মাধ্যমিক ইতিহাস – প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – বিষয়সংক্ষেপ

Gopi

আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়, “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করব। এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু পড়ার সময় অধ্যায়টির কাঠামো ও প্রধান বিষয়াবলি বুঝতে সাহায্য করবে, যা আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, এই সংক্ষিপ্ত বিবেচনা আপনাদের প্রস্তুতি আরও ভালো করতে সাহায্য করবে।

মাধ্যমিক ইতিহাস - প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ - বিষয়সংক্ষেপ

ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন –

1864 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ভারতে বনবিভাগ গঠন করে। এরপর 1865 খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারতীয় অরণ্য আইন পাস হয়। 1865 খ্রিস্টাব্দের অরণ্য আইনের সংশোধনীরূপে ঔপনিবেশিক সরকার ভারতে 1878 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বার যে আইন পাস করে, তা 1878 খ্রিস্টাব্দের ভারতীয় অরণ্য আইন (Indian Forest Act, 1878) নামে পরিচিত।

এই আইন অনুযায়ী অরণ্য অঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় –

ভারতীয় অরণ্য অঞ্চল –

  1. সংরক্ষিত অরণ্য (Reserved Forest) – সম্পদে পরিপূর্ণ সেরা অরণ্যগুলি ছিল এই পর্যায়ভুক্ত। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন এই – সকল অরণ্য থেকে ভারতীয়দের জ্বালানি – কাঠ ও রসদ সংগ্রহ এবং পশুচারণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
  2. সুরক্ষিত অরণ্য (Protected Forest) – এই ধরনের অরণ্যের ক্ষেত্রে নির্ধারিত কিছু কিছু বৃক্ষ কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তবে স্থানীয় বসবাসকারীদের জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ ও পশুচারণ-সহ কতকগুলি প্রথাগত অধিকার দেওয়া হয়।
  3. শ্রেণি বহির্ভূত অরণ্য (Unclassed or Village Forest) – শ্রেণি বহির্ভূত অরণ্য বা Village Forest হল স্থানীয় সরকার দ্বারা যে-কোনো গ্রাম্যগোষ্ঠীকে চুক্তিপ্রদত্ত বনভূমি, যা সংরক্ষিত অরণ্য হিসেবে গঠিত হবে। সরকার ইচ্ছা করলে একে Village Forest হিসেবেও ঘোষণা করতে পারে। সরকার এই অরণ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন তৈরি করতে পারে। গ্রাম্যগোষ্ঠী এই অরণ্য থেকে প্রয়োজনীয় কাঠ বা অন্যান্য দ্রব্য সংগ্রহ ও চারণের সুবিধা লাভ করতে পারবে। যদিও ব্রিটিশ সরকার ভারতের বেশিরভাগ অংশে এই প্রকার অরণ্যের বিষয়টি প্রয়োগ করেনি।

ঔপনিবেশিক শাসনে সংঘটিত বিভিন্ন উপজাতি এবং কৃষক বিদ্রোহের তালিকা –

বিদ্রোহ/আন্দোলনসময়কালপ্রধান নেতাবিদ্রোহ/আন্দোলনের এলাকা
চুয়াড় বিদ্রোহ (দ্বিতীয় পর্ব)1798-1799 খ্রিস্টাব্দদুর্জন সিং, গোবর্ধন দিকপতি, মোহনলাল, লালসিংমেদিনীপুরের উত্তর, বাঁকুড়ার দক্ষিণ-পশ্চিম ও মানভূমের পূর্বাঞ্চল।
কোল বিদ্রোহ1831-1832 খ্রিস্টাব্দবুদ্ধু ভগত, জোয়া ভগত, ঝিন্দরাই মানকি, সুই মুন্ডাসিংভূম, মানভূম, হাজারিবাগ, পালামৌ (ছোটোনাগপুর অঞ্চল)।
সাঁওতাল বিদ্রোহ (বিদ্রোহ-হুল)1855-1856 খ্রিস্টাব্দসিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরবদামিন-ই-কোহ (রাজমহল পাহাড়ের প্রান্তদেশ, ভগনাডিহির মাঠ থেকে সূত্রপাত হয় এবং মুরশিদাবাদের একাংশ)।
মুন্ডা বিদ্রোহ (বিদ্রোহ-উলগুলান)1899-1900 খ্রিস্টাব্দবিরসা মুন্ডা, গয়া মুন্ডাছোটোনাগপুর অঞ্চল (রাঁচি, সিংভূম, হাজারিবাগ)।
রংপুর বিদ্রোহ1783 খ্রিস্টাব্দনুরুলউদ্দিনরংপুর, দিনাজপুর।
ভিল বিদ্রোহ1819 খ্রিস্টাব্দ (পরবর্তীকালে 1825, 1836, 1846 খ্রিস্টাব্দেও হয়)শিউরামখান্দেশ, ধার, মালব।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ1763-1800 খ্রিস্টাব্দভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরাণী, মজনু শাহ, মুসা শাহ, চিরাগ আলি।বাংলাদেশের ঢাকা, বগুড়া, রংপুর, কোচবিহার, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর।
ওয়াহাবি আন্দোলন
বাংলা-বারাসত বিদ্রোহ
1820 খ্রিস্টাব্দ
1831 খ্রিস্টাব্দ
ভারতে-শাহ ওয়ালিউল্লাহ, আজিজ, সৈয়দ আহমদ ব্রেলভি।
বাংলায়-তিতুমির (মির নিশার আলি)
ভারতে-দিল্লি, যুক্তপ্রদেশ, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ
বাংলায়-বারাসত, নারকেলবেড়িয়া (বাঁশের কেল্লা), 24 পরগনা, নদিয়া, যশোহর, রাজশাহি, ঢাকা, মালদহ।
ফরাজি আন্দোলন1818-1906 খ্রিস্টাব্দহাজি শরিয়ঊল্লাহ, মহম্মদ মহসিন (দুদু মিঞা), নোয়া মিঞা, বাদশাহ মিঞা।বাংলা-প্রধান কেন্দ্র-বাহাদুরপুর, ফরিদপুর, 24 পরগনা, খুলনা, ময়মনসিংহ, ঢাকা, কুমিল্লা, যশোহর।
পাগলপন্থী বিদ্রোহ1824-1827 খ্রিস্টাব্দটিপু শাহশেরপুর, ময়মনসিংহ।
নীল বিদ্রোহ1859-1860খ্রিস্টাব্দবিষ্ণুচরণ বিশ্বাস, দিগম্বর বিশ্বাসবাংলা-সূচনা-নদিয়ার চৌগাছা গ্রাম। নদিয়া, 24 পরগনা, মুরশিদাবাদ, মালদহ, ফরিদপুর, রাজশাহি, খুলনা, যশোহর।
পাবনা বিদ্রোহ1870 খ্রিস্টাব্দঈশানচন্দ্র রায়, শম্ভুনাথ পালবাংলা-পাবনা, ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া ।

ঔপনিবেশিক ভারতে সংঘটিত আরও কতকগুলি উল্লেখযোগ্য বিদ্রোহ –

বিদ্রোহসময়কালনেতাবিদ্রোহের এলাকা
সন্দীপ বিদ্রোহ1769 খ্রিস্টাব্দআবু তোরাপ চৌধুরিনোয়াখালি।
পলিগার বিদ্রোহ1799-1805 খ্রিস্টাব্দভিপি কাট্টাবোম্মানতামিলনাড়ু।
মোপলা বিদ্রোহ1835-1921সৈয়দ আলাবিমালাবার উপকূল।
থাম্পি বিদ্রোহ1808-1809 খ্রিস্টাব্দদেওয়ান ভেলুথাম্পিত্রিবাঙ্কুর।
বেরিলি বিদ্রোহ1816 খ্রিস্টাব্দমুফতি মহম্মদ আইওয়াজবেরিলি, রামপুর, আলিগড়।
পাইক বিদ্রোহ1817-1818 খ্রিস্টাব্দবিদ্যাধর মহাপাত্রউড়িষ্যার খুরদা।
বাঘেরা বিদ্রোহ1818-1820 খ্রিস্টাব্দবাঘেরা সর্দারওখা ডিভিসন।
ভারতের উপজাতি বিদ্রোহের স্থান

বিভিন্ন ভাষার শব্দ এবং তার অর্থসমূহ –

শব্দঅর্থ
দামিন-ই-কোহপাহাড়ের প্রান্তদেশ।
দিকুবহিরাগত অত্যাচারী ব্যক্তি।
হুলবিদ্রোহ।
উলগুলানবিরাট তোলপাড়, প্রবল বিক্ষোভ/ভয়ংকর বিশৃঙ্খলা।
সিং বোঙাসূর্য দেবতা।
ওয়াহাবিনবজাগরণ।
ফরাজিইসলাম নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য।
তারিকা-ই-মহম্মদীয়ামহম্মদ প্রদর্শিত পথ।
রায়তকৃষক।
দাদনঅগ্রিম অর্থ নেওয়া।
ডহরখোলা বা উন্মুক্ত ক্ষেত্র।
দার-উল-হারবশত্রুর দেশ/বিধর্মীর দেশ।

বিভিন্ন কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে লেখা কয়েকটি বিখ্যাত বাংলা রচনা এবং তার রচয়িতাগণ –

রচনাপ্রেক্ষাপটরচয়িতা
আনন্দমঠসন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
নীলদর্পণনীল বিদ্রোহদীনবন্ধু মিত্র।
অরণ্যের অধিকারমুন্ডা বিদ্রোহমহাশ্বেতা দেবী।
চট্টি মুন্ডা এবং তার তিরমুন্ডা বিদ্রোহমহাশ্বেতা দেবী।
তিতুমিরবারাসত বিদ্রোহমহাশ্বেতা দেবী।
অরণ্যের অধিকার গ্রন্থের প্রচ্ছদ

ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বাংলার গভর্নর –

রবার্ট ক্লাইভ (প্রথম বার)1757-1760 খ্রিস্টাব্দ
ভ্যান্সিটার্ট1760-1764 খ্রিস্টাব্দ
রবার্ট ক্লাইভ (দ্বিতীয় বার)1765-1767 খ্রিস্টাব্দ
ভেরেলেস্ট1767-1769 খ্রিস্টাব্দ
কার্টিয়ার1769-1772 খ্রিস্টাব্দ
ওয়ারেন হেস্টিংস1772-1774 খ্রিস্টাব্দ

ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বাংলার গভর্নর জেনারেলগণ – (1773 খ্রিস্টাব্দে রেগুলেটিং অ্যাক্ট অনুসারে নিযুক্ত) –

ওয়ারেন হেস্টিংস1774-1785 খ্রিস্টাব্দ
স্যার জন ম্যাকফারসন1785-1786 খ্রিস্টাব্দ
লর্ড কর্নওয়ালিস (প্রথম বার)1786-1793 খ্রিস্টাব্দ
স্যার জন শোর1793-1798 খ্রিস্টাব্দ
স্যার এ ক্লার্ক1798 খ্রিস্টাব্দ
লর্ড ওয়েলেসলি1798-1805 খ্রিস্টাব্দ
লর্ড কর্নওয়ালিস (দ্বিতীয় বার)1805 খ্রিস্টাব্দ
স্যার জর্জ বার্লো1805-1807 খ্রিস্টাব্দ
প্রথম লর্ড মিন্টো1807-1813 খ্রিস্টাব্দ
লর্ড হেস্টিংস (লর্ড ময়রা)1813-1823 খ্রিস্টাব্দ
জন অ্যাডাম1823 খ্রিস্টাব্দ
লর্ড আমহার্স্ট1823-1828 খ্রিস্টাব্দ
উইলিয়ম বি বেইলি1828 খ্রিস্টাব্দ
লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক1828-1833 খ্রিস্টাব্দ

(1833 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইন অনুসারে নিযুক্ত)

লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক1833-1835 খ্রিস্টাব্দ
স্যার চার্লস মেটকাফ1835-1836 খ্রিস্টাব্দ
লর্ড অকল্যান্ড1836-1842 খ্রিস্টাব্দ
লর্ড এলেনবরা1842-1844 খ্রিস্টাব্দ
উইলিয়ম ডব্লিউ বার্ড1844 খ্রিস্টাব্দ
প্রথম লর্ড হার্ডিঞ্জ1844-1848 খ্রিস্টাব্দ
লর্ড ডালহৌসি1848-1856 খ্রিস্টাব্দ
লর্ড ক্যানিং1856-1858 খ্রিস্টাব্দ

আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়, “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছে। এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু পড়ার সময় অধ্যায়টির কাঠামো ও প্রধান বিষয়াবলি বুঝতে সাহায্য করবে, যা আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।

Please Share This Article

Related Posts

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো -

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো।

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো।

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অবস্থান ও প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী তা আলোচনা করো।