নবম শ্রেণি – বাংলা – আমরা – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

Gopi

আমরা কবিতাটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা একটি বিখ্যাত কবিতা। এটি নবম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত। কবিতাটিতে কবি মানবজাতির উন্নতির প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে মানুষ একদিন সকল অন্যায়, অবিচার, অন্ধকার ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারবে।

নবম শ্রেণি – বাংলা – আমরা – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের আমরা কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক আলোচনা করো।

যে – কোনো সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবিতার ক্ষেত্রে সাধারণত বিষয়বস্তু অনুসারে অথবা ভাব অনুযায়ী। নামকরণ হয়।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের আমরা কবিতাটিতে তাঁর তীব্র জাতীয়তাবাদী মানসিকতা ফুটে উঠেছে। এই জাতীয়তাবাদে অন্য জাতির প্রতি ঘৃণা নেই কিন্তু নিজের দেশ ও জাতি সম্পর্কে তীব্র ভালোবাসা ও গৌরববোধের প্রকাশ ঘটেছে।

কবিতাটির শুরুতে কবি বাংলামায়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা করে তারপরেই বাঙালি জাতির গৌরবগাথা রচনা করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কবি এখানে কেবল বাংলাদেশ ও বাঙালিদের কথাই বলেননি, বাঙালি যাঁদের ভালোবেসেছে বা বাংলার সঙ্গে যাঁদের কিছুমাত্র সংযোগ হয়েছে তাঁদের কথাও কবি এই গৌরবগাথার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সেই কারণেই শ্রীকৃষ্ণ বা কপিলমুনি বাঙালি না হয়েও বাংলার গৌরব বৃদ্ধি করেছেন।

বাঙালির জয়গাথা রচনা করতে গিয়ে কবি শুধু ইতিহাস নয়, জনশ্রুতির ওপরও নির্ভর করেছেন। লঙ্কাজয়ী বীর বিজয়সিংহ, বারোভূঁইয়ার অন্যতম চাঁদ রায়, প্রতাপাদিত্য, পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর, রঘুনাথ শিরোমণি, কবি জয়দেবকে সত্যেন্দ্রনাথ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি ভোলেননি পাল যুগের বিখ্যাত ভাস্কর বিট্‌পাল, ধীমানকেও।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সমুদ্রপথে বাংলার বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। ওই অঞ্চলের স্থাপত্যের ওপর পাল-সেন যুগের স্থাপত্যের প্রভাবের ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়। তার ওপর ভিত্তি করে কবি বরভূধর স্তূপ এবং ওংকারধাম মন্দিরে বাঙালির অবদানের কথা বলেছেন।
শ্রীচৈতন্যদেব, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব, বিবেকানন্দ, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর — কবি এঁদের কারও নাম করে, কারও-বা নাম না – করে ইঙ্গিতে তাঁদের জয়গান করেছেন।

আমরা কবিতায় কবি একদিকে যেমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ বাঙালিদের অবদানকে স্মরণ করেছেন তেমনি অন্যদিকে বাংলার সংস্কৃতির মূল সুরটিকেও তুলে ধরেছেন। এই সুর হল মানুষের সঙ্গে মানুষের মহামিলনের সুর। বাঙালি দেবতাকে আত্মীয়ের মতো হৃদয়ে স্থান দিয়েছে, আবার প্রিয়জনকে ভালোবেসে দেবতার মর্যাদা দিয়েছে। আবেগপ্রবণ বাঙালি জাতি তার সংস্কৃতির সংস্পর্শে যারা এসেছে, তাদের সকলকে সাদরে গ্রহণ করেছে, কাউকে ফিরিয়ে দেয়নি। কীর্তনে আর বাউলগানে এই ভালোবাসা আর মিলনের সুরই ধ্বনিত হয়েছে।

সবশেষে কবি স্বদেশ এবং স্বজাতির ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বপ্নের জাল বুনেছেন। তিনি আশা করেছেন একদিন নিশ্চয়ই বাঙালি জগৎসভায় শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা পাবে।

কবিতাটি আমাদের অর্থাৎ বাঙালি জাতিকে কেন্দ্র করে রচিত। তাই বলা যায় এর আমরা নামটি বিষয়বস্তু – নির্ভর এবং সবদিক থেকেই যথাযথ।

আমরা কবিতাতে কবি বঙ্গভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যে বর্ণনা করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

সৌন্দর্যের বর্ণনা – আমরা কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কাছে বঙ্গভূমি ভৌগোলিক সীমায় আবদ্ধ একটি ভূখণ্ড মাত্র নয়, এই দেশ তাঁর কাছে মাতৃরূপে ধরা দিয়েছে।
মুক্তধারা গঙ্গা নদী বাংলার ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে সমুদ্রে মিশেছে। কবির মতে গঙ্গা এদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে গিয়ে আনন্দে উচ্ছল হয়েছে এবং তার পবিত্র জলের স্পর্শে এখানকার মানুষকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তিদান করেছে।

কবির কল্পনায় বাংলামায়ের বাম হাতে আছে ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পদ্মফুল আর তাঁর ডানদিকে মধুলোভী অসংখ্য মধুকরের আনাগোনা। বাংলার উত্তরে থাকা বরফে ঢাকা হিমালয় পর্বতমালা সূর্যের কিরণে সোনার মুকুটের মতো ঝলমল করে। সেই মুকুট থেকে ঠিকরে পড়া আলোয় বিশ্বচরাচর আলোকিত হয়। বাংলার দিগন্ত বিস্তৃত সোনালি ধানখেতকে কবি বাংলামায়ের কোলভরা সোনার ধান বলেছেন। মায়ের দেহ অতসী-অপরাজিতা ফুলে শোভিত। বাংলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর যেন তটভূমিতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মাধ্যমে বাংলা-মাকে তার প্রণাম জানায়, ঢেউয়ের কলতানে রচিত হয় মায়ের বন্দনাগীতি। এভাবেই কবি সারা পৃথিবীর মানুষের বাঞ্ছিত ভূমি বাংলার রূপ বর্ণনা করেছেন।

আমরা কবিতাটিতে কবির জাতীয়তাবাদী মানসিকতার যে প্রকাশ ঘটেছে তা আলোচনা করো।

নিজ দেশ ও জাতির জন্য অনুভূত গর্ববোধের মধ্য দিয়ে আমরা কবিতাটিতে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জাতীয়তাবাদী মানসিকতারই প্রকাশ ঘটেছে।

স্বদেশের শ্রেষ্ঠত্ব – কবিতাটির প্রথম স্তবকেই কবি তাঁর মাতৃভূমি বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা করে তাকে সারা পৃথিবীর মানুষের বাঞ্ছিত ভূমি বলে তাঁর স্বদেশের শ্রেষ্ঠত্বকেই প্রমাণ করতে চেয়েছেন।

গৌরবগাথা – পরবর্তী স্তবকগুলিতে বাঙালি জাতির গৌরবগাথা রচনা করতে গিয়ে গঙ্গাসাগরে সাংখ্যদর্শন প্রণেতা কপিলমুনির আশ্রম থাকায় কবি বাংলাকেই তাঁর কর্মভূমি বলে গর্ববোধ করেছেন।

বীরত্বের কাহিনী – কবি বলেছেন যে রামচন্দ্রের প্রপিতামহ রঘুর সঙ্গে বাঙালি যুদ্ধ করেছে। আবার মোঘল শাসকের সঙ্গে বাংলার চাঁদ রায়, প্রতাপাদিত্যের লড়াইয়ের কথাও তিনি স্মরণ করেছেন গর্বের সঙ্গে। এর থেকে কবির জাতীয়তাবাদী মানসিকতাকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ – প্রাচীন যুগ থেকে তাঁর সমসাময়িক যুগ পর্যন্ত প্রায় সব কৃতী বাঙালির কৃতিত্বের উল্লেখ করে কবি আশা করেছেন আগামীদিনে বাঙালি বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান পাবে। সেখানে ভাস্কর বীপাল ধীমান থেকে বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ কিংবা চৈতন্য অথবা বাঙালি বিজ্ঞানীদের অবদান ও সাফল্য কবির কাছে গর্বের বিষয় হয়েছে। সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান বাঙালির প্রতিভার দ্যুতিকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন কবি এবং তিনি বিশ্বাস রেখেছেন যে বাঙালি তার প্রতিভা ও কর্মপ্রচেষ্টার দ্বারাই নিজেকে বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণ করবে।

আমরা কবিতায় কবি বাঙালির কৃতিত্বকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

অথবা, কবিতা অবলম্বনে বাঙালির অতীত গৌরবগাথা আলোচনা করো।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের আমরা কবিতাটিতে কবি বাঙালির গৌরবগাথা রচনা করেছেন।

বীরত্ব – জলে-জঙ্গলে পূর্ণ বাংলায় বাঙালি জাতি সাপ ও বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। রাঢ় বাংলার সিংহপুরের রাজপুত্র বাঙালি বিজয়সিংহ লঙ্কা জয় করেন এবং তাঁর নামানুসারেই লঙ্কার নামকরণ সিংহল করা হয়। বারোভূঁইয়ার অন্যতম চাঁদ রায়, প্রতাপাদিত্যকে পরাজিত করতে দিল্লির মোগল সম্রাটকে রীতিমতো লড়াই করতে হয়েছিল।

শিক্ষা – বাঙালি পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর তিব্বতে গিয়ে বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও শিক্ষাবিস্তার করেন। নবদ্বীপের রঘুনাথ শিরোমণি মিথিলার বিখ্যাত পণ্ডিত পক্ষধর মিশ্রকে তর্কযুদ্ধে পরাজিত করে বাংলার গৌরব বৃদ্ধি করেন। বাঙালি কবি জয়দেবের লেখা কাব্য গীতগোবিন্দ সংস্কৃত সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

স্থাপত্য – আধ্যাত্মিকতা – বিজ্ঞান – স্থাপত্য – ভাস্কর্য – শিল্পকলাতেও বাঙালি জাতি কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। পাল যুগের বিখ্যাত দুই ভাস্কর ছিলেন বিট্‌পাল ও ধীমান। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব, শ্রীরামকৃষ্ণদেব আধ্যাত্মিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাঙালিকে অপূর্ব মহিমা দান করেছেন স্বামী বিবেকানন্দের বাণী মুগ্ধ করেছে বিশ্ববাসীকে। বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু গাছের মধ্যে প্রাণের স্পন্দন আবিষ্কার করেছেন। ড. প্রফুল্লচন্দ্র রায় রসায়নশাস্ত্রে অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। বাঙালির কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় মানুষের মহামিলনের কথা বলেছেন ৷
সবশেষে কবি আশা প্রকাশ করেছেন যে বাঙালি একদিন তার প্রতিভা ও কর্মপ্রচেষ্টায় বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা লাভ করবে।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের আমরা কবিতাটি একটি অসাধারণ মানবতাবাদী কবিতা। এই কবিতায় কবি মানবতার এক অপূর্ব চিত্র রচনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, মানুষ এক নয়, আমরা সকলেই এক। আমাদের মধ্যে রয়েছে ভাষা, ধর্ম, জাতি, বর্ণ ইত্যাদির পার্থক্য। কিন্তু এই পার্থক্য আমাদের এক করে রাখতে পারে না। আমরা সকলেই এক মহান সত্তার সন্তান। আমাদের সকলের লক্ষ্য এক, তা হলো সুন্দর, সুশৃঙ্খল, সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer