বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বর্ণনা করো। সমুদ্রজলের লবণাক্ততা কীভাবে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে সহায়তা করে?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বর্ণনা করো। সমুদ্রজলের লবণাক্ততা কীভাবে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে সহায়তা করে?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বর্ণনা করো। সমুদ্রজলের লবণাক্ততা কীভাবে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে সহায়তা করে?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বর্ণনা করো।
বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বর্ণনা করো।
Contents Show

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বর্ণনা করো।

অথবা, ‘এল-নিনো’ ও ‘লা-নিনা’ বিশ্ব জলবায়ুকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে কীভাবে?

বিশ্ব জলবায়ুর পরিবর্তনে এল-নিনো ও ‘লা-নিনার’ প্রভাব –

বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রে ব্যতিক্রমী অনিয়মিত সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়, যা বিশ্ব জলবায়ুকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এমনই দুটি সমুদ্রস্রোত হল ‘এল-নিনো’ এবং ‘লা-নিনা’।

এল-নিনো – দক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে 2-7 বছর অন্তর ডিসেম্বর মাসে উত্তরমুখী শীতল পেরু স্রোতের পরিবর্তে দক্ষিণমুখী অস্থির উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়। এরূপ অনিয়মিতভাবে প্রবাহিত উষ্ণ জলপ্রবাহকে এল-নিনো বলে। এল-নিনো প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী ও অন্যান্য অঞ্চলের জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন ঘটায়। এই কারণে দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলীয় মরুভূমি (পেরু-চিলি-ইকুয়েডর) অঞ্চলে (যেখানে সাধারণত বছরে 10-13 সেমি বৃষ্টিপাত হয়) 300-400 সেমি বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে পূর্ব অস্ট্রেলিয়া, নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও ভারতে উষ্ণ-শুষ্ক আবহাওয়া সৃষ্টি হয়ে খরা ও গ্রীষ্মে তাপপ্রবাহ দেখা যায়।

লা-নিনা – পেরু-ইকুয়েডর উপকূলে নিরক্ষীয় পূর্ব, প্রশান্ত মহাসাগরে কয়েক বছর অন্তর শীতকালে শীতল উত্তরমুখী অনিয়মিত পেরুস্রোত সৃষ্টি হয়। একে লা-নিনা বলে। এর প্রভাবে পেরু-চিলি-ইকুয়েডর উপকূলে অনাবৃষ্টির ফলে খরা ও শীতে শৈত্য প্রবাহের সৃষ্টি হয়। দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়াতে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টি, বন্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

সমুদ্রজলের লবণাক্ততা কীভাবে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে সহায়তা করে?

সমুদ্রজলের লবণাক্ততার প্রভাবে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি –

সমুদ্রজলের লবণাক্ততার তারতম্যে ঘনত্বের তারতম্য হয় যা সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে সহায়ক। অধিক লবণাক্ত জল ভারী হওয়ায় সমুদ্রের জলের তলদেশ দিয়ে অন্তঃস্রোতরূপে কম লবণাক্ত হালকা জলের দিকে প্রবাহিত হয়। জলের এই শূন্যতা পূরণের জন্য কম লবণাক্ত ও হালকা জল বহিঃস্রোত রূপে অধিক লবণাক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয়।

উদাহরণ – আটলান্টিক মহাসাগরের কম লবণাক্ত হালকা জল বহিঃস্রোত রূপে ভূমধ্যসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে ভূমধ্যসাগরের অধিক লবণাক্ত বা ভারী জল পৃষ্ঠস্রোত রূপে আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

এল-নিনো ও লা-নিনা কী?

1. এল-নিনো – প্রশান্ত মহাসাগরে নিরক্ষীয় অঞ্চলে উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি (2-7 বছর অন্তর ঘটে)।
2. লা-নিনা – একই অঞ্চলে শীতল সমুদ্রস্রোতের তীব্রতা বৃদ্ধি (এল-নিনোর পরিপূরক ঘটনা)।

এল-নিনো কীভাবে বিশ্ব জলবায়ুকে প্রভাবিত করে?

1. দক্ষিণ আমেরিকা – পেরু-চিলি উপকূলে ভারী বৃষ্টি ও বন্যা।
2. এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া – শুষ্ক আবহাওয়া, খরা (যেমন — ভারত, ইন্দোনেশিয়ায় মৌসুমি বৃষ্টি কমে যাওয়া)।
3. বৈশ্বিক তাপমাত্রা – বাড়িয়ে দেয়, ফলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা কমে।

লা-নিনার প্রভাব কী?

1. দক্ষিণ আমেরিকা – শুষ্ক মৌসুম ও খরা (পেরু-চিলিতে)।
2. এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া – অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি (যেমন — বাংলাদেশে বন্যা)।
3. সমুদ্রের তাপমাত্রা – প্রশান্ত মহাসাগর শীতল থাকায় বিশ্বজুড়ে শীতল আবহাওয়ার প্রবণতা।

সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে লবণাক্ততার ভূমিকা কী?

1. লবণাক্ত জলের ঘনত্ব বেশি → ভারী জল নিম্নমুখী স্রোত সৃষ্টি করে (যেমন — ভূমধ্যসাগর থেকে আটলান্টিকে লবণাক্ত জল প্রবাহ)।
2. কম লবণাক্ত জল হালকা → উপরের দিকে প্রবাহিত হয় (যেমন — বঙ্গোপসাগরে নদীর মিষ্টিজল)।

এল-নিনো/লা-নিনা কতদিন স্থায়ী হয়?

সাধারণত 9-12 মাস, তবে কিছু ঘটনা 2 বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে (যেমন — 1997–98 সালের শক্তিশালী এল-নিনো)।

এই ঘটনাগুলো কি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত?

হ্যাঁ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এল-নিনোর ফ্রিকোয়েন্সি ও তীব্রতা বাড়াচ্ছে (IPCC রিপোর্ট অনুযায়ী)।

ভারতীয় মৌসুমি বৃষ্টিতে এল-নিনোর প্রভাব কী?

1. এল-নিনো চলাকালে মৌসুমি দুর্বল হয় → খরার সম্ভাবনা (যেমন — 2014–16 সালে ভারতের খরা)।
2. লা-নিনায় মৌসুমি শক্তিশালী → অতিবৃষ্টি (2020–21 সালে লা-নিনার সময় বন্যা)।

এল-নিনো ও লা-নিনা কীভাবে শনাক্ত করা হয়?

প্রশান্ত মহাসাগরের SOI (Southern Oscillation Index) এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে।

এই প্রভাবগুলি থেকে রক্ষা পেতে কী করা যায়?

1. পূর্বাভাস – NOAA ও IMD -এর ডেটা ব্যবহার করে কৃষি পরিকল্পনা।
2. অভিযোজন – খরা-প্রতিরোধী ফসল, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

এল-নিনো/লা-নিনা কি শুধু প্রশান্ত মহাসাগরেই হয়?

মূলত প্রশান্ত মহাসাগরে, তবে এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী (আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরেও পরোক্ষ প্রভাব)।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বর্ণনা করো। সমুদ্রজলের লবণাক্ততা কীভাবে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে সহায়তা করে?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বর্ণনা করো। সমুদ্রজলের লবণাক্ততা কীভাবে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে সহায়তা করে?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

কোনো প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে চ্যুতিকোণ(δ) = i1+i2−A

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা