আজ আমরা নবম শ্রেণির বাংলা গল্প ইলিয়াস পড়লাম। এই গল্পে আমরা দেখতে পেলাম যে, ধন-সম্পদ, বিলাসবহুল জীবনযাপন, প্রতিপত্তি সবকিছুই অস্থায়ী। জীবনের আসল সার্থকতা হলো সুখী ও সন্তুষ্ট থাকা। ইলিয়াস একসময় ছিল একজন ধনী ব্যবসায়ী। তার ছিল প্রচুর সম্পদ, বিলাসবহুল জীবনযাপন। কিন্তু একদিন হঠাৎ তার সবকিছু হারিয়ে যায়। এই দুঃখের সময়ে তার স্ত্রী শাম-শেমাগি তাকে সাহস দেয়। শাম-শেমাগি ইলিয়াসকে বুঝায় যে, সম্পদ-সৌখিনতা সবকিছুই অস্থায়ী। জীবনের আসল সার্থকতা হলো সুখী ও সন্তুষ্ট থাকা।
ইলিয়াস চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
পরিচয় – লিও তলস্তয় রচিত ইলিয়াস গল্পটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ইলিয়াস। উফা প্রদেশে বসবাসকারী বাস্কির জনগোষ্ঠীভুক্ত ইলিয়াসের দুই পুত্র ও এক কন্যা ছিল। স্ত্রীর নাম ছিল শাম-শেমাগি। জীবনের প্রথম দিকে আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলেও পরবর্তীকালে অক্লান্ত পরিশ্রমে ইলিয়াস ধনী হয়ে ওঠে। আবার ভাগ্যদোষে জীবনের শেষপর্যায়ে সে সমস্ত সম্পত্তি হারিয়ে ভাড়াটে মজুরের জীবন কাটাতে শুরু করে।
কঠোর পরিশ্রমী এবং কর্মনিষ্ঠ – পঁয়ত্রিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কর্মের প্রতি নিষ্ঠা থেকেই ইলিয়াস দুশো ঘোড়া, দেড়শো গোরু-মোষ, বারোশো ভেড়া এবং বহু ভাড়াটে মজুরের মালিকে পরিণত হয়। শেষজীবনে মজুরের কাজ করার সময়েও সে কঠোর পরিশ্রম করে মনিবকে তুষ্ট রাখত।
অতিথিপরায়ণ – ইলিয়াস ছিল অতিথিবৎসল। কুমিস, চা, শরবত, মাংস দিয়ে অতিথিদের যথাযথ আপ্যায়ন করত ইলিয়াস। তার অতিথিপরায়ণতার কথা স্মরণ করেই মহম্মদ শা তাকে শেষজীবনে আশ্রয় দিয়েছিল।
কঠোর অথচ কর্তব্যপরায়ণ – ইলিয়াস অত্যন্ত কঠোর ছিল বলেই ছোটো পুত্র ও তার ঝগড়াটে স্ত্রী তার আদেশ অমান্য করায় তাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছিল। কিন্তু সেই বিতাড়িত পুত্রকেই একটি বাড়ি এবং কিছু গৃহপালিত পশু দান করে সে তার কর্তব্যজ্ঞানেরও পরিচয় দিয়েছে।
সত্যদৃষ্টি – জীবনের শেষ পর্যায়ে সমস্ত সম্পত্তি ও সঞ্চয় হারিয়ে সর্বহারা হয়েও ইলিয়াস যেভাবে প্রকৃত সত্য ও সুখ উপলব্ধির কথা বলেছে, তা সকলের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ ও শিক্ষণীয়।
শাম-শেমাগি চরিত্রটি সম্পর্কে আলোচনা করো৷
উত্তর পরিচয় – লিও তলস্তয় রচিত ইলিয়াস গল্পে ইলিয়াসের স্ত্রী হল শাম-শেমাগি। গল্পে এই চরিত্রটির যে বৈশিষ্ট্যগুলি পাওয়া যায় সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল ।
পরিশ্রমী – দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিপুল সম্পত্তি অর্জনের পথে শাম-শেমাগি ছিল স্বামী ইলিয়াসের বিশ্বস্ত সঙ্গী। এমনকি ইলিয়াস বৃদ্ধ বয়সে সর্বহারা হয়ে ভাড়াটে মজুর হিসেবে কাজ করার সময়েও সে স্বামীকে যথাসাধ্য সাহায্য করেছে।
গভীর জীবনবোধ – প্রচুর সম্পত্তির মধ্যে জীবন কাটিয়েও শাম-শেমাগির জীবন সম্পর্কে সত্য-মিথ্যা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে যায়নি। তাই সে লোভ এবং সম্পত্তির মোহ কাটিয়ে জীবনের প্রকৃত সত্য খুঁজে পেয়েছে।
যোগ্য সহধর্মিণী – জীবনের কঠিন সময় থেকে সম্পন্ন অবস্থায় এবং বৃদ্ধ বয়সে আবার সর্বহারা অবস্থায় সে সবসময় স্বামীর পাশে থেকেছে। অক্লান্ত পরিশ্রমে যেমন তিল তিল করে স্বামীকে সম্পত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে, তেমনই আবার প্রাচুর্যের দিনেও স্বামীর পাশে থেকেছে। জীবনের অন্তিম পর্যায়ে সব হারিয়ে মজুরবৃত্তি করে কাটানো দিনগুলোতেও স্বামীর সঙ্গে পরিশ্রম করতে দ্বিধা করেনি সে। এমনকি জীবন সম্পর্কে মূল সত্য উপলব্ধির ক্ষেত্রে স্বামীর সহায়ক হয়েছে শাম-শেমাগি। সবমিলিয়ে ইলিয়াস গল্পে শাম-শেমাগি হয়ে উঠেছে স্বামীর যোগ্য সহধর্মিণী।
ইলিয়াস গল্পটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
যে – কোনো সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামের মধ্য দিয়েই সাহিত্যের মূল ভাবটি পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়। যে-কোনো সাহিত্যকর্মেই সাধারণত ঘটনা বা চরিত্র অনুযায়ী কিংবা ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণ হয়ে থাকে। লিও তলস্তয় রচিত গল্পটির ইলিয়াস নামটি স্পষ্টতই চরিত্রকেন্দ্রিক।
গল্পের নাম-চরিত্রই এখানে গল্পের মুখ্য চরিত্র যাকে কেন্দ্র করে কাহিনি বিস্তার লাভ করেছে। একজন সাধারণ বাকির ইলিয়াস কঠোর পরিশ্রমে এবং বুদ্ধির দ্বারা ক্রমশ ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়। পঁয়ত্রিশ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় অর্জিত সুনামের কারণে দূরদূরান্তে ইলিয়াসের প্রতিপত্তির কথা ছড়িয়ে পড়ে। ইলিয়াস ছিল অতিথিপরায়ণ মানুষ। তার বাড়িতে আসা অতিথিদের সে আন্তরিকতার সঙ্গে খাতির-যত্ন করত।
কিন্তু ভাগ্যের নিদারুণ পরিহাসের কারণে সর্বহারা হয়ে পড়ে তারা। ফলস্বরূপ ইলিয়াস দম্পতি মহম্মদ শা নামক এক প্রতিবেশীর বাড়িতে কাজের বিনিময়ে আশ্রয় ও খাবার পায়। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের ধনী বিলাসবহুল জীবন কাটিয়েও যে সুখ ইলিয়াস ও তার স্ত্রী পায়নি, ভাড়াটে মজুরের জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে তারা সেই সুখের সন্ধান পায়। নিজের জীবনের এই আচমকা পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই ইলিয়াস প্রকৃত সত্য জানতে পারে। তাই সে অকপটে স্বীকার করেছে যে, সে এবং তার স্ত্রী সম্পত্তির মোহে অন্ধ ছিল বলেই সম্পত্তি হারিয়ে কেঁদেছিল। কিন্তু ভাড়াটে মজুরের জীবনেই ঈশ্বর তাদের কাছে জীবনের প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরেছেন। নিজের জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষা বা জীবনদর্শনের সন্ধান ইলিয়াস সমস্ত অতিথিদের দান করেছে এবং পাঠকের কাছেও তা মহৎ দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর ইলিয়াসের জীবনসংগ্রামের ঘটনা দিয়েই গল্পের শুরু। আবার শেষে ইলিয়াসের জীবনসংগ্রাম থেকে পাওয়া জীবনদর্শনেই গল্পের পরিণতি। তাই সব দিক বিচার করে গল্পের চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণটি যে সার্থক, তা বলাই যায়।
এই গল্প থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে, জীবনে সবকিছুই অস্থায়ী। তাই আমাদের সবকিছুকে ক্ষণস্থায়ী হিসেবে মেনে নিতে হবে। আমাদের মূল্যবান জিনিসগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। আর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সুখী ও সন্তুষ্ট থাকার জন্য।
এই গল্পটি আমাদেরকে জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে শেখানোর পাশাপাশি সুখী ও সন্তুষ্ট থাকার পথও দেখায়।
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ”নবম শ্রেণি – বাংলা – ইলিয়াস – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই solutionwbbse.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।