আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পঞ্চম অধ্যায় “পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ” অধ্যায়ের ‘পরিবেশ এবং মানব জনসমষ্টি‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

মানব জনসমষ্টি বা পপুলেশনের সংজ্ঞা দাও।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মোট সংখ্যাকে মানব জনসমষ্টি বলা হয়।
আদমশুমারি কাকে বলে?
জনগণনা এবং জনগণনা-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কাজকে বলে আদমশুমারি। ভারতে প্রতি 10 বছর অন্তর জনগণনা করা হয়। ভারতে সর্বশেষ জনগণনা করা হয় 2011 সালে।
জনবিস্ফোরণ বা অতিপ্রজতা কাকে বলে?
অনিয়ন্ত্রিত জন্মহারের কারণে কোনো নির্দিষ্ট পপুলেশনের আকৃতি যদি এমন হয় যে, তার সদস্য সংখ্যা ধারণ ক্ষমতাকে অতিক্রম করে, তাহলে সেই অবস্থাকে জনবিস্ফোরণ বা অতিপ্রজতা বলে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ কী?
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি হল –
- শিক্ষার অভাব, কুসংস্কার ও ধর্মীয় প্রভাবের জন্যই মূলত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জন্মহার বেশি যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ।
- খাদ্য, ওষুধপত্র ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র অধিক উৎপাদনের ফলে মানুষের গড় আয়ু যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মৃত্যুর হারও কমেছে।
- বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম অনুমান ও বিভিন্ন মহামারিজনিত রোগের প্রকোপ কম হওয়াতে জনসংখ্যাও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির দুটি ক্ষতিকারক দিক উল্লেখ করো।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির দুটি ক্ষতিকারক দিক হল –
প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার –
খনিজ তেল ও অন্যান্য খনিজ উপাদান, জলাভূমি, খাদ্য প্রভৃতির অতিরিক্ত ব্যবহারে প্রাকৃতিক সম্পদ নিঃশেষিত অবস্থায় এসে পৌঁছেছে।
পরিবেশদূষণ –
অতিরিক্ত জনসংখ্যার উন্নয়নের ধবল চাপে বায়ু, মাটি, জল, শব্দ প্রভৃতির দূষণ প্রবল হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মানব জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীববৈচিত্র্যের দুটি ক্ষতি লেখো।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীববৈচিত্র্যের দুটি ক্ষতি হল –
- জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বনভূমি বিনাশ করে বাসস্থান সৃষ্টির ঘটনা ঘটে। ফলে জীবের বাসস্থান হ্রাস পায় ও জীববৈচিত্র্য যা কষ্টের সম্মুখীন হয়।
- জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বায়ু ও জলদূষণ বৃদ্ধি পায় যা জীবের বেঁচে থাকার নানা সমস্যা সৃষ্টি করে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবেশগত বাধা কী কী?
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবেশগত বাধাগুলি হল –
- খাদ্যের অভাব।
- জল ও বাসস্থানের অভাব।
- রোগের প্রাদুর্ভাব।
- দুর্ভিক্ষ ও মহামারি।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অরণ্য বিনাশ করা হলে কী সমস্যা হয়?
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অরণ্য বিনাশের সমস্যাগুলি হল –
- বৃষ্টিপাতের মাত্রা হ্রাস পায় ও তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
- ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায় ও মরুকরণ ঘটে থাকে।
- জীবের বাসস্থান ও খাদ্যের অভাব ঘটে, ফলে জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি ঘটে।
- জলদূষণ ও বায়ুদূষণ ঘটে থাকে।
ক্রমাগত জলাভূমি ধ্বংস ও কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাসের পরিবেশগত পরিণাম কী কী হতে পারে?
জলাভূমি ধ্বংসের পরিবেশগত পরিণাম হল –
- জলাভূমিতে যে জলজ জীবগুলি বসবাস করে (যেমন – জলজ গাছ, মাছ, ব্যাং, সাপ ইত্যাদি) তাদের বৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে।
- পৃথিবীব্যাপী জলের অভাব দেখা দিচ্ছে।
- স্থানীয় আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।
কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাসের পরিবেশগত পরিণাম হল –
- উৎপাদিত খাদ্যশস্যের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে ও খাদ্যের অভাব প্রকট হয়ে উঠছে।
- স্বল্প পরিমাণ জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের প্রচেষ্টায় জমিতে রাসায়নিক সার অধিক মাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়াও অধিক জলসেচের ফলে জলের অভাব দেখা দিচ্ছে।
- অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে উচ্চফলনশীল শস্যবীজ ব্যবহৃত হওয়ায় কোনো শস্যের স্থানীয় ভ্যারাইটিগুলি লোপ পাচ্ছে। ফলে জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হচ্ছে।
জলাশয়কে প্রকৃতির বৃক্ক বলা হয় কেন?
জলাশয় পরিবেশের দূষকগুলি থিতিয়ে, পরিস্রাবণ করে পরিবেশকে পরিশ্রুত রাখে। বৃক্ক যেমন রক্তকে পরিশ্রুত করে দেহকে সুস্থ রাখে, জলাশয়ও তেমনি স্থানীয় পরিবেশের দূষক হ্রাস করে। এ ছাড়া বর্ষাকালে অতিরিক্ত জল সংগ্রহ করে ও গ্রীষ্মে জলের জোগান দিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখে।
অ্যাজমা বা হাঁপানির কারণগুলি কী কী?
অ্যাজমা বা হাঁপানির কারণগুলি হল –
পরিবেশগত কারণ –
বিভিন্ন প্রাকৃতিক অ্যালারজেন -এর সংস্পর্শে রোগটি বৃদ্ধি পায়, যেমন – প্রাণীর মল, উদ্ভিদের পরাগরেণু, ধুলো ও ছত্রাক। এ ছাড়া, বিভিন্ন গৌণ দূষক, যেমন – ওজোন, ফরম্যালডিহাইড, PAN প্রভৃতি অ্যালারজেনের প্রভাব বাড়িয়ে দিয়ে অ্যাজমার প্রকোপ বৃদ্ধি করে।
মনুষ্যসৃষ্ট কারণ –
কলকারখানা বা গৃহে কয়লা, তেলের দহনে সৃষ্ট ধোঁয়া, কলকারখানায় সৃষ্ট সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2), নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড ইত্যাদি।
হাঁপানির রোগ লক্ষণগুলি লেখো।
হাঁপানির রোগ লক্ষণগুলি হল –
- কাশি প্রধানত রাতের দিকে কাশি হওয়া।
- দম বন্ধ হয়ে আসা।
- বুকে চাপ অনুভব করা।
- বুকে সাঁইসাঁই আওয়াজ হওয়া।
অ্যাসবেসটোসিস কী?
অ্যাসবেসটসের কণা ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসতন্ত্রের যে রোগ সৃষ্টি করে তাকে অ্যাসবেসটোসিস বলে। এর ফলে ফাইব্রোসিস ও প্লুরা পর্দার ক্যানসার হতে পারে।
ব্রংকাইটিসের রোগ লক্ষণগুলি লেখো।
ব্রংকাইটিসের রোগ লক্ষণগুলি হল –
- কাশি ও শ্বাসকষ্ট।
- ক্লান্তি।
- স্বল্প জ্বর ও ঠান্ডাবোধ।
- বুকে চাপ ধরা অর্থাৎ দমবন্ধভার।
মানুষের ফুসফুস ক্যানসারের একটি কারণ ও একটি উপসর্গ লেখো।
অংশ প্রশ্ন, ক্যানসারের জন্য দায়ী মানবসৃষ্ট কারণগুলি লেখো।
ফুসফুস ক্যানসারের কারণ হল – মানুষের ফুসফুস ক্যানসারের একটি কারণ হল ধূমপান। তামাকজাত ধোঁয়ায় ফরম্যালডিহাইড, অ্যাসিট্যালডিহাইড প্রভৃতি কারসিনোজেন থাকে। এ ছাড়াও দূষিত পরিবেশে দীর্ঘদিন বসবাস করার ফলেও ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে।
ফুসফুস ক্যানসারের উপসর্গ হল – এই রোগে অনবরত কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত নির্গমন ঘটে থাকে। তা ছাড়াও গলায় ঘরঘর শব্দ, শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা, নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিস সংক্রমণও ঘটে থাকে।
কারসিনোজেন কী?
যে সকল ভৌত বা রাসায়নিক পদার্থ বা রশ্মি, কোশের DNA – এর মধ্যে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটানোর মাধ্যমে ক্যানসার সৃষ্টিতে সক্ষম হয়, তাকে কারসিনোজেন বলে। এটি হল একপ্রকার মিউটাজেন (মিউটেশন ঘটাতে সক্ষম পদার্থ)।
অঙ্কোভাইরাস কী?
কিছুকিছু ভাইরাস, যেমন – হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, হেপাটাইটিস C ভাইরাস ইত্যাদি মানবদেহে ক্যানসার সৃষ্টি করতে সক্ষম। ক্যানসার সৃষ্টিকারী ভাইরাসদের অঙ্কোভাইরাস বলে।
সিগারেট বা বিড়ির ধোঁয়ায় উপস্থিত তিনটি কারসিনোজেনের নাম লেখো যেগুলি ফুসফুস ক্যানসার ঘটায়।
সিগারেট বা বিড়ির ধোঁয়ায় উপস্থিত তিনটি কারসিনোজেন, যেগুলি ফুসফুস ক্যানসার ঘটায়, সেগুলি হল – অ্যাসিট্যালডিহাইড, ভিনাইল ক্লোরাইড, ফরম্যালডিহাইড।
ক্যানসার সৃষ্টিকারী দুটি রাসায়নিক পদার্থের নাম লেখো।
অথবা, রাসায়নিক কারসিনোজেন -এর নাম লেখো।
ক্যানসার সৃষ্টিকারী দুটি রাসায়নিক পদার্থ হল – বেঞ্জোপাইরিন (অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন, যা তামাক সেবনের ফলে দেহে প্রবেশ করে) এবং EMS (ইথাইল মিথেন সালফোনেট)।
ক্যানসার সৃষ্টির প্রধান দুটি পর্যায় কী কী?
ক্যানসার সৃষ্টির প্রধান দুটি পর্যায় হল –
- ক্যানসার সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে স্বাভাবিক কোশের মধ্যে জিনগত পরিবর্তনের কারণে কোশে দ্রুত অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু হয় এবং সেখান থেকে টিউমার সৃষ্টি হয়।
- দ্বিতীয় পর্যায়ে ম্যালিগ্যান্ট টিউমারের কোশগুলির আন্তরকোশীয় সংযোগ বিনষ্ট হওয়ায় তা রক্ত বা লসিকায় বাহিত হয়ে অন্য স্থানে পৌঁছোয় (মেটাস্ট্যাসিস) ও অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন শুরু করে গৌণ টিউমার তৈরি করে রোগটি দেহে ছড়িয়ে দেয়।
ওভার পপুলেশন কীভাবে জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব ফেলে আলোচনা করো।
- ওভার পপুলেশনের ফলে মিষ্ট জলের সংকট দেখা যায়। ফলে জীব সংকটগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
- বনজ সম্পদের অধিক আহরণের ফলে জীবের বাসস্থান, খাদ্য ও প্রজননে সমস্যা দেখা দেয়। ও অধিক দূষণের ফলে জীব ও তার বাসস্থান বিনষ্ট হয়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি কীভাবে বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন ঘটায়?
- শিল্প, কৃষি ও অন্যান্য স্বাচ্ছন্দ্য দানকারী পদার্থের ব্যবহারের ফলে নানা দূষক, যেমন – গ্রিনহাউস গ্যাস (CH4, CFCs) পরিবেশে মুক্ত হয়। এগুলি বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটায়।
- জনসংখ্যা বৃদ্ধি বনবিনাশের কারণ। এর ফলে মরুকরণ ঘটে, ফলে বৃষ্টিপাতের ধরনের পরিবর্তন ঘটে এবং বৃষ্টিপাতের সামগ্রিক মাত্রাও হ্রাস পায়।
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পঞ্চম অধ্যায় “পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ” অধ্যায়ের ‘পরিবেশ এবং মানব জনসমষ্টি‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন