আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের সপ্তম অধ্যায় ‘সবুজ জামা’ এর রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই আসে।
দাদু যেন কেমন, চশমা ছাড়া চোখে দেখে না। – এই পঙ্ক্তির মধ্যে যেন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কেন? এইরকম আর কী কী শব্দ দিয়ে একই কাজ করা যায়?
যেন সাদৃশ্য বা উপমাবাচক শব্দ। চোখের সামনে যা আসে তাই দেখা যায়, কিন্তু দাদু যে বয়সের কারণে চশমা ছাড়া দেখতে পায় না – এটা তোতাই জানে না। দাদুর এই না দেখতে পাওয়া ব্যাপারটা তোতাই মানতে পারে না। সেজন্য সতর্কীকরণে আশঙ্কাসূচক শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
একইরকম অন্যান্য শব্দগুলি হল – ‘মতো’, ‘থেকে’, ‘ন্যায়’, ‘চেয়ে’, ‘অপেক্ষা’ ইত্যাদি। যেমন – চাঁদের মতো মুখ = চাঁদমুখ, রামের থেকে শ্যাম ভালো ছেলে, নবীন অপেক্ষা পুলিন বয়সে ছোটো, নয়ন কমলের ন্যায় = নয়নকমল, রমেনের চেয়ে রমেশ স্বভাবে ভীষণ ভালো ইত্যাদি।
সবুজ জামা কবিতায় তোতাইয়ের সবুজ জামা চাওয়ার মাধ্যমে কবি কী বলতে চাইছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘সবুজ জামা’ কবিতায় শিশু তোতাই – এর বৃক্ষময় হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা অর্থাৎ আরও গাছ লাগানোর কথা বলেছেন। বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর দূষণ প্রকৃতিকে বিপন্ন ও ধ্বংসপ্রায় করেছে। শ্বাসকষ্ট ও নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার এবং যন্ত্রসভ্যতার দাপাদাপি, দূষণ ক্রমাগত বাড়াচ্ছে। অক্সিজেন প্রকৃতি থেকে কমে যাওয়ায় সভ্যতার ধ্বংস অনিবার্য। এহেন অবস্থায় প্রকৃতিতে আরও গাছ লাগিয়ে সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। গাছেরা সবুজ জামা পরে যেমন আনন্দ পায় তেমনই শিশু তোতাই অদ্ভুত আনন্দ প্রত্যাশা করে। গাছেদের মতো সেও একপায়ে দাঁড়িয়ে এক্কা-দোক্কা খেলবে এবং স্কুলের গণ্ডিতে আবদ্ধ না থেকে গাছেদের মতো মুক্ত থাকবে। কবি বিশ্বাস করেন, শিশুদের বন্ধনের মধ্যে না রেখে তারা প্রকৃতির সম্পদ – এই ভেবে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম করতে পারলে শিশুর সার্বিক বিকাশ হবে। শিশুমনের পূর্ণতায় প্রকৃতি ও মানুষকে একসূত্রে বেঁধে দিতে পারলে শিশুও প্রকৃতির মতো সহজ সারল্যে বিস্তৃত হবে।
তোতাইবাবুর সবুজ জামা পরিধানের মধ্য দিয়ে কবি কোন্ ভাবনার প্রকাশ দেখিয়েছেন?
শিশুমন যেমন সরল, পবিত্র ও সুন্দর, প্রকৃতিও ঠিক তেমনই সরলতা, পবিত্রতা ও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘সবুজ জামা’ কবিতায় শিশুপ্রাণের সঙ্গে প্রকৃতির এই একাত্মতাকেই শুধু প্রকাশ করেননি, এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা রচিত হওয়ার পথটিকেও গড়ে দিয়েছেন। গাছের গায়ে যেমন সবুজ পাতার আবরণ থাকে জামার মতো, তোতাই নামক শিশুটিও সেইরকমই সবুজ জামা পরে গাছ হয়ে যেতে চায়, যার আকর্ষণে প্রজাপতি এসে তাকে গাছ ভেবে তার গায়ে বসবে – এটাই সে চায়। গাছেদের মতো এক পায়ে দাঁড়ানো তার কাছে খেলা আর সেভাবে সবুজ জামা পরলেই সে গাছ হয়ে যাবে। তখন তার গায়ে লাল-নীল ফুল ঝরে পড়বে। তোতাইয়ের শিশুমন এমন কল্পনার জাল বুনলেও কবি যেন প্রকৃতিকে ভালোবাসার জন্য সকল মানুষের মধ্যেই এই ধরনের প্রকৃতির সঙ্গে অভিন্নতা ও একাত্মতার বোধ গড়ে তোলার ভাবনাকেই কবিতার আকারে প্রকাশ করেছেন।
সবুজ জামা কবিতার বিষয়বস্তু লেখো।
গাছেরা এক আশ্চর্য সবুজ জামা গায়ে দেয়। অল্পবয়স্কি তোতাই – এরও অনুরূপ সবুজ জামার বাসনা। কিন্তু তোতাই স্কুলে গিয়ে বর্ণমালা শিখবে। আসলে বৃক্ষশিশু জানে মানবশিশু স্কুলের পাঠক্রমে ব্যস্ত থাকবে। গাছগুলো এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে সবুজ জামা পরে, তোতাই সেই সবুজ জামার প্রতি তীব্র আগ্রহ এবং আসক্তি অনুভব করে।
তোতাই হঠাৎ করে বৃক্ষ হয়ে যেতে চায়। সে বর্ণমালা শিখতে চায় না, স্কুলে যাওয়ার প্রতি ভীষণ অনাসক্তি দেখায়। গাছেদের মতো সে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আনন্দের খেলায় মেতে উঠতে চায়। তার মনে হয় গাছেরা কেমন এক পায়ে দাঁড়িয়ে একে অন্যের সঙ্গে খেলা করে, অনুরূপভাবে সেও মত্ত হতে চায় খেলার আনন্দে। তোতাই – এর পিতামহ চশমা ছাড়া প্রকৃতির সবুজ দেখতে পায় না বলে শিশুর আক্ষেপের অবধি নেই। দাদু যে সবুজের সমারোহ দর্শন থেকে বঞ্চিত – এই ভেবে তোতাই বিষণ্ণ হয়।
তোতাই মনে করে তার যদি গাছেদের মতো সবুজ একটা জামা থাকত তাহলে ঠিক তার গায়ে প্রজাপতিরা ভিড় জমাত। আর তার কোলের কাছে একটা, দুটো, তিনটে লাল-নীল ফুল নেমে এসে তাকে পুষ্পময় করে তুলত। তোতাই নিজে একসময় বৃক্ষ হয়ে সবুজ পাতার আনন্দে বিভোর হয়ে উঠবে – এই বিশ্বাস কবিতায় আছে।
সবুজ জামা কবিতার নামকরণ লেখো।
সবুজ পাতায় ঢাকা গাছেরা সবুজ রঙের জামা পরে থাকে। তোতাই নামের এক শিশুর বিশ্বাস সেও গাছেদের মতো সবুজ জামা পরে আনন্দে থাকবে। তোতাইকে স্কুলে পাঠালে সে আবদ্ধ হবে এবং বর্ণমালা শিখবে। কিন্তু তোতাই সেই পাঠের মধ্যে কোনো আনন্দ পায় না। গাছেরা কেমন এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে, অনুরুপভাবে তোতাইও বন্ধুদের সঙ্গে এক্কা-দোক্কা খেলবে গাছেদের মতো।
কবির বিশ্বাস, প্রকৃতি থেকে সবুজ কমে যাওয়ায় প্রকৃতি ধীরে ধীরে সবুজ হারাচ্ছে এবং দূষণে পূর্ণ হচ্ছে বিশ্ব। দূষণমুক্ত প্রকৃতির প্রয়োজনে আরও সবুজ প্রয়োজন এবং এজন্য আরও গাছ লাগাতে হবে। সবুজায়নে প্রকৃতি দূষণমুক্ত হবে। সবুজ জামা পরে প্রকৃতি যেমন সুন্দর হয় এবং পত্রময় বৃক্ষের ডালে ডালে প্রজাপতি এসে বসে আনন্দ প্রকাশ করে তেমন তোতাই যদি সবুজ জামা পরে থাকে তাহলে তার গায়েও প্রজাপতি এসে বসবে।
প্রকৃতির বিস্তৃত সবুজের সঙ্গে মিশে তোতাই নামের শিশুটি যথার্থভাবে সবুজ পাতা হয়ে উঠবে। প্রকৃতিতে সবুজের সমারোহ একান্ত আবশ্যক – এই বিশ্বাস এ কবিতায় রয়েছে। এজন্য কবিতার নামকরণটি যথার্থই সার্থক।
আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের সপ্তম অধ্যায় ‘সবুজ জামা’ এর রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, অনুগ্রহ করে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!