নবম শ্রেণি – বাংলা – আকাশে সাতটি তারা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

আকাশে সাতটি তারার প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা এবং তাদের সাথে তার মনের মিলন এই কবিতায় ফুটে উঠেছে। কবি মনে করেন, তারারা তার জীবনে আনন্দ, প্রেম, শান্তি এবং আশার প্রতীক। তারাদের সাথে তিনি তার মনের মিলন খুঁজে পান। এছাড়াও, কবিতায় আকাশের অপরূপ সৌন্দর্যের কথাও ফুটে উঠেছে।

Table of Contents

 আকাশে সাতটি তারা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

কামরাঙা – লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো/ গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে – পঙ্ক্তির মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

কবির বক্তব্য- আকাশে সাতটি তারা কবিতাটিতে জীবনানন্দ বাংলার বুকে দিন শেষ হয়ে ধীরে ধীরে সন্ধ্যার নেমে আসার এক অপূর্ব বর্ণনা দিয়েছেন। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর তার শেষ আভাটুকু রাঙিয়ে দেয় আকাশের মেঘকে। লাল টুকটুকে মেঘকে দেখে কবির পাকা কামরাঙা ফলের কথা মনে হয়। সেই মেঘ যখন গঙ্গাসাগরে ডুবে যায় তা এতটাই নিঃশব্দে ঠিক যেমন মৃত মনিয়া ডুবে যায় তরঙ্গহীনভাবে।

আসিয়াছে শান্ত অনুগত / বাংলার নীল সন্ধ্যা — কবি বাংলার সন্ধ্যাকে শান্ত, অনুগত, নীল কেন বলেছেন?

শান্ত, নীল, অনুগত সন্ধ্যা – আকাশে সাতটি তারা কবিতায় জীবনানন্দ বাংলার সন্ধ্যা প্রকৃতির এক অসামান্য বর্ণনা দিয়েছেন।
বাংলার গ্রামে শহরের মতো কোলাহল নেই — জীবনযাত্রা সেখানে শান্ত। তাই গ্রামবাংলার বুকে সন্ধ্যাও নামে শান্তভাবে। পল্লিবাংলার সন্ধ্যা গ্রামের পরিবেশের সঙ্গে মানানসই — তার চাকচিক্য নেই, আছে স্নিগ্ধতা। তাই সন্ধ্যা অনুগত। সন্ধ্যায় অন্ধকার আর দিনের আলো মিশে যে আবছায়া তৈরি করে তার সঙ্গে গাছপালার সবুজ আভা মিলে সন্ধ্যাকে নীল করে তোলে।

কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে — পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

পঙ্ক্তির ব্যাখ্যা – আকাশে সাতটি তারা কবিতায় জীবনানন্দ তাঁর একান্ত নিজস্ব ভঙ্গিতে পল্লিবাংলার সন্ধ্যাকে বর্ণনা করেছেন। সূর্য ডুবে গেলে যখন দিনের আলো ফিকে হয়ে আসে, কবির মনে হয় যেন এক কেশবতী কন্যা এসেছে সন্ধ্যার আকাশে। তার ছড়িয়ে পড়া কালো চুলে ঘনিয়ে আসে রাতের অন্ধকার। কবির চোখে এভাবেই কাব্যিকরূপে ধরা দেয় পল্লিবাংলার সন্ধ্যা।

আমার চোখের পরে আমার মুখের পরে চুল তার ভাসে — পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

তাৎপর্য – আকাশে সাতটি তারা কবিতায় সবে যখন সূর্য অস্ত গেছে, আকাশে তারার বিন্দু ফুটে উঠছে সেইসময় কবি ঘাসের উপর বসে গন্ধ-বর্ণ-স্পর্শ দিয়ে পল্লিবাংলার সন্ধ্যাকে অনুভব করেন। তাঁর মনে হয় যেন এক এলোকেশী মেয়ে দেখা দিয়েছে সন্ধ্যার আকাশে। তার ছড়িয়ে পড়া কালো চুলের মতো ধীরে ধীরে অন্ধকার নামে। কবি তাঁর চোখে-মুখে সেই চুল অর্থাৎ অন্ধকারের স্পর্শ অনুভব করেন।

পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো — কবির বক্তব্য বিশ্লেষণ করো।

বক্তব্য বিশ্লেষণ – আকাশে সাতটি তারা কবিতায় কবি ঘাসের উপর বসে পল্লিবাংলার দিন ও রাত্রির সন্ধিক্ষণে সন্ধ্যাকে নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করেছেন। তাঁর মনে হয় সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে যেন এক এলোকেশী কন্যার আবির্ভাব হয় বাংলার আকাশে। তার ছড়িয়ে পড়া চুল ছুঁয়েই নেমে আসে অন্ধকার। কবির কল্পনার এই কন্যা আসলে বাংলার সান্ধ্য প্রকৃতি। রূপসি বাংলার মতো সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথাও নেই, তাই আর কেউ এই কন্যাকে দেখেনি।

অজস্র চুলের চুমা হিজলে কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত, — পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

অথবা, অজস্র চুলের চুমা বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

অজস্র চুলের চুমা – আকাশে সাতটি তারা কবিতাটিতে জীবনানন্দের কল্পনাপ্রবণ চোখে ধরা পড়েছে পল্লিবাংলার সন্ধ্যার অপরূপ সৌন্দর্য। তাঁর মনে হয় সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে যেন এক রুপসি এলোকেশী মেয়ে দেখা দেয় বাংলার আকাশে। আকাশ থেকে তার ছড়িয়ে পড়া কালো চুল ধীরে ধীরে অন্ধকারের স্পর্শ নিয়ে আসে প্রকৃতির বুকে। হিজল কাঁঠাল জামের পাতায় সেই সোহাগভরা অন্ধকারের স্পর্শ যেন আসলে সেই রূপসির চুলের চুম্বন।

এরই মাঝে বাংলার প্রাণ — পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

অথবা, এরই মাঝে বাংলার প্রাণ; — কবি কোথায় বাংলার প্রাণকে অনুভব করেন?

তাৎপর্য – বাংলাদেশ জীবনানন্দের কাছে শুধু এক ভূখণ্ড নয়, প্রাণময়ী মূর্তি। শব্দ-গন্ধ-বর্ণ-স্পর্শ দিয়ে কবি তাকে অনুভব করেন। আকাশে সাতটি তারা কবিতাটিতে তিনি বাংলার সন্ধ্যাকালীন প্রকৃতির এক অপূর্ব বর্ণনা দিয়েছেন। হিজল, কাঁঠাল, বট প্রভৃতি বৃক্ষ, ধান গাছ, কলমি শাক, মুথা ঘাস, পুকুর, মাছ, কিশোর-কিশোরী অর্থাৎ মানুষ — এই সব নিয়েই বাংলার পরিপূর্ণ প্রকৃতি। এই প্রকৃতির মধ্যেই কবি বাংলার জীবন্ত সত্তাকে উপলব্ধি করেছেন।

লাল লাল বটের ফলের/ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা — তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

তাৎপর্য – আকাশে সাতটি তারা কবিতায় কবি পল্লিপ্রকৃতির মধ্যে বাংলার প্রাণ – কে খুঁজে পেয়েছিলেন। গাছ থেকে খসে পড়া বট ফলের মধ্যে রয়েছে এক নীরব ক্লান্তি। বাংলার শান্ত নিস্তরঙ্গ প্রকৃতির মধ্যে থাকা বিষাদময়তাকেই যেন কবি এখানে প্রত্যক্ষ করেন। গাছ থেকে খসে পড়া বট ফলের মধ্যে রয়েছে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনা।

আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে আমি পাই টের – আমি কে? তিনি কী টের পান?

আমির পরিচয় – আকাশে সাতটি তারা কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য পঙ্ক্তিটিতে আমি হলেন কবি জীবনানন্দ দাশ নিজে।
টের পাওয়া বিষয় – যখন আকাশে সাতটি তারা ফুটে ওঠে তখন কবি টের পান যে বাংলার প্রকৃতি এবং সেই প্রকৃতি – লালিত জীবনের মধ্যেই রয়েছে বাংলার প্রাণ। নরম ধানের গন্ধ, কলমির গন্ধ, হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু গন্ধ — এসবে কবি বাংলার প্রাণ খুঁজে পান। আবার কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত, কিংবা কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাসে এই প্রাণময়তাকেই কবি দেখেন ৷ খসে পড়া লাল বট ফলের ক্লান্ত নীরবতাতেও তিনি বাংলার প্রাণকে উপলব্ধি করেন। এসবই তিনি টের পান আকাশে সাতটি তারা উঠলে।

জীবনানন্দ দাশের আকাশে সাতটি তারা কবিতাটি একটি অত্যন্ত সুন্দর ও চিন্তাশীল কবিতা। এটিতে কবি আকাশের সাতটি তারার মাধ্যমে জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। কবিতার শুরুতে কবি আকাশের সাতটি তারাকে দেখে বিস্মিত হন। তিনি মনে করেন, তারাগুলি যেন এক অজানা জগতের প্রতীক। তারাগুলির আলোয় কবির মনে উদয় হয় জীবনের বিভিন্ন প্রশ্ন। তিনি ভাবেন, জীবনের উদ্দেশ্য কী? জীবনের শেষ কোথায়?

Share via:

মন্তব্য করুন