উত্তর ভারতের তিনটি নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় – নদীগুলির গতিপথের বর্ণনা

Rahul

নমস্কার বন্ধুরা! আজকের আর্টিকেলে আমরা উত্তর ভারতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নদীর – গঙ্গা, যমুনা, এবং সিন্ধু – সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেব এবং তাদের গতিপথ বর্ণনা করব। এই তথ্যগুলি দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” অধ্যায়ের “ভারতের জলসম্পদ” বিভাগে।

এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে আপনি এই তিনটি নদী সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পাবেন এবং পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

উত্তর ভারতের তিনটি নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় - নদীগুলির গতিপথের বর্ণনা

উত্তর ভারতের প্রধান তিনটি নদনদী

উত্তর ভারতের নদনদীর মধ্যে প্রধান হল গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র।

গঙ্গা – 

গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য 2525 কিমি। গঙ্গা ভারতের প্রধান নদী। এই নদীর গতিপথকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

  • উচ্চগতি – উৎস থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার প্রবাহপথ উচ্চগতি নামে পরিচিত। উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন হিমালয়ের অন্তর্গত গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষারগুহা থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি। উৎসের কাছে এর নাম ভাগীরথী। রুদ্রপ্রয়াগের কাছে মন্দাকিনী ও দেবপ্রয়াগের কাছে এর অন্যতম প্রধান উপনদী অলকনন্দার সঙ্গে মিলিত হয়ে ভাগীরথী গঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে।
  • মধ্যগতি – হরিদ্বারের কাছে পার্বত্য প্রবাহ অতিক্রম করে গঙ্গা সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। গঙ্গার সুদীর্ঘ গতিপথে ডানদিক থেকে যমুনা ও সোন এবং বামদিক থেকে গোমতী, ঘর্ঘরা, রামগঙ্গা, গণ্ডক, কোশী প্রভৃতি উপনদী এসে পড়েছে। গঙ্গার এইসব উপনদীর মধ্যে যমুনা সর্বপ্রধান। যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে যমুনা নদী এলাহাবাদের কাছে গঙ্গানদীতে পড়েছে। চম্বল, বেতোয়া, কেন, সারদা প্রভৃতি যমুনার ডানতীরের উল্লেখযোগ্য উপনদী। হরিদ্বারের পর থেকে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত প্রবাহপথ গঙ্গার মধ্যগতি নামে পরিচিত।
  • নিম্নগতি –
    • রাজমহল পাহাড়ের পর থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহানা পর্যন্ত গঙ্গার প্রবাহপথ নিম্নগতি নামে পরিচিত। রাজমহল পাহাড়ের কাছে এসে গঙ্গা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে।
    • গঙ্গা মুরশিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানের কাছে এসে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে।
    • প্রধান শাখাটি প্রথমে পদ্মা ও পরে মেঘনা নামে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।
    • দ্বিতীয় শাখাটি ভাগীরথী-হুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
    • ভাগীরথী-হুগলি নদীর গতিপথে অজয়, দামোদর, কংসাবতী, রূপনারায়ণ, রসুলপুর প্রভৃতি নদী ডানতীরস্থ উপনদী হিসেবে এবং জলঙ্গি, মাথাভাঙ্গা, চূর্ণি প্রভৃতি নদী বামতীরস্থ উপনদী হিসেবে এসে মিশেছে।
    • মোহানার কাছে এসে গঙ্গানদী পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে।
গঙ্গা নদীর প্রবাহ পথ

সিন্ধু –

উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রধান নদী সিন্ধু (দৈর্ঘ্য 2880 কিমি, ভারতে 1114 কিমি)। তিব্বতের মানস সরোবর হ্রদের কাছে সেঙ্গে খাবাব ঝরনা থেকে উৎপন্ন হয়ে সিন্ধুনদ জুম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নাঙ্গা পর্বতের কাছে দক্ষিণমুখী হয়ে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে আরব সাগরে (করাচির দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে) পড়েছে। সিন্ধুর বামতীরের উপনদীগুলির মধ্যে পাঁচটি প্রধান। এগুলি হল – শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা বিতস্তা বা ঝিলাম। এই নদীগুলি জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাবের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সিন্ধুর ডানতীরের প্রধান উপনদীগুলি হল কাশ্মীরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শিয়ক, গিলগিট, শিগার প্রভৃতি। সিন্ধুনদ লাদাখ পর্বতশ্রেণি অতিক্রম করার পর একটি সুগভীর গিরিখাতের সৃষ্টি করে ধীরে ধীরে সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। মোহানার কাছে সিন্ধুর একটি ছোটো বদ্বীপ দেখা যায়।

সিন্ধুনদের প্রবাহপথ

ব্রহ্মপুত্র – 

উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র (দৈর্ঘ্য 2900 কিমি, ভারতে 916 কিমি)।

  • তিব্বতের রাক্ষসতাল-মানস সরোবরের প্রায় 90 কিমি দক্ষিণ-পূর্বে চেমায়ুং-দুং নামক হিমবাহ থেকে ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি।
  • সেখান থেকে প্রথমে সাংপো নামে তিব্বত মালভূমির ওপর দিয়ে পূর্বদিক বরাবর প্রায় 1500 কিমি-র বেশি প্রবাহিত হওয়ার পর নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে বাঁক নিয়ে ডিহং নামে অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে।
  • অসমের সাদিয়ার কাছে ডিবং ও লোহিত নদী ডিহং –এর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
  • এরপর ডিহং, ডিবং এবং লোহিত – এই তিনটি নদীর মিলিত প্রবাহ ব্রহ্মপুত্র নামে পশ্চিমমুখী হয়ে অসমের ওপর দিয়ে ধুবড়ি পর্যন্ত বয়ে গিয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে যমুনা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
  • তারপর গোয়ালন্দের কাছে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে শেষে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
  • অসম উপত্যকায় ব্রহ্মপুত্র বিনুনির মতো এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে বলে নদীখাতে অনেক বালুচর বা দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। জোরহাটের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদে গঠিত মাজুলি দ্বীপটি ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ।
  • ব্রহ্মপুত্রের ডানতীরের উপনদীগুলির মধ্যে সুবনসিরি, কামেং বা জিয়া ভরেলি, মানস, সংকোশ এবং বামতীরের উপনদীগুলির মধ্যে ধানসিরি, কোপিলি, বুড়ি ডিহিং প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ব্রহ্মাপুত্র নদের প্রবাহপথ

আজকের আর্টিকেলে আমরা খালের মাধ্যমে উত্তর ভারতের তিনটি প্রধান নদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং তাদের গতিপথ সম্পর্কে জেনেছি। এই তথ্য দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ”-এর “ভারতের জলসম্পদ” বিভাগের একটি অংশ।

উত্তর ভারতের এই তিনটি নদীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং তাদের গতিপথ সম্পর্কে জ্ঞান পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অপরিহার্য। নিয়মিত অনুশীলন করলে আপনি এই বিষয়টিতে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবেন।

Please Share This Article

Related Posts

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো -

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো।

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো।

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অবস্থান ও প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী তা আলোচনা করো।