আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” অধ্যায়ের ‘প্রাণীদেহে সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

প্রাণী হরমোনের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
প্রাণী হরমোনের বৈশিষ্ট্য –
প্রাণী হরমোনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
উৎস –
প্রাণী হরমোন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা নালীবিহীন গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন অঙ্গের অন্তঃক্ষরা কোশসমষ্টি (যেমন – খাদ্যনালীর প্রাচীরগাত্র, শুক্রাশয়) থেকেও হরমোন ক্ষরিত হয়।
রাসায়নিক প্রকৃতি –
হরমোন সাধারণত প্রোটিন, পেপটাইড, গ্লাইকোপ্রোটিন বা স্টেরয়েডধর্মী।
পরিবহণ –
উৎপত্তিস্থল থেকে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয় ও লক্ষ্য অঙ্গ বা কার্যকারী অঙ্গে পৌঁছোয়।
কাজ ও পরিণতি –
প্রত্যেক হরমোন সাধারণত একটি নির্দিষ্ট অঙ্গের ওপর ক্রিয়া করে এবং ওই অঙ্গের সার্বিক বৃদ্ধি, বিকাশ ও কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। একে হরমোনটির লক্ষ্য অঙ্গ বলে। যেমন — পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন TSH থাইরয়েড গ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে তার বৃদ্ধি, বিকাশ ও কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত হরমোন খুব অল্প সময়ের জন্য সক্রিয় হয়। কার্যকারিতার পর হরমোন বিনষ্ট হয় বা অন্য যৌগে পরিণত হয়, যেগুলি মূত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে নির্গত হয়।
বাহক –
প্রাণীদেহে হরমোন উৎপত্তিস্থল থেকে রাসায়নিক বার্তাকে দূতের মতো লক্ষ্য অঙ্গে বহন করে নিয়ে যায়। তাই হরমোনকে রাসায়নিক বার্তাবাহক (chemical messenger) বলা হয়।
নিয়ন্ত্রণ –
অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো একটি হরমোনের ক্ষরণ অপর আর একটি গ্রন্থির ক্ষরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। একে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলে। এক্ষেত্রে নিঃসৃত হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি বা হ্রাসে নিয়ন্ত্রক হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটে।
ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝ? একটি শব্দচিত্রসহ উদাহরণের সাহায্যে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বুঝিয়ে দাও।
ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ –
যখন কোনো একটি হরমোনের ক্ষরণ অপর কোনো একটি গ্রন্থির ক্ষরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন সেই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলে। এক্ষেত্রে নিঃসৃত হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি বা হ্রাসে নিয়ন্ত্রক হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটে।
ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণের ব্যাখ্যা –
সাধারণত কোনো হরমোনের ক্ষরণমাত্রা অপর একটি হরমোনের ক্ষরণমাত্রার ওপর নির্ভর করে। একে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলা হয়। একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝানো হল। মানুষের রক্তে T3 ও T4 -এর মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বৃদ্ধি পেলে, এগুলি মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসকে ঋণাত্মক সংকেত (negative signal) পাঠায়। তার ফলে হাইপোথ্যালামাসের TSH-RH বা TRH হরমোনের সংশ্লেষ ও ক্ষরণ ব্যাহত হয়। এর ফলে অগ্র পিটুইটারি গ্রন্থির থাইরোট্রফ নামক কোশগুলি থেকে TSH নিঃসরণের মাত্রা হ্রাস পায়। একে ঋণাত্মক ফিডব্যাক (negative feedback) বলে। রক্তে TSH -এর মাত্রা হ্রাস পেলে, তা থাইরয়েড গ্রন্থির ফলিক্সের কোশগুলিতে উদ্দীপনার মাত্রা হ্রাস করে অধিক মাত্রায় T3 ও T4 সংশ্লেষে বাধা দেয়। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে T3 ও T4 সংশ্লেষ ও ক্ষরণের মাত্রা হ্রাস পেলে রক্তে T3 ও T4 -এর মাত্রাও হ্রাস পায়। রক্তে T3 ও T4 -এর মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে হ্রাস পেলে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশে ধনাত্মক সংকেত (positive signal) প্রেরিত হয়। তার ফলে হাইপোথ্যালামাসে TRH -এর সংশ্লেষ ও ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। TRH রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে অগ্র পিটুইটারি গ্রন্থির থাইরোট্রফ নামক কোশগুলিকে উদ্দীপ্ত করে। এর ফলে TSH -এর ক্ষরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। একে ধনাত্মক ফিডব্যাক (positive feedback) বলে। ফলস্বরূপ রক্তেও TSH -এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। রক্তে TSH -এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে থাইরয়েড গ্রন্থির ফলিক্সের কোশসমূহ উদ্দীপ্ত হয়। তার ফলে T3 ও T4 সংশ্লেষ ও নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়। এভাবে রক্তে T3 ও T4 -এর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।
মানবদেহে নানা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অবস্থান ও তাদের ক্ষরণ পদার্থ উল্লেখ করো।
মানবদেহে বিভিন্নপ্রকার অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অবস্থান ও ক্ষরিত হরমোন –
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি | অবস্থান | ক্ষরিত হরমোন |
হাইপোথ্যালামাস | মানব মস্তিষ্কে থ্যালমাস অঞ্চলের নীচে অবস্থিত | CRH, GHRH, TRH, GnRH, PRH, MRH, ADH |
পিটুইটারি বা হাইপোফাইসিস | মস্তিষ্কের তৃতীয় প্রকোষ্ঠটির নীচে স্ফেনয়েড অস্থিনির্মিত সেলাটারসিক নামক প্রকোষ্ঠ | অগ্র পিটুইটারি – GH বা STH, TSH, ACTH, GTH (FSH, LH, ICSH, প্রোল্যাকটিন/LTH) পশ্চাৎ পিটুইটারি – ADH বা ভ্যাসোপ্রেসিন, অক্সিটোসিন |
থাইরয়েড গ্রন্থি | গলায় স্বরযন্ত্রের নীচে শ্বাসনালীর সামনে অবস্থিত | থাইরক্সিন বা T4, ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন (T3) |
অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থি বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি | বৃক্কের ওপরে একটি করে মোট দুইটি | অ্যাড্রেনাল মেডালা-অ্যাড্রেনালিন ও নর-অ্যাড্রেনালিন |
অগ্ন্যাশয় | উদরগহবরে পাকস্থলীর সঙ্গে অনুপ্রস্থভাবে বিন্যস্ত | আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যানস্ -এর আলফা (α) কোশ থেকে গ্লুকাগন ও বিটা ( β) কোশ থেকে ইনসুলিন |
শুক্রাশয় গ্রন্থি | পুরুষদের উদরের নীচে শুক্রথলিতে দুটি গ্রন্থি বিন্যস্ত | টেস্টোস্টেরন বা অ্যান্ড্রোজেন |
ডিম্বাশয় গ্রন্থি | মহিলাদের উদরগহবরে জরায়ুর উভয় পাশে মোট দুইটি গ্রন্থি বিন্যস্ত | ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন |
হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত হরমোনের নাম ও তাদের কাজ লেখো।
হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত হরমোন –
হাইপোথ্যালামাস থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসৃত হয়। এরা প্রধানত পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি হরমোনের নাম হল – GHRH বা গ্রোথ হরমোন রেগুলেটিং হরমোন, GnRH বা গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমোন, PRH বা প্রোল্যাকটিন রিলিজিং হরমোন, TRH বা থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন এবং CRH বা কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন।
হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত হরমোনের কাজ –
হাইপোথ্যালামাস থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলির কাজ নিম্নরূপ।
- GHRH বা গ্রোথ হরমোন রিলিজিং হরমোন – অগ্র পিটুইটারি থেকে গ্রোথ হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- GnRH বা গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমোন – অগ্র পিটুইটারি থেকে গোনাডোট্রপিক হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- PRH বা প্রোল্যাকটিন রিলিজিং হরমোন – অগ্র পিটুইটারি থেকে প্রোল্যাকটিনের ক্ষরণ ত্বরান্বিত করে।
- TRH বা থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন – অগ্র পিটুইটারি থেকে থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- CRH বা কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন – অগ্র পিটুইটারি থেকে ACTH -এর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- MRH বা মেলানোসাইট রিলিজিং হরমোন – অগ্র পিটুইটারি থেকে MSH -এর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন (ADH) ও অক্সিটোসিন – এই হরমোন দুটি হাইপোথ্যালামাসে সংশ্লেষিত হয়ে পশ্চাৎ পিটুইটারিতে বাহিত হয়। সেখান থেকে নিঃসৃত হয়ে দেহের বিভিন্ন অংশের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে।
GH বা STH -এর কাজ কী? বামনত্ব রোগের কারণ ও লক্ষণগুলি লেখো।
GH বা STH -এর কাজ –
- মানবদেহে সোমাটোট্রপিক হরমোনের কাজগুলি এখানে আলোচনা করা হল।
- সোমাটোট্রপিক হরমোন মানবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। এটি দেহের বিভিন্ন অস্থি ও তরুণাস্থি গঠনের মাধ্যমে দেহের সার্বিক বৃদ্ধি ঘটায়।
- এ ছাড়া এই হরমোন পেশিকলা, যকৃৎ ও বৃক্কের বৃদ্ধির সহায়ক। ও প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও স্নেহপদার্থ বিপাকে এই হরমোনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে।
- শৈশব ও যৌবনের প্রারম্ভে এই হরমোন অতিমাত্রায় ক্ষরিত হলে অতিকায়ত্ব বা জাইগ্যানটিজম রোগ হয়।
- প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে এই হরমোন অতিমাত্রায় ক্ষরিত হলে অ্যাক্রোমেগালি রোগ হয়। এই রোগে রোগীর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটে না। মুখমণ্ডল, আঙুল প্রভৃতি অংশের বৃদ্ধি ঘটে। এর ফলে মুখমণ্ডল আকারে বড়ো হয়।
- শৈশব ও বাল্যকালে এই হরমোন অল্প পরিমাণে ক্ষরিত হলে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। একে ডোয়ার্ফিজম বা বামনত্ব বলে।
বামনত্ব রোগের কারণ ও লক্ষণ –
বামনত্ব রোগের কারণ –
অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তথা শৈশবে ও বাল্যকালে প্রয়োজনের তুলনায় কম STH বা GH -এর ক্ষরণে বামনত্ব বা ডোয়ার্ফিজম রোগ দেখা যায়।
বামনত্ব রোগের লক্ষণ –
- বামনত্ব রোগের লক্ষণ বা উপসর্গগুলি হল, এই রোগে –
- দেহের স্বাভাবিক সামগ্রকি বৃদ্ধি প্রধানত অস্থি ও পেশির বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
- পরিণত অবস্থায় দেহের উচ্চতা 3ft বা 85cm -এর কাছাকাছি পৌঁছোয়।
- দেহের বিভিন্ন আন্তরযন্ত্রের বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে হ্রাস পায়।
- শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়ের বৃদ্ধি ও স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয়।
- গৌণ বা আনুষঙ্গিক যৌন লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ বিলম্বিত হয়।
পিটুইটারি নিঃসৃত GTH গুলির নাম ও প্রত্যেকের প্রধান কাজ লেখো।
GTH বা গোনাডোট্রপিক হরমোনগুলির নাম –
অগ্র পিটুইটারি নিঃসৃত GTH গুলি হল – FSH বা ফলিক্স স্টিমুলেটিং হরমোন, LH বা লিউটিনাইজিং হরমোন (স্ত্রীদের ক্ষেত্রে) ও ICSH বা ইনটারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন (পুরুষদের ক্ষেত্রে)। এ ছাড়া LTH বা লিউটোট্রফিক হরমোন বা প্রোল্যাকটিন হরমোনকেও GTH -এর অন্তর্গত বলে ধরা যেতে পারে। তবে এটি একটি পৃথক হরমোন যা ল্যাক্টোট্রপিন নামে পরিচিত।
GTH বা গোনাডোট্রপিক হরমোনগুলির কাজ –
FSH বা ফলিক্স স্টিমুলেটিং হরমোনের কাজ –
- এই হরমোন-স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ে ডিম্বথলির বৃদ্ধিতে ও ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে।
- পুরুষদেহে শুক্রাণু উৎপাদন বা স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
LH বা লিউটিনাইজিং হরমোন –
- এই হরমোন স্ত্রীদেহে ডিম্বাণু নিঃসরণে ও পরিণত ডিম্বথলি থেকে পীতগ্রন্থি সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
- মহিলাদের পীতগ্রন্থি থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে।
ICSH বা ইনটারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন –
পুরুষদেহে ICSH শুক্রাশয়ের ইনটারস্টিশিয়াল কোশ বা লেডিগ বর্ণিত আন্তরকোশ থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণকে উদ্দীপিত করে।
LTH বা লিউটোট্রফিক হরমোন বা প্রোল্যাকটিন –
- এই হরমোন মাতৃদেহে স্তনদুগ্ধ উৎপাদন ও ক্ষরণকে উদ্দীপিত করে।
- নারীদের গর্ভাবস্থায় পীতগ্রন্থিকে নষ্ট হতে দেয় না এবং এর ক্ষরণ তথা প্রোজেস্টেরন নিঃসরণ অব্যাহত রাখে।
TSH -এর কাজ উল্লেখ করো। থাইরক্সিনের অতিরিক্ত ক্ষরণজনিত রোগের লক্ষণগুলি লেখো।
TSH -এর কাজ –
TSH -এর কাজগুলি হল –
- থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কার্যকারিতার জন্য এই হরমোন একান্ত প্রয়োজন। এই হরমোন থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন হরমোনের (T3 ও থাইরক্সিন বা T4) ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- এই হরমোনের অধিক ক্ষরণে থাইরয়েড গ্রন্থি আকারে বৃদ্ধি পায়।
- এই হরমোনের অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন ক্ষরণ হ্রাস পায়।
থাইরক্সিনের অতিরিক্ত ক্ষরণজনিত রোগের লক্ষণ –
থাইরক্সিনের অতিরিক্ত ক্ষরণের ফলে –
- থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে।
- অক্ষিগোলক বিস্ফারিত হয়, অক্ষিগোলক অক্ষিকোটর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে, এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই রোগটির নামকরণ বহিঃচক্ষু গলগণ্ড করা হয়।
- বিপাকীয় হার বেড়ে যায়।
- হৃৎপিন্ডের স্পন্দনহার বেড়ে যায়।
- BMR বা বেসাল মেটাবলিক রেট এবং দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
- অনিদ্রা রোগ দেখা দেয়, মেজাজ রুক্ষ ও খিটখিটে হয়ে যায়।
- আবেগ প্রবণতা বেড়ে যায়।
ACTH এবং GTH -এর নিঃসরণ-স্থান ও কাজ উল্লেখ করো।
ACTH বা অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক হরমোন –
নিঃসরণ-স্থান – পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগের কর্টিকোট্রফ কোশ থেকে ACTH নিঃসৃত হয়।
কাজ – ACTH -এর কাজগুলি হল –
- ACTH হরমোন অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
- ACTH অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স থেকে বিভিন্ন হরমোনের, যেমন – গ্লুকোকর্টিকয়েড, মিনার্যালোকর্টিকয়েড ও সেক্স স্টেরয়েড হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- ACTH অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স থেকে নিঃসৃত গ্লুকোকর্টিকয়েডের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কার্বোহাইড্রেট বিপাককে প্রভাবিত করে।

GTH বা গোনাডোট্রপিক হরমোন –
নিঃসরণ-স্থান – GTH পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগ থেকে নিঃসৃত হয়। অগ্র পিটুইটারির গোনাডোট্রফ কোশ থেকে প্রধানত দুটি হরমোন – FSH (ফলিক্স স্টিমুলেটিং হরমোন) ও LH (লিউটিনাইজিং হরমোন) ক্ষরিত হয় এবং অগ্র পিটুইটারির ল্যাক্টোট্রফ কোশ থেকে LTH (লিউটোট্রপিক হরমোন) ক্ষরিত হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য বর্তমানে LTH -কে গোনাডোট্রপিক হরমোন হিসেবে গণ্য করা হয় না।
কাজ – সাধারণত কয়েকটি হরমোনকে একত্রে GTH বলা হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষদেহে এই হরমোনগুলির বিভিন্নপ্রকার কাজ করে থাকলেও সাধারণভাবে এদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ বর্তমান। যথা –
- পুরুষের দেহে শুক্রাশয়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া যৌবনকালে পুরুষাঙ্গ ও অন্যান্য যৌন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকাশে এবং গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশে সাহায্য করে।
- স্ত্রীদেহে স্তনগ্রন্থি ও ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, যৌবনে স্ত্রীসুলভ লক্ষণ প্রকাশে ও যৌন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশে সাহায্য করে। যৌবনপ্রাপ্ত স্ত্রীদেহে মাসিক রজঃচক্রের স্বাভাবিকতা নিয়ন্ত্রণ করে।
থাইরক্সিনের উৎস কী? থাইরক্সিন হরমোনের কাজ উল্লেখ করো বা ক্যালোরিজেনিক হরমোনটির কাজ লেখো।
থাইরক্সিনের উৎস –
থাইরয়েড গ্রন্থির ফলিক্স কোশে থাইরক্সিন হরমোন সংশ্লেষিত হয়।
থাইরক্সিন হরমোনের কাজ –
থাইরক্সিন হরমোনের কাজগুলি এখানে আলোচনা করা হল —
- দেহের বৃদ্ধি, মানসিক পরিপূর্ণতা, যৌবনের লক্ষণসমূহের বহিঃপ্রকাশ, বিপাক নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি হল থাইরক্সিনের প্রধান কাজ।
- এই হরমোন দেহের কলাকোশে অক্সিজেনের ব্যবহার বাড়িয়ে তাপ উৎপাদনে সাহায্য করে। এই কারণে থাইরক্সিনকে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলা হয়।
- থাইরক্সিন মৌল বিপাক হার (BMR) বৃদ্ধি করে।
- এই হরমোন অন্ত্র থেকে গ্লুকোজ শোষণ করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়।
- লোহিতকণিকার পূর্ণতাপ্রাপ্তিতে থাইরক্সিনের বিশেষ ভূমিকা আছে।
- হৃৎস্পন্দনের হার, রক্তচাপ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের ওপর থাইরক্সিনের প্রভাব আছে।
- ব্যাঙাচির পূর্ণাঙ্গ ব্যাং -এ রূপান্তরে (metamorphosis) থাইরক্সিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- স্তনগ্রন্থির দুগ্ধক্ষরণে এই হরমোন সাহায্য করে। অনেকের মতে মস্তিষ্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বৃদ্ধি ও বিকাশেও এর ভূমিকা আছে।

ইনসুলিন -এর কাজ উল্লেখ করো।
ইনসুলিন -এর কাজ –
ইনসুলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলি এখানে আলোচিত হল —
- ইনসুলিন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে রক্ত থেকে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- ইনসুলিন কলাকোশের ভেদ্যতা বাড়িয়ে কোশকে গ্লুকোজ গ্রহণে সহায়তা করে।
- গ্লাইকোজেনেসিসের মাধ্যমে যকৃৎ ও পেশিতে গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনরূপে সঞ্চয় করা এবং প্রয়োজন অনুসারে গ্লুকোজের জারণ প্রভাবিত করা ইনসুলিনের অন্যতম কাজ।
- গ্লাইকোজেন থেকে গ্লুকোজ উৎপাদনে (গ্লাইকোজেনোলাইসিস) ইনসুলিন বাধা দেয়।
- প্রোটিন ও ফ্যাট থেকে গ্লুকোজ উৎপাদন (গ্লুকোনিওজেনেসিস) ব্যাহত করে।
- কোশে গ্লুকোজকে জারিত করে পাইরুভিক অ্যাসিডে পরিণত করতে সাহায্য করে।
গ্লুকাগন হরমোনের উৎস ও কাজ সম্পর্কে লেখো। ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।
গ্লুকাগনের উৎস –
মানবদেহে অগ্ন্যাশয়ের অন্তর্গত আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্সের আলফা কোশ (α-cell) থেকে গ্লুকাগন নামক হরমোন সংশ্লেষিত ও নিঃসৃত হয়।
গ্লুকাগনের কাজ –
মানবদেহে গ্লুকাগন প্রধান যে কাজগুলি সম্পন্ন করে, সেগুলি এখানে আলোচনা করা হল –
- রক্তে শর্করার (গ্লুকোজের) মাত্রা হ্রাস পেলে যকৃতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত করে। এই গ্লুকোজ রক্তে মুক্ত হয় ও তার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। উল্লেখ্য, এই হরমোন পেশির গ্লাইকোজেনকে ভাঙতে সাহায্য করে না।
- রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস পেলে গ্লুকাগন বিভিন্ন নন-কার্বোহাইড্রেট, যেমন – প্রোটিন ও ফ্যাট থেকে গ্লুকোজের সংশ্লেষ বৃদ্ধি করে।
- কলাকোশে গ্লুকোজের জারণ মাত্রা হ্রাস করে ও ফ্যাটের ভাঙন বাড়িয়ে দেয়।
ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের পার্থক্য –
বিষয় | ইনসুলিন | গ্লুকাগন |
উৎস | অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্সের β-কোশ। | অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্সের α-কোশ। |
কাজ | রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়লে গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে পরিণত করে, গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। | এটি ইনসুলিনের বিপরীত ক্রিয়া করে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ হ্রাস পেলে, গ্লাইকোজেন, প্রোটিন, ফ্যাট ইত্যাদির জারণ দ্বারা গ্লুকোজ প্রস্তুত করে রক্তে এর পরিমাণ বাড়ায়। |
অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনগুলির নাম লেখো। অ্যাড্রেনালিন হরমোনের কাজ উল্লেখ করো।
অথবা, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি ক্ষরিত হরমোনের কাজ ব্যাখ্যা করো।
অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনসমূহ –
অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিটির কর্টেক্স অঞ্চল থেকে তিন ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। এগুলি হল –
- গ্লুকোকটিকয়েড।
- মিনার্যালোকর্টিকয়েড।
- সেক্স স্টেরয়েড।
অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডালা অংশ থেকে আরও দুটি হরমোন ক্ষরিত হয়, যথা –
- অ্যাড্রেনালিন।
- নর-অ্যাড্রেনালিন।
অ্যাড্রেনালিন হরমোনের কাজ –
অ্যাড্রেনালিন হরমোনের কাজগুলি এখানে আলোচনা করা হল –
- অ্যাড্রেনালিন হৃৎস্পন্দন হার, হার্দ-উৎপাদ ও রক্তচাপ বাড়ায়।
- রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ এবং BMR বৃদ্ধি করে।
- শ্বসনের হার নিয়ন্ত্রণে অ্যাড্রেনালিনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। ফুসফুসের ব্রংকিওলের প্রসারণের মাধ্যমে অ্যাড্রেনালিন এই কাজ করে।
- অ্যাড্রেনালিন তারারন্ধ্র প্রসারিত হতে সাহায্য করে। এই কারণে চক্ষু পরীক্ষার সময় ডাক্তাররা অনেক সময় এই হরমোন ব্যবহার করেন।
- অ্যাড্রেনালিনের প্রভাবে অতিরিক্ত ঘাম নিঃসৃত হয় ও ত্বকের লোম খাড়া হয়।
- উত্তেজনা, ক্রোধ, ভয় প্রভৃতি অবস্থায় এই হরমোন বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে দেহকে ওই অবস্থার মোকাবিলায় উপযোগী করে। এই কারণে অ্যাড্রেনালিনকে আপৎকালীন বা জরুরিকালীন হরমোন বলা হয়।
জরুরিকালীন অবস্থায় অ্যাড্রেনালিন দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা ব্যাখ্যা করো।
অ্যাড্রেনালিনের প্রভাব –
জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর অ্যাড্রেনালিন হরমোনের প্রভাব নীচে আলোচনা করা হল।
- অ্যাড্রেনালিন হরমোন হৃৎপিন্ডের ওপর ক্রিয়া করে, ফলে হৃৎস্পন্দন ও হার্দ-উৎপাদ বৃদ্ধি পায়। ফলে পেশিকোশে গ্লুকোজ ও অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। এই কারণে হৃৎপিণ্ডে জোরে শব্দ (thumping heart) পাওয়া যায়।
- মস্তিষ্কের শ্বাসকেন্দ্র অ্যাড্রিনালিনের প্রভাবে উত্তেজিত হয়, ফলে দ্রুত ও গভীর শ্বাসক্রিয়া ঘটে। এর মাধ্যমে ফুসফুসে দ্রুত O2 প্রেরণ এবং কলাকোশ থেকে দ্রুত CO2 অপসারিত হয়। এই কারণে জোরে জোরে শ্বাসগ্রহণ বা হাঁপানি দেখা যায়।
- অ্যাড্রেনালিন ত্বক ও পৌষ্টিকনালী সংলগ্ন রক্তবাহের সংকোচন ঘটায়। ফলে এই দুটি অংশে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ কমে ও পেশিতে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ, ব্যক্তি বিবর্ণ হয় ও গলা শুকিয়ে যায়।
- অ্যাড্রেনালিনের প্রভাবে পেশি উত্তেজিত ও দ্রুত ক্রিয়াশীল হয়। ফলে পেশি দৃঢ় হয় ও কাঁপুনি (shivering) দেখা যায়।
ইস্ট্রোজেন -এর উৎস ও কাজ উল্লেখ করো।
ইস্ট্রোজেন -এর উৎস –
ডিম্বাশয়ের গ্রাফিয়ান ফলিক্স ইস্ট্রোজেন হরমোন সংশ্লেষ ও নিঃসরণ করে।
ইস্ট্রোজেন -এর কাজ –
স্ত্রীদেহে ইস্ট্রোজেন নিম্নলিখিত ভূমিকাগুলি পালন করে।
ডিম্বাশয়ের গঠন ও ডিম্বাণু নিঃসরণ –
ইস্ট্রোজেন ডিম্বাশয়ের গ্রাফিয়ান ফলিক্স -এর পরিণতিতে ও ডিম্বাণু নিঃসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ –
এই হরমোন বিভিন্ন গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন – স্তন গঠন, বাহুমূল (axilla), শ্রোণিদেশ (pubis) প্রভৃতি স্থানে যৌন কেশোদ্গম ও যৌন কেশের স্ত্রী-সুলভ বিন্যাস নিয়ন্ত্রণ করে ইস্ট্রোজেন। এ ছাড়া, স্ত্রী-সুলভ সরু কণ্ঠস্বর, মসৃণ ও স্বল্পলোমবিশিষ্ট ত্বক প্রভৃতি অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলিও ইস্ট্রোজেন নিয়ন্ত্রণ করে।
আনুষঙ্গিক যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণ –
নারীদেহে আনুষঙ্গিক যৌনাঙ্গ অর্থাৎ জরায়ু, ফ্যালোপিয়ান নালী, যোনি প্রভৃতির বৃদ্ধি ও পূর্ণতাপ্রাপ্তি নিয়ন্ত্রণ করে এবং শ্রোণিচক্র প্রসারিত করে।
মাসিক রজঃচক্র নিয়ন্ত্রণ –
এই হরমোন মাসিক রজঃচক্রের আবর্তন নিয়মিত করে।
অস্থি গঠন –
ইস্ট্রোজেন মহিলাদের হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই রজঃনিবৃত্তির (menopause) পর ইস্ট্রোজেন নিঃসরণ কমে গেলে অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে (osteoporosis)।
বিপাক ক্রিয়া –
এই হরমোন নারীদেহে প্রোটিন ও চর্বি সংশ্লেষ বাড়ায় এবং কাঁধ, নিতম্ব, উরু ইত্যাদি অঙ্গে চর্বির স্ত্রী-সুলভ সঞ্চয় ঘটায়। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বা লাবণ্য বৃদ্ধি পায়।
প্রোজেস্টেরন -এর উৎস ও কাজ উল্লেখ করো।
প্রোজেস্টেরনের উৎস –
ডিম্বাশয়ের পীতগ্রন্থি বা করপাস লিউটিয়াম থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন সংশ্লেষ ও নিঃসরণ হয়।
প্রোজেস্টেরনের কাজ –
স্ত্রীদেহে প্রোজেস্টেরনের প্রধান কাজগুলি নীচে আলোচিত হল।
জরায়ুর বৃদ্ধিতে –
গর্ভাবস্থায় জরায়ুর বৃদ্ধিতে প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন যৌথভাবে সাহায্য করে।
ডিম্বাণু রোপণ ও গর্ভসঞ্চার –
নিষিক্ত ডিম্বাণুকে জরায়ুগাত্রে রোপণে ও গর্ভসঞ্চারে প্রোজেস্টেরনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
অমরা গঠন –
জরায়ুগাত্রে ডিম্বাণুর রোপণের পর প্রোজেস্টেরনের প্রভাবে অমরা গঠিত হয় ও তার বৃদ্ধি ঘটে।
গর্ভাবস্থায় –
স্ত্রীদেহে গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে, ভ্রুনের বৃদ্ধি ও পুষ্টিতে প্রোজেস্টেরন প্রধান ভূমিকা পালন করে।
স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি –
প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন মিলিতভাবে গর্ভাবস্থায় স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। প্রোজেস্টেরন স্তনগ্রন্থিতে নালিকা সৃষ্টি ও বিকাশে সাহায্য করে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে দুগ্ধ নিঃসরণেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডিম্বাশয়ের ওপর প্রভাব –
এই হরমোন গর্ভাবস্থায় অমরা বা প্ল্যাসেন্টা থেকে বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে FSH বা LH নিঃসরণ কমায়, ফলে গর্ভাবস্থায় ডিম্বাণু উৎপাদন এবং রজঃচক্র বন্ধ থাকে।
টেস্টোস্টেরন -এর উৎস এবং কাজ উল্লেখ করো।
টেস্টোস্টেরন -এর উৎস –
টেস্টোস্টেরন প্রধানত পুরুষদেহে বয়ঃসন্ধিকাল ও পরবর্তী সময়ে শুক্রাশয়ে অবস্থিত লেডিগের আন্তরকোশ থেকে ক্ষরিত হয়। এ ছাড়া অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চল থেকেও এই হরমোনটি নিঃসৃত হয়।
টেস্টোস্টেরন -এর কাজ –
পুরুষদেহে টেস্টোস্টেরনের কাজগুলি নিম্নরূপ।
শুক্রাণু উৎপাদন –
এটি বয়ঃসন্ধিকালে ও তার পরবর্তী সময়ে শুক্রাশয়ের সেমিনিফেরাস নালিকাতে (শুক্রোৎপাদী নালিকা) শুক্রাণু উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
আনুষঙ্গিক যৌন গ্রন্থি ও অঙ্গের বিকাশ –
এই হরমোন পুরুষদেহে বিভিন্ন আনুষঙ্গিক যৌন গ্রন্থি ও অঙ্গের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে।
গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য –
পুরুষদের বিভিন্ন গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য, যেমন – গোঁফ-দাড়ি গজানো, বাহুমূল (axilla), শ্রোণি (pubis) প্রভৃতি অঞ্চলে কেশোদ্গম এবং যৌন কেশের পুরুষ-সুলভ বিন্যাস নিয়ন্ত্রণ করে। ভারী পুরুষালি কণ্ঠস্বর সৃষ্টিতেও এই হরমোনের ভূমিকা আছে।
পেশি ও অস্থির বৃদ্ধি –
টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে বয়ঃসন্ধিকাল ও তার পরে পুরুষদেহে অস্থি, পেশি ও অন্যান্য কলাকোশে প্রোটিন সংশ্লেষ ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া এই হরমোনের প্রভাবে পুরুষদের দেহে অস্থি এবং অস্থিপেশি সুগঠিত হয়।
বিপাক ক্রিয়া –
টেস্টোস্টেরন পুরুষদেহে মৌল বিপাক হার বাড়ায়।
প্রাণী হরমোনের নির্দিষ্ট মাত্রায় ক্ষরণ গুরুত্বপূর্ণ কেন? নীচের রোগ দুটির কারণ ও উপসর্গ বিশদে ব্যাখ্যা করো – বামনত্ব ও গলগণ্ড।
প্রাণী হরমোনের নির্দিষ্ট মাত্রায় ক্ষরণের গুরুত্ব –
প্রতিটি প্রাণী হরমোন এক একটি নির্দিষ্ট ঘনত্বে সর্বাধিক কার্যকরী হয়। প্রাণীদেহে হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি বা কম হলে নানা রোগ দেখা দেয়। যেমন – শৈশবকালে GH -এর কম ক্ষরণে বামনত্ব ও অধিক ক্ষরণে অতিকায়ত্ব রোগ দেখা দেয়।
বামনত্ব ও গলগণ্ডের কারণ ও উপসর্গ –
বামনত্ব ও গলগণ্ড রোগ দুটির কারণ ও উপসর্গ নীচে আলোচিত হল।
বামনত্ব –
বামনত্ব রোগের কারণ ও উপসর্গগুলি হল –
- কারণ – শৈশবে STH বা GH -এর কম ক্ষরণে এই রোগ হয়।
- উপসর্গ –
- দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিশেষত হাড় ও পেশির বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
- পরিণত দশায় দেহের উচ্চতা 3 ফুট মতো হয়।
- যৌন বিকাশের সময়কাল বা বয়ঃসন্ধি বিলম্বিত হয়।
- দেহের আন্তরযন্ত্রের বিকাশ হ্রাস পায়।
- BMR ও মানসিক সক্রিয়তা স্বাভাবিক থাকে।
গলগণ্ড বা গয়টার –
গলগণ্ড রোগের কারণ ও উপসর্গগুলি হল –
- কারণ – থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটলে, সেই অবস্থাকে গলগণ্ড বলে। থাইরক্সিন হরমোনের কম ক্ষরণ ও অধিক ক্ষরণ, উভয় অবস্থাতেই গলগণ্ড হয়। থাইরক্সিনের কম ক্ষরণে সাধারণ গলগণ্ড ও অধিক ক্ষরণে বহিঃচক্ষু গলগণ্ড বা এক্সফ্যালমিক গয়টার হয়।
- উপসর্গ –
- সাধারণ গলগণ্ডের ক্ষেত্রে –
- থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে গ্রীবা অঞ্চল স্ফীত হয়।
- শ্বাসকার্যের অসুবিধা ও খাদ্য গলাধঃকরণে সমস্যা দেখা যায়।
- বহিঃচক্ষু গলগণ্ডের ক্ষেত্রে –
- রোগীর থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে ও গলা স্ফীত হয়ে যায়।
- অক্ষিগোলক অক্ষিকোটর ছেড়ে বেরিয়ে এসে ‘বিস্ফারিত নেত্র’ অবস্থা সৃষ্টি করে।
- মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়, দেহের ওজন হ্রাস পায়।
- সাধারণ গলগণ্ডের ক্ষেত্রে –
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস ও ডায়াবেটিস মেলিটাসের পার্থক্য কী? উভয় রোগের দুটি করে উপসর্গ লেখো।
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস ও ডায়াবেটিস মেলিটাসের পার্থক্য –
বিষয় | ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস | ডায়াবেটিস মেলিটাস |
হরমোনগত কারণ | ADH হরমোনের নিষ্ক্রিয়তা বা স্বল্প ক্ষরণের ফলে এই রোগ হয়। | ইনসুলিন হরমোনের নিষ্ক্রিয়তা বা স্বল্প ক্ষরণের দরুন এই রোগ হয়। |
প্রধান উপসর্গ | মূত্রের পরিমাণ বেড়ে যায় ও ঘনত্ব হ্রাস পায়। দেহ থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে জলাভাব সৃষ্টি হয় ও জল তেষ্টা বেড়ে যায়। | রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। কোশ গ্লুকোজ ব্যবহার করতে না পারায় প্রোটিন ও ফ্যাটের বিপাক ঘটে। ফলসরূপ দেহের ওজন হ্রাস পায়। |
উপসর্গ –
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস – এই রোগে –
- মূত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও ঘনত্ব হ্রাস পায়। এক্ষেত্রে 24 ঘণ্টায় 28-30L পর্যন্ত মূত্র নির্গত হতে পারে। উল্লেখ্য এই বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করেই সংশ্লিষ্ট হরমোনটির নামকরণ করা হয়েছে অ্যান্টি-ডাইইউরেটিক হরমোন।
- দেহ থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে যাওয়ায় জলাভাব সৃষ্টি হয় ও অতিরিক্ত জলতেষ্টা পায়। বারবার জলপানের ইচ্ছাকে পলিডিপসিয়া বলে।
ডায়াবেটিস মেলিটাস – এই রোগে –
- রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক (রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক পরিমাণ-প্রতি 100 ml রক্তে 80-120 mg) তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পায়। একে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে।
- কোশ গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না ফলে কোশের প্রোটিন ও ফ্যাটের বিপাক ঘটে ও দেহের ওজন হ্রাস পায়।
- প্রতি 100 ml রক্তে 180 mg অপেক্ষা বেশি গ্লুকোজ থাকলে মূত্রের মাধ্যমে গ্লুকোজ নির্গত হয়। একে গ্লাইকোসুরিয়া বলে।
- আক্রান্ত রোগীদের ঘনঘন মূত্রত্যাগ, তৃষ্ণা, ক্ষুধা, মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, অবসাদ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।
নীচে উল্লিখিত হরমোন ক্ষরণজনিত অস্বাভাবিকতা বা ত্রুটিগুলির কারণ ও উপসর্গ লেখো – বামনত্ব, ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস, গলগণ্ড ও ডায়াবেটিস মেলিটাস।
হরমোন ক্ষরণজনিত অস্বাভাবিকতাগুলির কারণ ও উপসর্গ –
হরমোন ক্ষরণজনিত অস্বাভাবিকতা | কারণ | উপসর্গ |
বামনত্ব বা ডোয়ার্ফিজম | GH বা STH হরমোনের স্বল্প ক্ষরণ। | [i] ব্যক্তির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, পরিণত মানুষের উচ্চতা মাত্র 3 foot মতো হয়। [ii] অস্থির ও পেশির বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। [iii] যৌন বিকাশ ব্যাহত হয়। |
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস বা বহুমুত্র | ADH বা ভ্যাসোপ্রেসিন হরমোনের কম ক্ষরণ। | [i] বৃক্কীয় নালিকাতে জলশোষণ কম হওয়ায়, মূত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও তার ঘনত্ব হ্রাস পায় (Insipid-স্বাদবিহীন বা লবণহীন মূত্র)। [ii] দেহে জলাভাব বা ডিহাইড্রেশন দেখা যায়। [iii] বারবার জলতেষ্টা পায়, একে পলিডিপসিয়া বলে। |
গলগণ্ড বা গয়টার | থাইরক্সিনের কম ক্ষরণ (সাধারণ গলগণ্ড) থাইরক্সিনের বেশি ক্ষরণ (বহিঃচক্ষু গলগণ্ড বা এক্সফথ্যালমিক গয়টার)। | [i] থাইরয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধি ঘটে, ফলে গ্রীবা অঞ্চল ফুলে যায়। [ii] এজন্য শ্বাসকষ্ট ও খাদ্য গিলতে অসুবিধা হয়। [iii] বহিঃচক্ষু গলগণ্ডর ক্ষেত্রে অক্ষিগোলক অক্ষিকোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। [iv] মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়। |
ডায়াবেটিস মেলিটাস বা মধুমেহ | ইনসুলিন হরমোনের কম ক্ষরণ, অথবা ইনসুলিনের কার্যহীনতা। | [i] শর্করা বিপাক হ্রাস পায় বলে রক্তে শর্করা মাত্রা বৃদ্ধি পায়। একে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে। [ii] মূত্র দিয়ে শর্করা নির্গত হয়। একে গ্লুকোসুরিয়া বলে। [iii] প্রোটিন ও ফ্যাট বিপাক শর্করার অভাবে বৃদ্ধি পায়, ফলে দেহের ওজন হ্রাস পায়। [iv] হৃৎপিণ্ড, বৃক্ক প্রভৃতি অঙ্গে নানা রোগ দেখা দেয়। |
হরমোন ও উৎসেচকের মধ্যে পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো।
হরমোন ও উৎসেচকের পার্থক্য –
বিষয় | হরমোন | উৎসেচক |
ক্ষরণস্থল | অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা বিশেষ কোশগুচ্ছ। | সাধারণত বহিঃক্ষরা গ্রন্থি। |
ক্রিয়াস্থলের অবস্থান | সাধারণত উৎসস্থল থেকে দূরে ক্রিয়া করে। | উৎসস্থল অথবা দূরবর্তী কোনো স্থানে ক্রিয়া করে। |
রাসায়নিক প্রকৃতি | প্রোটিন, স্টেরয়েড, গ্লাইকোপ্রোটিন, পলিপেপটাইড প্রভৃতি দ্বারা গঠিত। | উৎসেচক সর্বদাই প্রোটিনধর্মী। |
পুনর্ব্যবহার যোগ্যতা | নেই। | আছে। |
পরিমাণ | অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। | অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে লাগে। |
নিয়ন্ত্রণ | বাহ্যিক শর্ত বা মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। | pH ও তাপমাত্রা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। |
কাজ | কোশের বিশেষ জৈবরাসায়নিক ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। | প্রায় সমস্ত জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, মূলত প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করে। |
হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের কাজের মধ্যে সাদৃশ্য এবং পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো।
হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের কাজের সাদৃশ্য –
হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের কাজের মধ্যে একটি সাদৃশ্য হল, উভয়ই প্রাণীদেহে সমন্বয়সাধনের কাজ করে। হরমোন রাসায়নিক ও স্নায়ু ভৌত সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে।
হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের কাজের পার্থক্য –
বিষয় | হরমোন | স্নায়ুতন্ত্র |
কাজের গতি | মন্থর। | দ্রুত। |
কাজের স্থায়িত্ব | স্থায়ী। | অস্থায়ী। |
কাজের শেষে পরিণতি | বিনষ্ট হয়। | বিনষ্ট হয় না। |
প্রভাবাধীন জীবগোষ্ঠী | উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়েই। | কেবল প্রাণীগোষ্ঠী। |
বস্তুগত প্রকৃতি | রাসায়নিক বস্তু তাই রাসায়নিক সমন্বয়। | বিভিন্ন প্রকার কোশীয় উপাদানে গঠিত তন্ত্র। এটি ভৌত সমন্বয়। |
কাজের প্রকৃতি | রাসায়নিক সমন্বয়ক। | ভৌত সমন্বায়ক। |
অ্যাড্রেনালিন ও নর-অ্যাড্রেনালিনের মধ্যে তুলনা করো।
অ্যাড্রেনালিন ও নর-অ্যাড্রেনালিন -এর তুলনা –
বিষয় | অ্যাড্রেনালিন | নর-অ্যাড্রেনালিন |
হৃৎপিণ্ডের ওপর প্রভাব [i] হৃৎস্পন্দন [ii] রক্তচাপ (BP) [a] সিস্টোলিক চাপ (SP) [b] ডায়াস্টোলিক চাপ (DP) [iii] হার্দ-উৎপাদ | অ্যাড্রেনালিনের তুলনায় বেশি বৃদ্ধি করে। বৃদ্ধি করে। পরিবর্তন দেখা যায় না। বৃদ্ধি করে। | অ্যাড্রেনালিনের তুলনায় স্বল্প বৃদ্ধি করে। বৃদ্ধি করে। বৃদ্ধি করে। কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। |
বিপাকের ওপর প্রভাব [i] রক্তে শর্করার মাত্রা [ii] মুক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড নিঃসরণ | বৃদ্ধি করে। বৃদ্ধি করে। | বৃদ্ধি করে। বৃদ্ধি করে। |
রক্তনালীর ওপর প্রভাব | অধিকাংশ ধমনির প্রাচীরগাত্রের পেশির সংকোচনের মাত্রা বৃদ্ধি করলেও কিছুকিছু ক্ষেত্রে (হৃৎপিণ্ড, অস্থিলগ্ন পেশি ও যকৃতে রক্ত সরবরাহকারী) ধমনির প্রাচীরগাত্রের পেশির প্রসারণে সহায়তা করে। | সকল রক্তবাহের প্রাচীরগাত্রের মসৃণ পেশির সংকোচনে সহায়তা করে। |
শ্বাসকার্যের ওপর প্রভাব | উদ্দীপ্ত করে। | উদ্দীপ্ত করে। |
ইওসিনোফিলের সংখ্যার ওপর প্রভাব | সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। | কোনো প্রভাব দেখা যায় না। |
……………………………………………………………………
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” অধ্যায়ের ‘প্রাণীদেহে সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন