নবম শ্রেণি – বাংলা – ধীবর-বৃত্তান্ত – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

ধীবর বৃত্তান্ত নাটকটি মহাকবি কালিদাস রচিত অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকের একটি ষষ্ঠ অঙ্কের নাট্যাংশ। এই নাটকটিতে এক সাধারণ ধীবরের মাধ্যমে সত্য, ন্যায় ও কর্তব্যবোধের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।

Table of Contents

নবম শ্রেণি – বাংলা – ধীবর-বৃত্তান্ত – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

শকুন্তলা অপমানিতা হলেন রাজসভায়। — কোন্ রাজসভায় শকুন্তলা অপমানিতা হন? তাঁর অপমানিতা হওয়ার কারণ কী?

রাজসভার পরিচয় – উল্লিখিত অংশে রাজা দুষ্মন্তের রাজসভায় শকুন্তলার অপমানিতা হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

শকুন্তলার অপমানিতা হওয়ার কারণ – তপোবনে মহর্ষি কণ্বের অনুপস্থিতিতে রাজা দুষ্মন্ত তাঁর পালিতা কন্যা শকুন্তলাকে বিয়ে করে রাজধানীতে ফিরে যান। দীর্ঘকাল দুষ্মন্তের কাছ থেকে শকুন্তলার কোনো খোঁজ নিতে কেউ আসে না। দুঃখিনী শকুন্তলা স্বামীর চিন্তায় অন্যমনস্কা হয়ে থাকেন। তাই মহর্ষির আশ্রমে ঋষি দুর্বাসা এলে শকুন্তলা ঋষির উপস্থিতি টের পান না। অপমানিত দুর্বাসা অভিশাপ দেন যে, শকুন্তলা যাঁর চিন্তায় মগ্ন রয়েছেন সে একদিন শকুন্তলাকে ভুলে যাবে। শেষপর্যন্ত শকুন্তলার সখী প্রিয়ংবদার অনুরোধে দুর্বাসা বলেন যে, শকুন্তলা কোনো স্মারকচিহ্ন দেখাতে পারলে তাঁর এই অভিশাপের প্রভাব দূর হয়ে যাবে। এরপর সখীরা ভাবে যে, বিদায় নেওয়ার আগে যে আংটিটি দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে পরিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, সেটিই হবে ভবিষ্যতের স্মারকচিহ্ন। মহর্ষি কণ্ব তীর্থ থেকে ফিরে শকুন্তলাকে স্বামীর ঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যাওয়ার পথে শচীতীর্থে স্নানের পরে অঞ্জলি দেওয়ার সময়ে শকুন্তলার হাতের আংটিটি জলে পড়ে যায়। ফলে দুর্বাসার অভিশাপ বজায় থাকে। সভায় উপস্থিত হলে তিনি শকুন্তলাকে চিনতেও পারেন না ফলে তাঁকে সেই রাজসভায় অপমানিতা হতে হয়।

সখীরা মনে করলেন সেই আংটিই হবে ভবিষ্যতের স্মারকচিহ্ন। — এখানে কোন্ আংটির কথা বলা হয়েছে? আংটিটি কীভাবে হারিয়ে গিয়েছিল?

উদ্দিষ্ট আংটি – উল্লিখিত অংশে দুষ্মন্ত রাজধানীর উদ্দেশে যাওয়ার সময়ে বিদায় মুহূর্তে শকুন্তলাকে যে আংটি পরিয়ে দিয়েছিলেন সেই আংটির কথা প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে বলা হয়েছে।

আংটি হারানোর ঘটনা – শকুন্তলাকে বিয়ে করে রাজা দুষ্মন্ত রাজধানীতে ফিরে যাওয়ার পরে দীর্ঘকাল শকুন্তলার খোঁজ নিতে কোনো দূত আসে না। এইসময় ঋষি দুর্বাসা তপোবনে এলে স্বামীর চিন্তায় অন্যমনস্কা শকুন্তলা তা টের পান না। অপমানিত দুর্বাসা অভিশাপ দেন যে যাঁর চিন্তায় শকুন্তলা মগ্ন, সেই ব্যক্তি শকুন্তলাকে ভুলে যাবেন। শেষ অবধি শকুন্তলার সখী প্রিয়ংবদার অনুরোধে দুর্বাসা বলেন যে, কোনো নিদর্শন দেখাতে পারলে তবেই শাপের প্রভাব দূর হবে। সখীরা দুষ্মন্তের দেওয়া আংটিটাকেই এই স্মারকচিহ্ন বলে ধরে নেয়। মহর্ষি কণ্ব তীর্থ থেকে ফিরে যখন শকুন্তলাকে স্বামীর ঘরে পাঠানোর আয়োজন করেন তখন আংটিটাই হয় শকুন্তলার সম্বল। কিন্তু পথে শচীতীর্থে স্নানের পরে অঞ্জলি দেবার সময়ে শকুন্তলার হাত থেকে খুলে আংটিটি জলে পড়ে যায়। এইভাবেই আংটিটি খোয়া যায়।

ঘটনাক্রমে সেই আংটি পেল এক ধীবর – কার আংটি সে পেয়েছিল? আংটি হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে ইতিহাসটি আছে তা লেখো।

আংটির মালিক – ধীবর -বৃত্তান্ত নাট্যাংশে ধীবরটি যে আংটিটি পেয়েছিল তা ছিল রাজা দুষ্মন্তের।

আংটি হারানোর ইতিহাস – কালিদাসের ধীবর বৃত্তান্ত নাট্যাংশে ধীবরের আংটি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে এক দীর্ঘ কাহিনি রয়েছে। মহর্ষি কণ্বের অনুপস্থিতিতে আশ্রমকন্যা শকুন্তলাকে বিয়ে করে রাজা দুষ্মন্ত রাজধানীতে ফিরে যান। তারপরে দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও তিনি শকুন্তলার খোঁজ করেন না। একদিন ঋষি দুর্বাসা কণ্বের আশ্রমে এলে স্বামীর চিন্তায় মগ্ন শকুন্তলা তাঁর উপস্থিতি টেরই পান না। অপমানিত ঋষি অভিশাপ দেন যে, যাঁর চিন্তায় শকুন্তলা মগ্ন হয়ে আছেন, তিনি শকুন্তলাকে ভুলে যাবেন। পরে সখী প্রিয়ংবদার অনুরোধে অভিশাপ কিছুটা লঘু করে দুর্বাসা বলেন যে, শকুন্তলা যদি প্রিয়জনকে কোনো স্মৃতিচিহ্ন দেখাতে পারেন, তাহলে তিনি এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন। শকুন্তলার কাছে থাকা দুষ্মন্তের দেওয়া আংটিটাই স্মৃতিচিহ্ন বলে সখীরা ভেবে নেন। মহর্ষি কণ্ব তীর্থ থেকে ফিরে শকুন্তলাকে পতিগৃহে পাঠানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু যাওয়ার সময়ে শচীতীর্থে স্নানের পরে অঞ্জলি দিতে গিয়ে শকুন্তলার হাত থেকে আংটিটি খুলে জলে পড়ে যায়। ফলে দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে আর চিনতে পারেন না। ওদিকে, এক ধীবর মাছ ধরতে গিয়ে একটা রুই মাছ ধরে এবং তার পেটে এই আংটিটি পায়।

যে বৃত্তি নিয়ে যে মানুষ জন্মেছে, সেই বৃত্তি নিন্দনীয় (ঘৃণ্য) হলেও তা পরিত্যাগ করা উচিত নয়। — কে, কোন্ প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করেছে? এখানে বক্তার চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়েছে তা আলোচনা করো।

বক্তা ও প্রসঙ্গ – কালিদাসের ধীবর বৃত্তান্ত নামক নাট্যাংশে বন্দি ধীবর রাজার শ্যালক এবং রক্ষীদের জানিয়েছিল, সে জাল, বড়শি ইত্যাদির সাহায্যে মাছ ধরে সংসার চালায়। তখন রাজার শ্যালক তার জীবিকা খুবই পবিত্র বলে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করতে থাকে। এই বিদ্রুপের পরিপ্রেক্ষিতেই ধীবর (পুরুষ) চরিত্রটি রাজার শ্যালককে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছে।

বক্তার চরিত্র-বৈশিষ্ট্য – ধীবর তার এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রবল আত্মসম্মানবোধেরই পরিচয় দিয়েছে। সে রাজশ্যালককে তার পেশা নিয়ে কোনোরকম নিন্দাসূচক কথা না বলতে অনুরোধ করে। বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের উদাহরণ দিয়ে সে বলে যে, ব্রাহ্মণ স্বভাবে দয়াপরায়ণ হলেও যজ্ঞের পশুবধের সময় নির্দয় হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোনো পেশাই সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত হতে পারে না, সেটির কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এভাবেই সে নিজের পেশার সাথে হওয়া তাচ্ছিল্যের প্রতিবাদ করেছে।

এখন মারতে হয় মারুন, ছেড়ে দিতে হয় ছেড়ে দিন। – বক্তা কে? উক্তির প্রেক্ষাপটে বক্তার চরিত্র আলোচনা করো।

বক্তার পরিচয় – প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটির বক্তা ধীবর-বৃত্তান্ত নাট্যাংশের অন্যতম চরিত্র ধীবর।

উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্র – ধীবরের কাছে আংটিটি দেখে রাজশ্যালক এবং দুই রক্ষী তাকে চোর বলে সাব্যস্ত করে। ধীবর চুরির দায় অস্বীকার করায় তারা তার জাতি পরিচয় নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করেন। ধীবর তখন নিজের পেশাগত পরিচয় দেয় — আমি একজন জেলে। শক্রাবতারে থাকি। যদিও এর জন্য তাকে অনেক তির্যক ব্যঙ্গ শুনতে হয়। তখনই এই ধরনের কথার বিরোধিতা করে ধীবর জানায় যে, একটি রুইমাছকে টুকরো করে কাটার সময়ে তার পেটের ভিতরে সে আংটিটি পেয়েছে। পরে সে তা বিক্রি করার সময় তাকে ধরা হয়েছে।

এই কথাগুলি বলার পরই ধীবর প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছিল, এই কথাগুলি প্রমাণ করে সে সৎ, স্পষ্টবাদী, আত্মবিশ্বাসী এবং একই সঙ্গে নম্র, ভদ্র – ও। সে রুক্ষভাবে, কর্কশ স্বরে তার বিরুদ্ধে ওঠা অনৈতিক অভিযোগের জবাব দেয়নি। বদলে বিনীতভাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। কিন্তু তার মধ্যে তার চরিত্রের দৃঢ়তা অত্যন্ত স্পষ্ট।

এ অবশ্যই গোসাপ-খাওয়া জেলে হবে। — কে, কখন, কেন এই মন্তব্যটি করেছেন? এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে যে বিশেষ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটেছে তা আলোচনা করো।

বক্তা ও প্রসঙ্গ – কালিদাসের লেখা ধীবর বৃত্তান্ত নাট্যাংশে রাজশ্যালক ও রক্ষীদের কাছে ধীবর তার আংটি পাওয়ার বৃত্তান্তটি সবিস্তারে জানানোর পর রাজশ্যালক ধীবরের উদ্দেশ্যে প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি করেন। তিনি জানুক নামে রক্ষীটিকে ডেকে বলেন যে, ধীবরের শরীর থেকে কাঁচা মাংসের গন্ধ আসছে, অতএব সে নিশ্চয়ই গোসাপ – খাওয়া জেলে। এখানে গোসাপ – খাওয়া জেলে বলতে অত্যন্ত নীচু জাতের জেলে সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়েছে। ধীবরকে এর আগেও নানাভাবে বিদ্রূপ করা হয়েছে, তার পেশা নিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। এখানে তেমনই ব্যঙ্গ করার জন্য মন্তব্যটি করা হয়েছে।

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ – রাজার শ্যালক ছিলেন নগররক্ষার কাজে নিযুক্ত। সেদিক থেকে দেখলে তিনি বিশেষ ক্ষমতাবান ও বিত্তশালী, সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি। তাই স্বাভাবিকভাবেই দরিদ্র ধীবর তাঁর অবজ্ঞা ও অবিশ্বাসের পাত্র হয়ে ওঠে। রাজশ্যালকের এই মন্তব্যের দ্বারা শুধু ধীবরের পেশাই নয়, তার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সম্প্রদায়গত অবস্থান — এই সব কিছুর প্রতিই ব্যঙ্গ করা হয়েছে। বর্ণবিভক্ত সমাজে উচ্চবর্ণের মানুষ নিম্নবর্ণের মানুষের প্রতি যে ঘৃণার মনোভাব দেখাত, তার কথাই এখানে বলা হয়েছে।

মহারাজ এ সংবাদ শুনে খুব খুশি হবেন। — কে, কাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছিল? সংবাদটা কী ছিল? মহারাজের খুশির কারণ কী?

বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – ধীবর-বৃত্তান্ত নাট্যাংশে দুই রক্ষী রাজশ্যালককে উদ্দেশ্য করে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছিল।
উল্লিখিত সংবাদ – ধীবরের কাছ থেকে রাজশ্যালক এবং রক্ষীরা রাজার নাম খোদাই করা রত্নখচিত আংটিটি উদ্ধার করে। ধীবর মাছের পেট থেকে ওই আংটি পাওয়ার কথা বললেও তারা তা বিশ্বাস করে না এবং ধীবরকেই চোর সাব্যস্ত করে। এই পরিস্থিতিতে আংটি পাওয়ার বিষয়টি রাজশ্যালক মহারাজকে সবিস্তারে জানাতে যায়। এখানে সংবাদ বলতে ধীবরের বলা এই আংটি প্রাপ্তির কাহিনিকেই বলা হয়েছে।

মহারাজের খুশির কারণ – রক্ষীরা ভেবেছিল, মহারাজ তাঁর এই মূল্যবান আংটি ফিরে পেয়ে খুশি হবেন। এ ছাড়াও আংটি চোরকে ধরার জন্য তাঁর খুশি আরও বেড়ে যাবে। রক্ষীরা এরকম ভাবনার মধ্য দিয়ে একরকম আত্মতৃপ্তি লাভ করতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজা খুশি হয়েছিলেন আংটি ফিরে পাওয়া এবং প্রিয়জনের কথা মনে পড়ার কারণে। অর্থাৎ ধীবরকে আটক করা কোনোভাবেই মহারাজের খুশির কারণ হয়নি। বরং ধীবরের কারণে আংটিটি ফেরত পেয়ে খুশি হয়ে তিনি ধীবরকে পারিতোষিক দিয়েছিলেন।

এই তো আমাদের প্রভু, মহারাজের হুকুমনামা হাতে নিয়ে এদিকে আসছেন। – আমাদের প্রভু বলতে এখানে কার কথা বলা হয়েছে? মহারাজের হুকুম শেষপর্যন্ত কীভাবে বক্তাকে হতাশ করে তা লেখো।

উল্লিখিত ব্যক্তি – কালিদাসের ধীবর-বৃত্তান্ত নাট্যাংশে আমাদের প্রভু বলতে দ্বিতীয় রক্ষী নগররক্ষার দায়িত্বে থাকা রাজার শ্যালকের কথা বলেছে।

বক্তার হতাশ হওয়া – দুজন রক্ষী আংটি চুরির অপরাধে ধীবরকে ধরে নিয়ে আসে এবং রাজার আদেশে তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য মহা উৎসাহে অপেক্ষা করতে থাকে। রাজশ্যালক রাজার কাছে গিয়েছিলেন আংটি পাওয়ার ঘটনা সবিস্তারে জানাতে। তাই রক্ষীরা অপেক্ষা করছিল ধীবরকে শকুনি দিয়ে খাওয়ানো হবে না কি কুকুর দিয়ে খাওয়ানো হবে, সেই নির্দেশ পাওয়ার জন্য। প্রথম রক্ষী এমনও জানিয়েছিল ধীবরকে মারার আগে যে মালা পরানো হবে তা গাঁথার জন্য তার হাত নিশপিশ করছে। কিন্তু রক্ষীদের অপেক্ষা শেষপর্যন্ত হতাশায় পরিণত হয়। কারণ, রাজার কাছ থেকে ঘুরে এসে রাজশ্যালক জানান যে আংটি পাওয়ার বিষয়ে ধীবর যা যা বলেছে তা সবই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ফলে রাজা ধীবরকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, মহারাজ খুশি হয়ে আংটির মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ ধীবরকে দিয়েছেন বলেও শ্যালক জানান। এভাবেই মহারাজের হুকুম বক্তাকে অত্যন্ত হতাশ করেছিল।

কারা পরস্পরের বন্ধু হয়েছে? এমন বন্ধুত্বের কারণ কী?

অথবা, তুমি আমার একজন বিশিষ্ট প্রিয় বন্ধু হলে। কোন্ ঘটনার মাধ্যমে এই বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়েছিল?

উদ্দিষ্ট বন্ধুদ্বয় – ধীবর বৃত্তান্ত নাট্যাংশে উল্লিখিত প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন রাজার শ্যালক। ধীবরকে উদ্দেশ করে বলা এই কথার মাধ্যমে রাজশ্যালক ধীবরকে তাঁর বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

বন্ধুত্বের কারণ – প্রাথমিকভাবে ধীবরের কাছে রাজার নাম খোদাই করা আংটিটি পেয়ে রাজশ্যালকও ধীবরকেই চোর বলে সন্দেহ করেছিল। এবং তার পেশা নিয়ে বিদ্রুপও করেছিল। এমনকি এর গা থেকে কাঁচা মাংসের গন্ধ আসছে। এ অবশ্যই গোসাপ খাওয়া জেলে হবে। — এই জাতীয় বিরূপ মন্তব্যও তাঁরা করেন। কিন্তু মহারাজ যখন রাজশ্যালককে বলেন যে ধীবর আংটি পাওয়া সম্পর্কে যা বলছে তা সব সত্য, তখন রাজশ্যালকেরও মনোভাবের পরিবর্তন ঘটে। রাজা আংটির সমমূল্যের অর্থ পুরস্কার হিসেবে রাজশ্যালকের হাত দিয়েই ধীবরকে পাঠিয়ে ছিলেন। এসব ঘটনা রাজশ্যালককে প্রভাবিত করে। রাজশ্যালক এরপরই ধীবরকে তাঁর বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নেন। এর পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, ধীবরের সততা রাজার মাধ্যমে স্বীকৃত হওয়ার পরই রাজশ্যালক নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তিনি নিজেকে সংশোধন করে নেন। দ্বিতীয়ত, রাজার মনোভাব বুঝে রাজশ্যালক আর ধীবরকে অবজ্ঞা করতে সাহস পাননি। বরং ধীবরের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের মাধ্যমে রাজার প্রতি তিনি নিজের আনুগত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।

সেই আংটি দেখে মহারাজের কোনো প্রিয়জনের কথা মনে পড়েছে। — মন্তব্যটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করো। আংটি দেখে রাজা কী করেছিলেন?

প্রসঙ্গ – কালিদাসের ধীবর-বৃত্তান্ত নামক রচনায় এক ধীবর একটি রুইমাছকে টুকরো করে কাটার সময়ে সেটির পেটের ভিতর থেকে একটি আংটি পায়। একজন সামান্য জেলের কাছে মণিখচিত এবং রাজার নাম খোদাই করা সেই আংটি দেখে নগররক্ষায় নিযুক্ত রাজার শ্যালক এবং রক্ষীরা তাকে চোর সাব্যস্ত করেন। ধীবরের ব্যাখ্যা তাঁরা শুনতেই চান না। রাজার শ্যালক রাজাকে সমস্ত ঘটনা জানাতে রাজপ্রাসাদে যায়। কিন্তু ধীবরের সব কথাই সত্য প্রমাণিত হয়। এই সময়ই রাজা তাঁর আংটিটি স্বচক্ষে দেখেন। এই স্মৃতিচিহ্ন দেখেই রাজা দুষ্মন্তের শকুন্তলার কথা মনে পড়ে যায়। রাজপ্রাসাদ থেকে ফিরে রাজশ্যালক এসব কথাই রক্ষীদের উদ্দেশে বলেন।

রাজার প্রতিক্রিয়া – আংটি দেখে স্বভাবত গম্ভীর প্রকৃতির রাজা মুহূর্তের জন্য বিহ্বলভাবে চেয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, তাঁর মনে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয় তার ফলে তিনি ধীবরকে আংটির মূল্যের সমপরিমাণ অর্থও পুরস্কার হিসেবে দেন। আংটিটি রাজার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা রাজার এই আচরণ থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। আংটির মূল্য নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতিই এক্ষেত্রে রাজাকে আবেগপ্রবণ করে তুলেছিল।

ধীবর বৃত্তান্ত নাট্যাংশের মূল বক্তব্য হলো সততা ও নৈতিকতাই মানুষের সর্বোচ্চ গুণ। একজন মানুষ যতই সাধারণ হোক না কেন, সে যদি সৎ ও নৈতিক হয়, তাহলে সে সমাজে সম্মানিত হয়। ধীবর একজন সাধারণ মানুষ হলেও সে সততা ও নৈতিকতার আদর্শে প্রতিষ্ঠিত। সে কোনো অপরাধ করলেও সে তা স্বীকার করে। সে মিথ্যা বলতে চায় না। ধীবরের এই সততা ও নৈতিকতাই তাকে সমাজে সম্মানিত করে তোলে।

Share via:

মন্তব্য করুন