এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “আকস্মিক বায়ু বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহের সংজ্ঞা দাও ও তার শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “আকস্মিক বায়ু বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহের সংজ্ঞা দাও ও তার শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

আকস্মিক বায়ু বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহের সংজ্ঞা দাও ও তার শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
সংজ্ঞা – কোনো স্থানে দ্রুত বায়ুচাপের হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটলে, আকস্মিকভাবে যেসব বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ বলে। এই প্রকার বায়ুপ্রবাহ কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা কালে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয় না। এই সকল বায়ুপ্রবাহের স্থায়িত্বকাল কম। তাই এই শ্রেণির বায়ুপ্রবাহকে অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহও বলে।
আকস্মিক বায়ুর শ্রেণিবিভাগ –
আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ দুই প্রকার। যথা –
- ঘূর্ণবাত।
- প্রতীপ ঘূর্ণবাত।
ঘূর্ণবাত –
নিম্নচাপকেন্দ্রিক, কেন্দ্রমুখী, ঘূর্ণন গতিযুক্ত প্রবল বায়ুপ্রবাহকে ঘূর্ণবাত (Cyclone) বলে। উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে ঘূর্ণবাত দুই প্রকার –
- ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাত।
- নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ঘূর্ণবাত।
- ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাত – ক্রান্তীয় অঞ্চলের স্বল্প পরিসর স্থানে সৃষ্ট ঘন নিম্নচাপ কেন্দ্রের আকর্ষণে প্রবাহিত কেন্দ্রমুখী, ঊর্ধ্বগামী ঘূর্ণায়মান প্রবল বায়ুপ্রবাহকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলে। ক্রান্তীয় অঞ্চলে সাধারণত 6°-20° উত্তর অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। যেমন – বঙ্গোপসাগর ও আরবসাগরে সাইক্লোন, পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে হ্যারিকেন, চিন সাগরে টাইফুন, যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকো উপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে টর্নেডো ইত্যাদি।
- নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত – উত্তর গোলার্ধে 35°-65° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে এই প্রকার ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি হয়। দুটি ভিন্নধর্মী বায়ু অর্থাৎ একটি উষ্ণ-আর্দ্র হালকা এবং অন্যটি শীতল-শুষ্ক ভারী বায়ু দুইদিক থেকে মুখোমুখি মিলিত হলে শীতল বায়ু ভারী হওয়ায় নীচে নেমে আসে এবং উষ্ণ বায়ু ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী হতে থাকে। শীতল বায়ু দ্রুত নীচে নেমে আসার ফলে দুই বায়ুর মধ্যবর্তী সীমান্ত অঞ্চল সংকুচিত হতে থাকে। অবশেষে নিম্নগামী শীতল বায়ু ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন উষ্ণ বায়ুকে চক্রাকারে বেষ্টন করে প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ওপরে উঠে যায়। একে নাতিশীতোষ্ণ বা মধ্য অক্ষাংশের ঘূর্ণবাত বলে। এই প্রকার ঘূর্ণবাত ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের মতো তীব্র ও বিধ্বংসী হয় না।
ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য –
- ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে নিম্নচাপ অবস্থান করে।
- বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্র অভিমুখী হয়।
- নিম্নচাপ কেন্দ্রের বাতাস উষ্ণ ও ঊর্ধ্বগামী হয়।
- এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে বামাবর্তে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
- স্বল্প স্থায়ী, কিন্তু শক্তিশালী।
- আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে ও ঝড়বৃষ্টি হয়।
- ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে শান্ত অঞ্চল থাকে যা ঘূর্ণবাতের চক্ষু নামে পরিচিত।
প্রতীপ ঘূর্ণবাত –
উচ্চচাপ কেন্দ্রিক, কেন্দ্রবিমুখ, ঘূর্ণন গতিযুক্ত অপেক্ষাকৃত ধীরগতির বায়ু প্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত (Anti-cyclone) বলে। নাতিশীতোষ্ণ ও হিমমণ্ডলের স্বল্প পরিসর স্থানে অধিক শীতলতার জন্য প্রবল উচ্চচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে শীতল-শুষ্ক ভারী বায়ু বাইরের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে কুণ্ডলী আকারে প্রবাহিত হয়। এইভাবে প্রতীপ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি হয়।
প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য –
- প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে থাকে উচ্চচাপ।
- কেন্দ্র থেকে বায়ু বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়।
- উচ্চচাপ অঞ্চলের বায়ু শীতল ও ভারী তাই ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন হয়ে প্রবাহিত হয়।
- এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামাবর্তে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
- বায়ু প্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী, কিন্তু শক্তিশালী নয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ কী?
কোনো স্থানে বায়ুচাপ দ্রুত হ্রাস বা বৃদ্ধি পেলে আকস্মিকভাবে যে বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয়, তাকে আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ বলে। এটি সাধারণত অস্থায়ী ও অনিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয়।
আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ কত প্রকার ও কী কী?
আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ দুই প্রকার –
1. ঘূর্ণবাত (Cyclone)।
2. প্রতীপ ঘূর্ণবাত (Anti-cyclone)।
ঘূর্ণবাত কী? এর প্রকারভেদ লিখ।
নিম্নচাপকেন্দ্রিক, কেন্দ্রমুখী, ঘূর্ণায়মান প্রবল বায়ুপ্রবাহকে ঘূর্ণবাত বলে। এটি দুই প্রকার –
1. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত (যেমন – সাইক্লোন, হ্যারিকেন, টাইফুন)।
2. নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত (মধ্য অক্ষাংশে সৃষ্টি হয়)।
ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য কী?
1. নিম্নচাপ কেন্দ্রিক।
2. বায়ু কেন্দ্রমুখী ও ঊর্ধ্বগামী।
3. উত্তর গোলার্ধে বামাবর্তে, দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে ঘোরে।
4. ঝড়-বৃষ্টি সংঘটিত হয়।
5. কেন্দ্রে চক্ষু (Eye) থাকে যেখানে শান্ত অবস্থা বিরাজ করে।
প্রতীপ ঘূর্ণবাত কী? এর বৈশিষ্ট্য লিখ।
উচ্চচাপকেন্দ্রিক, কেন্দ্রবিমুখ, ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে।
বৈশিষ্ট্য –
1. উচ্চচাপ কেন্দ্রিক।
2. বায়ু কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে প্রবাহিত।
3. উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে, দক্ষিণ গোলার্ধে বামাবর্তে ঘোরে।
4. শুষ্ক ও স্থিতিশীল আবহাওয়া সৃষ্টি করে।
টর্নেডো ও সাইক্লোনের মধ্যে পার্থক্য কী?
1. টর্নেডো – ক্ষুদ্রাকার, অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক, স্থায়িত্ব কয়েক মিনিট থেকে ঘণ্টা।
2. সাইক্লোন – বৃহত্তর, কয়েক দিন স্থায়ী, সমুদ্রে সৃষ্টি হয়।
“ঘূর্ণবাতের চক্ষু” কী?
ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে একটি শান্ত অঞ্চল থাকে যেখানে বাতাস প্রায় স্থির ও মেঘমুক্ত থাকে। একে চক্ষু (Eye) বলে।
বাংলাদেশে কোন ধরনের ঘূর্ণবাত বেশি দেখা যায়?
বাংলাদেশে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত (সাইক্লোন) বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর থেকে উৎপন্ন হয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “আকস্মিক বায়ু বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহের সংজ্ঞা দাও ও তার শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “আকস্মিক বায়ু বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহের সংজ্ঞা দাও ও তার শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন