নবম শ্রেণি – বাংলা – আকাশে সাতটি তারা – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

Gopi


আকাশে সাতটি তারা কবি জীবনানন্দ দাশের একটি বিখ্যাত কবিতা। এটি তাঁর শেষ সপ্তক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। কবিতায় কবি আকাশের সাতটি তারার মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন।

কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু হলো মানুষের জীবনের গতিপ্রকৃতি, পরিবর্তন ও অনিশ্চয়তা। কবি আকাশের সাতটি তারাকে মানুষের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে দেখেছেন। তিনি মনে করেন, মানুষের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তন। তবে, সবকিছুকে অতিক্রম করে মানুষ এগিয়ে যেতে থাকে।

নবম শ্রেণি – বাংলা – আকাশে সাতটি তারা – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

আকাশে সাতটি তারা কবিতায় জীবনানন্দের প্রকৃতিচেতনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

অথবা, আকাশে সাতটি তারা কবিতায় কবির দেখা বাংলার রূপ নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।

অথবা, আকাশে সাতটি তারা কবিতায় জীবনানন্দের প্রকৃতিপ্রীতির পরিচয় দাও।

কবির প্রকৃতিচেতনা – প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দ সান্ধ্যকালীন রূপসি বাংলার যে সৌন্দর্য দেখেছেন তাই ব্যক্ত করেছেন আকাশে সাতটি তারা কবিতায়।

দিগন্তরেখায় বিলীন – সূর্য যখন অস্ত যায় তখন তার লাল আভায় আকাশের মেঘ পাকা কামরাঙা ফলের মতো লাল হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ পর সেই মেঘও দিগন্তরেখায় বিলীন হয়। আকাশে তারা ফুটে ওঠে। দিনরাত্রির সন্ধিক্ষণ এই স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় বাংলার প্রকৃতির অপরূপ রূপ পৃথিবীর সব জায়গার থেকে আলাদা। এলোকেশী কন্যা – সূর্য অস্ত গেলে যেন এক এলোকেশী মেয়ে দেখা দেয় বাংলার আকাশে। তার ছড়িয়ে পড়া কালো চুল ধীরে ধীরে অন্ধকারের আমেজ নিয়ে আসে বাংলার প্রকৃতির বুকে। হিজল-কাঁঠাল-জাম ইত্যাদি গাছের পাতা ছুঁয়ে নেমে আসা অন্ধকার যেন সেই রূপসিরই চুলের সোহাগভরা চুম্বন। সন্ধ্যার রূপ – কবি বাংলার সন্ধ্যার রূপ শুধু চোখেই দেখেননি, গন্ধেও তাকে অনুভব করেছেন। গাছপালা, লতা-গুল্ম, ঘাস, ফল, পুকুর, মাছ, হাঁস, মানুষ — সব কিছুর গন্ধ মিলে তৈরি হয় বাংলার সন্ধ্যার গন্ধ। কবির মনে হয় এ যেন সেই এলোকেশী কন্যার চুলের স্নিগ্ধ সুবাস।

শেষের কথা – এইভাবে গাছপালা, মানুষ, অন্যান্য জীবকে নিয়ে বাংলার যে পরিপূর্ণ প্রকৃতি, তার মধ্যেই জীবনানন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর রূপসি বাংলাকে।

আকাশে সাতটি তারা কবিতায় বাংলার প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতার পরিচয় দিতে গিয়ে কবি কী কী চিত্রকল্প ব্যবহার করেছেন লেখো।

কবিতায় ব্যবহৃত চিত্রকল্প – আকাশে সাতটি তারা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ এক অপরূপ সন্ধ্যার পটভূমিতে বাংলার অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আর তা করতে গিয়ে কবি কিছু অসাধারণ চিত্রকল্প সৃষ্টি করেছেন। সূর্যাস্তের ছবি আঁকতে গিয়ে কবি লিখেছেন — কামরাঙা লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো/গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে। বাংলার নীল সন্ধ্যার সূত্র ধরে অন্ধকারের যে আগমন সেখানে বাংলাদেশ যেন হয়ে গেছে কেশবতী কন্যা আর কবির চোখের পরে মুখের পরে চুল আর ভাসে। শুধু তাই নয় অজস্র চুলের চুমা হিজলে কাঁঠালে জামে মরে অবিরত। — এভাবে চিত্রকল্পের অসামান্য প্রয়োগে একদিকে কবি প্রকৃতিকে মানবীয় রূপ দিয়েছেন। অন্যদিকে প্রকৃতিকে মায়াময়ভাবে উপস্থাপন করেছেন। কবিতার শেষ অংশে অবশ্য বাংলার প্রাণকে কবি খুঁজে পেয়েছেন প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গে। সেখানে চিত্রকল্পের বিস্তার সেভাবে নেই। তবে তার মধ্যেই কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত কিংবা কিশোরের পায়ে – দলা মুখাঘাস চিত্রকল্পের দ্যুতি নিয়ে আসে।

আকাশে সাতটি তারা কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক আলোচনা করো।

যে – কোনো সাহিত্যকর্মের মতোই কবিতার নামকরণও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবিতার ক্ষেত্রে সাধারণত বিষয়বস্তু অনুসারে অথবা ভাব বা ব্যঞ্জনা অনুযায়ী নামকরণ হয়ে থাকে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থটি কবির। মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়েছিল। কবি এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলির নামকরণ করেননি। কবিতার প্রথম পঙ্ক্তি অনুসারে আকাশে সাতটি তারা নামটি সংকলকদের দেওয়া।

আকাশে সাতটি তারা কবিতাটিতে কবি দিনের একটি বিশেষ সময় সন্ধ্যাকে বেছে নিয়েছেন। কবির চোখে তাঁর অতি প্রিয় রূপসি বাংলা সন্ধ্যার সময় যে রূপে ধরা দিয়েছে তাকেই তিনি কাব্যিক ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন।সবে যখন সূর্য অস্ত গিয়ে আকাশে দেখা দিয়েছে সপ্তর্ষিমণ্ডল তখন অস্তরাগের শেষ আভায় কামরাঙার মতো লাল মেঘ বিলীন হয় সাগরজলে। কবির মনে হয় এক এলোকেশী কন্যা যেন দেখা দিয়েছে বাংলার সান্ধ্য নীল আকাশে। মাটির বুকে ধীরে ধীরে নেমে আসা অন্ধকার যেন সেই মেয়ের ছড়িয়ে পড়া কালো চুলের রাশি। কবি তাঁর চোখ – মুখ – নাক অর্থাৎ তাঁর প্রতিটি ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করেন সেই ঘনিয়ে আসা অন্ধকারকে।

তাঁর মনে হয় পৃথিবীর কোনো পথ বা অঞ্চল প্রকৃতির এমন মোহময়ী সৌন্দর্য দেখেনি। হিজল – কাঁঠাল – জামের পাতা চুঁইয়ে নামা রাত্রি যেন সেই রূপসির চুলের আদরমাখা স্পর্শ। শুধু চোখ বা ত্বক দিয়ে নয় কবি ঘ্রাণেন্দ্রিয় দিয়েও অনুভব করেন সন্ধ্যাকে। পরিবেশের অনেক রকমের গন্ধ মিলেমিশে তৈরি হয়। সন্ধ্যার এক বিশেষ গন্ধ। ধান গাছ, কলমি শাক, জলে ভেজা হাঁসের পালক, শর ইত্যাদির মৃদু গন্ধ, পুকুরের সোঁদা গন্ধ, মাছের আঁশটে গন্ধ, কিশোরী মেয়ের চালধোয়া ভিজে ঠান্ডা হাতের গন্ধ, কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাসের গন্ধ আর বট ফলের হালকা গন্ধ মিশে তৈরি হয় বাংলার একান্ত নিজস্ব সন্ধ্যার মধুর শীতল গন্ধ। এইভাবে কবি বর্ণ – গন্ধ – স্পর্শ দিয়ে অনুভব করেন বাংলাকে।

আকাশে সাতটি তারা যখন ফুটে ওঠে সেই সময় অর্থাৎ সন্ধ্যাই এই কবিতার মূল বিষয়বস্তু। আকাশে সাতটি তারা” নামটি সেই বিষয়বস্তুরই ইঙ্গিত দেয়। সেদিক থেকে বলা যায় কবিতাটির নামকরণ যথাযথ।

জীবনানন্দ দাশের আকাশে সাতটি তারা কবিতাটি আকাশের সৌন্দর্য ও রহস্যের প্রতি কবির গভীর অনুভূতি প্রকাশ করে। কবি আকাশের বিশালতা, নীল আকাশের নীলিমা, তারার উজ্জ্বলতা, চাঁদের আলোর মায়াবীতায় মুগ্ধ হয়ে পড়েছেন। আকাশের সৌন্দর্য তার মনে এক অনির্বচনীয় আনন্দ ও বিস্ময় জাগিয়ে তোলে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer