নবম শ্রেণি – বাংলা – আমরা – (কবিতা) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

Gopi

আমরা কবিতায় কবি মানবজাতির অন্তর্নিহিত শক্তি ও সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, মানুষ যদি একত্রিত হয়ে কাজ করে তাহলে পৃথিবীকে একটি সুন্দর ও শান্তির পৃথিবীতে পরিণত করা সম্ভব। কবি মানবজাতির ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা যাওয়া মহান ব্যক্তিদের উদাহরণ দিয়ে এই বিষয়টি প্রমাণ করেছেন।

নবম শ্রেণি – বাংলা – আমরা

কবি পরিচিতি

ভূমিকা –

তুমি বঙ্গভারতীর তন্ত্রী পরে
একটি অপূর্ব তন্ত্র এনেছিলে পরাবার তরে।
সে ভন্ত্রী হয়েছে বাঁধা –

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সম্পর্কে এই মন্তব্যটি করেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক হয়েও সত্যেন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে তাঁর স্বাতন্ত্রের পরিচয় রেখে গেছেন।

জন্ম এবং শৈশব – ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি (৩০ মাঘ ১২৮৮ বঙ্গাব্দ) বর্তমান উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার নিমতায় মামার বাড়িতে জন্ম হয় সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের। তাঁর বাবার নাম ছিল রজনীনাথ দত্ত। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি ছিল বর্ধমান জেলার চুপি গ্রামে। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের পিতামহ অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন বাংলার খ্যাতনামা চিন্তাবিদ, যুক্তিবাদী লেখক, ব্রহ্ম মতবাদের প্রচারক এবং তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক।

ছাত্রজীবন – সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতার জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইন্সটিটিউশনে এফএ ক্লাসে ভরতি হন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি এফএ পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে পাস করেন। কিন্তু ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন।

ব্যক্তিজীবন – ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ এপ্রিল (৪ বৈশাখ, ১৩১০ বঙ্গাব্দ) হাবড়ার ঈশানচন্দ্র বসু ও গিরিবালা বসুর মেয়ে কনকলতার সঙ্গে সত্যেন্দ্রনাথের বিয়ে হয়।

সাহিত্যজীবন – বাংলা সাহিত্যে সত্যেন্দ্রনাথের প্রধান পরিচয় ছন্দের জাদুকর হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ছন্দোরাজা বলতেন। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে (আষাঢ়, ১৩০০ বঙ্গাব্দ) মাত্র ১২ বছর বয়সে সত্যেন্দ্রনাথ স্বর্গাদপি গরীয়সী নামে একটি কবিতা রচনা করেন। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাবার সঙ্গে মধুপুর-দেওঘর বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই সংক্রান্ত তাঁর একটি লেখা সাপ্তাহিক হিতৈষী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সত্যেন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ সবিতা প্রকাশিত হয় ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর রচিত প্রথমদিকের কবিতাগুলিতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত, অক্ষয়কুমার বড়াল, দেবেন্দ্রনাথ সেনের প্রভাব লক্ষ করা গেলেও পরবর্তী সময়ে লেখা কবিতাগুলিতে তাঁর নিজস্ব রীতি প্রকাশিত হতে থাকে। তাঁর কিছু লেখা ভারতী পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছিল।

১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি রবীন্দ্রনাথের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে কলকাতার টাউন হলে সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর রচিত কবিপ্রশস্তি গুরুদেবকে উপহার দেন। এই উপলক্ষ্যে ভারতী পত্রিকায় বরণ প্রকাশিত হয়। ১৯১৩-তে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর শান্তিনিকেতনে তাঁর সংবর্ধনা সভার অভিনন্দনপত্রের খসড়া রচনা করেন সত্যেন্দ্রনাথ।

সত্যেন্দ্রনাথ বিভিন্ন ছদ্মনামেও লিখেছেন, যেমন — নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর ইত্যাদি।

সত্যেন্দ্রনাথের রচিত কাব্যগ্রন্থগুলি হল – সবিতা (১৯০০), বেণু ও বীণা (১৯০৬), হোমশিখা (১৯০৭), তীৰ্থসলিল (অনুবাদ কবিতা, ১৯০৮), তীর্থরেণু (অনুবাদ কবিতা, ১৯১০), ফুলের ফসল (১৯১১), কুহু ও কেকা (১৯১২), তুলির লিখন (১৯১৪), অভ্র ও আবীর (১৯১৬), হসন্তিকা (ব্যঙ্গ কবিতা ১৯১৭)। এ ছাড়াও তিনি একটি উপন্যাস জন্মদুঃখী (১৯১২) ও একটি নাটক রঙ্গমল্লী (১৯১৩) রচনা করেন।
জীবনাবসান – ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন (১০ আষাঢ়, ১৩২৯ বঙ্গাব্দ) এই প্রতিভাবান কবির অকালমৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র চল্লিশ বছর। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রবীন্দ্রনাথ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত নামে একটি কবিতা লেখেন যা তাঁর পূরবী কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন —

আজও যারা জন্মে নাই তব দেশে,
দেখে নাই যাহারা তোমারে, তুমি তাদের উদ্দেশে
দেখার অতীত রূপে আপনারে করে গেলে দান
দূরকালে। তাহাদের কাছে তুমি নিতা গাওয়া গান
মূর্তিহীন। কিন্তু, যারা পেয়েছিল প্রত্যক্ষ তোমায়
অনুক্ষণ, তারা যা হারালো তার সন্ধান কোথায়,
কোথায় সান্ত্বনা।

উৎস

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের আমরা কবিতাটি তাঁর কুহু ও কেকা কাব্যগ্রন্থের (১৯১২ খ্রিস্টাব্দ, ১৩১৯ বঙ্গাব্দ) অন্তর্গত।

রচনাপ্রসঙ্গ

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একজন প্রবল জাতীয়তাবাদী কবি। জাতীয়তাবাদের মূলকথাই হল স্বদেশ ও স্বজাতি বিশ্বের অন্য কোনো দেশ ও জাতির তুলনায় কোনো অংশে কম নয় বরং উন্নততর — এই বোধ। আমরা কবিতায় কবির এই মানসিকতাই ফুটে উঠেছে।

মুক্তধারা গঙ্গা যে ভূমিখণ্ডের ওপর দিয়ে আনন্দে বয়ে যায়, আমরা বাঙালি জাতি সেই অসংখ্য তীর্থের পুণ্যভূমি বাংলাতে বাস করি। বাংলামায়ের বামহাতে লক্ষ্মীদেবীর ফুল পদ্ম আর তাঁর ডানদিকে সেই পদ্মের মধুলোভী অসংখ্য মধুকরের আনাগোনা। তাঁর কপালে রয়েছে সূর্যের আলোতে সোনালি হয়ে ওঠা হিমালয়ের মুকুট। সেই তুষার থেকে ঠিকরানো আলোতে সারা পৃথিবী আলোকিত হয়। বাংলামায়ের কোলে সোনার ধান, বুকভরা স্নেহ, তাঁর পায়ের কাছে পূজার অর্ঘ্যের মতো ফুটে থাকে পদ্ম আর তাঁর দেহ অতসী-অপরাজিতা ফুলে সাজানো। ঊর্মিমালা অর্থাৎ অজস্র ঢেউয়ের আছড়ে পড়া প্রণাম দিয়ে সাগর যাঁর স্তুতি করে, আমরা বাঙালি জাতি সেই পবিত্র বাংলাদেশে বাস করি।

অসংখ্য নদী-খাল-বিল জঙ্গলের বৈচিত্র্যে পূর্ণ আমাদের এই বঙ্গভূমি। কবির মনে কল্পনার তুলিতে এমন অনেক ছবি আঁকা হয় যাকে ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক তথ্য দিয়ে যাচাই করা যায় না, যেমন সত্যেন্দ্রনাথ বলেছেন যে শ্রীরামচন্দ্রের প্রপিতামহ রঘুর সঙ্গে বাঙালি যুদ্ধ করেছে। আবার সিংহলি মহাবংশ পুরাণ অনুসারে রাঢ় বাংলার রাজপুত্র বিজয়সিংহ লঙ্কাদ্বীপ জয় করে নিজের নামানুসারে তার সিংহল নামকরণ করেন। তবে আরাকানের মগ আক্রমণকারী এবং দিল্লির মোগলবাহিনীর সঙ্গে শেষপর্যন্ত জিততে না পারলেও বাঙালি প্রাণপণ প্রতিরোধ করেছিল। বারোভূঁইয়ার অন্যতম চাঁদ রায় এবং প্রতাপাদিত্যকে হারাতে মোগল বাদশাহকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল।

বাংলার দক্ষিণতম প্রান্ত গঙ্গাসাগরে রয়েছে বৈদিক ঋষি, সাংখ্যদর্শন প্রণেতা কপিলমুনির আশ্রম। তাই কবি ধরেই নিয়েছেন এই বাংলাই সুপ্রাচীন সাংখ্যদর্শনের রচনাভূমি। বাঙালি পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর বা দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান তিব্বতে গিয়েছিলেন বৌদ্ধধর্মের প্রচারে। আর-এক বাঙালি রঘুনাথ শিরোমণি তৎকালীন মিথিলার বিখ্যাত পণ্ডিত পক্ষধর মিশ্রকে একটি প্রকাশ্য বিতর্কসভায় হারান। বাংলার কবি জয়দেবের লেখা কাব্য গীতগোবিন্দ সংস্কৃত সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

প্রাচীন বাংলার ইতিহাস থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাংলার বাণিজ্যিক যোগাযোগের কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই সূত্রেই জাভা- সুমাত্রা-বোর্নিয়ো-শ্যাম-কম্বোজ ইত্যাদি স্থানে কিছু বাঙালি বা বাঙালি বংশোদ্ভূত মানুষজনের থাকার ইঙ্গিত আছে। এই অঞ্চলের স্থাপত্যে বাংলার পাল-সেন যুগের প্রভাবেরও প্রমাণ আছে। সেই কারণেই সম্ভবত কবি জাভার বরভূধর ও কম্বোডিয়ার ওংকারধাম মন্দিরে বাঙালির অবদানের কথা বলেছেন — যদিও এর কোনো জোরালো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে পাল যুগের বিখ্যাত বাঙালি ভাস্কর বিট্পাল আর ধীমান ঐতিহাসিক চরিত্র। অজন্তার সতেরো নম্বর গুহায় সিংহলবিজয়ী রাজপুত্র বিজয়সিংহের ছবি আছে। তাই কবি বলেছেন যে আমাদের অর্থাৎ বাঙালির চিত্র অজন্তার গুহার বুকে অক্ষয় হয়ে রয়েছে।

বাঙালির কাছে দেবতারাও দূর আকাশের বাসিন্দা হয়ে থাকেননি, হয়ে উঠেছেন তাদের প্রাণের ঠাকুর। আবার আমাদের এই পর্ণকুটিরের মানুষ তাঁদের কর্মগুণে দেবতায় পরিণত হয়েছেন। বাঙালির হৃদয়-অমৃত মন্থন করে জন্ম হয়েছে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের। বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের বাণী ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে—বাংলার ছেলে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন।
বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু গাছের মধ্যে প্রাণের স্পন্দন আবিষ্কার করেছেন। আর-এক বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রসায়নশাস্ত্রে অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় মানুষের মহামিলনের কথা বলেছেন।

অতীত এবং তাঁর সমকালে বাঙালির গৌরবের কথা বলে কবি ভবিষ্যতের জন্যও স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি আশা করেছেন আগামীদিনে বাঙালি তার প্রতিভায়, কর্মক্ষমতায় জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেবে। বিধাতার আশীর্বাদে বাঙালি জাতি বাংলার মতো সমৃদ্ধ দেশে জন্ম নিয়েছে। সারা বিশ্বের মানুষকে মিলনের সুতোয় বেঁধে বাঙালি বিধাতার সেই ঋণ শোধ করবে।

সারসংক্ষেপ

মুক্তিদায়িনী গঙ্গার ছোঁয়ায় পবিত্র বঙ্গভূমিতে বাঙালি বাস করে। ফুলে-ফসলে, প্রকৃতির শোভায় অপরূপ সুন্দর বাঙালির বাসভূমি। প্রাচীন কাল থেকেই প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বাঙালি বেঁচে থেকেছে। তার সঙ্গে আছে পূর্বপুরুষের সাহস আর বীরত্বের উত্তরাধিকার। বিজয়সিংহের লঙ্কা জয়, চাঁদ রায় এবং প্রতাপাদিত্যের মোগলদের প্রতিরোধ বা মগ আক্রমণকারীদের প্রতিহত করা সেই গৌরবেরই অংশ। কপিলমুনির সাংখ্যদর্শন বা অতীশ দীপঙ্করের বৌদ্ধধর্মের প্রসারে ভূমিকা, রঘুনাথ শিরোমণির মিথিলার পণ্ডিত পক্ষধর মিশ্রকে পরাজিত করা, জয়দেবের গীতগোবিন্দ রচনা বাঙালির গৌরবের ঐতিহ্য। বরভূধর বা ওংকারধাম মন্দির তৈরিতে বাঙালিদের স্থাপত্যকীর্তির নিদর্শন রয়েছে। বিট্পাল আর ধীমানের মতো ভাস্কর এই বাংলাদেশেই জন্মেছিলেন। কীর্তন আর বাউলগানে বাঙালি তার হৃদয়ের তত্ত্বকথাকে প্রকাশ করেছে। সে অনায়াসেই দেবতাকে কাছের মানুষ করে নিয়েছে। দেবদ্বিজে ভক্তি বাঙালিকে বাঁচার পথ দেখিয়েছে। মানবতার বাণী প্রচার করে চৈতন্যদেব সমাজে আলোড়ন তুলেছিলেন, বিশ্বকে পথ দেখিয়েছেন বিবেকানন্দ। বাঙালির বিজ্ঞানসাধনা তাকে জাতি হিসেবে গর্বিত করেছে। কবি শুনিয়েছেন মহামিলনের গান। বাঙালি তার বুদ্ধি দিয়ে বহু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছে, সত্যের সন্ধান পেয়েছে। এই অতীতের সাফল্যের ওপরেই ভবিষ্যতের সার্থকতা প্রতিষ্ঠিত হবে। শক্তির প্রয়োগ বা ঈর্ষা-বিদ্বেষ নয়, মিলনের মন্ত্রে বাঙালি তার প্রতিভাকে প্রতিষ্ঠা করবে।

