এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
বর্তমানে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধান উৎপাদনকারী দেশ। অর্থাৎ চিনের পরেই ভারতের স্থান। ধান উৎপাদনে ভারতের তিনটি শীর্ষ স্থানাধিকারী রাজ্য হল যথাক্রমে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব। এ ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যগুলি হল – অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, বিহার, অসম, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, ত্রিপুরা প্রভৃতি।
পশ্চিমবঙ্গ –
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ধান উৎপাদনে ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে। 2017-2018 খ্রিস্টাব্দে এই রাজ্যের মোট ধান উৎপাদনের পরিমাণ ছিল 1.50 কোটি টন। পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য ধান উৎপাদক জেলাগুলি হল – বর্ধমান, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, নদীয়া, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর প্রভৃতি। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি ধানের চাষ হয়। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বর্ধমান জেলাতেই সর্বাধিক ধান চাষ হয় বলে বর্ধমান জেলাকে পশ্চিমবঙ্গের ‘ধানের ভাণ্ডার’ বলা হয়।
পাঞ্জাব –
বর্তমানে পাঞ্জাব ধান উৎপাদনে ভারতের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। 2017-2018 খ্রিস্টাব্দে এই রাজ্যের মোট ধান উৎপাদনের পরিমাণ ছিল 1.34 কোটি টন। পাঞ্জাবে বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ধান চাষ করা হয়। এই রাজ্যের ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল – জলন্ধর, পাটিয়ালা, অমৃতসর, গুরুদাসপুর প্রভৃতি।
উত্তরপ্রদেশ –
2017-2018 খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশ 1.27 কোটি টন ধান উৎপাদন করে ভারতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। উত্তরপ্রদেশে উন্নত পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হয়ে থাকে। এই রাজ্যের উল্লেখযোগ্য ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল – বারাণসী, খৈরি, লখিমপুর, ফৈজাবাদ, পিলভিত, গোরখপুর প্রভৃতি।

ভারতের উল্লেখযোগ্য ধান উৎপাদক রাজ্যসমূহ (2017-2018) –
রাজ্য | উৎপাদন (কোটি টন) |
পশ্চিমবঙ্গ | 1.50 |
পাঞ্জাব | 1.34 |
উত্তরপ্রদেশ | 1.27 |
অন্যান্য ধান উৎপাদক রাজ্য –
- অন্ধ্রপ্রদেশ – গোদাবরী ও কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ অঞ্চল ও গুন্টুর।
- ওড়িশা – কটক, বালেশ্বর, সম্বলপুর ও পুরী।
- ছত্তিশগড় – রায়পুর, দুর্গ, বিলাসপুর।
- বিহার – গয়া, মজঃফরপুর, পূর্ণিয়া, দ্বারভাঙ্গা। এ ছাড়া অসম, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্যেও ধানের চাষ হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বর্তমানে ভারত ধান উৎপাদনে বিশ্বে কততম স্থান অধিকার করে?
বর্তমানে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ। চীন প্রথম স্থানে রয়েছে।
ভারতের শীর্ষ তিন ধান উৎপাদক রাজ্য কোনগুলি?
ভারতের শীর্ষ তিন ধান উৎপাদক রাজ্য গুলি হল –
1. পশ্চিমবঙ্গ (প্রথম স্থান, 1.50 কোটি টন, 2017-2018)।
2. পাঞ্জাব (দ্বিতীয় স্থান, 1.34 কোটি টন)।
3. উত্তরপ্রদেশ (তৃতীয় স্থান, 1.27 কোটি টন)।
পশ্চিমবঙ্গের কোন জেলাকে ‘ধানের ভাণ্ডার’ বলা হয়?
বর্ধমান জেলা কে পশ্চিমবঙ্গের ‘ধানের ভাণ্ডার’ বলা হয়, কারণ এখানে সর্বাধিক ধান উৎপাদন হয়।
পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য ধান উৎপাদক জেলাগুলি কী কী?
বর্ধমান, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, নদীয়া, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর প্রভৃতি।
পাঞ্জাবের প্রধান ধান উৎপাদক জেলাগুলি কী কী?
জলন্ধর, পাটিয়ালা, অমৃতসর, গুরুদাসপুর প্রভৃতি।
উত্তরপ্রদেশের প্রধান ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি কোথায় অবস্থিত?
বারাণসী, খৈরি, লখিমপুর, ফৈজাবাদ, পিলভিত, গোরখপুর প্রভৃতি।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ধান উৎপাদক রাজ্যগুলি কী কী?
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ধান উৎপাদক রাজ্যগুলি হল –
1. অন্ধ্রপ্রদেশ – গোদাবরী ও কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ অঞ্চল, গুন্টুর।
2. ওড়িশা – কটক, বালেশ্বর, সম্বলপুর, পুরী।
3. ছত্তিশগড় – রায়পুর, দুর্গ, বিলাসপুর।
4. বিহার – গয়া, মজঃফরপুর, পূর্ণিয়া, দ্বারভাঙ্গা।
5. অসম, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, ত্রিপুরাতেও ধান চাষ হয়।
পাঞ্জাবে ধান চাষের বিশেষত্ব কী?
পাঞ্জাবে উন্নত প্রযুক্তি (যেমন – উচ্চ ফলনশীল বীজ, সেচ ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ) ব্যবহার করে ধান চাষ করা হয়, যা উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ভারতের কোন অঞ্চলে বোরো ধানের চাষ হয়?
পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও বিহারে বোরো ধান (শীতকালীন ধান) চাষ হয়।
ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মৃত্তিকা কী ধরনের?
1. জলবায়ু – উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু (25°C-35°C), বার্ষিক 150-200 cm বৃষ্টিপাত।
2. মৃত্তিকা – পলি মাটি (নদীর অববাহিকায় সবচেয়ে ভালো হয়)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন