মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Rahul

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের একটি অংশ হিসেবে পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই বিষয়ে সম্পদ অর্জনের প্রক্রিয়া, পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের গুরুত্ব, পরিবেশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নিয়ম এবং নীতি, সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং তার কার্যকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করা হয়।

Table of Contents

জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণের বিষয়েও মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়। এখানে জীববৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনা করে জীবনপ্রক্রিয়া, সমদার বৈচিত্র্য, একটি জীবাণু এবং জীবনের অন্যান্য আশঙ্কাসমূহ সম্পর্কে জানা হয়। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হলো জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করার উপায় এবং তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।

প্রজাতি কাকে বলে?

জিনতত্ত্বগতভাবে স্বতন্ত্র একই বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবগোষ্ঠী, যারা নিজেদের মধ্যে প্রজননশীল এবং প্রজননগতভাবে অন্য জীবগোষ্ঠী থেকে পৃথক, তাদের প্রজাতি বলে ৷

এনডেমিক প্রজাতি কাকে বলে?

যে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বাস করে, তাকে ওই অঞ্চলের এনডেমিক প্রজাতি বলে। যেমন— ভারতীয় সিংহ (গির), মুগা রেশম (অসম)।

জীববৈচিত্র্য কাকে বলে?

স্থলভূমি, সমুদ্র বা অন্য জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রে উপস্থিত বিভিন্ন জীবের প্রজাতিগত, আন্তঃপ্রজাতিগত এবং বাস্তুতান্ত্রিক বিভিন্নতাকে জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি বলে।জীববৈচিত্র্য কাকে বলে

জীববৈচিত্র্যকে কতগুলি আন্তঃসম্পর্কিত ধারণা দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং সেগুলি কী কী?

জীববৈচিত্র্যকে তিনটি আন্তঃসম্পর্কিত ধারণা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সেগুলি হল — 1. জিনগত বৈচিত্র্য, 2. প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং 3. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।

জিনগত বৈচিত্র্য কী?

বিভিন্ন প্রজাতির জীবের জিন ও ক্রোমোজোমের বৈচিত্র্য এবং কোনো একটি প্রজাতির জিনের ভেদ বা ভেরিয়েশন হল জিনগত বৈচিত্র্য। একই প্রজাতির প্রত্যেক জীবের মধ্যে জিনগত গঠনের সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়, যার জন্য এরা একে অন্যের থেকে সামান্য আলাদা হয়।

প্রজাতি বৈচিত্র্য কী?

কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বিবিধ প্রজাতির জীবের উপস্থিতি এবং তাদের আপেক্ষিক প্রাচুর্যকে প্রজাতি বৈচিত্র্য বলে। এই পৃথিবীর প্রত্যেক প্রজাতির নিজস্ব জিনগত গঠন বর্তমান। এই কারণে একটি প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতি কিছুটা আলাদা হয়।

বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য কী?

একটি বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদান বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবদের নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের জীবের গঠন ও বৈচিত্র্যকেই বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে।

জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বা বায়োডাইভারসিটি হটস্পট বলতে কী বোঝ?

পৃথিবীতে যেসব অঞ্চলে খুব বেশি সংখ্যক বিপদগ্রস্ত প্রজাতির এমন জীব পাওয়া যায়, যা অন্য আর কোথাও পাওয়া যায় না, ওই সব অঞ্চলকে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বা বায়োডাইভারসিটি হটস্পট বলে।

বাস্তুতান্ত্ৰিক বৈচিত্র্য কত প্রকার ও কী কী?

বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য তিন প্রকার। যথা — 1. আলফা বৈচিত্র্য, 2. বিটা বৈচিত্র্য এবং 3. গামা বৈচিত্র্য।

আলফা বৈচিত্র্য বলতে কী বোঝ?

একটি নির্দিষ্ট বাসস্থান বা কমিউনিটির অন্তর্গত জীবগোষ্ঠী পরস্পরের সঙ্গে আলফা বৈচিত্র্য দ্বারা যুক্ত। আলফা বৈচিত্র্য প্রকৃতপক্ষে আন্তঃকমিউনিটি বৈচিত্র্য নির্দেশ করে।

বিটা বৈচিত্র্য বলতে কী বোঝ?

একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক ক্ষেত্রে একটি পরিবেশ থেকে অন্য একটি পরিবেশে প্রজাতির পরিবর্তন বা প্রতিস্থাপন হার দ্বারা বিটা বৈচিত্র্য নির্ধারিত হয়। বিটা বৈচিত্র্য হল দুটি আলফা বৈচিত্র্যের মধ্যে উপস্থিত জীববৈচিত্র্য। অধিক বিটা বৈচিত্র্যের অর্থ বিভিন্ন বাসস্থানে উপস্থিত প্রজাতির সাদৃশ্য কম হওয়া।

গামা বৈচিত্র্য বলতে কী বোঝ?

ভিন্ন ভৌগোলিক ক্ষেত্রে একই রকম পরিবেশের প্রজাতির পরিবর্তন বা প্রতিস্থাপন দ্বারা গামা বৈচিত্র্য পরিমাপ করা হয়। গামা বৈচিত্র্য প্রকৃতপক্ষে একটি বৃহদাকার অঞ্চলের আলফা এবং বিটা বৈচিত্র্যের সমন্বয়ের রূপ। অধিক গামা বৈচিত্র্যের অর্থ প্রজাতির পৃথক্করণ এবং ভৌগোলিক অংশীদারত্ব না থাকা।

ভারতের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রধান আইনগুলি কী কী?

ভারতের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রধান আইনগুলি হল — 1. দ্য ওয়াইল্ড লাইফ (প্রোটেকশন) অ্যাক্ট, 1972; 2. দ্য ফরেস্ট (কনজারভেশন) অ্যাক্ট, 1980; 3. দ্য এনভায়রনমেন্ট (প্রোটেকশন) অ্যাক্ট, 1986; 4. বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট, 2002।

ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জীববৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়?

ভারতের উত্তর-পূর্ব হিমালয় অঞ্চল, ইন্দো-বার্মা অঞ্চল, পশ্চিমঘাট বনাঞ্চল, আন্দামান-নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ, গুজরাট ও তামিলনাড়ুর সামুদ্রিক প্রবাল প্রাচীরে প্রচুর পরিমাণে জীববৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।

পূর্ব হিমালয়কে ‘বায়োডাইভারসিটি হটস্পট’ বলার কারণ কী?

পূর্ব হিমালয় বহু এনডেমিক প্রজাতির উৎপত্তিস্থল। এখানে প্রায় 5800 প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এদের মধ্যে 2000টি প্রজাতি এনডেমিক। এখানে 45টি স্তন্যপায়ী, 50 টি পাখি, 17টি সরীসৃপ এবং 36টি উদ্ভিদ প্রজাতিসহ মোট 163টি বিপন্ন প্রজাতি বাস করে।

পূর্ব হিমালয় এবং সুন্দাল্যান্ড-এর কোন্ কোন্ অংশ বায়োডাইভারসিটি হটস্পটের অন্তর্গত?

পূর্ব হিমালয়ের অংশগুলি হল — সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ, অসম এবং অরুণাচল প্রদেশ। সুন্দাল্যান্ড-এর অংশগুলি হল — দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুমাত্রা ও বোর্নিং এবং ভারতের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।

কোন্ বিজ্ঞানী কত খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ‘বায়ো ডাইভারসিটি হটস্পট’ কথাটি ব্যবহার করেন?

জীববিজ্ঞানী নরম্যান মায়ার্স (Norman Myers), 1988 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম, ‘বায়োডাইভারসিটি হটস্পট’ কথাটি ব্যবহার করেন।

ভারতের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-এর নাম উল্লেখ করো।

ভারতের জীববৈচিত্র্যের হটস্পটগুলি হল — 1. পূর্ব হিমালয়, 2. পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা, 3. ইন্দো-বার্মা এবং 4. সুন্দাল্যান্ড।
ভারতের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-এর নাম উল্লেখ করো ।

ওয়েস্টার্ন ঘাটস্ ও শ্রীলঙ্কা — এই অংশে ভারতের কোন্ কোন্ রাজ্য অন্তর্ভূক্ত?

ওয়েস্টার্ন ঘাটস্ ও শ্রীলঙ্কা অংশে ভারতের যে রাজ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত তা হল — গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং কেরল।

পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা-কে বায়োডাইভারসিটি হটস্পট বলার কারণ কী?

পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা অংশে প্রায় 5000 প্রজাতির সংবহনকলাযুক্ত উদ্ভিদ জন্মায়, যাদের মধ্যে 1700টি প্রজাতি এনডেমিক। এ ছাড়া, প্রাণীদের মধ্যে 140টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে 20টি প্রজাতি এনডেমিক। পাখির ক্ষেত্রে 450টি প্রজাতির মধ্যে 35টি প্রজাতি এনডেমিক। সরীসৃপের ক্ষেত্রে 260টি প্রজাতির মধ্যে 175টি প্রজাতি এবং উভচরের ক্ষেত্রে 135টি প্রজাতির মধ্যে 130টি প্রজাতি এনডেমিক।

‘কনজারভেশন ইনটারন্যাশনাল’ সংস্থা একটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-রূপে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কোন্ দুটি শর্ত তুলে ধরেছে?

পরিবেশ-সংক্রান্ত সংস্থা ‘কনজারভেশন ইনটারন্যাশনাল’, একটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-রূপে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যে দুটি শর্ত তুলে ধরেছে, সেগুলি হল — 1. নির্দিষ্ট হটস্পট অঞ্চলে অন্তত 1500টি সংবহনকলাযুক্ত এনডেমিক উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব থাকতে হবে। 2. হটস্পট অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের অন্তত 70% প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে থাকতে হবে।

সংরক্ষণের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

সংরক্ষণের উদ্দেশ্য হল — 1. সংখ্যায় স্বল্প এমন প্রাণীদের এবং উদ্ভিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা। 2. মানবকল্যাণে প্রাকৃতিক সম্পদের বিজ্ঞানভিত্তিক সুষ্ঠু ব্যবহার সুনিশ্চিত করা।

ইন্দো-বার্মা অংশে ভারতের কোন্ কোন্ রাজ্য অন্তর্ভূক্ত?

ইন্দো-বার্মা অংশে ভারতের যে সকল রাজ্য অন্তর্ভূক্ত সেগুলি হল — মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ ও দক্ষিণ অসম।

সুন্দরবন কোথায় অবস্থিত, এর আয়তন কত?

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার এবং বাংলাদেশের খুলনা জেলার দক্ষিণ প্রান্তজুড়ে সুন্দরবন অবস্থিত। এর ভৌগোলিক অবস্থান 21°32′ থেকে 21°55′ উত্তর অক্ষাংশে এবং 88°42′ থেকে 89°04′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় 9630 km2

লবণাম্বু বা হ্যালোফাইট-জাতীয় উদ্ভিদ কাকে বলে?

যেসব উদ্ভিদ সাধারণত সমুদ্রের ধারে বা নদীর মোহনায় জোয়ার প্লাবিত ভিজে পলিমাটিতে জন্মায়, সেইসব উদ্ভিদকে লবণাম্বু বা হ্যালোফাইট-জাতীয় উদ্ভিদ বা ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ বলে। যেমন — সুন্দরী, গরাণ, গর্জন ইত্যাদি।লবণাম্বু বা হ্যালোফাইট-জাতীয় উদ্ভিদ কাকে বলে

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবদান বা গুরুত্ব উল্লেখ করো।

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবদান বা গুরুত্ব হল — 1. এই অরণ্য সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলকে ভূমিক্ষয় থেকে রক্ষা করে, 2. ঝড়ের প্রাবল্য থেকে নিকটবর্তী অঞ্চলকে রক্ষা করে। 3. মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করে, যেমন — গৃহ নির্মাণের সামগ্রী, জ্বালানি, মধু ও ফল জোগান দেয়।

সুন্দরবনের কয়েকটি বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর নাম লেখো।

সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ হল — সুন্দরী, গেওয়া প্রভৃতি এবং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, মেছোবিড়াল প্রভৃতি হল বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী।

জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ?

যে উপায়ে সুপরিকল্পিতভাবে সুদীর্ঘ সময় ধরে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে জীববৈচিত্র্যের সুষ্ঠু ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ, পুনরুদ্ধার, পরিচালনা ইত্যাদি করা হয় এবং জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিকারক প্রভাব, ধ্বংস, অপব্যবহার, আগুন ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা করা হয়, তাকে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ বলে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য লেখ।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দুটি উদ্দেশ্য হল — 1. সংখ্যায় কম এমন প্রাণীদের ও উদ্ভিদের অস্তিত্ব বজায় রাখা, 2. দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে সুদৃঢ় করা এবং মানবকল্যাণে জীববৈচিত্র্যের বিজ্ঞানভিত্তিক সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতিকে কতভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা — 1. ইন-সিটু সংরক্ষণ এবং 2. এক্স-সিটু সংরক্ষণ।

ইন সিটু সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ?

কোনো জীবকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার ও বংশবিস্তার করার সমস্ত সুবিধা প্রদান করে সংরক্ষণ করাকে ইন-সিটু সংরক্ষণ বা স্বস্থানিক সংরক্ষণ বলে। যেমন — সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানে বাঘ সংরক্ষণ।

ইন সিটু সংরক্ষণের সুবিধা কী কী?

ইন-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা হল — 1. প্রাকৃতিক পরিবেশে কম খরচে সংরক্ষণ করা যায়। 2. জীবের মুক্ত প্রজনন সম্ভব হয় বলে জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়।

ইন সিটু সংরক্ষণের অসুবিধা কী কী?

ইন-সিটু সংরক্ষণের অসুবিধা হল — 1. বৃহৎ আয়তন স্থানের প্রয়োজন হয়। 2. অসুস্থ জীবের চিকিৎসা সম্ভব হয় না।

এক্স-সিটু সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ?

কোনো জীবকে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন হয় যা তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে সম্ভব নয়, তখন সেই জীবকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। এই ধরনের সংরক্ষণকে এক্স-সিটু সংরক্ষণ বা অস্থানিক সংরক্ষণ বলে। যেমন — বোটানিক্যাল গার্ডেন-এ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা।
এক্স-সিটু সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ

এক্স-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা কী কী?

এক্স-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা হল — 1. কোনো প্রজাতি বিভিন্ন হলে তার সুচিকিৎসা, সংরক্ষণ ও প্রজনন এক্স-সিটু সংরক্ষণ দ্বারা সম্ভব হয়। 2. কোনো প্রজাতি বিলুপ্ত হলেও তার জনন উপাদান (জনন কোশ বা রেণু) ক্রায়োসংরক্ষণ দ্বারা সংরক্ষিত করে ভবিষ্যতে জীব তৈরি সম্ভব হয়।

এক্স – সিটু সংরক্ষণের অসুবিধা কী কী?

এক্স-সিটু সংরক্ষণের অসুবিধা হল — 1. এক্স-সিটু সংরক্ষণে সীমিত সংখ্যক জীবের প্রজনন সম্ভব হয় বলে জিনগত বৈচিত্র্যে হ্রাস পায়। 2. এটি একটি ব্যায়বহুল পদ্ধতি।

ইন সিটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বা পথগুলি লেখো|

ইন সিটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পথগুলি হল — জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, সংরক্ষিত অরণ্য, সুরক্ষিত বনাঞ্চল ইত্যাদি।

অভয়ারণ্য কাকে বলে? দুটি উদাহরণ দাও|

রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এমন একটি বনাঞ্চল যেখানে আইনের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী হত্যা বা শিকার করা এবং জনসাধারণের প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ, তাকে অভয়ারণ্য বলে। কিন্তু গবেষণার স্বার্থে অনুমতি সাপেক্ষে অভয়ারণ্যে প্রবেশাধিকার লাভ করা যায়।
উদাহরণ পশ্চিমবঙ্গের চাপড়ামারি অভয়ারণ্য এবং ঝাড়খণ্ডের পালামৌ অভয়ারণ্য।

এক্স-সিটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বা পথগুলি লেখো।

এক্স-সিটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ পথগুলি হল — জিন ব্যাংক,চিড়িয়াখানা, অ্যাকোয়ারিয়াম, আরবোরেটাম, বোটানিক্যাল গার্ডেন ইত্যাদি।

সংরক্ষিত অরণ্য কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

ভারতীয় বন আইন, 1917 অনুযায়ী রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যেসব অরণ্যে সাধারণের প্রবেশের অধিকার থাকে না, কিন্তু অনুমতি নিয়ে গবেষকরা প্রবেশ করতে পারেন সেইসব বনভূমিকে সংরক্ষিত অরণ্য বলে।
উদাহরণ কেরলের শোলায়র সংরক্ষিত অরণ্য, কর্ণাটকের হানামসাগর সংরক্ষিত অরণ্য।

জাতীয় উদ্যান কাকে বলে? দুটি উদাহরণ দাও।

কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ও আয়তনে অভয়ারণ্য অপেক্ষা বড়ো যেসব নির্দিষ্ট বনাঞ্চলে প্রাণী হত্যা, মাছ ধরা, গাছ কাটা, এমনকি বিনা অনুমতিতে প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ সেগুলিকে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্ক বলে।
উদাহরণ পশ্চিমবঙ্গের গোরুমারা জাতীয় উদ্যান এবং মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান।

পবিত্র বনবীথি বলতে কী বোঝ?

বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মীয় কারণে দীর্ঘদিন ধরে বনের উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতিগুলিকে বনের কোনো নির্দিষ্ট অংশে রেখে সংরক্ষণ বা রক্ষা করে। সংরক্ষণের বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট ওই বন বা বনের অংশকে পবিত্র বনবীথি বলা হয়। পবিত্র বনবীথিতে বিপন্ন বা লুপ্তপ্রায় জীবের সঙ্গে অন্যান্য জীবদেরও সংরক্ষণ করা হয়। রাজস্থানের থর মরুভূমিতে বিষ্ণোই সম্প্রদায় দ্বারা সুরক্ষিত পবিত্র বনবীথি লক্ষ করা যায়।

পবিত্র হ্রস কী?

যেসব হ্রদে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীদের সংরক্ষণ করা হয় বা রক্ষা করা হয়, তাদের পবিত্র হ্রদ বলা হয়। সিকিমের ‘খেচিও পালরি’ হ্রদ হল একটি পবিত্র হ্রদ।

এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্রহিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র বা পথ হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি বৈশিষ্ট্য হল- 1. বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সংগৃহীত স্থলজ ও জলজ প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় কৃত্রিম পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়। 2. এখানে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ, বংশবৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজনমতো প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজও করা হয়।

বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে বিশেষ বনাঞ্চলে বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী জমি অঞ্চলভিত্তিক ও নির্দিষ্ট ক্রিয়াকর্মভিত্তিক কতগুলি নির্দিষ্ট অংশে ভাগ করা হয় জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের জন্য, তাকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বলে।
উদাহরণ পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন ও তামিলনাডুর নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।
বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ কাকে বলে উদাহরণ দাও ।

বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের গঠন বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

1. প্রতিটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের একটি কেন্দ্রীয় কোর অঞ্চল থাকে এখানে বাহ্যিক বাধাবিঘ্ন থেকে জীবগুলি সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকতে পারে। এখানে মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। 2. কেন্দ্রীয় কোর অঞ্চলের পরিধিতে থাকে একটি বাফার জোন। এই অঞ্চলে ইকোপর্যটন, পরিবেশশিক্ষা বা গবেষণার কাজে অনুমতি দেওয়া হয়। 3. বাফার জোনের বাইরে থাকে ট্রানজিশন অঞ্চল, ওখানে মানব বসতি গড়ে তোলা সম্ভব। এখানে স্থানীয় বাসিন্দা ও সংরক্ষণে নিযুক্ত কর্মীদের সমান প্রবেশাধিকার।

অভয়ারণ্যের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

অভয়ারণ্যের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল – 1. অভয়ারণ্যে বন্যপ্রাণী শিকার রাজ্যসরকার কর্তৃক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়। 2. এই ধরনের বনাঞ্চলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ, তবে গবেষণার প্রয়োজনে অনুমতি সাপেক্ষে গবেষকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়।

ভারতের তিনটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্ৰ কী কী?

ভারতের তিনটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের নামগুলি হল — পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন, উত্তরাখণ্ডের করবেট টাইগার রিজার্ভ ও মধ্যপ্রদেশের কানহা।

এক্স-সিটু সংরক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি উদাহরণ দাও।

এক্স-সিটু সংরক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি উদাহরণ হল 1. পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ, সিংহ, হাতি, সাপ ইত্যাদি প্রাণীকে সংরক্ষণ করা হয়। 2. অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে, ইন্দিরা গান্ধী জুলজিক্যাল পার্কে শ্লথ ভালুক, বন্যকুকুর, পুমা, জাগুয়ার প্রভৃতি সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
এক্স-সিটু সংরক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি উদাহরণ দাও।

এক্স-সিটু সংরক্ষণের সংরক্ষণের ক্ষেত্রহিসেবে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো|

এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল — 1. বিভিন্ন ধরনের বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ এবং ভেষজগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে সংরক্ষণ করা হয়। 2. বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদগুলির কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়।

ক্রায়োসংরক্ষণের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো এবং একটি উদাহরণ দাও।

ক্রায়োসংরক্ষণের দুটি বৈশিষ্ট্য হল — 1. এইজাতীয় সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়। 2. সাধারণত -196°C তাপমাত্রায় বিভিন্ন ধরনের পরাগরেণু, গ্যামেট, কলাকোশ, বীজ ইত্যাদি ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
উদাহরণ পশ্চিমবঙ্গের বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, শিবপুর (হাওড়া)।

জাতীয় উদ্যানের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

জাতীয় উদ্যানের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল — 1. এই জাতীয় উদ্যান হল সরকার অধিগৃহীত এবং নিয়ন্ত্রাধীন এক অঞ্চল যেখানে বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। 2. এইজাতীয় উদ্যানে কোনো ধরনের শিকার করা, চাষবাস করা বা গৃহপালিত পশুচারণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে দুটি বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদাহরণ দাও।

1. আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস ভারতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন, শিবপুর, হাওড়া — এখানে 330 মিটার পরিধিযুক্ত বিখ্যাত বটগাছ সংরক্ষিত আছে। এ ছাড়া অর্কিড, পান এখানে সংরক্ষিত করা হয়। 2. জহরলাল নেহেরু ট্রপিক্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন ও রিসার্চ ইনস্টিটিটিউট, ত্রিবান্দ্রম, কেরল, এখানে ভেষজ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা হয়।

অ্যারবোরেটাম কী?

অ্যারবোরেটাম হল এক্স-সিটু সংরক্ষণের বিশেষ পদ্ধতি। এখানে বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষাগত কারণে দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

ক্রায়োসংরক্ষণ বলতে কী বোঝ?

ক্রায়োসংরক্ষণ (cryopreservation) হল এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে কোশ, কলা বা অন্য কোনো সজীব দেহাংশ তরল নাইট্রোজেনে প্রায় -196°C তাপমাত্রায় রেখে দীর্ঘদিন জীবিত রাখা সম্ভবপর হয়।ক্রায়োসংরক্ষণ বলতে কী বোঝ

উত্তরাখণ্ডের জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক (1936)-এ কী কী প্রাণী প্রজাতি সংরক্ষিত আছে?

উত্তরাখণ্ডের জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে বাঘ, হাতি, মোষ, ইন্ডিয়ান গ্রে মঙ্গুজ,প্যাঙ্গোলিন প্রভৃতি প্রাণী সংরক্ষিত আছে।

জাতীয় উদ্যান স্থাপনের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

জাতীয় উদ্যান স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উদ্দেশ্য হল — 1. সংকটাপন্ন প্রাণীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের এবং প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রচনা করা। 2. নির্দিষ্ট অঞ্চলটির প্রাকৃতিক পরিবেশ, উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ সম্পদসমূহের জাতীয় স্তরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।

অভয়ারণ্য স্থাপনের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

অভয়ারণ্য স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উদ্দেশ্য হল — 1. চোরাশিকারির হাত থেকে প্রাণী বৈচিত্র্যকে রক্ষা করা। 2. স্বাভাবিক পরিবেশে সংকটাপন্ন জীবপ্রজাতির সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।

বিপন্মুক্ত বা আউট অফ ডেঞ্জার প্রজাতির জীব বলতে কী বোঝ?

যেসব প্রজাতিরা একসময় সংকটাপন্ন জীবের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সংরক্ষণের ফলে বর্তমানে তারা নিরাপদ, তাদেরকে বিপন্মুক্ত বা আউট অফ ডেঞ্জার প্রজাতির জীব বলে।

বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ স্থাপনের দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ স্থাপনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল —1. বায়োস্ফিয়ারে থাকা জীবসমূহকে প্রজাতিগত ও জিনগত বৈচিত্র্যের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। 2. মানুষ ও প্রকৃতির আন্তঃসম্পর্কের উন্নতিসাধনের ব্যবস্থা করা।

সংরক্ষিত অরণ্য বা রিজার্ভ ফরেস্ট-এর দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

সংরক্ষিত অরণ্য বা রিজার্ভ ফরেস্ট-এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল — 1. এই ধরনের অরণ্য রাজ্য সরকারের আওতাধীন। 2. এইপ্রকার বনাঞ্চলে গাছকাটা, শিকার করা এবং গৃহপালিত পশুচারণ সরকারি অনুমতি ছাড়া নিষিদ্ধ থাকে।

অতিবৈচিত্র্যশালী দেশ বা মেগা বায়োডাইভারসিটি-কান্ট্রি কাকে বলে?

পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের প্রায় ৪০ ভাগ, 17টি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই দেশগুলিকে মেগাবায়োডাইভারসিটি কাট্রি বলে। মেগাবায়োডাইভারসিটি সম্পন্ন দেশগুলির মধ্যে ব্রাজিল প্রথম স্থান অধিকার করে। ভারতবর্ষও একটি মেগাডাইভারসিটি কাট্রি।

বায়োডাইভারসিটি চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি কী কী?

বায়োডাইভারসিটি চুক্তি নামক দলিলের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল — 1. জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ করা, 2. জীববৈচিত্র্য থেকে প্রাপ্ত সম্পদ আহরণের দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত করা এবং 3. জিনগত সম্পদের পক্ষপাতহীন ব্যবহারের সুযোগের ব্যবস্থা করা।

CITES কী?

IUCN-এর ওয়াশিংটন কনভেনশন (1963)-এর সিদ্ধান্ত অনুসারে 1975 সালে CITES (Convention on International Trade in Endangered Speceis of Wild Fauna and Flora) -এর সূচনা। সূচনার পর থেকেই এই সংস্থাটি আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন প্রয়োজনে উদ্ভিদ ও প্রাণী বা তাদের দেহজ উপাদান বিভিন্ন দেশের মধ্যে অবৈধভাবে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করে এবং সম্ভাব্য বিলুপ্তির হাত থেকে তাদের রক্ষা করে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে সংস্থাগুলি এগিয়ে এসেছে তাদের যে-কোনো দুটির নাম উল্লেখ করো।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে সংস্থাগুলি এগিয়ে এসেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি সংস্থা হল — 1. WWF বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার – এবং 2. IUCN বা ইনটারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার- ভেশন অফ নেচার অ্যান্ড ন্যাচেরাল রিসোর্সেস।

বিপন্ন (Endangered) প্রজাতি বলতে কী বোঝ?

যেসব প্রাণীর অচিরেই লুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের বিপন্ন হওয়ার কারণ যদি সমান মাত্রায় বজায় থাকে এবং তাদের পুনরুদ্ধার করার সম্ভাবনা কম থাকে তবে সেই ধরনের প্রাণীদের বিপন্ন প্রজাতি বলে। এইজাতীয় প্রাণীদের সংরক্ষণ ভীষণভাবে আবশ্যক। যেমন — নীলগিরি লেঙ্গুর, তুষার চিতাবাঘ ইত্যাদি।
বিপন্ন (Endangered) প্রজাতি বলতে কী বোঝ

জীববৈচিত্র্য চুক্তি (biodiversity treaty) কী?

1992 খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে যে বসুন্ধরা সম্মেলন হয়, তাতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বা কনজারভেশন অফ বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি (CBD)-এর জন্য 150টি দেশ ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি দলিলে স্বাক্ষর করে, যা বায়োডাইভারসিটি চুক্তি নামে পরিচিত।

অবলুপ্ত (extinct) জীব বলতে কী বোঝ?

যেসব প্রাণী ও উদ্ভিদকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সংরক্ষণাগারেও আর দেখা যায় না, তাদের অবলুপ্ত জীব বলে। যেমন — ডোডো পাখি, প্যাসেঞ্জার পেঙ্গুইন, ক্যারোলিনা প্যারাকিট ইত্যাদি।

রেড ডাটা বুক কাকে বলে?

IUCN নামক বিশ্বসংস্থা পৃথিবীর বিপদগ্রস্ত জীবগুলির সংরক্ষণের স্বার্থে ও জীবগুলির একটি তালিকা বা লিস্ট প্রকাশ করে। একে রেড লিস্ট বা রেড ডাটা বুক বলে। সমস্ত জীবকে এই লিস্টে মোট 9টি শ্রেণিতে বিভক্ত করে শ্রেণি ভাগ করা হয়। যেমন — অবলুপ্ত (extinct), বিপন্ন (endangered), সংকটাপন্ন (vulnerable) প্রভৃতি।

JFM প্রথম কোথায় ও কীভাবে গঠিত হয়?

1971 খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুরের (বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর) আরাবাড়ি অরণ্যে JFM উদ্যোগের প্রথম প্রচেষ্টা দেখা যায়।স্থানীয় মানুষদের গোচারণ ও গাছ কেটে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার অজিত কুমার ব্যানার্জি, স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে নিয়ে বন সুরক্ষা কমিটি গঠন করেন এবং নতুনভাবে শালগাছ রোপণ ও পরিচালনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে প্রায় 12.6 মিলিয়ন মূল্যের শালবৃক্ষ সৃষ্টি সম্ভব হয় (1988)। এই ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভারত সরকারের পরিবশমন্ত্রক স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বন উন্নয়নের পরিচালন নীতি প্রণয়ন করেন।

কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য প্রাণীর নাম লেখো।

কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলি হল — একশৃঙ্গ গন্ডার, সম্বর, বন্য শূকর, ভারতীয় মন্টজ্যাক, হগডিয়ার ইত্যাদি।
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য প্রাণীর নাম লেখো।

বিশ্ব ঐতিহ্যস্থান বলতে কী বোঝ?

সুন্দরবন অঞ্চলটি পৃথিবীর সব থেকে বড়ো ম্যানগ্রোভ অরণ্যবিশেষ। 1997 সালে এই অঞ্চলটিকে UNESCO বিশ্ব ঐতিহ্যস্থান (wold heritage site) বলে ঘোষণা করেছে। সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের কতকগুলি বিশেষ অবদান রয়েছে। যেমন — 1. সমুদ্রের ঝড়ের প্রাবল্য থেকে ও ভূমিক্ষয় থেকে ওই অঞ্চলের অরণ্য সুন্দরবনকে রক্ষা করে, 2. এই অরণ্য পুষ্টিপ্রদায়ী বস্তুর ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে ও মানুষের বহু চাহিদা পুরণে সহায়তা করে।

গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলির নাম লেখো।

গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলি হল — বাইসন, গন্ডার, হাতি, গাউর, শ্লথ বিয়ার, সম্বর, বন্য শূকর, পিগমি হগ ইত্যাদি।

জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কী বোঝ?

পৃথিবীব্যাপি স্বাভাবিক জলবায়ু বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তনকে জলবায়ুর পরিবর্তন বলে। এর প্রাকৃতিক কারণ হল আগ্নেয়োগিরি উদ্‌গীরণ, ভূস্তরীয় প্লেটের সরণ প্রভৃতি। এর মনুষ্যসৃষ্ট কারণ হল বিশ্ব উষ্ণায়ণ।

ক্ষুদ্র সবুজ তথ্য বই বা ‘লিট্ল গ্রিন ডাটা বুক’ বলতে কী বোঝ?

বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবছর পরিবশে-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংবলিত একটি বই প্রকাশ করে। একে ক্ষুদ্র সবুজ তথ্য বই (little green data book) বলে। এই বইয়ে পৃথিবীর বন ও জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য, কৃষি প্রভৃতি প্রায় 50 টির অধিক বিষয়ে তথ্য প্রকাশিত হয়।

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য| প্রাণীগুলির নাম লেখো।

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলি হল — একশৃঙ্গ গন্ডার, বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, হাতি, বাঘ, শূকর ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ইত্যাদি।

ইন-সিটু ও এক্স-সিটু সংরক্ষণের পার্থক্য লেখো।

ইন-সিটু ও এক্স-সিটু সংরক্ষণের পার্থক্য

বিষয়ইন-সিটু সংরক্ষণএক্স-সিটু সংরক্ষণ
1. সংরক্ষণ স্থানজীবের স্বাভাবিক বাসস্থানেই তার সংরক্ষণ করা হয়।জীবের স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে সরিয়ে কৃত্রিম স্থানে সংরক্ষণ করা হয়।
2. প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাবিপন্ন প্রজাতিকে শিকারী প্রজাতি থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।বিপন্ন প্রজাতিকে সমস্ত প্রতিকুলতা থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
3. উদাহরণজাতীয় পার্ক,অভয়ারণ্য।চিড়িয়াখানা, ক্রায়োসংরক্ষণ।

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা করার পর আমরা একটি সংক্ষিপ্ত উপসংহার তৈরি করতে পারি।

এই বিষয়গুলি মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা পরিবেশের গুরুত্ব এবং সংরক্ষণের মূল্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারি। পরিবেশ আমাদের জীবনের অভিন্ন সংস্থানের সমস্ত সম্পদ সরবরাহ করে এবং আমাদের জীবনকে বহন করে যায়। তাই পরিবেশের সংরক্ষণ আমাদের জন্য প্রয়োজনীয়।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ। আমাদের জীবনের বিভিন্ন আশঙ্কা সংস্পর্শের মাধ্যমে আমরা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে পারি।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer