নবম শ্রেণি – বাংলা – ভাঙার গান – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Gopi


কাজী নজরুল ইসলামের ভাঙার গান কবিতাটি নবম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। এই কবিতায় কবি নজরুল সমস্ত অন্ধকার, অবিচার, শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের গান গেয়েছেন। তিনি সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে নতুন সমাজ গঠনের জন্য যুবকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।

নবম শ্রেণি – বাংলা – ভাঙার গান – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

ওরে ও তরুণ ঈশান। — ঈশান শব্দটির অর্থে লেখো। কবি এখানে কাদের ঈশান বলেছেন? তাদের উদ্দেশ্যে কবি কোন্ আহ্বান জানিয়েছেন?

ঈশান – এর পরিচয় – কাজী নজরুল ইসলামের ভাঙার গান কবিতায় উল্লিখিত ঈশান শব্দটির অর্থ শিব। কবি দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত তরুণ সম্প্রদায়কে এখানে ঈশান বলেছেন।

কবির আহ্বান – দেশের তরুণ সম্প্রদায়কে কবি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অত্যাচারের প্রতীক কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে ফেলার জন্য আহবান জানিয়েছেন।

দেশমাতার শৃঙ্খলমোচন – কারাগারের ভিতরে দেশমাতার পুজোর পাষাণ বেদি শহিদের রক্ত মেখে আছে। কবি তাকেও লোপাট করতে বলেছেন। প্রলয়-বিষাণ বাজিয়ে ধ্বংসের পতাকা ওড়ানোর জন্য কবি দেশের তরুণ সম্প্রদায়কে আহ্বান করেছেন।

মুক্ত, স্বাধীন, সত্য -র প্রতিষ্ঠা – কবি চেয়েছেন দেশ এবং সমাজে হোক মুক্ত স্বাধীন সত্যর প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ স্বাধীনতার ধারণা স্বীকৃত হোক। আর তার জন্যই তিনি দেশপ্রেমিক তরুণদের ওপরে ভরসা করেছেন।

অশুভ-র ধ্বংসসাধন – অর্থাৎ প্রলংকর শিব যেমন অশুভকে ধ্বংস করে সুন্দরের প্রতিষ্ঠাকে নিশ্চিত করে ঠিক সেভাবেই তরুণ বিপ্লবী প্রাণও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে আঘাত করে স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করবে। এই লক্ষ্যপূরণের আহ্বানই কবি তরুণ ঈশান – কে উদ্দেশ্য করে করেছেন।

মার হাঁক হৈদরী হাঁক,/কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক — হৈদরী হাঁক কী? কাঁধে দুন্দুভি ঢাক নেওয়ার তাৎপর্য কী?

হৈদরী হাঁক – এর অর্থ – ভারতবর্ষের মুক্তিসংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ বিপ্লবীদের কবি বলেছেন প্রচণ্ড জোরে হাঁক পাড়তে, যাতে অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের হাড় হিম হয়ে যায়। যেমন হাঁক দিতেন ইসলামদের চতুর্থ খলিফা হজরত আলি, তেমনই বলিষ্ঠ হাঁকে কেঁপে উঠুক বিদেশি শাসকের হৃদয়। হজরত মহম্মদের খুড়তুতো ভাই তথা জামাই ছিলেন হজরত আলি। সেই আলির বাজখাঁই হাঁককেই হৈদরী হাঁক বলা হয়। কবি কাজী নজরুল চেয়েছেন স্বদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে, মানবতার যুদ্ধে তরুণ দেশপ্রেমীদের কণ্ঠ থেকে বের হোক হৈদরী হাঁক, আতঙ্কিত হোক শত্রুপক্ষ।

তাৎপর্য – দুন্দুভি হল একজাতীয় বড়ো ঢাক, যা যুদ্ধের শুরুতে বাজানো হয়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে জোরদার লড়াই শুরু করার ডাক দিয়েছেন কবি। দেশের যুবশক্তিকে কবি বলেছেন যুদ্ধের দামামা কাঁধে তুলে নিতে। শাসকের কারাগারে বন্দি দেশপ্রেমীদের মুক্ত করতে কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে ফেলতে হবে। পায়ের আঘাতে ভেঙে ফেলতে হবে বন্দিশালার তালা। দেশকে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত করতে শাসকের বিরুদ্ধে সরাসরি সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে। দুন্দুভির আওয়াজ এই বার্তাই ছড়িয়ে দিক সমগ্র দেশবাসীর হৃদয়ে। এমন কামনা থেকেই কবি তরুণ বীর বিপ্লবীদের দুন্দুভি ঢাক কাঁধে তুলে নিতে বলেছেন।

ডাক ওরে ডাক/মৃত্যুকে ডাক জীবনপানে! — মৃত্যুকে জীবনপানে ডাক দিতে হবে কেন? কেমন করে সেই ডাক দেওয়া সম্ভব?

মৃত্যুকে জীবনপানে ডাকার কারণ – ভাঙার গান – এ কবি কাজী নজরুল মৃত্যুকে জীবনপানে ডাক দিতে বলেছেন। মৃত্যু মানেই পরাজয় আর জীবন হল জয়ের প্রতীক। অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের কাছে হার মানবেন না দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। শাসকের দমনপীড়ন নীতিতে জেলবন্দি রয়েছেন বহু বিপ্লবী, তাঁদের ওপর চরম অত্যাচারের চিহ্নস্বরূপ জমাট রক্ত লেগে আছে পাষাণবেদিতে। এমনকি ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দিয়েছেন অনেক দেশপ্রেমী। কিন্তু তাঁদের মৃত্যুতে সত্য বা মানবতার মৃত্যু হয় না। এক-একটি আত্মদান শত শত জীবনকে আহ্বান জানায় ৷ তাই তরুণ দেশপ্রেমীদের কবি বলেছেন মৃত্যুভয়ে ভীত না হয়ে মৃত্যুকে জীবনের দিকে ডাক দিতে। অর্থাৎ মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে কোটি কোটি দেশবাসীর জীবনকে সুরক্ষিত করার ডাক দিয়েছেন কবি।

ডাক দেওয়ার সম্ভাব্যতা – দেহের মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু দেশের জন্য মৃত্যু বরণ করার মধ্যে থাকে উজ্জীবনের মন্ত্র। যেসব বিপ্লবী ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়েছেন, তাঁরা তাঁদের প্রাণের অবসানের মধ্য দিয়ে মৃত্যুকে জীবনপানে ডাক দিয়েছেন। কবির আশা, স্বদেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ প্রাণ সেই ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতার লড়াইকে জোরদার করে তুলবে। দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে জীবনপানে মৃত্যুকে ডাক দেওয়া সম্ভব।

যত সব বন্দিশালায় — /আগুন জ্বালা, — কবি বন্দিশালায় আগুন জ্বালতে বলেছেন কেন? এর মধ্যে কবির কোন্ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে?

বন্দিশালায় আগুন জ্বালার কারণ – কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ভাঙার গান কবিতায় কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে ফেলতে বলেছেন কিংবা বন্দিশালায় আগুন জ্বালাতে বলেছেন, কারণ তা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রক্তে লাল হয়ে আছে। স্বাধীনতার স্বপ্নকে কারাগারের প্রাচীরের আড়ালে সাম্রাজ্যবাদী শাসকেরা হত্যা করেছে। অজস্র বিপ্লবীর ওপরে নির্মম অত্যাচারের সাক্ষী এই কারাগারগুলি। তাই বন্দিশালায় আগুন জ্বালানোর মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের প্রতিবাদ ও প্রত্যাঘাত করা সম্ভব হবে।

কবির মনোভাব – এখানে নজরুলের নিজস্ব বিপ্লবী চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। স্বাধীনতার স্বপ্নকে পূরণ করতে গেলে প্রত্যাঘাতই একমাত্র পথ। বিদ্রোহের আগুনে লেখা এই কবিতায় কবি সেই কথাই বলেছেন। কারাগারের ভিতরে অত্যাচারের প্রতীক রক্ত জমাট/শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী-কে উপড়ে ফেলতে হবে। প্রলয় বিষাণ বাজিয়ে ধ্বংসের পতাকা ওড়াতে হবে। গাজনের বাজনায় হবে সেই বিপ্লবের অভিষেক। প্রমাণ করে দিতে হবে মুক্ত স্বাধীন সত্য – কে কেউ সাজা দিতে পারে না। এভাবে কবি বোঝাতে চেয়েছেন স্বাধীনতার আদর্শ চিরজীবী, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আসলে জীবনের জয়গান বেজে ওঠে। কারাগারে ভিত্তি নাড়িয়ে আগুন জ্বালানো আসলে কবির ভাবনায় অত্যাচারের প্রতীককে নিশ্চিহ করে দিয়ে স্বাধীনতার সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা।

ভাঙার গান কবিতাটি একটি অত্যন্ত প্রেরণামূলক কবিতা। এই কবিতাটি যুবকদেরকে নতুন সমাজ গঠনের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এই কবিতাটি আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, অন্ধকার ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করাই হলো সত্যিকারের বীরের কাজ।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer