মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানে জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বয় হলো প্রাণীদেহে রক্তনালী, হরমোন, যা পাচন ক্রিয়াকলাপের মধ্যে সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়ের কাজ করে। প্রাণীদেহে রক্তনালী হলো যে রক্তযুক্ত স্বচ্ছ প্রোটিনের সংযোগে গঠিত করে। হরমোন হলো রক্তের এক ধরনের প্রতিষ্ঠান যা প্রাণীদেহে নির্দিষ্ট কাজ করে। পাচন ক্রিয়াকলাপ হলো যা খাদ্যের উপাদান গ্রহণ এবং উপাদান প্রস্তুতির কাজ করে।
সাড়া প্রদান হলো যে পদার্থ সাড়া প্রদান করে তা হলো হরমোন, যা প্রাণীদেহে কাজ করে এবং একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সমন্বয় করে। এছাড়াও হরমোন প্রদান করে পাচন ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে।
STH-এর নিঃসরণ-স্থান ও কাজ উল্লেখ করো।
STH – একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ যা মানব জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে এবং নতুন আবিষ্কার করে। এটি জীবন বিজ্ঞানের জন্য একটি সুযোগ যা নতুন জ্ঞান এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির উন্নয়ন করে।
STH-এর নিঃসরণ-স্থান
STH বা সোমাটোট্রপিক হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগের সোমাটোট্রফ কোশ থেকে নিঃসৃত হয়।
STH-এর কাজ
মানবদেহে সোমাটোট্রপিক হরমোনের কাজগুলি এখানে আলোচনা করা হল।
- সোমাটোট্রপিক হরমোন মানবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। এটি দেহের বিভিন্ন অস্থি ও তরুণাস্থি গঠনের মাধ্যমে দেহের সার্বিক বৃদ্ধি ঘটায়।
- এ ছাড়া এই হরমোন পেশিকলা, যকৃৎ ও বৃত্তের বৃদ্ধির সহায়ক।
- প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও স্নেহপদার্থ বিপাকে এই হরমোনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে।
- শৈশব ও যৌবনের প্রারম্ভে এই হরমোন অতিমাত্রায় ক্ষরিত হলে অতিকায়ত্ব বা জাইগ্যানটিজম রোগ হয়।
- প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে এই হরমোন অতিমাত্রায় ক্ষরিত হলে অ্যাক্রোমেগালি রোগ হয়। এই রোগে রোগীর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটে না। মুখমণ্ডল, আঙুল প্রভৃতি অংশের বৃদ্ধি ঘটে। এর ফলে মুখমণ্ডল আকারে বড়ো হয়।
- শৈশব ও বাল্যকালে এই হরমোন অল্প পরিমাণে ক্ষরিত হলে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। একে ডোয়ার্ফিজম বা বামনত্ব বলে।
ACTH এবং GTH-এর নিঃসরণ-স্থান ও কাজ উল্লেখ করো।
জীবন বিজ্ঞানে ACTH এবং GTH এর নিঃসরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে ACTH হল অ্যাড্রেনালিন হরমোন নির্মাণ বিন্দু, আর GTH হল প্রজনন হরমোন নির্মাণ বিন্দু।
ACTH বা অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক হরমোন
নিঃসরণ-স্থান – পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগের কর্টিকোট্রফ কোশ থেকে ACTH নিঃসৃত হয়।
কাজ – 1. ACTH হরমোন অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। 2. ACTH অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কাজ কর্টেক্স থেকে বিভিন্ন হরমোনের, যেমন — গ্লুকোকটিকয়েড, মিনারালোকটি কয়েড ও সেক্স স্টেরয়েড হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। 3. ACTH অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স থেকে নিঃসৃত গ্লুকোকটিকয়েডের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কার্বোহাইড্রেট বিপাককে প্রভাবিত করে।
GTH বা গোনাডোট্রপিক হরমোন
নিঃসরণ-স্থান – GTH পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগ থেকে নিঃসৃত হয়। অগ্র পিটুইটারির গোনাডোট্রফ কোশ থেকে প্রধানত দুটি হরমোন FSH (ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন) ও LH (লিউটিনাইজিং হরমোন) ক্ষরিত হয় এবং অগ্র পিটুইটারির ল্যাক্টোট্রফ কোশ থেকে LTH ( লিউটোট্রপিক হরমোন) ক্ষরিত হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য বর্তমানে LTH-কে গোনাডোট্রপিক হরমোন হিসেবে গণ্য করা হয় না।
কাজ – সাধারণত কয়েকটি হরমোনকে একত্রে GTH বলা হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষদেহে এই হরমোনগুলির বিভিন্ন প্রকার কাজ করে থাকলেও সাধারণভাবে এদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ বর্তমান। যথা —
- পুরুষের দেহে শুক্রাশয়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া যৌবনকালে পুরুষাঙ্গ ও অন্যান্য যৌন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকাশে এবং গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশে সাহায্য করে।
- স্ত্রীদেহে স্তনগ্রন্থি ও ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, যৌবনে স্ত্রীসুলভ লক্ষণ প্রকাশে ও যৌন অগ্রভাগ্যের বিকাশে সাহায্য করে। যৌবনপ্রাপ্ত স্ত্রীদেহে মাসিক রজঃচক্রের স্বাভাবিকতা নিয়ন্ত্রণ করে।
TSH-এর নিঃসরণ-স্থান ও কাজ উল্লেখ করো। মাইরক্সিনের অতিরিক্ত ক্ষরণজনিত রোগটির নাম কী? এর লক্ষণগুলি লেখো।
TSH- হরমনের নিঃসরণ স্থান হল পিটুইটারি গ্ল্যান্ড এবং এর কাজ হল শরীরের পাচনতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ও হাড়পাঁচনের জন্য TSH হরমনের উন্নয়ন ও বিভিন্ন হরমনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা।
TSH-এর নিঃসরণ স্থান ও কাজ
নিঃসরণ স্থান – TSH বা পাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগ থেকে নিঃসৃত হয়।
কাজ – 1. থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কার্যকারিতার জন্য এই হরমোন একান্ত প্রয়োজন। এই হরমোন পাইরয়েড গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন হরমোনের (T3) ও খাইরক্সিন বা T4) নিয়ন্ত্রণ করে। 2. এই হরমোনের অধিক ক্ষরণে থাইরয়েড গ্রন্থি আকারে বৃদ্ধি পায়। 3. এই হরমোনের অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন ক্ষরণ হ্রাস পায়।
থাইরক্সিনের অতিরিক্ত ক্ষরণজনিত রোগ
থাইরক্সিনের অতিরিশ্ব ক্ষরণজনিত রোগটি হল- এক্সপথ্যালমিক গায়টার বা বহিঃচক্ষু গলগণ্ড।
থাইরক্সিনের অতিরিক্ত ক্ষরণজনিত রোগ লক্ষণ
- থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে।
- অক্ষিগোলক বিস্ফারিত হয়। অক্ষিগোলক অক্ষিকোটর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে, এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই এই রোগের নামকরণ বহিঃচক্ষু গলগণ্ড করা হয়।
- বিপাকীয় হার বেড়ে যায়।
- হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনহার বেড়ে যায়।
- BMR এবং দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
- অনিদ্রা রোগ দেখা দেয়, মেজাজ রুক্ষ ও খিটখিটে হয়।
- আবেগ প্রবণতা বেড়ে যায়।
GH বা STH-এর কাজ কী? বামনত্ব রোগের কারণ ও লক্ষণগুলি লেখো।
GH বা STH- হল একটি প্রধান হরমোন যা সম্পূর্ণ শরীরের উন্নয়ন এবং প্রস্থান নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। যা প্রধানতঃ পিটুইটারি হাইপোথালামাস এর মাধ্যমে নির্মিত হয়।
GH বা STH-এর কাজ
অগ্র পিটুইটারির সোমাটোট্রফ কোশ থেকে নিঃসৃত STH বা GH –
1. প্রোটিন সংশ্লেষ ও সঞ্চয়ের দ্বারা দেহে বৃদ্ধি ঘটায়। এটি প্রধানত অস্থি, তরুণাস্থি ও পেশির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
2. রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়।
3. শর্করা ও ফ্যাট বিপাকে সাহায্য করে। এর অধিক ক্ষরণে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জাইগ্যানটিজম এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের অ্যাক্রোমেগালি রোগ হয়। এর স্বপ্ন ক্ষরণে বামনত্ব রোগ হয়।
বামনত্ব রোগের কারণ ও লক্ষণ
রামনর রোগের কারণ – অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তথা শৈশবে ও বাল্যকালে প্রয়োজনের তুলনায় কম STH বা GH-এর কম ক্ষরণে বামনত্ব বা ডোয়ারফিজম রোগ দেখা যায়।
বামনর রোগের লক্ষণ – বামনত্ব রোগের লক্ষণ বা উপসর্গগুলি হল, এই রোগে —
1. দেহের স্বাভাবিক সামগ্রকি বৃদ্ধি প্রধানত অস্থি ও পেশির বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
2. পরিণত অবস্থায় দেহের উচ্চতা 3 ft বা 85 cm-এর কাছাকাছি পৌঁছোয়।
3. দেহের বিভিন্ন আন্তরযন্ত্রের বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে হ্রাস পায়।
4. শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়ের বৃদ্ধি ও স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয়।
5. গৌণ বা আনুষঙ্গিক যৌন লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ বিলম্বিত হয়।
পিটুইটারি নিঃসৃত GTH-গুলির নাম ও প্রত্যেকের প্রধান কাজ লেখো।
গোনাডোট্রপিক হরমোন মূলতঃ পুরুষ এবং মহিলাদের যৌন উন্নয়ন এবং প্রস্থান নিয়ন্ত্রণ করে। এটি পিটুইটারি হাইপোথালামাস এর উৎস হিসাবে কাজ করে।
GTH বা গোনাডোট্রপিক হরমোনগুলির নাম
অগ্র পিটুইটারি নিঃসৃত GTH গুলি হল – PSH বা ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন, LH বা লিউটিনাইজিং হরমোন (স্ত্রীদের ক্ষেত্রে) ও ICSH বা ইনটারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন (পুরুষদের ক্ষেত্রে)। এ ছাড়া LTH লিউটোট্রফিক হরমোন বা প্রোল্যাকটিন হরমোনকেও GTH-এর অন্তর্গত বলে ধরা যেতে পারে। তবে এটি একটি পৃথক হরমোন যা ল্যাক্টোট্রপিন নামে পরিচিত।
GTH বা গোনাডোট্রপিক হরমোনগুলির কাজ
- FSH বা ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোনের কাজ – এই হরমোন — 1. স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ে ডিম্বথলির বৃদ্ধিতে ও ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে। 2. পুরুষদেহে শুক্রাণু উৎপাদন বা স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
- LH বা লিউটিনাইজিং হরমোন – এই হরমোন — 1. স্ত্রীদেহে ডিম্বাণু নিঃসরণে ও পরিণত ডিম্বথলি থেকে পীতগ্রন্থি সৃষ্টিতে সাহায্য করে। 2. মহিলাদের পীতগ্রন্থি থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে।
- ICSH বা ইনটারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন – পুরুষদেহে ICSH শুক্রাশয়ের ইনটারস্টিশিয়াল কোশ বা লেডিগ বর্ণিত আন্তরকোশ থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণকে উদ্দীপিত করে।
- LTH বা ল্যাক্টোট্রফিক হরমোন বা প্রোল্যাকটিন – এই হরমোন — 1. মাতৃদেহে স্তনদুগ্ধ উৎপাদন ও ক্ষরণকে উদ্দীপিত করে। 2. নারীদের গর্ভাবস্থায় পীতগ্রন্থিকে নষ্ট হতে দেয় না এবং এর ক্ষরণ তথা প্রোজেস্টেরন নিঃসরণ অব্যাহত রাখে।
মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানে জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাণীদেহে সাড়া প্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন দুটি একইসাথে সম্পন্ন হয়।
সাড়া প্রদান হল শরীরের যে প্রতিটি অংশ যা প্রাণীর চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের হৃদয় প্রতিমিনিটে প্রায় ৭০ বার সাড়া দেয়। এছাড়াও শ্বাসনালী, ক্রমশঃ ক্ষুধার্ত, বয়স বৃদ্ধি, স্ত্রীলিঙ্গ ও পুরুষলিঙ্গের উন্নয়ন ইত্যাদি সাড়া প্রদানের উদাহরণ।
রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন এমন রাসায়নিক পদার্থ যা জীবজন্তুর শরীরে একসাথে কাজ করে। হরমোনের মাধ্যমে মানব শরীরে স্তন, মাথা, বুক, নাক, মস্তিষ্ক ইত্যাদি প্রতিটি অংশের উন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রণ হয়।
যদি আপনি ছবি আঁকতে ইচ্ছুক হন তাহলে এই লিংকে ক্লিক করুন- Learn How to Draw a Donkey Step by Step