অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের পরাজয় অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে পরাজয় অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় পরাজয় অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই পরাজয় অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।
শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পরাজয়” গল্পে রঞ্জন সরকার নামক একজন দক্ষ ফুটবলারের জীবনের এক করুণ ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। রঞ্জন দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে একই ক্লাবের হয়ে খেলে আসছেন, ক্লাবের উত্থান-পতনের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু বারপুজোর অনুষ্ঠানে ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে অপমান করে।
এই ঘটনায় রঞ্জন যন্ত্রণায় ভুগতে থাকেন। দু’দিন অপেক্ষা করেন ক্লাব থেকে কোন যোগাযোগ আসবে কিনা, কিন্তু কেউ তার সাথে যোগাযোগ করে না। অপমানিত, ব্যথিত রঞ্জন সিদ্ধান্ত নেন খেলার মাঠেই তার প্রতিশোধ নেবেন। তিনি অন্য একটি বড় ক্লাবে যোগদান করেন এবং মরশুমের প্রথম বড় ম্যাচেই পুরোনো ক্লাবের বিরুদ্ধে গোল করে নতুন ক্লাবকে জয়ী করে তোলেন।
লক্ষাধিক সমর্থকের উল্লাসে মুখরিত সাজঘরে ফিরে এলেও রঞ্জনের চোখে জল চলে আসে। দীর্ঘদিনের ক্লাব, যাকে তিনি মায়ের মতো ভালোবেসেছিলেন, তাকে পরাজিত করেও রঞ্জন আনন্দ পেতে পারেন না। বরং, নিজেকে পরাজিত বোধ করেন। কারণ, ক্লাবের প্রতি তার ভালোবাসা এখনও অমলিন।
এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে, প্রতিশোধ সর্বদা মনের শান্তি এনে দেয় না। বরং, প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান বজায় রাখাই জীবনের সত্যিকারের জয়।
একটু আগেও সবকটা কাগজে বারপুজোর রিপোর্ট পড়েছে। – এখানে ‘ও’ বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে? সে সবকটা কাগজে একই বিষয়ের রিপোর্ট পড়ল কেন?
প্রশ্নে প্রদত্ত উদ্ধৃতিটিতে ‘ও’ বলতে বোঝানো হয়েছে শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ গল্পের প্রধান চরিত্র দক্ষ ফুটবলার রঞ্জন সরকারকে।
রঞ্জন ১৫ বছর ধরে যে ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেছে, নববর্ষের দিনে সেই ক্লাবের বারপুজোর অনুষ্ঠানের খবর বেরিয়েছে খবরের কাগজগুলিতে। ক্লাবের পক্ষ থেকে কেউ একটিবারও রঞ্জনকে বারপুজোর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর সৌজন্য দেখায়নি। অপমানিত, বেদনাহত রঞ্জন খবরের কাগজগুলিতে বেশি করে দেখতে চেয়েছিল যে ওদের ক্লাবের অনুষ্ঠানে সেদিন কে কে এসেছিল। এই কারণেই সে সবকটা কাগজে একই বিষয়ের রিপোর্ট বারবার পড়েছে।
ওকে নিয়ে মাতামাতিটা ঠিক আগের মতো আর নেই। – আগে ‘ওকে’ নিয়ে কী ধরনের মাতামাতি হত?
ওকে বলতে রঞ্জন সরকারের কথা বলা হয়েছে। সে একজন দক্ষ ফুটবলার। প্রতি বছর নববর্ষের দিনে ক্লাবের বারপুজোয় উপস্থিত থাকার জন্য ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি প্রমুখ কর্তারা রঞ্জনকে আমন্ত্রণ জানাতেন। পুজোর দিন ভোরেই রঞ্জনের বাড়িতে ক্লাবের পক্ষ থেকে গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হত, যাতে সে ভালোভাবে ক্লাবে চলে আসতে পারে। সবথেকে বড়ো ব্যাপার হল ওর প্রতি ক্লাবকর্তারা বেশ আন্তরিক ছিলেন। এমন ধরনের মাতামাতি হত আগে রঞ্জনকে নিয়ে।
ঠিক এক বছর আগের ঘটনা। – এক বছর আগে কোন্ ঘটনা ঘটেছিল?
এক বছর আগে থেকেই রঞ্জন উপলব্ধি করতে শুরু করে যে, তাকে নিয়ে ক্লাবের উন্মাদনা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। তার মন একটু খারাপ হলেও এ বিষয়ে সে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। ঠিক এক বছর আগেই রঞ্জনের পুরোনো ক্লাবের ফুটবল সেক্রেটারি এবং কোচ এসে ওর সাথে দল গঠনের ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন। কোন্ কোন্ ব্যক্তিকে দলে সংযুক্ত করা যায় সে-বিষয়ে ওর পরামর্শও নিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর রঞ্জনের মনের ভারও অনেকাংশে লাঘব হয়েছিল।
ও গাড়িটা নিয়ে চলে গেল গঙ্গার ধারে। – রঞ্জন সরকার গঙ্গার ধারে কেন গেল?
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রঞ্জন যে ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেছে, যে ক্লাবের সুখ-দুঃখে সর্বদা থেকেছে-সেই ক্লাবের কর্মকর্তারা পয়লা বৈশাখের বারপুজোর অনুষ্ঠানে রঞ্জনকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে চরম অপমান করেছে। পরের দিন অফিসে নানা জনের প্রশ্নের সামনে পড়তে হয়েছে তাকে। মনের ভিতর দুঃখ-অভিমানের এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার। তার মনে হয়েছে ক্লাব এভাবে অপমান করে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, সে এখন ক্লাবে অবাঞ্ছিত। এইপ্রকার মানসিক যন্ত্রণা থেকে একটু আরাম পেতেই রঞ্জন গঙ্গার ধারে গিয়েছিল।
“পরাজয়” – প্রতিশোধের আগুনে পুড়ে যাওয়া এক অন্তর্দ্বন্দ্ব, শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পরাজয়” গল্পে আমরা দেখতে পাই রঞ্জন সরকার নামক একজন দক্ষ ফুটবলারের জীবনের ট্র্যাজেডি। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে একই ক্লাবের হয়ে রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে খেলেও, বারপুজোর অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাকে অপমান করে।
এই ঘটনায় রঞ্জন যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে। প্রিয় ক্লাবের এই অবজ্ঞায় মর্মাহত রঞ্জন দু’দিন অপেক্ষা করে ক্লাবের পক্ষ থেকে কোন যোগাযোগ আসবে কিনা, কিন্তু বৃথা। অপমান, ব্যথা আর ক্ষোভে জ্বলে রঞ্জন সিদ্ধান্ত নেয় খেলার মাঠেই তার প্রতিশোধ নেবে।
সে অন্য একটি বড় ক্লাবে যোগদান করে এবং মরশুমের প্রথম বড় ম্যাচেই পুরোনো ক্লাবের বিপক্ষে গোল করে নতুন ক্লাবকে জয়ী করে তোলে। লক্ষাধিক দর্শকের সামনে এই জয় যেন তার প্রতিশোধের আগুন নিভিয়ে দেবে বলে মনে হয়, কিন্তু রঞ্জনের মন ভারাক্রান্ত হয়।
সাজঘরে ফিরে এসে তার চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরে। কারণ সে বুঝতে পারে যে, প্রিয় ক্লাবকে পরাজিত করে সে আসলে নিজেকেই পরাজিত করেছে। যে জার্সিকে সে মায়ের মতো ভালোবেসেছিল, তাকে পরাজিত করে সে আসলে কখনোই জয়ী হতে পারেনি। বরং, প্রতিশোধের এই আগুনে পুড়ে সে নিজেই ভেঙে পড়ে।
এই গল্প আমাদের শেখায় যে, প্রতিশোধ কখনোই সমাধান নয়। প্রিয়জনের প্রতি অবিচারের বেদনা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে পারে। বরং, ক্ষমাশীলতা ও ভালোবাসার মাধ্যমেই মানুষ সত্যিকারের জয় লাভ করতে পারে। “পরাজয়” আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবনের জটিলতা ও মানবিক মনের দ্বন্দ্বকে, যা আমাদের চিন্তাভাবনাকে করে তোলে আরও সমৃদ্ধ।