বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য – প্রবন্ধ রচনা

Rahul

নমস্কার! আজকের আর্টিকেলটিতে, আমরা বাংলার ষড়ঋতুর অপার সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে আলোচনা করবো।মাধ্যমিক বাংলা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য বিষয়টি দেখা যায়। কারণ, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়।এই রচনাটি মুখস্ত করলে, ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় ঋতুবৈচিত্র্য বিষয়ের উপর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য – প্রবন্ধ রচনা

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য – প্রবন্ধ রচনা

“তপস্বিনী কী তপস্যা করে অনুক্ষণ
আপনারে তপ্ত করে, ধৌত করে, ছাড়ে আভরণ
সূর্য প্রদক্ষিণ করি ফিরে সে পূজার নৃত্যতালে
ভক্ত উপাসিকা।”

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা –

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, ঋতুতে ঋতুতে পৃথিবী পালটে ফেলে তার রূপ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতের বিচিত্র দোলনায় দুলে দুলে এগিয়ে চলেছে নতুন দিনের দিকে। বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বেশে সেজে উঠে সে যেন বন্দনা করে চলে প্রাণপুরুষ সূর্যকে। কখনও তার বুক আগুন-গরম, শুষ্ক, কখনও বা হিমস্নিগ্ধ, কখনও আবার কুসুম-কোমল। জলঙ্গির ঢেউয়ে ভেজা এই সবুজ করুণ দেশ-বাংলায় এই মনোরম ঋতুবৈচিত্র্যকে অসামান্য সৌন্দর্যে উপলব্ধি করা যায়।

গ্রীষ্ম –

বাংলা পঞ্জিকার প্রথম কয়েকটা পাতাকে আগুনের হলকায় রক্তিম করে তোলে যে ঋতু, তার নাম গ্রীষ্ম। মরুভূমির দহন জ্বালা আদি-অন্ত ভূমিকে করে তোলে দগ্ধ, লেলিহান চিতা শুষে নেয় জীবজগতের প্রাণরস। মাঝে মাঝে বৈশাখী বিকেলে হানা দেয় ঝড়, কেশরফোলা সিংহের মতো ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। দস্যুর মতো ছুটে আসে মাতাল হাওয়া, আলুথালু ডালপালা, উপুড় হয়ে পড়া বনস্পতিকে ভিজিয়ে দিয়ে যায় একপশলা বৃষ্টি।

বর্ষা –

গ্রীষ্মের রুদ্রলীলার পর মেঘে মেঘে আকাশ ঢেকে আসে বর্ষা। বর্ষার আবির্ভাবে মন গলা ছেড়ে গেয়ে উঠতে চায় –

“এসেছে বরষা, এসেছে নবীনা বরষা,
গগন ভরিয়ে এসেছে ভুবন ভরসা।”

নীল অঞ্জনঘন পুঞ্জছায়ায় সংবৃত অম্বর, বাঁধনহারা মাঠে শস্যের শ্যামহিল্লোল, ব্যাঙের ডাক, ভিজে হাওয়া-সবাই মিলে পূর্ণ করে দেয় বর্ষা প্রকৃতির নিটোল চিত্রটাকে। এ যেন নজরুল কথিত সেই দৃশ্য – ‘সুন্দরের চোখে চোখভরা জল’। ফুল ফোটার সময়-কেয়া-কদম্ব-গন্ধরাজের গন্ধবাহারে মেতে ওঠবার সময় বর্ষা। কিন্তু মাঝে মাঝে অতিবৃষ্টি ডেকে আনে প্রলয়ংকরী বন্যা। তবু বলা যায় বর্ষা আবেগের ঋতু, হৃদয়ের শুষ্ক ধারাপথে জলসিঞ্চনের ঋতু।

শরৎ –

বর্ষার বিরহের পর শরৎ আসে আলোয় ধোওয়া দিন, আর জ্যোৎস্নামাখা রাত্রি নিয়ে। আকাশে ভেসে বেড়ায় বর্ষণক্লান্ত সাদা মেঘ, নদীতীরে কাশফুলের মেলা, শিশিরকণায় আলোর ছটা। শিউলির সুবাসে, পুজোর আবহে নেচে ওঠে হৃদয়। একসময় বিদ্যালয়ে ছুটির ঘণ্টা বাজিয়ে, প্রবাসীদের ঘরে ফিরিয়ে এনে, পূজাবার্ষিকীর নতুন গন্ধের আমেজ বেয়ে শুরু হয় দুর্গাপুজো। তারপর একে একে আসে লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো। উৎসবের মাস আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যায়। শরৎ বিদায় নেয়।

হেমন্ত –

হেমন্তের মুখ ঢাকা কুয়াশার চাদরে। সে যেন একাকী পড়ছে জীবনের কোনো ধূসর পান্ডুলিপি। শীতের অল্প ছোঁয়ায়, তার বুকে যেন কোনো গহন বিষাদছায়া। তবু হেমন্ত ভরে দিয়ে যায় বাংলার শস্যভাণ্ডারকে। মাঠে মাঠে সোনার ধান গেয়ে ওঠে নবান্নের গান। আসন্ন শীতের শূন্যতার আগে হেমন্ত পূর্ণ করে যায় জীবনের ভাঁড়ার।

শীত –

গাছেরা পাতাহারা, প্রাণীকুল মৃত্যুহিম জড়ত্বে কম্পমান। চারিদিকে যেন শূন্যতার একচ্ছত্র সাম্রাজ্য। তবে বর্তমানে বাংলার শীত আর অত রিক্ত নয়। বরং গ্রীষ্মপ্রধান এই দেশে শীত বয়ে নিয়ে আসে কর্মচাঞ্চল্য। মনোরম আবহাওয়ায় আর দুপুরবেলার মৃদু রোদ-শিকারের উদ্যোগে বাংলার শীতকালকে বেশ উপভোগ্যই বলা যায়।

বসন্ত –

শীতের রেশ কাটিয়ে বসন্ত আনে প্রমত্ত প্রাণের প্রমুক্ত উল্লাস। পলাশ-কৃষ্ণচূড়া আগুন ধরিয়ে দেয় দিগন্তে-দিগন্তে। বসন্ত উচ্ছ্বাসের ঋতু, নবীন প্রাণকে বিশ্বের আনন্দ সুধায় পূর্ণ করে নেওয়ার ঋতু।

উপসংহার –

ঋতু আসে, ঋতু যায়। আমাদের অতি গাণিতিক মগজকেও অল্পস্বল্প বিচলিত করে পালটে যায় প্রকৃতির রূপ-রং। বর্ষায় মন উদাস হয়ে যায়, শীতে স্থবির। উত্থান-পতনের বন্ধুর পথ বেয়ে ঋতুর জপমালা হাতে নিয়ে আমরা যেন বন্দনা করি নিখিল প্রাণপুরুষকে।

আরও পড়ুন – বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য – প্রবন্ধ রচনা

আশা করি, এই আর্টিকেলটি বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য সম্পর্কে আপনাদের ধারণা স্পষ্ট করতে সাহায্য করেছে। ঋতু আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি ঋতুই আলাদা আলাদা সৌন্দর্য্য ও বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতির রূপও বদলে যায়।

শিক্ষার্থীদের জন্য, বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ বিষয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এটি বারবার দেখা যায়। এই আর্টিকেলটি মুখস্থ করে রাখলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবে। তবে, শুধু মুখস্থ করার চেয়ে ঋতু সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করা উচিত। প্রকৃতির সাথে মিশে ঋতু পরিবর্তন উপভোগ করা উচিত।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

এলআইসি

এলআইসি (LIC) কি? এলআইসি এর ইতিহাস

Padmashri Award 2010 Winner List

পদ্মশ্রী পুরস্কার ২০১০ – Padmashri Award 2010 Winner List

সাম্প্রতিক জলসংকট - প্রবন্ধ রচনা

সাম্প্রতিক জলসংকট – প্রবন্ধ রচনা

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer