এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণী ইতিহাস – বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ – বিশ্লেষনমূলক প্রশ্ন উত্তর

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণী ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদের কিছু বিশ্লেষনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

Table of Contents

নবম শ্রেণী ইতিহাস - বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ - বিশ্লেষনমূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

নেপোলিয়ন কীভাবে ফ্রান্সে শাসনক্ষমতা দখল করেন? অথবা, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সামরিক শক্তির সাহায্যে কীভাবে ক্ষমতা দখল করেন?

পটভূমি

রোবসপিয়রের মৃত্যুর পর ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনের অবসান হলে জাতীয় সভা ফ্রান্সে ডিরেক্টরি শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করে। কিন্তু এই শাসনব্যবস্থা নতুন সমস্যা সমাধানের উপযুক্ত ছিল না। ডিরেক্টরি শাসনব্যবস্থার এই অক্ষমতাই নেপোলিয়ন বোনাপার্টের উত্থানের পথ প্রশস্ত করেছিল।

নেপোলিয়নের ক্ষমতা লাভ

ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান নেপোলিয়ন অতি অল্প সময়ের মধ্যে ফ্রান্সের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে মাত্র 17 বছর বয়সে তিনি ফরাসি গোলন্দাজ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দেন। 1793 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের কাছ থেকে তুলোঁ (Toulon) বন্দরের পুনরুদ্ধার এবং 1795 খ্রিস্টাব্দে উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাত থেকে জাতীয় সভাকে রক্ষা তাঁকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তোলে। তা ছাড়া বিপ্লবের দশ বছরের মধ্যে ফ্রান্সে কখনোই সুস্থিরতা আসেনি। সন্ত্রাসের আতঙ্ক মানুষের মন থেকে বিলীন হয়ে যায়নি। এই পরিস্থিতিতে নৈরাজ্য থেকে ফ্রান্সকে রক্ষা করতে নেপোলিয়ন এগিয়ে আসেন এবং জনগণ তাঁকে বিপুলভাবে সমর্থন করে। 1799 খ্রিস্টাব্দের 9 নভেম্বর তিনি ডিরেক্টরি শাসনকে উৎখাত করে কনস্যুলেট-এর শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। অতঃপর 1804 খ্রিস্টাব্দে সিনেটের প্রস্তাবমতো গণভোটের মাধ্যমে তিনি নিজেকে ফরাসি জাতির সম্রাট বলে ঘোষণা করেন।

কনসাল থেকে নেপোলিয়ন কীভাবে ফরাসিদের সম্রাট হয়ে ওঠেন?

অথবা, ফ্রান্সে কীভাবে নেপোলিয়ন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন?

ফরাসিদের সম্রাট

নেপোলিয়ন 1799 খ্রিস্টাব্দে প্রথম কনসাল হিসেবে দশ বছরের জন্য নিযুক্ত হয়েছিলেন। অ্যামিয়েন্সের সন্ধি (Treaty of Amiens) এবং দ্বিতীয় শক্তিজোট ধ্বংস করে তিনি ফ্রান্সে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। 1802 খ্রিস্টাব্দে তিনি রাজতন্ত্রীদের কঠোরভাবে দমন করেন এবং সারাজীবনের জন্য কনসাল হিসেবে নিযুক্ত হন। এর ফলে তিনি নিজ উত্তরাধিকারী মনোনয়নের অধিকার অর্জন করেন। 1804 খ্রিস্টাব্দে গণভোটের মাধ্যমে নেপোলিয়ন ফরাসিদের সম্রাট নিযুক্ত হন। 1804 খ্রিস্টাব্দে নোত্রদাম গির্জায় তাঁর অভিষেক হয়। তাঁর দুই ভাই জোসেফ এবং লুই বোনাপার্ট তাঁর উত্তরাধিকারীর সম্মান পান। নেপোলিয়নের নিজের ভাষায় — “ফ্রান্সের রাজমুকুট ভূলুণ্ঠিত ছিল এবং আমি তা তরবারির সাহায্যে তুলে নিয়েছি।” (I found the crown of France lying on the ground and I picked it up with my sword)।

নেপোলিয়নের সাফল্যের কারণগুলি লেখো।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন ফ্রান্সের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রণনিপুণ সেনাপতি। অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান হয়েও নিজ দক্ষতায় তিনি ফ্রান্সের শাসক হয়েছিলেন। আর তাঁকে সম্রাট পদে বরণ করে নিয়েছিলেন ফরাসি বিপ্লব দ্বারা প্রভাবিত জনগণই। তবে এই সাফল্য লাভ কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিই ছিল নেপোলিয়নের অনুকূলে।

নেপোলিয়নের সাফল্যের কারণ –

  1. চারিত্রিক গুণাবলি – নেপোলিয়নের সাফল্যের একটি বড়ো কারণ ছিল তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিভা, দক্ষতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, আত্মবিশ্বাস, সামরিক ও রাজনৈতিক কূটকৌশল এবং সাংগঠনিক ক্ষমতা। তিনি ফরাসি জনগণের সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছিলেন।
  2. ডিরেক্টরি শাসনের বিফলতা – বিপ্লবোত্তর ফ্রান্সে ডিরেক্টরির শাসনকাল ছিল অদক্ষ, অসৎ এবং স্বার্থপর। আর এই চরম দুঃসময়ে নেপোলিয়নের আবির্ভাব ফরাসিদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করে। ঐতিহাসিক রাইকারের মতে, “আশা বিপ্লবকে জন্ম দেয়, আর হতাশা নেপোলিয়নের উত্থানকে ত্বরান্বিত করে” (It was hope that made the Revolution, it was despair that led it at the feet of Napoleon)।
  3. নেপোলিয়নের যুদ্ধজয় – ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা দ্বিতীয় শক্তিজোটকে তিনি ধ্বংস করেন। ফলে ফরাসিদের কাছে তিনি ছিলেন মুক্তির প্রতীক। একের পর এক যুদ্ধজয় নেপোলিয়নের উত্থানকে সম্ভবপর করে তুলেছিল।
  4. ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব – ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম পরিণামস্বরূপ যে হতাশা জন্ম নিয়েছিল, নেপোলিয়নের বিপ্লবী আদর্শ এবং সুবিধাবাদ তা থেকে ফ্রান্সকে মুক্তি দিয়েছিল।
নেপোলিয়ানের সাফল্যের কারণগুলি লেখো।

নেপোলিয়নের সংস্কার কার্যাবলির পিছনে কী উদ্দেশ্য ছিল?

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট 1799 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের প্রথম কনসাল (Consul) হয়ে ফ্রান্সের শাসনভার গ্রহণ করেন। তাঁর রাজত্বকালে তিনি সুশাসক, সংস্কারক ও সংগঠক হিসেবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। নেপোলিয়নের অভ্যন্তরীণ সংস্কার প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ফিশার (Fisher) বলেছেন যে, তাঁর সংস্কারগুলি গ্রানাইট পাথরের শক্ত ভিত্তির উপর স্থায়ীভাবে নির্মিত (If the conquests were ephemeral, his civilian work in France was built upon granite.)

সংস্থার কার্যাবলির উদ্দেশ্য

নেপোলিয়ন বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে সংস্কারকার্যে মনোনিবেশ করেছিলেন।

  • প্রথমত – নেপোলিয়ন একটি কেন্দ্রীভূত শাসন ও জনকল্যাণকর কাজকর্মের দ্বারা ফরাসিদের কাছে জনপ্রিয় হতে চেয়েছিলেন।
  • দ্বিতীয়ত – নেপোলিয়ন ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থায়ী শক্তিশালী সরকার গঠন করতে উদ্যোগী হন।
  • তৃতীয়ত – বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে নেপোলিয়ন নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও খ্যাতি বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন।
  • চতুর্থত – নেপোলিয়ন ফরাসি বিপ্লবের সুফলগুলি, যেমন — আইনের চোখে সমানাধিকার, বিশেষ অধিকারের বিলোপসাধন প্রভৃতিকে সংস্কারের মাধ্যমে রাজত্বকে স্থায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন।

নেপোলিয়নের শাসনতান্ত্রিক সংস্কার সম্বন্ধে কী জান?

নেপোলিয়ন বিপ্লব ও যুদ্ধবিধ্বস্ত ফ্রান্সে শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে একটি আইনসম্মত, কঠোর ও কেন্দ্রীভূত শাসন প্রবর্তনের উদ্যোগ নেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এগুলি হল –

  • প্রথমত – নেপোলিয়ন বুরবোঁ (Bourbon) যুগের স্বৈরাচারী কেন্দ্রীকরণ নীতি চালু করে প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদকে দমন করেন। শাসনব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি নিজ আধিপত্য স্থাপন করেন।
  • দ্বিতীয়ত – তিনি আইন পরিষদকে স্টেট, ট্রিবিউনেট, লেজিসলেটিভ বডি ও সিনেট এই চারটি কক্ষে বিভক্ত করেন। আইন পরিষদ পূর্বে যে ক্ষমতা ভোগ করত নেপোলিয়ন সেই ক্ষমতা এই চারটি কক্ষের মধ্যে ভাগ করে দেন।
  • তৃতীয়ত – তিনি সমগ্র ফ্রান্সকে 83টি প্রদেশ (Department) এবং প্রদেশগুলিকে 547টি জেলা (Canton)-তে ভাগ করেছিলেন। প্রদেশ ও জেলাগুলির যাবতীয় ক্ষমতা প্রথম কনসাল কর্তৃক নিযুক্ত প্রিফেক্ট ও সাব-প্রিফেক্টদের হাতে রাখা হয়। প্রিফেক্টদের নিয়োdগের ক্ষেত্রে নেপোলিয়ন যোগ্যতাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন।
  • চতুর্থত – নেপোলিয়ন বিচার ও পুলিশবিভাগের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন সাধন করেন। মন্ত্রী, সকল শ্রেণির সরকারি কর্মচারী, বিচারক, সেনাপতি প্রমুখকে তিনি নিয়োগ করতেন। এ ছাড়া আপিল আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি করেন ও একটি সুপ্রিমকোর্ট স্থাপন করেন। পুলিশের ক্ষমতাও এ সময় বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
  • পঞ্চমত – স্থানীয় নির্বাচিত প্রাদেশিক সভাগুলির অস্তিত্ব বজায় রাখা হলেও সভাগুলির ক্ষমতা সংকুচিত করা হয়েছিল।

নেপোলিয়নের অর্থনৈতিক সংস্কার সম্বন্ধে কী জান?

নেপোলিয়নের সিংহাসন আরোহণের প্রাক্কালে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছিল। তাই ক্ষমতা লাভ করে তিনি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেন। অর্থদপ্তরের মন্ত্রী নিযুক্ত হন গোদিন। নেপোলিয়নের অর্থনৈতিক সংস্কারগুলি হল –

অর্থনৈতিক সংস্কার

  1. ব্যয়সংকোচের নীতি – নেপোলিয়ন অর্থনৈতিক দিক থেকে ফ্রান্সকে শক্তিশালী করার জন্য প্রথমেই সরকারি দপ্তরগুলিকে কঠোরভাবে ব্যয়সংকোচের নির্দেশ দেন। তিনি নিজে বাজেট পরীক্ষা করে বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের হার স্থির করে দেন।
  2. কর আদায়ে গুরুত্ব – তিনি নিয়মিতভাবে কর আদায়ের ব্যবস্থা করেন। জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, সরকারকে কর প্রদান করা প্রতিটি নাগরিকের আবশ্যিক কর্তব্য। তিনি সমস্ত বাড়তি কর বাতিল করে কেবলমাত্র কয়েকটি কর নির্দিষ্ট করে দেন। প্রত্যক্ষ কর অপেক্ষা পরোক্ষ কর আদায়কেই তিনি বেশি গুরুত্ব দেন এবং লবণ ও সুরার উপর পরোক্ষ কর আরোপ করেন।
  3. ব্যাংক অফ ফ্রান্স স্থাপন – আর্থিক পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন 1800 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ব্যাংক অফ ফ্রান্স (Bank of France) স্থাপন করেন। এই ব্যাংকের মাধ্যমে মুদ্রাব্যবস্থার সংগঠন ও ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নতি করা সম্ভব হয়।
  4. উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ – ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নতির জন্য তিনি চেম্বার অফ কমার্স ও স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও বন্দরগুলির উন্নয়নের চেষ্টা করেন।

নেপোলিয়নের আর্থিক সংস্কারের ফলে কৃষি ও শিল্পের উন্নতি ঘটে। জিনিসপত্রের দাম কমে ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসে। তবে তাঁর যুদ্ধনীতির ফলে শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল।

কোড নেপোলিয়ন (Code Napoleon) – টীকা লেখো

অথবা, নেপোলিয়নের আইন সংহিতা।টীকা লেখো

কোড নেপোলিয়ন – নেপোলিয়ন ফ্রান্সে প্রচলিত বিভিন্ন আইন বাতিল করে সমগ্র ফ্রান্সের জন্য যে আইন সংহিতা কার্যকর করেছিলেন তা কোড নেপোলিয়ন (Code Napoleon) নামে পরিচিত। নেপোলিয়নের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের প্রেক্ষিতে কোড নেপোলিয়ন প্রণয়ন। তাঁর এই কৃতিত্বের জন্য তাঁকে ‘দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান’ বলা হয়।

প্রবর্তনের কারণ

আইন সংহিতা প্রবর্তনের আগে ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন ধরনের আইনবিধি প্রচলিত ছিল। এই আইনগুলি ছিল বৈষম্যমূলক, পরস্পরবিরোধী এবং যুগের অনুপযোগী। এই পরিস্থিতিতে নেপোলিয়ন সমগ্র ফ্রান্সে একই ধরনের আইন চালু করার জন্য কোড নেপোলিয়ন বা আইন সংহিতা প্রবর্তন করেন।

আইন সংহিতা রচনা

নেপোলিয়ন আইন সংহিতা রচনা করার জন্য ফ্রান্সের চারজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞকে নিয়ে একটি কমিশন গঠন করেন। এই আইন কমিশন চার বছরের (1800-1804 খ্রি.) অক্লান্ত চেষ্টায় একটি আইনবিধি সংকলন করে।

আইনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য মোট 84টি অধিবেশন বসে। এর মধ্যে নেপোলিয়ন 36টি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। নেপোলিয়ন 1807 খ্রিস্টাব্দে এই আইন সংহিতার নামকরণ করেন কোড নেপোলিয়ন।

2287টি আইন সংবলিত এই আইন সংহিতাটি তিন ভাগে বিভক্ত ছিল —

  1. দেওয়ানি আইন
  2. ফৌজদারি আইন
  3. বাণিজ্যিক আইন

বৈশিষ্ট্য

ফরাসি বিপ্লবের সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শে রচিত নেপোলিয়নের আইন সংহিতার বৈশিষ্ট্যগুলি হল —

  1. আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান
  2. যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ
  3. সামন্ততান্ত্রিক বৈষম্যের বিলুপ্তি
  4. ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের স্বীকৃতি প্রভৃতি

এই আইন সংহিতা হল উদারনীতিবাদ, প্রচলিত প্রথা, স্বাভাবিক ন্যায়নীতি ও রোমান আইনের সংমিশ্রণ ও সমন্বয়। ঐতিহাসিক লেফেভর এই আইনবিধিকে ফরাসি সমাজের বাইবেল-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।

নেপোলিয়নের শিক্ষা সংস্কারগুলি সম্পর্কে লেখো।

ফ্রান্সের সম্রাট হিসেবে নেপোলিয়ন অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যেসব সংস্কারকার্য করেছিলেন তার মধ্যে শিক্ষাবিষয়ক সংস্কারগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষা সংস্কার

মূলত সম্রাট ও রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত নাগরিক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই নেপোলিয়ন শিক্ষাসংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করেন।

  • তিনি প্রতি কমিউনে (পৌরসভা) একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তাঁর উদ্যোগে প্রচুর নবম শ্রেণীর, ফলিত বিজ্ঞান, কারিগরি, চিকিৎসা, শিক্ষক-প্রশিক্ষণ ও আইন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • সামরিক শিক্ষাদানের জন্য 29টি লাইসি (Lycée) বা সরকারি আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
  • সমগ্র ফ্রান্সে একই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে 1808 খ্রিস্টাব্দে ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রান্স (Imperial University of France) প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সর্বস্তরের পাঠ্যসূচি তৈরি হত। নেপোলিয়ন ফ্রান্সে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন। তবে, তাঁর শিক্ষা সংস্কারগুলি সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিমুক্ত ছিল না।

নেপোলিয়ন ফ্রান্সে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন। তবে, তাঁর শিক্ষা সংস্কারগুলি সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিমুক্ত ছিল না।

নেপোলিয়নের শিক্ষাসংস্কারের সীমাবদ্ধতাগুলি লেখো।

ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়নের শিক্ষাসংস্কারগুলি সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিমুক্ত ছিল না। কারণ –

  • সমগ্র ফ্রান্সের জন্য শিক্ষার কথা বলা হলেও ব্যয়বহুল শিক্ষাব্যবস্থা শুধুমাত্র ফ্রান্সের সম্পন্ন মধ্যবিত্তদের জন্যই ছিল। অগণিত সাধারণ মানুষ তার সুফল ভোগ করতে পারেনি।
  • নেপোলিয়ন মনে করতেন যে, নারী জীবনের উদ্দেশ্য হল কর্তব্যপরায়ণা গৃহবধূ ও মা হয়ে ওঠা। তাই তিনি নারী শিক্ষার বিস্তারে বিশেষ গুরুত্ব দেননি।
  • শিক্ষায় উৎসাহ দিলেও মানুষকে স্বাধীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি। সরকারবিরোধী সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা হয়। পুস্তক প্রকাশের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। নাট্যশালার উপরে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা হয়েছিল।
  • তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে গির্জার হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন।
  • ছাত্রসমাজের রাষ্ট্রদ্রোহিতার হাত থেকে বাঁচার জন্য ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যসূচি সংশোধন করা হয়।

নেপোলিয়নের ধর্মসংস্কারগুলি সম্পর্কে লেখো।

অথবা, কনকর্ডাট বা ‘ধর্মমীমাংসা চুক্তি’ – টীকা লেখো

ফরাসি বিপ্লবের প্রারম্ভে ফরাসি সংবিধান সভা সিভিল কনস্টিটিউশন অফ দ্য ক্লার্জি (Civil Constitution of the Clergy) নামক এক আইন দ্বারা চার্চের যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে চার্চকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এর ফলে রাষ্ট্রের সঙ্গে পোপের বিরোধ শুরু হয়। নেপোলিয়ন ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করে পোপ সপ্তম পায়াসের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এই বিরোধের অবসান ঘটান। 1801 খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি কনকর্ডাট বা ধর্মমীমাংসা চুক্তি নামে পরিচিত।

নেপোলিয়নের ধর্মসংস্কার শর্তাবলি

ধর্মমীমাংসা চুক্তিতে বলা হয় –

  • বিপ্লবের সময়ে চার্চ ও তার সম্পত্তির জাতীয়করণের যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তা পোপ মেনে নেবেন।
  • রোমান ক্যাথলিক ধর্মমত ও চার্চগুলিকে ফ্রান্স স্বীকৃতি দেবে।
  • সরকার কর্তৃক মনোনীত যাজকদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে পোপ।
  • ফরাসি সরকার যাজকদের বেতন দেবে।
  • যাজকদের উপর বিশপদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
  • ক্যাথলিকরা স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণের অধিকার পাবে।

নেপোলিয়নের ধর্মসংস্কার গুরুত্ব –

ধর্মমীমাংসা চুক্তির ফলে –

  • রাষ্ট্রের সঙ্গে পোপের বিরোধের অবসান ঘটে।
  • ক্যাথলিক চার্চ অনেকটাই রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
  • ফ্রান্সে ধর্মসহিষ্ণুতার আদর্শ গৃহীত হলে শাস্তি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • এইজন্য ঐতিহাসিক কোবান (Cobban) যথার্থই বলেছেন, ‘কনকর্ডাট’ ছিল নেপোলিয়নের একটি মহান জয়।

নেপোলিয়নের জনহিতকর কার্যাবলি সম্পর্কে লেখো।

নেপোলিয়ন ফ্রান্সের সম্রাট হিসেবে বিভিন্ন জনহিতকর কার্যাবলি সম্পাদন করেছিলেন।

জনহিতকর কার্যাবলি –

নেপোলিয়নের জনহিতকর কার্যাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল —

  • তিনি কৃষি, বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসাধন করেন।
  • তিনি বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য নানান পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।
  • তাঁর শাসনকালে অনেক রাজপথ, সেতু, বাঁধ, বন্দর, উদ্যান ও পয়ঃপ্রণালী নির্মিত হয়।
  • তিনি বহু নতুন নতুন সৌধ নির্মাণ এবং প্রাচীন সৌধগুলির সংস্কারসাধন করেন।
  • নেপোলিয়ন যোগ্য ও গুণী সামরিক ও অসামরিক ব্যক্তিদের ‘লিজিয়ন অফ অনার’ (Legion of Honour) নামক উপাধি প্রদানের ব্যবস্থা করেন।
  • তিনি ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়াম’-কে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মিউজিয়ামে পরিণত করেন। প্যারিস শহরকে তিনি নবরূপে সাজিয়ে তোলেন।

নেপোলিয়নকে বিপ্লবের সন্তান বলা হয় কেন?

নেপোলিয়নকে কি বিপ্লবের সন্তান বলা যায়? নেপোলিয়ন কীভাবে বিপ্লবের আদর্শকে বাস্তবায়িত করেছিলেন?

প্রথম কনসাল হিসেবে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী হলেও নেপোলিয়ন অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, বিপ্লবের ফলে ফরাসিদের মনে যে উচ্চাশার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করতে না পারলে খুব বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না। তাই তিনি নিজেকে বিপ্লবের সন্তান রূপে তুলে ধরেন। তিনি স্বাধীনতা ছাড়া বিপ্লবের অপর দুটি আদর্শ ‘সাম্য’ ও ‘মৈত্রী’কে বাস্তবায়িত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।

নেপোলিয়নের রাজপদে উত্থান

নেপোলিয়ন নিজে ছিলেন সাম্যের প্রতীক। অতি সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী না হয়েও ফ্রান্সের সম্রাট পদে আসীন হন জনগণের ভোটের দ্বারা। বিপ্লবের সাম্যবাদী আদর্শই জনগণের দ্বারা তাঁর উত্থানকে সম্ভবপর করেছিল।

বিপ্লবকালীন ফ্রান্সে সংবিধান সভা কর্তৃক প্রচলিত নিয়মগুলি বহাল রাখা

সংবিধান সভা 1789 খ্রিস্টাব্দের 4 আগস্ট সামন্তপ্রথা, ভূমিদাসপ্রথা, সামন্তকর, করভি বা বেগার খাটা, টাইথ বা ধর্মকর ইত্যাদির বিলোপসাধন করেছিল। নেপোলিয়ন এইসব বিপ্লবী নিয়মগুলিকে বহাল রেখে বিপ্লবকে সম্মান জানিয়েছিলেন।

আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা

নেপোলিয়ন ফ্রান্সের বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত আইনগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ‘কোড নেপোলিয়ন’ প্রণয়ন করেন। এর ফলে ফ্রান্সে আইনের চোখে সমতার নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিপ্লবের স্থায়িত্ব প্রদান

বিপ্লবী ফ্রান্সকে রক্ষা করার জন্য নেপোলিয়ন একাধিকবার প্রতিক্রিয়াশীল বিভিন্ন শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে ফ্রান্স ও বিপ্লব উভয়কেই রক্ষা করেছিলেন।

ইউরোপে বিপ্লবের আদর্শ প্রসার

ফ্রান্সের পাশাপাশি ইতালি, জার্মানি-সহ ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রেও নেপোলিয়ন বিপ্লবের আদর্শের প্রসার ঘটান। তাঁর শাসনাধীনে ওইসব দেশে সামন্তপ্রথার অবসান হয় এবং আইনের মাধ্যমে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

সারসংক্ষেপ

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তাঁর শাসনকালে আইনের সাম্য, সামন্ততান্ত্রিক শোষণের অবসান, আইনবিধি প্রণয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে বিপ্লবের ধারক ও বাহকরূপে প্রতিষ্ঠা করেন। বিপ্লবের মধ্য দিয়েই তাঁর উত্থান ঘটেছিল। কাজেই তিনি ছিলেন ‘বিপ্লবের সন্তান’।

নেপোলিয়নকে বিপ্লবের ধ্বংসকারী বলা হয় কেন?

অথবা, নেপোলিয়ন কীভাবে বিপ্লবের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছিলেন বা সরে এসেছিলেন?

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বিপ্লবের তিনটি আদর্শের মধ্যে সাম্য, মৈত্রীর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করলেও স্বাধীনতার আদর্শসহ বিভিন্ন বৈপ্লবিক ভাবধারাকে ধ্বংস করেন। তাঁর সংস্কারের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নেপোলিয়ন যখন স্বাধীনতা বা গণতন্ত্রকে পদানত করে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন তখন তিনি ছিলেন বিপ্লবের ধ্বংসকারী। এক্ষেত্রে তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন, ‘আমি বিপ্লবকে ধ্বংস করেছি’।

বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা

ফরাসি বিপ্লবের দ্বারা রাজতন্ত্রে অবসান ঘটলেও 1804 খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন নিজেকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করে ফ্রান্সে পুনরায় বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন ও জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব-অনুষ্ঠান প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে তিনি বিপ্লবের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছিলেন।

স্বাধীনতার আদর্শ ধ্বংস

নেপোলিয়ন ফ্রান্সে প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানকে তুলে দিয়ে গণতন্ত্রের মুখোশে পুলিশি রাষ্ট্র স্থাপন করেন। রাজনৈতিক দলগুলির স্বাধীন কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ করে দেন। এ ছাড়া তিনি প্রাদেশিক আইনসভাগুলির ক্ষমতা, মানুষের বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করেন — যা ফরাসি বিপ্লবের স্বাধীনতার আদর্শের পরিপন্থী ছিল।

শিক্ষাক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ

নেপোলিয়নের শিক্ষানীতির আসল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষিত সমাজকে সম্রাট ও রাষ্ট্রের অনুগত শ্রেণিতে পরিণত করা। তিনি জেকোবিনদের সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষানীতি বাতিল করে বিপ্লবের আদর্শকে ধ্বংস করেন। নারীশিক্ষার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন উদাসীন।

ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিচ্যুতি

তিনি ফরাসি বিপ্লবকালের ধর্মীয় নীতির বেশকিছু ভাবধারা বর্জন করেছিলেন। 1801 খ্রিস্টাব্দের ধর্মমীমাংসা চুক্তির মাধ্যমে ক্যাথলিক চার্চের ক্ষমতাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।

বিপ্লবের ধ্বংসকারী

নেপোলিয়ন বহু ক্ষেত্রেই বিপ্লবের আদর্শ লঙ্ঘন করেছিলেন। ট্রটস্কি বলেছেন- সামরিক শক্তির দ্বারাই নেপোলিয়ন বিপ্লবকে ধ্বংস করেছেন। আসলে তিনি আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্যই বিপ্লবকে নিজের প্রয়োজনমতো ব্যবহার করেছেন। অনুরূপভাবে লেফেভর, মাঁতিয়ে, গুডউইন প্রমুখ ঐতিহাসিকদের মতানুসারে, ‘নেপোলিয়ান বিপ্লবের ধ্বংসকারী’ ছিলেন।

মহাদেশীয় অবরোধ কী? নেপোলিয়ন কীভাবে এই ব্যবস্থা কার্যকর করেন?

মহাদেশীয় অবরোধ

নৌশক্তিতে বলীয়ান ইংল্যান্ডকে সামরিক শক্তি দিয়ে পরাজিত করতে না পেরে সেদেশের ব্যবসাবাণিজ্য ধ্বংস করে তাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল করার জন্য নেপোলিয়ন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তা ‘মহাদেশীয় অবরোধ’ নামে পরিচিত। সমগ্র মহাদেশ বা কন্টিনেন্টকে নেপোলিয়ন এই সামুদ্রিক অবরোধের আওতায় এনেছিলেন বলে এর নাম হয় মহাদেশীয় অবরোধ বা কন্টিনেন্টাল সিস্টেম।

মহাদেশীয় ব্যবস্থার বাস্তবায়ন

নেপোলিয়ন মহাদেশীয় ব্যবস্থাকে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন —

বার্লিন ডিক্রি (Berlin Decree) – 1806 খ্রিস্টাব্দের 21 নভেম্বর নেপোলিয়ন বার্লিন ডিক্রি জারি করেন। এই নির্দেশনামার দ্বারা তিনি ইউরোপের সমস্ত বন্দরে ব্রিটিশ পণ্যের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। নেপোলিয়নের উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপে ইংল্যান্ডের বাণিজ্য বন্ধ করে তাকে অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল করা। তিনি আশা করেছিলেন ইংল্যান্ড দুর্বল হয়ে পড়লে বাধ্য হয়ে ফরাসি প্রাধান্য মেনে নেবে।

অর্ডারস-ইন-কাউন্সিল (Orders-in-Council) – নেপোলিয়নের বার্লিন ডিক্রির প্রত্যুত্তরে ইংল্যান্ড 1807 খ্রিস্টাব্দে অর্ডারস-ইন-কাউন্সিল জারি করে। এই নির্দেশনামায় বলা হয়- ইউরোপের কোনো রাষ্ট্র ফ্রান্স বা ফ্রান্স অধিকৃত বা ফ্রান্সের কোনো মিত্ররাষ্ট্রে জিনিসপত্র পাঠালে সেই জাহাজ ও জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হবে।

মিলান ডিক্রি (Milan Decree) – ইংল্যান্ডের জারি করা অর্ডারস-ইন-কাউন্সিলের পাল্টা জবাবস্বরূপ নেপোলিয়ন 1807 খ্রিস্টাব্দে মিলান ডিক্রি জারি করে ঘোষণা করেন যে, ইংল্যান্ড বা তার উপনিবেশের কোনো বন্দরে নিরপেক্ষ দেশের জাহাজ প্রবেশ করলে সেই জাহাজ বাজেয়াপ্ত করা হবে।

ওয়ারশ ডিক্রি (Warsaw Decree) ও ফন্টেনব্ল্যু ডিক্রি (Fontainebleau Decree) – মহাদেশীয় ব্যবস্থাকে কার্যকর করার শেষ অস্ত্র হিসেবে নেপোলিয়ন ওয়ারশ ডিক্রি (1807 খ্রি.) এবং ফন্টেনব্ল্যু ডিক্রি (1808 খ্রি.) জারি করেন। এর ফলে ইংল্যান্ডের পণ্যসামগ্রী ইউরোপীয় বন্দরগুলি থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

নেপোলিয়ন প্রবর্তিত মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ইংল্যান্ডের উপর কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল?

ইংল্যান্ডের উপর মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার প্রভাব

1806 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডকে অর্থনৈতিক দিক থেকে পঙ্গু করার উদ্দেশ্যে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের গৃহীত মহাদেশীয় ব্যবস্থা ইংল্যান্ডের অর্থনীতির পক্ষে বিশেষ ক্ষতিকারক ছিল। কারণ পূর্বে ইংল্যান্ডে প্রস্তুত পণ্যের এক-তৃতীয়াংশ এবং উপনিবেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের তিন-চতুর্থাংশ ইংল্যান্ড ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। এই বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইংল্যান্ডে কলকারখানা বন্ধ, বেকারত্ব বৃদ্ধি ও খাদ্যাভাবজনিত কারণে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়।

  • দ্বিতীয়ত, 1806-10 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রাথমিক সংকট কাটিয়ে ওঠার উপায় হিসেবে ইংল্যান্ড আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, তুরস্ক ও বাল্টিক উপকূল অঞ্চলে নতুন বাজার দখল করে তার পণ্য বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
  • তৃতীয়ত, মহাদেশীয় অবরোধ সত্ত্বেও ইংল্যান্ড তার শক্তিশালী নৌবহরকে কাজে লাগিয়ে চোরাপথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তার রপ্তানি-বাণিজ্য অব্যাহত রাখে এবং সমুদ্রপথে নিরপেক্ষ দেশগুলিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে ইংল্যান্ড ওইসব দেশের মাল ইউরোপের বাজারে পরিবহন করতে সক্ষম হয়, ফলে ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক বাণিজ্যে নতুন জোয়ার আসে।
  • চতুর্থত, ইংল্যান্ড 1807 খ্রিস্টাব্দে অর্ডারস-ইন-কাউন্সিল ঘোষণা করে মহাদেশীয় অবরোধ প্রথাকে ব্যর্থ করতে সচেষ্ট হলেও আমেরিকা ও ডেনমার্কের মতো নৌশক্তিধর দেশগুলি তা মানতে অস্বীকার করে। তাই ইংল্যান্ড বাধ্য হয়ে আমেরিকার কয়েকটি বন্দর ও ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে গোলাবর্ষণ করে, আবার অর্ডারস-ইন-কাউন্সিল ঘোষণার মাধ্যমে নিরপেক্ষ দেশগুলিকে অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ করে দিতে ইংল্যান্ড এক ধরনের লাইসেন্স বিক্রি করে প্রচুর আয় করে।

তাই ঐতিহাসিক মর্স স্টিফেনসের মতে, ‘মহাদেশীয় অবরোধ সামগ্রিকভাবে ইংল্যান্ডের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি ঘটায় — অবনতি নয়’। (The system on the whole increased rather than decreased the commercial prosperity of England.)

নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা ব্যর্থ হয় কেন?

নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে পর্যুদস্ত করার জন্য যে অর্থনৈতিক অবরোধের নীতি গ্রহণ করেন, তাকে ‘মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা’ বা ‘Continental System’ বলা হয়। যদিও এই ব্যবস্থা ব্যর্থ হয় তবু নেপোলিয়নের পতনে এর গুরুত্বের কথা অস্বীকার করা যায় না।

ব্যর্থতার কারণ –

  1. এই অবরোধ ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন ছিল একটি শক্তিশালী নৌবাহিনীর, যা ফ্রান্সের ছিল না।
  2. সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ইংল্যান্ডে উৎপন্ন বিভিন্ন দ্রব্য, যেমন — চা, কফি, চিনি ইত্যাদির ব্যাপক চাহিদা ছিল। অবরোধ প্রথা চালু হওয়ায় ফ্রান্সের পক্ষে সমগ্র ইউরোপের চাহিদা মেটানো সম্ভব ছিল না। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ফ্রান্স তথা ইউরোপের মানুষ ক্রমশ নেপোলিয়নের প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন।
  3. ফ্রান্স-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইংল্যান্ডজাত দ্রব্যাদির ব্যাপক চোরাচালান শুরু হয় যা রোধ করার ক্ষমতা নেপোলিয়নের ছিল না।
  4. শেষ পর্যন্ত নেপোলিয়ন এই ব্যবস্থার অসারতা উপলব্ধি করে 1813 খ্রিস্টাব্দে তা প্রত্যাহার করে নেন।

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা নেপোলিয়নের পতনের জন্য কীভাবে দায়ী ছিল?

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা নেপোলিয়নের পক্ষে শুভ হয়নি। মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থাকে বলপ্রয়োগের দ্বারা কার্যকর করতে গিয়ে নেপোলিয়ন বিভিন্ন সংকটে জড়িয়ে পড়েন, যা তাঁর পতনকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।

নেপোলিয়নের পতনের কারণ –

  1. ফ্রান্সের আর্থিক সংকট – মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার অর্থনৈতিক ফলাফল ফ্রান্সের পক্ষে অনুকূল ছিল না, বরং পরোক্ষে তা ফ্রান্সের অর্থনীতির যথেষ্ট ক্ষতি করে। কারণ দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ফ্রান্সের সর্বস্তরের মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছিল। শ্রমিক ছাঁটাই, বেকার সমস্যা প্রভৃতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ফলে ফ্রান্সের মানুষ নেপোলিয়নের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে।
  2. উপকূল দখল – নেপোলিয়ন জোর করে মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা কার্যকর করতে গিয়ে ইউরোপের উপকূল অঞ্চলের প্রায় 2 হাজার মাইল অঞ্চল দখল করে নেন। এ ছাড়া বহু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ দেশ তিনি দখল করে নিলে বিভিন্ন দেশে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়।
  3. রোম ও হল্যান্ডে অসন্তোষ – রোম ও হল্যান্ড মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন সেখানে হস্তক্ষেপ করেন। তিনি রোমের শাসক পোপকে সিংহাসনচ্যুত করে বন্দি করার ফলে ক্যাথলিক সম্প্রদায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়। এ ছাড়া হল্যান্ডের শাসককে সিংহাসনচ্যুত করে তিনি হল্যান্ড দখল করেন।
  4. উপদ্বীপের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ – পোর্তুগাল মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন স্পেনের অনুমতি না নিয়েই স্পেনের উপর দিয়ে পোর্তুগালে সেনা পাঠিয়ে সেখানে মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করেন। পোর্তুগাল থেকে ফেরার পথে তিনি স্পেন দখল করে সেখানকার সিংহাসনে নিজের ভাই জোসেফকে বসান। এর ফলে স্পেন ও পোর্তুগাল নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করে, তা উপদ্বীপের যুদ্ধ (1808-1813) নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে ইংল্যান্ড স্পেনের পক্ষে যোগ দিলে ফ্রান্সের পরাজয় ঘটে। এই পরাজয় নেপোলিয়নকে আরও বড়ো বিপদের সম্মুখীন করে।
  5. ইংল্যান্ডের রপ্তানি বৃদ্ধি – মহাদেশীয় ব্যবস্থায় ইংল্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে লাভবান হয়েছিল। ইংল্যান্ডের রপ্তানি-বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। মহাদেশীয় অবরোধের কারণে বহির্জগতে অনেক নতুন বাজার ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তাই প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়ে ইংল্যান্ড অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বমহিমায় ফিরে আসে।
  6. রাশিয়া আক্রমণ – রাশিয়ার জার মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন 1812 খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া আক্রমণ করেন। পরিণামে রাশিয়ায় তাঁর ‘গ্র্যান্ড আর্মি’ ধ্বংস হয়ে যায়।

ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করতে গিয়ে নেপোলিয়ন বলপূর্বক মহাদেশীয় প্রথাকে কার্যকরী করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, তার ফলে সমগ্র ইউরোপে নেপোলিয়নবিরোধী শক্তি গড়ে উঠেছিল। তাই বলা যায় যে, নেপোলিয়নের পতনের অন্যতম কারণ ছিল – মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা। ঐতিহাসিক লজ বলেছেন যে, একজন রাষ্ট্রনীতিবিদ হিসেবে নেপোলিয়নের অযোগ্যতার সর্বাধিক বড়ো প্রমাণ হল মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা। (The Continental System was the most stupendous proof of Napoleon’s incapacity as a statesman.)

নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে জাতীয়তাবাদের প্রসার কীভাবে ঘটেছিল?

অথবা, নেপোলিয়ন কীভাবে ইতালি ও জার্মানিতে জাতীয়তাবাদী আদর্শের সঙ্গে সহাবস্থান করেছিলেন? অথবা, ইতালি ও জার্মানিতে নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের কী প্রভাব পড়েছিল?

প্রাক্-বিপ্লব ইউরোপের সমাজব্যবস্থা –

ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, জটিল আইনবিধি ও স্বৈরতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। নেপোলিয়ন ধীরে ধীরে ওই সকল অঞ্চলে ফরাসি আধিপত্য স্থাপন করে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটিয়েছিলেন। এই অঞ্চলগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইতালি ও জার্মানি।

জাতীয়তাবাদের প্রসার –

নেপোলিয়ন তাঁর সাম্রাজ্যের মাধ্যমে ইতালি ও জার্মানিতে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটাতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র, অত্যাচারী সামন্ততন্ত্র ও ক্ষমতাশালী চার্চব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে একজাতীয় করব্যবস্থা, বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা ও কোড নেপোলিয়ন প্রবর্তন করে নেপোলিয়ন। পুরাতন ব্যবস্থা ভেঙে দিলেও প্রকৃতপক্ষে ওই রাজ্যগুলির স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসন লাভ তাঁর কাম্য ছিল না, তাঁর আসল লক্ষ্য ছিল নবগঠিত রাজ্যগুলিকে ফ্রান্সের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা। তবে নেপোলিয়নের এই উদ্যোগের পরোক্ষ ফল হিসেবে ইতালি ও জার্মানিতে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটে এবং উভয় রাষ্ট্রের অধিবাসীরা জাতীয় সার্বভৌমত্বের স্বাদ পায়।

নেপোলিয়ন কীভাবে ইতালির পুনর্গঠন করেন?

অথবা, ইতালিকে নেপোলিয়ন কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করেন?

নেপোলিয়নের সুদক্ষ নেতৃত্ব ও কূটনীতির ফলে ইউরোপের যেসকল অঞ্চল পুনর্গঠিত হয়েছিল, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইতালি।

ইতালির পুনর্গঠন –

নেপোলিয়ন ক্যাম্পো ফোর্মিও (1797) এবং প্রেসবার্গের সন্ধির (1805) দ্বারা ইতালিতে অস্ট্রিয়ার যে রাজ্য ছিল তা দখল করেন। অতঃপর –

  1. তিনি এই অধিকৃত অঞ্চলগুলিকে ফরাসি আশ্রিত রাজ্যে পরিণত করেন এবং নিজেকে ইতালির সম্রাট (King of Italy) বলে ঘোষণা করেন।
  2. উত্তর ইতালির টাসকানি, পিডমন্ট ও জেনোয়াকে ফ্রান্সের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে রাখা হয়।
  3. নেপলস অর্থাৎ দক্ষিণ ইতালি থেকে বুরবোঁ বংশীয় রাজা চতুর্থ ফার্দিনান্দকে বিতাড়িত করে নিজ ভ্রাতা জোসেফ বোনাপার্টকে শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন।
  4. সর্বোপরি ইতালিতে বহু রাস্তাঘাট নির্মাণ, কোড নেপোলিয়ন প্রণয়ন-সহ বহু সংস্কার করেন।

এর ফলে ইতালিতে নতুন জীবনধারার সূচনা হয়।

নেপোলিয়ন কীভাবে জার্মানির পুনর্গঠন করেন?

অথবা, জার্মানির ঐক্যস্থাপনে নেপোলিয়নের ভূমিকা কী ছিল?

নেপোলিয়নের সুদক্ষ নেতৃত্ব ও কূটনীতির ফলে ইউরোপের যেসকল অঞ্চল পুনর্গঠিত হয়েছিল, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জার্মানি।

জার্মানির পুনর্গঠন –

জার্মানিতে নেপোলিয়নের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ছিল চমকপ্রদ। তিনি অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়াকে বিভিন্ন যুদ্ধে পরাস্ত করে যথাক্রমে 1795 খ্রিস্টাব্দে ব্যসলের সন্ধি, 1797 খ্রিস্টাব্দে ক্যাম্পো ফোর্মিওর সন্ধি এবং 1801 খ্রিস্টাব্দে লুনিভিলের সন্ধির দ্বারা রাইন নদীর পশ্চিম তীর পর্যন্ত জার্মান ভূখণ্ডে ফ্রান্সের আধিপত্য স্থাপন করেন।

  1. নেপোলিয়ন রাইন নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তীরে অবস্থিত বিশপের রাজ্য বা স্বশাসিত অঞ্চলগুলি বিলোপ করে সেই জমিগুলি রাজাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেন। এর ফলে 300টি রাজ্যে বিভক্ত জার্মানি 39টি রাজ্যে পরিণত হয়।
  2. জার্মানির ব্যাভেরিয়া, ব্যাডেন, স্যাক্সনি, উইটেনবার্গ-সহ আরও বেশ কিছু ক্ষুদ্র রাজ্যের দ্বারা তিনি ‘কনফেডারেশন অফ দ্য রাইন’ (Confederation of the Rhine) গঠন করেন। এর ফলে জার্মানি থেকে অস্ট্রিয়ার প্রভাব লোপ পায়।
  3. জার্মানি থেকে প্রাশিয়ার প্রভাব দূর করার জন্য নেপোলিয়ন পোল্যান্ডের কিছু অংশ এবং পশ্চিম প্রাশিয়া নিয়ে যথাক্রমে ‘কিংডম অফ ওয়েস্টফেলিয়া’ (Kingdom of Westphalia) এবং ‘গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারশ’ (Grand Duchy of Warsaw) নামে দুটি রাজ্য গঠন করেন। প্রথম রাজ্যটি নেপোলিয়নের ভ্রাতা জোরোমের এবং দ্বিতীয় রাজ্যটি স্যাক্সনির রাজার অধীনে রাখা হয়। অতঃপর জার্মানিতে রাস্তাঘাট নির্মাণ, কলকারখানা স্থাপন, কোড নেপোলিয়ন প্রণয়ন-সহ বহু সংস্কারকার্য করে নেপোলিয়ন জার্মানিকে পুনর্গঠিত করেন।

ট্রাফালগারের যুদ্ধ (Battle of Trafalgar) – সম্পর্কে টীকা লেখো।

ট্রাফালগারের যুদ্ধ হয়েছিল 1805 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে। এই যুদ্ধে ফ্রান্স পরাজিত হয়।

যুদ্ধের পটভূমি –

ইংল্যান্ড 1805 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে তৃতীয় শক্তিজোট গঠন করে। এই জোটের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি হল — রাশিয়া, অস্ট্রিয়া ও সুইডেন। নেপোলিয়ন ইউরোপের প্রধান শক্তি ইংল্যান্ডকে পরাজিত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তিনি ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে ইংল্যান্ড আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ইংল্যান্ড ছিল নৌশক্তি ও ফ্রান্স ছিল স্থলশক্তিতে বলীয়ান। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের লড়াই ছিল মূলত নৌশক্তি বনাম স্থলশক্তির লড়াই। তাই নেপোলিয়ন চেয়েছিলেন, ইংলিশ চ্যানেলের উপর সাময়িকভাবে দখলদারি কায়েম করে ইংল্যান্ডের স্থলভূমিতে পৌঁছে যেতে।

ট্রাফালগারের যুদ্ধ (Battle of Trafalgar) সম্পর্কে টীকা লেখো।

যুদ্ধ –

নেপোলিয়নের ইংল্যান্ড জয়ের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। কারণ — ব্রিটিশ নৌসেনাপতি নেলসন ফরাসি নৌসেনাপতি অ্যাডমিরাল ভিলেনেউভকে ট্রাফালগারের যুদ্ধে পরাজিত করেন (21 অক্টোবর, 1805 খ্রিস্টাব্দ)। ফ্রান্সের নৌবাহিনী সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। ফলে নেপোলিয়নের ইংল্যান্ড জয়ের স্বপ্ন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

ফ্রান্সের জনগণ কেন নেপোলিয়নের বিরোধিতা করেছিল?

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা –

নৌশক্তিতে বলীয়ান ইংল্যান্ডকে অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ‘অর্থনৈতিক অবরোধ’ বা মহাদেশীয় অবরোধ’ চালু করেন।

ফরাসি জনগণের বিরোধিতা –

মহাদেশীয় অবরোধ দ্বারা নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল করার পাশাপাশি ফ্রান্সের আর্থিক উন্নতি ঘটাতে চেয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে তিনি কিছুটা সফলও হয়েছিলেন। কারণ এর ফলে ফ্রান্সের কৃষি ও বাণিজ্য উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু তা ছিল সাময়িক। অচিরেই মহাদেশীয় ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। নেপোলিয়ন ফ্রান্সে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত পণ্যদ্রব্যের আমদানি বন্ধ করে দিলেও তার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ফলে জনগণের দৈনন্দিন ব্যবহার্য দ্রব্যে অভাব দেখা দেয়। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ফ্রান্সের বণিক ও শিল্পপতিরাও এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করতে শুরু করে। মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য নেপোলিয়ন ফরাসি বণিক ও শিল্পপতিদের উপর চড়া হারে শুল্ক আরোপ করেন। তা ছাড়া ইংল্যান্ড অর্ডারস-ইন-কাউন্সিল জারি করলে ফ্রান্সেরও যথেষ্ট আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হতে থাকে।

এই সকল কারণে ফ্রান্সে বুর্জোয়া ও শিল্পপতিদের পাশাপাশি অসংখ্য সাধারণ মানুষও নেপোলিয়নের বিরোধিতা করতে থাকে।

নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে জার্মানির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সম্বন্ধে কী জানা যায়?

নেপোলিয়ন তার সাম্রাজ্যের মাধ্যমে ইতালি ও জার্মানিতে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন। রাজ্যগুলি নেপোলিয়নের অধীনেই জাতীয় সার্বভৌমত্বের স্বাদ অনুভব করতে শিখেছিল। কিন্তু নেপোলিয়ন এদের বন্ধনমুক্ত করতে চাননি। জার্মানি তার মুক্তির আলো পেয়েছিল প্রাশিয়ার কাছ থেকে।

জার্মানির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন –

জার্মানির জাতীয়তাবাদী জাগরণে প্রাশিয়ার দেশপ্রেমিক স্টাইন, হার্ডেনবার্গ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। এঁরা মূলত শিক্ষা ও শাসন সংস্কারের মাধ্যমে জার্মানবাসীর মনে মুক্তির প্রেরণা সঞ্চার করেছিলেন। এর ফলে কৃষকেরা লাঙল ও শ্রমিকেরা হাতুড়ি ফেলে এবং ছাত্ররা বই ছেড়ে জার্মানির মুক্তিসংগ্রামে যোগ দেয়। জার্মানির এই জাগরণ উপলব্ধি করে অপর জার্মান রাষ্ট্র অস্ট্রিয়া ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গঠিত চতুর্থ শক্তিজোটে যোগ দেয়। 1813 খ্রিস্টাব্দে ড্রেসডেনের যুদ্ধে অস্ট্রিয়া পরাজিত হলেও লিপজিগের যুদ্ধে নেপোলিয়ন চতুর্থ জোটের কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়ে জার্মানি থেকে ফ্রান্সে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হন। এই যুদ্ধে নেপোলিয়নের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং জার্মানি নেপোলিয়নের অধীনতা থেকে মুক্তি পায়।

নেপোলিয়ন কেন আইবেরীয় উপদ্বীপে পোর্তুগালের বিরুদ্ধে অভিযান করেছিলেন?

নেপোলিয়ন আইবেরীয় উপদ্বীপে পোর্তুগালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।

কারণ –

মহাদেশীয় ব্যবস্থা মেনে নিতে পোর্তুগালকে বাধ্য করা – নেপোলিয়ন মহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য ইউরোপের দেশগুলিকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানান। নেপোলিয়ন বার্লিন ডিক্রি জারি করে পোর্তুগালকে মহাদেশীয় ব্যবস্থায় শামিল হতে বলেন। তিনি পোর্তুগালের রাজাকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং ইংল্যান্ডের পণ্যসামগ্রী বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন। পোর্তুগাল নেপোলিয়নের এই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করে। কারণ- 1. পোর্তুগাল ছিল ইংল্যান্ডের পুরোনো মিত্র দেশ এবং 2. ইংল্যান্ড ও পোর্তুগাল প্রায় 200 বছর ধরে বাণিজ্যিক সম্পর্কে আবদ্ধ ছিল।

ব্রিটিশ বাণিজ্যে আঘাত করা – ইংল্যান্ড ও পোর্তুগালের ভৌগোলিক অবস্থান তাদের মিত্রতার সহায়ক ছিল। পোর্তুগাল ছিল ব্রিটিশ বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র আর নেপোলিয়ন তা ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন।

আইবেরীয় উপদ্বীপ দখল করা – নেপোলিয়নের আসল উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র আইবেরীয় উপদ্বীপ অধিকার করা। এর জন্য তিনি প্রথমে পোর্তুগালকে দখল করতে চেয়েছিলেন। তিনি স্পেনের সঙ্গে গোপনে ফন্টেনব্ল্যু সন্ধি স্বাক্ষর করে স্থির করেন যে, তারা পোর্তুগাল দখল করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে।

1807 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও স্পেনের যুগ্মবাহিনী মার্শাল জুনোর নেতৃত্বে স্পেনের ভূখণ্ড অতিক্রম করে পোর্তুগাল আক্রমণ করে। পোর্তুগালে মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।

নেপোলিয়ন কেন স্পেন আক্রমণ করেন?

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা কার্যকর করার উদ্দেশ্যে সমগ্র আইবেরীয় উপদ্বীপের উপর কর্তৃত্ব স্থাপনের প্রয়োজন ছিল। নেপোলিয়ন পোর্তুগাল আক্রমণ করলেও তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল স্পেন দখল। তবে তাঁর স্পেন আক্রমণের পিছনে বেশ কিছু অন্য কারণও ছিল।

স্পেন আক্রমণের কারণ –

  1. নেপোলিয়নের ইচ্ছা ছিল স্পেনীয় নৌবাহিনী দখল করে তাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা।
  2. ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো স্পেনও তাঁকে মুক্তিদাতা বলে অভিনন্দন জানাবে – এই ছিল নেপোলিয়নের আশা। কিন্তু তিনি স্পেনীয়দের মনোভাব বুঝতে পারেননি।
  3. স্পেন এবং প্রাশিয়া মিলিতভাবে ফ্রান্স আক্রমণের পরিকল্পনা করছে জেনে নেপোলিয়ন বাধ্য হয়ে স্পেন দখলে অগ্রসর হন।
  4. নেপোলিয়ন মনে করতেন যে, নিজের বংশের শাসনক্ষমতা বজায় রাখতে গেলে স্পেনকে দখলে আনতে হবে।
  5. এ ছাড়াও স্পেনের অস্থির রাজনৈতিক অবস্থাকে নেপোলিয়ন কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন।

আইবেরীয় উপদ্বীপে নেপোলিয়নের স্পেন জয়ের পর স্পেনের জনগণের নেপোলিয়ন বিরোধী প্রতিক্রিয়া কীরকম ছিল?

অথবা, আইবেরীয় উপদ্বীপের অধিবাসীরা নেপোলিয়নের বিরোধিতা করেছিল কেন?

1808 খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন স্পেন জয় করেন এবং নিজের ভাই জোসেফ বোনাপার্টকে স্পেনের সিংহাসনে বসান। প্রবল জাতীয়তাবোধে উদ্‌বুদ্ধ স্পেনের জনগণ নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

জনগণের প্রতিক্রিয়া –

জনগণের বিরোধিতা – স্পেনের কৃষক ও সাধারণ জনগণ নিজেদের দেশকে রক্ষা করার জন্য সেনাদলে যোগদান করেন।

জুন্টা বা বিদ্রোহী দল গঠন – নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে স্পেনের বিভিন্ন জায়গায় ‘জুন্টা’ বা বিপ্লবী সংগঠন গড়ে ওঠে। ‘জুন্টা’ র কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল ক্যাডিজ (Cadiz) শহরে। বিপ্লবী সংগঠন জুন্টা নেপোলিয়নের বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রাম শুরু করেছিল।

জোসেফ বোনাপার্টকে সিংহাসন ছাড়তে বাধ্য করা – জোসেফ স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে আসার আগেই স্পেনের জনগণ প্রবল আন্দোলনে শামিল হয়। এই অবস্থায় জোসেফ সিংহাসনে বসলেও মাত্র 11 দিন পর রাজধানী ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। শেষ পর্যন্ত ফরাসি বাহিনী চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। নেপোলিয়ন মনোনীত স্পেনের সম্রাট জোসেফকে চিরতরে স্পেন ছাড়তে বাধ্য করা হয়। স্পেনে নেপোলিয়নের শোচনীয় পরাজয় ঘটে।

নেপোলিয়নের স্পেনীয় ক্ষত (Spanish Ulcer) – টীকা লেখো

নেপোলিয়নের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল স্পেনীয় ক্ষত। স্পেনীয় ক্ষত বলতে বোঝায় নেপোলিয়নের স্পেন আক্রমণের পর স্পেনীয়দের রুখে দাঁড়ানো এবং তাঁকে পিছু হটতে বাধ্য করা যা নেপোলিয়নের জীবনে ক্ষতের মতো ছিল।

স্পেন আক্রমণ –

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য নেপোলিয়ন পোর্তুগাল জয় করেন। তারপর স্পেন আক্রমণ ও দখল করেন। তিনি স্পেনের বুরবোঁ বংশীয় রাজা চতুর্থ চার্লসকে সরিয়ে নিজের ভাই জোসেফকে সিংহাসনে বসান।

স্পেনীয়দের প্রতিরোধ –

স্পেনের জনগণ নেপোলিয়নের আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। স্পেনীয়রা নিজেদের বিবাদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফরাসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রাম শুরু করে। ইংল্যান্ড ও পোর্তুগাল এই যুদ্ধে যোগ দেয়। একে ‘উপদ্বীপের যুদ্ধ’ বলা হয়।

নেপোলিয়নের পরাজয় –

ইংরেজ সেনাপতি আর্থার ওয়েলেসলির হাতে নেপোলিয়নের ফরাসি বাহিনী 1813 খ্রিস্টাব্দে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। নেপোলিয়ন স্পেন ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর নেপোলিয়ন আক্ষেপ করে বলেছিলেন ‘স্পেনীয় ক্ষতই আমার পরাজয়ের মূল কারণ।’

স্পেনের যুদ্ধে ফরাসিরা ব্যর্থ হয়েছিল কেন?

অথবা, স্পেনের যুদ্ধে নেপোলিয়নের পরাজয়ের কারণ কী?

ফ্রান্সের ইতিহাসে এবং নেপোলিয়নের ব্যক্তিগত জীবনে স্পেনীয় যুদ্ধের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এই যুদ্ধ সম্পর্কে নেপোলিয়ন নিজেই বলেছেন — The Spanish Ulcer ruined me.

ফরাসিদের ব্যর্থতার কারণ –

  1. স্পেনের প্রাকৃতিক পরিবেশ – স্পেন ছিল পাহাড়-পর্বত-অরণ্য ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত দেশ। এ ছাড়া এখানকার দ্রুত পরিবর্তনশীল আবহাওয়ায় নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী সমস্যার সম্মুখীন হয়।
  2. খাদ্যাভাব ও যোগাযোগের সমস্যা – ফরাসি সেনাবাহিনী স্পেনে প্রবেশ করে খাদ্যাভাব এবং যোগাযোগের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল।
  3. স্পেনীয় যুদ্ধনীতি – স্পেনীয় ভৌগোলিক পরিবেশ গেরিলা যুদ্ধনীতির পক্ষে সুবিধাজনক ছিল। স্পেনীয়রা এই যুদ্ধনীতির দ্বারা ফরাসি বাহিনীকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল।
  4. স্পেনের জাতীয়তাবোধ – ইতিপূর্বে নেপোলিয়ন ইউরোপের যে-সমস্ত দেশের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের সৈন্যবাহিনী ভাড়াটে সৈন্যতে পূর্ণ ছিল। কিন্তু স্পেনে তিনি জাগ্রত জাতীয়তাবাদের সম্মুখীন হন।
  5. ইংল্যান্ডের বিরোধিতা – নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড স্পেনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।

টিলসিটের সন্ধি কবে ও কাদের মধ্যে হয়? এই সন্ধির শর্ত ও গুরুত্ব কী?

অথবা, টিলসিটের সন্ধি – টীকা লেখো

1807 খ্রিস্টাব্দে ফ্রিডল্যান্ডের যুদ্ধে নেপোলিয়নের কাছে পরাজিত হয়ে রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার ফ্রান্সের সঙ্গে টিলসিটের সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন।

শর্ত –

  1. নেপোলিয়ন ইউরোপে যেসকল রাজনৈতিক সংগঠন স্থাপন করেন, রাশিয়ার জার তা মেনে নেন।
  2. পরাজিত শক্তির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় নীতির স্বীকৃতি দেন।
  3. ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে আত্মরক্ষামূলক মিত্রতা স্থাপিত হয়।
  4. রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের দ্বন্দ্বে নেপোলিয়ন জারের পক্ষ নিতে রাজি হন। সুইডেনের প্রতি জারের আগ্রাসন নীতিকেও নেপোলিয়ন সমর্থন জানান।
  5. ইংল্যান্ডের সঙ্গে ফ্রান্সের দ্বন্দ্বে জার মধ্যস্থতায় রাজি হন।

গুরুত্ব –

  1. টিলসিটের সন্ধির ফলে ফ্রান্সবিরোধী তৃতীয় শক্তিজোট ভেঙে যায়।
  2. নেপোলিয়ন রাশিয়াকে নিরপেক্ষ রাখতে সক্ষম হন।
  3. পূর্ব সীমান্তে নেপোলিয়নের আর কোনো ভয় না থাকায় তিনি সমস্ত শক্তি পশ্চিম প্রান্তে নিয়োগ করতে পেরেছিলেন।
  4. নেপোলিয়নের গৌরব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
  5. টিলসিটের সন্ধিতে রাশিয়ার বিশেষ ক্ষতি হয়নি। তবে প্রাশিয়াকে তার রাজ্যের অর্ধাংশ হারাতে হয়। প্রাশিয়ার দুটি অংশে দুটি নতুন রাজ্য গঠিত হয় যথা — ওয়েস্টফেলিয়া ও গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারশ।

টিলসিটের সন্ধি হল নেপোলিয়নের চূড়ান্ত ক্ষমতার অভিব্যক্তি। এই সন্ধি স্বাক্ষরের ফলে প্রায় সমগ্র ইউরোপ তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়ে। তিনি ইউরোপের ভাগ্যবিধাতা হয়ে ওঠেন এবং ফলস্বরূপ পেনিনসুলার ও রুশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এর পরিণামে তাঁর পতন ঘটে। তাই ঐতিহাসিক রাইকার যথার্থই বলেছেন, ‘টিলসিটের সন্ধি, একদিক থেকে নেপোলিয়নের সৌভাগ্যের অবসান সূচনা করে’। (Tilsit was in a sense, the turning point of his fortunes.)

নেপোলিয়ন কেন রাশিয়া আক্রমণ করেছিলেন?

অথবা, নেপোলিয়ন কী কী কারণে রাশিয়া আক্রমণ করেন?

1807 খ্রিস্টাব্দে টিলসিটের সন্ধি দ্বারা ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অতঃপর 1812 খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণ করেন।

নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণের কারণ –

  1. নেপোলিয়ন সম্পর্কে জারের মোহভঙ্গ – টিলসিটের সন্ধি স্বাক্ষরের পর জার আশা করেছিলেন সুইডেন, পোল্যান্ড ও তুরস্কে রাশিয়া সাম্রাজ্য বিস্তারের সুযোগ পাবে। নেপোলিয়ন সুইডেন ও তুরস্কের বিরুদ্ধে জারকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও পালন করেননি।
  2. গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারশ – নেপোলিয়ন প্রাশিয়া অধিকৃত পোল্যান্ডের অংশ নিয়ে গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়ারশ গঠন করেন। পরে অস্ট্রিয়ার গ্যালিসিয়া দখল করে এর সঙ্গে যুক্ত করেন। এতে রাশিয়ার ধারণা হয় নেপোলিয়ন স্বাধীন পোল্যান্ড রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করছেন।
  3. মহাদেশীয় ব্যবস্থা – নেপোলিয়নের কথামতো রাশিয়া মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা মেনে নেয়। এতে রাশিয়া প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। রাশিয়ায় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়, বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়, অনেক কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় জার 1810 খ্রিস্টাব্দে রাশিয়াকে ব্রিটিশ বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
  4. ওল্ডেনবার্গ দখল – রাশিয়ার জারের ভগ্নীপতি ছিলেন ওল্ডেনবার্গের ডিউক। তিনি মহাদেশীয় ব্যবস্থা অমান্য করলে নেপোলিয়ন তাঁর রাজ্য দখল করেন। এই ঘটনায় জার ও রুশ অভিজাতরা নেপোলিয়নের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। অপরদিকে নেপোলিয়নও রাশিয়ার প্রতি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

অথবা, রাশিয়া আক্রমণের ব্যর্থতা নেপোলিয়নের উপর কী প্রভাব ফেলেছিল?

নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণের ব্যর্থতা তাঁর সাম্রাজ্যের ভিত্তিমূলে প্রবল নাড়া দিয়েছিল। নেপোলিয়ন আক্ষেপ করে বলেছিলেন, সম্ভবত আমি মস্কো গিয়ে ভুল করেছিলাম।

নেপোলিয়নের-রাশিয়া-আক্রমণ-গুরুত্বপূর্ণ-কেন

তাৎপর্য –

  1. নেপোলিয়নের অপরাজেয় ভাবমূর্তিতে আঘাত – রাশিয়া অভিযানের ব্যর্থতায় নেপোলিয়নের অপরাজেয় ভাবমূর্তি ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল।
  2. নেপোলিয়নের কূটকৌশলের পরাজয় – নেপোলিয়ন প্রায় বিনা বাধায় রাজধানী মস্কো পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। তারপর তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। আসলে তিনি রাশিয়ার কূটকৌশলের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।
  3. নেপোলিয়ন বিরোধী ইউরোপীয় শক্তির উল্লাস – রাশিয়া অভিযান ব্যর্থ হওয়ার ফলে ফ্রান্স বিরোধী ইংল্যান্ড, প্রাশিয়া-সহ অনেক দেশ নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফ্রান্সেও তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়েছিল।
  4. ফ্রান্সের অধীনস্থ দেশে প্রতিবাদ – নেপোলিয়নের যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করতে হত সাধারণ মানুষকে। এজন্য তাদের উপর বাড়তি কর আরোপ করা হত। নেপোলিয়নের পরাজয় তাদের উৎসাহিত করেছিল। ফলে তারা শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়।

শত দিবসের রাজত্ব (Hundred Days Rule) বলতে কী বোঝায়? নেপোলিয়নের এলবা দ্বীপ থেকে ফ্রান্সে ফিরে আসার পটভূমি কী ছিল?

1814 খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে নেপোলিয়ন শত্রুপক্ষের হাতে পরাজিত হন এবং তাঁকে এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়।

এলবা দ্বীপে নির্বাসিত নেপোলিয়ন – হতাশায় ভেঙে পড়েননি। বরং তিনি সেখান থেকেও ফ্রান্সের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্নকে সত্যি করে একদিন 1815 খ্রিস্টাব্দের 1 মার্চ 1050 জন সৈন্য নিয়ে তিনি ফ্রান্সের মাটিতে পৌঁছোন। তিনি নিজেকে ‘সম্রাট’ বলে ঘোষণা করেন এবং 1815 খ্রিস্টাব্দের 20 মার্চ থেকে 29 জুন পর্যন্ত ফ্রান্সে মোট 100 দিন রাজত্ব করেন। এই ঘটনা শত দিবসের রাজত্ব নামে পরিচিত।

শত-দিবসের-রাজত্ব-Hundred-Days-Rule-বলতে-কী-বোঝায়

নেপোলিয়নের ফ্রান্সে আগমনের পটভূমি

  1. নেপোলিয়নের পতনের পর বুরবোঁ বংশের অষ্টাদশ লুই ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন। কিন্তু ফ্রান্সের জনগণ তাঁকে পছন্দ করতেন না।
  2. নব প্রতিষ্ঠিত অষ্টাদশ লুইয়ের শাসনে কৃষকরা আবার সামন্ত ও চার্চের শোষণের আশঙ্কা করছিল।
  3. বুরবোঁ রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে দেশত্যাগী ফরাসি অভিজাতরা আবার দেশে ফিরে আসে। তারা তাদের জমি ও সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য সচেষ্ট হলে ফরাসি সমাজে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  4. ফরাসি সেনাবাহিনীর একটি বড়ো অংশ নেপোলিয়নের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল।
  5. নেপোলিয়নের নির্বাসনের পর বিজয়ী শক্তিবর্গ ভিয়েনা সম্মেলনে মিলিত হয়। তারা প্রাক্-বিপ্লব অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রবল বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়।

নেপোলিয়ন এলবা দ্বীপে থেকেই ফ্রান্স ও ইউরোপের ঘটনাবলির উপর নজর রেখেছিলেন এবং পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে 1815 খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ফ্রান্সে ফিরে আসেন।

শত দিবসের রাজত্বে নেপোলিয়নের কার্যাবলির লক্ষ্য কী ছিল?

নেপোলিয়ন এলবা দ্বীপ থেকে ফিরে এসে ফ্রান্সে যে 100 দিন (1815 খ্রিস্টাব্দের 20 মার্চ থেকে 29 জুন পর্যন্ত) রাজত্ব করেছিলেন, তাকে শত দিবসের রাজত্ব (Hundred Days Rule) বলা হয়।

নেপোলিয়নের সংস্কারমূলক কার্যাবলির লক্ষ্য

শত দিবসের রাজত্বে নেপোলিয়ন বুঝেছিলেন যে, একমাত্র উদারতান্ত্রিক শাসনই ফ্রান্সে তাঁর শাসন সুদৃঢ় করতে পারে। তাই তিনি উদারপন্থী রাজনৈতিক নেতা কার্নো ও বেঞ্জামিন কনস্ট্যান্ট প্রমুখের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শাসন শুরু করেন। তিনি দেশবাসীকে জানান যে, তাঁর শাসনব্যবস্থার মৌলিক লক্ষ্য হল –

  1. কৃষকদের রায়তি-স্বত্ব রক্ষা করা।
  2. অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
  3. দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করা।
  4. দেশত্যাগী অভিজাতদের হাত থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করা।
  5. ফ্রান্সের প্রগতি সুনিশ্চিত করা প্রভৃতি।

শত দিবসের রাজত্বের অবসান কীভাবে ঘটেছিল?

নেপোলিয়নের এলবা দ্বীপ থেকে ফ্রান্সে আগমনের সংবাদ পাওয়ামাত্র মিত্রপক্ষের প্রতিনিধিরা নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হন। তাঁরা নেপোলিয়নকে ‘আইন বহির্ভূত ব্যক্তি’ (Out Law) বলে ঘোষণা করেন। নেপোলিয়নকে পুনরায় পরাজিত করার জন্য তাঁরা ফ্রান্স আক্রমণ করেন।

মিত্রপক্ষের ফ্রান্স আক্রমণ –

মিত্রপক্ষ তিন দলে বিভক্ত হয়ে তিন দিক থেকে ফ্রান্স আক্রমণ করে।

  1. প্রথম দলে ছিল আর্থার ওয়েলেসলির (ডিউক অফ ওয়েলিংটন) নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনী ও ব্রুকারের নেতৃত্বে প্রাশীয় বাহিনী।
  2. দ্বিতীয় দলে ছিল রাশিয়ার জার আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে রুশ বাহিনী।
  3. তৃতীয় দলে ছিল শোয়ারজেনবার্গের নেতৃত্বে অস্ট্রিয়ার বাহিনী।

পরাজয়

এই অবস্থায় নেপোলিয়ন একের পর এক (One by one) যুদ্ধনীতি অনুসরণ করেন। তিনি ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বেলজিয়াম সীমান্তে উপস্থিত হন। লিঞ্জি ও কোয়াটার ব্রাস-এর যুদ্ধে জয়লাভ করেন তিনি। কিন্তু আর্থার ওয়েলেসলি ও ব্রুকারের হাতে ওয়াটারলুর (Waterloo) যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন (1815)।

নেপোলিয়নের নির্বাসন

ওয়াটারলুর যুদ্ধের পর নেপোলিয়ন মিত্রপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁকে ফ্রান্স থেকে 5 হাজার মাইল দূরে আটল্যান্টিক মহাসাগরের মাঝে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। এখানে তাঁর জন্য সশস্ত্র প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়।

নেপোলিয়নের মৃত্যু

সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত অবস্থায় 1821 খ্রিস্টাব্দের 5 মে 52 বছর বয়সে নেপোলিয়নের মৃত্যু হয়।

শত দিবসের রাজত্বের অবসান কীভাবে ঘটেছিল ?

বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ বিশ্বের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই তিনটি ধারণার প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটে।


আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণী ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদের কিছু বিশ্লেষনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাকে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন