এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অ্যাপোজি ও পেরেজি কাকে বলে? অ্যাপোজি ও পেরেজির মধ্যে পার্থক্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “অ্যাপোজি ও পেরেজি কাকে বলে? অ্যাপোজি ও পেরেজির মধ্যে পার্থক্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

অ্যাপোজি (Apogee)
চাঁদ পৃথিবীকে উপবৃত্তাকার পথে ঘুরলে, যখন সবচেয়ে দূরে (৪ লক্ষ ৭ হাজার কিমি) থাকে, সেই অবস্থানকে অ্যাপোজি বা অপসূর বলে। এসময় চাঁদ একটু ছোট ও কম উজ্জ্বল দেখায়। এই সময় যে জোয়ার হয়, তাকে অ্যাপোজি জোয়ার বলে।
অ্যাপোজি জোয়ারের বৈশিষ্ট্য –
- বেশি দূরত্বের জন্য পৃথিবীতে চাঁদের টানের প্রভাব কমে যায়।
- তাই স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে অ্যাপোজি জোয়ারের শক্তি 15-20% কম হয়।
- অ্যাপোজি জোয়ারের সময় যদি মরা কোটাল (কম জোয়ারের সময়) হয়, তাহলে জলের উচ্চতা সবচেয়ে কম হয়।
পেরিজি (Perigee)
চাঁদ পৃথিবীকে উপবৃত্তাকার পথে ঘুরলে, যখন সবচেয়ে কাছে (3 লক্ষ 56 হাজার কিমি) আসে, সেই অবস্থানকে পেরিজি বা অনুসূর বলে। এসময় চাঁদ স্বাভাবিকের চেয়ে 14% বড় ও প্রায় 25 গুণ বেশি উজ্জ্বল দেখায়। এই সময় যে জোয়ার হয়, তাকে পেরিজি জোয়ার বলে।
পেরিজি জোয়ারের বৈশিষ্ট্য –
- কম দূরত্বের জন্য পৃথিবীতে চাঁদের টানের প্রভাব বেড়ে যায়।
- তাই স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পেরিজি জোয়ারের শক্তি 15-20% বেশি হয়।
- পেরিজি জোয়ারের সময় যদি ভরা কোটাল (বেশি জোয়ারের সময়) হয়, তাহলে জলের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি হয়।
অ্যাপোজি ও পেরেজির মধ্যে পার্থক্য লেখো।
অ্যাপোজি ও পেরেজির মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় | অ্যাপোজি | পেরেজি |
সংজ্ঞা | চাঁদের পৃথিবী পরিক্রমণকালে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব যখন সর্বাধিক থাকে, সেই অবস্থানকে অ্যাপোজি বলে। | চাঁদের পৃথিবী পরিক্রমণকালে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যেকার দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম থাকে তখনকার সেই অবস্থানকে পেরেজি বলে। |
দূরত্ব | অ্যাপোজি অবস্থানে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যেকার দূরত্ব 4,07,000 কিমি। | পেরেজি অবস্থানে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যেকার দূরত্ব 3,56,000 কিমি। |
দৃশ্যমান চাঁদ | এই সময় চাঁদকে ছোটো ও অনুজ্জ্বল দেখায়। | এই সময় চাঁদকে অ্যাপোজি অপেক্ষা 12% -14% বড়ো এবং 25-30 গুণ বেশি উজ্জ্বল দেখায়। |
চাঁদের অপর নাম | চাঁদকে সর্বাধিক ছোটো দেখায় বলে এই অবস্থায় চাঁদকে Micromoon বলে। | চাঁদকে সর্বাধিক বড়ো দেখায় বলে এই অবস্থায় চাঁদকে Supermoon বলে। |
জোয়ারের তীব্রতা | অ্যাপোজি অবস্থানে জোয়ারভাটার তীব্রতা কম। | পেরেজি অবস্থানে জোয়ারভাটার তীব্রতা বেশি। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অ্যাপোজি (Apogee) কাকে বলে?
চাঁদ যখন পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে (প্রায় 4,07,000 কিমি), তখন সেই অবস্থানকে অ্যাপোজি বলে। এই সময় চাঁদের মহাকর্ষীয় প্রভাব কমে যায়, ফলে জোয়ারের তীব্রতা হ্রাস পায়।
পেরিজি (Perigee) কাকে বলে?
চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে (প্রায় 3,56,000 কিমি), তখন সেই অবস্থানকে পেরিজি বলে। এই সময় চাঁদের মহাকর্ষ বল বৃদ্ধি পায়, ফলে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয়।
অ্যাপোজি ও পেরিজির মধ্যে দূরত্বের পার্থক্য কত?
1. অ্যাপোজিতে চাঁদ-পৃথিবীর দূরত্ব ≈ 4,07,000 কিমি।
2. পেরিজিতে চাঁদ-পৃথিবীর দূরত্ব ≈ 3,56,000 কিমি।
3. পার্থক্য ≈ 51,000 কিমি।
অ্যাপোজি ও পেরিজির সময় চাঁদ কেমন দেখায়?
1. অ্যাপোজিতে – চাঁদ ছোট ও অনুজ্জ্বল দেখায় (মাইক্রোমুন বলে)।
2. পেরিজিতে – চাঁদ বড় ও উজ্জ্বল দেখায় (সুপারমুন বলে)।
অ্যাপোজি ও পেরিজি জোয়ারের উপর কী প্রভাব ফেলে?
1. অ্যাপোজিয়ান টাইড (অপ্রভূ জোয়ার) – জোয়ারের তীব্রতা 20% কম হয়।
2. পেরিজিয়ান টাইড (অনুভূ জোয়ার) – জোয়ারের তীব্রতা 15-20% বেশি হয়।
সুপারমুন ও মাইক্রোমুন কখন হয়?
1. সুপারমুন – পেরিজির সময় পূর্ণিমা হলে চাঁদকে অস্বাভাবিক বড় দেখায়।
2. মাইক্রোমুন – অ্যাপোজির সময় পূর্ণিমা হলে চাঁদকে ছোট দেখায়।
অ্যাপোজি ও পেরিজি মাসে কতবার হয়?
চাঁদ প্রতি 27.5 দিনে পৃথিবীর চারদিকে একবার ঘোরে, তাই প্রতি মাসে একবার করে অ্যাপোজি ও পেরিজি হয়।
পেরিজির সময় কি বন্যা বা ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়ে?
হ্যাঁ, পেরিজির সময় চাঁদের মহাকর্ষ বল বেশি থাকে, ফলে জোয়ারের উচ্চতা বাড়ে এবং কিছু ক্ষেত্রে বন্যা বা ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
অ্যাপোজি ও পেরিজি ছাড়াও চাঁদের আর কী কী অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ?
1. সিজিজি (Syzygy) – সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ এক সরলরেখায় থাকলে (পূর্ণিমা/অমাবস্যা)।
2. নোডাল পয়েন্ট – চাঁদের কক্ষপথ ও পৃথিবীর বিষুবরেখার ছেদবিন্দু।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অ্যাপোজি ও পেরেজি কাকে বলে? অ্যাপোজি ও পেরেজির মধ্যে পার্থক্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “অ্যাপোজি ও পেরেজি কাকে বলে? অ্যাপোজি ও পেরেজির মধ্যে পার্থক্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন