অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – শিকল-পরার গান – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের শিকল-পরার গান অধ্যায়ের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে শিকল-পরার গান অধ্যায়ের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় শিকল-পরার গান অধ্যায়ের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই শিকল-পরার গান অধ্যায়ের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

Table of Contents

কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার “শিকল-পরার গান” কবিতায় ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই কবিতায় তিনি বন্দি বিপ্লবীদের দৃঢ়তা ও সাহসের বর্ণনা করেছেন, যারা বন্দিজীবনকে শৃঙ্খল ভাঙার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

কবি দেখেছেন, ব্রিটিশরা ভারতীয়দের উপর নির্যাতন ও শোষণ চালাচ্ছে, তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। যারা এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে, তাদেরকে বন্দি করে শৃঙ্খলে জড়িয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু কবি বিশ্বাস করেন, এই শৃঙ্খল বন্দিদের দমন করতে পারবে না। বরং, এই বন্দিজীবন তাদের আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

তিনি ঘোষণা করেন, “এই শিকল-পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল। এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল।” কবি মনে করেন, বন্দিদের শরীর যতই শৃঙ্খলে জড়িয়ে থাকুক না কেন, তাদের মন অনন্ত মুক্ত। তারা বন্দিজীবনকে ভয় পায় না, বরং এটিকে বিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, “এই বাঁধন পরেই বাঁধন-ভয়কে করব মোরা জয়, এই শিকল-বাঁধা পা নয় এ শিকল ভাঙা কল।” কবি বিশ্বাস করেন, শেষ পর্যন্ত ভারতীয়রা ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পাবে। তারা তাদের শক্তি ও সাহসে শৃঙ্খল ভেঙে ফেলবে এবং স্বাধীন ভারত গড়ে তুলবে।

কবিতার শেষে তিনি মুক্তিকামীদের আহ্বান জানান, “ওরে ক্রন্দন নয় বন্ধন এই শিকল-ঝঞ্ঝনা, এ যে মুক্তি-পথের অগ্রদূতের চরণ-বন্দনা। এই লাঞ্ছিতেরাই অত্যাচারকে হাঞ্ছে লাঞ্ছনা, মোদের অস্থি দিয়েই জ্বলবে দেশে আবার বজ্রানল।”

এই কবিতাটি কেবল একটি সাহিত্যকর্মই নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী বিপ্লবী গান যা আজও প্রাসঙ্গিক। এটি ভারতীয়দের স্বাধীনতা আন্দোলনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে এবং আজও স্বৈরশাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষদের অনুপ্রাণিত করে।

শিকল-পরার গান – বাংলা  – অষ্টম শ্রেণি – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

শিকল-পরার গান – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি কী কী ধরনের গানের রচয়িতা?

কাজী নজরুল ইসলাম শ্যামাসংগীত, গজল, দেশাত্মবোধক, ইসলামি প্রভৃতি গানের রচয়িতা।

শিকল-পরা ছল বলতে কবি প্রকৃতপক্ষে কী বোঝাতে চেয়েছেন?

শিকল-পরা ছল বলতে কবি এক সংগ্রামকৌশলকে বুঝিয়েছেন, যেখানে ব্রিটিশের তৈরি শিকল পরেই ভারতীয়রা পরাধীনতার শিকলকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।

ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন-ভয়। – ‘বাঁধন-ভয়’ ক্ষয় করতে কারা, কোথায় এসেছেন?

বাঁধন-ভয় ক্ষয় করতে পরাধীন ভারতবাসীরাই ইংরেজের তৈরি বাঁধন বন্ধ করাতে এসেছেন।

মুক্তি-পথের অগ্রদূতের চরণ-বন্দনা কীভাবে রচিত হয়?

শিকল-ঝঞ্চনার মাধ্যমে মুক্তিপথের অগ্রদূতের চরণ-বন্দনা রচিত হয়।

কবি নজরুল ইসলামকে বলা হয় – (কিশোর/দুঃখবাদী/বিদ্রোহী) কবি।

বিদ্রোহী।

বিষের বাঁশি কাব্যের রচয়িতা হলেন – (রবীন্দ্রনাথ/সত্যেন্দ্রনাথ/নজরুল ইসলাম)।

নজরুল ইসলাম।

নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন – (চুরুলিয়া/পুরুলিয়া/শিমুলিয়া) গ্রামে।

চুরুলিয়া।

কবি নজরুল (প্রাচীন/মধ্য/আধুনিক) যুগের কবি।

আধুনিক।

শিকল-পরার গান কবিতাটি লিখেছেন – (নজরুল ইসলাম/জীবনানন্দ দাশ/সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)।

নজরুল ইসলাম।

শিকল পরেই _ তোদের করব রে বিকল।

শিকল।

শিকলবাঁধা পা নয় এ _ কল।

শিকল-ভাঙা।

ভয়-দেখানো _ মোরা করব সর্বনাশ।

ভূতের।

আনব মাভৈঃ-বিজয়মন্ত্র _ বল।

বলহীনের।

ফাঁসি পরে আনব হাসি _ ফল।

মৃত্যু-জয়ের।

মুক্তি-পথের _ চরণ-বন্দনা।

অগ্রদূতের।

নজরুল ইসলামের পিতার নাম কী?

নজরুল ইসলামের পিতার নাম হল ফকির আহমেদ।

নজরুলের কোন্ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল?

নজরুলের ‘মুক্তি’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।

কবি নজরুলের লেখা একটি কাব্যের নাম লেখো।

কবি নজরুলের লেখা একটি কাব্য হল ‘অগ্নিবীণা’।

শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল। – এখানে ‘তোদের’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?

প্রশ্নে প্রদত্ত অংশে ‘তোদের’ বলতে শাসক ইংরেজদের বোঝানো হয়েছে।

করব তারে লয়। – কাকে ‘লয়’ করতে চান কবি?

ভয়ের শাসনকে কবি ‘লয়’ করতে চেয়েছেন।

মোরা করব সর্বনাশ। – কীসের সর্বনাশ করতে চান কবি?

ভয়-দেখানো ভূতের সর্বনাশ করতে চান কবি নজরুল ইসলাম।

কবি নজরুল ইসলামের লেখা তিনটি কাব্যের নাম লেখো। এই প্রসঙ্গে পাঠ্য কবিতাটির উৎস কী লেখো।

কবি নজরুল ইসলামের লেখা তিনটি কাব্য হল – ‘সর্বহারা’, ‘অগ্নিবীণা’, ‘বিষের বাঁশি’।
 আমাদের পাঠ্য ‘শিকল-পরার গান’ কবিতাটির উৎস হল ‘বিষের বাঁশি’ কাব্যগ্রন্থ।

বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয়, – ‘মোদের’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? তারা কী করবে?

মোদের বলতে কবি পরাধীন ভারতবাসীকেই বুঝিয়েছেন।
এই ভারতীয়রাই সকলের বাঁধন ভয়কে ক্ষয় বা নাশ করবে।

বিদেশি সরকার কীভাবে এ দেশ শাসন করছে বলে কবি মনে করেছেন?

বিদেশি সরকার ভারতবর্ষের বুকে ত্রাসের শাসন শুরু করেছে। তারা ভয়ভীতির মাধ্যমে এ দেশের জনগণকে শাসনের নামে শোষণ করছে বলে কবি মনে করেছেন।

ওরে ক্রন্দন নয়, – উদ্ধৃতিটির উৎস কী? ‘ওরে’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে?

প্রশ্নোক্ত অংশটির উৎস হল কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘শিকল-পরার গান’ নামক কবিতা।
ওরে বলতে লাঞ্ছিত, পরাধীন ভারতবাসীদের কথা বলা হয়েছে।

কোন্ কবিতাটি নজরুলকে বাংলা কাব্যজগতে পরিচিতি দান করেছে? কবিতাটির প্রকাশকাল লেখো।

বিদ্রোহী কবিতাটি কবি নজরুলকে বাংলা কাব্যজগতে পরিচিতি দান করেছে।
এই কবিতাটির প্রথম প্রকাশকাল হল ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ।

মোদের অস্থি দিয়েই জ্বলবে দেশে আবার বজ্রানল। – পঙ্ক্তিটিতে ‘আবার’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কেন?

স্বর্গকে বৃত্রাসুরের শোষণের হাত থেকে মুক্ত করার কারণে দধীচি মুনির অস্থি দিয়ে বজ্র তৈরি করা হয়েছিল, ভারতকে ইংরেজের শোষণের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য দেশবাসীর অস্থি দিয়ে বজ্রানল প্রজ্বলিত করা হবে বলে কবি মনে করেছেন -এই কারণেই ‘শিকল-পরার গান’ কবিতাটিতে ‘আবার’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

শিকল-পরার গান কেবল একটি কবিতা নয়, বরং ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রামশীল ভারতীয়দের এক প্রবল আহ্বান। এই কবিতায়, নজরুল ইসলাম শিকলকে শুধুমাত্র বন্দিশালার লৌহকপাট হিসেবে দেখেননি, বরং তা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহার করেছেন।

কবি বিশ্বাস করেন যে, ব্রিটিশরা ভারতীয়দের শোষণ ও লাঞ্ছনা করে তাদের স্বাধীনতাচেতনা দমিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু এই শিকল পরানো তাদের পরাজয়ের সূচনা নয়, বরং বিপ্লবের জাগরণের ডাক।

যারা শিকল পরেছেন, তারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তাদের বন্দিদশা তাদের মনের সাহস ও দৃঢ়তাকে আরও প্রখর করে তুলবে। কারণ তারা জানে, সত্যের পথ কঠিন, কিন্তু বিজয় অবশ্যম্ভাবী।

নজরুল এই গানের মাধ্যমে ভারতীয়দের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভয়কে জয় করে, সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যেতে হবে। শিকল পরানোর চেষ্টা বৃথা যাবে, কারণ ভারতীয়দের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা অদম্য।

এই কবিতা শুধু একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন নয়, বরং আজও সমাজের বিভিন্ন অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা জোগায়।

Share via:

মন্তব্য করুন