাগে
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে তাকে বলে –
- হ্রস্ব স্বরধ্বনি
- দীর্ঘ স্বরধ্বনি
- নিহিত স্বরধ্বনি
- মৌলিক স্বরধ্বনি
উত্তর – 1. হ্রস্ব স্বরধ্বনি
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় হ্রস্বধ্বনি অপেক্ষা বেশি লাগে তাকে বলে –
- হ্রস্ব স্বরধ্বনি
- দীর্ঘ স্বরধ্বনি
- মৌলিক স্বরধ্বনি
- যৌগিক স্বরধ্বনি
উত্তর – 2. দীর্ঘ স্বরধ্বনি
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ সবচেয়ে ওপরে উঠে আসে সেগুলিকে বলে –
- উচ্চ স্বরধ্বনি
- নিম্ন স্বরধ্বনি
- উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি
- নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি
উত্তর – 1. উচ্চ স্বরধ্বনি
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ সবচেয়ে নীচে থাকে তাকে বলে –
- উচ্চ স্বরধ্বনি
- নিম্ন স্বরধ্বনি
- উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি
- নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি
উত্তর – 2. নিম্ন স্বরধ্বনি
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ উচ্চ অপেক্ষা একটু নীচে থাকে, তাদের বলে –
- উচ্চ স্বরধ্বনি
- নিম্ন স্বরধ্বনি
- উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি
- নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি
উত্তর – 3. উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি
যে স্বরধ্বনির উচ্চারণে জিভ উচ্চমধ্যর নীচে এবং নিম্নের ওপরে অবস্থান করে তাকে বলে –
- উচ্চ স্বরধ্বনি
- নিম্ন স্বরধ্বনি
- উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি
- নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি
উত্তর – 4. নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে শ্বাসবায়ু মুখবিবরের বদলে নাক দিয়ে নির্গত হয় তাদের বলে-
- প্লুতস্বর
- দীর্ঘ স্বরধ্বনি
- অনুনাসিক স্বরধ্বনি
- নিম্ন স্বরধ্বনি
উত্তর – 3. অনুনাসিক স্বরধ্বনি
সম্মুখ স্বরধ্বনি হ ল-
- ই, এ, অ্যা
- ই, অ, আ
- আ, এ, ঐ
- ই, ঈ, উ
উত্তর – 1. ই, এ, অ্যা
পশ্চাৎ স্বরধ্বনি হল –
- এ, ঐ, ঔ
- উ, ও আ
- উ, ও, অ
- অ, আ, ই
উত্তর – 3. উ, ও, অ
কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি হল –
- আ
- ই
- এ
- ঔ
উত্তর – 1. আ
বর্তুল বা কুঞ্চিত স্বরধ্বনি হল –
- উ, আ, ও
- উ, অ, ও
- উ, আ, ই
- উ, আ, ঈ
উত্তর – 2. উ, অ, ও
বিস্তৃত বা প্রসূত স্বরধ্বনি হল –
- ই, এ, আ
- ই, এ, অ্যা
- ই, এ, ও
- অ, আ, অ্যা
উত্তর – 2. ই, এ, অ্যা
বিবৃত স্বরধ্বনি হল –
- অ
- আ
- ই
- ঈ
উত্তর – 2. আ
সংবৃত স্বরধ্বনি হল –
- অ, আ
- ই, উ
- উ, ঈ
- এ, ও
উত্তর – 2. ই, উ
অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি হল –
- আ, এ
- অ, আ
- অ্যা, অ
- এ, ও
উত্তর – 4. এ, ও
কণ্ঠ্যতালব্য ধ্বনি দুটি হল –
- ই, ঈ
- আ, এ
- এ, ঐ
- ও, ঔ
উত্তর – 3. এ, ঐ
বাংলা বর্ণমালায় আদি ধ্বনি ‘অ’ উচ্চারিত হয় –
- দুই ভাগে
- চার ভাগে
- ছয় ভাগে
- আট ভাগে
উত্তর – 1. দুই ভাগে
ক্রিয়াপদের শুরু ও শেষে ‘অ’ -এর উচ্চারণ –
- অ্যা
- উ
- ও
- এ
উত্তর – 3. ও
একদল শব্দে ‘এ’ হয়ে যায় –
- ঐ
- ও
- অ্যা
- ই
উত্তর – 3. অ্যা
‘ঐ’ ধ্বনিটি হল –
- দীর্ঘস্বরধ্বনি
- অর্ধ স্বরধ্বনি
- অর্ধ ব্যঞ্জনধ্বনি
- মৌলিক স্বরধ্বনি
উত্তর – 1. দীর্ঘস্বরধ্বনি
কণ্ঠ্যব্যঞ্জনধ্বনিগুলি হল –
- ক্, খ্, গ্, ঘ্, ঙ
- চ্, ছ্, জ্, ঝ্, ঞ্
- ট্, ঠ্, ড্, ঢ্, প্
- প্, ফ্, ব্, ভূ, ম্
উত্তর – 1. ক্, খ্, গ্, ঘ্, ঙ
তালব্য ব্যঞ্জনধ্বনিগুলি হল যথাক্রমে –
- ক্, খ্, গ্, ঘ্, ঙ্
- চ্, ছ্, জ্, ঝ্, ঞ, শ্, য়্, য্
- ত্, থ্, দ্, ধ্, ন্, ল্, স্
- প্, ফ্, ব্, ভূ, ম্
উত্তর – 2. চ্, ছ্, জ্, ঝ্, ঞ, শ্, য়্, য্
ট্, ঠ্, ঢ্, ণ্, র্, ষ্ – এগুলি হল –
- তালব্য ব্যঞ্জনধ্বনি
- দন্ত্যব্যঞ্জনধ্বনি
- মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনি
- ওষ্ঠ্যব্যঞ্জনধ্বনি
উত্তর – 3. মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনি
একটি দন্ত্যব্যঞ্জনধ্বনি হল যথাক্রমে –
- ত্
- প্
- দ্
- পূর্বোক্ত সবকটিই
উত্তর – 4. পূর্বোক্ত সবকটিই
অন্ত্যঃস্থ ‘ব’ একটি –
- দন্ত্যমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি
- দন্তব্যঞ্জনধ্বনি
- দন্তৌষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনি
- কণ্ঠ্যনালীয় ব্যঞ্জনধ্বনি
উত্তর – 3. দন্তৌষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনি
ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি সাধারণত হয় –
- বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ধ্বনি
- বর্গের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ধ্বনি
- বর্গের পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ধ্বনি
- বর্গের চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ধ্বনি
উত্তর – 1. বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ধ্বনি
অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি হয় সাধারণত –
- বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় ধ্বনি
- বর্গের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধ্বনি
- বর্গের চতুর্থ ও পঞ্চম ধ্বনি
- বর্গের তৃতীয় ও পঞ্চম ধ্বনি
উত্তর – 1. বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় ধ্বনি
ব্যাকরণে ‘প্রাণ’ শব্দের অর্থ –
- জীবন
- জল
- বিশ্বাসবায়ু
- বায়ুপ্রবাহ
উত্তর – 3. বিশ্বাসবায়ু
বর্গের প্রথম ও তৃতীয় ধ্বনি হল –
- মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি
- অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি
- ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি
- অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি
উত্তর – 4. অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি
বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ ধ্বনি হল –
- অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি
- মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি
- ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি
- অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি
উত্তর – 2. মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি
বাংলা ভাষায় সৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি হল –
- ক্, খ্, গ্, ঘ্
- চ্, ছ্, জ্, ঝ্
- ট্, ঠ, ড্, চ্
- প্, ফ্, ব্, ৎ
উত্তর – 2. চ্, ছ্, জ্, ঝ্
আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে যথার্থ নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি আছে –
- 4
- 5
- 6
- 3
উত্তর – 4. 3
জিহ্বাগ্র কেঁপে উঠে উচ্চারণ স্থান ছুঁয়ে উচ্চারণ করে –
- ল্
- চ্
- র্
- প্
উত্তর – 3. র্
তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনি হল –
- ড়্, ঢ়্
- ক্, খ্
- চ্, ছ্
- ঞ, ণ্
উত্তর – 1. ড়্, ঢ়্
একটি অযোগবাহ ব্যঞ্জনধ্বনি হল –
- বিসর্গ (ঃ)
- চন্দ্রবিন্দু (ঁ)
- ত্
- খ্
উত্তর – 1. বিসর্গ (ঃ)
অযোগবাহ ধ্বনির অপর নাম –
- বর্গীয় ধ্বনি
- নিরাশ্রয় ধ্বনি
- আশ্রয়ভাগী ধ্বনি
- সংযুক্ত ধ্বনি
উত্তর – 3. আশ্রয়ভাগী ধ্বনি
‘ঞ’ ব্যঞ্জনধ্বনি চলিত মান্য বাংলা ভাষায় উচ্চারিত হয় –
- ইঁ ওঁ
- নি আঁ
- ইঁ আঁ
- উঁ অঁ
উত্তর – 3. ইঁ আঁ
‘ল’ উচ্চারণ বাংলায় –
- দু-প্রকার
- এক প্রকার
- তিন প্রকার
- পাঁচ প্রকার
উত্তর – 3. তিন প্রকার
দুর্বলতম ব্যঞ্জনধ্বনি –
- য়্
- ড়্
- দ্
- হ্
উত্তর – 4. হ্
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণের “ব্যাকরণ ও নির্মিতি” থেকে “ধ্বনি, ধ্বনি পরিবর্তন ও সন্ধি” -এর উপবিভাগ “ধ্বনি, ধ্বনির প্রকারভেদ” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই অংশটি নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন