নবম শ্রেণি বাংলা – ভাঙার গান – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের পঞ্চম পাঠের প্রথম অধ্যায়, ‘ভাঙার গান’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

নবম শ্রেণি - বাংলা - ভাঙার গান - ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Contents Show

‘কারার ওই লৌহ-কপাট’ – কোন্ কারার কথা বলা হয়েছে? ‘লৌহ-কপাট’ সম্পর্কে কবি কী বলেছেন?

‘কারা’ অর্থ – বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর ‘ভাঙার গান’ কবিতায় ‘কারা’ বলতে ইংরেজদের তৈরি লোহার কারাগারকে বুঝিয়েছেন, যেখানে অসংখ্য ভারতীয় বন্দি রয়েছে।

আবার ব্যাপক অর্থে সমগ্র ভারতবর্ষকেই ইংরেজ সরকারের ঔপনিবেশিক কারাগার বলতে চেয়েছেন।

লৌহ-কপাট সম্পর্কিত বক্তব্য – আলোচ্য কবিতায় কবি ভারতের তরুণ বিপ্লবী বীরদের ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত কারাগারের কঠিন ও কঠোর লৌহকপাট ভেঙে লোপাট করে দিতে বলেছেন।

‘ভেঙে ফেল, কররে লোপাট’ – কী ভেঙে ফেলার কথা বলা হয়েছে? কেন ভেঙে ফেলা হবে?

যা ভাঙার কথা বলা হয়েছে – বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর ‘ভাঙার গান’ কবিতায় অত্যাচারী ইংরেজদের কারাগারে বন্দি ভারতীয় বীর বিপ্লবীদের ভীম কারাগারের লৌহকঠিন কপাট ভেঙে ফেলার কথা বলেছেন।

কারণ – বণিকের মানদণ্ড পরিত্যাগ করে চতুর ইংরেজ ভারতবর্ষের রাজদণ্ড ছিনিয়ে নিয়েছে। ভারতবর্ষকে করে রেখেছে পরাধীন। পরাধীন ভারতবর্ষের শৃঙ্খলমোচনে যেসব বিপ্লবী লড়াই করেছে, তাদের বন্দি করা হয়েছে। তাই বিদ্রোহী কবির দৃপ্ত ঘোষণা –

‘কারার ওই লৌহ-কপাট
ভেঙে ফেল, কররে লোপাট।’

‘রক্ত-জমাট/শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী!’ – উৎস লেখো। উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ লেখো।

উৎস – বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের ‘ভাঙার গান’ কবিতায় আমরা উক্ত উদ্ধৃতাংশের উল্লেখ পাই।

অন্তর্নিহিত অর্থ – ইংরেজদের নির্মিত বন্দিশালাকেই কবি ‘পাষাণ বেদী’ বলেছেন। পরাধীন ভারতের বীর বিপ্লবীদের সশস্ত্র বিপ্লবকে স্তব্ধ করে দিতে ব্রিটিশ সরকার অনেক তাজা প্রাণকে শিকল পরিয়ে কারাগারে আটকে রাখত। ভারতীয় বিপ্লবীদের উপর চলত অকথ্য নির্যাতন। বন্দি বিদ্রোহীদের রক্ত জমাট বেঁধেছে কারাগারের পাষাণ-বেদীতে। স্বদেশীদের এই আত্মবলিদান আসলে ভারতমাতার আরাধনা।

‘ওরে ও তরুণ ঈশান!’ – ‘তরুণ ঈশান’ কে? তার প্রতি কবি কী নির্দেশ দিয়েছেন?

তরুণ ঈশান – বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘ভাঙার গান’ গীতিকায় ‘তরুণ ঈশান’ -এর কথা বলেছেন। এই ‘তরুণ ঈশান’ হল ইংরেজদের কারাগারে বন্দি বীর ভারতীয় বিপ্লবী, যারা মহাদেবের মতো ভয়ংকর।

কবির নির্দেশ – তরুণ ঈশানের প্রতি কবির নির্দেশ, তরুণ ঈশান যেন তার প্রলয় বিষাণ বাজিয়ে ধ্বংস নিশান উড়িয়ে প্রাচী’র প্রাচীরকে ভেদ করে।

‘বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ’ – কে, কাকে, কেন প্রলয় বিষাণ বাজাতে বলেছেন?

বক্তা-শ্রোতা – বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম ‘ভাঙার গান’ কবিতায় ইংরেজদের কারাগারে বন্দি বিপ্লবীদের ‘তরুণ ঈশান’ সম্বোধন করে প্রলয় বিষাণ বাজাতে বলেছেন।

কারণ – এই বিষাণের প্রবল ধ্বনিতে পৃথিবীতে আসবে প্রলয়, ধ্বংস হবে ইংরেজদের কারাগার। শিব যেমন প্রলয় সৃষ্টিকালে বিষাণ বাজাতেন, তেমনি পরাধীন ভারতের তরুণ ঈশানরাও প্রলয়-বিষাণ বাজিয়ে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠবে বলে কবির বিশ্বাস।

‘ধ্বংস-নিশান,/উড়ুক প্রাচী’র প্রাচীর ভেদি।’ – ‘ধ্বংস নিশান’ কী? তা প্রাচী’র প্রাচীর ভেদ করে কেন উড়বে?

‘ধ্বংস নিশান’ কী – ‘নিশান’ কথার অর্থ হল ধ্বজা বা পতাকা। ‘ধ্বংস-নিশান’ বলতে ধ্বংসের নিমিত্ত ধ্বজা বা পতাকাকে বোঝানো হয়েছে।

কারণ – বিদ্রোহী কবি নজরুল কারাগারের কঠিন কঠোর লৌহকপাটের রক্তচক্ষু শাসনের অবসান চান। তাই বন্দি বিপ্লবীদের ‘তরুণ ঈশান’ সম্বোধন করে কবি বলেছেন, তারা যেন প্রলয় বিষাণ বাজিয়ে ধ্বংস নিশান উড়িয়ে প্রাচী’র প্রাচীরকে বিনষ্ট করে।

‘কে মালিক? কে সে রাজা?’ – এখানে ‘মালিক’ ও ‘রাজা’ কে?

‘মালিক’ ও ‘রাজা’-র অর্থ – ‘ভাঙার গান’ গীতিকা থেকে নেওয়া প্রশ্নোধৃত অংশে ‘মালিক’ এবং ‘রাজা’ বলতে কাজী নজরুল ইসলাম অত্যাচারী সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসককে বুঝিয়েছেন। পরাধীন ভারতবাসীর উপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল স্বৈরতন্ত্রী ইংরেজ। কবি তাই ব্রিটিশ শাসককে ভারতবাসীর ‘রাজা’ বা ‘মালিক’ বলে চিহ্নিত করেছেন।

‘কে দেয় সাজা/মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?’ – উৎস লেখো। অংশটির তাৎপর্য লেখো।

উৎস – প্রশ্নে প্রদত্ত অংশটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ভাঙার গান’ কবিতার অন্তর্গত।

তাৎপর্য – পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার বাসনা, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ভারতবাসী বহুদিন মনে মনে লালন করে এসেছে। কবি বিশ্বাস করেন পরাধীন ভারতবাসীর স্বাধীনভাবে এই স্বপ্ন দেখার অধিকার রয়েছে। কোনো ‘রাজা’ বা ‘মালিক’ পারে না এই মুক্তিলাভের আকাঙ্ক্ষার জন্য ভারতবাসীকে ‘সাজা’ বা শাস্তি দিতে।

‘হা হা হা পায় যে হাসি,’ – কার হাসি পায়? হাসি পাওয়ার কারণ লিপিবদ্ধ করো।

যার হাসি পায় – ‘ভাঙার গান’ কবিতায় স্বয়ং বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের হাসি পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ভগবানের ফাঁসি হওয়ার কথা ভেবে কবির হাসি পেয়েছে।

কারণ – ‘ভগবানের ফাঁসি’ একটি অবাস্তব ভাবনা। ফাঁসি দিয়েও যেমন তার ভগবৎ সত্তাকে বিনষ্ট করা যায় না। তেমনি ‘তরুণ-ঈশান’ বিদ্রোহী ভারতবাসীদের মধ্যে রয়েছেন ভগবান দেবাদিদেব মহাদেবের অসীম শক্তি। বন্দি করে, ফাঁসি দিয়ে ভারতের বিপ্লবী বীরদের ইংরেজ সরকার নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। তাদের ধ্বংস করার ক্ষমতা ব্রিটিশ সরকারের নেই, এই অবাস্তব ভাবনার কারণে কবির হাসি পেয়েছে।

‘ওরে ও পাগলা ভোলা’ – ‘পাগলা ভোলা’ কে? তাকে উল্লেখ করে কবি কী বলেছেন?

পাগলা ভোলা – ‘পাগলা ভোলা’ বলতে আপাত অর্থে দেবাদিদেব মহাদেবকে বোঝালেও আসলে ‘ভাঙার গান’ কবিতায় কবি নজরুল ইসলাম ইংরেজদের কারাগারে বন্দি বীর তরুণ ভারতীয় বিপ্লবীদের সম্পর্কে এ কথা বলেছেন।

কবি তাকে যা বলেছেন – ‘পাগলা ভোলা’ কে উদ্দেশ করে কবি বলেছেন, পাগলা ভোলারূপী বীর বিপ্লবীরা যেন প্রলয় দোলা দেয় এবং গারদগুলোকে জোরসে ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ধ্বংস করে। 

‘ডাক ওরে ডাক’ – কে, কাকে, কীভাবে ডাকবে?

বক্তা শ্রোতাকে যেভাবে ডাকবে – কবি নজরুল তাঁর ‘ভাঙার গান’ কবিতায় জানিয়েছেন, ইংরেজদের কারাগারে বন্দি বিপ্লবীরা মৃত্যুকে হৈদরী হাঁক দিয়ে ও দুন্দুভি ঢাক কাঁধে নিয়ে জীবনপানে আহ্বান করবে।

‘কাটাবি কাল বসে কি?’ – কাদের প্রতি কবির এই প্রশ্ন? কাল না কাটিয়ে কবি তাদের কী করতে বলেছেন?

যাদের প্রতি প্রশ্ন – বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর ‘ভাঙার গান’ কবিতায় উদ্ধৃত প্রশ্নটি রেখেছেন অত্যাচারী ইংরেজদের কারাগারে বন্দি বীর ভারতীয় বিপ্লবীদের কাছে।

কবি যা বলেছেন – যেখানে ‘কাল-বোশেখি’ তার ভয়ংকর প্রলয়লীলা শুরু করেছে, সেখানে চুপচাপ বসে সময় না কাটিয়ে বন্দি বিপ্লবীদের প্রতি কবি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন তাদের ভয়ংকর শক্তির সাহায্যে অত্যাচারী ইংরেজদের ভীম কারাগারের ভিত নাড়িয়ে দেয়।

‘ভীম কারার ওই ভিত্তি নাড়ি!’ – ‘ভীম কারা’ কী? কারা কীভাবে ওই ভীম কারার ভিত্তি নাড়িয়ে দেবে?

‘ভীম কারা’ অর্থ – বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর ‘ভাঙার গান’ কবিতায় ‘ভীম কারা’ বলতে অত্যাচারী ইংরেজদের ভয়ংকর কারাগারের কথা বলেছেন, যেখানে অসংখ্য ভারতীয় বিপ্লবী বন্দি।

যেভাবে ভিত্তি নাড়িয়ে দেবে – কবি আশাবাদী। তাই তিনি মনে করেন দেবাদিদেব মহাদেবের মতো অসীম শক্তিধর বন্দি বিপ্লবীরা সময় নষ্ট না করে মৃত্যুকে জীবনপানে আহ্বান করে প্রবল শক্তি দিয়ে ইংরেজদের ভয়ংকর কারাগারের ভিত্তিভূমিকে নাড়িয়ে দেবে।

‘লাথি মার, ভাঙরে তালা!’ – কাদের প্রতি কেন এই নির্দেশ?

কাদের প্রতি নির্দেশ – পরাধীনতার জ্বালায় জর্জরিত নজরুল ‘ভাঙার গান’ গীতিকায় ইংরেজদের ভীম কারাগারে বন্দি বিপ্লবীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

কারণ – তিনি বলেছেন তারা যেন পদাঘাতে ইংরেজদের কারাগারের তালা ভেঙে বন্দিশালায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়, যার মধ্য দিয়েই ধ্বনিত হবে প্রতিবাদ।

‘যত সব বন্দি-শালায়’ – ‘বন্দি-শালা’ কী? সেখানে কবি কাদের কী করতে বলেছেন?

বন্দি-শালা কী – বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ভাঙার গান’ কবিতায় উল্লিখিত ‘বন্দিশালা’ বলতে ইংরেজদের ভয়ংকর কারাগারকে বুঝিয়েছেন, যেখানে অসংখ্য ভারতীয় বিপ্লবী বন্দি।

কবি যা করতে বলেছেন – সেখানে কবি বন্দি বিপ্লবীদের উদ্দেশ করে বলেছেন, তারা যেন পদাঘাতে কারাগারের তালা ভেঙে বন্দিশালাতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে সবকিছু লোপাট করে দেয়।

নিচে লেখাটির বানান ও ব্যাকরণগত ত্রুটিগুলো শুধরে দেওয়া হলো, মূল তথ্য ও বিশ্লেষণের সারাংশ অক্ষুণ্ণ রেখে:

রক্ত-জমাট শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী। — পঙ্ক্তিটির অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝিয়ে দাও।

অন্তর্নিহিত অর্থ – পরাধীন ভারতবর্ষে অত্যাচারী ইংরেজ শাসক স্বাধীনতা সংগ্রামী ভারতীয়দের কারাগারে বন্দি করে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। এইভাবে তারা দমন করতে চেয়েছিল সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামকে। শোষক ইংরেজদের অত্যাচারে বিপ্লবীদের অনেক রক্ত ঝরেছে। কারাগারে লেগেছে সেই রক্ত। আর বিপ্লবীদের রক্ত লেগে থাকা সেই কারাগারই কবির কাছে হয়েছে দেশমাতার পূজার পাষাণ বেদী, যাতে শহিদের রক্ত জমাট বেঁধে আছে।

ওরে ও তরুণ ঈশান! /বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ — তরুণ ঈশান কে? সে প্রলয় বিষাণ বাজাবে কেন?

তরুণ ঈশানের পরিচয় – ঈশান হলেন ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা শিব। কিন্তু এখানে ‘তরুণ ঈশান’ বলতে দেশের নবীন বিপ্লবীদের বোঝানো হয়েছে।
প্রলয় বিষাণ বাজানোর কারণ – জরাজীর্ণ অশুভকে বিনাশ করার জন্য শিব যখন প্রলয় নৃত্য করেছিলেন, তার আগে বাজিয়েছিলেন বিষাণ (শিঙা)। কবি নবীন বিপ্লবীদের ঈশানের সঙ্গে তুলনা করে ইংরেজ শাসন ধ্বংসের বিষাণ বাজাতে বলেছেন। এই বিষাণের ধ্বনি ছিল অবসানের লক্ষ্যে যুদ্ধঘোষণা—যা স্বাধীনতার আবহকে নিশ্চিত করবে।

কে দেয় সাজা/মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে? — মুক্ত স্বাধীন সত্যকে কেউ সাজা দিতে পারে না কেন?

অথবা, “কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে” – উদ্ধৃতাংশটির মূল বক্তব্য লেখো।

সাজা দিতে না পারার কারণ – যা মানবতার পক্ষে, তা-ই সত্য। সত্য সর্বদা মুক্ত ও স্বাধীন। মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ তাকে কলুষিত করতে চাইলেও তা ব্যর্থ হয়। সত্যকে জগতের কোনো কারাগারে বন্দি করা যায় না। সেই সত্যমন্ত্রে দীক্ষিত স্বাধীনতাকামী তরুণদের ইংরেজ শাসক কারাগারে বন্দি রাখতে পারবে না। বিপ্লবী বীরদের ফাঁসির দড়িতেও মৃত্যুবরণ করানো যাবে না। ব্যক্তিকে ফাঁসি দেওয়া যায়, কিন্তু তার সত্য-আদর্শ সকল শাস্তির ঊর্ধ্বে।

ধ্বংস-নিশান,/উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি। — ধ্বংস নিশান ওড়াতে কবি এত উৎসাহ দিয়েছেন কেন?

উৎসাহ দেওয়ার কারণ – পরাধীন ভারতবর্ষ ইংরেজ শাসন-শোষণে জর্জরিত। স্বাধীনতাকামী তরুণরা দেশমুক্তির ব্রত নিয়েছেন। অত্যাচারী শাসক তাদের কারাগারে বন্দি করছে। কবির মতে, কারাগারের লৌহকপাট ভাঙতে ও বিদেশি অধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করতে ধ্বংসনিশান ওড়াতে হবে। এতেই প্রতিষ্ঠিত হবে সত্য, মানবতা ও স্বাধীনতা।

গাজনের বাজনা বাজা! — “গাজনের বাজনা বাজা” কথাটির তাৎপর্য লেখো।

তাৎপর্য – বাংলা বছরের শেষে চৈত্রসংক্রান্তিতে শিবপূজার গাজন উৎসব হয়। এটি একটি লৌকিক পর্ব, যাকে ‘চড়কপূজা’-ও বলা হয়। এ উপলক্ষে ঢাক, ঢোল, কাঁসি, বাঁশি বাজিয়ে প্রলয়ের দেবতা শিবের বন্দনা করা হয়।

গাজনের বাজনা বাজা! — কবি কেন গাজনের বাজনা বাজাতে বলছেন?

গাজনের বাজনা বাজাতে বলার কারণ – চৈত্রসংক্রান্তিতে শিবের প্রলয়তাণ্ডবের প্রতীকী এই বাজনায় কবি ইঙ্গিত দিয়েছেন: বিপ্লবী যুবশক্তি যেন কারাগারের প্রাচীর ভেঙে মুক্তির সত্য প্রতিষ্ঠা করে। গাজনের বাজনার অন্তর্নিহিত প্রলয়সূচক তাৎপর্যকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে কবি ব্যবহার করেছেন।

ভগবান পরবে ফাঁসি?/সর্বনাশী/শিখায় এ হীন তথ্য কে রে? — এই অংশটি ব্যাখ্যা করো।

ব্যাখ্যা – ভগবান মৃত্যুঞ্জয় ও সত্যের রক্ষক। তাঁকে ফাঁসির দড়ি পরানো যায় না। তরুণ বিপ্লবীরা দেশের ‘ভগবান’—তাঁরা অমর। ফাঁসিকাঠে প্রাণ হারালেও তাঁদের সত্যের আদর্শ ও স্বাধীনতার স্বপ্ন চিরজীবী। কারাবন্দি করে বা ফাঁসি দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে—এ ধারণা ভুল ও হীন।

ওরে ও পাগলা ভোলা — পাগলা ভোলা কে? কবি তাঁকে কী করতে বলেছেন?

পাগলা ভোলার পরিচয়‘পাগলা ভোলা’ শব্দটি শিবের প্রলয়রূপের প্রতীক, তবে এখানে স্বাধীনতাকামী উন্মুক্তচেতা তরুণদের বোঝানো হয়েছে।
কবির পরামর্শ – উদ্যম ও স্পর্ধায় দেশের তরুণদের কবি ‘পাগলা ভোলা’ বলেছেন। শিব যেমন অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করেন, তেমনি তরুণরা যেন শক্তির উন্মাদনায় কারাগারের ‘গ্রিল’ উপড়ে ফেলে ও লৌহকপাট ভেঙে ফেলে।

যত সব বন্দিশালায়—/আগুন জ্বালা — কবি কার উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন? বন্দিশালায় আগুন জ্বালাতে বলেছেন কেন?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – কবি স্বদেশচেতনায় উদ্বুদ্ধ তরুণদের উদ্দেশে এ কথা বলেছেন।
বন্দিশালায় আগুন জ্বালাতে বলার কারণ – বন্দিশালা সাম্রাজ্যবাদী শোষণের প্রতীক। বিপ্লবীদের বন্দি করে স্বাধীনতার স্বপ্ন দমনের চেষ্টা করা হচ্ছিল। তাই কবি চেয়েছেন: এই বন্দিশালায় আগুন জ্বালিয়ে সাম্রাজ্যবাদের দুর্গ ধ্বংস হোক। এতে দেশমুক্তির স্বপ্ন পুনর্জীবিত হবে।

মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে। কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
অথবা, “ডাক ওরে ডাক/মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে” – কবি মৃত্যুকে আহ্বান জানিয়েছেন কেন?

তাৎপর্য – ‘ভাঙার গান’ কবিতায় কবি তরুণদের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ডাক দিয়েছেন। দেশমুক্তির এই সংগ্রামে আত্মদান অনিবার্য। কিন্তু মৃত্যু এখানে পরাজয় নয়—সে জীবন প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। শহীদের আত্মত্যাগই স্বাধীনতার ভিত্তি রচনা করবে। তাই ‘জীবন পানে’ মৃত্যুকে ডাকা মানে স্বার্থত্যাগের মাধ্যমে জাতির নতুন প্রাণ প্রতিষ্ঠা।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের পঞ্চম পাঠের প্রথম অধ্যায়, ‘ভাঙার গান’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

নবম শ্রেণি - বাংলা - চন্দ্রনাথ - রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – চন্দ্রনাথ – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি - বাংলা - চন্দ্রনাথ - ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – চন্দ্রনাথ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি - বাংলা - চন্দ্রনাথ - অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – চন্দ্রনাথ – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ ও ফলাফল লেখো।

ভারতীয় মৃত্তিকায় উৎপন্ন ফসলমূহ সম্পর্কে লেখো।

ভারতের প্রধান তিনটি মৃত্তিকার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

নবম শ্রেণি বাংলা – চন্দ্রনাথ – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – চন্দ্রনাথ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর