গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনার বদ্বীপের সক্রিয় অংশের ওপর পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কী রূপ?

গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনার বদ্বীপের সক্রিয় অংশ বলতে মূলত সুন্দরবন অঞ্চলকে বোঝায়, যা বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি নদী ও সমুদ্রের মিলনস্থলে অবস্থিত এবং পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃষ্টিপাতের ধরণ পরিবর্তিত হচ্ছে এবং মৌসুমী বৈচিত্র্য দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততার প্রভাব বাড়ছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সুন্দরবনের নিম্নাঞ্চলগুলি জলমগ্ন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস হতে পারে, জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাবে এবং স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে।

লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে ম্যানগ্রোভ গাছপালা এবং অন্যান্য উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এছাড়াও, মিঠা পানির প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য বসবাসের পরিবেশ দুর্বল হয়ে পড়ে, যা পুরো বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড় ও নিম্নচাপের তীব্রতা ও সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে সুন্দরবনের গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মাটি ক্ষয় হয় এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে।

লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং জলমগ্নতার কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলের কৃষিজমি অনুর্বর হয়ে পড়ছে। এতে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে এবং স্থানীয় কৃষকদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠছে।

ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংসের ফলে প্রাকৃতিক বাফার জোন হারিয়ে যায়, যা উপকূলীয় অঞ্চলকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, কার্বন শোষণের ক্ষমতা হ্রাস পায়, যা জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, কুমির এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও মাছের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। এতে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে এবং অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়ছে।

সুন্দরবন রক্ষার জন্য প্রয়োজন –
1. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বৈশ্বিক উদ্যোগ জোরদার করা।
2. স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের অংশগ্রহণে সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন।
3. লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ ও ম্যানগ্রোভ বন পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া।
4. প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি বৃদ্ধি করা।

স্থানীয় সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সুন্দরবন রক্ষা সম্ভব নয়। তাদেরকে পরিবেশবান্ধব কৃষি ও মৎস্য চাষে উৎসাহিত করা, ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।