ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কীভাবে জলসেচ করা হয়?

অথবা, ভারতে ব্যবহৃত জলসেচ পদ্ধতিগুলির বিবরণ দাও।

আজকের আলোচনার বিষয় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কীভাবে জলসেচ করা হয়। দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ অধ্যায়ের “ভারতের জলসম্পদ” বিভাগ থেকে এই প্রশ্নটি নিয়মিত আসে। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা ভারতে ব্যবহৃত বিভিন্ন জলসেচ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কীভাবে জলসেচ করা হয়?

ভারতে প্রচলিত জলসেচের পদ্ধতিসমূহ

ভৌগোলিক পরিবেশের পার্থক্যের জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশের সেচসেবিত জমিতে সেচের প্রধান তিনটি মাধ্যম বা পদ্ধতি হল –

  • সেচখাল,
  • কূপ ও নলকূপ এবং
  • জলাশয়।

এই তিন পদ্ধতিতে সেচের কাজে সাধারণ পারস্য চক্র (Persian wheel), ডোঙা কিংবা বৈদ্যুতিক পাম্প ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কীভাবে জলসেচ করা হয় বর্ণনা করো।

সেচখাল – 

ভারতে দু-ধরনের সেচখাল দেখা যায়। যথা –

প্লাবন খাল –

  • যেসব খাল বর্ষা বা বন্যার অতিরিক্ত জল পরিবহণ করে সেই খালগুলিকে বলে প্লাবন খাল।
  • প্লাবন খালের মাধ্যমে কেবল বর্ষাকালেই জলসেচ করা যায়, যেমন – কৃয়া বদ্বীপ খাল, গোদাবরী বদ্বীপ খাল, কাবেরী বদ্বীপ খাল প্রভৃতি।

নিত্যবহ খাল –

  • যেসব নদীতে সারাবছর জল থাকে, সেইসব নদী থেকে খনন করা খালগুলিকে বলে নিত্যবহ খাল।
  • উৎস-নদী সারাবছর জলপূর্ণ থাকার জন্য নিত্যবহ খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সারাবছরই জলসেচ করা যায়।
  • তুষারগলা জলে পুষ্ট উত্তর ভারতের নদীগুলি নিত্যবহ বলে উত্তর ভারতেই নিত্যবহ খাল বেশি দেখা যায়, যেমন-উত্তরপ্রদেশের উচ্চ-গঙ্গা খাল, পাঞ্জাবের পশ্চিম যমুনা খাল ও উচ্চ-বারি দোয়াব খাল, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর খাল, ইডেন খাল, হিজলি খাল, ওডিশা উপকূল খাল এবং দামোদর-ময়ূরাক্ষী-কংসাবতী পরিকল্পনার সেচখালসমূহ।
  • এইরূপ খালের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সেচকাজ হয় উত্তরপ্রদেশে।

কূপ ও নলকূপ – 

  • উত্তর ভারতের পলিমাটি গঠিত অঞ্চলে মাটির নীচে সঞ্চিত ভূগর্ভের জল বা ভৌমজল (underground water) কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে তুলে এনে কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়।
  • কূপ ও নলকূপের গভীরতা ভূগর্ভের জলস্তরের ওপর নির্ভর করে। জলস্তর যদি ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকে তাহলে কূপ ও নলকূপের গভীরতা কম হয়।
  • দু-ধরনের নলকূপ দেখা যায় – (a) সাধারণ নলকূপ – সাধারণ নলকূপ অগভীর হয় এবং হাত দিয়ে পাম্প করে জল তোলা হয়। (b) বৈদ্যুতিক নলকূপ – গভীর নলকূপ থেকে বৈদ্যুতিক পাম্প বা ডিজেলচালিত পাম্পের সাহায্যে জল তোলা হয়। এতে স্বল্প সময়ে প্রচুর জল তোলা যায়।
  • উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ, পূর্ব ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের অসমে কূপ ও নলকূপের প্রচলন বেশি।
  • কূপের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সেচ হয় উত্তরপ্রদেশে।
  • বর্তমানে পশ্চিম ভারতের শুষ্ক অঞ্চলগুলিতে কূপ ও নলকূপের দ্বারা সেচের ব্যবহার বেড়েছে।
  • এ ছাড়াও তামিলনাডুর দক্ষিণাংশ ও কেরলে কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে সেচকাজ করা হয়।

জলাশয় বা পুকুর –

  • দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে মাটির নীচে অধিকাংশ জায়গায় অপ্রবেশ্য শিলাস্তর থাকায় বৃষ্টির জল ভূগর্ভে বিশেষ সঞ্চিত হয় না।
  • এখানকার ভূপৃষ্ঠ তরঙ্গায়িত বলে বর্ষার জল সহজেই নিম্নভূমিতে ধরে রাখা যায়।
  • এ ছাড়া, ভারতের যেসব অঞ্চলে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হয় না, সেখানে জলাশয় নির্মাণ করে জল জমিয়ে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই জল সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন- কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের দক্ষিণাংশ।
  • দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক ও তামিলনাডুতে এই পদ্ধতির প্রচলন বেশি। পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে এই পদ্ধতিতে সামান্য জলসেচ করা হয়।
  • জলাশয় বা পুকুরের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সেচকাজ হয় অন্ধ্রপ্রদেশে।
ভারতের জলসেচ ব্যবস্থা
Share via:

মন্তব্য করুন