দশম শ্রেণি – বাংলা – আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতাটি শঙ্খ ঘোষের লেখা একটি প্রতিবাদী কবিতা। এটি ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয়। কবিতায় কবি বিশ্বব্যাপী চলমান যুদ্ধ, শোষণ, বঞ্চনা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এই সব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেই জয়লাভ করা সম্ভব।

Table of Contents

দশম শ্রেণি – বাংলা – আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

আমাদের বাঁয়ে গিরিখাদ – ‘গিরিখাদ’ কী? এই উল্লেখের কারণ আলোচনা করো।

গিরিখাদ – দুটি পর্বতের মধ্যভাগের সরু নীচু জায়গা যা পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং বাস্তবে তা অতি বিপজ্জনক।

গিরিখাদ-এর উল্লেখের কারণ – বর্তমানে সাধারণ মানুষ এক সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেই সংকটজনক পরিস্থিতিতে প্রতি পদক্ষেপে রয়েছে বিপদের সম্ভাবনা। ‘বাঁয়ে গিরিখাদ’ আপাতভাবে পথের দুর্গম চরিত্রকে বোঝায়। সেই পথে প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর সম্ভাবনা। কিন্তু বাস্তবে তা সভ্যতার সংকটকেই বোঝায়। ‘গিরিখাদ’-এর উল্লেখ করা হয়েছে এই বিপদের প্রতীক হিসেবেই।

আমাদের মাথায় বোমারু – বোমারু কী? মন্তব্যটির অর্থ বিশ্লেষণ করো।

বোমারুর অর্থ – ‘বোমারু’ কথাটির অর্থ যুদ্ধবিমান।

অর্থ বিশ্লেষণ – পৃথিবীজুড়ে যুদ্ধের বীভৎসতা আর হিংস্র উন্মত্ততা লক্ষ করেছেন কবি। এতে একদিকে সমাজজীবনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে; অন্যদিকে মানুষের জীবনও বিপন্ন হয়ে উঠেছে। যুদ্ধবিমান সেই বিপন্নতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ‘বোমারু’ হল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতীক। মাথার উপরে তার আনাগোনা প্রতিমূহূর্তে বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তা তৈরি করে। কারণ যুদ্ধ মানেই মানুষের মৃত্যু এবং আশ্রয়হীনতা।

আমাদের পথ নেই কোনো – এই পথ না থাকার তাৎপর্য কী?

  • উৎস – উদ্ধৃত অংশটি শঙ্খ ঘোষের লেখা ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা থেকে গৃহীত।
  • তাৎপর্য – বর্তমানে হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে সাধারণ মানুষ ক্রমশ অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। রাজনৈতিক বা সামাজিক অস্থিরতা তাকে কোথাও স্থির থাকতে দিচ্ছে না। আদর্শবোধের ভাঙন ক্রমশই এত তীব্রতর হচ্ছে যে মানুষের চেতনা কোন্ পথে যাবে তা অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডান দিকে ধ্বংসের তাণ্ডব, বাম দিকেও মৃত্যুফাঁদ। এরই পাশাপাশি মাথার ওপরে বোমারু বিমানের হানা আর চলতে গেলে পায়ে পায়ে প্রতিবন্ধকতা। এভাবেই মানুষের কাছে চলার পথ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। সার্বিক অন্ধকার এবং আদর্শহীনতা গ্রাস করছে আমাদেরকে।

আমাদের ঘর গেছে উড়ে। – কাদের ঘর, কেন উড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন কবি?

উদ্দিষ্ট – শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় আমাদের অর্থাৎ নিরীহ সাধারণ মানুষের ঘরের কথা বলা হয়েছে।

ঘর উড়ে যাওয়ার কারণ – বর্তমান বিশ্বে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলির দ্বারা দুর্বল রাষ্ট্রগুলি আক্রান্ত হচ্ছে। বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে সেইসব দুর্বল রাষ্ট্রগুলির ওপর। এরফলে নিরস্ত্র, শান্তিপ্রিয় মানুষদের ঘর উড়ে যাচ্ছে। যুদ্ধবাজ দেশগুলি বিমান নিয়ে হানা দিচ্ছে। যেখানে সেখানে বোমাবর্ষণ করছে সেই ‘বোমারু বিমান’। এর ফলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে নিরীহ সাধারণ মানুষ। অর্থাৎ, আলোচ্য অংশে কবি এই আশ্রয়হীনতার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।

আমাদের শিশুদের শব/ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে। – মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

পৃথিবীজোড়া অনিশ্চয়তা, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, ধর্মান্ধতা, রাজনৈতিক আদর্শহীনতা ইত্যাদি সমাজকে অস্থির করে তুলছে। পৃথিবীজুড়ে যেন ধ্বংসলীলা চলছে। আর যে-কোনো যুদ্ধ অথবা সন্ত্রাসে শিশুহত্যার ঘটনা ঘটে যথেষ্টই। এই নারকীয় দৃশ্য কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যে ঘটে তা নয়, ঘটতে পারে পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তেই। এ শুধু অমানবিকতার প্রকাশ নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিনাশ। একই পৃথিবীতে বেঁচে থেকে কবি এই ধ্বংসলীলায় উদাসীন থাকতে পারেননি।

আমরাও তবে এইভাবে/এ মুহূর্তে মরে যাব না কি? – এখানে ‘আমরা’ কারা? এই সংশয়ের কারণ কী?

আমরা-র পরিচয় – এখানে ‘আমরা’ বলতে কবি সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েছেন।

সংশয়ের কারণ – যুদ্ধে উন্মত্ত পৃথিবীতে অনবরত চলে বোমাবর্ষণ, গোলাগুলি, রক্তপাত। এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরীহ মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। মাথার উপরে বোমারু বিমান, চলার পথে অজস্র প্রতিকূলতা। যুদ্ধের অন্তরে চলার পথ নেই, মানুষ আশ্রয়হীন। যুদ্ধ শুধু ধ্বংস নয়, ডেকে আনে মৃত্যুকেও। বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে পড়ে থাকে শিশুদের মৃতদেহ। আর মৃত্যুভয় তাড়া করে সকল মানুষকেই। এ কারণেই কবির মনে সংশয় দেখা দিয়েছে।

আমাদের পথ নেই আর – পথ না-থাকার কারণ কী? এজন্য কী করা দরকার বলে কবি মনে করেছেন?

পথ না-থাকার কারণ – আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদের থাবায় আর যুদ্ধবাজদের আক্রমণে সাধারণ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। নিরীহ সাধারণ মানুষ আজ অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। মানুষের আদর্শহীনতা, স্বার্থপরতা চলার পথকে দুর্গম করেছে। মাথার উপরে বোমারু বিমানের আনাগোনা ধ্বংস ও মৃত্যুকে নিশ্চিত করেছে। মানুষ নিরাশ্রয় হয়েছে। শিশুদের মৃতদেহ ছড়িয়ে আছে চারিদিকে। এই পরিস্থিতিতে তাদের আর বেঁচে থাকার পথ নেই বলে কবি মনে করেন।

করণীয় কাজ – বর্তমান সংকটজনক অবস্থায় সাধারণ মানুষকে হাতে হাত রেখে সংঘবদ্ধভাবে থাকা দরকার বলে কবি মনে করেছেন।

আমাদের ইতিহাস নেই – কে, কেন এ কথা বলেছে?

  • উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – কবি শঙ্খ ঘোষ স্বয়ং সাধারণ মানুষের হয়ে কথাটি বলেছেন।
  • এ কথা বলার কারণ – ইতিহাস আসলে জাতির আত্মবিকাশের গৌরবময় কাহিনি, তার ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার। কিন্তু যখন সেই ইতিহাস নিয়ন্ত্রিত হয় কোনো ক্ষমতাবান গোষ্ঠী, ধর্মসম্প্রদায় কিংবা রাজনীতির দ্বারা, তখন ইতিহাসের বিকৃতি ঘটে। ক্ষমতাবানরা নিজেদের স্বার্থে ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে গড়ে তোলে। মানুষ একসময় ভুলে যায় তার প্রকৃত ইতিহাস, আর চাপিয়ে দেওয়া ইতিহাসকেই নিজের বলে মেনে নেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতকে তুলে ধরতে গিয়েই কবি এ কথা বলেছেন।

আমাদের চোখমুখ ঢাকা/আমরা ভিখারি বারোমাস – ‘ভিখারি’ শব্দটির তাৎপর্য স্পষ্ট করো।

  • প্রসঙ্গ – কবি আমাদের ইতিহাস প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন।
  • তাৎপর্য – ক্ষমতাবান শাসকরা নিজেদের স্বার্থে ইতিহাসকে এমনভাবে রচনা করতে চায়, যেন তা শুধু তাদেরই। আর সাধারণ মানুষ অসহায়ের মতো সেই ইতিহাসকেই নিজেদের ইতিহাস বলে মেনে নেয়। তৈরি হয় বঞ্চনার ইতিহাস। মানুষ ‘ভিখারি’ হয়ে থাকে ইতিহাসহীনতার কারণে। এই হীন কাজের দ্বারা জীবিকানির্বাহকে কটাক্ষ করেই কবি উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।

পৃথিবী হয়তো গেছে মরে – কবি কেন এ কথা বলেছেন?

শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবি তার চারপাশের সমাজে, অস্থিরতা ও ধ্বংসের ছবি প্রত্যক্ষ করেছেন। সেখানে চলার পথে প্রতিমুহূর্তে বাধা, মাথার উপরে বোমারু বিমানের আনাগোনা। যুদ্ধের তাণ্ডবে মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আবার ক্ষমতাবানদের শাসনে মানুষদের অধিকারের কোনো স্বীকৃতি নেই। অন্যের অনুগ্রহে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। মনুষ্যত্বের এই বিপর্যয় ঘটার পরেও পৃথিবীর টিকে থাকা সম্ভব কিনা তা নিয়ে কবির মনে সংশয় জেগেছে।

আমাদের কথা কে-বা জানে। – এই মন্তব্যের দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন লেখো।

  • ক্ষমতাবানদের নিয়ন্ত্রণ – আজকের পৃথিবী পরিচালিত হয় ক্ষমতাবান শাসকদের দ্বারা। ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্রনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই শুধু ক্ষমতাশালীরাই সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • সাধারণ মানুষকে উপেক্ষা – সাধারণ মানুষ সেখানে থাকে উপেক্ষিত। দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ানোটাই তার নিয়তি। অর্থাৎ অন্যের দয়ার ওপরে নির্ভর করে বেঁচে থাকা ছাড়া তার অন্য কোনো গতি নেই। এই মানুষেরা হয়তো দক্ষতা কিংবা প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত মূল্য পায় না। অন্যের করুণা বা দয়ার ওপরেই তাদের নির্ভর করে থাকতে হয়।

আমরা ফিরেছি দোরে দোরে। – ‘আমরা’ কারা? তাদের সম্পর্কে এ কথা বলার কারণ কী?

আমাদের পরিচয় – উল্লিখিত অংশে ‘আমরা’ বলতে সাধারণ মানুষদের বোঝানো হয়েছে।

এ কথা বলার কারণ – সমাজব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ উপেক্ষিত। সব কিছুই পরিচালিত হয় ক্ষমতাবানদের ইচ্ছায়। তারাই ইতিহাসকে নিয়ন্ত্রণ করে। ‘চোখ মুখ ঢাকা’ অবস্থায় অর্থাৎ ব্যক্তি স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিয়ে সাধারণ মানুষদের বাঁচতে হয়। তারা বেঁচে থাকে প্রভাবশালীদের দয়া নিয়ে। অন্যের দয়ার ওপরে নির্ভর করে বেঁচে থাকাটাই যেন তাদের নিয়তি। সমাজে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠাহীন সাধারণ মানুষ তাই ক্ষমতাবানদের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ায়।

তবু তো কজন আছি বাকি – এই মন্তব্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

  • উৎস – শঙ্খ ঘোষ রচিত ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত।
  • তাৎপর্য – পৃথিবীজুড়ে সামাজিক এবং রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষেত্রে আদর্শহীনতার বিস্তার আমাদের দিগভ্রান্ত করছে। এর পাশাপাশি পৃথিবীজুড়ে চলছে হত্যালীলা। এই অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষই যখন হতাশাগ্রস্ত তখনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন দু-একজন মানুষ অন্তত বেঁচে আছে, যারা পারস্পরিক ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে না দাঁড়ালে এই ভয়ংকর সময়ে বিপদকে রুখে, শান্তি ফিরিয়ে আনা যাবে না। একতার শক্তিতেই এভাবে দিনবদলের স্বপ্ন দেখেন কবি, স্বপ্ন দেখেন প্রতিরোধের।

আর আরো হাতে হাত রেখে – এই হাতে হাত রাখার দরকার কী? কবি ‘আরো’ শব্দটি কেন ব্যবহার করেছেন?

হাতে হাত রাখার প্রয়োজনীয়তা – সমাজ জীবনের অস্থিরতা মানুষকে বিপন্ন করে তোলে। যুদ্ধ আহ্বান করে ধ্বংস ও মৃত্যুকে। মানুষ আশ্রয়হীন হয়। শিশুদের মৃতদেহ পড়ে থাকে এখানে ওখানে। সাধারণ মানুষের ইতিহাস স্বীকৃতি পায় না। ভিখারিবৃত্তি করে বেঁচে থাকতে হয়। সাধারণ মানুষ অন্যের অনুগ্রহে বেঁচে থাকে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সব মানুষের একসঙ্গে থাকার প্রয়োজন বলেই কবি মন্তব্যটি করেছেন।

আরো শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য – মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। কিন্তু প্রতিকূল অবস্থায় দরকার হৃদয়ে বন্ধন। সম্প্রীতিই থাকে, লড়াই-এর শক্তি দিতে। মানুষের সমাজবদ্ধতা ও সম্প্রীতিকে দৃঢ়তর করার প্রয়োজনেই কবি ‘আরো’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতাটি একদিকে যেমন যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, তেমনি অন্যদিকে ঐক্যবদ্ধতার আহ্বানও। কবি বিশ্বাস করেন যে, যুদ্ধের মতো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করলেই জয়লাভ করা সম্ভব।

Share via:

মন্তব্য করুন