Madhyamik Life Science Question Paper 2019 With Answer

আজকে আমরা এই লেখায় মাধ্যমিক পরীক্ষার পুরাতন বছরের প্রশ্ন ও তাদের উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। এই লেখার সাহায্যে শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় আগের বছরের কি প্রশ্ন এসেছিল, তা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাবে। এই লেখায় আমরা “মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান প্রশ্নপত্র ২০১৯ এবং তার উত্তর” নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক ২০১৯ এর প্রশ্নগুলি শিক্ষার্থীরা পরবর্তী বছরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি তুমি মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে “মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান প্রশ্নপত্র ২০১৯ এবং তার উত্তর”টি দেখে পরীক্ষা দিবে।

Table of Contents

Madhyamik Life Science Question Paper 2019 With Answer

Madhyamik Life Science Question Paper 2019 With Answer

বিভাগ – ক

(সমস্ত প্রশ্নের উত্তর করা আবশ্যিক)

১. প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে তার ক্রমিক সংখ্যা সহ বাক্যটি সম্পূর্ণ করে লেখো: ১×১৫=১৫

১.১ ট্রপিক চলন সম্পর্কিত নিচের কোন বক্তব্যটি সঠিক নির্বাচন করো –

(ক) এটি উদ্দীপকের তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত

(খ) উভিদ বা উদ্ভিদ-অংগের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হয়

(গ) ভলভক্স নামক শেওলায় এই চলন দেখা যায়

(ঘ) এটি উদ্দীপকের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আবিষ্ট বক্রচলন

উত্তরঃ (ঘ) এটি উদ্দীপকের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আবিষ্ট বক্রচলন।

১.২ প্রদত্ত বাক্যগুলি পড়ো এবং যে বাক্যটি সঠিক নয় সেটি কে চিহ্নিত করো –

(ক) FSH, LH ও প্রোল্যাকটিন হল বিভিন্ন ধরনের GTH

(খ) অ্যাড্রিনালিন হার্দ উৎপাদ কমায়

(গ) ইনসুলিন কোশপর্দার মাধ্যমে কোষের ভিতরে গ্লুকোজের শোষণে সাহায্য করে

(ঘ) প্রোজেস্টেরন স্ত্রীদেহে প্লাসেন্টা গঠনে সাহায্য করে

উত্তরঃ (খ) অ্যাড্রিনালিন হার্দ উৎপাদ কমায়।

১.৩ মানবদেহে করোটি স্নায়ুর সংখ্যা সঠিকভাবে নিরূপণ করো –

(ক) ১০ জোড়া

(খ) ৩১ জোড়া

(গ) ১২ জোড়া

(ঘ) ২১ জোড়া

উত্তরঃ (গ) ১২ জোড়া

১.৪ অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজনের সঠিক বৈশিষ্ট্যটি শনাক্ত করো —

(ক) যৌন জনন কারী জীবের জনন মাতৃকোষ ঘটে

(খ) এটিকে পরোক্ষ বিভাজন বলা হয়

(গ) ক্রোমোজোম ও বেমতন্তু গঠিত হয়

(ঘ) ক্রোমোজোম ও বেমতন্তু গঠিত হয় না

উত্তরঃ (ঘ) ক্রোমোজোম ও বেমতন্তু গঠিত হয় না।

১.৫ মিয়োসিসের তাৎপর্য সংক্রান্ত প্রদত্ত কোন বক্তব্যটি সঠিক তা সঠিকভাবে নিরূপণ করো —

(ক) দেহের সার্বিক বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটন ঘটায়

(খ) জীবের জনন–অংগের ও ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটায়

(গ) বংশগত প্রকরণ বাহি হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট উৎপাদন করে

(ঘ) কোন কোন প্রাণীর দেহে কোন অঙ্গহানি ঘটলে সেটি পুনরুৎপাদন করে

উত্তরঃ (গ) বংশগত প্রকরণ বাহি হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট উৎপাদন করে।

১.৬ সঠিক জোড়টি নির্বাচন করো এবং লেখো —

(ক) বহুবিভাজন – হাইড্রা

(খ) খন্ডীভবন – স্পাইরোগাইরা

(গ) পুনরুৎপাদন – ফার্ন

(ঘ) কোরকোদগম – প্ল্যানেরিয়া

 উত্তরঃ (খ) খন্ডীভবন – স্পাইরোগাইরা।

১.৭ নিচের কোনটি প্রকট গুন তা শনাক্ত করো —

(ক) কান্ডের দৈর্ঘ্য – বেঁটে

(খ) বীজের আকার – কুঞ্চিত

(গ) বীজপত্রের বর্ণ – হলুদ

(ঘ) ফুলের বর্ণ – সাদা

উত্তরঃ (গ) বীজপত্রের বর্ণ – হলুদ।

১.৮ RRYY জিনোটাইপ যুক্ত মটর গাছ থেকে কত ধরনের গ্যামেট উৎপন্ন হয় তা নির্ধারণ করো —

(ক) এক ধরনের

(খ) চার ধরনের

(গ) দুই ধরনের

(ঘ) তিন ধরনের

উত্তরঃ (ক) এক ধরনের।

১.৯ নিচের কোন দুটি জিনোটাইপ মটর গাছের কুঞ্চিত হলুদ ফিনোটাইপ এর জন্য দায়ী তা বাছাই করো —

(ক) RRYY ও rryy

(খ) RRYy ও RrYy

(গ) RRyy ও Rryy

(ঘ) rrYY ও rrYy

উত্তরঃ (ঘ) rrYY ও rrYy

১.১০ প্রদত্ত কোনটি আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম কে নির্দেশ করে তা শনাক্ত করো —

(ক) মশার লার্ভা খাওয়ার জন্য গাপ্পি মাছেদের মধ্যে সংগ্রাম

(খ) ইঁদুর ধরে খাওয়ার জন্য সাপ ও পেচার মধ্যে সংগ্রাম

(গ) একই জায়গায় ঘাস খাওয়ার জন্য একদল হরিণের মধ্যে সংগ্রাম

(ঘ) হরিণ শিকারের জন্য একটি জঙ্গলের বাঘেদের মধ্যে সংগ্রাম

উত্তরঃ (খ) ইঁদুর ধরে খাওয়ার জন্য সাপ ও পেচার মধ্যে সংগ্রাম।

১.১১ ল্যামার্কের তত্ত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত শব্দগুচ্ছ টি সঠিকভাবে নিরূপণ করো —

(ক) অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম

(খ) প্রকরণের উৎপত্তি

(গ) অর্জিত গুণের বংশানুসরন

(ঘ) প্রাকৃতিক নির্বাচন

উত্তরঃ (গ) অর্জিত গুণের বংশানুসরন।

১.১২ নিচের কোন প্রাণীটি বিশেষ নৃত্যভঙ্গি দ্বারা নিজদলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে খাদ্যের উৎস সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করে তা শনাক্ত করো —

(ক) শিম্পাঞ্জি

(খ) আরশোলা

(গ) ময়ূর

(ঘ) মৌমাছি

উত্তরঃ (ঘ) মৌমাছি।

১.১৩ নিচের কোনটি পরিবেশে দীর্ঘ সময় থাকলে তার জীব বিবর্ধন ঘটার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় তা স্থির করো —

(ক) খবরের কাগজ

(খ) জীবজন্তুর মলমূত্র

(গ) পচা পাতা

(ঘ) ক্লোরিনযুক্ত কীটনাশক

উত্তরঃ (ঘ) ক্লোরিনযুক্ত কীটনাশক।

১.১৪ নিচের কোন সজ্জাটি গরুমারা, করবেট, কুলিক, নন্দাদেবী — এই চারটি অরণ্যের সঠিক নির্দেশ করে তা নির্বাচন করো –

(ক) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, অভায়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান, জাতীয় উদ্যান,

(খ) জাতীয় উদ্যান, জাতীয় উদ্যান, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, অভয়ারণ্য,

(গ) জাতীয় উদ্যান, জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ,

(ঘ) অভায়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য।

উত্তরঃ (গ) জাতীয় উদ্যান, জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।

১.১৫ বায়ুতে পরাগরেণু, ছত্রাকের রেনু ও ধূলিকণার পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেলে নিচের কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় তা স্থির কর —

(ক) যক্ষা ,

(খ) অ্যাজমা,

(গ) ম্যালেরিয়া,

(ঘ) ডেঙ্গু।

উত্তরঃ (খ) অ্যাজমা।

বিভাগ – খ

২। নিচের ২৬টি প্রশ্ন থেকেই যেকোনো ২১ টি প্রশ্নের উত্তর নির্দেশ অনুসারে লেখঃ ১×২১=২১

নিচের বাক্যগুলিতে উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান গুলি পূরণ করঃ (যেকোনো পাঁচটি) ১×৫=৫

২.১ _হরমোনের প্রভাবে বিপদ কালে ত্বকের লোম খাড়া হয়ে যায়।

উত্তরঃ অ্যাড্রিনালিন হরমোনের প্রভাবে বিপদ কালে ত্বকের লোম খাড়া হয়ে যায়।

২.২ _অনুর ঘন কুণ্ডলী কৃত গঠনই হলো ক্রোমোজোম।

উত্তরঃ DNA অনুর ঘন কুণ্ডলী কৃত গঠনই হলো ক্রোমোজোম।

২.৩ একই প্রজাতিভুক্ত কিন্তু জিনগতভাবে ভিন্ন দুটি জীবের মধ্যে যৌন জনন পদ্ধতিকে_বলে।

উত্তরঃ একই প্রজাতিভুক্ত কিন্তু জিনগতভাবে ভিন্ন দুটি জীবের মধ্যে যৌন জনন পদ্ধতি কে সংকরায়ণ বলে।

২.৪ জীবন উৎপত্তির আদি পর্যায়ে_ ছিল কিছু বৃহৎ কোলয়েড অনুর সমন্বয়।

উত্তরঃ জীবন উৎপত্তির আদি পর্যায়ে কোয়াসারভেট ছিল কিছু বৃহৎ কোলয়েড অনুর সমন্বয়।

২.৫ সর্পগন্ধা গাছের মূল থেকে_পাওয়া যায় যা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

উত্তরঃ সর্পগন্ধা গাছের মূল থেকে রেসারপিন পাওয়া যায় যা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

২.৬ নমুনা বীজকে -196° তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনের মধ্যে রেখে এক্স-সিটু সংরক্ষণকে_বলে।

উত্তরঃ নমুনা বীজকে -196° তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনের মধ্যে রেখে এক্স-সিটু সংরক্ষণকে ক্রায়োসংরক্ষণ বলে।

নীচের বিবৃতিগুলি সত্য অথবা মিথ্যা নিরূপন করো (যেকোন পাঁচটি): ১×৫=৫

২.৭ বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির অত্যধিক পরিমান লঘু মূত্র নির্গত হয়।

উত্তরঃ সত্য।

২.৮ সপুষ্পক উদ্ভিদের স্ত্রী-স্তবক রোমশ ও আঠালো গর্ভদণ্ডের সাহায্যে পরাগরেণু সংগ্রহ করে।

উত্তরঃ মিথ্যা।

২.৯ মানুষের ডিম্বানুতে লিঙ্গ নির্ধারক একজোড়া সেক্স ক্রোমোজোম থাকে।

উত্তরঃ মিথ্যা।

২.১০ ডারউইনের মতে জীব জ্যামিতিক অনুপাতে বংশবৃদ্ধি করে।

উত্তরঃ সত্য।

২.১১ পশ্চিমবঙ্গের মানস জাতীয় উদ্যানে একশৃঙ্গ গন্ডার সংরক্ষণ করা হয়।

উত্তরঃ মিথ্যা।

২.১২ অ্যাসিটাইল কোলিন ও অ্যাড্রিনালিন হলো নিউরোট্রান্সমিটার।

উত্তরঃ সত্য।

A-স্তম্ভে দেওয়া শব্দের সঙ্গে B-স্তম্ভে দেওয়া সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত শব্দটির সমতা বিধান করে উভয় স্তম্ভের ক্রমিক নম্বর উল্লেখসহ সঠিক জোড়টি পুনরায় লেখো (যেকোনো পাঁচটি): ১×৫=৫

A স্তম্ভB স্তম্ভ
২.১৩ প্রেসবায়োপিয়া(ক) BbRr
২.১৪ বৃদ্ধির কোষীয় বিভেদন দশা(খ) হ্যালডেন
২.১৫ কালো অমসৃণ রোমযুক্ত গিনিপিগের জিনোটাইপ(গ) নিকটদৃষ্টি ত্রুটিপূর্ণ
২.১৬ হট ডাইলুট সুপ(ঘ) জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়ন
২.১৭ অরণ্য ধ্বংস ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয়(ঙ) প্রাণী কোষ বিভাজনের সময় বেমতন্তু গঠন
২.১৮ সেন্ট্রোজোম(চ) কলা, অঙ্গ ও তন্ত্র গঠন।
(ছ) bbrr

উত্তরঃ

A স্তম্ভB স্তম্ভ
২.১৩ প্রেসবায়োপিয়া(গ) নিকটদৃষ্টি ত্রুটিপূর্ণ
২.১৪ বৃদ্ধির কোষীয় বিভেদন দশা(চ) কলা, অঙ্গ ও তন্ত্র গঠন।
২.১৫ কালো অমসৃণ রোমযুক্ত গিনিপিগের জিনোটাইপ(ক) BbRr
২.১৬ হট ডাইলুট সুপ(খ) হ্যালডেন
২.১৭ অরণ্য ধ্বংস ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয়(ঘ) জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়ন
২.১৮ সেন্ট্রোজোম(ঙ) প্রাণী কোষ বিভাজনের সময় বেমতন্তু গঠন

একটি শব্দ বা একটি বাক্যে উত্তর দাও (যে-কোনো ছয়টি): ১×৬=৬

২.১৯ বিসদৃশটি বেছে লেখ : গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল, অকিউলোমোটর, ট্রাইজেমিনাল, অক্সিটোসিন

উত্তরঃ বিসদৃশটি হল – অক্সিটোসিন।

২.২০ অক্ষিগোলকের লেন্স ও রেটিনার অন্তর্বর্তী প্রকোষ্ঠে অবস্থিত তরলটির কাজ কি?

উত্তরঃ অক্ষিগোলকের লেন্স ও রেটিনার অন্তর্বর্তী প্রকোষ্ঠে অবস্থিত তরল, অর্থাৎ ভিট্রিয়াস হিউমর-এর কাজ হল-প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে আলোর প্রতিসরণে সাহায্য করা।

২.২১ নিচের সম্পর্কযুক্ত একটি শব্দ জোড় দেওয়া আছে। প্রথম জোড়টির সম্পর্ক বুঝে দ্বিতীয় জোড়টির শূন্যস্থানে উপযুক্ত শব্দ বসাও : জোড়কলম : আম :: _______ : জবা

উত্তরঃ জোড়কলম : আম :: শাখাকলম : জবা।

২.২২ কেবলমাত্র হোমোজাইগাস অবস্থায় হিমোফিলিয়া রোগের প্রকাশ ঘটার কারণটি কি? 

উত্তরঃ হিমোফিলিয়া রোগের জিনটি প্রচ্ছন্ন প্রকৃতির হওয়ার জন্য এই রোগটি শুধুমাত্র হোমোজাইগাস অবস্থায় প্রকাশিত হয়।

২.২৩ মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষায় প্রাপ্ত দ্বিতীয় অপত্য জনুর জিনোটাইপ অনুপাত লেখ।

উত্তরঃ মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষায় প্রাপ্ত দ্বিতীয় অপত্য জনুর জিনোটাইপ অনুপাত হল – ১ : ২ : ১

২.২৪ সমসংস্থ অঙ্গ কোন ধরনের বিবর্তনকে নির্দেশ করে?

উত্তরঃ অপসারী বিবর্তন।

২.২৫ নিচের চারটি বিষয়ের মধ্যে তিনটি একটি বিষয়ের অন্তর্গত। সেই বিষয়টি খুঁজে বার করো এবং লেখ : কৃষি ক্ষেত্রে কীটনাশকের ব্যবহার, টাইফয়েড, জলদূষণ, কারখানা থেকে উৎপন্ন তরল বর্জ্য।

উত্তরঃ জলদূষন।

২.২৬ কোন ইন সিটু সংরক্ষণ ব্যবস্থায় অনুজীব, বন্যপ্রাণী ও বন্য উদ্ভিদ সহ মানুষের বৈচিত্র্য, কৃষ্টি ও জীবনযাত্রা সংরক্ষণ করা হয়?

উত্তরঃ বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।

বিভাগ – গ

৩। নিচের ১৭ টি প্রশ্ন থেকে যে – কোনো ১২ টি প্রশ্নের উত্তর দুই-তিন বাক্যে লেখঃ ২×১২=২৪

৩.১ দরজায় ঘন্টা বাজার শব্দ শুনে তুমি যেভাবে দরজা খুলবে, সেই স্নায়বিক পথটি একটি শব্দ ছকের মাধ্যমে দেখাও।

উত্তরঃ

দরজায় ঘন্টা বাজার শব্দ শুনে তুমি যেভাবে দরজা খুলবে, সেই স্নায়বিক পথটি একটি শব্দ ছকের মাধ্যমে দেখাও।

৩.২ মেনিনজেস ও CSF-এর অবস্থান বিবৃত করো।

উত্তরঃ

মেনিনজেস ও CSF-এর অবস্থান –

  • মেনিনজেসের অবস্থান – মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকান্ডের বাইরের দিকে তত্ত্বময় পর্দারূপে মেনিনজেস অবস্থিত।
  • CSF – এর অবস্থান – CSF বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড মস্তিষ্কের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে, মেনিনজেস-এর সাব-অ্যারাকনয়েড স্পেস এবং সুষুম্নাকাণ্ডের কেন্দ্রীয় নালীর ভিতরে অবস্থিত।

৩.৩ উদ্ভিদের বীজ ও পর্বমধ্যের ওপর জিব্বেরেলিন হরমোন কি কি প্রভাব ফেলে তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ

উদ্ভিদের বীজের ওপর জিব্বেরেলিন হরমোনের প্রভাব – প্রতিটি বীজের একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত জীবনের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। বীজের এই দশাকে সুপ্তাবস্থা বলে। জিব্বেরেলিন মুকুলের এই সুপ্তাবস্থা দূর করে। বীজের সুপ্তাবস্থায় এর মধ্যে জিব্বেরেলিনের পরিমাণ কম থাকে। অঙ্কুরোদ্গমের আগে বীজে এই হরমোনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এর ফলে বীজমধ্যস্থ উৎসেচকের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়, যা বীজের সুপ্তাবস্থা দূর করে এবং অঙ্কুরোদ্গম ঘটায়।

উদ্ভিদের পর্বমধ্যের ওপর জিব্বেরেলিন হরমোনের প্রভাব – জিব্বেরেলিন উদ্ভিদের কান্ডের পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে সঠিকভাবে কান্ডের দৈর্ঘ্যের বৃদ্ধি ঘটায়। এই হরমোন উদ্ভিদের নিবেশিত ভাজক কলাকোশের বিভাজন ঘটায়। ফলে পর্বমধ্য অংশের বৃদ্ধি ঘটে ও উদ্ভিদের দৈর্ঘ্যের বৃদ্ধি ঘটে।

৩.৪ অক্ষিগোলকের বিভিন্ন প্রতিসারক মাধ্যম গুলির নাম ক্রমানুসারে লেখ।

উত্তরঃ চোখে প্রধানত চারটি প্রতিসারক মাধ্যম থাকে। বাইরে থেকে ভিতরের দিকে এগুলি হল কর্নিয়া, অ্যাকুয়াস হিউমর, লেন্স ও ভিট্রিয়াস হিউমর।

৩.৫ মিয়োসিস কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস ও ক্রোমাটিড এর মধ্যে খন্ড বিনিময় ঘটে – এই ঘটনা দুটির তাৎপর্য কী কী তা বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ

ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাসের গুরুত্ব – মিয়োসিস কোশ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পায় বলে জননকোশে, অর্থাৎ শুক্রাণু ও ডিম্বাণুতে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক (n) হয়। শুক্রাণু (n) ও ডিম্বাণু (n)-এর নিষেকের ফলে জাইগোটে ক্রোমোজোম সংখ্যা পুনরায় 2n বা ডিপ্লয়েড হয়ে যায়। অর্থাৎ মিয়োসিসে ক্রোমোজোম হ্রাসকরণ বা হ্যাপ্লয়েড হয়ে যাওয়ার জন্য জীবের জীবনচক্রে ক্রোমোজোমের সংখ্যা ধ্রুবক থাকে।

ক্রোমাটিডের মধ্যে খন্ড বিনিময়ের গুরুত্ব – ক্রসিং ওভারের ফলে নতুন জিনগত পুনর্বিন্যাস ঘটে। এর ফলে প্রকরণ সৃষ্টি হয়। ক্রসিং ওভার প্রমাণ করে যে, ক্রোমোজোমে জিন (তথা অ্যালিল)-গুলি সরলরৈখিকভাবে অবস্থান করে।

৩.৬ অযৌন ও যৌন জনন এর মধ্যে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পার্থক্য নিরূপণ করো : জনিতৃ জীবের সংখ্যা, অপত্য জনুর প্রকৃতি।

উত্তরঃ

বিষয়অযৌন জননযৌন জনন
জনিতৃ জীবের সংখ্যাএকটিএকটি বা দুটি
অপত্য জনুর প্রকৃতিঅপত্য জনুর কোন প্রকার প্রকরন ঘটে না বলে তা জনিতৃ জনুর অনুরূপ হয়।প্রকরন সৃষ্টি হয় বলে অপত্য জনুর মধ্যে যথেষ্ট বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়।

৩.৭ নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মাইটোসিস কোষ বিভাজনের ক্যারিওকাইনেসিসের দশা গুলি শনাক্ত করো :

  • ক্রোমোজোম গুলির কাশের বিষুব অঞ্চল বরাবর অবস্থান ও নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জা
  • বেমতন্তুর বিলুপ্তি
  • নিউক্লিয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি
  • অপত্য ক্রোমোজোমের কোশের বিপরীত মেরুতে গমন

উত্তরঃ

বৈশিষ্ট্যক্যারিওকাইনেসিসের দশা
ক্রোমোজোমগুলির কোশের বিষুব অঞ্চল বরাবর অবস্থান ও নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জামেটাফেজ দশা
নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তিটেলোফেজ দশা
বেমতন্তুর বিলুপ্তিপ্রোফেজ দশা
অপত্য ক্রোমোজোমের কোশের বিপরীত মেরুতে গমনঅ্যানাফেজ দশা

৩.৮ মটর গাছের ক্ষেত্রে পৃথগীভবন সূত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য তোমাকে বৈশিষ্ট্য নির্বাচন করতে বলা হলো। এরকম বিপরীত বৈশিষ্ট্যের নাম লেখো।

উত্তরঃ দৈর্ঘ্য বৈশিষ্ট্যের সাপেক্ষে লম্বা ও বেঁটে এবং ফুলের রং সাপেক্ষে বেগুনি ও সাদা হল দুটি বিপরীতধর্মী গুণ।

৩.৯ একজন বর্ণান্ধ রোগের বাহক মহিলা, একজন বর্ণান্ধ পুরুষকে বিবাহ করল। তাদের একটি কন্যাসন্তান হলো। এই কন্যাসন্তানের বর্ণান্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কতটা তা বিশ্লেষণ করে লেখ।

উত্তরঃ

বর্ণান্ধতা একটি X ক্রোমোজোম বাহিত প্রচ্ছন্ন রোগ। বর্ণান্ধতা রোগের বাহক মহিলার সঙ্গে বর্ণান্ধ পুরুষের বিবাহ হলে তাদের পুত্র-কন্যাদের বর্ণান্ধ হওয়ার সম্ভাবনা চেকার-বোর্ডের সাহায্যে দেখানো হল।

বর্ণান্ধ রোগ

অর্থাৎ কন্যা হয় বাহক (XC+XC) হবে না হয় বর্ণান্ধ (XCXC) হবে।

৩.১০ মানুষের জনগোষ্ঠীতে প্রকাশিত হয় এমন দুটি জিনগত রোগের নাম লেখ।

উত্তরঃ মানুষের জনগোষ্ঠীতে প্রকাশিত হয় এমন দুটি জিনগত রোগের নাম হল – থ্যালাসেমিয়া ও হিমোফিলিয়া।

৩.১১ ‘বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে অথচ হরিণ প্রচুর আছে। এমন একটি জঙ্গলে অন্য অভায়ারণ্য থেকে এনে কয়েকটি বাঘ ছাড়া হলো‘ – বেঁচে থাকতে গিয়ে ওই বাঘেদের যে যে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হবে তা ভেবে লেখ।

উত্তরঃ

বাঘেদের যে যে জীবনসংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হবে, সেগুলি হল –

  • পরিবেশগত সংগ্রাম – প্রথমত, অন্য অভয়ারণ্য থেকে আনা বাঘগুলির নতুন বসতি অঞ্চলে মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে। দ্বিতীয়ত, হরিণ বেশি থাকায় বনে ঘাপাতা-ঝোপের মাত্রা হ্রাস পাবে। বাঘের লুকিয়ে থাকার জায়গার অভাব হবে।
  • আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম – হরিণ শিকারের জন্য বাঘগুলিকে আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রামের সম্মুখীন হতে হবে এবং অপেক্ষাকৃত বেশি পরিশ্রম করতে হবে।
  • অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম – একই অঞ্চলে নতুন ও পুরোনো বাঘগুলির মধ্যে এলাকা দখল ও প্রজননের জন্য অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম হবে।

৩.১২ লবণ সহনের জন্য সুন্দরী গাছের যেকোনো দুটি অভিযোজন বর্ণনা করো।

উত্তরঃ

লবণ সহনের জন্য সুন্দরী গাছের দুটি অভিযোজন হল –

  • কান্ডের অভিযোজন – কাণ্ডের শাখা-প্রশাখার বিভিন্ন অঙ্গের কোশে অবস্থিত ভ্যাকুওলের মধ্যে অতিরিক্ত লবণ এরা সঞ্চিত করে রাখে। দেহে লবণ সঞ্চয়ের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হলে এরা বাকল মোচনের মাধ্যমেও অতিরিক্ত লবণ নির্গত করে থাকে।
  • পাতার অভিযোজন – জলশোষণের মাধ্যমে গৃহীত অতিরিক্ত লবণ পাতায় অবস্থিত লবণ গ্রন্থির মাধ্যমে নির্গত হয়ে থাকে। অনেক সময়ে উদ্ভিদ পাতায় সঞ্চিত অতিরিক্ত লবণকে পত্রমোচনের সাহায্যে রেচিত করে থাকে।

৩.১৩ শিম্পাঞ্জিরা খাবার জন্য কিভাবে উইপোকা শিকার করে তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ

শিম্পাঞ্জিরা প্রথমে কোনো একটি গাছের ডাল ভেঙে নেয়। তারপর ওই ডালের পাতাগুলি ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে, ডালটিকে উইটিপির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে গর্তের সৃষ্টি করে। এরপর তারা আর-একটি সরু ডাল ভেঙে পাতা ছাড়িয়ে ওই ডাল দ্বারা সৃষ্ট গর্তে প্রবেশ করায়। উইপোকারা ওই সরু জালটিরগা বেয়ে সারিবদ্ধভাবে চিপির থেকে বাইরে বের হতে থাকলে শিম্পাঞ্জিরা ওই উইপোকাগুলিকে খাদ্য হিসেবে খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে।

৩.১৪ নিম্নলিখিত দূষকগুলির ক্ষতিকারক প্রভাব তালিকাভুক্ত করো :

  • গ্রীনহাউস গ্যাস;
  • SPM;
  • কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার;
  • অভঙ্গুর রাসায়নিক কীটনাশক

উত্তরঃ

নিম্নলিখিত দূষকগুলির ক্ষতিকারক প্রভাব তালিকাভুক্ত করা হলো –

দূষকক্ষতিকারক প্রভাব
গ্রিনহাউস গ্যাসবিশ্ব উষ্ণয়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং
SPMমানুষের শ্বাসতন্ত্রে জ্বালা ও শ্বাসকষ্ট
কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সারইউট্রোফিকেশন ও জৈবসঞ্চয়ন
অভঙ্গুর রাসায়নিক কীটনাশকজৈবসঞ্চয়ন ও জীববিবর্ধন

৩.১৫ জলজ ও স্থলজ বাস্তুতন্ত্রেঅবস্থিত স্থানীয় জীববৈচিত্রের ক্ষতিসাধন করে এমন একটি করে বহিরাগত প্রজাতির উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ

জলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করে এমন বহিরাগত প্রজাতি হল কচুরিপানা।

স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করে এমন বহিরাগত প্রজাতি হল আমেরিকান আরশোলা।

৩.১৬ একটি বিপন্ন সরীসৃপ প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য ইন সিটু সংরক্ষণ ব্যবস্থা গুলি লেখো এবং পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত এরকম একটি সংরক্ষণ স্থানের নাম লেখো।

উত্তরঃ

একটি বিপন্ন সরীসৃপ প্রজাতি হল কুমির। কুমিরের ইন-সিটু সংরক্ষণ ব্যবস্থাগুলি হল –

  • কুমিরের প্রজননের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি ও তার পরিচালন।
  • ক্যাপটিভ ব্রিডিং দ্বারা অভয়ারণ্যে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ তৈরি ও প্রজননে সাহায্য করা।
  • চোরাশিকার ও কুমিরের ডিম সংগ্রহ প্রতিরোধ করা।

পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি সংরক্ষণ স্থান হল – ভগবতপুর কুমির প্রকল্প, সুন্দরবন।

৩.১৭ ‘চোরাশিকার ভারতের প্রাণীর বৈচিত্রের বিপন্নতার একটি প্রধান কারণ’ – যে যে কারণে এই চোরাশিকার ঘটে তার চারটি কারণ নির্ধারণ করো।

উত্তরঃ

চোরাশিকারের কারণ –

  • কয়েকটি পশুর দেহজ উপাদান নান্দনিক উপাদানরূপে গৃহসজ্জায় ব্যবহার করা হয়, যেমন – লাল পান্ডার ঝালর ল্যাজ, বাঘের চামড়া, চন্দন কাঠ ইত্যাদি।
  • বিভিন্ন পশুর দেহজ উপাদান আয়ুর্বেদিক ওষুধের অনুপান হিসেবে ব্যবহৃত হয় যেমন – বাঘের হাড়।
  • বহু প্রাণীর দেহাংশ (যেমন – চামড়া, হাড়, শিং, খড়গ প্রভৃতি) বিক্রির মাধ্যমে অনেক অর্থ বেআইনি পথে উপার্জন করার সুযোগ থাকে।
  • অনেক প্রাণীর মাংস খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয়, যেমন – হরিণ, কচ্ছপ।

বিভাগ – ঘ

৪। নিচের ৬টি প্রশ্ন বা তার বিকল্প প্রশ্নের উত্তর লেখঃ ৫×৬=৩০

৪.১ একটি আদর্শ নিউরোনের পরিচ্ছন্ন চিত্র অঙ্কন করো এবং নিম্নলিখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো : (ক) ডেনড্রন (খ) র‍্যানভিয়ের-এর পর্ব (গ) মায়েলিন সিথ (ঘ) সোয়ান কোষ ৩+২

উত্তরঃ

একটি আদর্শ নিউরোনের পরিচ্ছন্ন চিত্র –

আদর্শ নিউরোনের পরিচ্ছন্ন চিত্র

অথবা

 প্রাণী কোষের মাইটোসিস কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার পরিচ্ছন্ন চিত্র অঙ্কন করে নিম্নলিখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো : (ক) মেরু অঞ্চল (খ) বেমতন্তু (গ) ক্রোমাটিড (ঘ) সেন্ট্রোমিয়ার ৩+২

উত্তরঃ

প্রাণী কোষের মাইটোসিস কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার পরিচ্ছন্ন চিত্র

প্রাণী কোষের মাইটোসিস কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশা

৪.২ কোনো জীবের জন্য প্রজনন গুরুত্বপূর্ণ কেন? ‘মিয়োসিস বৈশিষ্ট্যগতভাবে মাইটোসিস থেকে পৃথক’— তুমি কিভাবে বক্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ করবে? ২+৩

উত্তর: প্রজননের গুরুত্ব – জীবজগতে প্রজননের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্বগুলি নিম্নরূপ:

  1. অস্তিত্ব রক্ষা করা – প্রজননের সাহায্যে জীব নতুন অপত্য সৃষ্টি করে। ফলে, তার নিজ প্রজাতির সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় থাকে।
  2. বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারাবাহিকতা অটুট রাখা – প্রজননের ফলে নতুন অপত্য জীব সৃষ্টি হয়। এর ফলে জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
  3. জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষা – জীবের মৃত্যুর ফলে জীবের সংখ্যার হ্রাস ঘটে। প্রজননের ফলে নতুন জীব সৃষ্টির মাধ্যমে মৃত্যুজনিত সংখ্যাহ্রাস পূরণ হয়। এর ফলে পৃথিবীতে জীবের ভারসাম্য তথা বাস্তুতান্ত্রিক সাম্য বজায় থাকে।
  4. জীব অভিব্যক্তি – যৌন জননের দ্বারা জীবদেহে মিউটেশন বা পরিব্যক্তি ঘটে। আবার, মিউটেশনের ফলে জীবদেহের মধ্যে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য বা বৈচিত্র্য বা প্রকরণের উদ্ভব হয়। প্রকরণ জীবের অভিযোজন ও অভিব্যক্তিতে সহায়তা করে।

মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য

বিষয়মাইটোসিসমিয়োসিস
সম্পাদনের স্থানদেহকোষ এবং সাধারণ সংখ্যা বৃদ্ধির সময়ে জনন কোষে মাইটোসিস ঘটে।জনন মাতৃকোষ থেকে জননকোষ বা গ্যামেট সৃষ্টির সময় ঘটে।
অপত্য কোষের সংখ্যাএকটি জনিতৃকোষ থেকে একবার বিভাজন দ্বারা দুটি অপত্য কোষ উৎপন্ন হয়।জনিতৃকোষ থেকে দু’বার বিভাজন দ্বারা চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয়।
ক্রোমোজোম বিভাজনের প্রকৃতিএটি সমবিভাজন, অর্থাৎ উৎপন্ন অপত্য কোষ দুটিতে ক্রোমোজোম সংখ্যা জনিতৃকোষের সমান (2n) থাকে।এটি হ্রাসবিভাজন, অর্থাৎ উৎপন্ন চারটি অপত্য কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের অর্ধেক হয়ে যায় (n)।

অথবা

উপযুক্ত উদাহরণ সহ অযৌন জননের পাঁচটি পদ্ধতি বর্ণনা করো।

উত্তরঃ

অযৌন জনন পদ্ধতিসমূহ – জীবদেহে যেসব অযৌন জনন পদ্ধতি দেখা যায়, সেগুলি হল –

(i) বিভাজন –

অধিকাংশ এককোশী জীবে মাইটোসিস বা অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজন পদ্ধতির দ্বারা দুই (দ্বিবিভাজন) বা দুইয়ের অধিক (বহুবিভাজন) নতুন অপত্য সৃষ্টি করার পদ্ধতিকে বিভাজন বলে। নীচে বিভাজন পদ্ধতির কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল।

(1) অ্যামিবা –

  • দ্বিবিভাজন – অনুকূল পরিবেশে Amoeba (অ্যামিবা)-র নিউক্লিয়াসটি অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে দ্বিবিভাজিত হয়। এর সাইটোপ্লাজম বিভাজনরত নিউক্লিয়াসের লম্বতলে (90°) খাঁজ (furrow) সৃষ্টি করে বিভাজিত হয় ও দুটি অপত্য সৃষ্টি করে।
  • বহুবিভাজন – প্রতিকূল পরিবেশে Amoeba (অ্যামিবা)-র ক্ষণপদ বিনষ্ট হয় ও সিস্ট প্রাচীর (cyst wall) দ্বারা আবদ্ধ হয়। সিস্টের মধ্যে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের বহুবিভাজন দ্বারা অসংখ্য ক্ষুদ্র স্পোর তৈরি হয়। এইপ্রকার বহুবিভাজনকে স্পোরুলেশন বলে। পরিবেশ অনুকূল হলে সিস্ট প্রাচীর বিদীর্ণ করে স্পোরগুলি মুক্ত হয় ও নতুন Amoeba (অ্যামিবা) সৃষ্টি করে।

(2) প্লাসমোডিয়াম – এক্ষেত্রে বহুবিভাজন দুটি দশায় ঘটে-সাইজন্ট এবং স্পোরন্ট। সাইজন্ট এবং স্পোরন্ট দশায় স্ত্রী Anopheles (অ্যানোফিলিস) মশার পাকস্থলীতে যথাক্রমে সাইজোগনি ও স্পোরোগনি নামক বহুবিভাজন দ্বারা অসংখ্য অপত্য Plasmodium (প্লাসমোডিয়াম) তৈরি হয়। সাইজোগনি এবং স্পোরোগনি দ্বারা সৃষ্ট অপত্য Plasmodium (প্লাসমোডিয়াম) – দের যথাক্রমে মেরোজয়েট ও স্পোরোজয়েট বলে।

(ii) কোরকোদ্গম –

যে বিশেষ ধরনের অযৌন জনন পদ্ধতিতে জনিতৃ জীবদেহের কোনো প্রবর্ধিত দেহাংশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিচ্যুত হয়ে অপত্য জীবদেহ সৃষ্টি করে তাকে কোরকোদ্গম বা বাডিং বলে। নীচে কোরকোদ্গম পদ্ধতির কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল।

  • ঈস্ট – ঈস্ট মাতৃকোশের অসমান বিভাজনের ফলে ক্ষুদ্র প্রবর্ধকের মতো কোরক সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে জনিত্ব নিউক্লিয়াস বিন্যস্ত থাকে। পরবর্তীকালে মাতৃদেহ থেকে কোরকটি বিচ্ছিন্ন হয় ও নতুন অপত্য ঈস্ট তৈরি করে। বিশেষ ক্ষেত্রে, টরুলা দশায় ঈস্টের কোরকটি টরুলেশন পদ্ধতিতে বার বার বিভাজিত হয়ে ছদ্ম মাইসেলিয়াম গঠন করে।
  • হাইড্রা – Hydra (হাইড্রা) – র কোরক জনিত্বর দেহের বাইরে সৃষ্টি হয় (এক্সোজেনাস বাড)। প্রথমে প্রবর্ধকরূপে সৃষ্টি হওয়ার পর অপত্য Hydra (হাইড্রা) – র মুখছিদ্র, কর্ষিকা প্রভৃতির গঠন সম্পূর্ণ হয় এবং সেটি মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।

(iii) খন্ডীভবন –

যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে জনিতৃ জীবের দেহ দুই বা ততোধিক খণ্ডে ভেঙে যায় ও প্রতিটি খন্ড অপত্যের সৃষ্টি করে, তাকে খন্ডীভবন বলে। উদাহরণ – Spirogyra (স্পাইরোগাইরা) নামক শৈবালের সূত্রাকার দেহটি জলস্রোতের প্রভাবে বা আঘাতজনিত কারণে খন্ডিত হয়ে যায়। প্রতিটি দেহাংশ মাইটোসিস কোশ বিভাজন পদ্ধতি দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে নতুন অপত্য জীব সৃষ্টি করে।

(iv) পুনরুৎপাদন –

যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে জনিতৃ জীবের সামান্য দেহাংশ সম্পূর্ণ নতুন জীব সৃষ্টি করে, তাকে পুনরুৎপাদন বলে। এইপ্রকার অযৌন জনন পদ্ধতিকে মরফাল্যাক্সিস বলে। (পক্ষান্তরে, দেহের সামান্য অংশ বিচ্ছিন্ন হলে সেই হারানো দেহাংশ পুনঃস্থাপনকে বলে এপিমরফোসিস)। উদাহরণ – Planaria (প্ল্যানেরিয়া) নামক চ্যাপটা কৃমির কোশদেহের যে-কোনো অংশ বিচ্ছিন্ন হলে, প্রতিটি বিচ্ছিন্ন অংশ থেকে নতুন অপত্যের সৃষ্টি হয়। Planaria (প্ল্যানেরিয়া) ছাড়া স্পঞ্জ, Hydra (হাইড্রা) – তেও পুনরুৎপাদন দেখা যায়।

(v) রেণু উৎপাদন –

যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে মস, ফার্ন ও ছত্রাকদেহে সৃষ্ট এককোশী রেণু জনিতৃ দেহ থেকে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন অপত্য সৃষ্টি করে, তাকে রেণু উৎপাদন বা স্পোরুলেশন বলে। নীচে রেণু উৎপাদন পদ্ধতির কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল।

  • ছত্রাক – ছত্রাকে বিভিন্নরকম গঠনের এবং গমন ক্ষমতাযুক্ত বা গমন ক্ষমতাবিহীন রেণু দেখা যায়, যা উপযুক্ত পরিবেশে অঙ্কুরিত হয়ে অপত্য ছত্রাক গঠন করে। বিভিন্ন ধরনের রেণুগুলি হল-চলন ক্ষমতাযুক্ত জুস্পোর, চলন ক্ষমতাবিহীন অ্যাপ্লানোস্পোর, পুরু প্রাচীরযুক্ত ক্ল্যামাইডোস্পোর, অণুসূত্র খন্ডীভবনের দ্বারা সৃষ্ট ওইডিয়া ও কনিডিয়া, স্পোরানজিয়ামে উৎপন্ন স্পোরানজিওস্পোর।
  • মস ও ফার্ন – মসের রেণুধর উদ্ভিদের রেণুধর কলা থেকে রেণুর সৃষ্টি হয়। ফার্নের রেণুধর উদ্ভিদের রেণুস্থলীতে সমআকৃতির রেণু বা বিষম আকৃতির রেণু উৎপন্ন হয়।

৪.৩ একটি বিশুদ্ধ কালো (BB) ও অমসৃণ লোমযুক্ত (rr) গিনিপিগের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা (bb) ও মসৃণ লোমযুক্ত (rr) গিনিপিগের মধ্যে সংকরায়ন এর ফলাফল F2 জনু পর্যন্ত চেকার বোর্ডের সাহায্যে দেখাও। এই সংকরায়ন থেকে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তা বিবৃত করো। ৩+২ =৫

উত্তরঃ

বিশুদ্ধ কালো ও অমসৃণ লোমযুক্ত গিনিপিগ (BBRR)-এর সঙ্ঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা ও মসৃণ লোমযুক্ত গিনিপিগ (bbrr)-এর সংকরায়ণের ফলাফল F2 জনু পর্যন্ত চেকার বোর্ডের সাহায্যে দেখানো হল।

একটি বিশুদ্ধ কালো (BB) ও অমসৃণ লোমযুক্ত ( SS ) গিনিপিগের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা (bb) ও মসৃণ লোমযুক্ত (rr)  গিনিপিগের মধ্যে সংকরায়ন এর ফলাফল F2 জনু পর্যন্ত চেকার বোর্ডের সাহায্যে দেখাও। এই সংকরায়ন থেকে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তা বিবৃত করো।

F2 জনু পর্যন্ত চেকার বোর্ড –

F2 জনু পর্যন্ত চেকার বোর্ড

F2 জনুতে প্রাপ্ত গিনিপিগের বৈশিষ্ট্য

F2 জনুতে প্রাপ্ত  গিনিপিগের বৈশিষ্ট

সিদ্ধান্ত – দুই বা তার বেশি বিপরীতধর্মী যুগ্ম বৈশিষ্ট্যের উপাদানগুলি জনক থেকে অপত্য জনুতে সঞ্চারিত হলেও তারা মিশ্রিত হয় না বরং অপত্যের জননকোষ তৈরির সময়ে এরা পরস্পর থেকে পৃথক হয় এবং সম্ভাব্য সকল প্রকার সমন্বয়ে স্বাধীনভাবে জননকোষে সঞ্চারিত হয়। এটিই মেন্ডেলের বংশগতির দ্বিতীয় সূত্র বা স্বাধীন বিন্যাস সূত্র।

অথবা

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কোনো শিশুর দেহে কী কী লক্ষণ প্রকাশিত হয়? সেক্ষেত্রে জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর সময় কী পরামর্শ দেওয়া হয়? (৩+২)

উত্তরঃ

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ –

  • হিমোগ্লোবিন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ফলে তীব্র অ্যানিমিয়া সৃষ্টি হয়।
  • রোগীর দেহে বারবার রক্ত সঞ্চারণের প্রয়োজন হয় বলে দেহের বিভিন্ন অংশে লৌহ সঞ্চিত হয়, যার ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেমন – হৃৎপিণ্ড, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি, যকৃত, প্লিহা প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • অস্থিমজ্জা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় বলে হাড়ের গঠন-বিকৃতি ঘটে এবং রোগীর মুখ ও মাথার খুলির হাড়ের গঠন অস্বাভাবিক হয়।
  • যকৃত ও প্লিহার বৃদ্ধি ঘটে। এদের যথাক্রমে হেপাটোমেগালি ও স্প্লিনোমেগালি বলা হয়।
  • এ ছাড়া, এই রোগে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং জন্ডিস, ক্লান্তি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। থ্যালাসেমিয়ার প্রকারভেদ অনুসারে মানুষের দেহে রোগের তীব্রতা ও লক্ষণগুলি আলাদা হয়।

থ্যালাসেমিয়া ও জেনেটিক কাউন্সেলিং –

  • বাবা ও মা উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জেনেটিক কাউন্সেলর সেক্ষেত্রে ভ্রূণের থ্যালাসেমিয়া রোগটি সৃষ্টি হয়েছে কি না তা নির্ধারণ করেন এবং প্রয়োজনে গর্ভাবস্থা বন্ধ করে নতুন গর্ভধারণের ব্যাপারে পরামর্শ দেন।
  • বিবাহ পূর্বে দুইজন পার্টনারই বাহক হিসেবে নির্ধারিত হলে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হতে পারে তা ব্যাখ্যা করা হয়। সম্ভব হলে এই বিবাহ এড়িয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • যে-কোনো একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক হলে শিশু রোগটির বাহক হতে পারে সেই সম্বন্ধে বাবা-মাকে সচেতন করা হয়। শিশুটির জিনগত অবস্থাও জেনেটিক কাউন্সেলর জন্মের পর নির্ধারণ করানোর পরামর্শ দেন। এর ফলে ভবিষ্যতে শিশুটির পরিবার পরিকল্পনায় তা সাহায্য করে।
  • থ্যালাসেমিয়া বাহক মা গর্ভাবস্থায় অনেক সময় অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় ভোগেন। জেনেটিক কাউন্সেলর সে বিষয়টি তার পরিবারের কাছে তুলে ধরেন।

৪.৪ জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তির সংক্ষিপ্ত রূপরেখা মিলার ও উরের পরীক্ষার সাহায্যে বর্ণনা করো।

উত্তরঃ

মিলার ও উরে-র পরীক্ষা – মিলার ও উরে-র পরীক্ষা – জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কিত ওপারিন ও হ্যালডেনের মতবাদের সপক্ষে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলেন। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম ভলক্যানিক তড়িৎমোক্ষণ পরীক্ষা (volcanic spark discharge experiment) করেছিলেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী স্ট্যানলি মিলার এবং হ্যারল্ড উরে (১৯৫২)।

মিলার ও উরে-র পরীক্ষা

পরীক্ষা ব্যবস্থা – এই পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীদ্বয় একটি বিশেষ যন্ত্র তৈরি করেন। প্রাচীন পৃথিবীর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য উপকরণ হিসেবে তারা মিথেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন ও জলীয় বাষ্প নেন। তাঁদের তৈরি যন্ত্রটিতে দুটি ফ্লাস্ক বর্তমান। এর মধ্যে বড়ো ফ্লাস্ক (৫ লিটার)-টিতে মিথেন, অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন গ্যাস মিশ্রণ ২:২:১ আয়তন অনুপাতে নেওয়া হয়; ছোটো ফ্লাস্ক (৫০০ মিলি)-টিতে জল রাখা হয়। বার্নারের সাহায্যে জল ফোটানো হয়। ফ্লাস্ক দুটি পরস্পর একটি কাচের টিউব দ্বারা যুক্ত থাকে, যার মাধ্যমে ছোটো ফ্লাস্কের ফুটন্ত জল থেকে জলীয় বাষ্প বড়ো ফ্লাস্কে প্রবেশ করে। বড়ো ফ্লাস্কটিতে টাংস্টেন-নির্মিত তড়িদ্বার দ্বারা ৭৫,০০০ ভোল্টের উচ্চ তড়িৎমোক্ষণ করা হয় (প্রাচীন পৃথিবীর বজ্রপাতের মতো)। গ্যাস মিশ্রণটি এরপর বড়ো ফ্লাস্ক থেকে নির্গত হলে তাকে একটি নলের মধ্যে দিয়ে চালনা করা হয়। এরপর ঠান্ডা জলপ্রবাহ দ্বারা মিশ্রণটিকে ঘনীভূত করে সংগ্রহ করা হয়। সমগ্র ব্যবস্থাপনাটি এক সপ্তাহ ধরে চালনা করা হয়।

পর্যবেক্ষণ – পরীক্ষায় প্রাপ্ত রাসায়নিক পদার্থগুলির বিশ্লেষণের দ্বারা মিলার ও উরে ৫টি অ্যামিনো অ্যাসিড পান। এগুলি হল গ্লাইসিন, আলফা অ্যালানিন, বিটা অ্যালানিন, অ্যাসপারটিক অ্যাসিড ও আলফা অ্যামিনোবিউটাইরিক অ্যাসিড। পরবর্তী সময়কালে মিলার-এর ছাত্র জেফ্রি বাডা ও অন্যান্যরা (২০০৮) প্রায় ২০টি অ্যামিনো অ্যাসিড ও অন্যান্য জৈব অ্যাসিড ওই পরীক্ষাব্যবস্থা থেকে আবিষ্কার করেন।

সিদ্ধান্ত – পরীক্ষায় প্রাপ্ত রাসায়নিক পদার্থগুলির বিশ্লেষণের দ্বারা মিলার ও উরে ৫টি অ্যামিনো অ্যাসিড পান। এগুলি হল গ্লাইসিন, আলফা অ্যালানিন, বিটা অ্যালানিন, অ্যাসপারটিক অ্যাসিড ও আলফা অ্যামিনোবিউটাইরিক অ্যাসিড। পরবর্তী সময়কালে মিলার-এর ছাত্র জেফ্রি বাডা ও অন্যান্যরা (২০০৮) প্রায় ২০টি অ্যামিনো অ্যাসিড ও অন্যান্য জৈব অ্যাসিড ওই পরীক্ষাব্যবস্থা থেকে আবিষ্কার করেন।

মিলার-উরে-র পরীক্ষার গুরুত্ব – মিলার ও উরে-র পরীক্ষা অ্যাবায়োজেনেসিস তত্ত্বকে সমর্থন করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে অজৈব উপাদান থেকে প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁদের পরীক্ষা হ্যালডেন-ওপারিন তত্ত্বকেও সমর্থন করে।

মিলার-উরে পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা –

  • অ্যামিনো অ্যাসিড অজৈব উপাদান থেকে তৈরি হলেও তারা কীভাবে সমন্বিত হয়ে জীবন তৈরি করে তার ব্যাখ্যা পরীক্ষাটি দিতে পারেনি।
  • বর্তমানে বহু বিজ্ঞানী মনে করেন যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে প্রাচীন পরিবেশে CO₂ যথেষ্ট মাত্রায় ছিল। তাই তাঁদের মতে সেই জারক পরিবেশে মিলার ও উরে-র পরীক্ষালব্ধ অ্যামিনো অ্যাসিডগুলি নাও পাওয়া যেতে পারত।

অথবা

ল্যামার্কের অভিব্যক্তি সংক্রান্ত তত্ত্বের প্রতিপাদ্যের প্রধান দুটি বিষয় বর্ণনা করো। হৃদপিন্ডের তুলনামূলক অঙ্গসংস্থান কিভাবে অভিব্যক্তি মতবাদ এর স্বপক্ষে প্রমাণ হিসাবে কাজ করে? ২+৩

উত্তরঃ

ল্যামার্কের অভিব্যক্তি সংক্রান্ত তত্ত্বের প্রতিপাদ্যের প্রধান দুটি বিষয় হল –

ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র –

জীবদেহের কোনো একটি অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ও ক্রমাগত ব্যবহৃত হতে থাকলে সেটি ক্রমশ সুগঠিত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অপরদিকে কোনো অঙ্গের ব্যবহার না হলে সেটি দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় হতে থাকে এবং অবশেষে অবলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন – জিরাফের আদি পূর্বপুরুষদের গলা বেঁটে ছিল। ক্রমাগত উঁচু গাছের পাতা সংগ্রহের চেষ্টায় তা লম্বা হয়েছে। অপরদিকে মানুষের পূর্বপুরুষের দেহের সক্রিয় ল্যাজ ক্রমাগত অব্যবহারে নিষ্ক্রিয় কক্সিসে পরিণত হয়েছে।

অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ –

জীব তার নিজের প্রচেষ্টায় জীবদ্দশায় কোনো অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহার দ্বারা যে সকল বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, তা পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। যেমন – বেঁটে গলাযুক্ত জিরাফের আদি পূর্বপুরুষরা উঁচু গাছের পাতা খাবার চেষ্টায় ক্রমশ লম্বা গলাযুক্ত হয়েছে এবং এই বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের ফলে বর্তমানের লম্বা গলাযুক্ত জিরাফ সৃষ্টি হয়েছে।

জৈব অভিব্যক্তির সপক্ষে হৃৎপিণ্ড-ঘটিত প্রমাণ –

মাছ, উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী ও স্তন্যপায়ী প্রভৃতি বিভিন্ন মেরুদণ্ডী শ্রেণির প্রাণীগুলির ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের গঠনগত জটিলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। যথা –

  • মাছের হৃৎপিণ্ডে দুটি প্রকোষ্ঠ দেখা যায়, একটি অলিন্দ ও একটি নিলয়। এই জন্য মাছের হৃৎপিণ্ডের মধ্যে দিয়ে কেবলমাত্র কম অক্সিজেন-যুক্ত রক্ত (বা অধিক কার্বন ডাইঅক্সাইড-যুক্ত রক্ত) প্রবাহিত হয়।
  • উভচর শ্রেণির প্রাণীর হৃৎপিণ্ডে তিনটি প্রকোষ্ঠ থাকে। এগুলি হলো দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয়। ব্যাঙের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র নিলয়ে অধিক অক্সিজেন-যুক্ত ও কম অক্সিজেন-যুক্ত রক্তের সামান্য মিশ্রণ ঘটে। অর্থাৎ, এটি তুলনামূলকভাবে উন্নত হৃৎপিণ্ড।
  • সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণীর হৃৎপিণ্ডে আরও উন্নতি দেখা যায় (ব্যতিক্রম কুমির)। এদের হৃৎপিণ্ডে অসম্পূর্ণ চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে, এগুলি হলো দুটি অলিন্দ ও অসম্পূর্ণভাবে বিভক্ত দুটি নিলয়। নিলয়ে অসম্পূর্ণ আন্তঃনিলয় প্রাচীর থাকে বলে সরীসৃপের হৃৎপিণ্ডে অধিক অক্সিজেন-যুক্ত এবং কম অক্সিজেন-যুক্ত রক্তের মিশ্রণ অপেক্ষাকৃত কম হয়।
  • পাখি ও স্তন্যপায়ীদের হৃৎপিণ্ড সম্পূর্ণরূপে চারটি প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট হয়। ফলে এদের হৃৎপিণ্ডে অধিক অক্সিজেন-যুক্ত রক্ত ও কম অক্সিজেন-যুক্ত রক্ত একেবারেই মিশতে পারে না। অর্থাৎ, এদের হৃৎপিণ্ড সবচেয়ে উন্নত।
মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃদপিণ্ডের গঠন

মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃদপিণ্ডের গঠন বিবর্তনগত গুরুত্ব:

জৈব অভিব্যক্তির সপক্ষে হৃৎপিণ্ডঘটিত প্রমাণের বিবর্তনগত গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো।

  • উপরোক্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীগুলির হৃৎপিণ্ডের মৌলিক গঠন এক, যদিও তা ক্রমশ জটিল হয়েছে। অর্থাৎ, একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তনের পথে ক্রমশ জটিল জীবগুলির উৎপত্তি ঘটেছে।
  • মাছ, উভচর, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলি অভিব্যক্তির পথে মেরুদণ্ডী প্রাণীর বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি বিশেষ। ৩. হৃৎপিণ্ডের গঠনগত ও কার্যগত বিকাশ অনুযায়ী পৃথিবীতে এদের আগমন ক্রম বোঝা যায়। অর্থাৎ, এদের আগমনের ক্রম হলো – মাছ ➞ উভচর ➞ সরীসৃপ ➞ পাখি ও স্তন্যপায়ী
  • হৃৎপিণ্ডের এই ক্রম পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মেরুদণ্ডী প্রাণীর ক্রমবিকাশের যে ধারা বোঝা যায়, তা হলো জলজ জীবন ➞ উভচর জীবন ➞ পূর্ণস্থলচর জীবন।

৪.৫ নাইট্রোজেন চক্রের যেকোন তিনটি ধাপে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো। “ বিলাসবহুল ও আরামদায়ক জীবনযাত্রা বায়ু দূষণের একটি অন্যতম প্রধান কারণ” — যুক্তিসহ উক্তিটি সমর্থন করো। ৩+২

উত্তরঃ

নাইট্রোজেন চক্রে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা – নাইট্রোজেন চক্রের বিভিন্ন ধাপে ব্যাকটেরিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। এর মধ্যে কয়েকটির কথা এখানে উল্লেখ করা হল।

জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের মাটিতে পুনঃপ্রবেশ –

জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের মাটিতে পুনঃপ্রবেশ ঘটে দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে। এই পদ্ধতি দুটি হল – (i) অ্যামোনিফিকেশন – উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ এবং প্রাণীর নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ বিভিন্ন বিয়োজক দ্বারা বিয়োজিত হয়ে মাটিতে নাইট্রোজেনঘটিত যৌগের পরিমাণ বাড়ায়। এরপর এই যৌগগুলি অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া Bacillus mycoides (ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস) ও Micrococcus (মাইক্রোকক্কাস)-র দ্বারা বিশিষ্ট হয়ে যে প্রক্রিয়ায় অ্যামোনিয়ায় পরিণত হয়, তাকে অ্যামোনিফিকেশন বলে। (ii) নাইট্রিফিকেশন – মাটির অ্যামোনিয়া বিভিন্নপ্রকার নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয়ে নাইট্রাইট ও নাইট্রেটে পরিণত হয় যে প্রক্রিয়ায়, তাকে নাইট্রিফিকেশন বলে। নাইট্রিফিকেশনে অংশগ্রহণকারী ব্যাকটেরিয়াগুলিকে নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া বলে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে অ্যামোনিয়া বা অ্যামোনিয়াম আয়নগুলি মাটিতে Nitroso-monus (নাইট্রোসোমোনাস) নামক ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় নাইট্রাইট যৌগে পরিণত হয় (নাইট্রাইটেশন)। তারপর মাটিতে বসবাসকারী Nitrobacter (নাইট্রোব্যাকটর) নামক ব্যাকটেরিয়া নাইট্রাইট যৌগকে নাইট্রেটে পরিণত করে (নাইট্রেটেশন)।

\(2NH_4^++3O_2\rightarrow2NO_2^-+4H^++2H_2O\);

\(2NO_2^-+O_2\rightarrow2NO_3^-\\\)

নাইট্রোজেনের মুক্তি বা মোচন বা ডিনাইট্রিফিকেশন –

যে প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকাস্থিত নাইট্রাইট ও নাইট্রেট যৌগ থেকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে, তাকে ডিনাইট্রিফিকেশন বা নাইট্রাজেন মোচন বলে। এতে সাহায্য করে Thiobacillus (থায়াব্যাসিলাস), Pseudomonas (সিউডোমোনাস) ইত্যাদি ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া।

\(NO_3^-\rightarrow NO_2^-\rightarrow NO+N_2O\rightarrow N_2\\\)

“বিলাসবহুল ও আরামদায়ক জীবনযাত্রা বায়ুদূষণের প্রধান কারণ।”-এই উক্তিটির সমর্থনে কয়েকটি যুক্তি উল্লেখ করা হল। যেমন –

  • এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটর যন্ত্রে ব্যবহৃত CFC বাস্তুর উষ্ণতা বৃদ্ধি করে, ওজোন স্তর বিনাশ করে পরিবেশে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব বাড়ায়।
  • প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে তৈরি মিথেন বায়ুর তাপমাত্রা বাড়ায়।
  • শিল্পক্ষের ও কৃষিক্ষেত্র থেকে তৈরি হওয়া সালফার ও নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড, ধোঁয়া প্রভৃতি শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি ঘটায়, অ্যাসিড বৃষ্টি তৈরি করে।

অথবা

গঙ্গা নদীর দূষণের ফলে প্রাণী জীববৈচিত্রের বিপন্নতার দুটি উদাহরণ দাও। নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হওয়ার ফলে যেসব ঘটনা ঘটছে তার যেকোনো প্রধান তিনটি ঘটনা ব্যাখ্যা করো। ২+৩

উত্তরঃ

গঙ্গা নদীর দূষণের ফলে প্রাণী জীববৈচিজ্যের বিপন্নতার দুটি উদাহরণ হল – গাঙ্গেয় শুশুক ও ইলিশ মাছ-এর সংখ্যা হ্রাস।

নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হওয়ার ফলে পরিবেশে যেসব ক্ষতিকর পরিবর্তনগুলি ঘটছে, তার কয়েকটি হল –

  • বিশ্ব উষ্ণায়ন – নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসটি তাপশোষী গ্রিনহাউস গ্যাস বা সূর্যালোকের প্রতিফলনে সৃষ্ট অবলোহিত আলো বা উত্তাপ শোষণ করে গ্রিনহাউস প্রভাব তথা বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটায়।
  • আলোক-রাসায়নিক ধোঁয়াশা বা ফোটোকেমিকাল স্মগ – পেট্রোলিয়াম দহনজাত নাইট্রিক অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন ও আলোকের উপস্থিতিতে PAN (পারঅক্সি-অ্যাসিটাইল নাইট্রেট) উৎপন্ন করে যা আলোক-রাসায়নিক ধোঁয়াশা উৎপন্ন করে। এটি দৃশ্যদূষণ ও শ্বাসনালীর প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট সমস্যা সৃষ্টি করে।
  • অম্লীকরণ – নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলি বৃষ্টির জলের সঙ্গে বিক্রিয়ায় নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে, যা অম্লবৃষ্টির অন্যতম উপাদান। অম্লবৃষ্টি জলজ জীব ও উদ্ভিদ ধবংস করে নদী, হ্রদ, পুকুর প্রভৃতির বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে। এ ছাড়া আবৃষ্টির প্রভাবে বনজ সম্পদের বিনাশ, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

৪.৬ “ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার একটি সমস্যা হলো বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন” — পরিবেশে এর কি কি প্রভাব পড়তে পারে তার সারসংক্ষেপ করো। শীতকালে শিশু ও বয়স্কদের নানা শ্বাসজনিত সমস্যা দেখা যায় — এরূপ দুটি সমস্যার নাম লেখ এবং তাদের একটি করে উপসর্গ বিবৃত করো। ৩+২

উত্তরঃ

বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব – শিল্প, কৃষি ও মানব উন্নয়নের অন্যান্য বিভিন্ন কার্যকলাপে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলের ভৌত ও রাসায়নিক অবস্থার পরিবর্তন করে। তাপশক্তি ও পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনকেন্দ্র বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাই পরোক্ষভাবে এই পরিবর্তন ঘটায়। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়িয়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটিয়েছে।

শীতকালে শিশু ও বয়স্কদের যেসব শ্বাসজনিত সমস্যা দেখা যায়, তার মধ্যে দুটি সমস্যার নাম ও উপসর্গ নীচে সারণিতে লেখা হল।

শীতকালে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে পরিলক্ষিত শ্বাসজনিত সমস্যা ও উপসর্গ

সমস্যাউপসর্গ
অ্যাজমা বা হাঁপানিশ্বাসকষ্ট
ব্রংকাইটিসকাশি, শ্বাসকষ্ট

অথবা

সুন্দরবনের একটি গবেষণা করতে গিয়ে তুমি নিম্নলিখিত তিনটি সমস্যা শনাক্ত করলে —

  • খাদ্য-খাদক সংখ্যার ভারসাম্যে ব্যাঘাত
  • নগরায়নের জন্য লবণাম্বু উদ্ভিদ ধ্বংস
  • উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে দ্বীপভূমির নিমজ্জন — জীববৈচিত্রের উপর এদের প্রভাব কি কি হতে পারে তা বিশ্লেষণ করো।
  • সুন্দাল্যান্ড হটস্পটের অবস্থান ও এর জীববৈচিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির নাম লেখ। ৩+২

উত্তরঃ

গবেষণায় প্রাপ্ত সমস্যাগুলি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর যেসব প্রভাব বিস্তার করে সেগুলি হল –

  • খাদ্য-খাদ্য সংখ্যার ভারসাম্যে ব্যাঘাত – জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে পরিবেশ সমস্যা সুন্দরবনকে গ্রাস করছে। বহু প্রাণী অবলুপ্ত হওয়ার ফলে বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশৃঙ্খলে খাদ্য-খাদকের সংখ্যার ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে, যা পরোক্ষভাবে মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলছে। মাছ, কাঁকড়া প্রভৃতি অতিরিক্ত সংগ্রহে বাঘেদের স্বাভাবিক খাদ্য হ্রাস পাচ্ছে, ফলে তারা সহজেই মানুষকে আক্রমণ করছে।
  • নগরায়ণের জন্য লবণাম্বু উদ্ভিদ ধ্বংস – নগরায়ণের জন্য এবং গৃহনির্মাণ, চাষ-আবাদ জ্বালানি কাঠের চাহিদা পূরণের জন্য সুন্দরবনের তীরবর্তী অঞ্চলে লবণায়ু উদ্ভিদকে ধবংস করা হচ্ছে।
  • উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে দ্বীপভূমির নিমজ্জন – বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। সমুদ্রের জলের উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের বহু দ্বীপ জলে নিমজ্জিত হচ্ছে। যেমন – ভাঙ্গাদুয়ানি দ্বীপটির 16.44% জলে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া ঘোরামারা, লোহাচারা, বেডফোর্ড প্রভৃতি ব-দ্বীপগুলি জলে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের মাল্লা নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

সুন্দাল্যান্ড হটস্পটের অবস্থান – দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুমাত্রা ও বোর্নিও এবং ভারতের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং এই অঞ্চলের একটি পুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হল – সুন্দরী গাছ (উদ্ভিদ) অথবা ওরাং ওটাং (প্রাণী)।

বিভাগ – ঙ

(কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য)

৫। যে কোনো ৪টি প্রশ্নের উত্তর দাওঃ ১×৪=৪

৫.১ সরেখ পেশির একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সরেখ পেশির একটি বৈশিষ্ট্য – বিভিন্ন অস্থি ও সন্ধির সঞ্চালন।

৫.২ কোন্ কোশ অঙ্গাণুকে কোশের প্রোটিন তৈরির কারখানা বলা হয়?

উত্তরঃ রাইবোসোমকে কোশের প্রোটিন তৈরির কারখানা বলা হয়।

৫.৩ একটি প্রোক্যারিওটিক কোশযুক্ত জীবের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ একটি প্রোক্যারিওটিক কোশযুক্ত জীবের উদাহরণ – আর্চিয়াল কোষ।

৫.৪ জলপরাগী ফুলের একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ জলপরাগী ফুলের একটি উদাহরণ – পাতাশ্যাওলা।

৫.৫ সেন্টোজোমের একটি কাজ লেখো।

উত্তরঃ সেন্ট্রোজোমে থাকা সেন্ট্রিওল কোষ বিভাজনের সময় অ্যাস্টার রে তৈরি করে। এছাড়া স্পিন্ডল যন্ত্র বিভিন্ন ধরনের ফ্লাজেলা সৃষ্টিতে সেন্ট্রোজোমের অবদান রয়েছে।

৬। যে – কোনো তিনটি প্রশ্নের উত্তর দাওঃ ২x৩=৬

৬.১ যোগ কলার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ

যোগ কলার দুটি বৈশিষ্ট্য –

  • দেহের বিভিন্ন অঙ্গ বা কলার মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টি করে
  • কঙ্কাল গঠন করে দেহের বিভিন্ন কাঠামো প্রদান এবং বিভিন্ন অঙ্গের সংরক্ষণে চলাচলে সাহায্য করে

৬.২ প্যারেনকাইমা কলার দুটি কাজ লেখো।

উত্তরঃ

  • প্যারেনকাইমা টিস্যুর প্রধান কাজ দেহ গঠন করা, খাদ্য প্রস্তুত করা,খাদ্য সঞ্চয় করা, খাদ্যদ্রব্য পরিবহন করা।
  • বায়ু গহ্বর যুক্ত প্যারেনকাইমা (এরেনকাইমা) উদ্ভিদকে জলে ভেসে থাকতে সাহায্য করে ।

৬.৩ উদ্ভিদদেহে ভাজক কলার দুটি অবস্থান উল্লেখ করো।

উত্তরঃ

উদ্ভিদদেহে ভাজক কলার দুটি অবস্থান –

  • অগ্ৰস্থ ভাজক কলা
  • নিবেশিত ভাজক কলা

৬.৪ জীবদেহে সংগঠিত যে – কোনো দুটি গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার নাম লেখো।

উত্তরঃ

পরিপাক: পরিপাক প্রক্রিয়া আমাদের খাদ্যকে শরীরে শোষণযোগ্য ছোট ছোট অণুতে ভেঙে ফেলে। এটি মুখের মধ্য দিয়ে শুরু হয়, যেখানে খাদ্য চিবানো হয় এবং লালা মিশ্রিত হয়। এরপর খাদ্য অন্ননালী দিয়ে পাকস্থলিতে যায়, যেখানে এটি আরও হজম হয়। পাকস্থলী থেকে খাদ্য ছোট অন্ত্রে প্রবেশ করে, যেখানে এটি পুষ্টি উপাদান শোষিত হয়। অবশিষ্ট অংশ বড় অন্ত্রে যায়, যেখানে জল শোষিত হয় এবং মল তৈরি হয়। মল শেষ পর্যন্ত মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যায়।

শ্বসন: শ্বসন প্রক্রিয়া আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়। ফুসফুসে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বায়ু আসে এবং বেরিয়ে যায়। ফুসফুসের ছোট বায়ুথলিগুলিতে, অক্সিজেন রক্তে প্রবেশ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যায়। রক্ত অক্সিজেন সমৃদ্ধ হয়ে হৃদপিণ্ডে ফিরে আসে। হৃদপিণ্ড শরীরের সকল অংশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পাম্প করে। রক্তের কোষগুলিতে অক্সিজেন ব্যবহার করা হয় শক্তি উৎপন্ন করতে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয়। কার্বন ডাই অক্সাইড রক্তে প্রবেশ করে ফুসফুসে ফিরে আসে, যেখানে এটি বেরিয়ে যায়।

আরও পড়ুন – 

Share via:

মন্তব্য করুন