এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভরা কোটাল ও মরা কোটাল কীভাবে ঘটে চিত্রসহ লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “ভরা কোটাল ও মরা কোটাল কীভাবে ঘটে চিত্রসহ লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ভরা কোটাল ও মরা কোটাল কীভাবে ঘটে চিত্রসহ লেখো।
ভরা কোটাল –
পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে যখন সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী একই সরলরেখায় (সিজিগি) অবস্থান করে তখন চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সমুদ্রে প্রবল জোয়ার হয়। একে ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলে। তেজ কোটালের ক্ষেত্রে সাগর-মহাসাগরের জলতল সবচেয়ে বেশি স্ফীত হয়। মানবজীবনের ওপর তেজ কোটালের (নদী-মোহানা, নৌ-চলাচল, মাছ আহরণ ইত্যাদি) প্রভাব বেশি।

পূর্ণিমা তিথিতে ভরা কোটাল – পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদ, পৃথিবী, সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে তাকে প্রতিযোগ অবস্থান বলে। এই অবস্থানে পৃথিবীর একদিকে চাঁদের আকর্ষণে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয় এবং তার বিপরীত দিকে সূর্যের আকর্ষণে এই স্থানেও জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তাই একে ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলে।
অমাবস্যা তিথিতে ভরা কোটাল – অমাবস্যায় পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে সংযোগ অবস্থান সৃষ্টি করে। পৃথিবীর এক দিকে চাঁদ ও সূর্য অবস্থান করলে উভয়ের মহাকর্ষ শক্তি একসঙ্গে কার্যকরী হয়, ফলে জোয়ারের জলে সবচেয়ে বেশি জলোচ্ছাস দেখা যায়। একে অমাবস্যার ভরা কোটাল বলে।
মরা কোটাল –
কৃষ্ণ ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পৃথিবীর সাপেক্ষে চাঁদ ও সূর্য পরস্পরের সমকোণে অবস্থান করে। এরূপ অবস্থায় পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের ঠিক সামনে থাকে সেখানে জোয়ার হয়। এক্ষেত্রে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল পরস্পরের বিপরীতে কাজ করে বলে সমুদ্রের জলরাশি সেভাবে ফুলে ওঠে না। অষ্টমী তিথির এই জোয়ারকে মরা কোটাল বা মরা জোয়ার বলে।

উৎপত্তি – অমাবস্যার পর হয় শুক্লপক্ষ এবং পূর্ণিমার পর হয় কৃষ্ণপক্ষ। এই দুটি পক্ষের অষ্টমী তিথিতে চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য সমকোণে অবস্থান করে। চাঁদ ও সূর্য সমকোণে পৃথিবীর দুই দিক আকর্ষণ করে। ফলে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ পরস্পরের বিপরীতে কার্যকরী হয়। চাঁদের আকর্ষণে মুখ্য জোয়ার এবং কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে গৌণ জোয়ারের সৃষ্টি হয়। উভয়ক্ষেত্রে জোয়ারভাটার তীব্রতা হ্রাস পায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভরা কোটাল কী?
পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী একই সরলরেখায় (সিজিগি অবস্থান) থাকলে চাঁদ ও সূর্যের সম্মিলিত মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে প্রবল জোয়ার হয়, একে ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলে।
মরা কোটাল কী?
শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর সাপেক্ষে সমকোণে (90°) অবস্থান করে। এতে তাদের আকর্ষণ বল পরস্পর বিরোধী হয়, ফলে জোয়ারের তীব্রতা কমে যায়। একে মরা কোটাল বা মরা জোয়ার বলে।
ভরা কোটাল কখন হয়?
1. পূর্ণিমা তিথিতে (প্রতিযোগ অবস্থান)।
2. অমাবস্যা তিথিতে (সংযোগ অবস্থান)।
মরা কোটাল কখন হয়?
1. শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে।
2. কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে।
ভরা কোটালে জোয়ারের জলতল বেশি স্ফীত হয় কেন?
পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় সূর্য ও চাঁদের মহাকর্ষ শক্তি একই দিকে বা বিপরীতে সম্মিলিতভাবে কাজ করে, ফলে জোয়ারের উচ্চতা সর্বোচ্চ হয়।
মরা কোটালে জোয়ারের তীব্রতা কমে যায় কেন?
চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর সাপেক্ষে সমকোণে থাকায় তাদের আকর্ষণ বল পরস্পর বিরোধী হয়, ফলে জোয়ারের প্রাবল্য হ্রাস পায়।
ভরা কোটালের মানবজীবনে কী প্রভাব পড়ে?
1. নৌ-চলাচলে সমস্যা হতে পারে।
2. নদীর মোহনায় লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ বাড়ে।
3. মাছ ধরা ও উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যার সম্ভাবনা থাকে।
মরা কোটালের সময় কী ঘটে?
1. জোয়ারের উচ্চতা কম থাকে।
2. নৌ-চলাচল সহজ হয়।
3. মাছ ধরা ও উপকূলীয় কাজে সুবিধা হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভরা কোটাল ও মরা কোটাল কীভাবে ঘটে চিত্রসহ লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ভরা কোটাল ও মরা কোটাল কীভাবে ঘটে চিত্রসহ লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন