আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বাদশ অধ্যায় ‘একটি চড়ুই পাখি’–এর রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় উঠে আসে।
অন্ধকার ঠোঁটে নিয়ে সন্ধ্যা ফেরে সেই/সে’ও ফেরে; এ বাড়ির খড় কুটো, ও বাড়ির ধান/ছড়ায় শব্দের টুকরো, ঘর জুড়ে কিচিমিচি গান। – পঙ্ক্তিগুলির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
কবি তারাপদ রায় ‘একটি চড়ুই পাখি’ কবিতায় তাঁর ঘরে আশ্রয় নেওয়া একটি চড়ুইপাখির দৈনন্দিন জীবনযাপনের যে চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, তা যেন এক হিসেবে প্রতিদিনের সাধারণ মানুষেরই কর্মব্যস্ত জীবনেরই ছবি। দিনের শেষে যখন প্রকৃতির বুকে সন্ধে নামে, তখন সারাদিন বাইরে জীবনধারণের প্রয়োজনে কাটিয়ে ঘরমুখী মানুষের মতো কবির ঘরে বাসা বেঁধে থাকা চড়ুইটিও তার বাসায় ফেরে। বাসাকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য খড়কুটো নিয়ে সে আসে, নিয়ে আসে আহারের ধান। এই সব নিয়ে তার নানারকম ধ্বনি এবং কিচিরমিচির গানে কবির ঘরে অপূর্ব ঐকতান বেজে ওঠে। এই ধ্বনি যেন কবির কানে সকল প্রাণীর বেঁচে থাকার, সুন্দরভাবে বসবাস করার আনন্দধ্বনি রচনা করে। কবি এই চড়ুইপাখির প্রাণস্পন্দনকে গভীরভাবে এই সমস্ত শব্দের মধ্য দিয়ে অনুভব করেন।
হয়তো ভাবে লোকটা চলে গেলে এই ঘর জানলা দোর, টেবিলে ফুলদানি, বই-খাতা/এ সব আমারই হবে; আমাকেই দেবেন বিধাতা। – পঙ্ক্তিগুলির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
কবি তারাপদ রায় তাঁর ঘরে বাসা বেঁধে বাস করা চড়ুইপাখিটির হাবভাব লক্ষ করে তাঁর মনের মধ্যে যেন নিজের মতো করে ডুব দিয়েছেন এবং সেইভাবেই নিজের কল্পনায় রচনা করেছেন চড়ুইটির মানসিক অবস্থার ছবিটি। তাঁর মনে হয়েছে যে, এই চড়ুইপাখিটির দৃষ্টিতে রয়েছে প্রবল কৌতূহলী বৈষয়িক ভাব। এই ঘরের বাসিন্দা হিসেবে হয়তো পাখিটির এমনও মনে হতে পারে যে কবি এই ঘর থেকে সরে গেলেই এই ঘর এবং ঘরের মধ্যেকার সব কিছু যেমন টেবিল, ফুলদানি, বইখাতা সমস্তরই মালিকানা সে-ই পাবে। যেহেতু কবির সঙ্গে একসঙ্গে সে এই ঘরে বাস করে, সেহেতু কবি চলে গেলে কবির এই ঘর এবং তার ব্যবহৃত যা আছে সব কিছুর উত্তরাধিকারী সে-ই হবে বলে ভাবছে; কবির এমনটাই মনে হয়। মানুষ যেমন করে কারও চলে যাওয়ার পর তার জিনিসপত্র বা সম্পত্তির উপর ন্যায্যভাবে অধিকার লাভ করে, কবি এখানে চড়ুইপাখির মনকেও সে-ই মানুষের মনের মতো করেই অনুভব করতে চেয়েছেন।
ইচ্ছে হলে আজই যেতে পারি – এখানে কোন ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে?
কবি তারাপদ রায় তাঁর ‘একটি চড়ুই পাখি’ কবিতায় তাঁর ঘরে আশ্রয় নিয়ে বাসা বেঁধে বাস করা একটি চড়ুইপাখির মন-মেজাজের ছবিটি আপন কবিকল্পনার মায়ায় খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর মনে হচ্ছে এই চড়ুইপাখিটি হয়তো এমনটাও ভাবতে পারে যে, তার মনে খুব মায়াদয়া আছে বলেই সে করুণা করে কবির এই বাজে ঘরটাতেও বাস করছে। যদি সে কবিকে মায়াদয়া না করত তবে যে – কোনও মুহূর্তে সে এ পাড়া-ও পাড়ায় পালেদের বা বোসেদের অনেক ভালো বাড়িতে গিয়ে বাসা বাঁধতে পারত। চড়ুইপাখিটি নিজের সম্পর্কে হয়তো এমন অহংকারী ভাব পোষণ করে বলে কবি মনে করছেন। চড়ুইটি যে কবিকে তুচ্ছ মনে করে এবং করুণার দৃষ্টিতে দেখে, এমন ভাবনাও কবির মনে তৈরি হয়েছে। আসলে কবি এখানে অনেক মানুষের মধ্যে যে ধরনের অহংকারী ভাব এবং অন্যকে তাচ্ছিল্য করে করুণা করার মানসিকতা কাজ করে, সেটাই চড়ুইপাখির উপর আরোপ করেছেন।
আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বাদশ অধ্যায় ‘একটি চড়ুই পাখি’ সম্পর্কে রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, নিবন্ধটি আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া, আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারা উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!