ভাবর ও তরাই কি? ভাবর ও তরাই – এর মধ্যে পার্থক্য

ভারতের উত্তর সীমান্তে হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত দুটি ভৌগোলিক অঞ্চল হল ভাবর এবং তরাই। দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য এই দুটি অঞ্চল সম্পর্কে জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভাবর ও তরাই কি? ভাবর ও তরাই - এর মধ্যে পার্থক্য

ভাবর

ভাবর হল পশ্চিমবঙ্গের একটি সংকীর্ণ নুড়ি পাথরময় ভূমিভাগ যা সিন্ধু নদীর পশ্চিম তীরে শুরু হয়ে তিস্তা নদীর পূর্ব তীরে শেষ হয়। শিবালিক পার্বত্যমালার পাদদেশে অবস্থিত, এই অঞ্চল তার অনন্য ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু এবং উদ্ভিজ্জীবনের জন্য পরিচিত।

ভাবর এর উৎপত্তি

ভাবরের গঠন হিমালয়ের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে বয়ে আসা অসংখ্য নদীর কারণে। এই নদীগুলি প্রচুর পরিমাণে ক্ষয় করে শিবালিক পাদদেশে নুড়ি, পাথর এবং বালি জমা করে। কালক্রমে, এই জমাগুলি একত্রিত হয়ে ভাবরের সৃষ্টি করে।

ভাবর এর বৈশিষ্ট্য

  • প্রস্থ: ভাবর অঞ্চল ৮ কিলোমিটার থেকে ১৬ কিলোমিটার প্রশস্ত।
  • ভূমি: নুড়ি-পাথরের প্রাচুর্যের কারণে ভাবরের ভূমি অত্যন্ত সচ্ছিদ্র।
  • নদী: ভূমির সচ্ছিদ্রতার কারণে, ছোট ছোট নদীগুলি ভূগর্ভস্থ হয়ে তরাই অঞ্চলে পুনরায় প্রকাশিত হয়।
  • জলাভূমি: ভাবরে বহু জলাভূমি রয়েছে, যা বন্যপ্রাণী এবং জলজ উদ্ভিদের জন্য আবাসস্থল প্রদান করে।
  • বন্যা: নুড়ি-পাথরের ভূমি জল ধরে রাখতে অক্ষম হওয়ায় ভাবরে বন্যার প্রবণতা বেশি।
  • কৃষি: নুড়ি-পাথরের প্রাচুর্যের কারণে ভাবর কৃষিকাজের জন্য খুব একটা অনুকূল নয়।
  • বনভূমি: তরাই অঞ্চলের সমগ্র এলাকা জুড়ে ঘন বনভূমি বিদ্যমান।

ভাবরের গুরুত্ব

  • ভূগর্ভস্থ জল: ভাবরের সচ্ছিদ্র ভূমি ভূগর্ভস্থ জলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
  • বন্যপ্রাণী: ভাবরের জলাভূমি এবং বনভূমি বহু বিরল এবং বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
  • জীববৈচিত্র্য: ভাবর তার সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী এবং পাখি।

ভাবর পশ্চিমবঙ্গের একটি অনন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল। তার স্বতন্ত্র ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু এবং জীববৈচিত্র্য এই অঞ্চলকে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তরাই অঞ্চল

হিমালয়ের পাদদেশে, মহানন্দা, তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা, রায়ডাক, বালাসন নদীগুলির বহিত পলি, বালি ও নুড়িপাথর দিয়ে গঠিত একটি ঘন অরণ্যাবৃত সাতসেঁতে অঞ্চল হল তরাই। ‘তরাই’ শব্দের অর্থই সাতসেঁতে ভূমি।

তরাই অঞ্চল এর অবস্থান –

  • শিবালিক পর্বতমালার নিম্নভূমিতে অবস্থিত
  • মূল আঞ্চলিক অবস্থান:
    • পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহাকুমা
    • জলপাইগুড়ি জেলার পূর্ব ও উত্তরাংশ
    • উত্তর দিনাজপুর জেলা

তরাই অঞ্চল এর উৎপত্তি –

  • হিমালয়ের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে বয়ে আসা নদীগুলি তাদের ক্ষয়িত ও বাহিত পদার্থ পর্বতের পাদদেশে জমা করে।
  • বালি, পলি, কর্দম, নুড়ি ও বিভিন্ন আকৃতির শিলাখন্ড দীর্ঘকাল ধরে এই অঞ্চলে জমা হয়ে তরাই ভূমি গঠন করেছে।

তরাই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য –

তরাই অঞ্চলের মাটি –

  • এই অঞ্চলের মাটিতে প্রচুর পরিমাণে নুড়ি, কাঁকর এবং বালি থাকে।
  • বালিমিশ্রিত মাটির জল ধরে রাখার ক্ষমতা কম থাকে।
  • এই অঞ্চলে জৈব সারের অভাব দেখা যায়।
  • উপরে বর্ণিত কারণগুলির ফলে তরাই অঞ্চলের মাটির উর্বরতা তুলনামূলকভাবে কম।

তরাই অঞ্চলের জলবায়ু –

  • অঞ্চলটিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং নদী ও ঝর্ণার জলের প্রাপ্তিও বেশি থাকে। এর ফলে এখানকার মাটি সর্বদা আর্দ্র থাকে।

তরাই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি –

  • তরাই অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তুলনামূলকভাবে নিচু।
  • এই অঞ্চলটি উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ২০-৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
  • ভূ-প্রকৃতি উত্তর থেকে দক্ষিণে ঢালু।
  • অসংখ্য নদীখাত এই অঞ্চলটিকে সমান্তরাল অংশে বিভক্ত করে।
  • নদীখাতের নীচু অংশ বাদ দিলে, তরাই অঞ্চলটি প্রায় সমতল।
  • কিছু কিছু স্থানে ৪০০-৬০০ মিটার উচ্চতার উচ্চভূমি ও ছোট পাহাড় দেখা যায়।

তরাই অঞ্চলের জলাভূমি

  • তরাই অঞ্চলে বহু জলাভূমি, ঝর্ণা, এবং ছোট নদী দেখা যায়।

তরাই অঞ্চলের অবস্থান

  • এই অঞ্চলটি মূলত তিস্তা নদীর ডান তীরে অবস্থিত।
  • তরাই অঞ্চলের মাটির উর্বরতা কম হলেও, সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে এখানে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
  • এই অঞ্চলটি বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ।
  • তরাই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যও বেশ সমৃদ্ধ।

ভাবর ও তরাই-এর পার্থক্য

ভাবর ও তরাই-এর পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়ভাবরতরাই
অবস্থানসিন্ধু থেকে তিস্তা পর্যন্ত শিবালিক পর্বতের পাদদেশের ভূমি ভাবর নামে পরিচিত।ভাবরের দক্ষিণ অংশ তরাই নামে পরিচিত।
গঠনছোটো ছোটো নুড়ি পাথর দিয়ে এই অংশটি তৈরি হয়েছে।প্রধানত বালি, কাদা, পলি দিয়ে তরাই ভূমি গঠিত হয়েছে।
উর্বরতামাটিতে নুড়ি, পাথর থাকে বলে এটি অনুর্বর মাটি, চাষবাস খুব ভালো হয় না।এই মাটি চাষের জন্য যথেষ্ট উর্বর।
বিস্তারভাবরের গড় বিস্তার 8-16 কিমি।এর গড় বিস্তার 20-30 কিমি।

আজকের আলোচনায়, আমরা ভাবর ও তরাই, হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমরা তাদের অবস্থান, ভূসংস্থান, জলবায়ু, উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজগত এবং মানবিক বসতি সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

Share via:

মন্তব্য করুন