ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ভারত-বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভারত-বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভারত-বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ

1947 খ্রিস্টাব্দের 3 জুন লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ভারত-বিভাজন প্রস্তাব কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ উভয় দলই মেনে নেয়। 1947 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনাকে সমর্থন জানায়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পিছনে উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হল –

  • প্রথমত, দাঙ্গায় বিধ্বস্ত ভারতীয় জনগণকে কংগ্রেস দীর্ঘদিন অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে রাখা সমীচীন বলে মনে করেনি-দ্বিজাতি তত্ত্বকে অস্বীকার করলেও কংগ্রেস জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধির স্বার্থে ভারত বিভাগের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল।
  • দ্বিতীয়ত, 1946 খ্রিস্টাব্দের শেষ দিক থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকলাপে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় তাঁরা একথা অনুভব করেন যে, মুসলিম লিগের সঙ্গে একত্রে সরকার পরিচালনা করা আর সম্ভব নয়। তৃতীয়ত, দেশ বিভাজন মেনে নিলেও কংগ্রেস ভারতের বেশিরভাগ অংশের ঐক্য বজায় রাখার জন্য বাংলা ও পাঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলির অ-মুসলিম অঞ্চলগুলিকে প্রস্তাবিত পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে বিযুক্ত করতে চেয়েছিলেন।

মন্তব্য –

মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ভারত বিভাজনকে তীব্র নিন্দা করেছিলেন। তাঁর মতে যদি মন্ত্রী মিশনের পরিকল্পনা মেনে নেওয়া যেত তাহলে ভারতে ঐক্য ও শান্তি দুটোই বজায় রাখা যেত।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভারত বিভাজন কেন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল?

1. দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রভাব – মুসলিম লিগের দাবি অনুযায়ী হিন্দু ও মুসলমান দুটি পৃথক জাতি, তাই তাদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রয়োজন।
2. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা – 1946-1947 সালে ভয়াবহ দাঙ্গা (যেমন – কলকাতা, নোয়াখালী, পাঞ্জাব) শান্তি বজায় রাখাকে অসম্ভব করে তোলে।
3. রাজনৈতিক অচলাবস্থা – কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে সহযোগিতার অভাব এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা।
4. ব্রিটিশ নীতি – ব্রিটিশ সরকার দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরে আগ্রহী ছিল এবং বিভাজনকে একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখেছিল।

কংগ্রেস ভারত বিভাগ মেনে নেওয়ার পেছনে কারণ কী ছিল?

কংগ্রেস ভারত বিভাগ মেনে নেওয়ার পেছনে কারণ ছিল –
1. দাঙ্গা ও অস্থিরতা রোধ – দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা ঠেকাতে শান্তিপূর্ণ সমাধান হিসেবে বিভাজন মেনে নেওয়া হয়।
2. অন্তর্বর্তী সরকারের অকার্যকারিতা – মুসলিম লিগের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা ও সরকার পরিচালনায় অসুবিধা।
3. বাংলা ও পাঞ্জাবের বিভক্তির আশঙ্কা – কংগ্রেস চেয়েছিল বাংলা ও পাঞ্জাবের হিন্দু-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো ভারতে থাকুক।

ভারত বিভাজনে ব্রিটিশদের ভূমিকা কী ছিল?

ভারত বিভাজনে ব্রিটিশদের ভূমিকা ছিল –
1. লর্ড মাউন্টব্যাটেনের তাড়াহুড়ো – 1947 সালের জুনে মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
2. ভাগ করো ও শাসন করো নীতি – ব্রিটিশরা সাম্প্রদায়িক বিভেদকে কাজে লাগিয়ে তাদের শাসনকে দীর্ঘায়িত করেছিল, যা শেষ পর্যন্ত বিভাজনের দিকে নিয়ে যায়।

ভারত বিভাজনের বিরোধিতা করেছিলেন কারা?

1. মৌলানা আবুল কালাম আজাদ – তিনি মনে করতেন বিভাজন এড়ানো যেত যদি মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনা মানা হতো।
2. মহাত্মা গান্ধী – তিনি অখণ্ড ভারতের পক্ষে ছিলেন এবং হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের উপর জোর দিয়েছিলেন।
3. খান আবদুল গাফফার খান (সীমান্ত গান্ধী) – তিনি পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিলেন এবং পরে নিজেকে “প্রতারিত” বলে মনে করেছিলেন।

বাংলা ও পাঞ্জাব বিভক্ত হওয়ার কারণ কী?

বাংলা ও পাঞ্জাব বিভক্ত হওয়ার কারণ –
1. সাম্প্রদায়িক জনসংখ্যার ভিত্তি – বাংলা ও পাঞ্জাবে হিন্দু-মুসলিম জনগোষ্ঠী মিশ্রিত ছিল, তাই র্যাডক্লিফ লাইন দ্বারা সীমানা নির্ধারণ করা হয়।
2. দাঙ্গা পরিস্থিতি – সহিংসতা রোধ করতে দ্রুত বিভাজন প্রয়োজন ছিল।
3. কংগ্রেসের চাপ – কংগ্রেস চেয়েছিল হিন্দু-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো (পশ্চিম বাংলা, পূর্ব পাঞ্জাব) ভারতে থাকুক।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – স্তম্ভ মেলাও

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – শূন্যস্থান পূরণ

Madhyamik Life Science MCQ Suggestion 2026