আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের দ্বাবিংশ অধ্যায় ‘নাটোরের কথা’ থেকে রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে।
আজ সকালে মনে পড়ল একটি গল্প – লেখকের অনুসরণে সেই ‘গল্প’টি নিজের ভাষায় বিবৃত করো।
রবীন্দ্র ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘নাটোরের কথা’ গল্পটি অবলম্বনে বলা যায়, যে গল্পটির উল্লেখ এখানে করা হয়েছে সেটি হল ইংরেজদের দ্বারা অধিকৃত ভারত তথা বাংলায় স্বদেশি আন্দোলনের পটভূমিকায় কীভাবে নাটোরে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক সম্মেলনে আন্দোলনের দ্বারা বাংলা ভাষা প্রচলিত হল সেই বিষয়। নাটোরের মহারাজা এই সম্মেলনের রিসেপশন কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, ডব্লিউ.সি.বোনার্জি, জানকীনাথ ঘোষাল এবং আরও বেশ কয়েকজন প্রথিতযশা লোক নাটোরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। মহারাজের ব্যবস্থা করা বিশেষ ট্রেন ও স্টিমারে সকলে নাটোরে পৌঁছোলেন। সমস্ত জলপথ ও ট্রেনপথে মহারাজার নিযুক্ত লোকেরা অতিথিদের খাওয়াদাওয়া, জিনিসপত্র বহন, দেখাশোনা করা খুবই যত্ন সহকারে করল। স্টিমারে সকলের খাবারের বিশেষ আয়োজন ছিল। নাটোরে পৌঁছে নাটোরের রাজবাড়ি ও তার সাজসজ্জা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। লেখকের ভাষায় যেন ইন্দ্রপুরী। রাজসমাদরে সকলে খুবই প্রীত হলেন। সমস্ত গ্রাম, পুরাতন বাড়িঘর সকলের ভালো লাগল। লেখক এই বিষয়গুলি নিয়ে বেশ কিছু স্কেচ করলেন। রাজাও কিছু বিশেষ স্কেচের জন্য ফরমাশ করলেন। নাটোরের মিষ্টি বিখ্যাত। অতিথিদের যাওয়ার সময় দরজার কাছে বসে হালুইকর টাটকা সন্দেশ তৈরি করে দিল। এরপর প্রাদেশিক সম্মেলন শুরু হল গোলটেবিলের চারধারে বসে। রবীন্দ্র সহায়তায় অবনীন্দ্রনাথসহ তরুণরা সম্মেলনটি বাংলায় চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। বড়োরা তা মানলেন না। এ নিয়ে দু-পক্ষে বিস্তর মতবিনিময় ও তর্কাতর্কির পর অবশেষে ছোটোদের মতোই প্রাধান্য পেল। রবি ঠাকুরের ‘সোনার বাংলা’ গান দিয়ে সম্মেলনটি শুরু হল। সমস্ত সম্মেলনটি বাংলায় অনুষ্ঠিত হল সুন্দরভাবে। এইভাবেই সর্বপ্রথম ‘পাবলিকলি’ অর্থাৎ জনসমক্ষে বাংলা ভাষার অগ্রগতির সূচনা হল।
স্টিমারে খাওয়াদাওয়ার প্রসঙ্গ আলোচনায় লেখকের সরস মনের পরিচয় কীভাবে দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছে তা বুঝিয়ে দাও।
সারাঘাট স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে সকলে স্টিমারে চাপলেন। স্টিমারে উঠে খাবার খাওয়ার বেশ সুন্দর রসপূর্ণ বর্ণনা দিয়েছেন অবন ঠাকুর। তিনি বলেছেন যে, খাবার টেবিলের একদিকে বয়সে বড়ো ও বিখ্যাতরা, তাঁদের বলেছেন চাঁই; আর অপরদিকে ছোকরারা অর্থাৎ ছোটোরা। খাবার পরিবেশনের সময় বড়োদের দিক থেকে খাবার দিতে শুরু করায় ছোটোদের কাছে এসে খাবার প্রায় ফুরিয়ে যাচ্ছিল। আর একজন অত্যন্ত খাদ্যরসিক ও খাইয়ে লোকের পাতে খাবার দেওয়ার সময় তিনি সার্ভিং প্লেটের বেশিরভাগ খাবারটাই চেয়ে নিচ্ছিলেন। ফলে ছোটোদের কাছে এসে খাবার প্রায় অবশিষ্টাংশে পরিণত হচ্ছিল। লেখক মজা করে এত খাওয়াকে বলেছেন ‘জাইগ্যানটিক’ খাওয়া। এরপরে দীপুদা বয়ের সঙ্গে সমস্যাটা আলোচনা করায় তারা দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে দু-দিকে একই খাবার দিতে থাকায় সমস্যা মিটল। লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে খাবারের বর্ণনাটি নিখুঁত শব্দচয়নে সরসতার সঙ্গে এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যে, এর পরিহাস নিপুণতা পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে। এখানে লেখকের যথেষ্ট সরস মনের পরিচয় পাওয়া গেছে।
একেই বলে রাজ সমাদর। – উদ্ধৃতিটির আলোকে নাটোরের মহারাজার অতিথি-বাৎসল্যের পরিচয় দাও।
নাটোরের মহারাজা অতিথিদের কলকাতা থেকে নাটোরে যাওয়ার জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে দেন। সমস্ত পথ তাঁদের দেখাশোনা করার জন্য, খাবার দেওয়ার ও জিনিসপত্র বহন করার জন্য লোক নিযুক্ত করেন। নাটোরে পৌঁছেও অতিথিরা কোনো অসুবিধায় পড়েননি। প্রতিটা পদে পদে চাকরবাকররা সকলকে দেখাশোনা করতে থাকে। স্টিমারে অতিথিদের খাওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। রাজবাড়িতেও রানি নিজে পিঠেপায়েস করে দেন। হালুইকর পছন্দমতো এবেলা-ওবেলা মিষ্টি তৈরি করেছিল, ভোরবেলা বিছানাতেই চাকর এসে হাতে গড়গড়ার নল গুঁজে দেয়। খাওয়াদাওয়া, ধুমধাম, গল্পগুজব, গানবাজনা সবমিলিয়ে রাজা এলাহি ব্যবস্থা করেছিলেন অতিথিদের সেবা করার জন্য। রাজা ও রানির আন্তরিক ব্যবহার, আদরযত্ন, প্রাচুর্য সবমিলিয়ে অতিথি বাৎসল্যের এক সুন্দর পরিচয় পাওয়া যায়। তাই একে ‘রাজসমাদর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বদেশি যুগের কার্যকলাপ কেমন ছিল?
ইংরেজরা ভারতবাসীদের শোষণে ও অত্যাচারে পর্যুদস্ত করে ফেলেছিল। তাতে বিপন্ন, বিরক্ত দেশবাসী গোপনে মিলিত হয়ে ইংরেজ বিতাড়নের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করতে থাকে। তারা দলবদ্ধ হয়ে ইংরেজদের আঘাত হানার পরিকল্পনা করে। একেই বলা হয় স্বদেশি কার্যকলাপ। এই স্বাদেশিকতার মন্ত্রে উদবুদ্ধ হয়ে তারা ইংরেজদের সুযোগমতো আঘাত করে, আক্রমণ করে। এতে বহু দেশবাসীর প্রাণ যায়। তথাপি বলা যায় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা এইসকল মানুষের প্রাণদানের ফলেই এসেছিল।
নাটোরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
নাটোর জেলা বর্তমান বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি বর্তমানে ‘উত্তরায়ণ ভবন’ নামে পরিচিত। নাটোরের বিখ্যাত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা হলেন মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ, রানি ভবানী, হেমেন্দ্র কুমার রায়, রাজা প্রসন্ননাথ রায় প্রমুখ। নাটোরের কাঁচাগোল্লা বিখ্যাত। নাটোরের কতকগুলি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান হল – উত্তরা গণভবন, চলন বিল, বুধপাড়া কালিমন্দির, লালপুরের পদ্মার চর, শহিদ সাগর, ধরাইল জমিদারবাড়ি ইত্যাদি।
নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো –
আজ সকালে মনে পড়ল একটি গল্প-সেই প্রথম স্বদেশি যুগের সময়কার, কী করে আমার বাংলা ভাষার প্রচলন করলুম। (জটিল বাক্যে)
আজ সকালে যে গল্পটি মনে পড়ল সেই গল্পটি হল সেই প্রথম স্বদেশি যুগের সময়কার, কী করে আমার বাংলা ভাষার প্রচলন করলুম।
ভূমিকম্পের বছর সেটা। প্রোভিন্সিয়াল কনফারেন্স হবে নাটোরে। (বাক্য দুটিকে জুড়ে লেখো)
ভূমিকম্পের বছরে প্রভিনসিয়াল কনফারেন্স হবে নাটোরে।
নাটোর নেমন্তন্ন করলেন আমাদের বাড়ির সবাইকে। (যৌগিক বাক্যে)
নাটোর নেমন্তন্ন করলেন আমাকে এবং আমার বাড়ির সবাইকে।
আরও অনেকে ছিলেন – সবার নাম কি মনে আসছে এখন। (না-সূচক বাক্যে)
আরো অনেকে ছিলেন – সবার নাম মনে আসছে না এখন।
নাটোর বললেন, কিছু ভেবো না। সব ঠিক আছে। (পরোক্ষ উক্তিতে)
নাটোর বললেন যে ভাবার কিছু নেই, সব ঠিক আছে।
অমন ‘জাইগ্যানটিক‘ খাওয়া আমরা কেউ কখনও দেখিনি। (নিম্নরেখ শব্দটির পরিবর্তে বাংলা শব্দ ব্যবহার করে বাক্যটি আবার লেখো।)
অমন সাংঘাতিক খাওয়া আমরা কেউ কখনও দেখিনি।
ছোকরার দলের কথায় আমলই দেন না। (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)
ছোকরার দলের কথা অগ্রাহ্য করেন।
ন-পিসেমশাই জানকীনাথ ঘোষাল রিপোর্ট লিখেছেন আর কলম ঝাড়ছেন। (বাক্যটিকে দুটি বাক্যে ভেঙে লেখো)
ন-পিসেমশাই জানকীনাথ ঘোষাল রিপোর্ট লিখছেন।
রিপোর্ট লেখার সময় তিনি কলম ঝাড়ছেন।
গরম গরম সন্দেশ আজ চায়ের সঙ্গে খাবার কথা আছে যে অবনদা। (নিম্নরেখ শব্দের প্রকার নির্দেশ করো এবং অর্থ এক রেখে অন্য শব্দ ব্যবহার করে বাক্যটি আবার লেখো।)
টাটকা সন্দেশ আজ চায়ের সঙ্গে খাবার কথা আছে যে অবনদা। (গরম গরম – শব্দদ্বৈত)
হাতের কাছে খাবার এলেই তলিয়ে দিতেম। (জটিল বাক্যে)
যখনই হাতের কাছে খাবার পেতেম তখনই তলিয়ে দিতেম।
নীচের বাক্যগুলি থেকে সন্ধিবদ্ধ শব্দগুলি খুঁজে নিয়ে সন্ধি বিচ্ছেদ করো –
স্টিমারে নির্ভাবনায় উঠে গেলুম।
তিনি অর্ধেকের বেশি নিজের প্লেটে তুলে নিলেন।
শব্দ | সন্ধি বিচ্ছেদ |
নির্ভাবনা | নিঃ + ভাবনা |
অর্ধেক | অর্ধ + এক |
নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করো –
প্রদত্ত শব্দ | ধ্বনিতত্ত্ব | পরিবর্তন |
হাঙ্গাম | হাঙ্গামা > হাঙ্গাম | স্বরলোপ |
আপশোস | আফশোস > আপশোস | অল্পপ্রাণীভবন |
চান | স্নান > চান | ধ্বনিলোপ |
তক্কাতক্কি | তর্কাতর্কি > তক্কাতক্কি | পরাগত সমীভবন |
জিজ্ঞেস | জিজ্ঞাসা > জিজ্ঞেস | স্বরসংগতি |
নীচের শব্দগুলির প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্দেশ করো –
প্রদত্ত শব্দ | প্রকৃতি-প্রত্যয় | প্রত্যয় |
স্বদেশি | স্বদেশ + ই | (ই-প্রত্যয় যোগে) |
জিজ্ঞাসা | জ্ঞা-সন্ + অ + আ | (আ-প্রত্যয় যোগে) |
ঢাকাই | ঢাকা + আই | (আই-প্রত্যয় যোগে) |
ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো –
সমাস | ব্যাসবাক্য | সমাসের শ্রেণি |
চোগাচাপকান | চোগা ও চাপকান | দ্বন্দ্ব |
বিছানাবাক্স | বিছানা ও বাক্স | দ্বন্দ্ব |
ইন্দ্রপুরী | ইন্দ্রের পুরী | সম্বন্ধ তৎপুরুষ |
রাজসমাদর | রাজার দ্বারা সমাদর | করণ তৎপুরুষ |
গল্পগুজব | গল্প ও গুজব | দ্বন্দ্ব |
অন্দরমহল | মহলের অন্দর | সম্বন্ধ তৎপুরুষ |
কোনটি কী ধরনের সর্বনাম তা লেখো –
প্রদত্ত শব্দ | সর্বনাম |
আমরা | ব্যক্তিবাচক |
সেটা | নির্দেশক |
তাঁকে | ব্যক্তিবাচক |
সবাই | সমষ্টিবাচক |
তিনি | ব্যক্তিবাচক |
আমি | ব্যক্তিবাচক |
এটা | নির্দেশক |
আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বাবিংশ অধ্যায় ‘নাটোরের কথা’ নিয়ে রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর বিশ্লেষণ করেছি। এই প্রশ্নগুলো পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করছি, এই নিবন্ধটি আপনার প্রস্তুতিকে আরও সুসংহত করেছে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা অতিরিক্ত সহায়তার প্রয়োজন হয়, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আর হ্যাঁ, এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!