আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্ত্রিংশ অধ্যায় ‘পরাজয়’-এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এসব প্রশ্ন পরীক্ষায় প্রায়ই আসে।
রঞ্জনের দলবদল করার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে টনক নড়েছিল ক্লাবকর্তাদের। – ক্লাবকর্তাদের যে টনক নড়েছে, তা কীভাবে বোঝা গেল?
রঞ্জনের দলবদলের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবকর্তারা রঞ্জনের বাড়িতে ছুটোছুটি করতে লাগল। রঞ্জন যে খেলোয়াড়দের স্নেহ করত তাদের দিয়ে রঞ্জনের মত বদলানোর চেষ্টা করতে লাগল – এই আচরণেই বোঝা গেল ক্লাবকর্তাদের টনক নড়েছে।
দুহাতে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ল একটা বেঞ্চিতে। – স্ট্রাইকার রঞ্জন সরকারের এমনভাবে শুয়ে পড়ার কারণ কী?
পুরোনো ক্লাবের বিরুদ্ধে গোল করে অপমানের যোগ্য জবাব দিলেও রঞ্জনের হৃদয়ে জেগে ওঠে মায়ের মতো ভালোবাসা জড়িয়ে যে ক্লাবটির সঙ্গে তার কথা, তাকেই কিনা সে পরাজিত করল – এই বেদনাবোধে আক্রান্ত হয়েই রঞ্জন সরকার প্রশ্নোক্ত আচরণ করেছিল।
একটু আগেও সবকটা কাগজে বারপুজোর রিপোর্ট পড়েছে। – এখানে ‘ও’ বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে? সে সবকটা কাগজে একই বিষয়ের রিপোর্ট পড়ল কেন?
প্রশ্নে প্রদত্ত উদ্ধৃতিটিতে ‘ও’ বলতে বোঝানো হয়েছে শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ গল্পের প্রধান চরিত্র দক্ষ ফুটবলার রঞ্জন সরকারকে।
রঞ্জন ১৫ বছর ধরে যে ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেছে, নববর্ষের দিনে সেই ক্লাবের বারপুজোর অনুষ্ঠানের খবর বেরিয়েছে খবরের কাগজগুলিতে। ক্লাবের পক্ষ থেকে কেউ একটিবারও রঞ্জনকে বারপুজোর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর সৌজন্য দেখায়নি। অপমানিত, বেদনাহত রঞ্জন খবরের কাগজগুলিতে বেশি করে দেখতে চেয়েছিল যে ওদের ক্লাবের অনুষ্ঠানে সেদিন কে কে এসেছিল। এই কারণেই সে সবকটা কাগজে একই বিষয়ের রিপোর্ট বারবার পড়েছে।
ওকে নিয়ে মাতামাতিটা ঠিক আগের মতো আর নেই। – আগে ‘ওকে’ নিয়ে কী ধরনের মাতামাতি হত?
ওকে বলতে রঞ্জন সরকারের কথা বলা হয়েছে। সে একজন দক্ষ ফুটবলার। প্রতি বছর নববর্ষের দিনে ক্লাবের বারপুজোয় উপস্থিত থাকার জন্য ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি প্রমুখ কর্তারা রঞ্জনকে আমন্ত্রণ জানাতেন। পুজোর দিন ভোরেই রঞ্জনের বাড়িতে ক্লাবের পক্ষ থেকে গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হত, যাতে সে ভালোভাবে ক্লাবে চলে আসতে পারে। সবথেকে বড়ো ব্যাপার হল ওর প্রতি ক্লাবকর্তারা বেশ আন্তরিক ছিলেন। এমন ধরনের মাতামাতি হত আগে রঞ্জনকে নিয়ে।
ঠিক এক বছর আগের ঘটনা। – এক বছর আগে কোন্ ঘটনা ঘটেছিল?
এক বছর আগে থেকেই রঞ্জন উপলব্ধি করতে শুরু করে যে, তাকে নিয়ে ক্লাবের উন্মাদনা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। তার মন একটু খারাপ হলেও এ বিষয়ে সে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। ঠিক এক বছর আগেই রঞ্জনের পুরোনো ক্লাবের ফুটবল সেক্রেটারি এবং কোচ এসে ওর সাথে দল গঠনের ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন। কোন্ কোন্ ব্যক্তিকে দলে সংযুক্ত করা যায় সে-বিষয়ে ওর পরামর্শও নিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর রঞ্জনের মনের ভারও অনেকাংশে লাঘব হয়েছিল।
রঞ্জন সারাটা দিন আর বাড়ি থেকে বেরোয়নি। – কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত অংশটি শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। নববর্ষের দিন রঞ্জন সরকারের পুরোনো ক্লাবে মহা উৎসাহের সঙ্গে বারপুজো করা হয়েছে অথচ রঞ্জনকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সেই দিন রঞ্জন বাড়ি থেকে বেরোয়নি একবারের জন্যও।
রঞ্জন নামগুলো পড়ার চেষ্টা করে। – রঞ্জন কোন্ নামগুলি পড়ার চেষ্টা করে?
বারপুজোর পরের দিন অপরাহ্নে মনের অস্থিরতা শান্ত করতে রঞ্জন গিয়েছিল গঙ্গার ধারে। সে গঙ্গাবক্ষে দূরে কয়েকটি ছোটো-বড়ো জাহাজকে নোঙর করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল। সেই জাহাজগুলির নাম পড়ার চেষ্টা করেছিল সে।
রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দিল। — কোন্ কথা শুনে রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দিল?
নিজের দলের কর্তাদের কাছ থেকে চরম আঘাত পেয়ে রঞ্জন সরকার ফোন করেছিল অপর বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনবাবুকে। রঞ্জনের সঙ্গে কয়েকটি কথা শুনেই স্বপনবাবু বুঝে যান যে রঞ্জন কী বলতে চাইছে। স্বপনবাবু রঞ্জনকে বলেন যে, তিনি আধঘণ্টার মধ্যেই রঞ্জনের বাড়িতে চলে আসছেন। এ কথা শুনেই টেলিফোনটা রেখে দেয় রঞ্জন।
সত্যি ওরা তোমার সঙ্গে উচিত কাজ করেনি! – কোন্ অনুচিত কাজের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে?
রঞ্জনের পুরোনো ক্লাবের কর্তারা রঞ্জনকে বারপুজোয় একবারের জন্যও আমন্ত্রণ জানাননি। এমনকি বারপুজোর পরবর্তী দুদিন তারা রঞ্জনের বাড়িতে আসা তো দূরের কথা, একটা টেলিফোন পর্যন্ত করেনি। পুরোনো ক্লাবের এহেন অনুচিত কাজের কথাই প্রশ্নে নির্দেশ করা হয়েছে।
মন স্থির করে ফেলেছ তো? – উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কোন্ বিষয়ে মনস্থির করে ফেলেছে?
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি হল শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ গল্পের নায়ক রঞ্জন সরকার।
রঞ্জন মনস্থির করেছে যে, পুরোনো ক্লাবের অপমানের জবাব তাকে খেলার মাঠে দিতেই হবে আর সেই কারণেই অন্য বড়ো ক্লাবে সে খেলোয়াড় হিসেবে যোগদান করবে, যে ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনবাবু।
আপনি সব ব্যবস্থা করুন। – কোন্ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত অংশটি শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটির বক্তা হল দক্ষ ফুটবলার রঞ্জন সরকার। পুরোনো ক্লাবের অপমানের জবাব দেওয়ার জন্য রঞ্জন স্বপনবাবুদের ক্লাবে যোগদান করতে চাইছে। এটা যাতে সম্ভব হয় সেই ব্যবস্থা করার জন্যই রঞ্জন স্বপনবাবুকে অনুরোধ করেছে।
প্রত্যেক বছর ফোনের পর ফোন আসে। – কার কাছে কেন ফোন আসে?
শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ গল্পের নায়ক চরিত্র রঞ্জনের কাছে ফোন আসে।
রঞ্জনদের ক্লাবে পয়লা বৈশাখ বারপুজোর অনুষ্ঠানে রঞ্জন যেন উপস্থিত থাকে, সেই অনুরোধ জানিয়ে ক্লাবের পক্ষ থেকে ফোন আসে।
আর একটু ভেবে দেখো। – বক্তা কী ভেবে দেখতে বলেছেন?
প্রশ্নে প্রদত্ত উক্তিটির বক্তা হলেন ময়দানের এক বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনবাবু। দক্ষ ফুটবলার রঞ্জন সরকার অপমানের জবাব দিতে তার পুরোনো ক্লাব ছেড়ে দিতে চাইছে-এই ব্যাপারটিই রঞ্জনকে ভেবে দেখতে বলেছেন বক্তা।
ওয়েলকাম টু আওয়ার ক্লাব। – উক্তিটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? কে, কাকে কথাটি বলেছে?
প্রশ্নোক্ত উক্তিটি শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
উক্তিটি করেছেন ময়দানের এক বড়ো ক্লাবের কর্মকর্তা ঘোষদা। তিনি দক্ষ ফুটবলার রঞ্জন সরকারকে কথাটি বলেছেন।
খেলোয়াড়রা তখন রঞ্জনকে নিয়ে মেতে উঠেছে। – কখন এমন ঘটনা ঘটেছিল?
নতুন দলের জার্সি গায়ে দিয়ে রঞ্জন সরকার পুরোনো দলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে গোল করে। গোলের পরে সারা স্টেডিয়ামের সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। সেই সময়ে মাঠের মধ্যে সহ-খেলোয়াড়রা রঞ্জনকে নিয়ে মেতে উঠেছিল।
ও গাড়িটা নিয়ে চলে গেল গঙ্গার ধারে। – রঞ্জন সরকার গঙ্গার ধারে কেন গেল?
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রঞ্জন যে ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেছে, যে ক্লাবের সুখ-দুঃখে সর্বদা থেকেছে-সেই ক্লাবের কর্মকর্তারা পয়লা বৈশাখের বারপুজোর অনুষ্ঠানে রঞ্জনকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে চরম অপমান করেছে। পরের দিন অফিসে নানা জনের প্রশ্নের সামনে পড়তে হয়েছে তাকে। মনের ভিতর দুঃখ-অভিমানের এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার। তার মনে হয়েছে ক্লাব এভাবে অপমান করে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, সে এখন ক্লাবে অবাঞ্ছিত। এইপ্রকার মানসিক যন্ত্রণা থেকে একটু আরাম পেতেই রঞ্জন গঙ্গার ধারে গিয়েছিল।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্ত্রিংশ অধ্যায় ‘পরাজয়’ – এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়শই পরীক্ষায় আসে। আশা করছি, এই নিবন্ধটি আপনাদের জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা অতিরিক্ত সহায়তার প্রয়োজন হয়, দয়া করে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারা ও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!