Madhyamik History Question Paper 2019 With Answer

Mrinmoy Rajmalla

নমস্কার বন্ধুরা! আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো মাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ের পুরাতন বছরের প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে। এই আর্টিকেলটি তোমাদেরকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় কেমন ধরণের প্রশ্ন আসতে পারে তার একটি স্পষ্ট ধারণা দেবে। বিশেষ করে, আমরা মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০১৯ সহ উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০১৯ সালের প্রশ্নপত্র শুধুমাত্র ২০১৯ সালের পরীক্ষার্থীদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং পরবর্তী বছরের পরীক্ষার্থীদের জন্যও এটি একটি মূল্যবান সম্পদ। কারণ, প্রতি বছর প্রশ্নের ধরণ ও মানে কিছুটা হলেও মিল থাকে। তাই পুরাতন বছরের প্রশ্ন অনুশীলন করলে তোমরা পরীক্ষার প্রতি আরও আত্মবিশ্বাসী হতে পারবে এবং ভালো ফলাফল করার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাবে।

Table of Contents

Madhyamik History Question Paper 2019 With Answer

Madhyamik History Question Paper 2019 With Answer

বিভাগ ‘ক’

১. সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো।

১.১ মোহনবাগান ক্লাব আই. এফ. এ. শিল্ড জয় করেছিল –

(ক) ১৮৯০ খ্রিঃ

(খ) ১৯০৫ খ্রিঃ

(গ) ১৯১১ খ্রিঃ

(ঘ) ১৯১৭ খ্রিঃ

উত্তরঃ (গ) ১৯১১ খ্রিঃ

১.২ দাদাসাহেব ফালকে যুক্ত ছিলেন –

(ক) চলচ্চিত্রের সঙ্গে

(খ) ক্রীড়া জগতের সঙ্গে

(গ) স্থানীয় ইতিহাসচর্চার সঙ্গে

(ঘ) পরিবেশের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে

উত্তরঃ (ক) চলচ্চিত্রের সঙ্গে

১.৩ ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ প্রকাশিত হয় –

(ক) যশোর থেকে

(খ) রানাঘাট থেকে

(গ) কুষ্ঠিয়া থেকে

(ঘ) বারাসাত থেকে

উত্তরঃ (গ) কুষ্ঠিয়া থেকে

১.৪ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বিএ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় –

