নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের, ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ -এর কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি-রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী-বাংলা
Contents Show

‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্পে নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।

ভূমিকা –

একদা শেকসপিয়র বলেছিলেন, নামে কী এসে যায়, গোলাপকে । যে নামেই ডাকো, সে গোলাপ। কিন্তু এ ভাবনা সর্বৈব সত্য নয়। তাঁর নিজের সাহিত্যেই নামের গুরুত্ব সংবেদনশীল হয়ে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। সাহিত্যের নামকরণ তাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার দ্বারা সাহিত্য নির্মিতিটির সঙ্গে পাঠককুলের প্রথম ভাবসেতু তৈরি হয়। একসময় ওই ক্ষুদ্র নামকরণই সমগ্র সাহিত্যরূপটির পরিচয় বহন করতে থাকে। তাই কবি-সাহিত্যিকরা তাঁদের সৃজিত সাহিত্যের নামকরণকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন; নামকরণটিকে পূর্ণমাত্রায় সংবেদনশীল করে প্রকাশ করতে তৎপর হন। নামকরণ সাধারণত বিশেষ কয়েকটি দিকের প্রতি দৃষ্টি রেখে করা হয়। কখনো-কখনো বিষয়নির্ভর নামকরণ করতে দেখা যায় সাহিত্যিকদের। আবার কখনও প্রকাশ্য সাহিত্যটির ভাবব্যঞ্জনার প্রতিও গুরুত্ব আরোপিত হতে দেখা যায় নামকরণে। কখনও যেমন কেন্দ্রীয় কোনো চরিত্র বা ঘটনা নামকরণে প্রাধান্য পায়, তেমনই দেখা যায় প্রতীকী কোনো নামকরণও আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু দেখা যায়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই উক্ত সাহিত্যরচনাটির একটা মর্মকথাকে অতিসংক্ষিপ্ত মূর্ছনা দেওয়ার প্রচেষ্টা লক্ষিত হয় নামকরণে।

লেখকের অভিপ্রায় অনুযায়ী নামকরণ –

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার-কথাসাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ কল্পবিজ্ঞান কাহিনি। বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে এক কেন্দ্রীয় চরিত্র, যিনি আদপে এক বৈজ্ঞানিক, তাঁকে আধারিত করে গল্পটিকে এখানে বিন্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে দিনলিপির আকারে। দেখা যায় – প্রফেসার শঙ্কু তথা ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু এক ব্যোমযাত্রার পরিকল্পনা করেছেন। ‘ব্যোম’ শব্দটি মহাকাশ বা মহাশূন্যকে নির্দেশ করে, আর এই ব্যোমে যিনি যাত্রা করেন, তিনিই ব্যোমযাত্রী। এই ব্যোমযাত্রীর ডায়রি অর্থাৎ দিনলিপিটিকেই লেখক কাহিনি আকারে পরিবেশন করেছেন বলেই গল্পটির নামকরণ ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’। লেখকের অভিপ্রায়টি এখানে একেবারে স্বচ্ছ। শঙ্কু তাঁর অভিযানের উদ্যোগ করেন। প্রথমবার ব্যর্থ হন। পরে যখন তাঁর অভিযানটি সফল হয় তখন দেখা যায়, শঙ্কুর চেষ্টাকে ব্যঙ্গকারী প্রতিবেশী অবিনাশবাবুর যাবতীয় ব্যঙ্গ প্রচেষ্টায় কালি ঢেলে দিয়ে ব্যোমযাত্রী শঙ্কুর রকেট উড়ে চলে অনির্দেশের উদ্দেশে।

ডায়ারি কথা –

প্রফেসার শঙ্কুর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা ছাড়াও লেখক এখানে যে বিষয়টিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিয়েছেন, তা হল – তাঁর ডায়ারিটি কীভাবে লেখকের হাতে এল। একসময় দেখা গেল, যে ডায়ারিটিকে প্রায় অবিনশ্বর বলে মনে হয়েছিল, যা আগুনে পোড়ে না, কুকুরে ছিঁড়তে চাইলে লক্ষিত হয় তার আশ্চর্য স্থিতিস্থাপকতা, তা কিন্তু আদপে যথেষ্ট নশ্বর। আশ্চর্য কাগজ ও অবিরত কালির রং বদলানো এই লাল ডায়ারিখানার শেষ গতি হয় পিঁপড়ের খাদ্য হিসেবে। অবশ্য লেখক তার আগে এর কাহিনিকে জনসমক্ষে প্রচারের ব্যবস্থা করে ফেলেন।

উপসংহার –

অতএব দেখা যাচ্ছে, এক রহস্যময় ব্যোমযাত্রা ও তার যাত্রী এবং তার থেকে আরও রহস্যময় তাঁর ডায়ারিটির প্রসঙ্গ এ গল্পে মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। অতএব উক্ত নামকরণ চরমভাবে সার্থক হয়ে উঠেছে, এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ ডায়ারি হিসেবে কতটা সার্থক, আলোচনা করো।

ভূমিকা –

বিশ্বসাহিত্যে ডায়ারি জাতীয় রচনার অভাব নেই। অর্থাৎ দিনলিপির আকারে সাহিত্য পরিবেশন করাকে সাহিত্যের আঙ্গিক হিসেবে সাহিত্যিকরা গ্রহণ করেছেন বহু ক্ষেত্রেই। জনপ্রিয়তম কল্পবিজ্ঞান-গল্প লেখক সত্যজিৎ রায় তাঁর শঙ্কু কাহিনিগুলি পরিবেশনের জন্য এই ‘দিনলিপি’ মাধ্যমটিকে সার্থকভাবে প্রয়োগ করেছেন।

তারিখ সংস্থাপনা –

‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ তাঁর প্রথম শঙ্কুকাহিনি, যেখানে দেখা যায় প্রফেসার ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু এক নিরাসক্ত ভঙ্গিতে তাঁর মঙ্গল অভিযানের রোজনামচা বর্ণিত করেছেন। ইংরেজি বর্ষারম্ভের 1 জানুয়ারিতে শঙ্কু তাঁর ডায়ারির সূচনা করেছেন। এরপর ক্রমে তারিখ পরিবর্তিত হয়েছে এভাবে – 2, 5, 6, 8, 10, 11, 12, 21, 25 তারিখ। সমগ্র গল্পের তারিখ সংস্থাপনা থেকে বুঝতে পারা যায়, বিশেষ বিশেষ ঘটনা সংবলিত দিনগুলিই এখানে উঠে এসেছে। এই ঘটনাগুলি যে একজন বৈজ্ঞানিকের মানসিকতার সংবেদবাহী তা গল্পটি পড়লেই বোঝা যায়। 25 জানুয়ারি তারিখের দিনলিপিটি সুদীর্ঘ। বোঝা যায় অভিযান কালে ডায়ারি লেখার মতো কাজে সময় ব্যয়ে তিনি ক্রমে অপারগ হয়ে ওঠেন। কিন্তু বিশিষ্ট তারিখগুলিতে খুঁটিনাটি সংবলিত যে ঘটনাবিবরণ প্রকাশিত হয়েছে তা যতটা নিষ্ঠ, ততটাই তথ্যবহুল।

ডায়ারির যথাযথ লক্ষণ –

ডায়ারি বা দিনলিপির মধ্যে ব্যক্তিগত এক মানুষের উপস্থিতি সর্বদাই লক্ষিত হয়। এখানেও সপার্ষদ ব্যক্তিগত শঙ্কুর অন্তরঙ্গ দেখা মেলে। ডায়ারিতে ভাষার সংক্ষিপ্ত একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। তথ্যসমাহারও ডায়ারির মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষিত হয়, কেন-না লিখে রাখার মতো ঘটনাকেই মানুষ ডায়ারির পাতায় স্থান দেয়। শঙ্কুর এই ডায়ারির মধ্যেও এই লক্ষণগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে, ডায়ারি হিসেবে রচনাটি সার্থক হয়ে উঠেছে।

‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্পে অলৌকিকতার সঙ্গে বিজ্ঞানের মেলবন্ধন ঘটেছে।’ – উক্তিটির যথার্থতা আলোচনা করো।

অলৌকিকতার সঙ্গে বিজ্ঞানের মেলবন্ধন –

চলচ্চিত্রকার-সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ কল্পবিজ্ঞান কাহিনিটি যুগপৎ বৈজ্ঞানিক-অলৌকিক ঘটনার সমাহারে গড়ে উঠেছে। প্রফেসার শঙ্কুর দিনলিপি শুরু হওয়ার পূর্বে বর্ণিত হয়েছে সেই ডায়ারিটি কীভাবে লেখকের হস্তগত হল এবং সেই ডায়ারির অস্তিত্বই যেন অলৌকিকতার চরম উদাহরণ হয়ে দেখা দিয়েছে। ডায়ারিটি লেখকের হাতে ধরিয়ে, সেটিকে ‘গোল্ড মাইন’ বলে তারকবাবু চলে যাবার বেশ কিছুদিন পরে লেখক যখন তার পাতা খোলেন তখন চমকে ওঠেন। কেন-না, তিনি লক্ষ করেছিলেন, প্রথম দেখার সময় তার কালির রং ছিল সবুজ, আর পরে দেখা গেল তা হয়ে উঠেছে লাল। এভাবে কখনও তা হয়েছে নীল, আবার কখনও হলুদ। এহেন ডায়ারির পাতা ভুলো কুকুরও দাঁত দিয়ে ছিঁড়তে পারে না। ডায়ারির কাগজটি স্থিতিস্থাপক, টানলে বাড়ে, ছেড়ে দিলে পূর্বেকার অবস্থা প্রাপ্ত হয়। আগুনেও এর কাগজ পোড়ে না। অথচ লেখাটা কপি হয়ে যাওয়ার পরই তার পুরোটাই ডেঁয়ো পিঁপড়েতে উদরস্থ করে ফেলে। গল্পে এ ঘটনা সংস্থাপন অলৌকিকতার উদাহরণ। গল্পের অন্যত্র দেখা যায়, বাগানে আরামকেদারায় শুয়ে উল্কাপতন দেখতে দেখতে শঙ্কু অলৌকিকতার জগতে প্রবেশ করেছিলেন। একটা উল্কা ক্রমে বড়ো হতে হতে বাগানের প্রান্তে গুলঞ্চ গাছটার পাশে এসে প্রকাণ্ড জোনাকির মতো জ্বলতে থাকে। আর সেই দিন থেকেই গাছটাতে গুলঞ্চর বদলে নতুন ফুল হতে থাকে। লেখকের বর্ণনায় – “আঙুলের মতো পাঁচটা করে ঝোলা ঝোলা পাপড়ি। দিনেরবেলা কুচকুচে কালো কিন্তু রাত হলেই ফসফরাসের মতো জ্বলতে থাকে।” এ বর্ণনাতেও রয়েছে অলৌকিকতার স্পর্শ। এ ছাড়াও বিধুশেখরের আচার-আচরণ, নিউটনের ধরনধারণেও অলৌকিকতার প্রকাশ লক্ষণীয়। আবার কল্পবিজ্ঞানের গল্পকে বিজ্ঞানের স্পর্শ দিতে লেখক অত্যন্ত মুনশিয়ানার সঙ্গে বিজ্ঞানকে যথাযোগ্য ব্যবহার করেছেন। দুই ক্ষেত্রেই অজস্র উদাহরণ রয়েছে গল্পে। তাই অনায়াসেই বলা যেতে পারে, এ গল্পে অলৌকিকতার সঙ্গে বিজ্ঞানের যথার্থ মেলবন্ধন ঘটেছে।

‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রফেসার শঙ্কু। গল্পে তাঁর যে পরিচয় পাওয়া যায় তা সংক্ষেপে লেখো।

প্রাথমিক পরিচয় –

জনপ্রিয় কল্পবিজ্ঞান লেখক সত্যজিৎ রায়ের কাহিনি ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’তে সুন্দর বনের মাথারিয়া অঞ্চল থেকে তারক চাটুজ্যের আবিষ্কৃত লাল ডায়ারির মধ্যে প্রফেসার শঙ্কুর পরিচয় পাই। তিনি ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু, পিতা শ্রেষ্ঠ এক আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু। জন্ম 16ই জুন, উচ্চতা 5 ফুট 7 ইঞ্চি, অবিবাহিত অক্লান্ত বিজ্ঞানকর্মী। তিনি অধ্যাপনা করেছেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে। গিরিডিতে তাঁর বাসস্থান। এই ডায়ারিতে তাঁর বিভিন্ন কার্যকলাপ ও মঙ্গলযাত্রার সমস্ত তথ্য লেখা ছিল। এই সমস্ত তথ্য ও কার্যকলাপের ভিত্তিতে শঙ্কুর নানান গতিবিধি আমরা জানতে পারি।

অক্লান্ত বিজ্ঞান সাধনা –

লেখক বলেছেন তাঁর সম্পর্কে জনমহলে নানান কৌতুহল ছিল। প্রায় পনেরো বছর তিনি নিখোঁজ ছিলেন। কেউ বলেন তিনি গবেষণায় ব্যস্ত আছেন, কেউ বা বলেন তিনি এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে এমন মগ্ন থাকতেন যে দীর্ঘদিন নিজের চেহারাটাই ভালোভাবে দেখা হত না তাঁর। এজন্যই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারার বিদঘুটে পরিবর্তনে নিজেই নিজেকে চিনতে পারেননি।

কার্যকলাপ –

মঙ্গল অভিযান করা তাঁর অনেকদিনের ইচ্ছা। আগে একবার মঙ্গল অভিযানের আয়োজন করেছিলেন কিন্তু প্রহ্লাদের ভুলে রকেটটি কিছুটা উঠেই গোঁৎ খেয়ে অবিনাশবাবুর মুলো খেতে ভেঙে পড়ে। প্রফেসার শঙ্কু দ্বিতীয়বার মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতিতে আর কোনোরকম ভুল করতে চাননি। তাই, তিনি রকেটে দৈনন্দিনের প্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্গে ওজনের ব্যাপারটাও মাথায় রেখেছিলেন। কেন না রকেটে মাত্র কুড়ি মন পর্যন্ত জিনিস নেওয়া যায়। তিনি এক্ষেত্রে মঙ্গল অভিযানের সঙ্গে নিয়েছিলেন তাঁর অত্যাশ্চর্য আবিষ্কারগুলি যেমন পোষা বেড়ালের খাওয়ার জন্য ফিসপিল, বটিকা ইন্ডিয়া ও যন্ত্রমানব বিধুশেখরকে।

উপসংহার –

শঙ্কুর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে বৈজ্ঞানিক শঙ্কুর পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর নিয়মিত ডায়ারি লেখার অভ্যাসের কারণেই রচিত হয়েছে ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’, যা পাঠকদের উৎসাহিত করেছে। কাল্পনিক হলেও শঙ্কুর নিত্য নতুন চিন্তাধারা ও অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার আমাদের মনে রসবোধের সৃষ্টি করেছে।

প্রফেসার শঙ্কুর পরিচারক প্রহ্লাদ -এর যে পরিচয় ডায়ারি থেকে পাওয়া যায় তা উল্লেখ করো।

ভূমিকা –

চলচ্চিত্রকার-সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ নামক কল্পবিজ্ঞান গল্পে স্বয়ং শঙ্কু ছাড়া আরও তিনটি চরিত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটতে দেখা যায়। প্রহ্লাদ শঙ্কুর পরিচারক, নিউটন তাঁর প্রিয় বিড়াল এবং বিধুশেখর – তাঁর স্বহস্তে নির্মিত লৌহমানব তথা রোবট।

পরিচয় ও প্রভুভক্তি –

প্রফেসার শঙ্কুর পরিচারক প্রহ্লাদ যথেষ্ট প্রভুভক্ত। সাতাশ বছর ধরে সে শঙ্কুর সঙ্গে রয়েছে। নিজের দায়িত্বভারগুলি সে যথেষ্ট সচেতনতা ও যোগ্যতার সঙ্গে সম্পন্ন করলেও, তারও মাঝে মধ্যে ভুল হয়। দায়িত্ব-কর্তব্য মনে করেই সে ইংরেজি বর্ষশেষে বা নববর্ষের শুভারম্ভে শঙ্কুর আয়নার উপর থেকে পুরোনো ক্যালেন্ডারটি সরিয়ে তাঁর বিরাগভাজন হয়। এর ফলে প্রফেসার শঙ্কু তার উপর নিজ আবিষ্কৃত ‘নস্যাস্ত্র’ বা ‘Snuff-gun’ প্রয়োগ করেন। এর ফলে প্রহ্লাদ তেত্রিশ ঘণ্টা পর্যন্ত অবিরাম হাঁচতে থেকে কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করেছিল।

বুদ্ধিহীনতার পরিচয় –

আবার এই প্রহ্লাদই শঙ্কুর মতে প্রথমবার রকেটযাত্রা ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী। সরল ও বোকা প্রহ্লাদ রকেট যাত্রার সময় ঘড়িতে দম দিতে গিয়ে ভুল করে কাঁটাটাই ঘুরিয়ে ফেলেছিল। এর ফলে রকেট সাড়ে তিন ঘণ্টা পিছিয়ে যায় এবং রকেটটি কিছুটা গোঁৎ খেয়ে পড়ে অবিনাশবাবুর মুলো খেতে।

উপসংহার –

প্রফেসার শঙ্কুর আশ্চর্য আবিষ্কার ও কার্যকলাপ বোঝার মতন ক্ষমতা প্রহ্লাদের ছিল না। তাই রকেটে চড়ে সময় কাটানোর জন্য সে রামায়ণ-মহাভারত পাঠ করেছে। তার বিশ্বাস ছিল যে গ্রহের নাম ‘মঙ্গল’ সেখানে বিপদ হতেই পারে না। অন্যদিকে এই বোকা প্রহ্লাদই অপার সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে গবেষণার সময় শঙ্কুকে ভয়ানক বিস্ফোরণের হাত থেকে রক্ষা করেছে। টিকটিকির উলটে দেওয়া বাইকর্নিক অ্যাসিডের সঙ্গে যখন প্যারাডক্সাইট পাউডারের সংযোগে ভয়ংকর বিপদ ঘটতে চলেছিল, তখন প্রহ্লাদ তার গামছা দিয়ে অ্যাসিডটা মুছে নেয়।

সহজ-সরল-স্বল্পবুদ্ধির প্রহ্লাদই ছিল বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী শঙ্কুর একমাত্র বিশ্বস্ত সহকারী। নানান ভুল-ত্রুটি নিয়েও সে প্রফেসারের রকেটযাত্রার সঙ্গী হয়েছে।

প্রফেসার শঙ্কু প্রহ্লাদকে কেন তাঁর রকেটযাত্রার সঙ্গী করেছিলেন?

প্রহ্লাদের পরিচয় –

সত্যজিৎ রায় রচিত ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ শীর্ষক কল্পবিজ্ঞান কাহিনির প্রধান চরিত্র প্রফেসার শঙ্কুর সাতাশ বছরের সঙ্গী ভৃত্য প্রহ্লাদ ছিল সহজ, সরল ও বোকা প্রকৃতির। বোকা হলেও সে ছিল খুব সাহসী।

প্রহ্লাদের সাহসিকতা –

প্রফেসার শঙ্কু বিশ্বাস করতেন কমবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা সব কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। তারা বুদ্ধিমান লোকের থেকে বেশি সাহসী হয়, কারণ ভয় পাওয়ার কারণটা ভেবে বের করতে তাদের সময় লাগে। এর প্রমাণ তিনি নিজের জীবনেই পেয়েছিলেন। একবার কড়িকাঠ থেকে পড়ে একটা টিকটিকি প্রফেসার শঙ্কুর বাইকর্নিক অ্যাসিডের শিশি উল্টে দিয়েছিল। অ্যাসিড এবং প্যারাডক্সাইট পাউডারের সংস্পর্শে ভয়ংকর কিছু ঘটবে ভেবেই শঙ্কু স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। এমনসময় প্রহ্লাদ অতি সহজেই গামছা দিয়ে অ্যাসিডটা মুছে যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়েছিল।

রকেটযাত্রার সঙ্গী করার কারণ –

এই ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে শঙ্কুর মনে হয়েছিল, মঙ্গল অভিযানের মতো ঘটনায় শুধুমাত্র বুদ্ধিমান লোকেরই প্রয়োজন হয় না, কমবুদ্ধিসম্পন্ন হলেও সাহসী মানুষেরও প্রয়োজন হয়। তাই দু-মন সাত সের ওজনের প্রহ্লাদকে শঙ্কু রকেট যাত্রার সঙ্গী করেন। শঙ্কু নিজে বুদ্ধিমান ও বিখ্যাত হওয়া সত্ত্বেও প্রহ্লাদের সাহসিকতার স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

প্রফেসার শঙ্কুর মঙ্গলযাত্রার সঙ্গী নিউটনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

পরিচয় –

সত্যজিৎ রায় রচিত ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ নামক কাহিনিতে প্রফেসার শঙ্কুর তিনজন সঙ্গী ছিল তারা হল প্রফেসার শঙ্কুর ভৃত্য প্রহ্লাদ, প্রফেসার শঙ্কু আবিষ্কৃত রোবট বিধুশেখর এবং প্রফেসার শঙ্কুর যথার্থ সঙ্গী তাঁর বেড়াল নিউটন। শঙ্কু তাই বলেন “নিউটনকে সঙ্গে নেব। কদিন ধরেই আমার ল্যাবরেটরির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে এবং করুণস্বরে ম্যাও ম্যাও করছে।”

রকেটযাত্রী নিউটন –

রকেটযাত্রী নিউটনের জন্য শঙ্কু Fish-Pill আবিষ্কার করেছিলেন। যার একটি মাত্র বড়িতে নিউটনের সাতদিন খাওয়া হয়ে যেত।

বিপদের কারণ নিউটন –

সেই Fish Pill পেয়ে সে মহাখুশি হয়েছিল। তার জন্য পোষাক ও হেলমেট তৈরি করা হয়। নিউটন প্রথমে পোষাক ও হেলমেটে আপত্তি জানালেও স্বভাববশত পরানো হেলমেটের কাঁচটা চেটে দেখে। ছোটো জায়গায় বেশিক্ষণ বন্ধ থাকার অনভ্যাসের জন্য রকেটে ওঠার পর নিউটনের খুব অসুবিধা হয়েছিল। তারপর অবশ্য প্রফেসার শঙ্কুর টেবিলের ওপর বসে অসংখ্য জ্বলন্ত গ্রহ নক্ষত্র দেখে সে শুধু লেজ নেড়েছিল। মঙ্গলগ্রহে অবতরণের পর মঙ্গলের জল খেয়ে সে প্রফেসার শঙ্কুকে ভরসা জুগিয়েছিল।

বিপদের কারণ নিউটন –

আবার নিউটনই ছিল মঙ্গল গ্রহে বিপদের মূল কারণ। মাছের গন্ধে কৌতূহলবশত সে মঙ্গলীয় জন্তুর হাঁটুতে কামড়ে দেয়। এর ফলে সেই জন্তুরা তাড়া করলে প্রহ্লাদ ও বিধুশেখরের তৎপরতায় নিউটনসহ বাকিরা রক্ষা পায়।

‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্প অবলম্বনে প্রফেসার শঙ্কু আবিষ্কৃত রোবট ‘বিধুশেখর’ -এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

পরিচিতি –

জনপ্রিয়তম কল্পবিজ্ঞান লেখক সত্যজিৎ রায়ের কাহিনি ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ থেকে আমরা জানতে পারি বিধুশেখর প্রফেসার শঙ্কুর আবিষ্কৃত রোবট। সে প্রায় সব কাজে দক্ষ। সবরকম যন্ত্রের প্রয়োগকরে শঙ্কু তাকে বানালেও আলাদা করে কোনো শব্দ করা, হাত-পা নাড়ানো কিংবা নিজস্ব চিন্তা শক্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু মাঝে মধ্যেই বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তির প্রয়োগে বিধুশেখর চমকে দিত প্রফেসার শঙ্কুকেই। প্রফেসার শঙ্কু এই বিষয়ে একবার বলেছিলেন- “…আমার বৈজ্ঞানিক বিদ্যেবুদ্ধি দিয়ে আমি যে জিনিস তৈরি করি। সেগুলো অনেক সময় আমার হিসেবের বেশি কাজ করে।… আমার ক্ষমতার দৌড় যে কতখানি তা হয়তো আমি নিজেই বুঝতে পারি না।”

বিধুশেখরের অযান্ত্রিক কার্যকলাপ –

মঙ্গলগ্রহে যাবার প্রস্তুতি শুরু হতেই বিধুশেখরের মধ্যে এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছিল। রকেট তৈরির ক্ষেত্রে সঠিক ধাতুর ব্যবহারে পরীক্ষামূলকভাবে ট্যানট্রাম বোরোপ্যাক্সিনেট অথবা একুইয়স্ ভেলোসিলিকা মেশোনো নিয়ে ধন্ধে ছিলেন শঙ্কু। বিধুশেখর ভেলোসিলিকার পক্ষে হ্যাঁ বলে ভয়ংকর বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা করেছিল। স্পষ্ট উচ্চারণ করতে না পারলেও শঙ্কু তাকে বাংলা শিখিয়েছেন। ‘কেমন আছো’ বলে পরীক্ষা করলে সে বলে ‘গাগোঃ’ অর্থাৎ ভালো। তার বাংলা উচ্চারণে প্রহ্লাদ পরিহাস করলে বিধুশেখর পছন্দ করেনি। তাকে বাংলা গান গাইতে শুনে প্রফেসার তার স্মরণশক্তির বাহবা দিয়েছেন।

রক্ষক বিধুশেখর –

ভবিষ্যতের বিপদ সম্পর্কে সে প্রথমেই শঙ্কুকে সাবধান করেছে। মঙ্গলগ্রহে নামার আগে বিপদ বুঝে রকেটে উল্টো দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। এমনকি মঙ্গলগ্রহে নেমেই প্রফেসার শঙ্কুকে সাবধান করে দিয়েছিল। আবার মঙ্গলীয় জন্তুর কবল থেকেও সে-ই সবাইকে রক্ষা করেছে। মঙ্গলগ্রহ থেকে বেরিয়ে সৌরজগতের বিভিন্ন পরিবেশের দৃশ্য বিধুশেখরের মাধ্যমেই শঙ্কু প্রত্যক্ষ করেছেন। বিধুশেখরই প্রথম ‘টাফা’ নামক গ্রহটির কথা জানায়। তার কথায় টাফার মানুষেরা সবাই বৈজ্ঞানিক, কিন্তু দেখা যায় তারা বিজ্ঞান সম্বন্ধে কিছুই জানে না। বিধুশেখর যে মিথ্যা বলেছিল সেটা স্পষ্ট হয় যখন দেখা যায় সে প্রফেসার শঙ্কুর সামনে থেকে উধাও হয়ে যায়। তবে বিবিধ কাজকর্মে স্বাধীনচেতা মনোভাব দেখে প্রফেসার শঙ্কু বারবার বোতাম টিপে তাকে অকেজো করে দিয়েছেন।

উপসংহার –

লেখক বিধুশেখর চরিত্রটিকে বুদ্ধিমত্তা, চিন্তাশক্তি ও রসিকতার মিশেলে যেভাবে উপস্থাপিত করেছেন তা থেকে বোঝার উপায় নেই যে সেটি আসলে শঙ্কুর আবিষ্কৃত রোবট।

লেখকের হাতে শঙ্কুর ডায়ারি আসার কাহিনিটি লেখো।

অথবা, লেখক কার কাছ থেকে প্রফেসর শঙ্কুর ডায়ারিটি পেয়েছিলেন? ডায়ারিটির বিশেষত্ব কী?

ডায়ারি প্রাপ্তি –

সত্যজিৎ রায় রচিত ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কুর অত্যাশ্চর্য ডায়ারিটি লেখক পেয়েছিলেন তারক চাটুজ্জের কাছ থেকে। একদিন যখন তিনি অফিসে পুজো সংখ্যার প্রুফ দেখছেন, তখন তারকবাবু তাঁকে লাল-মলাটের ওই দিনলিপি লেখা খাতাটি দিয়ে বলেছিলেন – “পড়ে দেখো। গোল্ড মাইন।” তারকবাবুর সঙ্গে তাঁর জানাশোনা বাবার আমল থেকে। ডায়ারিটা দেখে তিনি আশ্চর্য হলেন। কারণ প্রফেসার শঙ্কুর নিরুদ্দিষ্ট হওয়ার খবর প্রচারিত। কারও ধারণা তিনি কী একটা ‘ভীষণ এক্সপেরিমেন্ট’ করতে গিয়ে মারা গেছেন। এমন খবরও শ্রুত হয় যে তিনি জীবিত এবং কোনো অখ্যাত-অজ্ঞাত অঞ্চলে গা-ঢাকা দিয়ে কর্মব্যস্ত। একজন বৈজ্ঞানিকের ডায়ারি তারকবাবুর হস্তগত হল কেমন করে, এ প্রশ্নের উত্তরে তারকবাবু এক অভিনব গল্প শোনালেন।

তারকবাবু যেভাবে গিয়েছিলেন –

সুন্দরবনের মাথারিয়া অঞ্চলে একবার এক বড়োসড়ো উল্কাপাত ঘটে। কিছু বাঘছাল জোটানোর আশায় সেখানে গিয়ে, উল্কাপাতে সৃষ্ট বিশাল গর্তের ঠিক মাঝখানে তিনি এই শঙ্কুর নাম লেখা খাতাটি পান। বিস্মিত লেখক স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করে উঠেছিলেন – “উল্কার গর্তের মধ্যে খাতা? তার মানে কি…?” তারকবাবু বলেছিলেন – “পড়ে দেখো। সব জানতে পারবে।”

ডায়ারির বৈশিষ্ট্য –

লেখক ডায়ারিটি পুজোর পর যখন পুনরায় হাতে নিলেন, তাঁর বেজায় খটকা লাগল, কেন-না প্রথমবার যখন দেখেছিলেন তখন এর কালির রং ছিল সবুজ, আর এখন লাল। বাড়ি এসে দেখলেন, কালির রং নীল। অর্থাৎ কালির রঙের ক্রমবদল ঘটছে। তাঁর হাত থেকে ডায়ারিটা পড়ে গেল মাটিতে, ভুলো কুকুরটা তাকে ছেঁড়ার চেষ্টা করল, কিন্তু হল না। অর্থাৎ খাতার কাগজ স্থিতিস্থাপক। লেখক কৌতূহলী হয়ে দেশলাই জ্বেলে পোড়াবার চেষ্টা করলেন, ধরল না। পাঁচ ঘণ্টা উনুনের আগুনে ফেলে রেখে দেখলেন সেটি পুড়লো না, উপরন্তু রংবদল চলতেই থাকল। এহেন আশ্চর্য এক বৈজ্ঞানিকের ডায়ারিটি তারক চাটুজ্জেই লেখককে প্রদান করেছিলেন।

তারক চাটুজ্জে কেমন প্রকৃতির মানুষ ছিলেন? লেখকের সঙ্গে তার কথোপকথনে তার যে চরিত্রবৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে তা লেখো।

যেমন প্রকৃতির মানুষ –

কথাসাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্পটি আসলে প্রফেসার শঙ্কুর মঙ্গলাভিযানের দিনলিপি বা রোজনামচা। লেখক এটি প্রাপ্ত হন পূর্বপরিচিত তারক চাটুজ্জের কাছ থেকে। লেখক পুজোসংখ্যার কাজ নিয়ে অফিসে ব্যস্ত, একদিন হঠাৎ দুপুরে তারকবাবু এসে লাল মলাটের একটি খাতা তাঁর সামনে ফেলে দিয়ে বলেছিলেন – “পড়ে দেখো। গোল্ড মাইন।” তারকবাবু লেখকের বাবাকে চিনতেন। এর আগেও তিনি লেখককে কয়েকবার গল্পটল্প এনে দিয়েছেন। ভদ্রলোক যে বেশ গরিব তা তাঁর ছেঁড়া পোশাক-আশাক দেখে বোঝা যায়। লেখালিখি করে তিনি ইতিমধ্যে 5-10 টাকা পেয়েছেন।

তারক চাটুজ্জের চরিত্র বৈশিষ্ট্য –

লেখকের সঙ্গে ওইদিন তারকবাবুর বেশকিছু কথাবার্তা হয়। ডায়ারিটি বৈজ্ঞানিক-প্রফেসার ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর। সেটি তারকবাবুর হস্তগত হল কীভাবে এ প্রশ্ন করায় তিনি যা উত্তর দিয়েছিলেন, তা থেকে বোঝা যায়, তিনি বেশ চোখ-কান খোলা লোক। সুন্দরবনের মাথারিয়া অঞ্চলে যে বিশাল উল্কাপাত হয়েছিল, সেখানে ব্যাঘ্রচর্মের আশায় গিয়ে অবশেষে উল্কাসৃষ্ট। বিপুল গর্তের মধ্যে থেকে তিনি ওই লাল খাতাটি পান এবং সেটি হস্তগত করেন।

তারকবাবুর রসিকতাবোধ যথেষ্ট। লেখক যখন তাঁকে বাঘছাল পাওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, তিনি অম্লান বদনে বলেন – “ছিল কিছু গোসাপের ছাল। তাই নিয়ে এলুম।” লেখকের পরবর্তী অবাক প্রশ্ন ছিল, উল্কার গর্তে বিজ্ঞানীর খাতা এল কীভাবে? তারকবাবুর সোজাসাপটা উত্তর – “পড়ে দেখো। সব জানতে পারবে। তোমরা তো বানিয়ে গল্পটয় লেখো, আমিও লিখি। এ তার চেয়ে ঢের মজাদার। এ আমি হাতছাড়া করতাম না, বুঝলে! নেহাত বড়ো টানাটানি যাচ্ছে তাই-।” তারকবাবু যে অর্থসচেতন, তা বেশ বোঝা যায় এ উক্তিতে। সাহিত্য সচেতন তারক চাটুজ্জে গল্প লেখাতেও পারদর্শী, সাহিত্যের কদর করতে জানেন। অভাব অনটনের মধ্যেও তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। কোনো জিনিসকে কীভাবে গুছিয়ে মূল্য আদায় করতে হয়, এটা তিনি জানতেন। ওই খাতার বদলে তিনি লেখকের কাছ থেকে 20 টাকা পান।

অবিনাশবাবু কে ছিলেন? তাঁর কোন্ ব্যবহার শঙ্কুর ভালো লাগেনি? অবিনাশবাবুর চরিত্রের কোন্ বৈশিষ্ট্য তোমার চোখে পড়ে?

অবিনাশবাবুর পরিচয় –

কথাসাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্পে অবিনাশবাবু এক অপ্রধান চরিত্র। তিনি রসিক, খানিকটা যেন সমালোচনা প্রিয় ও ছিদ্রান্বেষী। বৈজ্ঞানিক-প্রফেসার শঙ্কুর প্রায় 25 বছরের প্রতিবেশী তিনি।

শঙ্কুর যা ভালো লাগেনি –

শঙ্কু এবং অবিনাশবাবুতে অনেক তফাত। একজন অক্লান্ত বিজ্ঞানকর্মী ও অন্যজন সাধারণ এক গৃহী মানুষ। প্রথমবারের অভিযান প্রচেষ্টায় শঙ্কুর রকেট যে খানিকটা উঠেই গোঁৎ খেয়ে অবিনাশবাবুর মুলোর খেতে পড়েছিল, তার জন্য তিনি 500 টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন এবং একটা বড়ো প্রচেষ্টা বিফলের জন্য যে তাঁর কোনো আক্ষেপ বা সহানুভূতি ছিল না, এ ব্যাপারটা শঙ্কুর মোটেই ভালো লাগেনি। তা ছাড়া কথায় কথায় শঙ্কুর উদ্যোগকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, সবকিছুকে অতিরঞ্জিত করে বলা, প্রসঙ্গহীন প্রশ্ন করে শঙ্কুকে বিব্রত করা ইত্যাদি বিষয়কে শঙ্কু ক্ষমার চোখে দেখতে পারেননি। বিশেষত শঙ্কুর গবেষণা তিনি যে ছোটো চোখে দেখেন, একজন প্রতিবেশীর এহেন আচরণ শঙ্কুর ভালো লাগেনি।

অবিনাশবাবুর চরিত্র বৈশিষ্ট্য –

পাঠ্য গল্পটির মধ্যে অবিনাশবাবুর এক অতিসাধারণ মধ্যবিত্ত মানসিকতার চরিত্রবৈশিষ্ট্য ধরা পড়েছে। প্রথমত এক জ্ঞানীগুণী প্রতিবেশী ভদ্রলোকের গবেষণা ও বিজ্ঞানকর্মের প্রতি তাঁর কোনো সম্ভ্রমবোধ লক্ষিত হয় না। তাই তিনি শঙ্কুর রসিকতা দিয়ে সমালোচনা করতেন। প্রথমবার যে-কোনো কাজকেই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ কিংবা যে তাঁর রকেট গোঁৎ খেয়ে অবিনাশবাবুর বাগানের মুলোচাষ নষ্ট করেছিল, এজন্য শঙ্কুর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করা তাঁর মধ্যবিত্ত মানসিকতার পরিচায়ক।

দ্বিতীয় অভিযানের প্রাক্কালে শঙ্কুকে বলেন – “কী মশাই, আপনি তো চাঁদপুর না মঙ্গলপুর কোথায় চললেন। আমার টাকাটার কী হলো?” তিনি রকেটটি নিয়ে ব্যঙ্গ করেন এভাবে – “আপনার ওই হাউইটা এই কালীপুজোর দিনে ছাড়ুন না। ছেলেরা বেশ আমোদ পাবে।” অন্যকে খোঁচা দিয়ে এক্ষেত্রে তিনি নিজে আমোদ পেয়েছিলেন।

এই ব্যক্তি সম্পর্কে শঙ্কুর ধারণা যে, তিনি হয়তো পৃথিবীর গোল আকার, তার সূর্য প্রদক্ষিণ, কিছুই বিশ্বাস করেন না। অবিনাশবাবুকে শাস্তি দেওয়ার জন্য শঙ্কু তার চায়ে নতুন আবিষ্কৃত বড়ি মিশিয়ে দিয়েছিলেন। যার প্রতিক্রিয়ায় হাই উঠবে এবং গভীর ঘুম হবে। ঘুমের মধ্যে তাকে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখতে হবে।

‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ অবলম্বনে মঙ্গলাভিযানের বর্ণনা দাও।’

যাত্রা শুরু –

সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্পে শঙ্কুর দিনলিপি অনুযায়ী 12 জানুযারি ভোর পাঁচটায় মঙ্গলাভিযান শুরু হয়। মহাকাশভিযানের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করেছিলেন শঙ্কু নিজের তৈরি শক্তিশালী রকেটে। প্রহ্লাদ ও নিউটনের পোশাক ও হেলমেটের সুব্যবস্থা তো ছিলই, তার সঙ্গে 5 বছরের মতো রসদ সঙ্গে নিয়েছিলেন শঙ্কু। তাই যাত্রী ও মালপত্রসহ ওজন দাঁড়িয়েছিল ‘পনেরো মন বত্রিশ সের তিন ছটাক।’ নিউটনের এক একটা Fish Pill -এ সাত দিনের খিদে মেটে। নিজের আর প্রহ্লাদের জন্য শঙ্কু বটফলের রস থেকে তৈরি করেছিলেন ‘বটিকা-ইন্ডিকা’, যার ক্ষুদ্র একটা বড়ি খেলে 24 ঘণ্টা আর খিদে পায় না। এমন বড়ি এক মন সঙ্গে ছিল।

যাত্রাপথ –

দীর্ঘ যাত্রাপথে নিউটন টেবিলের ওপর বসে বহির্দৃশ্য দেখে। বিধুশেখর নিষ্পলক চোখে চেয়ে থাকে, আর প্রহ্লাদ রামায়ণ পড়ে। শঙ্কু বিধুশেখরকে বাংলা শেখানোর চেষ্টা করেন। একসময় জানালা দিয়ে মঙ্গলগ্রহ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার গায়ের রেখাগুলিও একসময় নিখুঁত চোখে পড়ে। শঙ্কু ভাবেন, মঙ্গলে নামার সময় ক্যামেরা, দূরবিন, অস্ত্রশস্ত্র, ফার্স্ট-এড বক্স সঙ্গে নেবেন। মঙ্গলের প্রাণীদের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তিনি ভাবেন – “…তারা যে কী রকম-ছোটো কি বড়ো, হিংস্র না অহিংস্র- তা জানি না। একেবারে মানুষের মতো কিছু হবে সেটাও অসম্ভব বলে মনে হয়।”

মঙ্গলে পদার্পণ –

বিধুশেখরের মধ্যে বিপদের প্রাকধারণা দেওয়ার একটা আশ্চর্য ক্ষমতা যে আছে তা শঙ্কু জানতেন। মঙ্গলে ল্যান্ড করার কয়েক ঘণ্টা আগে সে, হঠাৎ বিধুশেখর এক লাফে যন্ত্রপাতির বোর্ডটার কাছে উঠে গিয়ে যে হ্যান্ডেলটা টানলে রকেটটা উলটো দিকে যায় সেইটা ধরে প্রচণ্ড টান দিল। সবাই ঝাঁকুনি খেয়ে মেঝেয় গড়াগড়ি। শঙ্কু বোতাম টিপে তাকে অকেজো করে আবার রকেট মঙ্গলের দিকে ঘোরালেন। এ ঘটনার মাত্র পাঁচ ঘণ্টা পরে শঙ্কুর রকেট মঙ্গলে ল্যান্ড করে।

মঙ্গলগ্রহের প্রাণীর শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দাও। ওই প্রাণী রকেটযাত্রীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিল?

প্রাণীদের শারীরিক অবস্থা –

চলচ্চিত্রকার-সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের কল্পবিজ্ঞানমূলক ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ -তে প্রফেসার শঙ্কুর যে অভিযানের বর্ণনা আছে তা মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশে। শঙ্কু তাঁর তিন সঙ্গী, যথাক্রমে পরিচারক প্রহ্লাদ, পোষা বিড়াল নিউটন এবং নিজের সৃষ্টি রোবট তথা ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট বিধুশেখরকে নিয়ে এই অভিযানে যান। মঙ্গলের নরম রবারের মতো মাটিতে অবতরণ করে সেখানকার জীবের অস্তিত্ব টের পান। প্রথমে একটা আঁশটে গন্ধ ও সঙ্গে একটা অদ্ভুত শব্দ ‘তিন্তিড়ি তিন্তিড়ি’ অনুসরণ করে যে প্রাণীটিকে দেখতে পান, তা অদ্ভুত দর্শনের। সেটা মানুষও নয়, জন্তুও নয়, মাছও নয় কিন্তু এই তিনের সঙ্গেই তার কিছু কিছু মিল রয়েছে। প্রায় তিন হাত লম্বা এই প্রাণীর হাত নেই, সে স্থানে রয়েছে মাছের মতো ডানা। মাথাটি বিরাট আর রয়েছে মুখজোড়া দন্তহীন হাঁ। এরই মধ্যস্থানে প্রকাণ্ড একটা চোখ, যা সবুজ রঙের। তার সর্বাঙ্গে মাছের মতো আঁশ, যা সকালের রোদে চিকচিক করছে, তবে জন্তুটা ভালো ছুটতে পারে না, পদে পদে হোঁচট খায়।

রকেটযাত্রীদের সঙ্গে ব্যবহার –

এই বিকটদর্শন জন্তুটি প্রথমে প্রহ্লাদকে তাড়া করে কিন্তু গতি শ্লথ বলে তার নাগাল পায় না, সে রকেটে উঠে পড়লে বিধুশেখর জন্তুটার পথ আটকায়। বাতাসে তীব্র আঁশটে গন্ধ ও ‘তিন্তিড়ি’ শব্দের বিপুল ঐকতান শুনে দৃষ্টি ফিরিয়ে শঙ্কু দেখেন প্রায় দু-তিনশো জন্তু রকেটের দিকে এগিয়ে আসছে। এদিকে প্রহ্লাদকে তাড়া করা প্রথম জন্তুটা বিধুশেখরের লৌহ-হস্তের বাড়ি খেয়ে ‘চী’ শব্দ করে কুপোকাত। প্রহ্লাদ জন্তুটার তাড়া খেয়ে পরিত্রাহী চিৎকার করে নিউটনকে সঙ্গে নিয়ে দৌড়ে রকেটে ওঠে। কিন্তু বিধুশেখরকে নিয়ে বিপদে পড়লেন শঙ্কু। মনে হচ্ছিল সে মঙ্গলের সব সৈন্যকে একাই আক্রমণ করবে, শঙ্কু কোনোমতে বিধুশেখরকে অচল করে, তার কোমরের কবজা খুলে, তাকে দু-ভাগ করে কোনোমতে টেনে-হিঁচড়ে রকেটে তুললেন। মঙ্গলীয়রা তখন আরও কাছে, ক্যাবিনের দরজা বন্ধ করার ঠিক আগে পায়ে একটা ঠান্ডা স্যাঁতস্যাতে ঝাপটা তিনি অনুভব করেন মঙ্গলীয়দের স্পর্শে। দরজা বন্ধ করে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল প্রফেসার শঙ্কু।

‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ অবলম্বনে মঙ্গল থেকে টাফা অভিযানের বর্ণনা দাও।

পুনরায় যাত্রা –

সত্যজিৎ রায় রচিত ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ -তে দেখা যায় মঙ্গলীয় সৈন্যর কবল থেকে বিধুশেখরকে উদ্ধার করে, কোনোক্রমে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে প্রফেসার শঙ্কু রকেটে উঠেই জ্ঞান হারান। মঙ্গল থেকে রকেট আবার উড়ে চলে। জ্ঞান ফেরার পর শঙ্কু অনুভব করলেন রকেট স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মহাকাশের অচেনা পথে উড়ে চলেছে, সময়ের হিসাব নেই।

মঙ্গল থেকে টাফার পথ –

সবাই মনমরা কেবল বিধুশেখর আনন্দে আছে। তাকে সচল করা মাত্রই সে ধন্যবাদ জানায়। এরপর বিধুশেখরের ভাষা বদলে যায়। বিধুশেখর সাধুভাষায় বলে, ‘গবাক্ষ উদ্‌ঘাটন করহ!’ শঙ্কু তাই করলেন। চোখে পড়ল গবাক্ষের বাইরে নানান দৃশ্য, যা অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য। আকাশময় কেবল বুদবুদ, যা ফুটছে আর ফাটছে। যেন সোনার বল ফোয়ারা হয়ে ছড়িয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে চারিদিকে। আকাশ জুড়ে এবড়োখেবড়ো পাথরের চাঁই। তাদের গহ্বরগুলি থেকে অগ্ন্যুৎদগার হচ্ছে। তাদেরকে বাঁচিয়েই ছুটে চলেছে রকেট। শঙ্কু, প্রহ্লাদ, এমনকি নিউটনের মধ্যেও তীব্র ভীতি সঞ্চারিত হলেও বিধুশেখরের কোনো ভূক্ষেপ নেই। তার মুখ থেকে জানা যায় অসংখ্য জোনাকির আলোয় সজ্জিত এই নতুন সাদা গ্রহটির নাম টাফা। শঙ্কুর তৈরি মহাকাশযান তাঁদের নিয়ে নিরাপদে নতুন গ্রহ টাফায় পৌঁছোয়।

‘টাফা’ কী? ‘টাফা’-র প্রকৃতি এবং প্রাণীদের সম্পর্কে আলোচনা করো।

টাফা –

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের কল্পবিজ্ঞানমূলক গল্প ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ -তে ‘টাফা’ নামক একটি গ্রহের উল্লেখ রয়েছে। ‘টাফা’ হল মহাকাশস্থিত একটা ঝলমলে সাদা গ্রহ, যা অনেকটা নির্মল-নিষ্কলঙ্ক পৃথিবী-উপগ্রহ চাঁদের মতো।

টাফার প্রকৃতি –

বিধুশেখরই প্রথম ওই গ্রহটিকে ‘টাফা’ বলে চিহ্নিত করে। মঙ্গল থেকে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে রকেট পুনরায় উৎক্ষিপ্ত হলে এক অনিবার্য আকর্ষণে এই টাফাই বুঝি তাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করছিল। দূর থেকে টাফার সর্বাঙ্গে শঙ্কু যেন অসংখ্য জোনাকি জ্বলতে আর নিভতে দেখেছিলেন। বিধুশেখরের মতে টাফায় নাকি সৌরজগতের প্রথম সভ্য লোকেরা বাস করে। ওদের সভ্যতা নাকি পৃথিবীর সভ্যতার থেকে বেশ কয়েক কোটি বছরের পুরোনো। সেখানে প্রত্যেকেই বৈজ্ঞানিক ও বুদ্ধিমান। এতে অনেক অসুবিধা। তাই তারা কম বুদ্ধিসম্পন্ন ভিনগ্রহীদের এনে সেখানে বাস করাচ্ছে।

টাফার প্রাণী –

টাফার প্রাণীরা ঠিক মানুষের মতো নয়। অতিবড়ো পিঁপড়ে জাতীয় প্রাণীর সঙ্গে এদের শারীরিক আদল অনেকটা মেলে। মাথাটি বিরাট। চোখও বড়ো বড়ো। সেই আন্দাজে হাত-পা যেন লিকলিকে সরু, যেন কার্যকরী হওয়ারই অনুপযুক্ত। এদের দেখলে মনে হয় মানুষের থেকে কখনও এরা অগ্রবর্তী জীব হতেই পারে না। কেন-না টাফার অবস্থা যথেষ্ট আদিম। ঘরবাড়ি-গাছপালা কিছুই নেই। এরা কেবল গর্ত দিয়ে মাটির তলায় ঢুকে যায়। অর্থাৎ এরা বিবরবাসী। শোনা কথা ঝালিয়ে নিতে শঙ্কু এদের এক প্রাণীকে বিজ্ঞান-বিজ্ঞানী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে হেঁয়ালি সূচক উত্তর পেয়েছিলেন। তবে এরা বাংলা জানে এবং নাক তাক করে শঙ্কু তাঁর নস্যাস্ত্রটা তার উপর প্রয়োগ করেন, কিন্তু হাঁচতে জানে না বলে, তাতে তেমন কাজ হয়নি।

“চিৎকার শুনে প্রহ্লাদ ঘরে এসে পড়েছিল।” – কার চিৎকারে প্রহ্লাদ ঘরে এসেছিল? চিৎকার করার কারণ কী ছিল? পরের ঘটনা কী ঘটেছিল?

1 জানুয়ারি সকালে, প্রফেসার শঙ্কুর চিৎকার শুনে তাঁর পরিচারক প্রহ্লাদ ঘরে এসে পড়েছিল।

চিৎকার করার কারণ –

প্রফেসার শঙ্কুর চিৎকার করে ওঠার একটা ন্যায়সঙ্গত কারণ ছিল। তিনি একটা নিজস্ব পদ্ধতিতে জীবনযাপন করেন। তাঁর বাড়িতেই তাঁর পরীক্ষাগার, তাই সেখানে একেবারে ব্যক্তিগত বিষয়ে অন্য কারও হস্তক্ষেপ শঙ্কু পছন্দ করেন না। 1 জানুয়ারি প্রতিদিনের মতো তিনি মর্নিংওয়াক সেরে শোবার ঘরে ঢুকে হঠাৎই এক বিদঘুটে চেহারার-লোকের সম্মুখীন হলেন। কিন্তু তিনি তো বৈজ্ঞানিক, চির-অনুসন্ধিৎসু। তাই অচিরেই চমকে গিয়ে, চিৎকার করে উঠেই বুঝতে পারলেন, যে বিদঘুটে চেহারার লোকটির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি, সে আসলে আয়নায় প্রতিবিম্বিত তাঁরই প্রতিচ্ছবি। কয়েক বছরেই তাঁর চেহারার অবনতির স্বরূপ দেখলেন তিনি। আয়নার প্রয়োজন হয় না বলে তিনি ক্যালেন্ডারটা তার উপর চাপিয়ে রেখেছিলেন, বছর শেষ হয়ে গেছে ভেবে প্রহ্লাদ সর্দারি করে সেটা সরিয়ে ফেলে বিপত্তি ঘটিয়েছিল বলেই শঙ্কু চমকে গিয়ে চিৎকার করে উঠেছিলেন।

পরের ঘটনা –

শঙ্কুর চিৎকারে স্বভাবতই প্রহ্লাদ এসে পড়ায়, তাকে একটু শিক্ষা দিতে তিনি Snuff-gun বা নস্যাস্ত্র তার ওপর প্রয়োগ করেন। এ অস্ত্রের গুণ, তাক করে গোঁফের কাছাকাছি মারতে পারলেই যে হাঁচির উপদ্রব শুরু হবে, তা আর থামতে চাইবে না। পরের ঘটনায় দেখা যায় প্রহ্লাদ সকাল থেকে ক্রমান্বয়ে হেঁচেই চলেছে। শঙ্কুর ধারণা 33 ঘণ্টার আগে ও হাঁচি আর থামবে না।

“এই সব লোককে জব্দ করার জন্য একটা নতুন কোনো অস্ত্রের কথা ভাবা দরকার।” – ‘এইসব লোক’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? কেন জব্দ করা দরকার? নতুন অস্ত্র বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

‘এইসব লোক’ –

সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্পে ‘এইসব লোক’ বলতে প্রফেসার শঙ্কুর দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী, কথায়-কথায় শঙ্কুকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপকারী অবিনাশবাবুকে বোঝানো হয়েছে।

জব্দ করার প্রয়োজনীয়তা –

অবিনাশবাবু প্রফেসার শঙ্কুর দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী হতে পারেন, তবে তাঁর মধ্যে প্রতিবেশীসুলভ আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব ছিল। কথায় কথায় তিনি শঙ্কুকে হেনস্থা করার চেষ্টা করেন। যেমন – প্রথমবারের রকেট উৎক্ষেপনের ক্ষেত্রে, প্রহ্লাদের ভুলে রকেট যে খানিকটা উঠেই গোঁৎ খেয়ে অবিনাশবাবুর মুলোর খেতে পড়েছিল, তাতে তাঁর বায়নাক্কা মারাত্মক হয়ে উঠেছিল। তিনি 500 টাকা ক্ষতিপূরণ চাইছিলেন শঙ্কুর কাছ থেকে। একটা এত বড়ো প্রচেষ্টা যে নষ্ট হতে বসেছে তা নিয়ে তাঁর কোনো ভাবনা নেই, নেই কোনো আক্ষেপ বা সহানুভূতি। এ ছাড়াও দ্বিতীয় অভিযানের প্রাক্কালে হঠাৎ তিনি গিয়ে শঙ্কুকে বলেন – “কী মশাই, আপনি তো চাঁদপুর না মঙ্গলপুর কোথায় চললেন। আমার টাকাটার কী হলো?” বিজ্ঞানের কথা উঠলেই ঠাট্টা আর ভাঁড়ামো করা তাঁর স্বভাব। তাই রকেটকে হাউই বলে ব্যঙ্গ করে তাঁর উক্তি – “আপনার ওই হাউইটা এই কালীপুজোর দিনে ছাড়ুন না। ছেলেরা বেশ আমোদ পাবে!” বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবিক শঙ্কু এসব পছন্দ করেন না বলেই অবিনাশবাবুকে জব্দ করা দরকার বলে তাঁর মনে হয়েছে।

নতুন অস্ত্র –

শঙ্কুর উদ্ভাবনী ক্ষমতা অসাধারণ, তাই অবিনাশবাবুকে শায়েস্তা করার জন্য তাঁর মাথায় একটা নতুন অস্ত্র প্রয়োগের পরিকল্পনা আসে। প্রহ্লাদকে অবিনাশবাবুর জন্য তিনি চা আনতে বলেন। তাতে স্যাকারিনের বদলে একটা স্ব-উদ্ভাবিত বড়ি তিনি ফেলে দেন, যার গুণে অনবরত হাই উঠবে এবং গভীর ঘুম আসবে। আর “সেই ঘুমের মধ্যে সব অসম্ভব ভয়ংকর রকমের স্বপ্ন দেখতে হবে।”

“কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকেই মাঝে মাঝে এর ব্যতিক্রম লক্ষ করছি।” – বক্তা কার সম্পর্কে এই উক্তি করেছেন? প্রসঙ্গ উল্লেখ করো। ব্যতিক্রমী ঘটনাগুলি লিপিবদ্ধ করো।

যার সম্পর্কে বলেছেন –

বক্তা অর্থাৎ প্রফেসার শঙ্কু, তাঁর নিজের হাতে তৈরি লৌহমানব তথা রোবট বিধুশেখর সম্পর্কে এই উক্তি করেছেন।

প্রসঙ্গ –

শঙ্কু দিন-দুয়েক ধরে দেখছিলেন বিধুশেখর মাঝে মধ্যে গাঁ গাঁ করে একটা শব্দ করছে। তিনি খুবই আশ্চর্য হয়েছিলেন, কারণ বিধুশেখর কলকব্জার মানুষ, কাজ করতে বললে কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। হয়তো তার নড়াচড়ার ঠং ঠং শব্দ হওয়া বড়োজোর সম্ভব। বিধুশেখরের স্রষ্টা হিসেবে শঙ্কুই জানেন তার ক্ষমতার সীমা। তিনি এও জানেন বিধুশেখরের নিজস্ব কোনো চিন্তাশক্তি বা বুদ্ধিবৃত্তি থাকা সম্ভবই নয়। অথচ সে যে গাঁ গাঁ করছে, সেটা আসলে কী? এ প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তি।

ব্যতিক্রমী ঘটনা –

ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে উল্লেখ্য এক বিশেষ দিনের প্রসঙ্গ। রকেটের পরিকল্পনা করতে গিয়ে শঙ্কু বুঝেছিলেন, কোনো সাধারণ ধাতু দিয়ে তা তৈরি সম্ভব নয়। গবেষণা করে তাই তিনি ব্যাঙের ছাতা, সাপের খোলস ও কচ্ছপের ডিমের খোলা মিশিয়ে একটা কমপাউন্ড প্রস্তুত করেন। এবার তার সঙ্গে ট্যানট্রাম বোরোপ্যাক্সিনেট বা একুইয়স্ ভেলোসিলিকার যে-কোনো একটা মেশালে নবতম বস্তুটি পাবেন। সেই উদ্দেশ্যে ট্যানট্রামটা এক চামচ নিয়ে ঢালতে গিয়ে দেখেন – ঘটাং ঘটাং শব্দ করে বিধুশেখর তার লোহার মাথাটা এমনভাবে নাড়ছে, যা দেখে মনে হয় খুব জোর দিয়ে সে বারণ করছে বা ‘না’ বলছে। শঙ্কু কাছে গিয়ে দেখলেন বিধুশেখরের কলকব্জায় কোনো গণ্ডগোল নেই। ট্যানট্রামটা মেশাতে গিয়ে থেমে গেলে তার মাথা নাড়াও থেমে যায়, পুনরায় হাতে নিলে আবার সে মাথা নাড়ে। এবার শঙ্কু ভেলোসিলিকাটা হাতে নিতেই আবার ঘটাং ঘটাং, আবার মাথা নাড়া, কিন্তু এবার মাথা নাড়াটা হ্যাঁ-বাচক। অবশেষে ভেলোসিলিকা মিশিয়েই তিনি ধাতুটা তৈরি করেন। পরে ট্যানট্রাম মিশিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছিলেন বিপুল এক বিস্ফোরণ ঘটেছিল।

“এক দিনের ঘটনা খুব বেশি করে মনে পড়ে।” – এখানে কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? কার কথা এটি? ঘটনাটা কী ছিল?

যে দিনের কথা বলা হয়েছে –

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার-সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্পে সেই বিশেষ দিনটির কথা বলা হয়েছে, যেদিন অনেক এক্সপেরিমেন্টের পর শঙ্কু রকেটের বহিরাবরণ তৈরির শেষ ধাপে পৌঁছেছিলেন।

লেখক –

উদ্ধৃতাংশে প্রদত্ত কথাটি 10 জানুয়ারি লিখিত ডায়ারির পাতায় স্বয়ং প্রফেসার শঙ্কুর।

প্রসঙ্গ –

শঙ্কু দিন-দুয়েক ধরে দেখছিলেন বিধুশেখর মাঝে মধ্যে গাঁ গাঁ করে একটা শব্দ করছে। তিনি খুবই আশ্চর্য হয়েছিলেন, কারণ বিধুশেখর কলকব্জার মানুষ, কাজ করতে বললে কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। হয়তো তার নড়াচড়ার ঠং ঠং শব্দ হওয়া বড়োজোর সম্ভব। বিধুশেখরের স্রষ্টা হিসেবে শঙ্কুই জানেন তার ক্ষমতার সীমা। তিনি এও জানেন বিধুশেখরের নিজস্ব কোনো চিন্তাশক্তি বা বুদ্ধিবৃত্তি থাকা সম্ভবই নয়। অথচ সে যে গাঁ গাঁ করছে, সেটা আসলে কী? এ প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তি।

ব্যতিক্রমী ঘটনা –

ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে উল্লেখ্য এক বিশেষ দিনের প্রসঙ্গ। রকেটের পরিকল্পনা করতে গিয়ে শঙ্কু বুঝেছিলেন, কোনো সাধারণ ধাতু দিয়ে তা তৈরি সম্ভব নয়। গবেষণা করে তাই তিনি ব্যাঙের ছাতা, সাপের খোলস ও কচ্ছপের ডিমের খোলা মিশিয়ে একটা কমপাউন্ড প্রস্তুত করেন। এবার তার সঙ্গে ট্যানট্রাম বোরোপ্যাক্সিনেট বা একুইয়স্ ভেলোসিলিকার যে-কোনো একটা মেশালে নবতম বস্তুটি পাবেন। সেই উদ্দেশ্যে ট্যানট্রামটা এক চামচ নিয়ে ঢালতে গিয়ে দেখেন – ঘটাং ঘটাং শব্দ করে বিধুশেখর তার লোহার মাথাটা এমনভাবে নাড়ছে, যা দেখে মনে হয় খুব জোর দিয়ে সে বারণ করছে বা ‘না’ বলছে। শঙ্কু কাছে গিয়ে দেখলেন বিধুশেখরের কলকব্জায় কোনো গণ্ডগোল নেই। ট্যানট্রামটা মেশাতে গিয়ে থেমে গেলে তার মাথা নাড়াও থেমে যায়, পুনরায় হাতে নিলে আবার সে মাথা নাড়ে। এবার শঙ্কু ভেলোসিলিকাটা হাতে নিতেই আবার ঘটাং ঘটাং, আবার মাথা নাড়া, কিন্তু এবার মাথা নাড়াটা হ্যাঁ-বাচক। অবশেষে ভেলোসিলিকা মিশিয়েই তিনি ধাতুটা তৈরি করেন। পরে ট্যানট্রাম মিশিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছিলেন বিপুল এক বিস্ফোরণ ঘটেছিল।

“বিধুশেখর আশ্চর্য সাহসের পরিচয় দিয়েছিল।” – বিধুশেখরের সাহসের পরিচয় ব্যাখ্যা করো।

ভূমিকা –

উদ্ধৃতাংশটি প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার-সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ কল্পবিজ্ঞানমূলক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

এখানে যে বিধুশেখরের কথা এসেছে, সে আসলে বৈজ্ঞানিক-প্রফেসার ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর স্বহস্তে নির্মিত যন্ত্রমানব তথা রোবট। শঙ্কু তাঁর মঙ্গলাভিযানে বিধুশেখরকেও সহযাত্রী করেন।

বিধুশেখরের সাহসের পরিচয় –

মঙ্গলের মাটিতে অবতরণের সময় বিধুশেখর গম্ভীর গলায় বলেছিল – ‘বিভং ভীবং বিভং।’ শঙ্কু তার কথার মানে বুঝতে পেরেছিলেন, সে বলছে – “বিপদ! ভীষণ বিপদ।” তবুও তার কথায় বিশ্বাস না করে, তাকে রকেটে রেখেই তিনি নিউটন ও প্রহ্লাদকে নিয়ে মঙ্গলের মাটিতে নামেন। প্রহ্লাদ ও নিউটন তখন খানিক দূরে। হঠাৎ একটা আঁশটে গন্ধ ও একটা অদ্ভুত শব্দ তাঁর কানে এল। দূরে কেউ যেন ‘তিন্তিড়ি তিন্তিড়ি’ বলে ডাকছে। তারপর হঠাৎ দেখলেন, প্রহ্লাদ ডান হাতের মুঠোয় নিউটনকে ধরে ঊর্ধ্বশ্বাসে, বিশ-পঁচিশ হাত লাফ মেরে মেরে রকেটের দিকে দৌড়োচ্ছে। আর তার পিছু নিয়েছে কিম্ভুতকিমাকার এক মঙ্গলবাসী – “সেটা মানুষও নয়, জন্তুও নয়, মাছও নয় কিন্তু তিনের সঙ্গেই কিছু কিছু মিল আছে।” জন্তুটা দৈর্ঘ্যে তিন হাতের বেশি নয়। পা বর্তমান, কিন্তু হাতের স্থানে মাছের মতো ডানা। বিরাট মাথায় মুখজোড়া দন্তহীন হাঁ, ঠিক মাঝখানে বড়ো একটা সবুজ চোখ। সর্বাঙ্গে মাছের মতো আঁশ। শঙ্কু দৃশ্যটি দেখে হতভম্ব হয়ে যান। তারপর একটা দমকা বাতাসের সঙ্গে তীব্র একটা আঁশটে গন্ধ পেয়ে ঘুরেই দেখেন ওরকম আরও অন্তত দু-তিনশো জন্তু দূর থেকে দুলতে দুলতে এগিয়ে আসছে রকেটের দিকে। তখনই বিধুশেখর রকেট থেকে নেমে প্রহ্লাদের পিছনে তাড়া করে আসা জন্তুটাকে তার লোহার হাতের এক বাড়িতেই কুপোকাত করে, ‘চী’ শব্দ করে মাছের পাখনার মতো ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে সেটি মাটিতে পড়ে যায়। শঙ্কু বিধুশেখরের এই বিশেষ আচরণটিকেই তার আশ্চর্য সাহসের পরিচয় বলেছেন।

“বিধুশেখর বলল, ‘গবাক্ষ উদ্‌ঘাটন করহ।” – বিধুশেখরের কথা শোনার ফলে প্রোফেসার শঙ্কুর যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা গল্প অনুসরণে আলোচনা করো।

প্রসঙ্গ –

সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ নামক কল্পবিজ্ঞানমূলক গল্পে দেখা যায়, নিতান্ত নিজের হাতে প্রস্তুত এক রোবটের সব কথাকে সমান গুরুত্ব দিতে প্রস্তুত ছিলেন না শঙ্কু। মঙ্গল থেকে টাফা-র দিকে রকেট যখন ধাবমান, তখন কিন্তু বিধুশেখরের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে শঙ্কু রকেটের জানলাটি খুলে দেন।

শঙ্কুর অভিজ্ঞতা –

রকেটের জানলা উন্মোচিত হতেই শঙ্কুর সামনে এক চোখ ঝলসানো দৃশ্য বিকশিত হল। তিনি দেখলেন যে এক অদ্ভুত-অবিশ্বাস্য জগতের মধ্যে দিয়ে উড়ে চলেছেন, “আকাশময় কেবল বুদ্বুদ ফুটছে আর ফাটছে।” যেন এই আছে এই নেই, “যেন অগুনতি সোনার বল আপনা থেকেই বড়ো হতে হতে হঠাৎ ফেটে সোনার ফোয়ারা ছড়িয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে।” প্রহ্লাদের মতো মানুষও এ দেখে মুগ্ধ-বিস্মিত। নিউটনের অবস্থাও তাই। এই দৃশ্যাবলি ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে। একসময় দেখা গেল আকাশব্যাপী সাপের মতো কিলবিলে সব আলো এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। সেই আলোয় কখনও সারা কেবিনকে আলোময় করে তুলছে। তবে একসময় এ অভিজ্ঞতার বদল ঘটে তা যেন শঙ্কুর মতো ঠান্ডা মাথার বৈজ্ঞানিকেরও কালঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল। কেন-না, দেখা গেল-রকেটের চারপাশে সারা আকাশময় বিপুলাকৃতির সব এবড়োখেবড়ো পাথরের চাঁই। তাদের বুকের গহ্বর থেকে অবিরত ঘটছে অগ্ন্যুদ্গার আর রকেটটি নিয়ন্ত্রণহীনভাবেই সেইসব অগ্নিময় পাথরের ফাঁক দিয়ে কলিশন বাঁচিয়ে বিদ্যুৎবেগে ছুটে চলেছে। যে-কোনো মুহূর্তেই চরম ধাক্কায় ধুলো হয়ে রকেটসুদ্ধ ধ্বংস হয়ে যাবার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল এবং দেখা যাচ্ছিল, রকেটটি ঠিক শেষ মুহূর্তে ম্যাজিকের মতো মোড় ঘুরে নিজের পথ বেছে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতে প্রহ্লাদ ইষ্টনাম জপ করছে। নিউটন থরথর করে কাঁপছে।

“কেবল একটা ঝলমলে সাদা গ্রহ নির্মল নিষ্কলঙ্ক একটি চাঁদের মতো আমাদের দিকে চেয়ে আছে।” – এই গ্রহটির নাম কী? এই গ্রহে শঙ্কুদের কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল?

গ্রহের নাম –

অন্যতম জনপ্রিয় লেখক সত্যজিৎ রায় রচিত ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ থেকে উদ্ধৃত অংশটিতে যে গ্রহটিকে বোঝানো হয়েছে তার নাম টাফা।

টাকা সম্পর্কে বিধুশেখর যা বলে –

শঙ্কুর তৈরি মহাকাশযান টাফায় পৌঁছায়। টাফা গ্রহটি সম্পর্কে প্রফেসার শঙ্কুর তৈরি রোবট বিধুশেখরের বক্তব্য টাফায় নাকি সৌরজগতের প্রথম সভ্য লোকেরা বাস করে। তাদের সভ্যতাও বহুপ্রাচীন। এই সভ্যতাটির সবাই নাকি বৈজ্ঞানিক এবং তারা বেশ অসুবিধায় আছে। তাই তারা কম বুদ্ধিসম্পন্ন লোক এনে টাফায় বাস করাচ্ছে।

টাফার বাসিন্দা –

রকেট থেকে নামার পর তাদের অভ্যর্থনা দেওয়ার জন্য যারা হাজির হয়েছিল তাদের সঙ্গে মানুষের মিল কমই। অনেকটা অতিকায় পিঁপড়ের মতো জীবগুলির মাথা আর চোখ বড়ো, কিন্তু সেই অনুপাতে হাত-পা যথেষ্ট সরু। শঙ্কু দেখলেন, টাফার প্রাণীদের কোনো ঘরবাড়ি নেই, তারা মাটির ভিতরের গর্তে বসবাস করে।

প্রফেসার শঙ্কুর অভিজ্ঞতা –

তিনি বুঝতে পারেন বিধুশেখর আসলে তাকে মিথ্যা কথা বলেছিল। ঘটনাবিহীন অত্যন্ত সাধারণ গ্রহ টাফা, অধিবাসীরা বাংলা জানে। তাই তিনি একটা পিঁপড়ে সদৃশ জীবকে বলেন – “কই হে, তোমাদের বৈজ্ঞানিক – টৈজ্ঞানিকরা সব কোথায়?” জীবটি বলল – “ও সব বিজ্ঞান টিজ্ঞান দিয়ে আর কী হবে? যেমন আছেন তেমন থাকুন না। আপনার সহজ সরল কথাবার্তা শুনতে আমাদের ভারি ভালো লাগে।” শঙ্কু বুঝতে পারে টাফার প্রাণীরা এতটাই আদিম যে তারাই তাঁর থেকে কিছু আদায় করে নিতে চায়। এই সমস্ত কারণে প্রফেসার শঙ্কু ডায়ারি লেখা বন্ধ করে দেন। প্রফেসার শঙ্কু টাফার প্রাণীদের ওপর এতটাই রেগে যান যে, তাদের ওপর নস্যাস্ত্র প্রয়োগ করেন কিন্তু তারা এতটাই নিম্নস্তরের প্রাণী যে মানুষের মতো হাঁচতেও জানত না। তাই প্রফেসার শঙ্কুর নস্যাস্ত্রে কোনো কাজ হল না।

“তোমরা এর মানে কিছু বুঝতে পারছ কি?” – এ কথা কে, কাদেরকে বলেছেন? তার এ বক্তব্যের কারণ ব্যাখ্যা করো।

যে, যাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে –

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার-সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ গল্পে এ কথা স্বয়ং লেখক বলেছেন, তাঁর পাঠকবর্গের উদ্দেশে।

বক্তব্যের কারণ –

একদা এক দুপুরে যখন পূর্বপরিচিত তারক চাটুজ্জে লেখককে প্রফেসার ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর নামাঙ্কিত ডায়ারি তথা দিনলিপির একটি লাল-মলাটের খাতা দেন, তখনও বুঝতে পারা যায়নি, সেটি কতটা রহস্যময়। পুজোসংখ্যার কাজের চাপে ডায়ারিটি লেখকের বিস্মরণের জগতে চলে যায় আপাতভাবে, পরে সেটি আলমারি থেকে বের করে তিনি অবাক হয়ে যান, কেন-না প্রথম যখন এর পাতায় চোখ রেখেছিলেন, তখন সম্ভবত এর কালির রং ছিল সবুজ, সেদিন দেখলেন লাল। খাতাটা বাড়ি এনে পুনরায় খুলে দেখলেন কালির রং বদলে হয়েছে নীল। আবার দেখতে দেখতেই সেই রং বদলে হয়ে গেল হলদে। লেখকের হাত কেঁপে যাওয়াতে ডায়রি মেঝেতে পড়ে যায় এবং ভুলো কুকুরটা তা দাঁত দিয়ে ছেঁড়ার চেষ্টা করে। ডায়ারিটি কিন্তু অক্ষতই থেকে যায়। লেখক নিজে হাত দিয়ে টেনে দেখলেন সেটি স্থিতিস্থাপক এবং আগুনে দিলেও পোড়ে না। অর্থাৎ রহস্যে মোড়া এ ডায়ারি। লেখক তাই লেখাটা কপি করে নেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল, লেখাটা ছাপা হবার পর কোনো বৈজ্ঞানিককে দিয়ে ডায়ারির কালিটা পরীক্ষা করিয়ে, তারপর সেটিকে জাদুঘরে দিয়ে দেবেন। কিন্তু ডায়ারিটির ক্ষেত্রে সে সুযোগ ঘটেনি। যে ডায়ারির কালি সদা পরিবর্তমান, কাগজ স্থিতিস্থাপক, যা আগুনে পোড়ে না, তা দেখা যায় প্রায় কয়েকশো ভেঁয়ো পিঁপড়েতে উদরসাৎ করে নিয়েছে। ইতিপূর্বে লেখকের মনে হয়েছিল ডায়ারিটি অক্ষয়-অবিনশ্বর। কিন্তু পরে দেখা গেল সেটি ততটাই নশ্বর। এই রহস্যের কোনো কিনারা তাঁর পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। তাই তিনি এ ভারটুকু পাঠকের হাতেই তুলে দিতে চেয়েছেন পরম আস্থা ভরে।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের, ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ -এর কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

কর্ভাস-লেখক পরিচিতি-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – বিষয়সংক্ষেপ

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি-অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি-লেখক পরিচিতি-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি – লেখক পরিচিতি

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি – লেখক পরিচিতি