নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যাকরণ ও নির্মিতি – ধ্বনিপরিবর্তনের কারণ ও পরিবর্তনের বিভিন্ন রীতি

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণের “ব্যাকরণ ও নির্মিতি” থেকে “ধ্বনি, ধ্বনি পরিবর্তন ও সন্ধি” -এর উপবিভাগ “ধ্বনিপরিবর্তনের কারণ ও পরিবর্তনের বিভিন্ন রীতি” নিয়ে আলোচনা করবো। এই অংশ নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

ব্যাকরণ ও নির্মিতি-ধ্বনি, ধ্বনি পরিবর্তন ও সন্ধি-ধ্বনিপরিবর্তনের কারণ ও পরিবর্তনের বিভিন্ন রীতি
Contents Show

ধ্বনিপরিবর্তনের কারণ ও পরিবর্তনের বিভিন্ন রীতি

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান কালপরম্পরায় ভাষার পরিবর্তন, আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে। ভাষাপরিবর্তনের অন্যতম প্রধান দিক ধ্বনিপরিবর্তনের কয়েকটি মূল কারণ ভাষাবিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন। যেমন –

  1. ভৌগোলিক পরিবেশ ও জলবায়ু – প্রকৃতির কোমলতা ও কঠোরতা মানবচরিত্র গঠনে যেমন প্রভাব ফেলে তেমনই প্রভাবিত করে ভাষাকেও। ধ্বনিগঠনে ভৌগোলিক পরিবেশ ও জলবায়ুর আংশিক প্রভাব ধ্বনিপরিবর্তন ঘটায়।
  2. অন্য জাতির ভাষার প্রভাব – অন্য জাতির শাসনে বা সুগভীর প্রভাবে একটি জাতির উচ্চারণরীতি ও ধ্বনি বদলে যায়। পশ্চিমবঙ্গের চলিত বাংলায় তিনপ্রকার শিসধ্বনির (শ্, ষ্, স্) মধ্যে মূলধ্বনি ‘শ্’-ই স্বীকৃত। কিন্তু পূর্ববাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) মধ্যযুগ থেকে মুসলিম শাসনপ্রভাবে ফারসি ভাষার ‘স্’ ব্যবহার করে এবং ‘স্’-কে মূলধ্বনি স্বীকার করে। অন্ত্য ‘অ’ বাংলায় ‘ও’ উচ্চারিত হলেও (বন্ধ > বন্ধো, ছন্দ > ছন্দো) বর্তমানে হিন্দি ভাষার প্রভাবে পদান্তিক যুক্তব্যঞ্জন হসন্ত ব্যঞ্জনরূপে উচ্চারিত হচ্ছে (ধর্মঘট অর্থে বনধ্)।
  3. উচ্চারণের ত্রুটি, আরামপ্রিয়তা, অনবধানতা, বিকৃতি – উচ্চারণে সুবিধা, অন্যমনস্কতা, আরামপ্রিয়তা এবং বিকৃতি শব্দমধ্যস্থ ধ্বনির বদল ঘটায়। য। যেমন – স্কুল> ইস্কুল, গামোছা > গামছা, মুকুট > মুটুক ইত্যাদি।
  4. শোনা ও অনুভবের ত্রুটি – বক্তার শুনতে ভুল হলে বা উচ্চারণের দোষ থাকলেও ধ্বনিপরিবর্তন ঘটে। জার্মান ‘zars’ উচ্চারণটি বাংলা ‘ৎসার্’ এবং বাঙালি গড়পরতা উচ্চারণে তা হয়েছে ‘জার’। তেমনই ‘দণ্ড’ উচ্চারণের দোষে হয়ে যায় ‘ডনডো’।
  5. সন্নিহিত ধ্বনির প্রভাবে – ধ্বনিপরিবর্তনের ওপরের চারটি বাহ্যিক কারণ ছাড়াও আর-একটা অভ্যন্তরীণ কারণ সন্নিহিত ধ্বনির প্রভাব। একই ভাষায় নিজস্ব ধ্বনির প্রভাবে অন্য ধ্বনি বদলে যায় (পদ্ম > পদ্দ, জন্ম > জন্ম ইত্যাদি), লোপ পায়, এমনকি নতুন ধ্বনিও জন্মায়। (বাংলায় ‘অ্যা’-অ্যাখন, অ্যাতো; ‘ড়্’, ‘ঢ়্’ – বড়ো, মূঢ় ইত্যাদি)।

ধ্বনিপরিবর্তনের রীতি কত প্রকার ও কী কী?

ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানীরা চলিত বাংলা ভাষায় ধ্বনি পরিবর্তনের ধারাকে পর্যবেক্ষণ করে প্রধানত চারটি ধারায় বিভক্ত করেছেন –

  1. ধ্বনির আগম,
  2. ধ্বনির লোপ,
  3. ধ্বনির রূপান্তর এবং 
  4. ধ্বনির স্থানান্তর।

ধ্বনির আগম বা ধ্বন্যাগম বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।

উচ্চারণকালে, কোনো শব্দের পূর্বে অনুপস্থিত কোনো ধ্বনির আগমন ঘটলে, তাকে ধ্বন্যাগম বলে। যেমন – স্কুল > ইস্কুল। ‘ই’ ধ্বনিটি শব্দের আদিতে যুক্ত হয়েছে বা বলা যায় ‘ই’ ধ্বনিটির শব্দের আদিতে আগম হয়েছে।

ধ্বন্যাগম কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর ধ্বন্যাগমকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

  1. স্বরাগম,
  2. ব্যঞ্জনাগম।

স্বরাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উচ্চারণকালে, কোনো শব্দে পূর্বে অনুপস্থিত স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে স্বরাগম বলে। উচ্চারণের সুবিধার্থেই স্বরাগম ঘটানো হয়। যেমন – বেঞ্চ > বেঞ্চি।

স্বরাগম কত প্রকার ও কী কী?

স্বরের আগমনের স্থান অনুযায়ী স্বরাগমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

  1. আদি স্বরাগম,
  2. মধ্য স্বরাগম,
  3. অন্ত্য স্বরাগম।

আদি স্বরাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

শব্দের আদি বা শুরুতে যখন স্বরধ্বনির আগমন ঘটে, তখন তাকে আদি স্বরাগম বলা হয়। যেমন – স্টেশন > ইস্টিশন, স্টেবল > আস্তাবল, স্কেল > এস্কেল/ইস্কেল, স্পর্ধা > আস্পর্ধা, স্টেট > এস্টেট, স্টক > ইস্টক ইত্যাদি।

মধ্য স্বরাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

শব্দের মাঝে যখন স্বরধ্বনির আগমন ঘটে, তখন তাকে মধ্য স্বরাগম বলে। যেমন – চাকরি > চাকুরি, ভক্তি > ভকতি, বয়ন > বয়ান, নয়ন > নয়ান ইত্যাদি। মধ্যস্বরাগমের অপর নাম স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ।

স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

মধ্য স্বরাগমের অন্য দুটি নাম স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ। ‘স্বরভক্তি’ শব্দের অর্থ স্বরধ্বনির সাহায্যে ভক্তি বা ভাগ। যুক্তব্যঞ্জনের উচ্চারণ সহজ করার জন্য কোনো শব্দের মধ্যে যুক্তব্যঞ্জন থাকলে একটি স্বরধ্বনি এনে যুক্তব্যঞ্জনটিকে ভাগ করে দেবার রীতিকে স্বরভক্তি বলে। যেমন – ধর্ম (ধ্ + অ + র্ + ম্ + অ) > ধরম (ধ্ + অ + র্ + অ + ম্ + অ)। শব্দমধ্যে স্বরধ্বনির আগমন ঘটে বলে, এর নাম মধ্য স্বরাগম। ‘প্রকর্ষ’ শব্দের অর্থ প্রকৃষ্ট আকর্ষণ। প্রকৃষ্ট আকর্ষণ যে প্রক্রিয়ায় বিগত হয়, তাকে বিপ্রকর্ষ বলে। ‘বিপ্রকর্ষ’ -এর অপর অর্থ ‘দূরত্ব’। স্বরধ্বনি এসে যুক্তব্যাঞ্জনের মাঝে দূরত্ব তৈরি করে বলে এই নাম। অর্থাৎ স্বরভক্তিমাত্রই মধ্য স্বরাগম। কিন্তু মধ্য স্বরাগম হলেই তা স্বরভক্তি নয়।

  • শব্দের আদিতে স্বরভক্তি – প্রথম পরথম, ত্রাস > তরাস, প্রকার > পরকার ইত্যাদি।
  • শব্দের মধ্যে স্বরভক্তি – জন্ম > জনম, কর্ম > করম, গর্ব > গরব, বর্ষ > বরষ ইত্যাদি।
  • শব্দের অন্তে স্বরভক্তি – গার্ড > গরাদ, নর্ম্ > নরম,ভ্রূ > ভুরু ইত্যাদি।

অন্ত্য স্বরাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

শব্দের শেষে যখন স্বরধ্বনির আগমন ঘটে, তখন তাকে অন্ত্য স্বরাগম বলে। সাধারণত শব্দান্তের যুক্ত ব্যঞ্জনে এটি ঘটে। যেমন – দিশ্ > দিশা, ইঞ্চ > ইঞ্চি, কেল্ > কেট্লি, সত্য > সত্যি, ধন্য > ধন্যি, পথ্য > পথ্যি, বাদ্য > বাদ্যি, লিস্ট > লিস্টি ইত্যাদি।

ব্যঞ্জনাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

অসাবধানতা, ত্রুটি বা উচ্চারণের সুবিধার্থে কোনো শব্দে পূর্বে অনুপস্থিত ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন ঘটলে, তাকে ব্যঞ্জনাগম বলে। যেমন – ধনু > ধনুক।

আদি ব্যঞ্জনাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

শব্দের আদি বা শুরুতে যখন ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন ঘটে, তখন তাকে আদি ব্যঞ্জনাগম বলে। শব্দের আদিতে ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন বাংলা ভাষায় বিরল। যেমন – ওঝা > রোজা।

মধ্য ব্যঞ্জনাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

শব্দের মধ্যে যখন ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন ঘটে, তখন তাকে মধ্য ব্যঞ্জনাগম বলে। শব্দের মধ্যে ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন বাংলায় সুপ্রচলিত। যেমন – অম্ল > অম্বল, ডমরু > ডম্বরু ইত্যাদি।

শ্রুতিধ্বনি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

প্রকৃতপক্ষে শব্দমধ্যস্থ ব্যঞ্জনধ্বনিগুলির উচ্চারণকালে ত্রুটি বা অসাবধানতায় বা উচ্চারণ সহজ করার জন্য দুটি ধ্বনির মাঝে একটি ব্যঞ্জনের উচ্চারণে মধ্য ব্যঞ্জনাগম হয়। অতিরিক্ত যে ধ্বনিটি উচ্চারিত হয়ে যায় তাকে শ্রুতিধ্বনি বলে। যেমন – চা + এর = চায়ের। এখানে ‘য়’ আগম বা ‘য়’ শ্রুতি ঘটেছে। নিম্নলিখিত পাঁচ ভাগে শ্রুতিধ্বনি হয়ে থাকে –

  • য় শ্রুতি – মা + এর = মায়ের, লৌহ > নোআ > নোয়া।
  • অন্তঃস্থ-ব – চে + এ = চেয়ে, খে + এ = খেয়ে, যা + আ = 
  • (ওয়) শ্রুতি – যাওয়া।
  • হ শ্রুতি – ভায়োলা viola > বেআলা > বেহালা।
  • দ শ্রুতি – বানর > বান্দর > বাঁদর, জেনারেল > জান্দরেল > জাঁদরেল।
  • ব শ্রুতি – তাম্র > তামা > তাম্ব > তাঁবা (তামা)।