নামকরণ

যে-কোনো সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবিতার ক্ষেত্রে সাধারণত বিষয়বস্তু অনুসারে অথবা ভাব অনুযায়ী। নামকরণ হয়।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের আমরা কবিতাটিতে তাঁর তীব্র জাতীয়তাবাদী মানসিকতা ফুটে উঠেছে। এই জাতীয়তাবাদে অন্য জাতির প্রতি ঘৃণা নেই কিন্তু নিজের দেশ ও জাতি সম্পর্কে তীব্র ভালোবাসা ও গৌরববোধের প্রকাশ ঘটেছে।

কবিতাটির শুরুতে কবি বাংলামায়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা করে তারপরেই বাঙালি জাতির গৌরবগাথা রচনা করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কবি এখানে কেবল বাংলাদেশ ও বাঙালিদের কথাই বলেননি, বাঙালি যাঁদের ভালোবেসেছে বা বাংলার সঙ্গে যাঁদের কিছুমাত্র সংযোগ হয়েছে তাঁদের কথাও কবি এই গৌরবগাথার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সেই কারণেই শ্রীকৃষ্ণ বা কপিলমুনি বাঙালি না হয়েও বাংলার গৌরব বৃদ্ধি করেছেন।

বাঙালির জয়গাথা রচনা করতে গিয়ে কবি শুধু ইতিহাস নয়, জনশ্রুতির ওপরও নির্ভর করেছেন। লঙ্কাজয়ী বীর বিজয়সিংহ, বারোভূঁইয়ার অন্যতম চাঁদ রায়, প্রতাপাদিত্য, পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর, রঘুনাথ শিরোমণি, কবি জয়দেবকে সত্যেন্দ্রনাথ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি ভোলেননি পাল যুগের বিখ্যাত ভাস্কর বিট্‌পাল, ধীমানকেও।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সমুদ্রপথে বাংলার বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। ওই অঞ্চলের স্থাপত্যের ওপর পাল-সেন যুগের স্থাপত্যের প্রভাবের ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়। তার ওপর ভিত্তি করে কবি বরভূধর স্তূপ এবং ওংকারধাম মন্দিরে বাঙালির অবদানের কথা বলেছেন।

শ্রীচৈতন্যদেব, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব, বিবেকানন্দ, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—কবি এঁদের কারও নাম করে, কারও বা নাম না – করে ইঙ্গিতে তাঁদের জয়গান করেছেন।

আমরা কবিতায় কবি একদিকে যেমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ বাঙালিদের অবদানকে স্মরণ করেছেন তেমনি অন্যদিকে বাংলার সংস্কৃতির মূল সুরটিকেও তুলে ধরেছেন। এই সুর হল মানুষের সঙ্গে মানুষের মহামিলনের সুর। বাঙালি দেবতাকে আত্মীয়ের মতো হৃদয়ে স্থান দিয়েছে, আবার প্রিয়জনকে ভালোবেসে দেবতার মর্যাদা দিয়েছে। আবেগপ্রবণ বাঙালি জাতি তার সংস্কৃতির সংস্পর্শে যারা এসেছে, তাদের সকলকে সাদরে গ্রহণ করেছে, কাউকে ফিরিয়ে দেয়নি। কীর্তনে আর বাউলগানে এই ভালোবাসা আর মিলনের সুরই ধ্বনিত হয়েছে।

সবশেষে কবি স্বদেশ এবং স্বজাতির ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বপ্নের জাল বুনেছেন। তিনি আশা করেছেন একদিন নিশ্চয়ই বাঙালি জগৎসভায় শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা পাবে।

কবিতাটি আমাদের অর্থাৎ বাঙালি জাতিকে কেন্দ্র করে রচিত। তাই বলা যায় এর আমরা নামটি বিষয়বস্তু-নির্ভর এবং সবদিক থেকেই যথাযথ।কবিতাটি থেকে আমরা অনেক শিক্ষা নিতে পারি। কবিতাটি থেকে আমরা শিখতে পারি যে, আমরা সকলেই একই জাতি, একই পরিবার। আমাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। আমরা সকলেই একই মূল্যের অধিকারী। আমরা সকলেই একসাথে মিলে সুন্দর ও সুখী পৃথিবী গড়তে পারি।

কবিতাটি আমাদের মানবতার শিক্ষা দেয়। কবিতার মাধ্যমে কবি আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ও সত্যের, ন্যায়ের ও শান্তির জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer