আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পঞ্চম অধ্যায় “পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ” অধ্যায়ের ‘জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব, জীববৈচিত্র্যের হটস্পট, জীববৈচিত্র্যের হ্রাস ও সুন্দরবনের পরিবেশগত সমস্যা
জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি কাকে বলে?
স্থলভূমি, সমুদ্র বা অন্য জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রে উপস্থিত বিভিন্ন জীবের প্রজাতিগত, আন্তঃপ্রজাতিগত এবং বাস্তুতান্ত্রিক বিভিন্নতাকে জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি বলে।

জীববৈচিত্র্যকে কতগুলি আন্তঃসম্পর্কিত ধারণা দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং সেগুলি কী কী?
জীববৈচিত্র্যকে তিনটি আন্তঃসম্পর্কিত ধারণা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সেগুলি হল –
- জিনগত বৈচিত্র্য।
- প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং।
- বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।
জিনগত বৈচিত্র্য কী?
বিভিন্ন প্রজাতির জীবের জিন ও ক্রোমোজোমের বৈচিত্র্য এবং কোনো একটি প্রজাতির জিনের ভেদ বা ভেরিয়েশন হল জিনগত বৈচিত্র্য। একই প্রজাতির প্রত্যেক জীবের মধ্যে জিনগত গঠনের সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়, যার জন্য এরা একে অন্যের থেকে সামান্য আলাদা হয়।
প্রজাতি বৈচিত্র্য কী?
কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বিবিধ প্রজাতির জীবের উপস্থিতি এবং তাদের আপেক্ষিক প্রাচুর্যকে প্রজাতি বৈচিত্র্য বলে। এই পৃথিবীর প্রত্যেক প্রজাতির নিজস্ব জিনগত গঠন বর্তমান। এই কারণে একটি প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতি কিছুটা আলাদা হয়।
বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য কী?
একটি বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদান বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবদের নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের জীবের গঠন ও বৈচিত্র্যকেই বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে।
মানব সভ্যতার বিকাশে নিম্নলিখিত দুটি ক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা উল্লেখ করো। (1) খাদ্য উৎপাদন (2) ওষুধ প্রস্তুতি।
খাদ্য উৎপাদন –
মানুষসহ সকল জীব তার খাদ্যের জন্য সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। জীববৈচিত্র্যের জন্যই মানুষ তার ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন খাদ্য উপাদান, যেমন – ভিটামিন, খনিজ লবণ ও শক্তি-সমৃদ্ধ খাদ্যের সৃষ্টির মাধ্যমে পুষ্টিতে মানবসমাজকে সাহায্য করে জীববৈচিত্র্য। এ ছাড়া খরা, বন্যা রোগ প্রতিরোধী শস্য জীববৈচিত্র্যের ফলেই সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। মাছ ও জলজ প্রাণী, পোলট্রি পাখি, মাংস ও দুধ উৎপাদক প্রাণীবৈচিত্র্য সামগ্রিকভাবে পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ওষুধ প্রস্তুতি –
চিকিৎসায় ব্যবহৃত বহু ওষুধ হল জীবজাত। সিনকোনা গাছের ছাল থেকে তৈরি কুইনাইন ম্যালেরিয়ার ওষুধরূপে, সর্পগন্ধা গাছের মূলের ছাল থেকে প্রাপ্ত রেসারপিন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ তৈরিতে, ধুতুরা ফলের বীজ থেকে প্রাপ্ত ডাটুরিন হাঁপানির ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তুলসী, কালমেঘ, নিম প্রভৃতি ভেষজ উদ্ভিদগুলিও বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতিতে সাহায্য করে। Penicilium notatum (পেনিসিলিয়াম নোটেটাম) -সহ অন্যান্য উপকারী ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং বিভিন্ন প্রাণীজ উপাদানও ওষুধ প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়।
ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জীববৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়?
ভারতের উত্তর-পূর্ব হিমালয় অঞ্চল, ইন্দো-বার্মা অঞ্চল, পশ্চিমঘাট বনাঞ্চল, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, গুজরাট ও তামিলনাড়ুর সামুদ্রিক প্রবাল প্রাচীরে প্রচুর পরিমাণে জীববৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।
অতিবৈচিত্র্যশালী দেশ বা মেগা ডাইভারসিটি কানট্রি কাকে বলে?
পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের প্রায় 80 ভাগ, 17টি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই দেশগুলিকে অতি বৈচিত্র্যশালী দেশ বা মেগাডাইভারসিটি কানট্রি বলে। মেগাবায়োডাইভারসিটি সম্পন্ন দেশগুলির মধ্যে ব্রাজিল প্রথম স্থান অধিকার করে। ভারতবর্ষও একটি মেগাডাইভারসিটি কানট্রি।

প্রজাতি কাকে বলে?
জিনতত্ত্বগতভাবে স্বতন্ত্র একই বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবগোষ্ঠী, যারা নিজেদের মধ্যে প্রজননশীল এবং প্রজননগতভাবে অন্য জীবগোষ্ঠী থেকে পৃথক, তাদের প্রজাতি বলে।
এনডেমিক প্রজাতি কাকে বলে?
যে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বাস করে, তাকে ওই অঞ্চলের এনডেমিক প্রজাতি বলে। যেমন – ভারতীয় সিংহ (গির), মুগা রেশম মথ (অসম)।

কোন্ বিজ্ঞানী কত খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম বায়োডাইভারসিটি হটস্পট কথাটি ব্যবহার করেন?
জীববিজ্ঞানী নরম্যান মায়ার্স, 1988 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম, বায়োডাইভারসিটি হটস্পট কথাটি ব্যবহার করেন।
কনজারভেশন ইনটারন্যাশনাল সংস্থা একটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-রূপে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কোন্ দুটি শর্ত তুলে ধরেছে?
অথবা, কোনো অঞ্চলকে কখন হটস্পট বলে গণ্য করা হয়?
অনুরূপ প্রশ্ন, দুটি অঞ্চলের মধ্যে একটিকে জীববৈচিত্র্য হটস্পট বলে ঘোষণা করতে চাইলে কী কী শর্ত তুমি বিবেচনা করবে?
পরিবেশ-সংক্রান্ত সংস্থা কনজারভেশন ইনটারন্যাশনাল, একটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-রূপে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যে দুটি শর্ত তুলে ধরেছে, সেগুলি হল –
- নির্দিষ্ট হটস্পট অঞ্চলে অন্তত 1500টি সংবহনকলাযুক্ত এনডেমিক উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব থাকতে হবে।
- হটস্পট অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের অন্তত 70% প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে থাকতে হবে।
পূর্ব হিমালয়কে বায়োডাইভারসিটি হটস্পট বলার কারণ কী?
অথবা, পূর্ব হিমালয় হটস্পটে পাওয়া যায় এমন জীববৈচিত্র্যের উদাহরণ দাও।
পূর্ব হিমালয় বহু এনডেমিক প্রজাতির উৎপত্তিস্থল। এখানে প্রায় 5800 প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এদের মধ্যে 2000টি প্রজাতি এনডেমিক। এখানে 45টি স্তন্যপায়ী, 50টি পাখি, 17টি সরীসৃপ এবং 36টি উদ্ভিদ প্রজাতিসহ মোট 163টি বিপন্ন প্রজাতি বাস করে। এখানে কলসপত্রী (উদ্ভিদ), একশৃঙ্গ গন্ডার, সোনালি লেঙুর (প্রাণী) ইত্যাদি জীব বেশি দেখা যায়।
ওয়েস্টার্ন ঘাটস্ ও শ্রীলঙ্কা -এই অংশে ভারতের কোন্ কোন্ রাজ্য অন্তর্ভুক্ত?
ওয়েস্টার্ন ঘাটস্ বা পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা অংশে ভারতের যে রাজ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত তা হল –
- গুজরাট।
- মহারাষ্ট্র।
- কর্ণাটক।
- কেরল।
পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা কে বায়োডাইভারসিটি হটস্পট বলার কারণ কী?
অথবা, পশ্চিমঘাট-শ্রীলঙ্কা হটস্পটে পাওয়া যায় এমন জীববৈচিত্র্যের উদাহরণ দাও।
পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা অংশে প্রায় 5000 প্রজাতির সংবহনকলাযুক্ত উদ্ভিদ জন্মায়, যাদের মধ্যে 1700টি প্রজাতি এনডেমিক। এ ছাড়া, প্রাণীদের মধ্যে 140টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে 20টি প্রজাতি এনডেমিক। পাখির ক্ষেত্রে 450টি প্রজাতির মধ্যে 35টি প্রজাতি এনডেমিক। সরীসৃপের ক্ষেত্রে 260টি প্রজাতির মধ্যে 175টি প্রজাতি এবং উভচরের ক্ষেত্রে 135টি প্রজাতির মধ্যে 130টি প্রজাতি এনডেমিক। এখানে Magnolia nilagirica (ম্যাগনোলিয়া নিলাগিরিকা), Ixora elongata (ইক্সোরা ইলংগাটা) প্রভৃতি উদ্ভিদ এবং মালাবার লার্জ-স্পটেড সিভেট ও লায়ন-টেলড ম্যাকাক ইত্যাদি প্রাণীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

ইন্দো-বার্মা অংশে ভারতের কোন্ কোন্ রাজ্য অন্তর্ভুক্ত?
ইন্দো-বার্মা অংশে ভারতের যে সকল রাজ্য অন্তর্ভুক্ত সেগুলি হল –
- মণিপুর।
- মিজোরাম।
- ত্রিপুরা।
- মেঘালয়।
- অরুণাচল প্রদেশ।
- দক্ষিণ অসম।
সুন্দাল্যান্ড হটস্পটের অবস্থান ও এর জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির নাম লেখো।
সুন্দাল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুমাত্রা ও বোর্নিও এবং ভারতের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত। সুন্দাল্যান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হল – সুন্দরী গাছ (উদ্ভিদ) অথবা ওরাংওটাং (প্রাণী)।
পৃথিবীর উষ্ণায়নের ফলে জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হচ্ছে তার চারটি উদাহরণ দাও।
অথবা, জলবায়ু পরিবর্তনে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে – ব্যাখ্যা করো।
অথবা, দূষণ জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণ – ব্যাখ্যা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, বিশ্ব উষ্ণায়ন জীববৈচিত্র্যে কী প্রভাব ফেলবে তা উদাহরণসহ লেখো।
পৃথিবীর উষ্ণায়নের ফলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির 4টি উদাহরণ হল –
- অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সংলগ্ন প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য হ্রাস।
- পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 1°C-2°C বৃদ্ধির ফলে উত্তর মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ায় আজ মেরু ভল্লুক খাদ্যের অভাবে সংকটাপন্ন, তেমনই সিন্ধুঘোটক, মেরু শেয়াল, পেঙ্গুইন প্রভৃতিও বিপদগ্রস্ত।
- বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ক্ষতি করছে।
- বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বিভিন্ন মাছের প্রজাতি, ওয়ালরাস, পরিযায়ী পাখি, শামুক-ঝিনুকের প্রজাতি, উভচরেরা আজ বিপদের সম্মুখীন।

জলজ ও স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করে এমন একটি করে বহিরাগত প্রজাতির উদাহরণ দাও।
জলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় বৈচিত্রের ক্ষতিসাধনকারী বহিরাগত উদ্ভিদ প্রজাতি – কচুরিপানা।
স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় বৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধনকারী বহিরাগত প্রাণী প্রজাতি – আমেরিকান আরশোলা।
চোরাশিকার ভারতের প্রাণীবৈচিত্র্যের বিপন্নতার একটি প্রধান কারণ – যে যে কারণে এই চোরাশিকার ঘটে তার চারটি কারণ নির্ধারণ করো।
চোরাশিকারের চারটি কারণ হল –
- কিছু কিছু পশুর দেহ উপাদান যেমন – বাঘের চামড়া, হরিণ বা বুনো মোষের শিং ইত্যাদি গৃহসজ্জার নান্দনিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- পশুর দেহজ উপাদান আয়ুর্বেদিক ওষুধের অনুপাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন – বাঘের হাড়, গন্ডারের খড়গ।
- বিভিন্ন প্রাণীর মাংস, যেমন – বুনো মোষ, হরিণ, বুনো শুয়োর ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে চড়া দামে বিক্রয় হয়।
- চোরাশিকারের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বেআইনি অর্থ সহজে রোজগার করা হয়।
মানুষের জনসংখ্যার অতিবৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন দুটি উদাহরণ দাও।
মানুষের জনসংখ্যার অতিবৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় তা নীচের উদাহরণ দুটি থেকে বোঝা যায়।
অরণ্য বিনাশ –
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সুমাত্রা প্রভৃতি দেশে পাম তেল উৎপাদনের বৃদ্ধির জন্য পাম গাছ চাষের উদ্দেশ্যে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল কেটে ফেলা হয়েছে। এর ফলে ওরাংওটাং, সুমাত্রার হাতি, গন্ডার প্রভৃতির জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
অতিব্যবহার –
খাদ্য, চামড়া ইত্যাদি আহরণের উদ্দেশ্যে মানুষ জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল। অতীতে রাশিয়ার স্টেলারস সিকাউ, প্যাসেঞ্জার পায়রা অত্যধিক শিকারের কারণে বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন প্রজাতি মানুষের অতিরিক্ত আহরণের কারণে বিলুপ্তপ্রায়।
বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ ঘটলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় – দুটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।
বিদেশ থেকে নতুন প্রজাতির জীবের অনুপ্রবেশ ঘটলে বা আমদানি করা হলে, দেশীয় দুর্বল প্রজাতিগুলি বহিরাগত প্রজাতিগুলির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না ও অবলুপ্ত হয়। যেমন –
- জাহাজে আগত আমেরিকান আরশোলা (Periplaneta americana) দ্রুত ভারতীয় আরশোলা (Blatta orientalis) প্রজাতিকে বিনষ্ট করেছে।
- সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে কচুরিপানা গাছটিকে ব্রাজিল থেকে আনা হয়। কিন্তু খুব শীঘ্রই গাছটি তার হ্রস্বধাবক বা অফসেট দ্বারা বংশবিস্তার করে খালবিল নদীনালায় ভরে গেছে, ফলে অন্যান্য দেশীয় জলজ প্রজাতিগুলির বিলুপ্তি ঘটেছে।
জীববৈচিত্র্য চুক্তি (biodiversity treaty) কী?
1992 খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে যে বসুন্ধরা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বা কনজারভেশন অফ বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি (CBD) -এর জন্য 150টি দেশ ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি দলিলে স্বাক্ষর করে, যা বায়োডাইভারসিটি চুক্তি নামে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক বায়োডাইভারসিটি চুক্তি বা CBD -এর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য কী কী?
বায়োডাইভারসিটি চুক্তি নামক দলিলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলি হল –
- জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ করা।
- জীববৈচিত্র্য থেকে প্রাপ্ত সম্পদ আহরণের দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত করা।
- জিনগত সম্পদের পক্ষপাতহীন ব্যবহারের সুযোগের ব্যবস্থা করা।
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবদান বা গুরুত্ব উল্লেখ করো।
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবদান বা গুরুত্ব হল –
- এই অরণ্য সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলকে ভূমিক্ষয় থেকে রক্ষা করে।
- ঝড়ের প্রাবল্য থেকে নিকটবর্তী অঞ্চলকে রক্ষা করে।
- মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করে, যেমন – গৃহ নির্মাণের সামগ্রী, জ্বালানি, মধু ও ফল জোগান দেয়।
সুন্দরবনের কয়েকটি বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর নাম লেখো।
সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ হল – সুন্দরী, ক্যাওড়া (Sonneratia sp.) প্রভৃতি এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হল – রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, মেছোবিড়াল প্রভৃতি।
সুন্দরবন কোন কোন অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত এবং এর ভৌগোলিক অবস্থান ও মোট আয়তন কত?
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার এবং বাংলাদেশের খুলনা জেলার দক্ষিণ প্রান্ত জুড়ে সুন্দরবন অবস্থিত। এর ভৌগোলিক অবস্থান 21°32′ থেকে 21°55′ উত্তর অক্ষাংশে এবং 88°42′ থেকে 89°04′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় 9630 km²।
ক্ষুদ্র সবুজ তথ্য বই বা লিট্ল গ্রিন ডাটা বুক বলতে কী বোঝ?
বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবছর পরিবেশ-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংবলিত একটি বই প্রকাশ করে। একে ক্ষুদ্র সবুজ তথ্য বই (little green data book) বলে। এই বইয়ে পৃথিবীর বন ও জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য, কৃষি প্রভৃতি প্রায় 50 টির অধিক বিষয়ে তথ্য প্রকাশিত হয়।
জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার প্রস্তাব উপস্থাপন করো।
- কোনো অঞ্চলের বিপন্ন প্রাণীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের প্রজনন, খাদ্য ও বাসস্থান সুনিশ্চিত করা।
- স্থানীয় উদ্ভিদ বিনষ্ট না করা, বনোন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ করা।
- স্থানীয় জনগণ ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে বন পরিচালন করা ও বনজ উপাদানের পরিমিত ব্যবহার সুনিশ্চিত করা।
সুন্দরবনের যে দ্বীপগুলি জলে নিমজ্জিত তাদের নাম লেখো।
সুন্দরবনের নিমজ্জিত দ্বীপগুলি হল –
- ঘোরামারা।
- নিউ মুর দ্বীপ।
- সুপারিভাঙা।
- লোহাচারা।
- বেডফোর্ড প্রভৃতি।
হটস্পট কী? উদাহরণ দাও।
হটস্পট –
পৃথিবীর যে বৃহত্তর অঞ্চলগুলিকে যথেষ্ট মাত্রায় জীববৈচিত্র্য থাকলেও তা মানুষ দ্বারা বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কাগ্রস্থ, তাদের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট বা জীববৈচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বলে।
উদাহরণ –
পূর্ব হিমালয় ও সুন্দাল্যান্ড, পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা।
সুন্দরবন সমস্যা সমাধানে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
- সমস্ত বনাঞ্চল সরকারী ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
- ম্যানগ্রোভ গাছের বৃক্ষরোপণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
- বাঘ ও অন্যান্য বন্য প্রজাতি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ বিনাশের কারণ কী?
সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ বিনাশের কারণগুলি হল –
- মানববসতি নির্মাণ ও জ্বালানির প্রয়োজনে ম্যানগ্রোভ কাটা হয়ে থাকে।
- প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝা ম্যানগ্রোভ অরণ্য বিনাশ করে।
- দূষণ, বিশ্ব উষ্ণায়নজনিত জলতল বৃদ্ধির ফলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য বিনষ্ট হচ্ছে।
- চিংড়ি চাষের জন্য নতুন জলাভূমি প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে বহু ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ কাটা হয়ে থাকে।
সুন্দরবন উন্নয়নে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে তুমি মনে করো?
অনুরূপ প্রশ্ন, সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ রক্ষা করার দুটি পদক্ষেপ প্রস্তাব করো।
সুন্দরবন উন্নয়নে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, সেগুলি হল –
- ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বনসৃজন ও আদি বাস্তুতন্ত্র বজায় রেখে বনজ উপাদানের পরিমিত ও সুসংহত ব্যবহার ও তার পুনর্নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করা। ভারত ও বাংলাদেশ উভয়দেশের বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদেরা মিলিত হয়ে যৌথ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন।
- স্থানীয় জনগণকে ওই বনাঞ্চল ও তার বন্যাপ্রাণের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সচেতন করা প্রয়োজন। বন্যপ্রাণ বিনাশের চরম পরিণতি সম্বন্ধে তাদের জ্ঞাত হতে হবে।
- সুন্দরবন অঞ্চলের নদীদূষণ ও মাটি দূষণ যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলতে হবে।
- সুন্দরবনে পরিবেশ বিনাশ না করে কেবলমাত্র ইকোটুরিজমের ব্যবস্থা করতে হবে।
জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য বা গুরুত্ব লেখো।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দুটি উদ্দেশ্য হল –
- সংখ্যায় কম এমন প্রাণীদের ও উদ্ভিদের অস্তিত্ব বজায় রাখা।
- দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে সুদৃঢ় করা এবং মানবকল্যাণে জীববৈচিত্র্যের বিজ্ঞানভিত্তিক সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা।
ইন-সিটু সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ?
কোনো জীবকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার ও বংশবিস্তার করার সমস্ত সুবিধা প্রদান করে সংরক্ষণ করাকে ইন-সিটু সংরক্ষণ বা স্বস্থানিক সংরক্ষণ বলে। যেমন – সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানে বাঘ সংরক্ষণ।
ইন-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি কী কী?
ইন-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা হল –
- প্রাকৃতিক পরিবেশে কম খরচে সংরক্ষণ করা যায়।
- জীবের মুক্ত প্রজনন সম্ভব হয় বলে জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়।
ইন-সিটু সংরক্ষণের অসুবিধা হল –
- বৃহৎ আয়তন স্থানের প্রয়োজন হয়।
- অসুস্থ জীবের চিকিৎসা সম্ভব হয় না।
ইন-সিটু ও এক্স-সিটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বা পথগুলি লেখো।
ইন-সিটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পথগুলি হল – জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, সংরক্ষিত অরণ্য, সুরক্ষিত বনাঞ্চল ইত্যাদি।
এক্স-সিটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পথগুলি হল – চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বীজ বা সীড ব্যাংক, জিন ব্যাংক ইত্যাদি।
জাতীয় উদ্যান কাকে বলে? দুটি উদাহরণ দাও।
জাতীয় উদ্যান –
কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ও আয়তনে অভয়ারণ্য অপেক্ষা বড়ো যেসব নির্দিষ্ট বনাঞ্চলে প্রাণী হত্যা, মাছ ধরা, গাছ কাটা, এমনকি বিনা অনুমতিতে প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ সেগুলিকে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্ক বলে।
উদাহরণ –
পশ্চিমবঙ্গের গোরুমারা জাতীয় উদ্যান এবং মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান।
জাতীয় উদ্যানের বৈশিষ্ট্য লেখো।
জাতীয় উদ্যানের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- জাতীয় উদ্যান হল সরকার অধিগৃহীত এবং নিয়ন্ত্রাণাধীন এক অঞ্চল যেখানে বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
- এইজাতীয় উদ্যানে কোনো ধরনের শিকার করা, চাষবাস করা বা গৃহপালিত পশুচারণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
- এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবজ সম্পদকে জাতীয় পর্যায়ে সংরক্ষণ করা হয়।
জাতীয় উদ্যান স্থাপনের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য লেখো।
জাতীয় উদ্যান স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উদ্দেশ্য হল –
- সংকটাপন্ন প্রাণীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের এবং প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রচনা করা।
- নির্দিষ্ট অঞ্চলটির প্রাকৃতিক পরিবেশ, উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ সম্পদসমূহের জাতীয় স্তরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জাতীয় অরণ্যের ভূমিকা লেখো।
- জাতীয় অরণ্যগুলিতে সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হওয়া যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। ভারতীয় সিংহ, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, একশৃঙ্গ গন্ডার প্রভৃতি প্রাণীগুলির সংখ্যা এর ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে।
- জাতীয় অরণ্যগুলি একমুখী মানবউন্নয়নের বদলে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র ও ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- স্থানীয় আদিবাসী, তাদের ঐতিহ্য ও পরম্পরা রক্ষা করতেও জাতীয় অরণ্য সাহায্য করে থাকে।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে ও গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলির নাম লেখো।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলি হল – একশৃঙ্গ গন্ডার, বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, হাতি, বাঘ, শূকর ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ইত্যাদি।
গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত প্রাণীগুলি হল – বাইসন, গন্ডার, হাতি, গাউর, শ্লথ বিয়ার, সম্বর, বন্য শূকর, পিগমি হগ ইত্যাদি।
অভয়ারণ্য বা স্যাংচুয়ারি কাকে বলে? দুটি উদাহরণ দাও।
অভয়ারণ্য –
রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এমন একটি বনাঞ্চল যেখানে আইনের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী হত্যা বা শিকার করা এবং জনসাধারণের প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ, তাকে অভয়ারণ্য বলে। কিন্তু গবেষণার স্বার্থে অনুমতি সাপেক্ষে অভয়ারণ্যে প্রবেশাধিকার লাভ করা যায়।
উদাহরণ –
পশ্চিমবঙ্গের চাপড়ামারি ও ঝাড়খণ্ডের পালামৌ অভয়ারণ্য।
অভয়ারণ্যের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
অভয়ারণ্যের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল –
- অভয়ারণ্যে বন্যপ্রাণী শিকার রাজ্য সরকার কর্তৃক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়।
- এই ধরনের বনাঞ্চলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ, তবে মুখ্য বন আধিকারিক বা কর্তব্যরত সরকারি কার্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়।
অভয়ারণ্য স্থাপনের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য লেখো।
অভয়ারণ্য স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উদ্দেশ্য হল –
- চোরাশিকারির হাত থেকে প্রাণী বৈচিত্র্যকে রক্ষা করা।
- স্বাভাবিক পরিবেশে সংকটাপন্ন জীবপ্রজাতির সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অভয়ারণ্যের ভূমিকা লেখো।
- অভয়ারণ্যগুলি স্থানীয় বা এনডেমিক প্রজাতিগুলি রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখা, জীবের প্রজননে স্থান প্রদান করে জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে অভয়ারণ্য সাহায্য করে।
- অভয়ারণ্য ইকোপর্যটন দ্বারা মানুষকে আনন্দ প্রদান করে থাকে। প্রকৃতি ও জীব সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞানলাভেও এগুলি সাহায্য করে।
সংরক্ষিত অরণ্য বা সংরক্ষিত বনাঞ্চল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
সংরক্ষিত অরণ্য –
ভারতীয় বন আইন, 1927 অনুযায়ী রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যেসব অরণ্যে সাধারণের প্রবেশের অধিকার থাকে না, কিন্তু অনুমতি নিয়ে গবেষকরা প্রবেশ করতে পারে সেইসব বনভূমিকে সংরক্ষিত অরণ্য বলে।
উদাহরণ –
কেরলের শোলায়ার (Sholayar) সংরক্ষিত অরণ্য, কর্ণাটকের হানামাসাগর (Hanumasagara) সংরক্ষিত অরণ্য।
সংরক্ষিত অরণ্য বা রিজার্ভ ফরেস্ট -এর দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
সংরক্ষিত অরণ্য বা রিজার্ভ ফরেস্ট -এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- এই ধরনের অরণ্য রাজ্য সরকারের আয়ত্তাধীন।
- এইপ্রকার বনাঞ্চলে গাছকাটা, শিকার করা এবং গৃহপালিত পশুচারণ সরকারি অনুমতি ছাড়া নিষিদ্ধ থাকে।
বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ –
যে বিশেষ বনাঞ্চলে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের জন্য বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী জমি অঞ্চলভিত্তিক ও নির্দিষ্ট ক্রিয়াকর্মভিত্তিক কতকগুলি নির্দিষ্ট অংশে ভাগ করা হয়, তাকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বলে।
উদাহরণ –
পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন ও তামিলনাডুর নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।
বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের অংশগুলি ব্যাখ্যা করো।
অথবা, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের বৈশিষ্ট্য বলো।
অনুরূপ প্রশ্ন, কোর অঞ্চল কাকে বলে? বাফার জোন কী? ট্রানজিশন অঞ্চল বলতে কী বোঝ?
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সুবিধার জন্য বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভকে তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়। এগুলি হল –
কোর অঞ্চল –
বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের কেন্দ্রে অবস্থিত সংরক্ষিত অংশকে কোর অঞ্চল বলে। এই অঞ্চলে জীবের প্রজনন সাধিত হয় ও এই অঞ্চলের ইকোসিস্টেম অন্য অঞ্চলগুলিতে স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়। এই অঞ্চলে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
বাফার অঞ্চল –
কোর অঞ্চলকে ঘিরে অবস্থিত অঞ্চল যেখানে মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত। এই অঞ্চলে নিয়ন্ত্রিত পর্যটন, গবেষণা প্রভৃতি কাজ করা হয়।
ট্রানজিশন অঞ্চল বা এরিয়া অফ কো-অপারেশন –
স্থানীয় বাসিন্দা ও সংরক্ষণ কর্মীরা এই অঞ্চলে থাকেন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের চেষ্টা করেন। এই অঞ্চলের বনজ উপাদান পরিমিতভাবে ব্যবহার করা যায়।

বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ স্থাপনের দুটি উদ্দেশ্য লেখো।
বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ স্থাপনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল –
- বায়োস্ফিয়ারে থাকা জীবসমূহকে প্রজাতিগত ও জিনগত বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
- মানুষ ও প্রকৃতির আন্তঃসম্পর্কের উন্নতিসাধনের ব্যবস্থা করা।
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি ন্যাশনাল পার্ক ও একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের উদাহরণ দাও।
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি ন্যাশনাল পার্ক হল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ও একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হল সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।
এক্স-সিটু সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
এক্স-সিটু সংরক্ষণ –
কোনো জীবকে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন হয়, যা তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে সম্ভব নয়, তখন সেই জীবকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। এই ধরনের সংরক্ষণকে এক্স-সিটু সংরক্ষণ বলে।
উদাহরণ –
বোটানিক্যাল গার্ডেন -এ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা।
এক্স-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা কী কী?
এক্স-সিটু সংরক্ষণের সুবিধাগুলি হল –
- কোনো প্রজাতি বিপন্ন হলে তার সুচিকিৎসা, সংরক্ষণ ও প্রজনন এক্স-সিটু সংরক্ষণ দ্বারা সম্ভব হয়।
- কোনো প্রজাতি বিলুপ্তপ্রায় হলে সম্পূর্ণ বিলুপ্তির আগে তার জনন উপাদান (জননকোশ বা রেণু) ক্রায়োসংরক্ষণ দ্বারা সংরক্ষিত করে ভবিষ্যতে জীব তৈরি সম্ভব হয়।
এক্স-সিটু সংরক্ষণের অসুবিধা কী কী?
এক্স-সিটু সংরক্ষণের অসুবিধাগুলি হল –
- এক্স-সিটু সংরক্ষণে সীমিত সংখ্যক জীবের প্রজনন সম্ভব হয় বলে জিনগত বৈচিত্র্য হ্রাস পায়।
- এটি একটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি।
এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র বা পথ হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি বৈশিষ্ট্য হল –
- বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সংগৃহীত স্থলজ ও জলজ প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় কৃত্রিম পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়।
- এখানে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ, বংশবৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজনমতো প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজও করা হয়।

এক্স-সিটু সংরক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি উদাহরণ দাও।
- পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ, সিংহ, হাতি, সাপ ইত্যাদি প্রাণীকে সংরক্ষণ করা হয়।
- অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে, ইন্দিরা গান্ধী জুলজিক্যাল পার্কে শ্লথ, ভালুক, বন্যকুকুর, পুমা, জাগুয়ার প্রভৃতি সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল –
- বিভিন্ন ধরনের বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ এবং ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে সংরক্ষণ করা হয়।
- বিরল এবং বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদগুলির কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়।
এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে দুটি বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদাহরণ দাও।
- আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস ভারতীয় বোটানিক গার্ডেন, শিবপুর, হাওড়া – এখানে 330 মিটার পরিধিযুক্ত বিখ্যাত বটগাছ সংরক্ষিত আছে। এ ছাড়া অর্কিড, পান এখানে সংরক্ষিত করা হয়।
- জওহরলাল নেহেরু ট্রপিক্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ত্রিবান্দ্রম, কেরল – এখানে ভেষজ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা হয়।

এক্স-সিটু সংরক্ষণের দুটি উদাহরণ দাও।
এক্স-সিটু সংরক্ষণের উদাহরণ হল –
- চিড়িয়াখানা (আলিপুর চিড়িয়াখানা)।
- বোটানিক্যাল গার্ডেন (আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস ভারতীয় বোটানিক গার্ডেন)।
আরবোরেটাম কী? জার্মপ্লাজম ব্যাংক কাকে বলে?
আরবোরেটাম –
আরবোরেটাম হল এক্স-সিটু সংরক্ষণের বিশেষ পদ্ধতি। এখানে বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষাগত কারণে দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
জার্মপ্লাজম ব্যাংক –
মূলত সজীব বীজ ও উদ্ভিদ দেহাংশ সংরক্ষণ স্থানকে জার্মপ্লাজম ব্যাংক বলে। এখানে ক্রায়োপ্রিজারভেশন দ্বারা এই সংরক্ষণ করা হয়। যেমন – বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, শিবপুর।
ক্রায়োসংরক্ষণ বলতে কী বোঝ?
ক্রায়োসংরক্ষণ হল একটি এক্স-সিটু সংরক্ষণ প্রক্রিয়া যাতে কোশ, কলা বা অন্য কোনো সজীব দেহাংশ তরল নাইট্রোজেনে প্রায় -196°C তাপমাত্রায় রেখে দীর্ঘদিন জীবিত রাখা হয়।
ক্রায়োপ্রিজারভেশন করার ক্ষেত্রে প্রধান দুটি সমস্যা উল্লেখ করো।
ক্রায়োপ্রিজারভেশনের সমস্যাগুলি হল –
- দ্রুত তাপমাত্রা হ্রাসে কোশে বরফ জমে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একে ‘ক্রায়োইনজুরি’ বলে।
- ধীরে ধীরে তাপমাত্রা হ্রাস করলে কোশীয় অভিস্রবণ পদ্ধতি বিনষ্ট হয়।

ক্রায়োসংরক্ষণের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো এবং একটি উদাহরণ দাও।
ক্রায়োসংরক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- এইজাতীয় সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়।
- সাধারণত -196°C তাপমাত্রায় বিভিন্ন ধরনের পরাগরেণু, গ্যামেট, কলাকোশ, বীজ ইত্যাদি ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
উদাহরণ – পশ্চিমবঙ্গের বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, শিবপুর (হাওড়া)।
ক্রায়োপ্রোটেক্টান্ট কী? উদাহরণ দাও।
ক্রায়োপ্রোটেক্টান্ট –
যে উপাদানগুলির ব্যবহারে সজীব কলার হিমায়নে তার গঠনগত উপাদান বিনষ্ট হয় না, তাদের ক্রায়োপ্রোটেক্টান্ট বলে। এদের অপর নাম ক্রায়োপ্রোটেক্টিভ এজেন্ট বা CPA।
উদাহরণ –
গ্লিসারল, সুক্রোজ।
জিন ব্যাংক কাকে বলে?
জীবের দেহের জিনগত উপাদানের ক্রায়োসংরক্ষণ স্থানকে জিন ব্যাংক বলে। উদ্ভিদের বীজ, প্রাণীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু এখানে সংরক্ষণ করা হয়। সীড ব্যাংক, কলা ব্যাংক, ক্রায়োব্যাংক প্রভৃতি হল জিন ব্যাংকের উদাহরণ। যেমন – ন্যাশনাল ব্যুরো অফ প্ল্যান্ট জেনেটিক্স, নতুন দিল্লি, এখানে জিন ব্যাংক রয়েছে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ক্রায়োসংরক্ষণের গুরুত্ব কী?
ক্রায়োসংরক্ষণের গুরুত্ব হল –
- দুষ্প্রাপ্য ও বিলুপ্তপ্রায় জীবের জিন দীর্ঘদিন ধরে গবেষণাগারে সংরক্ষণ করা যায়। এর ফলে জীবটির অবলুপ্তি রোধ করা যায়।
- ভবিষ্যতে প্রয়োজনমতো কোনো জীবসৃষ্টিতে পদ্ধতিটি সাহায্য করে থাকে।
ইন-সিটু ও এক্স-সিটু সংরক্ষণের পার্থক্য লেখো।
ইন-সিটু ও এক্স-সিটু সংরক্ষণের পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | ইন-সিটু সংরক্ষণ | এক্স-সিটু সংরক্ষণ |
সংরক্ষণ স্থান | জীবের স্বাভাবিক বাসস্থানেই তার সংরক্ষণ করা হয়। | জীবের স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে সরিয়ে কৃত্রিম স্থানে সংরক্ষণ করা হয়। |
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা | বিপন্ন প্রজাতিকে শিকারি প্রজাতি থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। | বিপন্ন প্রজাতিকে সমস্ত প্রতিকূলতা থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। |
উদাহরণ | জাতীয় পার্ক, অভয়ারণ্য। | চিড়িয়াখানা, ক্রায়োসংরক্ষণ। |
জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে তুলনা করো।
নীচে জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তুলনা করা হল –
বিষয় | জাতীয় উদ্যান | অভয়ারণ্য | সংরক্ষিত বনাঞ্চল |
সংরক্ষণ স্থান | কেন্দ্রীয় সরকার অধিগৃহীত ও নিয়ন্ত্রণাধীন যে অঞ্চলে বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদের চিরস্থায়ী সংরক্ষণ করা হয়। | রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যে অঞ্চলে বন্যপ্রাণী অবাধে বিচরণ করে। স্বাধীনভাবে খাদ্যগ্রহণ করে। এখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ও বন্যপ্রাণী হত্যা বা শিকার নিষিদ্ধ। | রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যে অংশে সাধারণ মানুষের প্রবেশ তথা কাঠ-কাটা, শিকার করা নিষিদ্ধ। |
বৈশিষ্ট্য | প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবজ সম্পদের জাতীয় পর্যায়ে সংরক্ষণ করা হয়। | সরকারি অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ, কেবলমাত্র প্রাণী সংরক্ষণ করা হয়। | কেবলমাত্র গবেষণার কাজেই ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া যায়। |
উদাহরণ | পশ্চিমবঙ্গের জলদাপাড়া | পশ্চিমবঙ্গের চাপড়ামারি | পশ্চিমবঙ্গের বক্সা |
জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণে JFM ও PBR -এর ভূমিকা, ভারতের কিছু বিপন্ন প্রজাতি এবং তাদের সংরক্ষণ
কোন্ আইন বলে PBR তৈরি করা হয়?
ভারতে বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি আইন, 2002 -এ প্রতিটি স্থানীয় পঞ্চায়েত বা মিউনিসিপ্যালিটিতে বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি (BMC), গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই আইন অনুযায়ী স্থানীয় লোকেদের সহায়তায় প্রতিটি অঞ্চলে পিপলস্ বায়োডাইভার্সিটি রেজিস্টার বা PBR তৈরি করা হয়।
‘PBR শুধু একটি প্রামাণ্য নথি নয়, এটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ।’ — ব্যাখ্যা করো।
PBR -এ স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের মাত্রা, ব্যবহার প্রভৃতি সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত হয়। কিন্তু এটি শুধু তথ্যপূর্ণ নথি নয়, এর মূল উদ্দেশ্য হল স্থানীয়ভাবে জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে বিশদে জেনে সেই অনুযায়ী তার যথাযথ পরিচালন। অর্থাৎ, জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনভিত্তিক ব্যবহার, সংরক্ষণ প্রভৃতি সক্রিয়তামূলক কাজ PBR -এর উদ্দেশ্য, তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
পিপলস্ বায়োডাইভার্সিটি রেজিস্টার (PBR) -এ জীববৈচিত্র্য সংক্রান্ত যে প্রধান বিষয়গুলি লিপিবদ্ধ করা হয় তা লেখো।
PBR -এ যে সমস্ত বিষয়ে তথ্য মজুত করা থাকে তা হল –
- সমস্ত স্থানীয় প্রজাতি সম্পর্কে সামগ্রিক তথ্য।
- প্রজাতির বাসস্থান।
- প্রজাতির থেকে প্রাপ্ত জৈবিক উৎপাদন (বা সম্পদ) সম্বন্ধে ধারণা, তাদের বাজারমূল্য, সংগ্রহের সময়, সংগ্রহের নিয়ম ও তাদের পরিবহণ পদ্ধতি।
- প্রজাতিজাত উৎপাদনের প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তি।
- প্রজাতিজাত সম্পদের স্থানীয় ব্যবহার এবং পরিচালন পদ্ধতি।
- স্থানীয় ভৌগোলিক তথ্য।
- বিপন্ন প্রজাতি নির্ণয় ও স্থানীয় মানুষদের তরফ থেকে প্রজাতি সংরক্ষণের ধারণা ও উদ্যোগ।
- স্থানীয় প্রজাতিগুলি সম্বন্ধে ঐতিহ্যবাহী, পরম্পরাগত ও বিশ্বাস সংক্রান্ত তথ্য।
বিপন্ন (endangered) প্রজাতি বলতে কী বোঝ?
যেসব প্রাণীর অচিরেই লুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের বিপন্ন হওয়ার কারণ যদি সমান মাত্রায় বজায় থাকে এবং তাদের পুনরুদ্ধার করার সম্ভাবনা কম থাকে তবে সেই ধরনের প্রাণীদের বিপন্ন প্রজাতি বলে। IUCN রেডলিস্টে এটি সংকটগ্রস্ত ক্যাটাগোরির অন্তর্গত একটি উপবিভাগ। এইজাতীয় প্রাণীদের সংরক্ষণ ভীষণভাবে আবশ্যক। যেমন – ভারতীয় বাঘ, গন্ডার ও সিংহ।
সংকটাপন্ন প্রজাতি (Vulnerable species) বলতে কী বোঝ?
সংকটাপন্ন প্রজাতি (Vulnerable species) –
এই বিভাগের অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি বলতে বোঝায়, বিগত 10 বছরে বা তিনটি প্রজন্মের মধ্যে প্রজাতির 50% বিলুপ্ত হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে। যেমন – নীল বিষাক্ত ব্যাং, কৃষ্ণসার মৃগ ইত্যাদি।
অবলুপ্ত (extinct) জীব বলতে কী বোঝ?
যেসব প্রাণী ও উদ্ভিদকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সংরক্ষণাগারেও আর দেখা যায় না, তাদের অবলুপ্ত জীব বলে। যেমন – ডাইনোসর, ডোডো পাখি, প্যাসেঞ্জার পিজিয়ন, ক্যারোলিনা প্যারাকিট ইত্যাদি।

ভারতের তিনটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র কী কী?
ভারতের তিনটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের নামগুলি হল –
- পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন।
- উত্তরাখণ্ডের করবেট টাইগার রিজার্ভ।
- মধ্যপ্রদেশের কানহা।
সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণের জন্য কোন্ বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ?
- ম্যানগ্রোভ অরণ্য বাঁচানো।
- স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ জরুরি কারণ বাঘের স্বাভাবিক খাদ্যের জোগান অত্যন্ত জরুরি।
- স্বাদুজলের জলাশয় সংরক্ষণ যাতে বাঘকে লবণাক্ত সামুদ্রিক জল পান করতে না হয়।
- চোরাশিকারির অনুপ্রবেশ ও বাঘ হত্যা বন্ধ করা।
‘প্রজেক্ট টাইগার’ কী?
‘প্রজেক্ট টাইগার’ হল ভারতীয় সরকার দ্বারা 1973 সালে প্রণীত একটি বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণ প্রকল্প। এই প্রকল্পটি ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথোরিটি (NTCA) দ্বারা পরিচালিত হয় এবং বর্তমানেও তা রূপায়িত হয়ে চলেছে। এটি জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে প্রথম পরিচালিত হয়।
প্রজেক্ট টাইগারের উদ্দেশ্য কী ছিল?
- বাঘের বাসস্থান কমার কারণগুলি দূর করা।
- বাঘের পপুলেশন বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা প্রজেক্ট টাইগার একটি সফল উদ্যোগ। 1970 নাগাদ ভারতীয় বাঘের সংখ্যা ছিল 1200 যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় 2226 হয়েছে (2014 সেনসাস)।
ভারতীয় একশৃঙ্গ গন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য দুটি সংরক্ষণ সংক্রান্ত পদক্ষেপ প্রস্তাব করো।
গন্ডার সংরক্ষণে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল –
- গন্ডারের জন্য বাসস্থান সুনিশ্চিত করা ও তাদের খাদ্য ও পানীয়ের যথেষ্ট জোগানের ব্যবস্থা করা।
- গন্ডারের প্রজননের ব্যবস্থা করা, সম্ভব হলে ‘ক্যাপটিভব্রিডিং’ -এর মাধ্যমে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা করা।
- জনগণের মধ্যে গন্ডার সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।
একশৃঙ্গ গন্ডার কোন্ ভারতীয় জাতীয় পার্কে দেখা যায়?
একশৃঙ্গ গন্ডার দেখা যায় –
- কাজিরাঙা জাতীয় পার্ক, অসম (সর্ববৃহৎ, 1855 গন্ডার)।
- জলদাপাড়া জাতীয় পার্ক, পশ্চিমবঙ্গ।
- গোরুমারা জাতীয় পার্ক, পশ্চিমবঙ্গ।
- মানস জাতীয় পার্ক, অসম।
- দুধওয়া জাতীয় পার্ক, উত্তরপ্রদেশ।
একটি বিপন্ন সরীসৃপ প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য ইন-সিটু সংরক্ষণ ব্যবস্থাগুলি লেখো এবং পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত এরকম একটি সংরক্ষণ স্থানের নাম লেখো।
একটি বিপন্ন সরীসৃপ প্রজাতি হল কুমির। কুমিরের ইন-সিটু সংরক্ষণ ব্যবস্থাগুলি হল –
- কুমিরের প্রজননের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি ও তার পরিচালন।
- ক্যাপটিভ ব্রিডিং দ্বারা অভয়ারণ্যে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ তৈরি ও প্রজননে সাহায্য করা।
- চোরাশিকার ও কুমিরের ডিম সংগ্রহ প্রতিরোধ করা।
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি সংরক্ষণ স্থান হল –
- ভগবতপুর কুমির প্রকল্প।
- সুন্দরবন।
গঙ্গা নদীতে ঘড়িয়ালের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ লেখো।
ঘড়িয়ালের সংখ্যা কমার কারণগুলি হল –
- ঘড়িয়ালের খাদ্য হল মাছ, গঙ্গা নদীতে দূষণের কারণে মাছের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ফলে প্রাণীটি খাদ্যের অভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে।
- মাছধরার জালে ধরা পড়লে তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে।
- চাষে অতিরিক্ত জল ব্যবহার, বাঁধ নির্মাণ প্রমুখ কারণে এদের বাসস্থান কমে আসছে।
গির অরণ্যে সিংহ সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত পদক্ষেপ প্রস্তাব করো।
অথবা, সিংহ সংরক্ষণের জন্য ভারতবর্ষের গির জাতীয় উদ্যানে যে যে ইন-সিটু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা উল্লেখ করো।
- গির অরণ্যে বন্য উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা। এর ফলে সিংহের বাসস্থান ও খাদ্যের জোগান বজায় থাকে।
- চোরাশিকার বন্ধ করা।
- কৃষিজমি রক্ষার্থে যে বৈদ্যুতিক বেড়া ব্যবহার করা হয়, তা বন্ধ করা। উন্মুক্ত কুয়োতে পড়ে যাতে সিংহের আর মৃত্যু না হয়, তার ব্যবস্থা করা।
- প্রজনন কেন্দ্রে প্রজনন প্রকল্প পরিচালনা করা।
রেড পান্ডা কোন্ কোন্ ভারতীয় জাতীয় পার্কে দেখা যায়?
রেড পান্ডা দেখা যায় –
- সিঙ্গালিলা জাতীয় পার্ক, দার্জিলিং (পশ্চিমবঙ্গ)।
- নকরেক জাতীয় পার্ক, মেঘালয়।
- নেওরাভ্যালি জাতীয় পার্ক, দার্জিলিং (পশ্চিমবঙ্গ)।
- কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় পার্ক (সিকিম)।
- নামদাফা জাতীয় পার্ক (অরুণাচল প্রদেশ)।
‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ কাকে বলে?
নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল, চিড়িয়াখানা বা অন্য কোনো সংরক্ষণ সুবিধা সমন্বিত স্থানে প্রাণী প্রজনন দ্বারা তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির পদ্ধতিকে ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ বলে। কুমির, গন্ডার, রেড পান্ডা প্রভৃতি বিপন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ -এর সাহায্য নেওয়া হয়।
রেড ডাটা বুক কাকে বলে?
IUCN নামক বিশ্বসংস্থা পৃথিবীর বিপদগ্রস্ত জীবগুলির সংরক্ষণের স্বার্থে ওই জীবগুলির একটি তালিকা বা লিস্ট প্রকাশ করে। একে রেড লিস্ট বা রেড ডাটা বুক বলে। সমস্ত জীবকে এই লিস্টে মোট 9টি শ্রেণিতে বিভক্ত করে শ্রেণি ভাগ করা হয়। যেমন – অবলুপ্ত (extinct), বিপন্ন (endangered), সংকটাপন্ন (vulnerable) প্রভৃতি।
‘গ্রিন ডাটা বুক’ কী?
এটি একটি ছোটো পরিবেশসংক্রান্ত তথ্য সমৃদ্ধ পকেটবুক যাতে 200 টিরও বেশি দেশের কৃষি, বনজসম্পদ, জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়া যায়। এটি প্রতিবছর বিশ্ব ব্যাংক প্রকাশ করে থাকে।
ভারতের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রধান আইনগুলি কী কী?
ভারতের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রধান আইনগুলি হল –
- দ্য ওয়াইল্ড লাইফ (প্রোটেকশন) অ্যাক্ট, 1972।
- দ্য ফরেস্ট (কনজারভেশন) অ্যাক্ট, 1980।
- দ্য এনভায়রনমেন্ট (প্রোটেকশন) অ্যাক্ট, 1986।
- বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট, 2002।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে সংস্থাগুলি এগিয়ে এসেছে তাদের যে-কোনো দুটির নাম উল্লেখ করো।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে সংস্থাগুলি এগিয়ে এসেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি সংস্থা হল –
- WWF বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার।
- IUCN বা ইনটারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার।
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পঞ্চম অধ্যায় “পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ” অধ্যায়ের ‘জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন