আজকের আলোচনার বিষয় ভারতের কৃষিক্ষেত্রে খাল সেচ ব্যবস্থার উপযোগিতা। দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” অধ্যায়ের “ভারতের জলসম্পদ” বিভাগের অন্তর্গত।
ভারতে জলসেচের সম্ভাবনা
ভারতে জলসেচের সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থাগুলি হল –
- বরফগলা জলে পুষ্ট নদনদী – উত্তর ভারতে বড়ো বড়ো নদীগুলি বরফগলা জলে পুষ্ট বলে এগুলিতে সারাবছর জল থাকে। এর ফলে উত্তর ভারতের নদীগুলি থেকে নিত্যবহ খাল খনন করার সুবিধা রয়েছে, যেখান থেকে সারাবছর কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করা যাবে।
- বিস্তীর্ণ সমভূমি – উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ও পূর্ব উপকূলে বিস্তীর্ণ সমভূমি থাকায় সহজে খাল কেটে জলসেচ করা যায়।
- স্বল্প গভীর ভৌমজলস্তর – পলিগঠিত অঞ্চলগুলিতে পলিস্তরের সামান্য নীচে জলস্তর থাকায় সহজেই কূপ, নলকূপ খনন করে ভূগর্ভস্থ জল সেচের কাজে ব্যবহার করা যায়।
- বৃষ্টির জলের প্রাচুর্য – বর্ষাকালে দেশের খালবিল, নদীনালা, হ্রদ, পুকুর ও অন্যান্য জলাশয় জলপূর্ণ হয়ে যায় বলে বছরের অন্যান্য সময় সেগুলি থেকে সেচের জন্য জল সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
- বাঁধ তৈরির অনুকূল ভূপ্রকৃতি – উপদ্বীপীয় মালভূমির শক্ত ও কেলাসিত শিলা দ্বারা গঠিত ভূপ্রকৃতি ওই অঞ্চলের নদনদীসমূহের গতিপথে বাঁধ এবং কৃত্রিম জলাধার তৈরির পক্ষে বিশেষভাবে অনুকূল।
খাল দ্বারা জলসেচের উপযোগিতা
প্রধানত নদনদী বা জলাধারের জল কৃষিজমিতে ব্যবহারের জন্য যে খাল খনন করা হয়, তাকেই বলে সেচখাল। এই খাল দুই প্রকার – প্লাবন খাল ও নিত্যবহ খাল। ভারতীয় কৃষিতে এই খাল দ্বারা জলসেচের উপযোগিতা অপরিসীম। এর কারণ –
- অসংখ্য নদনদীর জল – ভারত নদীমাতৃক দেশ, অর্থাৎ দেশের বিভিন্ন অংশের ওপর দিয়ে অসংখ্য নদনদী প্রবাহিত হয়েছে। এর ফলে এখানকার অধিকাংশ জায়গায় খাল খনন করে কৃষিজমিতে জলসেচ করা যায়।
- সারাবছর বরফগলা জলের যোগান – সুবিস্তৃত উত্তর ভারতের নদীগুলি বরফগলা জলে পুষ্ট বলে এগুলিতে সারাবছর জল থাকে এবং তাই প্রায় সমগ্র উত্তর ভারতেই সারাবছর খাল দ্বারা জলসেচ করা যায়।
- খাল খননের উপযোগী ভূমিরূপ – ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সমভূমি থাকায় সহজে খাল খনন করে জলসেচ করা যায়।
- ভূমির ঢালজনিত সুবিধা – দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভূমির ঢাল সুষম বলে খাল দিয়ে সহজেই জল প্রবাহিত হতে পারে (যেমন – সমভূমি অঞ্চলে)।
- জলাধার তৈরির সুবিধা – দক্ষিণ ভারতে বরফগলা জলে পুষ্ট নদী না থাকলেও ওখানকার ভূমিরূপ ঢেউখেলানো বলে সহজেই বাঁধ দিয়ে জলাধার নির্মাণ করা যায় এবং তারপর ওগুলি থেকে খাল খনন করে জলসেচ করা হয়।
- ভূগর্ভস্থ জলস্তর হ্রাস – দেশের অধিকাংশ জায়গাতেই এখন ভূগর্ভস্থ জলন্তর হ্রাস পাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে ভূপৃষ্ঠস্থ জল অর্থাৎ নদনদী, জলধারা খালের মাধ্যমে কৃষিকাজে ব্যবহার করা ছাড়া আমাদের কৃষির উন্নতিবিধান বা জলসম্পদ সংরক্ষণের আর কোনো বিকল্প নেই।
সবশেষে বলা যায়, খাল দ্বারা জলসেচের উপযোগিতা এতটা বেশি বলেই বর্তমান ভারতের মোট সেচসেবিত কৃষিজমির সর্বাধিক অংশে (প্রায় 26 শতাংশ) খালের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়।
ভারতের কৃষিক্ষেত্রে জলসেচের জন্য খাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাল দ্বারা জলসেচের অনেক সুবিধা রয়েছে, যেমন কম খরচ, কম শ্রম, এবং উচ্চ ফসল উৎপাদন। তবে, খাল দ্বারা জলসেচের কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যেমন জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, এবং জল দূষণ। ভবিষ্যতে, ভারতে খাল দ্বারা জলসেচের আরও উন্নত এবং টেকসই ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন।
এই ব্লগ আর্টিকেলটি দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” অধ্যায়ের “ভারতের জলসম্পদ” বিভাগের সাথে সম্পর্কিত। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে, আপনি ভারতে জলসেচের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং পরীক্ষায় ভালো করতে পারবেন।