মাধ্যমিক ইতিহাস – উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964) – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

Solution Wbbse

আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” এর থেকে “সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন” আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

মাধ্যমিক ইতিহাস - উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964) - সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন
Contents Show

মন্ত্রীমিশন বা ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবগুলি কী ছিল?

1946 খ্রিস্টাব্দের 16 মে ক্যাবিনেট মিশন তার নিজস্ব পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে।

মন্ত্রীমিশনের প্রস্তাবসমূহ –

  • ব্রিটিশ-শাসিত ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হবে।
  • হিন্দুপ্রধান অঞ্চল নিয়ে গঠিত হবে ‘ক’ শ্রেণির প্রদেশ, মুসলমানপ্রধান অঞ্চল নিয়ে গঠিত হবে ‘খ’ শ্রেণির প্রদেশ এবং বাংলা ও আসাম নিয়ে গঠিত হবে ‘গ’ শ্রেণির প্রদেশ।
  • ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ শ্রেণির প্রাদেশিক বা দেশীয় রাজ্যের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে গণপরিষদ।
  • ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ শ্রেণিগুলি ইচ্ছা করলে নিজ নিজ শাসনতন্ত্র রচনা করতে পারবে।
  • নতুন সংবিধান রচিত না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে।

মুসলিম লিগের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম বলতে কী বোঝো?

1946 খ্রিস্টাব্দের 16 আগস্ট মুসলিম লিগের নেতা মহম্মদ আলি জিন্না প্রত্যক্ষ সংগ্রাম -এর ডাক দেন।

মুসলিম লিগের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম –

  • মুসলিম লিগ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরিকল্পনাটি গ্রহণ করে এবং সরকারে অংশগ্রহণ করতে সম্মত হয়। কংগ্রেস সংবিধান সভায় অংশগ্রহণে সম্মত হয় কিন্তু সরকারে অংশগ্রহণ করবে কি না তা জানাতে সময় নষ্ট করে।
  • এইরূপ পরিস্থিতিতে জিন্না সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের জন্য মুসলিমদের প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দেন। এই দিন কলকাতায় ভয়াবহ দাঙ্গা ঘটে। এর প্রতিক্রিয়ায় সারা ভারতে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে ও দেশভাগ আসন্ন হয়ে ওঠে।

The Great Calcutta Killing বলতে কী বোঝো?

1946 খ্রিস্টাব্দে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী কংগ্রেস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগদান করলেও মুসলিম লিগ যোগদান করা থেকে বিরত থাকে। এই সময় 16 আগস্ট থেকে লিগ পাকিস্তানের জন্য গণ আন্দোলন শুরু করে।

The Great Calcutta Killing –

  • 1946 খ্রিস্টাব্দের 16 আগস্ট থেকে মুসলিম লিগ প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দিলে কলকাতায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। ধর্মতলা, ফুলবাগান, বেলেঘাটা প্রভৃতি অঞ্চলে দাঙ্গার আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল।
  • হিন্দু-মুসলমানের এই ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রায় 4000 মানুষ মারা যায় এবং 10000 জন আহত হয়। এই দাঙ্গাই ইতিহাসে ‘The Great Calcutta Killing’ নামে পরিচিত।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কী?

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা –

লর্ড মাউন্টব্যাটেন ছিলেন ভারতের শেষ ভাইসরয়। তিনি ভারতের স্বাধীনতা রূপায়ণের জন্য 1947 খ্রিস্টাব্দের 3 জুন যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন, তা মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা নামে পরিচিত। এতে বলা হয় –

  • সমগ্র ভারতকে ‘ভারত’ ও ‘পাকিস্তান’ নামে দুটি পৃথক ডোমিনিয়নে ভাগ করা হবে।
  • মুসলিমপ্রধান পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধু, বালুচিস্তান, পূর্ব বাংলা নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হবে।

ভারত বিভাজনের জন্য গঠিত সীমানা কমিশন কী?

1947 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে বহু টানাপোড়েনের পর লর্ড মাউন্টব্যাটেন -এর ভারত বিভাজনের পরিকল্পনা কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ মেনে নেয়।

ভারত বিভাজনের জন্য গঠিত সীমানা কমিশন –

  • ভারত বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী এসময় বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভাগ করার জন্য দুটি পৃথক সীমানা কমিশন গঠিত হয়। এই দুটি কমিশনেই মুসলিম লিগ ও কংগ্রেস থেকে দুজন করে সদস্য ছিল।
  • বাংলা ও পাঞ্জাব উভয় সীমানা কমিশনের সভাপতি নিযুক্ত হন বিখ্যাত ব্রিটিশ আইনজীবী স্যার সিরিল র‍্যাডক্লিফ।

র‍্যাডক্লিফ কীসের উপর ভিত্তি করে সীমানা কমিশনের রিপোর্ট তৈরি করেন?

1947 খ্রিস্টাব্দের 27 জুন ব্রিটিশ আইনজীবী সিরিল র‍্যাডক্লিফ বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভাগ করার জন্য গঠিত দুটি সীমানা কমিশনের সভাপতি নিযুক্ত হন। 12 জুলাই কার্যভার গ্রহণ করার পর অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তিনি ভারতের বিভাজন মানচিত্র প্রস্তুত করেন।

সিরিল র‍্যাডক্লিফ ধর্মীয় জনগোষ্ঠী, প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে সীমানা কমিশনের রিপোর্ট তৈরি করেন।

স্যার সিরিল র‍্যাডক্লিফ বিখ্যাত কেন?

স্যার সিরিল র‍্যাডক্লিফ ছিলেন বিশিষ্ট ব্রিটিশ আইনজীবী। লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত বিভাগের সময় যে সীমানা কমিশন গঠন করেছিলেন, র‍্যাডক্লিফ ছিলেন তার সভাপতি।

সিরিল র‍্যাডক্লিফ অতি অল্প সময়ের মধ্যে ভারত বিভাজনের মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। তাঁর নামানুসারে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত ‘র‍্যাডক্লিফ লাইন’ নামে পরিচিত হয়।

ভারতীয় স্বাধীনতা আইন কী?

ভারতীয় স্বাধীনতা আইন –

দীর্ঘদিনের ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য 1947 খ্রিস্টাব্দের 4 জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হয়। এটি 18 জুলাই রাজকীয় সম্মতি লাভ করে। একে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন বলা হয়।

স্বাধীনতা আইনের ধারা –

  • এই আইন অনুসারে 1947 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট ভারত স্বাধীনতা অর্জন করে।
  • পশ্চিম পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধুপ্রদেশ, বালুচিস্তান, পূর্ববঙ্গ ও আসামের কিছু অংশ নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

পাকিস্তান ডোমিনিয়ন কী?

1947 খ্রিস্টাব্দের ভারত বিভাজন ও ভারতের স্বাধীনতা লাভ এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের গঠন কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। বহু ঘাতপ্রতিঘাত ও উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে এবং সেইসঙ্গে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

পাকিস্তান ডোমিনিয়ন –

  • তীব্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার মুসলিম লিগের পৃথক পাকিস্তানের দাবি মেনে নেয় এবং ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করতে বাধ্য হয়।
  • 1947 খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা আইন পাস হলে এই আইনানুযায়ী 14 আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল হন মহম্মদ আলি জিন্না।

কী কারণে 1950 খ্রিস্টাব্দের 26 জানুয়ারি ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয়?

1950 খ্রিস্টাব্দের 26 জানুয়ারি দিনটি ভারতবাসীর কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওইদিন থেকে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।

1950 খ্রিস্টাব্দের 26 জানুয়ারি –

ডঃ বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্বে রচিত খসড়া সংবিধান 1949 খ্রিস্টাব্দের 26 নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত হয়। কিন্তু নেতৃবৃন্দ ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা স্মরণ করে এর দু-মাস পরে 26 জানুয়ারি সংবিধান কার্যকরী করে। এই কারণে 1950 খ্রিস্টাব্দের 26 জানুয়ারি দিনটি ভারত ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।

ভারতীয় স্বাধীনতা আইন (1947 খ্রিস্টাব্দ)-এ দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে কী বলা হয়?

দেশীয় রাজ্যগুলির বিষয়ে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন –

ভারতীয় স্বাধীনতা আইনে দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে বলা হয় যে, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে দেশীয় রাজ্যের সঙ্গেও ব্রিটিশ সরকারের চুক্তির অবসান ঘটবে। তারপর দেশীয় রাজ্যগুলির শাসকদের ইচ্ছানুসারে সেগুলি স্বাধীন থাকতে পারবে অথবা ভারত বা পাকিস্তান যে-কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগদান করতে পারবে।

দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতি ক্লিমেন্ট এটলির ঘোষণা কী ছিল?

ব্রিটিশ সরকার প্রণীত 1947 খ্রিস্টাব্দের ‘ভারতীয় স্বাধীনতা আইন’-এ দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে বলা হয়, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে তাদের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের চুক্তির অবসান ঘটবে। তারপর তারা ইচ্ছা করলে স্বাধীন থাকতে পারবে অথবা ভারত বা পাকিস্তান যে-কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগদান করতে পারবে।

ক্লিমেন্ট এটলির ঘোষণা –

  • ভারতীয় স্বাধীনতা আইনসংক্রান্ত বিলটি আলোচনার সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলি ঘোষণা করেন যে, ব্রিটিশ সরকার দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব স্বীকার করবে না।
  • এই দেশীয় রাজ্যগুলির উচিত ভারত বা পাকিস্তান যে-কোনো একটির সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যাওয়া।

দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে দেশভাগের পরে কী ধরনের মনোভাব গড়ে উঠেছিল?

দেশীয় রাজ্যগুলির মনোভাব –

  • স্বাধীন সত্তা – মন্ত্রীমিশন প্রস্তাব, এটলির ফেব্রুয়ারি ঘোষণা এবং ভারতের স্বাধীনতা আইনে দেশীয় রাজ্যের উপর ব্রিটিশ প্রভুত্বের অবসানের কথা বলা হয়েছিল। তাই দেশীয় রাজারা স্বাধীন সত্তা ফিরে পাওয়ায় আনন্দিত হয়।
  • স্বৈরতন্ত্রী শাসন – দেশীয় শাসকেরা ব্রিটিশ সরকারের সামন্তস্বরূপ ছিলেন। স্বাধীনতা লাভ করে তারা তাদের আগের স্বৈরতন্ত্রী শাসন পুনরায় শুরু করা মনস্থ করেন। দেশভাগের পর দেশীয় রাজাদের এই ধরনের মনোভাব আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্ম দিয়েছিল।

দেশীয় রাজ্য দপ্তর কেন খোলা হয়?

1947 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের পর একমাত্র জুনাগড়, জম্মু ও কাশ্মীর এবং হায়দরাবাদ ছাড়া বাকি সব দেশীয় রাজ্য ভারতবর্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়। এসময় সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে দেশীয় রাজ্য দপ্তর খোলা হয়।

দেশীয় রাজ্য দপ্তর –

  • দেশীয় রাজ্য দপ্তর খোলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল, আইনসম্মতভাবে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতীয় রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করা।
  • এ ছাড়াও দেশীয় রাজ্যের রাজাদের বিশাল ভাতা, খেতাব ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করাও ছিল এই দপ্তরের অন্যতম উদ্দেশ্য।

ভারতের লৌহমানব কাকে ও কেন বলা হয়?

অথবা, বল্লভভাই প্যাটেলকে কেন ভারতের বিসমার্ক বলা হয়?

স্বাধীন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘ভারতের লৌহমানব’ বলা হয়।

প্যাটেলকে লৌহমানব/ভারতের বিসমার্ক বলার কারণ –

  • চারিত্রিক দৃঢ়তা – তাঁর অসামান্য চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মানসিক শক্তি তাঁকে ‘লৌহমানব’ অভিধা প্রদান করে।
  • সংযুক্তি দলিল – লর্ড মাউন্টব্যাটেন, ভি পি মেনন -এর সহযোগিতায় তৈরি সংযুক্তি দলিলে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বহু দেশীয় রাজ্যকে স্বাক্ষরদানে বাধ্য করেন।
  • যুদ্ধনীতি – জুনাগড়, হায়দরাবাদ ও কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করতে তিনি যুদ্ধনীতি অবলম্বন করেন।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতীয়করণের ক্ষেত্রে তাঁর এই দৃঢ় মানসিকতার জন্য তাঁকে ‘ভারতের লৌহমানব’ বলা হয়। ঐক্যবদ্ধ জার্মানি গঠনের ক্ষেত্রে বিসমার্ক যে ভূমিকা পালন করেছিলেন, ভারতে অনুরূপ ভূমিকা পালনের জন্য সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘ভারতের বিসমার্ক’-ও বলা হয়।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি দলিল বলতে কী বোঝায়?

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি দলিল (Instrument of Accession) –

1947 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট ভারত স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা লাভের পর ভারত যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম প্রধান সমস্যা ছিল দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি সংক্রান্ত সমস্যা।

ভারতে ব্রিটিশ-আশ্রিত ও স্বাধীন দেশীয় রাজ্যগুলির সংখ্যা ছিল 562টি। এই রাজ্যগুলিকে ভারত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ভারতভুক্তি দলিল বা Instrument of Accession নামক শর্তযুক্ত একটি চুক্তিপত্র তৈরি করেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। দেশীয় রাজ্যগুলি ভাতা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা লাভের বিনিময়ে ভারতভুক্তি দলিলে স্বাক্ষর করে।

দেশীয় রাজ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ভারত একটি বিশাল ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সুদৃঢ় হয়।

স্বাধীনতার পরবর্তীকালে কোন্ কোন্ দেশীয় রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়?

স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ভারতভুক্ত রাজ্যসমূহ –

স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে তিনটি দেশীয় রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই তিনটি দেশীয় রাজ্য হল –

  1. জুনাগড়,
  2. হায়দরাবাদ এবং
  3. কাশ্মীর।

এই তিনটি দেশীয় রাজ্যকে ভারতভুক্ত করতে ভারত সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানে চলে যান কেন?

কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের সৌরাষ্ট্র উপকূলে অবস্থিত একটি ছোটো দেশীয় রাজ্য হল জুনাগড়। এই রাজ্যের প্রায় 80 শতাংশ জনগণ ছিল হিন্দু এবং নবাব ছিলেন মুসলমান।

1947 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে এই পরিস্থিতিতে জুনাগড়ে প্রজাবিদ্রোহ শুরু হয় এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী সেখানে প্রবেশ করে। ফলে নবাব এই সময় সপরিবারে পাকিস্তানে আশ্রয় নেন।

জুনাগড় কবে, কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?

সৌরাষ্ট্র উপকূলে অবস্থিত জুনাগড় রাজ্যের শাসক মুসলমান হলেও প্রজারা বেশিরভাগই ছিল হিন্দু।

জুনাগড়ে সেনাবাহিনীর অভিযান –

জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলেও প্রজারা চেয়েছিল ভারতবর্ষের সঙ্গে যুক্ত হতে। এই অবস্থায় বল্লভভাই প্যাটেলের নির্দেশে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী জুনাগড় অধিকার করে।

জুনাগড়ের ভারতভুক্তি –

এরপর 1948 খ্রিস্টাব্দের 20 ফেব্রুয়ারি গণভোটের মাধ্যমে জুনাগড় আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছোয় এবং অবিলম্বে এই রাজ্যটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

স্বাধীনতার পরে কাশ্মীরের রাজার মনোভাব কী ছিল?

স্বাধীনতার পরে কাশ্মীরের রাজার মনোভাব –

ভারতের স্বাধীনতার আগে এবং পরে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং -এর মনোভাব ছিল –

  • সমদূরত্ব বজায় রাখা – ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভারত প্রতিবেশী হলেও রাজা হরি সিং কোনো পক্ষেই যোগ না দিয়ে সমদূরত্ব বজায় রাখেন।
  • স্বাধীন সত্তা – রাজা হরি সিং কাশ্মীর এবং নিজের স্বাধীনতা বজায় রাখার পক্ষপাতী ছিলেন। ফলত, তিনি সংযুক্তি দলিলে স্বাক্ষর করেননি এবং বড়োলাট মাউন্টব্যাটেন -এর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেননি।

কী পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন?

অথবা, কাশ্মীর কীভাবে ভারতভুক্ত হয়?

ভারতের স্বাধীনতা লাভের পূর্বে কাশ্মীর ছিল একটি দেশীয় রাজ্য। ব্রিটিশদের প্রতি অনুগত থাকার কারণে ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগের সময় দেশীয় রাজ্য হিসেবে কাশ্মীরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।

হরি সিং কর্তৃক ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর/কাশ্মীরের ভারতভুক্তি –

1947 খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় কাশ্মীরের রাজা ছিলেন হরি সিং। তিনি ভারত বা পাকিস্তান কোনো রাষ্ট্রে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু 1947 খ্রিস্টাব্দের 22 অক্টোবর পাকিস্তানের মদতপুষ্ট হানাদার বাহিনী কাশ্মীর আক্রমণ করলে রাজা হরি সিং 26 অক্টোবর ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন।

এরপর ভারতীয় সেনাবাহিনী হানাদারদের হটিয়ে কাশ্মীরের দুই-তৃতীয়াংশ ভারতভুক্ত করে।

কাশ্মীর কীভাবে ভারতভুক্ত হয়?

কাশ্মীর সম্পর্কে ন্যাশনাল কনফারেন্সের ভূমিকা কী ছিল?

1947 খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের অন্যতম প্রধান সমস্যা ছিল দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির সমস্যা। এর মধ্যে সর্বাপেক্ষা জটিল সমস্যা সৃষ্টি হয় কাশ্মীরের ভারতভুক্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। কাশ্মীরে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল ছিল ন্যাশনাল কনফারেন্স।

ন্যাশনাল কনফারেন্সের ভূমিকা –

  • কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং 1947 খ্রিস্টাব্দের 26 অক্টোবর ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করলে কাশ্মীরের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স তা সমর্থন করে।
  • 31 অক্টোবর কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা শেখ আবদুল্লা-র নেতৃত্বে আপৎকালীন শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।

আজাদ কাশ্মীর কী?

আজাদ কাশ্মীর –

1947 খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় কাশ্মীর ছিল একটি দেশীয় রাজ্য। এই সময় কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারত বা পাকিস্তান কোনো রাষ্ট্রে যোগদান না করে স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। এই অবস্থায় 1947 খ্রিস্টাব্দের 22 অক্টোবর পাকিস্তানের মদতপুষ্ট হানাদার বাহিনী কাশ্মীর আক্রমণ করে। হরি সিং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরের দুই-তৃতীয়াংশ উদ্ধার করলেও বাকি এক-তৃতীয়াংশ পাকিস্তানের দখলে থাকে। এই অঞ্চলটির নাম দেওয়া হয় আজাদ কাশ্মীর।

লাইন অফ কন্ট্রোল (LOC) কী?

ভারতের উত্তরে ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে অবস্থিত দেশীয় রাজ্য হল কাশ্মীর। এখানকার রাজা হরি সিং স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু পাক হানাদাররা কাশ্মীরে প্রবেশ করলে ভারত কাশ্মীরকে সাহায্য করে। এর বিনিময়ে কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

লাইন অফ কন্ট্রোল (Line of Control, LOC) –

  • 1947 খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর কাশ্মীরের উপর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
  • জাতিপুঞ্জের মধ্যস্থতায় শেষপর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়। কাশ্মীর অঞ্চলে ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা চিহ্নিত করা হয়, যাকে বলা হয় ‘লাইন অফ কন্ট্রোল’ বা LOC।

UNCIP কী?

1947 খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির সমস্যা প্রবল আকার ধারণ করে। এর মধ্যে কাশ্মীরের ভারতভুক্তি-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সর্বাপেক্ষা জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়।

UNCIP –

  • লর্ড মাউন্টব্যাটেনের পরামর্শে ভারত 1947 খ্রিস্টাব্দের 21 ডিসেম্বর জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর সমস্যা উত্থাপন করে।
  • জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ 1948 খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে একটি কমিশন গঠন করে। এই কমিশনই ‘United Nations Commission For India and Pakistan’ বা ‘UNCIP’ নামে পরিচিত।

স্থিতাবস্থা চুক্তি কী?

ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত হায়দরাবাদ রাজ্য ছিল ভারতের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ দেশীয় রাজ্য।

স্থিতাবস্থা চুক্তি –

  • হায়দরাবাদের 85 শতাংশ প্রজা ছিল হিন্দু এবং শাসক নিজাম ছিলেন মুসলমান।
  • হায়দরাবাদে নবাবি আমলের মতো শাসন বজায় রাখার জন্য 1947 খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে ভারত ও হায়দরাবাদের মধ্যে যে চুক্তি সম্পাদিত হয়, তা স্থিতাবস্থা চুক্তি নামে পরিচিত।

‘রাজাকার’ কারা?

রাজাকার –

দেশীয় রাজ্য হায়দরাবাদের শাসক ছিলেন নিজাম ওসমান আলি খান। হায়দরাবাদের শাসক মুসলমান হলেও এখানকার প্রজাদের 85 শতাংশই ছিল হিন্দু এবং তারা ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পক্ষপাতী ছিল। এই সময় নিজাম ওই হিন্দু প্রজাদের দমন করার জন্য একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক সশস্ত্র বাহিনী গঠন করেন, যারা রাজাকার নামে পরিচিত।

এই রাজাকার বাহিনী হায়দরাবাদের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

রাজাকাররা কেন হায়দরাবাদের ভারতভুক্তির বিরোধিতা করে?

মন্ত্রীমিশনের প্রস্তাব, এটলির ফেব্রুয়ারি ঘোষণা এবং কনরাড কর্নফিল্ড (ভারত-সচিব) -এর পরামর্শে হায়দরাবাদে নিজাম স্বাধীনতা বজায় রাখতে মনস্থ করেন। এজন্য তিনি রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলেন।

রাজাকারদের হায়দরাবাদের ভারতভুক্তির বিরোধিতার কারণ –

  • মজলিস ইত্তিহাদ-উল মুসলিমিন -এর নেতা কাশিম রিজভির সাহায্যে নিজাম রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। হায়দরাবাদের নিরাপত্তা রক্ষা, হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার এই বাহিনীর কাজ ছিল।
  • রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষা করাও ছিল সেনাবাহিনীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেহেতু রাজাকাররা ছিল সশস্ত্র বাহিনী সেহেতু তারা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ভারতভুক্তির বিরোধিতা করে।

কোন্ তিনটি ঘটনাপ্রবাহ হায়দরাবাদ রাজ্যটির ভারতভুক্তির প্রেক্ষাপটকে জটিল করে তুলেছিল?

ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে জটিলতা –

1949 খ্রিস্টাব্দে হায়দরাবাদের নিজাম ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করলেও হায়দরাবাদকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ভারত সরকারকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছিল। মূলত তিনটি ঘটনা এর প্রেক্ষাপটকে জটিল করে তোলে।

  • প্রথমত – অভিজাতরা সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান মজলিস-ইত্তিহাদ-উল মুসলিমিন গঠন করে ‘রাজাকার’ নামে এক উগ্র সশস্ত্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাহিনীর মাধ্যমে হায়দরাবাদের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।
  • দ্বিতীয়ত – হায়দরাবাদ প্রদেশ কংগ্রেস নিজামের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ শুরু করেছিল।
  • তৃতীয়ত – কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে তেলেঙ্গানা অঞ্চলে কৃষকশ্রেণির অভ্যুত্থান তীব্র আকার নিয়েছিল। ফলে হায়দরাবাদের ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়।

ভারতের পক্ষে হায়দরাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না কেন?

ভারতের পক্ষে হায়দরাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়ার সমস্যা –

ভারতের পক্ষে হায়দরাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না কারণ –

  • নিজাম-শাসিত বিশাল দেশীয় রাজ্য হায়দরাবাদ নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে। ফলে স্বাধীনতার প্রশ্নে হায়দরাবাদ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
  • ভারতের নিরাপত্তা ও সংহতির কারণে হায়দরাবাদের স্বাধীনতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।

হায়দরাবাদ কীভাবে ভারতভুক্ত হয়?

হায়দরাবাদ রাজ্যের ভারতভুক্তি –

ভারতের নিরাপত্তা ও সংহতি রক্ষার জন্য হায়দরাবাদের ভারতভুক্তি অত্যন্ত জরুরি ছিল। তাই জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দরাবাদ দখল করে। হায়দরাবাদের নিজাম ওসমান আলি ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করলে 1950 খ্রিস্টাব্দের 26 জানুয়ারি হায়দরাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

হায়দরাবাদের ভারতভুক্তির গুরুত্ব কী?

1949 খ্রিস্টাব্দে হায়দরাবাদের নিজাম ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন। 1950 খ্রিস্টাব্দের 26 জানুয়ারি হায়দরাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতভুক্ত হয়।

হায়দরাবাদের ভারতভুক্তির গুরুত্ব –

হায়দরাবাদের ভারতভুক্তি ভারতের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি ছিল। হায়দরাবাদ ও অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানরা নিজামের শাসনের বিরুদ্ধে ভারত সরকারকে সমর্থন করে। তাই প্রকৃতপক্ষে হায়দরাবাদের ভারতভুক্তি ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার জয় সূচিত করে।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ফলাফল কী ছিল?

1947 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়। ভারতের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক কারণে এইসব দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি প্রয়োজনীয় ছিল।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ফলাফল –

  • দেশীয় রাজ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ভারত একটি বিশাল ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সুদৃঢ় হয়।
  • দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ফলে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত রাজ্যগুলির ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক ঐক্য সুদৃঢ় রূপ ধারণ করে।

ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে কোন্ কোন্ স্থানে ফ্রান্স ও পোর্তুগালের উপনিবেশ ছিল?

অথবা, স্বাধীন ভারতের কোথায় কোথায় বিদেশি উপনিবেশ ছিল?

1947 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার কর্তৃক ভারতকে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরেও ভারতের কিছু কিছু অঞ্চল অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তির দখলে ছিল।

স্বাধীন ভারতে বিদেশি উপনিবেশ –

স্বাধীন ভারতে প্রধান দুটি বিদেশি ঔপনিবেশিক শক্তি ছিল – ফ্রান্স ও পোর্তুগাল।

  • ফ্রান্স – বাংলার চন্দননগর, মাদ্রাজের পন্ডিচেরি এবং মালাবার উপকূলের মাহে ছিল ফরাসি উপনিবেশ।
  • পোর্তুগাল – ভারতের পশ্চিম উপকূলে গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি পোর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে ফরাসি উপনিবেশগুলি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়?

স্বাধীন ভারতে ফরাসি উপনিবেশ –

ভারত স্বাধীন হওয়ার পরেও চন্দননগর, মাহে, কারিকল ও পণ্ডিচেরিতে ফরাসি উপনিবেশ ছিল।

স্বাধীন ভারতে ফরাসি উপনিবেশের ভারতভুক্তি –

ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ফরাসি সরকার 1954 খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে তাদের অধিকৃত অঞ্চলগুলি ভারতকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর পোর্তুগিজ উপনিবেশগুলি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়?

স্বাধীন ভারতে পোর্তুগিজ উপনিবেশ –

ভারত স্বাধীন হওয়ার পরেও পোর্তুগাল তার অধীনস্থ ভারতের উপনিবেশগুলি ত্যাগ করতে রাজি ছিল না। গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি ছিল পোর্তুগিজ উপনিবেশ।

পোর্তুগিজ উপনিবেশের ভারতভুক্তি –

1954 খ্রিস্টাব্দে দাদরা ও নগর হাভেলির জাতীয়তাবাদী গোমন্তক দল আন্দোলনের মাধ্যমে পোর্তুগিজ শাসনের অবসান ঘটায়।

1961 খ্রিস্টাব্দে গোয়া, দমন ও দিউ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

গোয়া কীভাবে ভারতভুক্ত হয়?

1947 খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতে অন্তর্ভুক্তি ছাড়াও ফরাসি ও পোর্তুগিজ উপনিবেশগুলির ভারতভুক্তি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

গোয়ার ভারতভুক্তি –

জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরী-র নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী 1961 খ্রিস্টাব্দে গোয়া আক্রমণ করে এবং পরাজিত গোয়া ভারতভুক্তির চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য হয়।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সম্পর্কে গান্ধিজির কী মনোভাব ছিল?

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিষয়ে গান্ধিজির মনোভাব –

1946 খ্রিস্টাব্দে ভারতের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে গান্ধিজি বলেন, ‘আমি আমার জীবন দিয়ে এর সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই। ভারতের রাস্তায় রাস্তায় মুসলমানদের হামাগুড়ি দেওয়াটা আমি বরদাস্ত করব না, তারা অবশ্যই আত্মমর্যাদার সঙ্গে হাঁটবেন।’ দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকাগুলি তিনি ঘুরে দেখতেন এবং গাইতেন ‘ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম, সবকো সন্মতি দে ভগবান।’

কোন্ ঘটনা কেন বিশ্ব ইতিহাসে বৃহত্তম গণ পরিযান নামে পরিচিত?

1947 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট দ্বিখণ্ডিত হয়ে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। বাংলা ভাগ হয় এবং পূর্ব বাংলাকে নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান গঠিত হয়। দেশভাগের এই ঘটনা সাধারণ মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল।

বিশ্ব ইতিহাসে বৃহত্তম গণ পরিযান –

1947 খ্রিস্টাব্দের দেশভাগ ও সীমানা নির্ধারিত হলে ভারতে মুসলিম ও পাকিস্তানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। এই সময় ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া মুসলিমরা পাকিস্তানে এবং পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুরা ভারতে সহায়সম্বলহীন অবস্থায় আশ্রয় নেয়। এভাবে উদবাস্তু সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই ঘটনাই বিশ্ব ইতিহাসে ‘বৃহত্তম গণ পরিযান’ নামে পরিচিত।

কীভাবে উদবাস্তু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল?

1946 খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িক হানাহানি, 1947 খ্রিস্টাব্দের দেশভাগ, নিরাপত্তার অভাব প্রভৃতি ঘটনা ও আতঙ্ক বিপুল সংখ্যক মানুষকে বাস্তুহারা করে।

উদবাস্তু সমস্যার সৃষ্টি –

দেশভাগ ও সীমানা নির্ধারিত হলে ভারতে মুসলিম ও পাকিস্তানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করে।

এইসব কারণে ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া মুসলিমরা পাকিস্তানে এবং পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুরা ভারতে সহায়সম্বলহীন অবস্থায় আশ্রয় নেয়। এভাবে উদবাস্তু সমস্যার সৃষ্টি হয়।

উদবাস্তু শিবির কী?

1947 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট দেশভাগ ও সীমানা নির্ধারিত হলে ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া মুসলিমরা পাকিস্তানে এবং পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুরা ভারতে আশ্রয় নেয়। এভাবে উদবাস্তু সমস্যা প্রবল হয়ে ওঠে।

উদবাস্তু শিবির –

  • নিজ দেশের শিকড় থেকে ছিন্নমূল হয়ে আসা উদবাস্তুদের জন্য ভারত সরকারের তরফ থেকে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের জন্য যে অস্থায়ী কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল, তা উদবাস্তু শিবির নামে পরিচিত।
  • উদবাস্তু শিবিরগুলি অনেকক্ষেত্রেই ছিল অপরিচ্ছন্ন। পানীয় জলের অভাবও দেখা দিত। ক্রমশ উদবাস্তুরা বেসরকারি পতিত জমি দখল করে বাসস্থান গড়ে তোলে।

উদবাস্তু শিবিরের উদবাস্তুরা মূলত কী কী সরকারি সহায়তা পেত?

স্বাধীনতার পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদবাস্তু জনস্রোত পশ্চিমবাংলায় প্রবেশ করে। পুনর্বাসন সমস্যা প্রবল হয়ে ওঠে। ব্যক্তিগত ও সরকারি উদ্যোগে এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয়।

উদবাস্তু শিবিরের উদবাস্তুর সরকারি সাহায্য –

  • উদবাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার প্রায় 75,000 উদবাস্তুকে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় দেয়। পোশাক, খাদ্য, প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়।
  • কলকাতাসংলগ্ন অঞ্চলে বহুসংখ্যক কলোনি তৈরি করা হয়, সেখানেও বেশ কিছু উদবাস্তুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।

উদবাস্তু সমস্যা ভারতের অর্থনীতিতে কীরূপ সংকটের সৃষ্টি করে?

1947 খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত ভারত বিভক্ত হয়ে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। আতঙ্ক ও সাম্প্রদায়িক হানাহানির কারণে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুরা বেশিরভাগ পশ্চিমবাংলায় এবং পাকিস্তানের হিন্দুরা পাঞ্জাবের বিভিন্ন অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। এই বিপুল সংখ্যক উদবাস্তুদের আগমনের ফলে ভারতের অর্থনীতিতে বিভিন্ন সংকটের সৃষ্টি হয়।

উদবাস্তু সমস্যার ফলে ভারতের অর্থনীতির সংকট –

  • জনসংখ্যাবৃদ্ধি – উদবাস্তু সমস্যার ফলে ভারতের জনসংখ্যার উপর বিপুল চাপ সৃষ্টি হয়, যা সদ্য স্বাধীন ভারতের অর্থনৈতিক সংকটকে তীব্রতর করে তোলে।
  • বিপুল অর্থব্যয় – উদবাস্তুদের পুনর্বাসন ও ত্রাণ সাহায্য দেওয়ার জন্য সরকারের প্রচুর অর্থব্যয় হয়।
  • বেকারত্ব বৃদ্ধি – বিপুল সংখ্যক উদবাস্তুদের আগমনের ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়।

ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পূর্ব পাকিস্তানের উদবাস্তু সমস্যাসমাধানের জন্য কী দাবি করেছিলেন?

ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের দাবি –

দেশভাগের পর 1950 খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলি খান একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার লক্ষ্য ছিল উদবাস্তু স্রোত কমানো। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, এই চুক্তি যথেষ্ট কঠোর নয়। পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানকার হিন্দুরা পশ্চিমবাংলায় আশ্রয় নিতে চাইলে তাদের সরকারি সুযোগসুবিধা দিতে হবে। উদবাস্তু হিসেবে নয়, তাদের সহায়সম্পদ সঙ্গে নিয়ে আসার অধিকার দিতে হবে।

পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুদের পরিপ্রেক্ষিতে এই দাবিগুলি অযৌক্তিক ছিল না। কিন্তু তা সঠিক পথে রূপায়িত হয়নি।

উদবাস্তু সমস্যার জন্য বাংলার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল?

বাংলায় উদবাস্তু সমস্যার প্রভাব –

উদবাস্তু সমস্যার জন্য বাংলার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নানান পরিবর্তন ঘটেছিল।

  • প্রথমত – জনসংখ্যার চাপ প্রবলভাবে বেড়েছিল।
  • দ্বিতীয়ত – উদবাস্তুদের উদ্যোগে অনেক নতুন পল্লি ও কলোনি গড়ে উঠেছিল।
  • তৃতীয়ত – শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি ও অন্যান্য সমাজকল্যাণমূলক কাজে উদবাস্তুদের উদ্যোগ নতুন গতির সঞ্চার করে।
  • চতুর্থত – বামপন্থী রাজনীতি উদবাস্তুদের কারণে নানাভাবে প্রভাবিত হয়।

দেশভাগজনিত হিংসা বন্ধ ও উদবাস্তু সমস্যার সমাধানে মহাত্মা গান্ধির প্রচেষ্টা কী ছিল?

দেশভাগজনিত হিংসার অবসান ও উদবাস্তু সমস্যার সমাধানে মহাত্মা গান্ধির ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যথা –

  • সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবিধ্বস্ত কলকাতার বেলেঘাটা অঞ্চলে গান্ধিজি বেশ কিছুদিন অনশন করেন। এর মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা ও হানাহানির বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
  • হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছিলেন।

দেশভাগের প্রেক্ষাপটে লেখা আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথামূলক বাংলা গ্রন্থগুলিতে দেশভাগের সঙ্গে যুক্ত কোন্ কোন্ বিষয় আলোচিত হয়েছে?

1947 খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতাপ্রাপ্তি ও দেশভাগের পর অসংখ্য মানুষকে উদবাস্তু সমস্যার নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। সমকালীন বিভিন্ন মানুষের আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় দেশভাগের যন্ত্রণার বিষয়টি ফুটে ওঠে।

আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথামূলক বাংলা গ্রন্থসমূহে দেশভাগের বর্ণনা –

  • দেশভাগের প্রেক্ষাপটে লেখা বাংলা গ্রন্থগুলি থেকে দেশভাগ সংক্রান্ত আনন্দ, দুঃখ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হত্যা, লুঠতরাজ এবং উদবাস্তুদের যন্ত্রণাময় জীবনের কথা জানা যায়।
  • এ ছাড়া উদবাস্তুদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, বিভিন্নভাবে মানুষের মানবিকতা ও মূল্যবোধের চিত্রও ফুটে উঠেছে বিভিন্ন লেখায়।

প্রান্তিক মানব কোন্ স্মৃতিকে তুলে ধরেছে?

প্রান্তিক মানব হল The Marginal Men -এর বাংলা অনুবাদ গ্রন্থ। অধ্যাপক প্রফুল্ল কুমার চক্রবর্তী দেশভাগের স্মৃতিতে এই গ্রন্থটি রচনা করেন।

প্রান্তিক মানব –

দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দুরা দলে দলে পশ্চিমবাংলায় আশ্রয় নেয়। নিরাপত্তার অভাববোধ, অজানা আশঙ্কা, চলার পথে দুঃখকষ্ট এবং ছিন্নমূল হওয়ার পর প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার চেষ্টা প্রভৃতি অনুভূতির বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনায় সমৃদ্ধ এই গ্রন্থ। ক্রমবর্ধমান উদবাস্তুর সংখ্যাও এই গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়।

দেশভাগের যন্ত্রণা, দুঃখকষ্টের স্মৃতি এই গ্রন্থ তুলে ধরেছে।

দক্ষিণারঞ্জন বসুর ছেড়ে আসা গ্রাম গ্রন্থে কোন্ বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে?

লেখক দক্ষিণারঞ্জন বসু তাঁর ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’ গ্রন্থে অতীত জীবনের স্মৃতিচারণা করেছেন।

দক্ষিণারঞ্জন বসুর ছেড়ে আসা গ্রাম গ্রন্থের বিষয়বস্তু –

  • স্মৃতিচারণা – এই গ্রন্থে লেখক উদবাস্তুদের অতীত জীবনের কাহিনি স্মৃতিচারণার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।
  • ঐক্য ও সংহতি – এই গ্রন্থে দুই সম্প্রদায়ের (হিন্দু-মুসলমান) ঐক্য ও সংহতির কাহিনিও বর্ণিত হয়েছে।

‘পুনর্বাসনের যুগ’ বলতে কী বোঝায়?

পুনর্বাসনের যুগ –

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী বা উদবাস্তু ভারতে চলে আসে। ফলে ভারতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। স্বাধীন ভারত সরকার প্রথম পাঁচ বছর উদবাস্তুদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে এই সমস্যাসমাধানে উদ্যোগী হয়। এজন্য এই সময়কে পুনর্বাসনের যুগ বলা হয়।

পাঞ্জাব-সহ উত্তর-পশ্চিম ভারতে পাকিস্তান থেকে আসা উদবাস্তুদের পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ সহজে সুসম্পন্ন হয়েছিল কেন?

1947 খ্রিস্টাব্দের দেশভাগের পরে পরেই পাঞ্জাব-সহ উত্তর-পশ্চিম ভারতে পাকিস্তান থেকে আসা উদবাস্তুদের পুনর্বাসনের কাজ সহজেই সম্পন্ন হয়েছিল, কারণ –

  • প্রথমত – এখানে শরণার্থীরা 2/3 বছরের মধ্যেই এসে গিয়েছিল।
  • দ্বিতীয়ত – উদবাস্তুদের সংখ্যা সম্পর্কে সরকার সুনিশ্চিত হতে পেরেছিল।
  • তৃতীয়ত – পাকিস্তানে চলে যাওয়া মুসলমানদের ফেলে যাওয়া জমিজমা, ঘরবাড়ি উদবাস্তুদের পুনর্বাসনের কাজে লেগেছিল।
  • চতুর্থত – ভাষাগত সাদৃশ্যের কারণে শরণার্থীদের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, রাজস্থান ও যুক্তপ্রদেশে পুনর্বাসন দেওয়াও সহজ হয়েছিল।

পাঞ্জাব ও বাংলায় উদবাস্তু সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রকৃতিগত পার্থক্য কী ছিল?

উদবাস্তু সমস্যার সমাধানকল্পে প্রকৃতিগত পার্থক্য –

পাঞ্জাব উদবাস্তু –

  1. পশ্চিম পাকিস্তানের উদবাস্তুদের পূর্ব পাঞ্জাবের পাশাপাশি হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও দিল্লিতেও পুনর্বাসন দেওয়া হয়। ফলে পাঞ্জাবের উপর চাপ কম পড়ে।
  2. পূর্ব পাঞ্জাবের মুসলমানদের ফেলে যাওয়া জমি-বাড়ি তারলোক সিং -এর তত্ত্বাবধানে উদবাস্তুদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।
  3. কেন্দ্রীয় সাহায্যে ফরিদাবাদ শহর গড়ে ওঠে এবং ব্যাবসার জন্য ঋণদান করা হয়।

বাংলা উদবাস্তু –

  1. পূর্ব পাকিস্তানের উদবাস্তুরা ভাষাগত মিল থাকার জন্য অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রধানত পশ্চিমবাংলাতেই বেশি আশ্রয় নেয়, ফলে বাংলার উপর উদবাস্তুদের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়।
  2. বাংলায় কোনোরকম জমি বণ্টন করা হয়নি এবং কেন্দ্রীয় সাহায্যও প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিল।
  3. দীর্ঘকাল ধরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদবাস্তুদের আগমন অব্যাহত থাকে।

বাংলায় উদবাস্তু পুনর্বাসনের মূল ত্রুটি উল্লেখ করো।

উদবাস্তু পুনর্বাসনের ত্রুটি –

দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিমবাংলায় আসা উদবাস্তুদের পুনর্বাসনের ত্রুটিগুলি হল –

  • ত্রাণনির্ভর – উদবাস্তুদের মূলত ত্রাণ সাহায্য দেওয়া হয়, পুনর্বাসন দেওয়া হয় খুব ধীর গতিতে।
  • অর্থাভাব – উদবাস্তুদের পুনর্বাসনে পাঞ্জাবের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ অনেক কম অর্থ পেয়েছিল।
  • জমি বন্টন – পাঞ্জাবে প্রতি উদবাস্তু পরিবার 10 একর জমি পেলেও পশ্চিমবঙ্গে এর পরিমাণ ছিল অনেক কম। কিন্তু পশ্চিমবাংলার উদবাস্তুদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে এইসব ত্রুটি সত্ত্বেও বহু অসুবিধা ও বাধা দূর করে বেসরকারি ও সরকারি সাহায্যে পুনর্বাসন সমস্যার কিছুটা সমাধান করা হয়।

পশ্চিম বাংলায় উদবাস্তু পুনর্বাসনে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের ভূমিকা লেখো।

পশ্চিম বাংলায় উদবাস্তু পুনর্বাসনে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের ভূমিকা –

  • আবাসন – উদবাস্তু পুনর্বাসনের জন্য তিনি কল্যাণী, দুর্গাপুর প্রভৃতি শহর তৈরি করেন। বিভিন্ন কলোনি ও আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলেন।
  • কর্মসংস্থান – কয়েকটি শিল্পাঞ্চলে উদবাস্তুদের নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন বিভাগে (জরিপ, ভূমিরাজস্ব, পুলিশ) উদবাস্তুদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেন। ত্রাণের ব্যবস্থাও করেন তিনি।
পশ্চিম বাংলায় উদবাস্তু পুনর্বাসনে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের ভূমিকা লেখো।

ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় সরকারেরসাহায্য লাভেরও চেষ্টা করেন। এককথায়, পশ্চিমবাংলায় উদবাস্তু পুনর্বাসনে ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের ভূমিকা ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

1950 খ্রিস্টাব্দে কেন নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল?

1947 খ্রিস্টাব্দে ভারত ভাগের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান থেকে প্রায় 1 কোটি মানুষ উদবাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নিলে উদবাস্তু সমস্যার সমাধানের জন্য তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলি খান -এর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে 1950 খ্রিস্টাব্দের 8 এপ্রিল জওহরলাল নেহরু ও লিয়াকৎ আলি খান -এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি নামে পরিচিত।

1950 খ্রিস্টাব্দে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল কারণ –

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি’ স্বাক্ষরের কারণগুলি হল নিম্নরূপ –

  • উদবাস্তুদের নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে উৎসাহদান করা এবং পূর্ববঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে কেউ যদি অন্য দেশে শরণার্থী হতে চায় তবে তাকে সাহায্য করা।
  • ভারত ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে ভবিষ্যৎ দাঙ্গার সম্ভাবনাকে প্রতিহত করা।
  • পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীসভায় সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নিয়োগ করা বিষয়ে আলাপ-আলোচনা ইত্যাদি।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির শর্ত কী ছিল?

1950 খ্রিস্টাব্দের 8 এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলি খানের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তা নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি নামে পরিচিত।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির শর্ত –

  • সংখ্যালঘুরা যে রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করবে তারা সেই রাষ্ট্রের কাছেই প্রতিকার চাইবে।
  • পূর্ববঙ্গ, পশ্চিমবাংলা ও আসাম থেকে যদি কেউ অন্য দেশে শরণার্থী হতে চায় তবে তাকে সাহায্য করা হবে।
  • ভারত ও পাকিস্তান উদবাস্তু সমস্যার কারণ ও উদবাস্তুদের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য অনুসন্ধান কমিটি ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করবে।

ইন্ডিয়ান কো-অপারেটিভ ইউনিয়ন (Indian Co- operative Union) মূলত কোন্ কাজ করেছিল? কে এই সংগঠনে নেতৃত্ব দেন?

ইন্ডিয়ান কো-অপারেটিভ ইউনিয়ন (Indian Co- operative Union) -এর কাজ –

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর পাঞ্জাব ও সন্নিহিত অঞ্চলের উদবাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সংগঠন ছিল ইন্ডিয়ান কো-অপারেটিভ ইউনিয়ন।

ইন্ডিয়ান কো-অপারেটিভ ইউনিয়ন (Indian Co- operative Union) -এর নেতৃত্ব –

এই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়। ‘ইন্ডিয়ান কো-অপারেটিভ ইউনিয়ন’ -এর উদ্যোগে ভারতে দোকানপাট ও ছোটো ছোটো শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছিল।

কবে, কেন ইন্টার-ডোমিনিয়ন কনফারেন্স (Inter-Dominion Conference) অনুষ্ঠিত হয়?

ইন্টার-ডোমিনিয়ন কনফারেন্স (Inter-Dominion Conference) বা আন্তঃডোমিনিয়নসম্মেলন –

  • সংগঠনকাল – 1948 খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
  • সংগঠনের কারণ –
    • বিপুল সংখ্যক উদবাস্তু স্রোত যাতে সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের (হিন্দু-মুসলমান) অবনতি না ঘটায়।
    • দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে যাতে তিক্ততার সৃষ্টি না হয় ইত্যাদি কারণে এই সম্মেলন আহূত হয়।

এই সম্মেলনের পর উদবাস্তু স্রোত হ্রাস পায়। সরকার সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ সম্পন্ন করে।

স্বাধীনতা লাভের প্রথম দিকে কংগ্রেস সরকার ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের দাবি মেনে নেয়নি কেন?

কংগ্রেস কর্তৃক ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের দাবি না মানার কারণ –

  • জাতীয় ঐক্য – দর কমিশনের প্রতিবেদনে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা করা হয়।
  • প্রশাসনিক সমস্যা – ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের জন্য ব্যাপক প্রশাসনিক রদবদলের প্রয়োজন ছিল, সেই মুহূর্তে যা সম্ভব ছিল না।
  • প্রাদেশিক সমস্যা – ভাষাভিত্তিক নতুন প্রদেশের সীমানা, স্থান বিন্যাস, স্থানীয় শাসনকেন্দ্রের রদবদল প্রভৃতি সমস্যার আশঙ্কা ছিল।

ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের পিছনে যুক্তিগুলি কী?

ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের সপক্ষে যুক্তি –

ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের সপক্ষে যুক্তিগুলি হল –

  • জনশিক্ষা প্রসারের সুবিধা হবে।
  • আঞ্চলিক ভাষাগুলির ব্যবহার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজকর্মে গতি বৃদ্ধি করবে।
  • মাতৃভাষায় শিক্ষার প্রসার ঘটবে এবং বিচারব্যবস্থার উন্নতি হবে।

দর কমিশন (1948 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল?

অথবা, ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন (Linguistic Provinces Commission) গঠনের উদ্দেশ্য কী ছিল?

ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন বা দর কমিশন –

ভারতে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন কতখানি কাম্য তা অনুসন্ধানের জন্য 1948 খ্রিস্টাব্দে গণপরিষদ একটি ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন নিয়োগ করে। বিচারপতি এস কে দর এই কমিশনের নেতৃত্ব দেন। তাই একে দর কমিশন বলা হয়।

ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন বা দর কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য –

  • যৌক্তিকতা বিচার – একই ভাষাভাষী মানুষদের নিয়ে এক-একটি প্রদেশ বা রাজ্য গঠন কতটা যুক্তিযুক্ত অথবা এই ধরনের রাজ্য গঠনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না তা বিচার করা এই কমিশন গঠনের একটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।
  • দেশীয় রাজ্যের সংযুক্তি – দেশীয় রাজ্যগুলি ভারত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হলে প্রদেশগুলির সীমা ও আয়তন বদলে যায়। কোনো কোনো প্রদেশে ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের আধিক্য ঘটে। ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন গঠনের মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয়। এই সমস্ত উদ্দেশ্যে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন বা দর কমিশন গঠিত হয়।

1948 খ্রিস্টাব্দে গঠিত ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশনের সুপারিশ কী ছিল?

1948 খ্রিস্টাব্দে বিচারপতি এস কে দর -এর নেতৃত্বে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন গঠিত হয়।

1948 খ্রিস্টাব্দে গঠিত ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশনের সুপারিশসমূহ –

  • ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠন করা হলে জাতীয় ঐক্য নষ্ট হতে পারে।
  • ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন প্রশাসনিক দিক থেকেও অসুবিধাজনক হতে পারে।
  • এর ফলে প্রাদেশিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

পরবর্তীকালে 1949 খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিটিও (Linguistic Provinces Committee) তাদের রিপোর্ট পেশ করে এবং তাতে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠনের বিষয়টি বাতিল করে।

দর কমিশনের গুরুত্ব কী?

দর কমিশন –

ভারতে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন কতখানি কাম্য তা অনুসন্ধানের জন্য 1948 খ্রিস্টাব্দে গণপরিষদ একটি ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন নিয়োগ করে। বিচারপতি এস কেদর এই কমিশনের নেতৃত্ব দেন। তাই একে দর কমিশন বলা হয়।

দর কমিশনের গুরুত্ব –

  • দর কমিশন তার রিপোর্টে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলে যে, এর ফলে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হতে পারে। এমনকি প্রশাসনিক দিক থেকেও তা অসুবিধাজনক।
  • এই কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে গণপরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় যে, সংবিধানে রাজ্য পুনর্গঠনের ভাষাগত সূত্র রাখা হবে না।

জে ভি পি (JVP) কমিটি কী?

জে ভি পি (JVP) কমিটি –

জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল, পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে 1948 খ্রিস্টাব্দে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যদের ইংরেজি নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে এই কমিটিকে জে ভি পি (JVP) কমিটি বলা হয়। এই কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য ছিল ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করা। এই কমিটিও ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের বিরোধিতা করেছিল।

জে ভি পি কমিটি ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের বিষয়ে কী রিপোর্ট দিয়েছিল?

স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের কথা চিন্তা করা হয়।

জে ভি পি কমিটির রিপোর্ট –

  • আঞ্চলিকতা – এই কমিটি তার রিপোর্টে বলে, ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠন করলে রাজ্যে রাজ্যে আঞ্চলিকতা বেড়ে যাবে, জাতীয় ঐক্য বিঘ্নিত হবে।
  • কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে শিথিলতা – আঞ্চলিকতা বেড়ে যাওয়ার ফলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়বে, যা সদ্য স্বাধীন ভারতের পক্ষে কাম্য নয়।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্বন্ধে কী জানো?

ভারত স্বাধীনতা লাভের পর 1948 খ্রিস্টাব্দে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন গঠন করে। কমিশনের রিপোর্ট নেতিবাচক হওয়ায় সরকার রাজ্য পুনর্গঠনের প্রস্তাব বাতিল করে। পরে অন্ত্রের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন করে।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন –

  • প্রতিষ্ঠা – সৈয়দ ফজল আলি (সভাপতি), হৃদয়নাথ কুঞ্জরু, কে এম পানিক্করকে নিয়ে এই কমিশন গঠিত হয় 1953 খ্রিস্টাব্দে।
  • কার্যকলাপ – কমিশন ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলির সীমা নির্ধারণের কথা বলে।

কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারত সরকার 1956 খ্রিস্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠন আইন (States Reorganisation Act) পাস করে।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল?

সদ্য স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু 1953 খ্রিস্টাব্দের 22 ডিসেম্বর রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (States Reorganisation Commission) গঠন করেন।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হওয়ার কারণ –

স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সরকারের প্রধান কাজ ছিল দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করা। দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্ত হওয়ার পর ভাষা সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। 1948 খ্রিস্টাব্দের দর কমিশন ও জে ভি পি কমিটি-র রিপোর্টে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন সমস্যার পুরোপুরি সমাধান সম্ভব হয়নি। নতুনভাবে রাজ্যের সীমানা নির্ধারণের জন্য তাই রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন করা হয়।

রাজ্য পুনর্গঠন আইনে কী স্থির করা হয়?

সৈয়দ ফজল আলি কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে 1956 খ্রিস্টাব্দে পাস হয় রাজ্য পুনর্গঠন আইন (States Reorganisation Act)।

রাজ্য পুনর্গঠন আইন –

রাজ্য পুনর্গঠন আইনানুসারে 14টি রাজ্য ও 6টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের কথা বলা হয়। এ ছাড়াও তেলেঙ্গানা অঞ্চলকে হায়দরাবাদ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অন্ধ্রপ্রদেশের সঙ্গে, সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছকে বোম্বাই রাজ্যের সঙ্গে, মালাবার অঞ্চলকে ত্রিবাঙ্কুর-কোচিনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। পশ্চিমবংলার সঙ্গে বিহারের পূর্ণিয়া জেলার কিছু এলাকা এবং পুরুলিয়া যুক্ত হয়।

1956 খ্রিস্টাব্দের রাজ্য পুনর্গঠন আইন -এর দ্বারা কোন্ কোন্ প্রদেশ গঠিত হয়?

স্বাধীনতা লাভের পর নতুনভাবে ভারতবর্ষের রাজ্যগুলির সীমানা নির্ধারণের জন্য রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন করা হয়।

1956 খ্রিস্টাব্দের রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুসারে গঠিত প্রদেশসমূহ –

  • 1956 খ্রিস্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস হয়। এই আইনে ভারতকে 14টি রাজ্য ও 6টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়।
  • 14টি রাজ্য হল, যথা – পশ্চিমবংলা, পাঞ্জাব, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, মহীশূর, মাদ্রাজ, বোম্বাই, জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান এবং 6টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যথা – দিল্লি, ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ, মণিপুর ও হিমাচল প্রদেশ।

অস্ত্রপ্রদেশ গঠন করা হয় কোন্ প্রেক্ষাপটে?

অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের প্রেক্ষাপট –

  • শ্রীরামালুর অনশন – তামিলভাষী মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি থেকে তেলুগুভাষী অন্ধ্র অঞ্চলের পৃথকীকরণের দাবি ওঠে। ভারত সরকার ওই দাবি অগ্রাহ্য করলে গান্ধিবাদী নেতা পাত্তি শ্রীরামালু এই দাবির সমর্থনে অনশন শুরু করেন এবং 1952 খ্রিস্টাব্দের 19 অক্টোবর 58 দিন অনশনের ফলে তিনি প্রাণত্যাগ করেন।
  • অন্ধ্র ভাষামঞ্চ – এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ও অন্ধ্রপ্রদেশের দাবিতে তেলুগুভাষী 11টি জেলায় ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরু হয়। ‘অন্ধ্র ভাষামঞ্চ’ এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়।

অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের পরিণাম –

এই বিক্ষোভের পরিণামে ভারত সরকার অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে 1952 খ্রিস্টাব্দের 18 ডিসেম্বর। ফলে 1953 খ্রিস্টাব্দের 1 অক্টোবর তেলুগুভাষীদের নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ গঠিত হয়।

পাত্তি শ্রীরামালু কেন স্মরণীয়?

অথবা, পাত্তি শ্রীরামালু কে ছিলেন?

অন্ধ্র অঞ্চলে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের দাবিতে আন্দোলন করে বিখ্যাত হয়েছেন পাত্তি শ্রীরামালু।

পাত্তি শ্রীরামালু স্মরণীয় হওয়ার কারণ –

1952 খ্রিস্টাব্দের 19 অক্টোবর তেলুগু ভাষাভাষীদের জন্য স্বতন্ত্র অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের জন্য দাবি তুলে তিনি আমরণ অনশন শুরু করেন। 58 দিন অনশনের পর তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর অন্ধ্রপ্রদেশ -এর দাবিতে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। এর ফলস্বরূপ ভারত সরকার 18 ডিসেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশ নামে রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং 1953 খ্রিস্টাব্দের 1 অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হয়।

ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের দাবিতে তাঁর এই আন্দোলনের জন্য পাত্তি শ্রীরামালুকে ‘অমরজীবী’ উপাধি দেওয়া হয়।

পাত্তি শ্রীরামালুর আন্দোলনের ফল কী হয়েছিল?

পাত্তি শ্রীরামালু ছিলেন একজন বিশিষ্ট গান্ধিবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী। ভাষাভিত্তিক স্বতন্ত্র অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের দাবিতে আন্দোলনের জন্য তিনি বিশেষভাবে স্মরণীয়।

পাত্তি শ্রীরামালুর আন্দোলনের ফল –

  • পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশের দাবিতে পাত্তি শ্রীরামালু 58 দিন অনশন করে প্রাণত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।
  • এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সৈয়দ ফজল আলি, হৃদয়নাথ কুঞ্জরু, কে এম পানিক্কর-কে নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন করে।
  • এই ঘটনা পরে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট এবং পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশ গঠনের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে।

মারাঠি ভাষা নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সংঘটিত আন্দোলন কী রূপ নেয়?

মারাঠি ভাষা নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে বোম্বাই প্রদেশে আন্দোলন শুরু হয়। মারাঠিভাষী ও গুজরাটিভাষী – এই দুই ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে দাঙ্গার সূচনা হয়।

মারাঠি ভাষা নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সংঘটিত আন্দোলন –

  • এই সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাই পদত্যাগ করেন।
  • এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরা স্থানীয় মানুষ ও নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন। দীর্ঘ আলোচনার পর জনগণের দাবি মেনে নিয়ে বোম্বাই প্রদেশকে বিভক্ত করে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যের সৃষ্টি করা হয়।

মহারাষ্ট্র ও গুজরাট কীভাবে গঠিত হয়?

1956 খ্রিস্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস হয়। এরপর বোম্বাই প্রেসিডেন্সির সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি এবং মহা গুজরাট জনতা পরিষদ যথাক্রমে মারাঠিভাষী ও গুজরাটিভাষী রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করে।

মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যের সৃষ্টি –

  • পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করলে মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাই পদত্যাগ করেন।
  • বহু আলোচনার পর ভারত সরকার 1960 খ্রিস্টাব্দের মে মাসে বোম্বাই প্রেসিডেন্সিকে ভাগ করে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য গঠন করে।

কবে এবং কীভাবে পাঞ্জাব রাজ্যটি ভাগ হয়?

পাঞ্জাব রাজ্যের বিভাজন –

1964 খ্রিস্টাব্দে জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে 1966 খ্রিস্টাব্দে ভাষার ভিত্তিতে পাঞ্জাব রাজ্যটিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলি হল –

  1. শিখ অধ্যুষিত রাজ্য পাঞ্জাব।
  2. হিন্দি ভাষাভাষী জনগণ অধ্যুষিত রাজ্য হরিয়ানা।
  3. পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে গঠিত হিমাচল প্রদেশ।

কবে, কীভাবে হরিয়ানা রাজ্যের সৃষ্টি হয়?

1966 খ্রিস্টাব্দে ভাষার ভিত্তিতে পাঞ্জাব রাজ্যটিকে বিভক্ত করে হরিয়ানা রাজ্যের সৃষ্টি হয়।

হরিয়ানা রাজ্যের সৃষ্টি –

  • পাঞ্জাবের শিখরা গুরুমুখী ভাষা (পাঞ্জাবি) অঞ্চল নিয়ে পাঞ্জাবের সীমানা নির্ধারণ করতে চেয়েছিল।
  • আকালি দল এই দাবিকে সমর্থন জানায়। অন্যদিকে জনসংঘ হিন্দি ভাষা ও হিন্দুদের সমর্থন করে। শেষপর্যন্ত 1966 খ্রিস্টাব্দে হিন্দি ভাষার ভিত্তিতে হরিয়ানা রাজ্য গঠিত হয়।

ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল?

ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের অসুবিধা –

ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সমস্যাগুলি হল –

  • রাজ্যের প্রধান ভাষাভাষী লোকেরা সবক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে থাকায় ভাষাগত সংখ্যালঘুরা বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়।
  • নদীজল বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
  • উদবৃত্ত বিদ্যুৎ ও খাদ্যশস্য বণ্টন, চাকরির ক্ষেত্রে জটিলতা বৃদ্ধি পায়।

ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের গুরুত্ব কী ছিল?

ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের গুরুত্ব –

  • যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বজায় – ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অক্ষুণ্ণ রেখেছিল।
  • রাজনৈতিক কার্যক্ষেত্রের প্রসার – ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন করার ফলে জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
  • জাতীয় সংহতি ও ঐক্য অটুট – ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জনসাধারণের মনে যে অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হয়েছিল তার অবসান ঘটলে জাতীয় সংহতি ও ঐক্য অটুট থাকে।

কোন্ পরিস্থিতিতে, কবে সরকারি ভাষা আইন পাস হয়?

1956 খ্রিস্টাব্দে সরকারি ভাষা কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী সুপারিশ করা হয় যে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মে হিন্দি ভাষা বেশি করে ইংরেজি ভাষার জায়গা গ্রহণ করুক।

সরকারি ভাষা আইন –

  • সরকারি ভাষা কমিশনের সিদ্ধান্তে দক্ষিণ ভারতে অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়।
  • এইরূপ পরিস্থিতিতে 1963 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় পার্লামেন্টে সরকারি ভাষা আইন পাস হয়।

সরকারি ভাষা আইন -এর দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা উল্লেখ করো।

1963 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় পার্লামেন্টে সরকারি ভাষা আইন পাস হয়। এই আইনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল – 1965 খ্রিস্টাব্দের পর ইংরেজি ভাষার ব্যবহারের উপর সংবিধান-আরোপিত বিধিনিষেধ দূর করা।

সরকারি ভাষা আইনের দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা –

  1. এই আইন অনুসারে রাজ্য বিধানসভাগুলি রাজ্যের সরকারি ভাষা নির্ধারণের অধিকার পায়। বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা তাদের সরকারি ভাষা নির্দিষ্ট করে।
  2. 1964 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফশিলে ‘সরকারি ভাষা’ হিসেবে মোট 14টি ভাষা স্বীকৃতি পায়।

1964 খ্রিস্টাব্দে সংবিধানে বর্ণিত সরকারি ভাষাগুলি কী কী?

1963 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় পার্লামেন্টে সরকারি ভাষা আইন পাস হয়। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল 1965 খ্রিস্টাব্দের পর ইংরেজি ভাষার ব্যবহারের উপর সংবিধান-আরোপিত বিধিনিষেধ দূর করা। এসময় বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা তাদের সরকারি ভাষা নির্দিষ্ট করে।

1964 খ্রিস্টাব্দে সংবিধানে বর্ণিত সরকারি ভাষাসমূহ –

1964 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফশিলে সরকারি ভাষা হিসেবে 14টি ভাষা স্বীকৃতি পায়। এই ভাষাগুলি হল – অসমিয়া, বাংলা, গুজরাটি, হিন্দি, কন্নড়, তামিল, তেলুগু, ওড়িয়া, মারাঠি, কাশ্মীরি, মালায়ালম্, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত ও উর্দু।

ভাষা সংক্রান্ত নির্দেশিকা সংবিধানের কোথায় উল্লিখিত হয়েছে?

ভারতের সংবিধানে ভাষা সংক্রান্ত নির্দেশিকা –

ভারতের সরকারি ভাষা বলতে বোঝায় সর্বভারতীয় সরকারি কাজকর্মে ব্যবহৃত ভাষাকে। ভারতীয় সংবিধানের সপ্তদশ অংশে চারটি অধ্যায়ে (343-351 ধারায়) ভাষা সংক্রান্ত নির্দেশিকা আছে। এতে –

  • প্রথম অধ্যায়ে আছে কেন্দ্রের সরকারি ভাষা।
  • দ্বিতীয় অধ্যায়ে আছে আঞ্চলিক ভাষাসমূহ।
  • তৃতীয় অধ্যায়ে আছে সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট ইত্যাদিতে ব্যবহৃত ভাষা।
  • চতুর্থ অধ্যায়ে আছে ভাষা সংক্রান্ত কিছু বিশেষ নির্দেশ সম্পর্কিত নিয়মকানুন।

স্বাধীন ভারতের আপাত সমস্যাগুলি কী ছিল?

স্বাধীন ভারতের আপাত সমস্যাগুলি ছিল অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রের সমস্যাগুলি হল –

  • পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারত আগত উদ্বাস্তুদের সমস্যা
  • দেশবিভাগজনিত হিংসা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের সমস্যা
  • দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণ সমস্যা
  • বেকারসমস্যা ও খাদ্যসমস্যা।

অন্যদিকে বৈদেশিক সমস্যার মধ্যে প্রধানতম দিক ছিল ঠান্ডা লড়াইজনিত কারণে বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত সমস্যা।

উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত বলতে কী বোঝায়?

1947 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে এবং ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে। এরপর প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ভারত-গঠন শুরু হয়। তাই সাধারণত 1947-1964 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময় পর্ব উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত বা নেহরু যুগ নামে পরিচিত।

দেশীয় রাজ্য বলতে কী বোঝায়?

ভারতের স্বাধীনতালাভের প্রাক্কালে ভারতে কাশ্মীর, হায়দরাবাদ, জুনাগড় প্রভৃতি 562টিরও বেশি দেশীয় রাজ্য ছিল এবং এগুলির অধিকাংশই বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল। আবার এগুলির মধ্যে বেশ কিছু রাজ্য ছিল স্বাধীনরাজ্য। এগুলি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোটো বা বড়ো আকারে ছড়িয়ে ছিল এবং এগুলির অধিকাংশই ছিল ভারতের তুলনায় পশ্চাদপদ।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির দুটি কারণ লেখো।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির দুটি কারণ হল –

  1. দেশীয় রাজ্যগুলি ছিল ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা এলাকা; তাই তা ভারতের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় সংহতির পক্ষে ছিল বিপজ্জনক।
  2. ভারতের স্বাধীনতা আইনে বলা হয় যে দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত বা পাকিস্তানে যোগদান বা স্বাধীন থাকা তাদের উপরেই নির্ভরশীল। তাই বেশ কিছু রাজ্য ভারতে যোগ না দিয়ে পাকিস্তানে যোগ দিতে অগ্রসর হয়।

ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং – এর দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল?

কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারত বা পাকিস্তানে যোগদান না করে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন, কারণ –

  • কাশ্মীরের স্বাধীন ঐতিহ্যের ভিত্তিতে কাশ্মীরকে স্বাধীন রাখা
  • গণতান্ত্রিক ভারতে যোগদান করলে তাঁর রাজকীয় মর্যাদার বিলোপ ঘটতো
  • সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রজারা কাশ্মীর রাজ্যের হিন্দুদের অস্তিত্বের সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াত।

কাশ্মীর রাজ্যের ভারতভুক্তির প্রেক্ষাপট কী ছিল?

কাশ্মীর রাজ্যের ঐতিহ্য ছিল স্বাধীন রাজ্যরূপে উপস্থিতি। তাই কাশ্মীর রাজা হরি সিং ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। ইতিমধ্যে পাক-মদতপুষ্ট হানাদারগণ কাশ্মীর রাজ্য আক্রমণ করলে হরি সিং ভারতের কাছে সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করেন। ভারত সরকার শর্তসাপেক্ষে হরি সিং-কে সামরিক সাহায্য করলে হরি সিং ভারতের সঙ্গে যোগ দেন (26 অক্টোবর, 1947)।

হায়দরাবাদ কীভাবে ভারতভুক্ত হয়?

হায়দরাবাদের শাসক বিভিন্নভাবে নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে ও ভারত সরকারের নির্দেশ অমান্য করতে সচেষ্ট হয়। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সামরিক বাহিনীর জেনারেল জয়ন্ত নাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় বাহিনী সমগ্র হায়দরাবাদ দখল করে (13-18 সেপ্টেম্বর, 1948 খ্রিস্টাব্দ)। পরের বছর নিজাম একটি চুক্তির মাধ্যমে ভারতচুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করে এবং 1950 খ্রিস্টাব্দের 26 জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে হায়দরাবাদ ভারত-ভুক্ত হয়।

ফরাসি ও পোর্তুগিজ অধ্যুষিত ভারত এলাকা কিভাবে ভারতভুক্ত হয়?

ভারত স্বাধীন হলে ফ্রান্সের প্রভাবাধীন পণ্ডিচেরী, মাহে ও চন্দননগর এবং পোর্তুগিজ অধ্যুষিত গোয়া, দমন, দিউ ভারতের সঙ্গে যোগ দিতে উৎসুক হয়ে পড়ে। দীর্ঘ আলাপ, আলোচনা ও সমালোচনার পর 1954 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স এই অঞ্চল ত্যাগ করলে তা ভারতভুক্ত হয়। কিন্তু পোর্তুগাল তার দখলীকৃত এলাকা পরিত্যাগে অরাজি হলে ভারতীয় সেনাবাহিনী তা দখল করে (19 ডিসেম্বর, 1961 খ্রিস্টাব্দ)।

উদ্বাস্তু বলতে কী বোঝায়?

দেশভাগ-কথাটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত কথাটি হল উদ্বাস্তু। দেশভাগের ফলে নিরাপত্তাজনিত কারণ বা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বা অন্য কোনো কারণে যখন নাগরিকরা মাতৃভূমি পরিত্যাগ করে অন্য দেশে আশ্রয় নেয় তখন তারা উদ্বাস্তু নামে পরিচিত। উদ্বাস্তুরা মূলত ছিন্নমূল মানুষ ; উদ্বাস্তুরা অধিকাংশক্ষেত্রেই জাতিবিদ্বেষের শিকার হয় বা অত্যাচারিত হয়।

ভারতে আগত উদ্বাস্তুরা মূলত কোথায় আশ্রয় নেয়?

ভারতে আগত উদ্বাস্তুদের স্রোত ছিল পূর্ব পাঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গমুখী। পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে আসা উদ্বাস্তুরা পূর্ব পাঞ্জাব, দিল্লি, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা উদ্বাস্তুরা কলকাতা ও কলকাতা সন্নিহিত 24 পরগণা, নদিয়া, মুরশিদাবাদ, মালদহ, দিনাজপুর প্রভৃতি স্থানে আশ্রয় নেয়।

পাঞ্জাব বিভাজনের সঙ্গে বাংলা বিভাজনের পার্থক্য কী ছিল?

পাঞ্জাব বিভাজনের সঙ্গে বাংলা বিভাজনের বেশ কিছু মিল থাকলেও পার্থক্য ছিল বেশি, যেমন –

  1. পাঞ্জাব বিভাজনের ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাঞ্জাবের মধ্যে জনহস্তান্তর ও সম্পত্তির বিনিময় করা হলেও বাংলার ক্ষেত্রে তা হয়নি।
  2. পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে পূর্ব পাঞ্জাবে উদ্বাস্তুদের আগমন ঘটেছিল দু বছর ধরে। কিন্তু বাংলায় তা ছিল ধারাবাহিক।

দিল্লি চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) কি?

ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের সঙ্গে যৌথচুক্তিতে আবদ্ধ হন (8 এপ্রিল, 1950 খ্রিস্টাব্দে) যা, নেহরু-লিয়াকত চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তিতে বলা হয় যে, সংখ্যালঘুরা যে যার রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকবে এবং তার কাছেই প্রতিকার চাইবে। ভবিষ্যৎ দাঙ্গা প্রতিহতকরণের ব্যবস্থা করা হবে এবং উদ্বাস্তুদের নিজের দেশে প্রত্যাবর্তনে উৎসাহদান করা হবে।

আত্মজীবনী থেকে কিভাবে দেশভাগের কথা জানা যায়?

রাজনৈতিক নেতা বা বিশিষ্ট পণ্ডিত বা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মজীবনী থেকে দেশভাগের কথা জানা যায়। আত্মজীবনী থেকে দেশভাগের প্রেক্ষাপট, দেশভাগের জন্য মহম্মদ আলি জিন্নাসহ মুসলিম লিগ বা ইংরেজ সরকার বা জাতীয় কংগ্রেসের দায়িত্ব নিরূপণ, দেশভাগের প্রতিক্রিয়া, উদ্বাস্তু সমস্যার উদ্ভব ও তার সমাধান, স্বাধীন ভারত নির্মাণ প্রভৃতির কথা জানা যায়।

ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনে কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল?

স্বাধীনতার পূর্বে কংগ্রেস প্রচার করেছিল যে, স্বাধীনতার পরবর্তীকালে প্রতিটি প্রধান ভাষাগোষ্ঠীর জন্য পৃথক পৃথক ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠিত হবে। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের জাতীয় সংহতি ও প্রশাসনিক কারণে কংগ্রেস ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের বিরোধিতা করে। এমনকী কংগ্রেসের দলের সদস্যদের নিয়ে গঠিত জে. ভি. পি. কমিটি রিপোর্টে (ডিসেম্বর 1948 খ্রিস্টাব্দ) ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের বিষয়টি থামিয়ে রাখা হয়।

ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের ফল কী ছিল?

ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের ফলে কয়েকটি ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গড়ে ওঠে, যেমন অন্ধ্রপ্রদেশ (1953), গুজরাট (1960), মহারাষ্ট্র (1960) প্রভৃতি। এর ফলে বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠী গুরুত্ব লাভ করে। তবে ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠন ভারতের জাতীয় সংহতির পক্ষে আপাত ক্ষতিকারক হলেও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে তা ক্ষতিকারক ছিল না। তাই এটি ছিল রাজ্য পুনর্গঠনের এক যুক্তিসংগত পদক্ষেপ। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের বিষয়টি বেশ কিছু জটিলতারও সৃষ্টি করেছিল।


আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” এর “সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো দশম শ্রেণির মাধ্যমিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Please Share This Article

Related Posts

শিশির, কুয়াশা প্রভৃতি অধঃক্ষেপণ নয় কেন

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? অধঃক্ষেপণের রূপভেদ গুলি আলোচনা করো।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

About The Author

Solution Wbbse

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? অধঃক্ষেপণের রূপভেদ গুলি আলোচনা করো।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?