(ক) ১৮৫৭ খ্রিঃ

(খ) ১৮৫৮ খ্রিঃ

(গ) ১৮৫৯ খ্রিঃ

(ঘ) ১৮৬০ খ্রিঃ

উত্তরঃ (খ) ১৮৫৮ খ্রিঃ

১.৫ কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন –

(ক) ড. এম. জে. ব্রামলি

(খ) ড. এইচ. এইচ. গুডিভ

(গ) ড. এন. ওয়ালিশ

(ঘ) ড. জে. গ্রান্ট

উত্তরঃ (ক) ড. এম. জে. ব্রামলি

১.৬ তিতুমিরের প্রকৃত নাম ছিল –

(খ) চিরাগ আলি

(খ) হায়দর আলি

(গ) মির নিসার আলি

(ঘ) তোরাপ আলি

উত্তরঃ (গ) মির নিসার আলি

১.৭ সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের অন্যতম নেতা ছিলেন –

(ক) রানি কর্ণাবর্তী

(খ) রানি শিরোমণি

(গ) দেবী চৌধুরানি

(ঘ) রানি দুর্গাবতী

উত্তরঃ (গ) দেবী চৌধুরানি

১.৮ “বন্দেমাতরম” সঙ্গীতটি রচিত হয় –

(ক) ১৮৭০ খ্রিঃ

(খ) ১৮৭২ খ্রিঃ

(গ) ১৮৭৫ খ্রিঃ

(ঘ) ১৮৭৬ খ্রিঃ

উত্তরঃ (গ) ১৮৭৫ খ্রিঃ

১.৯ ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটি রচনা করেন –

(ক) অক্ষয় কুমার দত্ত

(খ) রাজনারায়ণ বসু

(গ) স্বামী বিবেকানন্দ

(ঘ) রমেশচন্দ্র মজুমদার

উত্তরঃ (গ) স্বামী বিবেকানন্দ

১.১০ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন –

(ক) সংগীত শিল্পী

(খ) নাট্যকার

(গ) কবি

(ঘ) ব্যঙ্গ চিত্রশিল্পী

উত্তরঃ (ঘ) ব্যঙ্গ চিত্রশিল্পী

১.১১ বর্ণপরিচয় প্রকাশিত হয়েছিল –

(ক) ১৮৪৫ খ্রিঃ

(খ) ১৮৫০ খ্রিঃ

(গ) ১৮৫৫ খ্রিঃ

(ঘ) ১৮৬০ খ্রিঃ

উত্তরঃ (গ) ১৮৫৫ খ্রিঃ

১.১২ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় –

(ক) ১৯০৫ খ্রিঃ

(খ) ১৯০৬ খ্রিঃ

(গ) ১৯১১ খ্রিঃ

(ঘ) ১৯১২ খ্রিঃ

উত্তরঃ (খ) ১৯০৬ খ্রিঃ

১.১৩ সর্বভারতীয় কিষান সভার প্রথম সভাপতি ছিলেন –

(ক) এন.জি. রঙ্গ

(খ) স্বামী সহজানন্দ

(গ) বাবা রামচন্দ্র

(ঘ) লালা লাজপত রায়

উত্তরঃ (খ) স্বামী সহজানন্দ

১.১৪ কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল –

(ক) কলকাতায়

(খ) দিল্লিতে

(গ) বোম্বাইতে

(ঘ) মাদ্রাজে।

উত্তরঃ (গ) বোম্বাইতে

১.১৫ ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি যুক্ত ছিল –

(ক) রাওলাট সত্যাগ্রহে

(খ) অসহযোগ আন্দোলনে

(গ) বারদৌলি সত্যাগ্রহে

(ঘ) সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনে

উত্তরঃ (খ) অসহযোগ আন্দোলনে

১.১৬ বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যা করার চেষ্টা করেন –

(ক) বীণা দাস

(খ) কল্পনা দত্ত

(গ) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

(ঘ) সুনীতি চৌধুরি

উত্তরঃ (ক) বীণা দাস

১.১৭ অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটির সম্পাদক ছিলেন –

(ক) শচীন্দ্র প্রসাদ বসু

(খ) কৃষ্ণ কুমার মিত্র

(গ) চিত্তরঞ্জন দাস

(ঘ) আনন্দমোহন বসু।

উত্তরঃ (ক) শচীন্দ্র প্রসাদ বসু

১.১৮ ভাইকম সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল –

(ক) মালাবারে

(খ) মাদ্রাজে

(গ) মহারাষ্ট্রে

(ঘ) গোদাবরী উপত্যকায়

উত্তরঃ (ক) মালাবারে

১.১৯ যে দেশীয় রাজ্যটি গণভোটের মাধ্যমে ভারতীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয় –

(ক) কাশ্মীর

(খ) হায়দ্রাবাদ

(গ) জুনাগড়

(ঘ) জয়পুর

উত্তরঃ (গ) জুনাগড়

১.২০ ভাষাভিত্তিক গুজরাট রাজ্যটি গঠিত হয় –

(ক) ১৯৫৩ খ্রিঃ

(খ) ১৯৫৬ খ্রিঃ

(গ) ১৯৬০ খ্রিঃ

(ঘ) ১৯৬৫ খ্রিঃ

উত্তরঃ (গ) ১৯৬০ খ্রিঃ

বিভাগ ‘খ’

২. যে-কোনো ষোলোটি প্রশ্নের উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে) :

উপবিভাগ – ২.১

২.১ একটি বাক্যে উত্তর দাও :

(২.১.১) ‘গোরা’ উপন্যাসটি কে রচনা করেন?

উত্তরঃ ‘গোরা’ উপন্যাসটি রচনা করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

(২.১.২) বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম চিত্রিত গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তরঃ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম চিত্রিত গ্রন্থটি হল ১৮১৬ সালে কলকাতার ফেরিস অ্যান্ড কোম্পানির ছাপাখানা থেকে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য-র উদ্যোগে প্রকাশিত রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্য।

(২.১.৩) কোন বছর শ্রীরামপুর মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তরঃ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ‘শ্রীরামপুর মিশন প্রেস’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

(২.১.৪) ঊষা মেহতা কোন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

উত্তরঃ উষা মেহতা ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

উপবিভাগ – ২.২

২.২ ঠিক বা ভুল নির্ণয় করো :

(২.২.১) ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ। 

উত্তরঃ ঠিক।

(২.২.২) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা এমএ ছিলেন কাদম্বিনী বসু (গাঙ্গুলী)।

উত্তরঃ ভুল।

(২.২.৩) বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ছিলেন বাসন্তী দেবী।

উত্তরঃ ভুল।

(২.২.৪) দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন কল্পনা দত্ত।

উত্তরঃ ভুল।

উপবিভাগ – ২.৩

‘ক’ স্তম্ভের সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভ মেলাও :

‘ক’ স্তম্ভ‘খ’ স্তম্ভ
(২.৩.১) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়(১) হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়
(২.৩.২) নবগোপাল মিত্র(২) কৃষক আন্দোলন
(২.৩.৩) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল(৩) হিন্দুমেলা
(২.৩.৪) ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন(৪) বঙ্গদর্শন

উত্তরঃ

‘ক’ স্তম্ভ‘খ’ স্তম্ভ
(২.৩.১) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়(৪) বঙ্গদর্শন
(২.৩.২) নবগোপাল মিত্র(৩) হিন্দুমেলা
(২.৩.৩) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল(২) কৃষক আন্দোলন
(২.৩.৪) ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন(১) হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়

উপবিভাগ – ২.৪

২. প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত ও নামাঙ্কিত করো।

(২.৪.১) সাঁওতাল বিদ্রোহের (১৮৫৫) এলাকা।

(২.৪.২) বারাসাত বিদ্রোহের এলাকা।

(২.৪.৩) নীল বিদ্রোহের অন্যতম কেন্দ্র : যশোর।

(২.৪.৪) দেশীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদ।

সাঁওতাল বিদ্রোহের (১৮৫৫) এলাকা-2019-Madhyamik-History

অথবা

কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য

শূন্যস্থান পূরণ কর:

(২.৪.১) সরলাদেবী চৌধুরানীর আত্মজীবনী গ্রন্থের নাম_।

উত্তরঃ সরলাদেবী চৌধুরানীর আত্মজীবনী গ্রন্থের নাম জীবনের ঝরাপাতা

(২.৪.২) কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় _ খ্রিস্টাব্দে।

উত্তরঃ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে।

(২.৪.৩) সুই মুন্ডা ছিলেন _ বিদ্রোহের অন্যতম নেতা।

উত্তরঃ সুই মুন্ডা ছিলেন কোল বিদ্রোহের অন্যতম নেতা।

(২.৪.৪) ভারতসভা প্রতিষ্ঠিত হয় _ খ্রিস্টাব্দে।

উত্তরঃ ভারতসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে।

উপবিভাগ – ২.৫

২.৫ নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে সঠিক বাক্যটি নির্বাচন কর :

২.৫.১ বিবৃতি : রামমোহন রায় লর্ড আমহার্স্টকে চিঠি লিখেছিলেন (১৮২৩ খ্রি.)।

ব্যাখ্যা ১ : সতীদাহ প্রথা বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে।
ব্যাখ্যা ২ : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের আবেদন জানিয়ে।
ব্যাখ্যা ৩ : ভারতে সংস্কৃত শিক্ষা বিস্তারের আবেদন জানিয়ে।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ২ : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের আবেদন জানিয়ে।

(২.৫.২) বিবৃতি : স্বামী বিবেকানন্দ ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটি রচনা করেন।

ব্যাখ্যা ১ : তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আধুনিক ভারতের ইতিহাস প্রণয়ন করা।
ব্যাখ্যা ২ : তার উদ্দেশ্য ছিল নব্য হিন্দুধর্ম প্রচার করা।
ব্যাখ্যা ৩ : তাঁর উদ্দেশ্য ছিল স্বাদেশিকতা প্রচার করা।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : তাঁর উদ্দেশ্য ছিল স্বাদেশিকতা প্রচার করা।

(২.৫.৩) বিবৃতি : বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক-কৃষকদের জন্য কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি।

ব্যাখ্যা ১ : শ্রমিক কৃষকরা এই আন্দোলনের বিরোধী ছিল।
ব্যাখ্যা ২ : ব্রিটিশ সরকার শ্রমিক কৃষকদের আন্দোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
ব্যাখ্যা ৩ : বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন ছিল মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির আন্দোলন।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন ছিল মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির আন্দোলন।

(২.৫.৪) বিবৃতি : গান্ধিজি জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন সমর্থন করেন নি।

ব্যাখ্যা ১ : গান্ধিজি ছিলেন জমিদার শ্রেণির প্রতিনিধি।
ব্যাখ্যা ২ : গান্ধিজি হিংসাত্মক আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন।
ব্যাখ্যা ৩ : গান্ধিজি শ্রেণিসংগ্রামের পরিবর্তে শ্রেণিসমন্বয়ে বিশ্বাসী ছিলেন।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : গান্ধিজি শ্রেণিসংগ্রামের পরিবর্তে শ্রেণিসমন্বয়ে বিশ্বাসী ছিলেন।

বিভাগ ‘গ’

৩. দুটি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে-কোনো এগারোটি):

৩.১ আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তরঃ

ইতিহাসচ্চার ক্ষেত্রে বর্তমানে আঞ্চলিক ইতিহাসচো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ –

  • আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা দ্বারা স্থানীয় অঞ্চলের সমাজ, অর্থনীতি, শিল্পকলা প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
  • এর মাধ্যমে জাতীয় ইতিহাসচর্চ্চার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায়। আঞ্চলিক ইতিহাসের মাধ্যমেই জাতীয় ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ রূপ নিতে পারে।

৩.২. ‘সরকারি নথিপত্র’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ

ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রগুলি হল মূলত পুলিশ ও গোয়েন্দাদের রিপোর্ট, সরকারি অধিকারিক ও দপ্তরগুলির প্রদত্ত বিভিন্ন বিবরণ, প্রতিবেদন, চিঠিপত্র প্রভৃতি।

৩.৩ সংবাদপত্র এবং সাময়িক-পত্রের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তরঃ

সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল –

  • সাধারণত সংবাদপত্র প্রতিদিন প্রকাশিত হয়। কিন্তু সাময়িকপত্র একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রকাশিত হয়।
  • সংবাদপত্রের মুদ্রণে রোজকার খবরাখবর গুরুত্ব পায়। সাময়িকপত্রে রোজকার খবরের পরিবর্তে সমকালীন বাছাই করা বিষয় গুরুত্ব পায়।
  • সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা আকারে বড়ো হয় এবং সেগুলো বাঁধানো থাকে না। অন্যদিকে সাময়িকপত্রের পৃষ্ঠাগুলো অপেক্ষাকৃত ছোটো হয় এবং সাধারণত তা বইয়ের মতো বাঁধাই করা হয়।

৩.৪ মধুসূদন গুপ্ত কে ছিলেন?

উত্তরঃ

মধুসূদন গুপ্ত (১৮০০-১৮৫৬ খ্রি.) ছিলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের একজন ছাত্র। এদেশে তিনিই প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করে এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটান। তিনি ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ডাক্তারি পাস করেন এবং পরে মেডিকেল কলেজের চাকরিতে যোগ দেন।

৩.৫ সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হল কেন?

উত্তরঃ

সমসী ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণগুলি হল –

  • এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকেই বাংলার বাইরে থেকে এসেছিলেন। তাই বাংলায় তাদের জনভিত্তি ছিল দুর্বল।
  • ই বিদ্রোহ শুরু থেকেই ক্ষুদ্র অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল।
  • সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এই বিদ্রোহ জনপ্রিয় হতে পারেনি; শুরু থেকেই তারা দুর্বল ছিল।

৩.৬ নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা কীরূপ ছিল?

উত্তরঃ

বাংলায় সংঘটিত নীল বিদ্রোহে ইউরোপ থেকে ভারতে আগত খ্রিস্টান মিশনারিদের বিশেষ ভূমিকা ছিল।

  • এই বিদ্রোহের সময় তারা নীলচাষিদের প্রতি সমর্থন ও সহানুভূতি জানায়।
  • তারা নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ও শোষণের চিত্র স্থানীয় সংবাদপত্রগুলিতে তুলে ধরে।
  • তারা উপলব্ধি করে যে, নীলচাষিদের দুর্দশা দূর করার জন্য তাদের মধ্যে উন্নত খ্রিস্টান শিক্ষা ও গণশিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রয়োজন। এখানে উল্লেখ্য, মিশনারি জেমস লঙ নীলকরদের তীব্র সমালোচক ছিলেন।

৩.৭ জমিদার সভা ও ভারতসভার মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ

উনিশ শতকে গড়ে ওঠা জমিদার সভা ও ভারতসভার মধ্যে দুটি মৌলিক পার্থক্য ছিল –

  • সাধারণ মানুষের নয়, জমিদার সভা ছিল মূলত জমিদার ও ধনী ব্যাবসায়ীদের সংগঠন। অন্যদিকে, ভারতসভা সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে গণ-সংগঠন গড়ে তুলেছিল।
  • জমিদার সভার প্রধান লক্ষা ছিল বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জমিদারদের স্বার্থ রক্ষা করা। অন্যদিকে, ভারতসভার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয়দের সার্বিক কল্যাণসাধন ও স্বার্থরক্ষা।

৩.৮ উনিশ শতকে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে ‘ভারতমাতা’ চিত্রটির কিরুপ ভূমিকা ছিল?

উত্তরঃ

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আঁকা ‘ভারতমাতা’র চার হাতে বেদ, ধানের শিষ, জপের মালা, ও শ্বেতবস্ত্র দেখিয়েছেন। এগুলির দ্বারা তিনি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের যুগে ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশিয়ানা ও জাতীয়তাবাদী অনুভূতি জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।

৩.৯ চার্লস উইলকিনস কে ছিলেন?

উত্তরঃ

ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন পদস্থ কর্মচারী চার্লস উইলকিন্স ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

৩.১০ বাংলা লাইনোটাইপ প্রবর্তনের গুরুত্ব কী?

উত্তরঃ

বাংলা মুদ্রণের ইতিহাসে সুরেশচন্দ্র মজুমদার কর্তৃক ‘লাইনোটাইপ’ নামে একটি ছাপার কৌশল প্রবর্তনের বিশেষ গুরুত্ব ছিল।

  • লাইনোটাইপ প্রবর্তনের ফলে বাংলা অক্ষরের টাইপগুলি অনেক বেশি মার্জিত ও উন্নত হয়।
  • লাইনোটাইপের দ্বারা বাংলা ভাষায় ছাপার গুণগত মানের যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটে।

৩.১১ কৃষক আন্দোলনে বাবা রামচন্দ্রের কীরূপ ভূমিকা ছিল?

উত্তরঃ

অসহযোগ আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলনে বাবা রামচন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন –

  • তিনি যুক্তপ্রদেশে গঠিত কিষান সভার নেতৃত্বে কৃষকদের নিয়ে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলেন।
  • তাঁর নেতৃত্বে কিষান সভার আন্দোলন কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনের সাথে মিশে গিয়ে জোরালো হয়ে ওঠে।

৩.১২ মাদারি পাশি কে ছিলেন?

উত্তরঃ

যুক্ত প্রদেশে সংগঠিত ‘একা আন্দোলন’-এর বিখ্যাত চরমপন্থী নেতা ছিলেন মাদারি পাশি। তাঁর নেতৃত্বে একা আন্দোলন খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

৩.১৩ মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন?

উত্তরঃ

মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলেন ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিখ্যাত নেত্রী। ৭৩ বছর বয়স্ক কৃষক পরিবারের এই বৃদ্ধা মেদিনীপুরের তমলুক থানা অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। তিনি ‘গান্ধিবুড়ি’ নামে পরিচিত।

৩.১৪ দলিত কাদের বলা হয়?

উত্তরঃ

হিন্দু বর্ণব্যবস্থায় জন্ম ও পেশাগত পরিচিতির বিচারে যেসব মানুষ সমাজের নিম্নস্তরে অবস্থান করে এবং বিভিন্ন সময়ে উচ্চবর্ণের দ্বারা সামাজিক বঞ্চনার শিকার হয়, তারা সাধারণভাবে দলিত নামে পরিচিত।

৩.১৫ দার কমিশন (১৯৪৮) কেন গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পর ভারতীয় অঙ্গরাজ্য এবং ভারতে যোগ দেওয়া বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যগুলির সীমানা জাতি না ভাষার ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। এই প্রশ্নের মীমাংসার উদ্দেশ্যে দার কমিশন (১৯৪৮) গঠিত হয়।

৩.১৬ পত্তি শ্রীরামুলু কে ছিলেন?

উত্তরঃ

পত্তি শ্রীরামুলু ছিলেন দক্ষিণ ভারতের একজন গান্ধিবাদী নেতা। মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে তিনি ৫৮দিন অনশন করে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।

বিভাগ ঘ’

৪. সাত বা আটটি বাক্যে যে-কোনো ছটি প্রশ্নের উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্তত একটি করে প্রশ্নের উত্তর দাও):

উপবিভাগ – ঘ.১

৪.১ ‘নীলদর্পণ’ নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায়?

উত্তরঃ

‘নীলদর্পণ’ নাটকে সমকালীন বাংলার সমাজচিত্র –

ভূমিকা – উনিশ শতকে বাংলার সমাজজীবনের চিত্র যেসব সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছে সেগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ছিল দীনবন্ধু মিত্রের লেখা নাটক ‘নীলদর্পণ’।

  • প্রেক্ষাপট – উনিশ শতকে ইউরোপের বস্ত্রশিল্পের প্রয়োজনে নীলের চাহিদা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এই পরিস্থিতিতে ইংরেজ-সহ বিভিন্ন ইউরোপীয় ব্যবসায়ী বাংলায় এসে এখানকার চাষিদের নীলচাষে বাধ্য করে। এর ফলে বাংলার চাষিদের জীবনে চরম দুর্দশা নেমে আসে। এই প্রেক্ষাপটে দীনবন্ধু মিত্র ‘নীলদর্পণ’ (১৮৬০ খ্রি.) নাটকটি রচনা করে তা ঢাকা থেকে প্রকাশ করেন।
  • চাষিদের দুর্দশা – অত্যাচারী নীলকর সাহেবরা বাংলার দরিদ্র চাষিদের ধানের পরিবর্তে নীলচাষে বাধ্য করে। ফলে চাষিদের ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। এদিকে নীল উৎপাদন করে চাষিরা যথার্থ মূল্য থেকেও বঞ্চিত হয়। এর ফলে আর্থিক দিক থেকে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জীবনে নেমে আসে দুর্দশা, যা ‘নীলদর্পণ’ নাটকে ফুটিয়ে তোলা হয়।
  • অত্যাচার – ‘নীলদর্পণ’ নাটকে নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের সীমাহীন শোষণ ও অত্যাচারের বিবরণ সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। চাষিদের জমি থেকে উৎখাত, গোরু-বাছুর কেড়ে নেওয়া, ঘরবাড়িতে আগুন লাগানো, নীলকুঠিতে চাষিকে ধরে নিয়ে গিয়ে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন প্রভৃতি নাটকে তুলে ধরা হয়। নাটকে উল্লিখিত নীলকর উড-এর অত্যাচার মানুষের মনে শিহরণ সৃষ্টি করে।
  • নীল বিদ্রোহ – তীব্র শোষণ ও অত্যাচারের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলার দরিদ্র নীলচাষিরা ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে যা ‘নীল বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। ‘নীলদর্পণ’ নাটকে এই বিদ্রোহের সূত্রপাত ও প্রসারের চিত্র প্রতিফলিত হয়।

৪.২ উনিশ শতকে নারীশিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন?

উত্তরঃ

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের ভূমিকা –

ভূমিকা – জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন ছিলেন ভারতে একজন ব্রিটিশ কর্মচারী। তিনি উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে পুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

  • মাতৃভাষার গুরুত্ব – রাজা রামমোহন রায়ের মতো মনীষীও যখন ইংরেজি শিক্ষার পক্ষে বক্তব্য রাখেন তখন বেথুন সাহেব গ্রামবাংলার সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাতৃভাষায় জনশিক্ষার প্রসারে পুরুত্ব দেন। তাঁর মতে, মাতৃভাষার মাধ্যমেই আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো সম্ভব।
  • নারীশিক্ষা – উনিশ শতকে এদেশে নারীশিক্ষার প্রসারে বেথুন ছিলেন অগ্রগণ্য। তিনি বাংলার মেয়েদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে রামগোপাল ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পণ্ডিত গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কারের লেখা নারীশিক্ষা-বিষয়ক একটি পুস্তিকা বেথুন সাহেব নিজ অর্থব্যয়ে ছেপে বিলি করেন।
  • স্কুল প্রতিষ্ঠা – নারীদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে বেথুন সাহেব কলকাতায় ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে (৭ মে) হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় (বর্তমান বেথুন স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তাঁর যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এই বিদ্যালয়কে দান করেন। বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন বেথুন বলেন যে, “আমি বিশ্বাস করি আজকের দিনটি একটি বিপ্লবের সূচনা করতে যাচ্ছে।”
  • কলেজ প্রতিষ্ঠা – বাংলার নারীদের মধ্যে আধুনিক উচ্চশিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে বেথুন সাহেব কলকাতায় একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বর্তমানে বেথুন কলেজ নামে পরিচিত। মাত্র একজন ছাত্রী কাদম্বিনী বসুকে নিয়ে এই কলেজের পঠনপাঠন শুরু হয়। বেথুন কলেজ হল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মহিলা কলেজ।
  • অন্যান্য কৃতিত্ব – বেথুন সাহেব কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষায় গ্রন্থ অনুবাদের কাজেও বিশেষ উৎসাহী ছিলেন।

উপবিভাগ – ঘ.২

৪.৩ হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তরঃ

হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য –

ভূমিকা – পণ্ডিত রাজনারায়ণ বস্তুর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে ‘হিন্দুমেলা’-র প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল। যেমন –

  • হিন্দুধর্মের ঐতিহ্য – ‘হিন্দুমেলা’ প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুধর্মের অতীত ঐতিহ্য ও গৌরবগাথা সাধারণ মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে প্রচার করা।
  • পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অগ্রগতি রোধ – উনিশ শতকে ভারতে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি দ্রুতগতিতে প্রসারিত হতে থাকে। হিন্দুমেলা এর প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়।
  • দেশাত্মবোধের প্রসার – ভারতবাসীর মধ্যে দেশাত্মবোধের চেতনা জাগিয়ে তোলা হিন্দুমেলার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল। এই উদ্দেশ্যে তারা দেশীয় ভাষা চর্চা করা, জাতীয় প্রতীকগুলিকে মর্যাদা দান করা, দেশের জয়গান গাওয়া, দেশাত্মবোধক কবিতা পাঠ করা, দেশীয় শিল্পের প্রসার ঘটানো, দেশীয় শরীরচর্চ্চা করা প্রভৃতির উদ্যোগ নেয়।

৪.৪ বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন?

উত্তরঃ

বঙ্গভঙ্গ প্রকাশিকা সভা-কে ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলার কারণ –

ভূমিকা – উনিশ শতকের মধ্যভাগে ভারতে যেসব রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা’। যোগেশচন্দ্র বাগল এটিকে ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করেছেন। কারণ –

  • যুক্তিতর্ক – ব্রিটিশদের রাজনৈতিক সংগঠনগুলিতে যেমন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে যুক্তিতর্ক চলত, তেমনই বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাতেও যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে আলোচনা চলত।
  • ভারতীয়দের স্বার্থ – ভারতে ব্রিটিশ শাসকদের যেসব কাজকর্মে ভারতীয়দের স্বার্থ জড়িত ছিল, সেসব বিষয় নিয়ে এই সভায় আলোচনা হত।
  • করের বিরোধিতা – ব্রিটিশ সরকার ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে এক আইনের দ্বারা নিষ্কর জমির ওপর কর আরোপ করলে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা এর প্রতিবাদ করে।

উপসংহার – রাজনৈতিক সচেতনতা নিয়ে যেসব চিন্তা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, ভারতে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাই প্রথম সেসব বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এজন্য এই প্রতিষ্ঠানকে ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়।

উপবিভাগ – ঘ.৩

৪.৫ ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ

ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিষ্কারের সম্পর্ক –

ভূমিকা – ঔপনিবেশিক আমলে বাংলা তথা ভারতে আধুনিক মুদ্রণব্যবস্থা চালু হলে মানুষের হাতে প্রচুর ছাপা বইপত্র আসতে থাকে। এসব ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিষ্কারের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছাপা বই একদিকে যেমন শিক্ষার অগ্রগতি ঘটায়, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান শিক্ষার অগ্রগতি ছাপা বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি করে।

  • গণশিক্ষার দিকে যাত্রা – ইতিপূর্বে হাতে লেখা বইয়ের দাম খুব বেশি হত। তাই এসব বই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল এবং শিক্ষাদান ব্যবস্থা ছিল উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু ছাপা বই দামে সভা হওয়ায় তা সাধারণ মানুষ কেনার ও পড়ার সুযোগ পায়। এভাবে শিক্ষাক্ষেতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ঘটে যা গণশিক্ষার প্রসারের পটভূমি তৈরি করে।
  • পাঠ্যবইয়ের সহজলভ্যতা – ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রচুর পরিমাণ মুদ্রিত ও দামে সস্তা পাঠ্যবই বাজারে আসতে থাকে। ফলে বইয়ের অভাব দূর হয় এবং শিক্ষাবিস্তারের পথ মসৃণ হয়।
  • মাতৃভাষায় শিক্ষা – ছাপাখানার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় ভাষাশিক্ষা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান ইত্যাদি বই, বোধিনী বা সহায়িকা বই বাংলা ভাষায় ছাপা হতে থাকে। ফলে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায়।
  • উচ্চশিক্ষা – আশিস খাস্তগীর উল্লেখ করেছেন যে, উনিশ শতকের মধ্যভাগে ব্যাপক পরিমাণে পাঠ্যবই প্রকাশ হতে থাকলে তা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়ে ওঠে। ফলে, বাঙালির উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি অনেক সহজ হয়।
  • নারীশিক্ষার অগ্রগতি – উনিশ শতকের শেষার্ধে নারীশিক্ষার দাবি ক্রমণ জোরদার হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে সুলভ ছাপা বই নারীদের হাতে পৌঁছালে নারীশিক্ষার গতি তরান্বিত হয়।
  • উপসংহার – ছাপা বই একদিকে শিক্ষার বিস্তারে ভূমিকা নিয়েছিল, অন্যদিকে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

৪.৬ বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরূপ অবদান ছিল?

উত্তরঃ

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান –

ভূমিকা – বাংলায় বিজ্ঞানচর্চ্চার বিকাশে মহেন্দ্রলাল সরকারের অসামান্য অবদান রয়েছে।

  • যুক্তিবাদের প্রচার – পেশায় চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার মানুষের অন্ধবিশ্বাস দূর করে তাদের যুক্তিবাদের সমর্থক হতে বলেন।
  • আই এ সি এস-এর প্রতিষ্ঠা – পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নিয়মিত মৌলিক গবেষণা, বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতার আয়োজন প্রভৃতি উদ্দেশ্যে মহেন্দ্রলাল ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’ (ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ বা (আই ও সি এস) প্রতিষ্ঠা করেন। বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাঁফো তাঁকে এ কাজে বিশেষ সহায়তা করেন।
  • বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশ – মহেন্দ্রলালের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আই এ সি এস তার নিজস্ব পত্রিকা প্রকাশ করে। ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স’ নামক এই পত্রিকাতে প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রকাশিত হত।

উপসংহার – বিজ্ঞানচর্চ্চার প্রসারে মহেন্দ্রলালের উদ্যোগ বাংলা তথা ভারতের বিজ্ঞানচর্চ্চাকে অনেক ধাপ এগিয়ে দেয়। জগদীশচন্দ্র বস্তু, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ বিখ্যাত বিজ্ঞানী তাঁর প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেছেন। এখানে গবেষণা করেই চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন ‘রমন ক্রিয়া’ (রমন এফেক্ট) আবিষ্কার করেন, যার জন্য তিনি নোবেল পুরষ্কার পান।

উপবিভাগ – ঘ.৪

৪.৭ ভারত সরকার কীভাবে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতীয় ইউনিয়নে সংযুক্ত করার প্রশ্নটি সমাধান করেছিল?

উত্তরঃ

দেশীয় রাজ্য সম্পর্কে ভারতের উদ্যোগ –

ভূমিকা – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের প্রাক্-মুহূর্তে ভারতীয় ভূখণ্ডে দেশীয় শাসকদের শাসনাধীনে ৫০০-রও বেশি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এ ছাড়া পোর্তুগাল, ফ্রান্স প্রভৃতি কয়েকটি রাষ্ট্রের উপনিবেশও ভারতে ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর এসব স্থানকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

  • কংগ্রেসের ঘোষণা – স্বাধীনতা লাভের আগেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। তারা ১৫ জুন (১৯৪৭ খ্রি.) ঘোষণা করে যে, ব্রিটিশ শক্তি ভারত ছেড়ে যাওয়ার পর দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব কংগ্রেস স্বীকার করবে না। ফ্রান্স এবং পোর্তুগালের ভারতীয় উপনিবেশগুলি সম্পর্কেও কংগ্রেস একই নীতি গ্রহণ করে।
  • ভারতভুক্তি – বল্লভভাই প্যাটেলের কূটনৈতিক চাপ ও হুমকির ফলে স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী ৩ সপ্তাহের মধ্যেই অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথমদিকে, জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীর ভারতে যোগদানে অস্বীকার করলেও শেষপর্যন্ত ভারতের চাপে তারা যোগদানে বাধ্য হয়। সিকিমও ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতে যোগ দেয়।
  • অন্যান্য উপনিবেশ – ভারতের চাপে চন্দননগর, মাহে, কারিকল, পন্ডিচেরী, ইয়ানাম প্রভৃতি ফরাসি উপনিবেশ এবং গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি প্রভৃতি পোর্তুগিজ উপনিবেশও ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

৪.৮ কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয়?

উত্তরঃ

কাশ্মীর সমস্যা –

ভূমিকা – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় ভারতীয় ভূখণ্ডের উল্লেখযোগ্য দেশীয় রাজ্য ছিল কাশ্মীর। ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পর কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে উদ্যোগী হন।

  • জটিলতা – কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং হিন্দু হলেও সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা ছিল মুসলিম। এই অবস্থায় হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করলে পাকিস্তান ও ভারত উভয় রাত্রে কাশ্মীরকে নিজের রাজনৈতিক সীমানায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে। এর ফলে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
  • পাক হানা – ২২ অক্টোবর (১৯৪৭ খ্রি.) পাক মদতপুষ্ট হানাদারবাহিনী ও পাক সেনাদল কাশ্মীরে প্রবেশ করে সেখানে ব্যাপক হত্যালীলা, লুণ্ঠন ও নির্যাতন শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে মহারাজা হরি সিং ভারত সরকারের কাছে সামরিক সহায়তা প্রার্থনা করে।
  • ভারতভুক্তির দলিল স্বাক্ষর – কাশ্মীরের সামরিক সহায়তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত জানিয়ে দেয় যে, মহারাজা ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করলে তবেই তারা কাশ্মীরে সেনা পাঠাবে। এদিকে পাকবাহিনী কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থান দ্রুত দখল করতে থাকলে মহারাজা হরি সিং ‘ভারতভুক্তির দলিল-এ স্বাক্ষর করেন।
  • ভারতের অভিযান – হরি সিং ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করার পরের দিন ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে অভিযান শুরু করে দ্রুত কাশ্মীরের ২/৩ অংশ ভূখণ্ড দখল করে নেয়। ওই বাহিনীর সহায়তায় ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা শেখ আবদুল্লাহ কাশ্মীরের শাসনক্ষমতা দখল করেন।

বিভাগ ঙ’

৫. পনেরো বা ষোলোটি বাক্যে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :

৫.১ বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবাবিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন? ৫+৩

উত্তরঃ

বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবাবিবাহ আন্দোলন –

ভূমিকা – উনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত ভারতীয় হিন্দুসমাজে বিধবাবিবাহ স্বীকৃত ছিল না। ফলে, বিধবা হিন্দু নারীরা সমাজে সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে থাকতে বাধ্য হত। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বিভিন্ন সমাজ-সংস্কারক এই সময় বিধবাবিবাহ প্রচলনের উদ্দেশ্যে আন্দোলন গড়ে তোলেন। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

জনমত গঠন – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিধবাবিবাহের সমর্থনে জনমত গঠন করতে থাকেন।

  • তিনি ‘বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন।
  • জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে বিদ্যাসাগর ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকাতে বিধবাবিবাহ বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।
  • সমাজে বিধবাবিবাহকে আইনসিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে বিদ্যাসাগর গণস্বাক্ষর গ্রহণ করেন এবং এই গণস্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদনপত্র সরকারের কাছে জমা দেন।

আইন পাস – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও আন্দোলনে ব্রিটিশ সরকার প্রভাবিত হন। অবশেষে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ‘বিধবাবিবাহ আইন’ পাস করে সরকার বিধবাবিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেন।

বিধবাবিবাহের প্রচলন – ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন বর্ধমানের জনৈক বিধবা কালীমতীকে বিবাহ করলে কলকাতায় প্রথম বিধবাবিবাহ সম্পন্ন হয়। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর নিজ পুত্র নারায়ণচন্দ্রকে ভবসুন্দরী নামে এক বিধবার সঙ্গে বিবাহ দেন।

বিরোধীদের জবাব – যারা বিধবাবিবাহের বিপক্ষে ছিল কিংবা বিধবাবিবাহের বিরোধিতা করেছিল তাদের উত্তর দেবার জন্য তিনি ‘অতি অল্প হইল’ ও ‘আবার অতি অল্প হইল’ নামে দুটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন।

বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবাবিবাহের সাফল্য

বিদ্যাসাগর তাঁর বিধবাবিবাহ আন্দোলনে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেন –

  • নারীমুক্তি – বিধবাবিবাহ আন্দোলনের ফলে বিধবা নারীরা মুক্তির স্বপ্ন দেখার সুযোগ পায়। এরপর বিধবাবিবাহ সংঘটিত হতে থাকলে বিধবাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়।
  • বিধবাবিবাহের প্রসার – বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ আন্দোলন শুধুমাত্র বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। বোম্বাইয়ের প্রার্থনাসমাজ, মহারাষ্ট্রে ডি কে কার্ডে, মাদ্রাজে বীরসালিঙ্গম পাণ্ডুলু বিধবাবিবাহকে ‘সাফল্যমন্ডিত করে তোলেন।
  • সুদূরপ্রসারী প্রভাব – রক্ষণশীলদের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যায়নি। বিদ্যাসাগরের শুরু করা বিধবাবিবাহ পরবর্তীকালে স্বাভাবিক নিয়মেই সমাজে নিজের স্থান করে নিয়েছে।

উপসংহার – বিধবাবিবাহ আন্দোলন ও তার প্রবর্তন ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তাঁর এই উদ্যোগের ফলে হিন্দু বিধবা নারীরা নতুন দিশার সন্ধান পায়।

৫.২ বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। ৮

উত্তরঃ

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ –

ভূমিকা – উনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ফলে বিজ্ঞান শিক্ষার অগ্রগতি ঘটে। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের ফলে বাংলা কারিগরি শিক্ষার দ্রুত প্রসার ও আগ্রগতি পুর হয়। এবিষয়ে কয়েকজন ইংরেজ ও ভারতীয়র উদ্যোগ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

  • শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ – বাংলার কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ছিল ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ প্রতিষ্ঠিত ক্যালকাটা কলেজ অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। কলেজটি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে শিবপুরে স্থানান্তরিত হয় এবং এর নতুন নাম হয় ‘বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’। এই কলেজ ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ডিগ্রি প্রদান শুরু করে।
  • কারিগরি শিক্ষার দাবি – উনিশ শতকের শেষদিকে কংগ্রেসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্রগুলিতে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের দাবি জানানো শুরু হয়। এর পরিণতি হিসেবে কলকাতায় অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এডুকেশন (১৯০৪ খ্রি.), যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৯০৬ খ্রি.) প্রভৃতি গড়ে ওঠে।
  • জাতীয় শিক্ষা – ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়। এই পরিষদের সদস্য তারকনাথ পালিত ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’ বা BTI প্রতিষ্ঠা করে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উদ্যোগ নেয়। এটি নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর, টেকনিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

উপসংহার – ব্রিটিশ শাসক ও শিল্পপতিরা কারিগরি ক্ষেত্রে ভারতীয়দের অদক্ষ বলে মনে করত। এজন্য তারা কারিগরি শিক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে বিরত থাকে। ফলে, বাংলায় কারিগরি শিক্ষার যথার্থ প্রসার ব্যাহত হয়। তবে স্বাধীনতার পরে ভারতে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যার অন্যতম ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে খড়গপুরে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা। পরবর্তীকালে এটি উৎকৃষ্ট কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বে মান্যতা পায়।

৫.৩ বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল? তাদের আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা কী? ৫+৩

উত্তরঃ

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ –

ভূমিকা – সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ করলে বাংলা তথা ভারতে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত হয়। এই আন্দোলনে নারীরাও বিপুল সংখ্যায় অংশগ্রহণ করেন।

  • বিলিতি পণ্য বর্জন – বহু নারী বিলিতি পণ্য যেমন বিলিতি শাড়ি, কাচের চুড়ি, লবণ, ওষুধপত্র প্রভৃতির ব্যবহার বন্ধ করে দেন এবং দেশীয় মোটা কাপড়ের ব্যবহার শুরু করেন। গৃহকোণ ছেড়ে বেরিয়ে তাঁরা মিছিল-মিটিং ও পিকেটিং-এ অংশ নেন। এই প্রসঙ্গে কবি মুকুন্দ দাস গান লেখেন “ফেলে দাও রেশমি চুড়ি”।
  • স্বদেশি পণ্যের প্রচার – স্বদেশি পণ্যের প্রচারে বিভিন্ন নারী এগিয়ে আসেন এবং প্রচারকার্য চালান। এই সময় সরলাদেবী চৌধুরানি ‘লক্ষ্মীর ভাঙার’ স্থাপন করেন।
  • জাতীয় শিক্ষা – বহু ছাত্রী ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তারা দেশীয় নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ভরতি হয়।
  • অরন্ধন – ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করছে বাংলার নারীরা ঘরে ঘরে অরন্ধন ও উপবাস পালন করেন।
  • আন্দোলনে নেতৃত্ব – বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে মুরশিদাবাদের গিরিজা সুন্দরী, ফরিদপুরের সৌদামিনী দেবী, বরিশালের সরোজিনী দেবী ও মনোরমা বসু, ঢাকার ব্রাহ্মময়ী সেন, বীরভূমের দুকড়িবালা দেবী, খুলনার লাবণ্যপ্রভা দত্ত প্রমুখ নারী স্থানীয়ভাবে এবং সরলাদেবী চৌধুরানি, হেমাঙ্গিনী দাস, কুমুদিনী মিত্র, লীলাবতী মিজ, কুমুদিনী বসু, সুবালা আচার্য, নির্মলা সরকার প্রমুখ নারী জাতীয় স্তরে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দেন।

(কেবলমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য)

বিভাগ – চ

৬। ৬.১ একটি সম্পূর্ণ বাক্যে উত্তর দাও (যে-কোনো চারটি) ৪×১=৪

৬.১.১ ‘নীলদর্পণ’ নাটকটির রচয়িতা কে?

উত্তরঃ ‘নীলদর্পণ’ নাটকটির রচয়িতা হলেন – দীনবন্ধু মিত্র।

৬.১.২ হিন্দু কলেজ কত খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তরঃ হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় – ১৮১৭ সালের ২০ জানুয়ারি।

৬.১.৩ ‘আনন্দ মঠ’ কে রচনা করেন?

উত্তরঃ ‘আনন্দ মঠ’ রচনা করেন – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

৬.১.৪ কত খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তরঃ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়।

৬.১.৫ ‘মাস্টারদা’ নামে কে পরিচিত ছিলেন?

উত্তরঃ ‘মাস্টারদা’ নামে পরিচিত ছিলেন – সূর্য সেন।

৬.১.৬ নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস – এর প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস – এর প্রথম সভাপতি ছিলেন – লালা লাজপত রায়।

৬। ৬.২ দুটি বা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে-কোনো তিনটি) ৩×২=৬

৬.২.১ ডেভিড হেয়ার স্মরণীয় কেন?

উত্তরঃ স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ডেভিড হেয়ার কলকাতার একজন ঘড়ি সারাইওয়ালা হলেও এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। এছাড়াও তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘পটলডাঙা অ্যাকাডেমি’ (হেয়ার স্কুল) ; ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি’ ও ‘ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি। এর পাশাপাশি তিনি ছিলেন মানবতাবাদী ও সমাজসেবী।

৬.২.২ ‘বিপ্লব’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ বিপ্লব হলো কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন। এই পরিবর্তন জনগণ কর্তৃক প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সৃষ্টি করা হয়। বিপ্লব শান্তিপূর্ণ বা হিংসাত্মক হতে পারে।

৬.২.৩ ‘রসিদ আলি দিবস’ কেন পালিত হয়েছিল?

উত্তরঃ রশিদ আলী, একজন বীর আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপ্টেন, ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সুপরিচিত। ব্রিটিশ সামরিক আদালত তাকে অন্যায়ভাবে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়। এই রায়ের প্রতিবাদে, ১৯৪৬ সালের ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় উত্তেজনাপূর্ণ গণ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

৬.২.৪ ‘ভারতভুক্তির দলিল’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ অধিকাংশ রাজ্যের শাসকরা ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে ভারতীয় সংঘে যোগদানের জন্য ‘ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাক্সেশন’ নামক একটি দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে, জুনাগড়, হায়দরাবাদ, কাশ্মীর এবং মণিপুরের মতো কিছু দেশীয় রাজ্যের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি জটিল এবং বিতর্কিত ছিল।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer