বিভিন্ন গতিতে নদীর কার্যের তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত বিবরণ

Rahul

আজকের আর্টিকেলে আমরা বিভিন্ন গতিতে নদীর কার্যক্রমের তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত বিবরণ আলোচনা করবো। এই বিষয়টি দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি বিভিন্ন গতিতে নদীর কার্যক্রমের বৈশিষ্ট্যগুলি ভালোভাবে শিখে এবং প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষার জন্য যান, তবে সহজেই এই বিষয়ে সঠিকভাবে লিখতে পারবেন। আশা করি এই সংক্ষিপ্ত বিবরণ আপনার পড়াশোনায় সহায়ক হবে।

বিভিন্ন গতিতে নদীর কার্যের তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত বিবরণ

বিভিন্ন গতিতে নদীর কার্যের তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত বিবরণ

উপর্যুক্ত কারণে, নদীর কার্যক্রম নিম্নলিখিত অবস্থার মধ্যে বিভিন্ন গতিতে পরিবর্তিত হতে পারে –

বিভিন্ন গতিতে নদীর কার্যক্রমের তুলনা – গতিপথের বিভিন্ন অংশে নদীর কার্যক্রমের মধ্যে যথেষ্ট বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়, যেমন –

উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর উপত্যকার বৈশিষ্ট্য:

উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর উপত্যকার বৈশিষ্ট্য
তুলনার বিষয়উচ্চগতিমধ্যগতিনিম্নগতি
এলাকাপার্বত্য অঞ্চলে যেখানে নদীর উৎপত্তি হয় সেখান থেকে সমভূমিতে নেমে আসার আগে পর্যন্ত নদীর পার্বত্য প্রবাহ বা উচ্চগতি।পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে নদী যখন সমভূমির ওপর দিয়ে বয়ে যায়, তখন নদীর সেই প্রবাহ পথটি হল সমভূমি প্রবাহ বা মধ্যগতি।নদী প্রবাহপথে যখন সাগরের নিকটে এসে পড়ে, অর্থাৎ মোহনার কাছাকাছি অঞ্চলে নদীর প্রবাহের নাম বদ্বীপ প্রবাহ বা নিম্নগতি।
গতিবেগভূমির ঢাল খুব বেশি থাকে বলে নদী প্রবল বেগে নীচের দিকে বয়ে চলে, অর্থাৎ এই অংশে নদী খরস্রোতা।ভূমির ঢাল অপেক্ষাকৃত কম থাকে বলে স্রোতের বেগও কমে যায়।ভূমির ঢাল খুব কমে যায় বলে নদী অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোয়।
কাজপ্রবল স্রোতের জন্য নদী এই অংশে প্রধানত ক্ষয়কার্য করে। পার্শ্বক্ষয়ের তুলনায় নিম্নক্ষয় খুব বেশি হয়। এ ছাড়া, এই অংশে নদী ক্ষয়জাত বড় বড় শিলাখণ্ড বহন করে নিয়ে যায়।স্রোতের বেগ অপেক্ষাকৃত কম থাকে বলে মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ হয় বহন এবং বাহিত পদার্থের কিছু পরিমাণ অবক্ষেপণ। এই অংশে নদী ছোট ছোট শিলাখণ্ড ও পলি বহন করে নিয়ে যায় এবং কিছু পরিমাণ সঞ্চয় করে। পার্শ্বক্ষয়ও করে।স্রোতের বেগ খুব সামান্য থাকে বলে নিম্নগতিতে নদীর ক্ষয়কার্যের ক্ষমতা প্রায় থাকে না এবং তাই তার প্রধান কাজ হয় বাহিত অতিসুক্ষ্ম কণাসমূহের নদীখাতে অবক্ষেপণ বা সঞ্চয়।
খাতের আকৃতিনিম্নক্ষয় খুব বেশি হয় বলে নদীখাত খুব সংকীর্ণ ও গভীর হয়ে ইংরেজি অক্ষর ‘I’ এবং ‘V’-আকৃতির হয়।নিম্নক্ষয়ের তুলনায় পার্শ্বক্ষয় বেশি হয় বলে চওড়া ও গভীরতাবিশিষ্ট নদীখাতের সৃষ্টি হয়।ক্ষয়কার্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং অবক্ষেপণ প্রাধান্য পাওয়ায় নদীখাত খুব প্রশস্ত এবং প্রকৃতই অগভীর হয়।
সৃষ্ট ভূমিরূপমন্থকূপ বা পটহোল, জলপ্রপাত, খরস্রোত, অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরা প্রভৃতির সৃষ্টি হয়।পলল ব্যজনী বা ত্রিকোণ পললভূমি, নদীচর, প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ প্রভৃতি গঠিত হয়।বিস্তৃত প্লাবনভূমি, উঁচু স্বাভাবিক বাঁধ, বৃহদাকার অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, অসংখ্য বদ্বীপ প্রভৃতি গড়ে ওঠে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

উচ্চগতিতে নদীর প্রধান কাজ কী?

উচ্চগতিতে নদীর প্রধান কাজ হল ক্ষয়কার্য। এই অংশে পার্শ্বক্ষয়ের তুলনায় নিম্নক্ষয় খুব বেশি হয় এবং নদী ক্ষয়জাত বড় বড় শিলাখণ্ড বহন করে নিয়ে যায়।

মধ্যগতিতে নদীর প্রবাহের এলাকা কোন ধরনের?

মধ্যগতিতে নদীর প্রবাহের এলাকা হল সমভূমি। এই অংশে নদী পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে সমভূমির ওপর দিয়ে বয়ে যায়।

নিম্নগতিতে নদীখাতের আকৃতি কেমন হয়?

নিম্নগতিতে নদীখাত খুব প্রশস্ত এবং প্রকৃতই অগভীর হয়, কারণ এই অংশে ক্ষয়কার্য বন্ধ হয়ে যায় এবং অবক্ষেপণ প্রাধান্য পায়।

উচ্চগতিতে নদীর সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি কী কী?

উচ্চগতিতে নদীর সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হল মন্থকূপ বা পটহোল, জলপ্রপাত, খরস্রোত, অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরা প্রভৃতি।

মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ কী কী?

মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ হল বহন এবং বাহিত পদার্থের কিছু পরিমাণ অবক্ষেপণ। এই অংশে নদী ছোট ছোট শিলাখণ্ড ও পলি বহন করে নিয়ে যায় এবং কিছু পরিমাণ সঞ্চয় করে।

নিম্নগতিতে নদীর কাজ কী?

নিম্নগতিতে নদীর কাজ হল বাহিত অতিসুক্ষ্ম কণাসমূহের নদীখাতে অবক্ষেপণ বা সঞ্চয়। স্রোতের বেগ খুব সামান্য থাকে বলে ক্ষয়কার্যের ক্ষমতা প্রায় থাকে না।

মধ্যগতিতে নদীর খাতের আকৃতি কেমন হয়?

মধ্যগতিতে নদীর খাতের আকৃতি হয় চওড়া এবং গভীরতাবিশিষ্ট। নিম্নক্ষয়ের তুলনায় পার্শ্বক্ষয় বেশি হয় বলে এই ধরনের খাতের সৃষ্টি হয়।

নিম্নগতিতে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি কী কী?

নিম্নগতিতে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হল বিস্তৃত প্লাবনভূমি, উঁচু স্বাভাবিক বাঁধ, বৃহদাকার অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, এবং অসংখ্য বদ্বীপ।

উচ্চগতিতে নদীর খাতের আকৃতি কেমন হয়?

উচ্চগতিতে নদীর খাত খুব সংকীর্ণ ও গভীর হয়ে ইংরেজি অক্ষর ‘I’ এবং ‘V’-আকৃতির হয়, কারণ নিম্নক্ষয় খুব বেশি হয়।

মধ্যগতিতে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি কী কী?

মধ্যগতিতে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হল পলল ব্যজনী বা ত্রিকোণ পললভূমি, নদীচর, প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, এবং অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ।

আজকের আর্টিকেলে আমরা বিভিন্ন গতিতে নদীর কার্যক্রমের তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত বিবরণ আলোচনা করেছি। এই বিষয়টি দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন গতিতে নদীর কার্যক্রমের বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে ভালোভাবে জানলে এবং তা সঠিকভাবে মনে রাখলে পরীক্ষায় এ সম্পর্কে লিখতে সহজ হবে। আশা করি এই সংক্ষিপ্ত বিবরণ আপনার পড়াশোনায় সহায়ক হবে।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির তুলনা-

ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির তুলনা করো।

ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি-

ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি সম্বন্ধে আলোচনা করো।

ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল-

ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের বিস্তারিত বিবরণ দাও।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির তুলনা করো।

ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি সম্বন্ধে আলোচনা করো।

ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের বিস্তারিত বিবরণ দাও।

ভারতের প্রাকৃতিক অঞ্চল রূপে মরু অঞ্চলের পরিচয় দাও।

দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।