আজকের আর্টিকেলে আমরা ছুটির দিন প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করবো। মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় বা স্কুলের পরীক্ষায় প্রায়শই এই রচনাটি দেখা যায়। ছুটির দিন প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা এবং এই রচনাটি একবার মুখস্ত করে রাখলে ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।
এই রচনা লেখার সময় আমাদের কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। প্রথমে, আমাদের ছুটির দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে হবে। ছুটির দিন আমাদের শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ছুটির দিন আমাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়।
দ্বিতীয়ত, আমাদের ছুটির দিন কীভাবে কাটাতে পারি সে সম্পর্কে লিখতে হবে। আমরা ছুটির দিন ঘরে বসে বিশ্রাম নিতে পারি, বাইরে ঘুরতে যেতে পারি, বই পড়তে পারি, বা পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটাতে পারি।
তৃতীয়ত, আমাদের ছুটির দিন কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে সম্পর্কে লিখতে হবে। আমরা ছুটির দিন নতুন কিছু শিখতে পারি, আমাদের শখের কাজ করতে পারি, বা সামাজিক কাজে অংশ নিতে পারি।
শেষে, আমাদের ছুটির দিনের উপসংহার লিখতে হবে। ছুটির দিন আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ছুটি নেওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে পারি।
ছুটির দিন – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
“মাগো আমায় ছুটি দিতে বল
সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা
এখন আমি তোমার ঘরে বসে
করব শুধু পড়া পড়া খেলা।”
– ছুটির জন্য মানুষের এই আকুলতা চিরন্তন। ছুটি ক্যালেন্ডারে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া কিছু নির্দিষ্ট দিন নয়, বরং বেঁচে থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় অক্সিজেন। প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় কিছু বৈচিত্র্য সংযোজনের মধ্য দিয়ে ছুটি মানুষের জীবনে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করে। ফলে শরীর ও মন নতুন উৎসাহে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে পারে।
ছুটির প্রয়োজনীয়তা –
একজন ছাত্র তার ক্রমশ বাড়তে থাকা পড়ার বইয়ের চাপে যখন দিশেহারা, বাড়ি-স্কুল-বাড়ির ধরাবাঁধা রুটিনে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তার শৈশব ও কৈশোর, তখন ছুটির আনন্দেই সে খুঁজে নিতে পারে প্রাণের স্ফূর্তি। কখনও টিভির সামনে, কখনও খেলার মাঠে, কখনও নীল আকাশের নীচে বন্ধুদের সঙ্গে মুক্ত জীবনের উল্লাসে সে খুঁজে পায় তার মনের রসদ। একইভাবে কর্মক্লান্ত মানুষ তার অবসরের সার্থকতা খোঁজে কখনও বেড়ানোর আনন্দে, কখনও সৃষ্টিশীল কাজে, কখনও-বা বিনোদনের মাধ্যমে। আর এর মধ্য দিয়েই একঘেয়েমি কাটিয়ে সে নিজেকে প্রাণময় করে তোলে। মানসিক অবসন্নতা আজকের সমাজে একটা রড়ো অসুখ। ছুটি যন্ত্রজীবন থেকে মানুষকে বের করে ইচ্ছে ডানায় তাকে ভাসিয়ে অবসন্নতা থেকে মুক্তি ঘটায়।
ছুটি কাটানোর উপায় –
ছুটির অর্থ শুধু অলস দিনযাপন নয়। অবসরের মুহূর্তেই শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি হয়, জন্ম হয় সার্থক কবিতার, ক্যানভাসে ফুটে ওঠে চিত্রকলা। এ হল নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকে এবং চারপাশকে বুঝে নেওয়ার অবসর। এর পাশাপাশি ছুটির দিন মানুষকে যুক্ত করে বৃহত্তর সমাজজীবন ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। বিজ্ঞান সচেতনতা বৃদ্ধি, দূষণবিরোধী আন্দোলন, সাক্ষরতা আন্দোলন ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ছুটি সার্থক হয়ে উঠতে পারে। আবার বড়ো কিছু না করেও, চারপাশের মানুষজনের সঙ্গে মেশার যে সুযোগ তৈরি হয় ছুটির দিনে তা নতুন করে সামাজিক সম্পর্ককে ঝালিয়ে নেয়। ফ্র্যাঙ্কলিন বলেছিলেন, ‘Leisure is time for doing something useful’। উক্তিটি মনে রাখলে আমাদের অবকাশের মুহূর্ত আলোকিত হতে পারে মনুষ্যত্বের আলোয়।
উপসংহার –
ছুটি কাটানোর উপায়ের রকমফের থাকলেও তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ছুটির ছোঁয়া পেয়ে অবসাদগ্রস্ত মানবজীবন নতুন আনন্দ ও শক্তিতে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন – “সত্যকে খুব বড়ো করে ধ্যান করবার এবং উপলব্ধি করবার মতো মনের উদার অবকাশ প্রয়োজন।” ছুটির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শেষ কথা সম্ভবত এটাই।
পরিশেষে, আমরা বলতে পারি যে ছুটির দিন আমাদের জীবনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এটি কেবল বিশ্রাম ও আনন্দের সময়ই নয়, বরং নতুন জিনিস শেখা, পরিবারের সাথে সময় কাটানো এবং নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করার একটি সুযোগও। নিয়মিত ছুটি নেওয়া আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং আমাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সুতরাং, আমাদের সকলেরই উচিত নিয়মিত ছুটি নেওয়ার চেষ্টা করা এবং এই মূল্যবান সময়টিকে সর্বাধিকভাবে ব্যবহার করা।