অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – শিকল-পরার গান – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের শিকল-পরার গান অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে শিকল-পরার গান অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় শিকল-পরার গান অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই শিকল-পরার গান অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

Table of Contents

অগ্নিযুগের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতা ‘শিকল-পরার গান’-এ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আওয়াজ তুলেছেন। এই কবিতায় তিনি ঔপনিবেশিক শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং ভারতীয় যুবশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিপ্লব করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন।

কবি দেখেছেন, ব্রিটিশরা ভারতীয়দের উপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে, তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে। যারা বিদ্রোহ করে, তাদেরকে শৃঙ্খলে বন্দি করে রাখা হচ্ছে। কিন্তু কবি বিশ্বাস করেন, এই শিকল ভয়ের প্রতীক মাত্র, আসল শক্তি লুকিয়ে আছে যুবকদের মনে।

কারাগার বিপ্লবীদের দমাতে পারবে না, বরং তাদের আরও শক্তিশালী করে তুলবে। এই শিকল-পরা যুবকরাই একদিন ব্রিটিশ শাসনকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলবে। কবি আহ্বান জানাচ্ছেন, ভয় দূর করে সাহসের সাথে বিপ্লবের পথে এগিয়ে যেতে। ফাঁসির মঞ্চও তখন হবে মুক্তির মঞ্চ। ভারতবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করবেই।

এই কবিতা শুধু কবিতা নয়, একটি যুদ্ধ-নীতি। কাজী নজরুল ইসলাম তার লেখনী দিয়ে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা যুবকদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

শিকল-পরার গান – বাংলা  – অষ্টম শ্রেণি – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির বাসনা কীভাবে ‘শিকল-পরার গান’ কবিতায় ধরা পড়েছে, তা আলোচনা করো।

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন দেশপ্রেমী কবি। পরাধীনতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাঁর মন ছিল ব্যাকুল। তাঁর এমন মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে তাঁর বিভিন্ন কবিতায়। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে স্বাধীনতাকামী ভারতবাসীর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, এমনই একটি কবিতা হল ‘শিকল-পরার গান’।

ইংরেজ শাসনে ভারতবাসী শোষিত ও লাঞ্ছিত; পদে পদে পীড়ন সহ্য করতে হয়েছে তাদের-তাই ভারতীয়রা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে নানা সময়ে বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছেন। এর ফলে তাদের হতে হয়েছে কারারুদ্ধ এবং রক্তাক্ত। তবু বিপ্লবের পথ থেকে পিছিয়ে যায়নি ভারতীয়রা। ইংরেজের লৌহশৃঙ্খলের ভয়ে ভীত নয় ভারতবাসী, বরং সেই শৃঙ্খল পরেই তারা ব্রিটিশের লৌহশিকলকে ভাঙতে মরিয়া। কবি তাই বলেছেন – ‘এই বাঁধন পরেই বাঁধন-ভয়কে করব মোরা জয়’। ভারতীয়রা যেন ছল করেই শিকল পরতে তৎপর হয়ে উঠেছেন, কারণ পরাধীনতার বাঁধন যত বৃদ্ধি পাবে, ততই বাঁধন হবে শিথিল। কেবল ভয় নামক ভূতকে জয় করতে পারলেই, কোনো শিকলেই আটকে রাখা যাবে না ভারতীয়দের। কবির বিশ্বাস দেশপ্রেমিকগণ ফাঁসির মঞ্চেই জীবনের জয়গান রচনা করবেন, আপন বুকের অস্থি দিয়ে বজ্রানল প্রজ্বলিত করবেন এবং মুক্তিপথের অগ্রদূতের চরণ-বন্দনা করবেন তারা; এর ফলেই অবসান ঘটবে লাঞ্ছনার। এভাবেই ‘শিকল-পরার গান’ কবিতায় স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির বাসনা প্রকাশিত হয়েছে।

বাঁধন-ভয়কে করব মোরা জয় – কেন এই বাঁধন? কারা, কীভাবে এই ‘বাঁধন-ভয়’কে জয় করবে?

ব্রিটিশ সরকার ভারতের স্বাধীনতাকে হরণ করেছে, তারা ভারতবাসীকে শাসন আর শোষণ করে চলেছে। ভারতীয়রা পরাধীন, তাদের কোনো অধিকার নেই বরং তাদের আন্দোলন বা বিপ্লবকে স্তব্ধ করতে সক্রিয় ইংরেজ সরকার। তাই ইংরেজ সরকার শিকলের বাঁধনে বাঁধতে চায় ভারতীয়দের।

পরাধীন ভারতীয়, যারা ইংরেজ শাসনে লাঞ্ছিত, তারাই বাঁধন ভয়কে জয় করবে। কবি নজরুল ইসলাম তাঁর ‘শিকল- পরার গান’ কবিতায় এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন যে ইংরেজের কারার বাঁধনে আর বেঁধে রাখা যাবে না ভারতীয়দের। বিপ্লবীগণ মাভৈঃ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই মন্ত্র বলহীনকেও বলবান করে তুলবে। কোনো ভয়েই তারা ভীত হবেন না, ভয়ের টুটিই তারা চেপে ধরে ভয়হীন হবেন, শঙ্কামুক্ত হৃদয়ে মাতৃমুক্তির ব্রত গ্রহণ করবেন। ইংরেজের তৈরি শৃঙ্খলকে তারা আর ভয় পাবেন না, ওই শৃঙ্খলিত হাত দিয়েই শৃঙ্খল ভাঙ সংকল্প নেবেন তারা। ভয় দেখিয়ে সরকার কখনও বিধির শক্তি নাশ করতে পারবে না। বিপ্লবীরা ভয় নামক ভূতকে দমন করবেন, তারা কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে টুকরো টুকরো করে বিজয়কে ছিনিয়ে আনবেন।

এমন সংকল্পের শক্তিতেই তারা বাঁধনভয়কে জয় করবেন বলে কবির বিশ্বাস।

শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল। – উদ্ধৃত অংশটির তাৎপর্য লেখো।

প্রশ্নোক্ত অংশটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘শিকল-পরার গান’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ সরকার প্রায় দুই শত বছর ভারতের বুকের উপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছে। ভারতবর্ষকে তারা লৌহকারাগারে পরিণত করেছে। বিপ্লবীদের কার্যকলাপ রুদ্ধ করার জন্য সরকার তাদের শিকল পরিয়ে কারাগারে আবদ্ধ করছে। তবে ভারতীয়রা এতে ভয় পায়নি, তারা অকুতোভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আন্দোলনে; যেন শিকল পরার নেশায় মেতে উঠেছে। স্বাধীনতাকামী ভারতীয়গণ। এইভাবে তাদের আর শিকলের বাঁধনে বেঁধে রাখা যাবে না, বিপ্লবীদের সংগ্রামের মাধ্যমে ইংরেজের লোহার শিকল ছিন্ন হবে বলে কবি আশা প্রকাশ করেছেন।

তোমরা বন্ধ ঘরের বন্ধনীতে করছ বিশ্ব গ্রাস, – ‘তোমরা’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? উক্তিটির ব্যাখ্যা দাও।

প্রশ্নোক্ত অংশটি কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘শিকল-পরার গান’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘তোমরা’ বলতে অত্যাচারী শাসক ইংরেজ শক্তিকে বোঝানো হয়েছে।

ব্রিটিশ শক্তি ভারতকে পরাধীন করে রেখেছে, তারা ভারতবাসীর সকল প্রকার স্বাধীনতাকে হরণ করেছে। ত্রাসের শাসন-শোষণ চালিয়ে সকলকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তবে তারা বুঝতে পারছে না যে এমনভাবে ভয়ভীতির মাধ্যমে মানুষের মন জয় করা যায় না, তারা ভেবেছে লৌহকারাগারের সংকীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ রাখলেই বুঝি তাদের সাম্রাজ্য চিরকাল স্থায়িত্ব পাবে। কবি নজরুল সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন যে, এমনভাবে সমগ্র বিশ্বকে তারা ক্ষুদ্র গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করে রাখতে পারবে না, ভয় দেখিয়ে বা ত্রাসের শাসন চালিয়ে বিধাতার দেওয়া শক্তিকে তারা হ্রাস করতে অক্ষম হবে।

ভয়-দেখানো ভূতের মোরা করব সর্বনাশ, – ‘ভয়-দেখানো ভূত’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? কীভাবে তাদের সর্বনাশ করা হবে?

প্রশ্নোক্ত অংশটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘শিকল-পরার গান’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘ভয়-দেখানো ভূত’ বলতে কবি শাসক ব্রিটিশ সরকারকে বুঝিয়েছেন।

প্রায় দুই শত বছর ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষ শাসন করেছে, তারা ভারতবাসীর মন জয় করতে পারেনি বরং অত্যাচারের মাধ্যমে দেশবাসীর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে, তারা ভয়ভীতির নীতির মাধ্যমে দেশশাসন করেছে। কিন্তু মানবতার পূজারি কবি নজরুল মনে করেন এমনভাবে ভয়ের মাধ্যমে দেশবাসীকে দীর্ঘদিন দমিয়ে রাখা যাবে না, দেশবাসী সংগ্রামের মাধ্যমে আত্মবলিদান করবেন। তারা ইংরেজের বানানো শিকল পরেই শিকল ভাঙার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বেন, ইংরেজের লৌহকারাগার তাদের আর বন্দি করে রাখতে পারবে না, মাভৈঃ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তারা ইংরেজের বিরুদ্ধে মুক্তিসংগ্রামে রত হবেন – এভাবেই ‘ভয়-দেখানো ভূত’ অর্থাৎ ইংরেজ সরকারের সর্বনাশ করবে।

মোরা ফাঁসি পরে আনব হাসি মৃত্যু-জয়ের ফল।। – ‘ফাঁসি পরে’ কীভাবে মৃত্যুজয়ের ফল আনা সম্ভব?

প্রশ্নোক্ত অংশটি মানবতার পূজারি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘শিকল-পরার গান’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। বিদেশি ইংরেজ সরকারের শাসন-শোষণ থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে, সেই প্রসঙ্গই আলোচিত হয়েছে ‘শিকল-পরার গান’ কবিতাটিতে।

দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটিশ সরকার অত্যাচারের মাধ্যমে ভারতীয়দের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, যেসকল দেশপ্রেমী সাহসী পুরুষ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে, তাদের প্রতি কঠোর নীতি গ্রহণ করে লৌহকারাগারে শৃঙ্খলিত করে রাখা হচ্ছে। কিন্তু কবি মনে করেন এমনভাবে অত্যাচার করেও আর সংগ্রামকে স্তব্ধ করা যাবে না। বীর যুবকগণ মাতৃমুক্তি পণ করবে, তারা হাসতে হাসতেও ফাঁসির দড়ি গলায় পরবে, দেশমাতাকে মুক্ত করার সাধনায় দলে দলে তারা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তারা মাভৈঃ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বলবীর্য লাভ করে সকল ভয়কে জয় করবে, ফাঁসির মঞ্চেই তারা জীবনের জয়গান রচনা করবে। এভাবেই দেশমাতা বিদেশি শাসনের হাত থেকে মুক্তি পাবেন, আর দেশসেবকদের জীবন বলিদানের মাধ্যমেই আকাঙ্ক্ষিত ফল অর্থাৎ স্বাধীনতা ফিরে পাবে ভারতীয়গণ।

শিকল-পরার গান কবিতায় ইংরেজ শাসনের যে দিকটির প্রকাশ ঘটেছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম একজন জাতীয়তাবাদী কবি, তাঁর কাব্যে বিদেশি সরকারের শাসন-শোষণের দিকটি স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। তিনি দেখেছেন শাসকের অত্যাচারী মনোভাবের প্রকাশ; দেশশাসনের নামে কীভাবে ভারতবাসীকে লৌহকারাগারে বদ্ধ করে রাখছে ইংরেজ সরকার, তার সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি-সে-কথাই কবি সোচ্চারে ঘোষণা করেছেন ‘শিকল-পরার গান’ কবিতায়।

ব্রিটিশ সরকার এ দেশের বুকে ত্রাসের শাসন কায়েম করেছে, তারা ভাবছে ভয় দেখিয়েই বুঝি দেশের মানুষের মনকে জয় করতে পারবে। কারাগারের লৌহপ্রাচীরের গণ্ডিতে আবদ্ধ রেখে তারা বিপ্লবীদের সকল প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করতে চাইছে, যেন বিশ্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে ভারতবাসীকে শোষণ করছে ইংরেজ সরকার; বিধাতার দেওয়া শক্তিকেও হ্রাস করতে চাইছে তারা। কবি তাই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন –

তোমরা বন্ধ ঘরের বন্ধনীতে করছ বিশ্ব গ্রাস,
আর ত্রাস দেখিয়েই করবে ভাবছ বিধির শক্তি হ্রাস।

যেসব দেশসেবক মুক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে দেশকে বিদেশি শাসনের কবল থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, তাদের শিকল পরিয়ে কারাকক্ষে বদ্ধ করে রাখা হচ্ছে, নয়তো ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয়দের সকল প্রকার স্বাধীনতাকে ধূলুণ্ঠিত করা হয়েছে।

এমনই এক নিষ্ঠুর শাসন কায়েম করেছে ইংরেজ সরকার ভারতের বুকে – ‘শিকল পরার গান’ কবিতায় কবি নজরুল ইসলাম সেই দিকটিই প্রকাশ করেছেন।

শিকল-পরার গান কবিতায় কবি নজরুলের দেশপ্রেম কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে, আলোচনা করো।

কবি নজরুল ইসলাম হলেন মুক্তিকামী কবি। ইংরেজ শাসনের হাত থেকে দেশমাতাকে মুক্ত করার বাসনা তিনি মনে মনে পোষণ করতেন। তাই তাঁর বিভিন্ন কবিতায় বিদেশি সরকারের শাসননীতির প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে। শাসকের নির্লজ্জ অত্যাচার নীরবে মেনে নিতে পারেননি তিনি। তাই প্রতিবাদ হিসেবে আপন সাহিত্যকে হাতিয়ার করেছিলেন কবি নজরুল। এমনই একটি বিদ্রোহাত্মক কবিতা হল ‘শিকল-পরার গান’।

ইংরেজ শাসনে ভারতবাসীকে সহ্য করতে হয়েছে তীব্র নিপীড়ন ও লাঞ্ছনা। দেশসেবকগণ হয়েছে লৌহশৃঙ্খলে আবদ্ধ; লৌহকারায় তাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে। তবে কবি জানেন যে ইংরেজের ওই কারাগারে আর বেশিদিন বন্দি রাখা যাবে না ভারতীয়দের। তাই ব্রিটিশ সরকারকে সতর্ক করে দিতে কবি বলেছেন –

তোদের বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয়,
ওরে ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন-ভয়।

কবি আশা করেন ভারতীয়গণ সকল ভয়কে জয় করে দেশমাতার শৃঙ্খলমোচনে ব্রতী হবে। ইংরেজের ত্রাসের শাসন তারা দীর্ঘদিন মেনে নেবে না। ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান রচনা করবে স্বাধীনতা সংগ্রামীগণ। কবি মনে করেন অত্যাচারী ইংরেজ শাসকদের এ দেশ থেকে উচ্ছেদ করার জন্য দেশবাসী প্রয়োজনে আপন অস্থি দিয়েই বজ্রানল প্রজ্বলিত করবে।

এভাবে আলোচ্য কবিতায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের বিদ্রোহ ও সংগ্রামের দিকটি যেমন তুলে ধরেছেন কবি নজরুল, তেমনই দেশমাতার প্রতি তাঁর হৃদয়ের দরদ বা প্রীতির কথাও তিনি ব্যক্ত করেছেন। ইংরেজ শাসনের প্রতি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যমেই বোঝা যায় যে, তাঁর দেশপ্রেম ছিল গভীর ও নিখাদ।

দল বিশ্লেষণ করো –

বন্ধনী, ঝঞ্ঝনা, বজ্রানল, সর্বনাশ, অস্থি।

প্রদত্ত শব্দদল বিশ্লেষণমুক্ত দল/রুদ্ধ দল
বন্ধনীবন্-ধ-নীবন্ – রুদ্ধ দল; ধ – মুক্ত দল; নী – মুক্ত দল।
ঝঞ্ঝনাঝন্-ঝ-নাঝন্ – রুদ্ধ দল; ঝ – মুক্ত দল; না – মুক্ত দল।
বজ্রানলবজ্-রা-নল্বজ্ – রুদ্ধ দল; রা – মুক্ত দল; নল্ – রুদ্ধ দল।
সর্বনাশসর্-ব-নাশ্সর্ – রুদ্ধ দল; ব – মুক্ত দল; নাশ্ – রুদ্ধ দল।
অস্থিঅস্-থিঅস্ – রুদ্ধ দল; থি – মুক্ত দল।

ধ্বনি পরিবর্তনের কোন্ নিয়ম এখানে কাজ করেছে দেখাও – বাঁধন, পরে।

বাঁধন – বন্ধন > বাঁধন (নাসিক্যীভবন)।

পরে – পরিয়া > পইর‍্যা > পরে (অভিশ্রুতি)।

বাক্য রূপান্তর করো –

ভয়-দেখানো ভূতের মোরা করব সর্বনাশ। (জটিল বাক্যে)

ভয়-দেখানো যে ভূত মোরা তার সর্বনাশ করব।

মোরা ফাঁসি পরে আনব হাসি মৃত্যু জয়ের ফল। (যৌগিক বাক্যে)

মোরা ফাঁসি পরব এবং হেসে মৃত্যুজয়ের ফল আনব।

তোদের বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয়। (চলিত গদ্যে)

তোদের বন্ধ কারায় বন্দি হবার জন্য আমাদের আসা নয়।

পদ চিহ্নিত করো –

তোমরা বন্ধ ঘরের বন্ধনীতে করছ বিশ্বগ্রাস।

তোমরা – সর্বনাম; বন্ধ, ঘর, বন্ধনী, বিশ্বগ্রাস – বিশেষ্য; করছ – ক্রিয়া।

মোরা ফাঁসি পরে আনব হাসি মৃত্যু-জয়ের ফল।

মোরা – সর্বনাম; পরে, আনব – ক্রিয়া; ফাঁসি, হাসি, মৃত্যুজয়, ফল – বিশেষ্য। 

এবার আনব মাভৈঃ-বিজয়-মন্ত্র বলহীনের বল।

মাভৈঃ-বিজয়-মন্ত্র-বিশেষ্য; বলহীন – বিশেষণ; আনব – ক্রিয়া; বল – বিশেষ্য।

ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো –

শিকল-ঝঞ্ঝনা, চরণ-বন্দনা, বজ্রানল, মৃত্যুজয়।

সমাসব্যাসবাক্যসমাসের শ্রেণি
শিকল-ঝঞ্ঝনাশিকলের ঝঞ্ঝনাসম্বন্ধ তৎপুরুষ
চরণ-বন্দনাচরণকে বন্দনাকর্মতৎপুরুষ
বজ্রানলবজ্ররূপ অনলরূপক কর্মধারয়
মৃত্যুজয়।মৃত্যুকে জয়কর্মতৎপুরুষ

কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার “শিকল-পরার গান” কবিতায় ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতীয়দের দুর্দশা ও তাদের বিপ্লবী প্ররোচনা তুলে ধরেছেন।

কবিতায় ব্রিটিশ শাসকদের লুণ্ঠন ও অত্যাচারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কবি দেখান যে, কিভাবে ভারতীয়দের স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হচ্ছে এবং তাদের উপর নির্যাতন চলছে। কবি যুবকদের বিপ্লবের জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি ‘শিকল-পরার গান’ কে শুধু কারাগারের শিকল নয়, বরং ব্রিটিশ শাসনের প্রতীক হিসেবে দেখেন।

কবি বিশ্বাস করেন যে, ভয়ই ব্রিটিশ শাসনের মূল ভিত্তি। তিনি যুবকদের আহ্বান জানান যে, তারা যেন ভয়কে জয় করে বিপ্লবের পথে এগিয়ে আসে। কবিতার শেষে কবি মুক্তির বাণী শোনান। তিনি বিশ্বাস করেন যে, ভারতীয়রা একদিন অবশ্যই ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পাবে এবং তাদের স্বাধীনতা অর্জন করবে।

এই কবিতাটি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি অনবদ্য রচনা। এটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের রোষ ও বিদ্রোহের আবেগকে প্রকাশ করে। কবির শক্তিশালী ভাষা ও প্রতীক ব্যবহার পাঠকদের মনে দেশপ্রেম ও বিপ্লবী চেতনা জাগ্রত করে।

Share via:

মন্তব্য করুন