এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণি – বাংলা – আবহমান (কবিতা) নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

কবিতাটির মূলভাব হলো গ্রাম বাংলার আবহমান সৌন্দর্য, গ্রামবাসীর জীবনযাত্রা ও তাদের আবহমান সংস্কৃতির প্রতি কবির অগাধ ভালোবাসা। কবি কবিতাটিতে গ্রাম বাংলার প্রকৃতির বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি গ্রাম বাংলার আকাশ, বাতাস, নদী, মাঠ, ফুল, ফল, পাখি ইত্যাদির সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন। কবি গ্রামবাসীর জীবনযাত্রার কথাও বলেছেন। তিনি গ্রামবাসীদের সহজ-সরল জীবন, তাদের কঠোর পরিশ্রম, তাদের আবেগ-অনুভূতি ইত্যাদির কথা বলেছেন। কবি গ্রামবাসীদের আবহমান সংস্কৃতির কথাও বলেছেন। তিনি গ্রামবাসীদের ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, তাদের লোকসংস্কৃতি ইত্যাদির কথা বলেছেন।

নবম শ্রেণি – বাংলা – আবহমান

কবি পরিচিতি

ভূমিকা – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আধুনিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ।শুধু কবিতার ক্ষেত্রেই নয়, গদ্য রচনাতেও তিনি সমান স্বচ্ছন্দ।

জন্ম ও শৈশব – ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ অক্টোবর, বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার চান্দ্রা গ্রামে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের কৃতি অধ্যাপক। কবির মায়ের নাম প্রফুল্লনন্দিনী দেবী।

ছাত্রজীবন – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ছাত্রজীবন শুরু হয়েছিল গ্রামের পাঠশালায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে গ্রামের পাঠশালার পাঠ শেষ করে তিনি কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশন (মেন) এবং বঙ্গবাসী কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাস করার পর তিনি কলকাতার সেন্ট পল্স কলেজ থেকে বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে এমএ পাস করেন।

কর্মজীবন – কলেজজীবনে শ্রীহর্ষ পত্রিকা সম্পাদনার সূত্রে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সাহিত্যজগতে প্রবেশ ঘটে। সেই যোগাযোগের সূত্র ধরেই ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর তিনি সাংবাদিকতাকে তাঁর পেশা হিসেবে বেছে নেন। দৈনিক প্রত্যহ, মাতৃভূমি, স্বরাজ, ভারত, ইউনাইটেড প্রেস অব ইন্ডিয়া, সত্যযুগ ইত্যাদি পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার পর ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগদান করেন। এই পত্রিকার সংবাদ বিভাগে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি রবিবাসরীয় বিভাগে চলে আসেন। এরপর ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই পত্রিকা গোষ্ঠীরই শিশু-কিশোর পত্রিকা আনন্দমেলা সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সম্পাদক থাকাকালীন আনন্দমেলা পাঠকমহলে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে।

সাহিত্যজীবন – খুব অল্প বয়স থেকেই নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কবিতা লিখতে শুরু করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ নীল-নির্জন প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে (১৩৬১ বঙ্গাব্দে)। এই কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পরই নীরেন্দ্রনাথ পাঠকমহলে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল – অন্ধকার বারান্দা (১৯৬১), নীরক্ত করবী (১৯৬৫), নক্ষত্র জয়ের জন্য (১৯৬৯), কলকাতার যীশু (১৯৬৯), উলঙ্গ রাজা (১৯৭১), খোলামুঠি (১৯৭৪), কবিতার বদলে কবিতা (১৯৭৬), আজ সকালে (১৯৭৮), পাগলা ঘণ্টি (১৯৮১), ঘর-দুয়ার (১৯৮৩), রূপকাহিনী (১৯৯১), সন্ধ্যারাতের কবিতা(১৯৯৭) প্রভৃতি। ছোটোদের জন্য তাঁর রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – সাদা বাঘ, বিবির ছড়া, বারো মাসের ছড়া কলকাতা প্রভৃতি।

তবে শুধু কবিতা রচনায় নিজেকে আটকে না রেখে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। গদ্য রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তাঁর রচিত উপন্যাস পিতৃপুরুষ আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস নীরবিন্দু, কাব্যনাট্য প্রথম নায়ক পাঠকমহলের জনপ্রিয়তা আদায় করে নিয়েছে। তাঁর কবিতা বিষয়ক আলোচনা গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— কবিতার ক্লাস, কবিতা কী ও কেন ইত্যাদি। গঙ্গা-যমুনা তাঁর লেখা একটি অনবদ্য ভ্রমণ কাহিনি।

সম্মান ও স্বীকৃতি – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর কবিপ্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে বহু পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৫৮ – তে উল্টোরথ পুরস্কার, ১৯৭০-এ তারাশঙ্কর পুরস্কার, ১৯৭৪-এ সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (উলঙ্গ রাজা কাব্যগ্রন্থের জন্য) এবং ১৯৭৬-এ আনন্দ পুরস্কার – এ তিনি ভূষিত হন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।

উৎস

আবহমান কবিতাটির রচনাকাল ১৮ ভাদ্র, ১৩৬৫ বঙ্গাব্দ। আবহমান কবিতাটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত অন্ধকার বারান্দা কাব্যগ্রন্থের ৩০ সংখ্যক কবিতা।

সারসংক্ষেপ

শিকড়ের সন্ধানে মানুষের যাত্রা চলতেই থাকে। একদিন গ্রামবাংলার মানুষ তার বসতি তৈরি করেছিল গভীর অনুরাগে। নাগরিক জীবনের আগ্রাসনে সেই গ্রামীণ সভ্যতা অনেকটাই বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে। মানুষ শহরমুখী হয়েছে। কিন্তু তবুও প্রকৃতির টানে, গ্রামসভ্যতার টানে মানুষ বারবার ফিরে আসে। দমবন্ধ করা জীবন থেকে মুক্তি পেতে মাটিকে হাওয়াকে ভালোবাসে মানুষ এসে দাঁড়ায় তার ঐতিহ্যের কাছে। আর সেখানে নটেগাছটি বুড়িয়ে গেলেও মুড়িয়ে যায় না। কারণ, প্রকৃতি একইভাবে সেখানে নিজেকে মেলে রাখে, জীবন একইভাবে সহজ ছন্দে বয়ে যায়।

সন্ধ্যার বাতাসে লাউমাচাটার পাশে ছোট্ট একটা ফুল দুলতেই থাকে। প্রকৃতি আর জীবনের বহমানতার পাশে শিকড়ের সন্ধানে মানুষের এই ফিরে আসার বাসনাও বজায় থাকে। সারাদিন। ঘাসের গন্ধ মাখা, রাতে তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে রাখা চলতেই থাকে। ছোটো ছোটো দুঃখযন্ত্রণা নিয়ে জীবন সেখানে অমলিন থাকে। বাগান থেকে হারিয়ে যায় না কুন্দফুলের হাসি। আলোছায়ার খেলা চলে একইভাবে, ছুটে আসে সন্ধ্যার সময়ে নদীর হাওয়া। আর সেখানেই খুঁজে পাওয়া যায় বেঁচে থাকার ঠিকানা। যেখানে লাউমাচার পাশে। সন্ধ্যার বাতাসে দুলে চলেছে ছোট্ট একটা ফুল।

নামকরণ

যে – কোনো সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামের মধ্য দিয়েই পাঠকের মনে লেখাটি সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করেন সাহিত্যস্রষ্টা। পাঠককে আকর্ষণ করার তাগিদ থেকেই স্রষ্টা তার সাহিত্যকর্মের নামকরণের দিকটিতে লক্ষ রাখেন। কবিতার ক্ষেত্রে সাধারণত বিষয়বস্তু, ভাব বা ব্যঞ্জনা অনুসারে নামকরণ করা হয়ে থাকে।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত আলোচ্য কবিতাটির নাম আবহমান। আবহমান শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ক্রমাগত বা চিরপ্রচলিত। সহজ কথায় যুগ যুগ ধরে একইভাবে চলে আসা যে-কোনো কিছুকেই আবহমান বলা হয়। আবহমান কবিতায় কবি গ্রামবাংলার মানুষের দুঃখকষ্টে ভরা প্রকৃতির ছায়ায় লালিত জীবনের চিরন্তন ছবিকে নিপুণ তুলিতে এঁকেছেন। সুদূর অতীতে মানুষ সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা বাংলাকে ভালোবেসে এখানেই বসতি বানিয়েছিল। আবহমান কবিতায় লাউমাচার প্রতীকের মধ্য দিয়ে সেই সহজসুন্দর গ্রামজীবনকেই তুলে ধরা হয়েছে। কবি এই লাউমাচার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন কারণ সেখান থেকেই নাগরিক জীবনে ক্লান্ত মানুষ খুঁজে পেতে পারে শান্তির নিশ্বাস। মাটি আর হাওয়াকে ভালোবেসে মানুষ তাই গিয়ে দাঁড়ায় সেই প্রকৃতির কাছে। ঘাসের গন্ধ মেখে আর সারা রাত তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে রেখে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়।

অসংখ্য বাধাবিপত্তির মধ্যেও এদেশের মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে, হাসিমুখে দু-চোখে নতুন জীবনের স্বপ্ন এঁকে বংশানুক্রমে তার জীবনপ্রবাহকে সচল রেখেছে। এই গ্রাম্যপ্রকৃতির দ্বারা লালিত জীবন থেকেই সুখ খুঁজে নিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলে নাগরিক জীবনে ক্লান্ত মানুষ। যুগ যুগ ধরে বয়ে চলা বাংলার গ্রামজীবন, তার প্রকৃতি আর তার কাছে মানুষের ঋণের কাহিনিই এই কবিতায় নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন কবি। তাই বলা যায়, কবিতাটির আবহমান নামটি অসাধারণ ব্যঞ্জনাধর্মী এবং যথাযথ।

কবিতাটি থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে, গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, গ্রামবাসীর জীবনযাত্রা ও তাদের আবহমান সংস্কৃতি আমাদের অত্যন্ত প্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ। আমাদের উচিত এগুলোকে রক্ষা করা ও এর প্রচার করা

Share via:

মন্তব্য করুন