বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ গুলো কী কী আলোচনা করো?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ গুলো কী কী আলোচনা করো?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ গুলো কী কী আলোচনা করো?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “পরিবেশের জন্য ভাবনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ গুলো কী কী আলোচনা করো?

বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ গুলো কী কী আলোচনা করো?

বর্তমান সময়ে মনুষ্য সমাজের নিকট এক অতি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সমস্যা রূপে উদ্ভূত হয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। বিশ্ব উষ্ণায়ন কেবলমাত্র পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রার ক্রমান্বয় বৃদ্ধিকে বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা কেই বলা হয় বিশ্ব উষ্ণায়ন।

বিশ্ব উষ্ণায়নে মনুষ্য সৃষ্টি কারণ –

  1. জীবাশ্ম জ্বালানি – যানবাহন ব্যবহার, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি কর্মক্ষেত্র গুলিতে অতিরিক্ত পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে সেখান থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়েই চলেছে। এই অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে চলা কার্বন ডাই অক্সাইড বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধি এর অন্যতম একটি প্রধান কারণ।
  2. বৃক্ষচ্ছেদন – জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় কাঠের ব্যবহার, জনবসতি বৃদ্ধি, কৃষি জমির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা, শিল্পকারখানা গুলির প্রসার ইত্যাদি নানান কারণে অতিরিক্ত মাত্রায় গাছ কাটার ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড বনভূমি দ্বারা শোষিত হতে পারছে না। যার ফলে বাতাসে অক্সিজেন এর মান কমছে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড এর মান বাড়ছে।
  3. মিথেন গ্যাসের অতিরিক্ত ব্যবহার – মিথেন হলো প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস গুলির মধ্যে অন্যতম। কৃষি জমিতে জমে থাকা জল, গবাদি পশুর মল মুত্র এবং বিভিন্ন পচনশীল আবর্জনা থেকে সৃষ্ট মিথেন গ্যাস বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  4. ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ব্যবহার – এখনকার দিনে প্রচুর পরিমাণে রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশন মেশিন, রুম হিটার ইত্যাদি ইলেকট্রনিক শিল্প গুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন নির্গত হয় এবং প্রসাধনী সামগ্রী তৈরিতেও প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ব্যবহৃত হয় যা বিশ্ব উষ্ণায়ন বাড়াতে মারাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করে।
  5. শিল্পদানবের ক্রমবর্ধন – শিল্পায়নের আগমনে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলকারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর দূষক পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে। 2013 সালে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আন্তঃসরকারি প্যানেল রিপোর্ট করেছে যে 1880 থেকে 2012 সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি 0.9°C সেলসিয়াস হয়েছে। যা শিল্পায়নের পূর্বের গড় তাপমাত্রার তুলনায় বৃদ্ধি 1.1° C।
  6. কৃষিক্ষেত্রের ক্লেশ – কৃষিক্ষেত্রে আগাছা-লতা পাতার পচন, গৃহস্থ বর্জ্য, কৃষিজাত বর্জ্য, জীবজন্তুর বর্জ্য থেকে ব্যাপক পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে। বায়ুমণ্ডলে গ্রীন হাউস গ্যাস যোগ করে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ায়। যা মোটেও কাম্য নয়৷
  7. জগতে জনবিস্ফোরণ – পৃথিবীতে প্রানবায়ু অক্সিজেনের পরিমাণ সীমিত হওয়ার দরুন ব্যাপক জনসমুদ্র থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড পৃথিবীর দম আটকাতে সফল। এর ফলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অনেকগুন বেড়ে গিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রাকৃতিক কারণ –

  1. আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত – আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক অবদানকারী। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় নির্গত ছাই, সালফারের কনা এবং ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলে মিশে যায় এবং জলবায়ুকে প্রভাবিত করে।
  2. জলীয় বাষ্পের বলয় – জলীয় বাষ্প এক ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাস। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে, জলাশয় থেকে আরও বেশি জল বাষ্পীভূত হয় এবং বায়ুমণ্ডলে থাকে যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।
  3. ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত মৃত্তিকা – হিমায়িত মাটি যাতে পরিবেশগত গ্যাসগুলি বেশ কয়েক বছর ধরে আটকে থাকে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠের নীচে উপস্থিত থাকে। এটি হিমবাহে বিদ্যমান। পারমাফ্রস্ট গলে যাওয়ার সাথে সাথে এটি বায়ুমণ্ডলে গ্যাসগুলিকে আবার ছেড়ে দেয়, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
  4. দাবানলের দাপট – বনের দাবানল প্রচুর পরিমাণে কার্বনযুক্ত ধোঁয়া, যেমন – কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), কার্বন মনোঅক্সাইড (CO), মিথেন (CH4) প্রচুর এরোসেল নির্গত করে। এই গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয় এবং এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বিশ্ব উষ্ণায়ন কী?

বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়াকে বোঝায়। এটি মূলত গ্রিনহাউস গ্যাস (যেমন – CO2, CH4, CFC) এর অতিরিক্ত নিঃসরণের কারণে ঘটে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান মানবসৃষ্ট কারণগুলি কী কী?

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান মানবসৃষ্ট কারণগুলি হল –
1. জীবাশ্ম জ্বালানি (পেট্রোল, ডিজেল, কয়লা) পোড়ানো।
2. অপরিকল্পিত বৃক্ষচ্ছেদন (বন ধ্বংস)।
3. শিল্পকারখানা ও যানবাহন থেকে দূষণ।
4. মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ (গবাদি পশু, কৃষি বর্জ্য)।
5. ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) এর ব্যবহার (এয়ার কন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর)।
6. জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অত্যধিক শক্তি ব্যবহার।

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রাকৃতিক কারণগুলি কী?

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রাকৃতিক কারণগুলি হল –
1. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত (CO2, SO2 নিঃসরণ)।
2. জলীয় বাষ্পের বৃদ্ধি।
3. পারমাফ্রস্ট (হিমায়িত মাটি) গলন।
4. দাবানল থেকে কার্বন নিঃসরণ।

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব কী?

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব হল –
1. জলবায়ু পরিবর্তন (অতিবৃষ্টি, খরা, ঘূর্ণিঝড়)।
2. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি (বরফ গলার কারণে)।
3. জীববৈচিত্র্য ধ্বংস (প্রাণী ও উদ্ভিদের বিলুপ্তি)।
4. কৃষির উপর নেতিবাচক প্রভাব (ফসল উৎপাদন কমে যাওয়া)।
5. মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি (তাপপ্রবাহ, শ্বাসকষ্ট)।

বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে কী করা যেতে পারে?

1. নবায়নযোগ্য শক্তি (সৌর, বায়ু, জলবিদ্যুৎ) ব্যবহার বৃদ্ধি।
2. বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণ।
3. শিল্প ও যানবাহনে দূষণ নিয়ন্ত্রণ।
4. প্লাস্টিক ও ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (CFC) ব্যবহার কমানো।
5. জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারি নীতি প্রয়োগ।

গ্রিনহাউস গ্যাস কী? এগুলি কীভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটায়?

গ্রিনহাউস গ্যাস (CO2, CH4, N2O, CFC) সূর্যের তাপ শোষণ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকে রাখে, যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কেন বাড়ছে?

গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে মেরু অঞ্চলের বরফ ও হিমবাহ গলে যাচ্ছে, ফলে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ গুলো কী কী আলোচনা করো?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ গুলো কী কী আলোচনা করো?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “পরিবেশের জন্য ভাবনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতের ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো

ভারতের ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভারতের গম উৎপাদক অঞ্চলগুলির পরিচয় দাও

ভারতের গম উৎপাদক অঞ্চলগুলির পরিচয় দাও।

মিলেট চাষের অনুকূল পরিবেশ ব্যাখ্যা করো

মিলেট চাষের অনুকূল পরিবেশ ব্যাখ্যা করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতের ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভারতের গম উৎপাদক অঞ্চলগুলির পরিচয় দাও।

মিলেট চাষের অনুকূল পরিবেশ ব্যাখ্যা করো।

কফি চাষের অনুকূল অবস্থাগুলি লেখো।

বায়োগ্যাস কাকে বলে? বায়োগ্যাসের ব্যবহার ও বায়োগ্যাস কীভাবে সৃষ্টি করা হয়?