বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা আমরা কবিতাটি নবম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। এটি একটি দেশাত্মবোধক কবিতা, যাতে কবি জাতীয় ঐক্য ও সংহতির কথা বলেছেন।
মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে। — গঙ্গা কোথায় মুক্তি বিতরণ করে?
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর আমরা কবিতায় বলেছেন যে মুক্তধারা গঙ্গা তীর্থভূমি বাংলায় মুক্তি বিতরণ করে।
ভালে কাঞ্চন-শৃঙ্গ-মুকুট বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
বঙ্গভূমির উত্তরে বরফে ঢাকা হিমালয় পর্বতমালা সূর্যকিরণে যে সোনার রং ধারণ করে কবি তাকেই বাংলামায়ের কপালে সোনার মুকুট বলেছেন।
কিরণে ভুবন আলা — বাক্যটিতে কী বোঝানো হয়েছে?
সূর্যের উজ্জ্বল আলোয় বাংলাদেশ আলোকিত হয় এ কথাই বাক্যটিতে বোঝানো হয়েছে।
বাংলা মায়ের কোল ও বুক ভরা কীসের কথা কবি বলেছেন?
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত আমরা কবিতায় বাংলা মায়ের কোলভরা সোনালি ধান আর বুকভরা অফুরন্ত স্নেহের কথা বলেছেন।
বাংলা মায়ের দেহ কোন্ কোন্ ফুলে ভূষিত?
বাংলা মায়ের দেহ অতসী ও অপরাজিতা ফুলে ভূষিত। তাঁর বামহাতে কমলার ফুল আর চরণে পদ্ম শোভা পায়।
সাগর কেমন করে বঙ্গভূমির বন্দনা করে?
বঙ্গভূমির দক্ষিণতম প্রান্তে থাকা বঙ্গোপসাগর অনবরত অজস্র ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার মধ্য দিয়ে তার বঙ্গভূমির বন্দনা করে।
বাঙালি জাতি কীসের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে?
বাংলার দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে হিংস্র বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঙালি বেঁচে থাকে।
আমরা হেলায় নাগেরে খেলাই — কবি কেন বলেছেন?
বাংলার নদী-খাল-বিলে অসংখ্য সাপের খেলা বাস। সাপের খেলা দেখানো কিছু বাঙালির পেশা, তাই কবি এ কথা বলেছেন।
নাগের মাথায় কে নেচেছিলেন?
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ কালিয় নাগের মাথা অর্থাৎ ফণার ওপর নেচেছিলেন।
চতুরঙ্গ কী?
হাতি, ঘোড়া, রথ ও পদাতিক — এই চারটি শাখাবিশিষ্ট সেনাবাহিনীকে চতুরঙ্গ বলে।
কবির মতে বাঙালি সেনা কার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল?
কবির মতে বাঙালি সেনা রামচন্দ্রের প্রপিতামহ রঘুর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল।
কোন্ বাঙালি লঙ্কা জয় করেছিলেন?
রাঢ় বাংলার সিংহপুরের রাজপুত্র বিজয়সিংহ লঙ্কাদ্বীপ জয় করে সেখানে রাজত্ব ও রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
সিংহল নামের মধ্য দিয়ে কোন্ বাঙালি নিজের শৌর্যের পরিচয় রেখেছেন?
বাঙালি বিজয়সিংহ লঙ্কা জয় করে সিংহল নামকরণের মধ্য দিয়ে নিজের শৌর্যের পরিচয় রেখেছেন।
কবির মতে কাদের হুকুমে দিল্লিনাথকে হটতে হয়েছিল?
কবির মতে বাংলার বিখ্যাত বারো ভূঁইয়ার অন্যতম চাঁদ রায় ও প্রতাপাদিত্যের হুকুমে দিল্লিনাথকে হটতে হয়েছিল।
আদিবিদ্বান্ কাকে বলা হয়েছে?
বৈদিক ঋষি তথা সাংখ্যদর্শনের প্রণেতা মহামুনি কপিলকে আদিবিদ্বান্ বলা হয়েছে।
তিব্বতে জ্ঞানের দীপ কে জ্বেলেছিলেন?
বাঙালি পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর বা দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান তিব্বতে জ্ঞানের দীপ জ্বেলেছিলেন তথা বৌদ্ধধর্মের প্রচার করেছিলেন।
বাঙালির ছেলে ফিরে এল দেশে যশের মুকুট পরি। — বাঙালির ছেলে কে?
বাঙালির ছেলে বলতে এখানে পণ্ডিত রঘুনাথ শিরোমণির কথা বলা হয়েছে।
পক্ষশাতন কথাটির অর্থ কী?
পক্ষশাতন কথাটির অর্থ হল ডানা কেটে নেওয়া।
পক্ষধরের পক্ষশাতন বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
বাঙালি পণ্ডিত রঘুনাথ শিরোমণি মিথিলার মহাপণ্ডিত পক্ষধর মিশ্রকে বিতর্কসভায় পরাজিত করেছিলেন। একেই কবি পক্ষধরের পক্ষশাতন বলেছেন।
কবি জয়দেব রচিত গ্রন্থটির নাম লেখো।
কবি জয়দেব রচিত গ্রন্থটির নাম গীতগোবিন্দ।
শ্যাম-কম্বোজ কী কারণে বিখ্যাত?
শ্যাম-কম্বোজ ওঙ্কারধাম বা আঙ্করভাট মন্দিরের জন্য বিখ্যাত।
প্রাচীন বাংলার দুজন বিখ্যাত ভাস্করের নাম লেখো।
প্রাচীন বাংলার দুজন বিখ্যাত ভাস্কর হলেন বিট্পাল আর ধীমান।
অজন্তা কেন বিখ্যাত?
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্যে বুদ্ধদেব ও জাতকের কাহিনি নিয়ে আঁকা গুহাচিত্রগুলির জন্য অজন্তা বিখ্যাত।
বাঙালি কোন্ গানে তার হৃদয়ের গোপন দ্বার খুলে দিয়েছে?
বাঙালি তার একান্ত নিজস্ব কীর্তন আর বাউলগানে হৃদয়ের গোপন দ্বার খুলে দিয়েছে।
কারা মন্বন্তরে মরেনি?
মন্বন্তরে বহু মানুষের মৃত্যু হলেও বাঙালি জাতি শেষপর্যন্ত মরেনি, তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
মারী নিয়ে ঘর করি বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
বাংলায় বহুবার বিভিন্ন রোগের মহামারি দেখা দিয়েছে। তাই কবি বলেছেন আমরা মারী নিয়ে ঘর করি।
মন্বন্তর এবং মহামারির পরেও বাঙালি কীভাবে বেঁচেছে?
কবির মতে, বিধাতার আশীর্বাদে বাঙালি জাতি অমৃতের টিকা পরে মন্বন্তর এবং মহামারির পরেও নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে।
আকাশে প্রদীপ জ্বালা হয় কেন?
বাঙালি হিন্দুরা স্বর্গগত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে কার্তিক মাসের সন্ধ্যায় বাঁশের ডগায় প্রদীপ জ্বেলে দেয়।
মানুষের ঠাকুরালি বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
নিজের কর্মগুণে রক্তমাংসের মানুষের দেবত্বে উত্তীর্ণ হওয়াকেই কবি মানুষের ঠাকুরালি বলেছেন।
বাঙালির হিয়া অমিয় মথিয়া কে কায়া ধরেছেন?
বাঙালির হৃদয়-অমৃত মন্থন করে নিমাই তথা শ্রীচৈতন্যদেব মানবমূর্তি ধারণ করেছেন।
বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বাণী ছুটেছে জগৎময়। — কীভাবে বিবেকের বাণী জগত্ময় প্রচারিত হয়েছে?
সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের বাণী জগত্ময় ছুটেছে অর্থাৎ তাঁর মতাদর্শ সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।
বাঙালির ছেলে কীসে কীসে সমন্বয় ঘটাবে বলে কবি মনে করেছে?
বাঙালির ছেলে ব্যাঘ্ৰে-বৃষভে সমন্বয় ঘটাবে বলে কবি মনে করেছেন।
জড়ের সাড়া কে পেয়েছিলেন?
বাঙালি বিজ্ঞানসাধক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, আপাতদৃষ্টিতে জড়পদার্থ গাছের মধ্যে প্রাণের সাড়া পেয়েছিলেন।
শব-সাধনা কী?
সদ্যোমৃত পুরুষের শবের ওপর ঘোড়ায় চড়ার ভঙ্গিতে বসে তান্ত্রিক সাধনাকেই শব-সাধনা বলা হয় ৷
বিষম ধাতুর মিলন কে ঘটিয়েছেন?
বিষম অর্থাৎ ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট ধাতুর রাসায়নিক সংযোগ ঘটিয়েছেন বাঙালি বিজ্ঞানী, রসায়নবিদ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।
জগতে মহামিলনের গান কে গেয়েছেন?
বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জগতে মহামিলনের গান গেয়েছেন।
বাঙালি কার মুখের প্রশ্ন কেড়ে নিয়েছে?
আমরা কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মতে বাঙালি বেতালের মুখের প্রশ্ন কেড়ে নিয়েছে।
পঞ্চবটী কোন্ কোন্ বৃক্ষের সমাহার?
পঞ্চবটী হল বট, বেল, অশ্বত্থ, অশোক, আমলকী—এই পাঁচটি বৃক্ষের সমাহার।
আমরা কবিতায় পঞ্চবটীর ছায়ায় বাঙালি কী করবে বলে কবি জানিয়েছেন?
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মতে পঞ্চবটীর ছায়ায় বাঙালি জগতের শতকোটি মানুষের মধ্যে মিলন ঘটবে।
আমরা কবিতায় বিধাতার বরে কী হবে বলে কবি মনে করেছেন?
বিধাতার বরে অর্থাৎ আশীর্বাদে সারা পৃথিবী বাঙালির গৌরবে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে কবি আশা করেন।
ভুবন কেমন করে বাঙালির গৌরবে ভরে উঠবে?
বিধাতার আশীর্বাদে এবং বাঙালির প্রতিভা ও তপস্যা বা সাধনায় পৃথিবী তার গৌরবে ভরে উঠবে।
আমরা কীভাবে দেব-ঋণে মুক্ত হব?
সারা পৃথিবীর মানুষকে মিলনের মহামন্ত্রে দীক্ষিত করে আমরা বাঙালিরা দেব-ঋণে মুক্ত হব।
আমরা (কবিতা) থেকে আমরা সকলেই শিক্ষা নিতে পারি যে, সকল মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। সকল মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতি থাকলে পৃথিবীতে শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করবে।