অন্ত্য ব্যঞ্জনাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

শব্দের অন্তে ব্যঞ্জনধ্বনির আগমনকে বলে অন্ত্য ব্যঞ্জনাগম। শব্দান্তে ব্যঞ্জনাগম বাংলা ভাষায় প্রচলিত। যেমন – খোকা > খোকন, সীমা > সীমানা, নানা > নানান ইত্যাদি।

ধ্বনির লোপ বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।

উচ্চারণের সুবিধার্থে, অসাবধানতায় বা ত্রুটির জন্য শব্দমধ্যস্থ এক বা একাধিক ধ্বনি বর্জন করে (উচ্চারণ না করে) শব্দটিকে সহজে উচ্চারণযোগ্য ও সংক্ষিপ্ত করে নেওয়ার পদ্ধতিকে ধ্বনিলোপ বলে। যেমন – অতসী > তিসি।

ধ্বনির লোপ কত প্রকার ও কী কী?

ধ্বনিলোপ দু-ভাবে হতে পারে –

  1. স্বরধ্বনিলোপ,
  2. ব্যঞ্জনধ্বনিলোপ।

স্বরধ্বনিলোপ বা স্বরলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উচ্চারণের সুবিধার্থে, অসাবধানতায় বা উচ্চারণের ত্রুটিতে শব্দের আদি, মধ্য বা অন্ত্য স্বরধ্বনির বিলোপ ঘটলে; তাকে স্বরধ্বনিলোপ বলে। যেমন – গামোছা > গাম্ছা।

স্বরধ্বনিলোপ কত প্রকার ও কী কী?

স্বরধ্বনিলোপ তিন প্রকার। যথা- আদি স্বরলোপ, খ মধ্য স্বরলোপ, এ অন্ত্য স্বরলোপ।

আদি স্বরলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

শব্দের আদি বা শুরুতে স্বরধ্বনির লোপ ঘটে যেক্ষেত্রে, তাকে আদি স্বরলোপ বলে। যেমন – অলাবু > লাউ, অভ্যন্তর > ভিতর, ইউরোপ > য়ুরোপ, উদ্ধার > ধার, উডুম্বর > ডুমুর ইত্যাদি।

মধ্য স্বরলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

শব্দের মধ্যের স্বরধ্বনি লোপ ঘটে যেক্ষেত্রে, তাকে মধ্য স্বরলোপ বলে। যেমন – জানালা > জানলা, সরিষা > সর্ষে, সুবর্ণ > স্বর্ণ, বসতি > বস্তি, ভগিনী > ভগ্নি ইত্যাদি।

অন্ত্য স্বরলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও। 

শব্দের শেষস্থিত স্বরধ্বনিটির যেক্ষেত্রে লোপ হয়, তাকে অন্ত্য স্বরলোপ বলে। যেমন – রাশি > রাশ, সন্ধ্যা > সাঁঝ, রাতি > রাত, দন্ত > দাঁত, বন্যা > বান, লজ্জা > লাজ, সজ্জা > সাজ, আজি > আজ ইত্যাদি।

ব্যঞ্জনলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উচ্চারণের সুবিধার্থে, অসাবধানতায় বা উচ্চারণের ত্রুটিতে শব্দের আদিতে, মাঝে বা শেষে ব্যঞ্জনধ্বনির বিলোপ ঘটলে; তাকে ব্যঞ্জনলোপ বলে। যেমন – ফলাহার > ফলার।

ব্যঞ্জনলোপ কত প্রকার ও কী কী?

ব্যঞ্জনলোপ তিন প্রকার। যথা –

  1. আদি ব্যঞ্জনলোপ,
  2. মধ্য ব্যঞ্জনলোপ,
  3. অন্ত্য ব্যঞ্জনলোপ।

আদি ব্যঞ্জনলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

শব্দের আদিতে বা শুরুতে স্থিত ব্যঞ্জনবর্ণ লোপ পায় যেক্ষেত্রে, তাকে আদি ব্যঞ্জনলোপ বলে। যেমন – স্ফটিক > ফটিক, স্ফোটক > ফোটক ইত্যাদি।

মধ্য ব্যঞ্জনলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

শব্দের মধ্যস্থিত ব্যঞ্জনধ্বনিটি লুপ্ত হলে, তাকে মধ্য ব্যঞ্জনলোপ বলা হয়। যেমন – জঙ্গল > জংলা, তহবিল > তবিল।

অন্ত্য ব্যঞ্জনলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

শব্দের অন্তস্থিত ব্যঞ্জনধ্বনিটি লুপ্ত হলে, তাকে অন্ত্য ব্যঞ্জনলোপ বলে। যেমন – কুটুম্ব > কুটুম, আল্লাহ > আল্লা, পঙ্ক > পাঁক ইত্যাদি।

সমাক্ষর লোপ কী? উদাহরণ দাও।

পাশাপাশি অবস্থিত দুটি সমধ্বনির মধ্যে একটি লোপ পেলে তাকে সমাক্ষর লোপ বলে। শ্বাসাঘাতের জন্য এই বিলোপ হয় বলে একে অন্ত্য ব্যঞ্জনলোপও বলা চলে। যেমন – পাদোদক > পাদোক, মেজদিদি > মেজদি, বউদিদি > বউদি ইত্যাদি।

সমধ্বনি লোপ বা সমবর্ণ লোপ কী?

শব্দের মধ্যে পাশাপাশি দুটি সমবর্ণ, লেখার বানানে লোপ পেলেও যদি উচ্চারণে ঠিক থাকে তাকে সমবর্ণ লোপ বলে। ইংরেজি বানানে একসময় Krishnanagar লেখা হত Krishnagar। কিন্তু লোকে কৃষ্ণনগরই উচ্চারণ করত।

বাংলায় কোন্ ধ্বনির লোপ সবচেয়ে বেশি এবং কেন?

বাংলায় সবচেয়ে দুর্বল ধ্বনি ‘হ্’। তাই বাংলা উচ্চারণে প্রায়শই ‘হ’ ধ্বনির বিলোপ ঘটে। যেমন- সহি সই, বহি > বই, মহিষ > মোষ, দহি > দই, বহিন > বোন, শিয়ালদহ > শিয়ালদা, খড়দহ > খড়দা, মালদহ > মালদা ইত্যাদি।

ধ্বনির রূপান্তর বলতে কী বোঝো?

ধ্বনির আগম বা ধ্বনির লোপের ফলে শব্দের মধ্যে পাশাপাশি থাকা ধ্বনিগুলির কোনো কোনো ক্ষেত্রে বদল ঘটে। এই বদল বা পরিবর্তনকেই ধ্বনির রূপান্তর বলে। বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি উভয়েরই রূপান্তর ঘটে।

ধ্বনির রূপান্তর কটি ভাগে হয় ও কী কী?

ধ্বনির রূপান্তর সাধারণত দু-ভাগে হয়। যথা –

  1. স্বরধ্বনির রূপান্তর,
  2. ব্যঞ্জনধ্বনির রূপান্তর।

স্বরধ্বনির রূপান্তর বলতে কী বোঝো?

শব্দের মধ্যে একাধিক ভিন্ন ভিন্ন স্বরধ্বনি থাকলে একটির প্রভাবে আর-একটি বদলে যেতে পারে। একেই বলে স্বরধ্বনির রূপান্তর।

স্বরধ্বনির রূপান্তরের ভাগগুলি কী কী?

স্বরধ্বনির রূপান্তরের ভাগগুলি হল –

  1. স্বরসংগতি এবং
  2. অভিশ্রুতি।

স্বরসংগতি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দমধ্যস্থ অসম স্বরধ্বনি যখন সম বা প্রায় সম স্বরধ্বনি হয়ে যায়, তখন তাকে স্বরসংগতি বা স্বরের উচ্চতা সাম্য বলে। যেমন – দেশি > দিশি ইত্যাদি।

স্বরসংগতি কত প্রকার ও কী কী?

স্বরসংগতি তিন প্রকার। যথা – প্রগত স্বরসংগতি, পরাগত স্বরসংগতি এবং অন্যোন্য বা পারস্পরিক স্বরসংগতি।

প্রগত স্বরসংগতি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দের পরবর্তী স্বরধ্বনির বদল ঘটলে তাকে প্রগত স্বরসংগতি বলে। যেমন – দিশা > দিশে, ফিতা > ফিতে, শিকা > শিকে, চুলা > চুলো, কুলা > কুলো, মুঠা > মুঠো, দুটি > দুটো, মিথ্যা > মিথ্যে ইত্যাদি।

পরাগত স্বরসংগতি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

পরবর্তী স্বরধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির বদল ঘটলে, তাকে পরাগত স্বরসংগতি বলে। যেমন – শিয়াল > শেয়াল, নিতাই > নেতাই, বেটি > বিটি, ফিরা > ফেরা, উপর > ওপর, ভুলা > ভোলা, তেলি > তিলি ইত্যাদি।

অন্যোন্য স্বরসংগতি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

দুটি পরস্পর স্বরধ্বনি যদি একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সম বা প্রায় সমস্বরধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়, তাকে অন্যোন্য স্বরসংগতি বলে। যেমন – যদু > যোদো, কেনে > কিনি, খোকা > খুকি, খুকু ইত্যাদি। রাঢ়ি উপভাষায় স্বরসংগতির প্রাচুর্য লক্ষ করা যায়।

স্বরসংগতির দ্বিত্ব কী? উদাহরণ দাও।

কোনো কোনো শব্দে দু-বার স্বরসংগতি ঘটে। একে স্বরসংগতির দ্বিত্ব বলে। যেমন – চিরনি > চিরোনি > চিরুনি, হিসাবি > হিসেবি > হিসিবি, পিচকারি > পিচকেরি > পিচকিরি ইত্যাদি।

অভিশ্রুতি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

অপিনিহিতি, স্বরলোপ ও স্বরসংগতির ফলে বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিভিন্ন শব্দ পশ্চিমবঙ্গের কথ্য ভাষায় সংক্ষিপ্ততমরূপ লাভ করে। উচ্চারিত ধ্বনির এই পরিবর্তনকেই অভিশ্রুতি বলে। যেমন – রাখিয়া > রেখে, আজি > আজ ইত্যাদি।

ব্যঞ্জনধ্বনি রূপান্তরের ভাগগুলি কী কী?

ব্যঞ্জনধ্বনি রূপান্তরের ভাগগুলি হল যথাক্রমে-সমীভবন, বিষমীভবন, ঘোষীভবন, অঘোষীভবন, মহাপ্রাণীভবন, অল্পপ্রাণীভবন, মূর্ধন্যীভবন, উষ্মীভবন, নাসিক্যীভবন, স্বতোনাসিক্যীভবন, সকারীভবন, রকারীভবন।

সমীভবন বা ব্যঞ্জনসংগতি কাকে বলে?

শব্দমধ্যে যুক্তব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে উচ্চারণের সুবিধার্থে তাদের সমব্যঞ্জনে রূপান্তরিত করার পদ্ধতিকে ব্যঞ্জনসংগতি বা সমীভবন বা সমীকরণ বলে। যেমন -পদ্ম > পদ্দ।

‘সমীভবন’ নামটি হওয়ার কারণ কী?

উচ্চারণের এই রীতিতে শব্দ মধ্যস্থিত যুগ্ম ব্যঞ্জন সম ব্যঞ্জনে পরিণত হয় বলে এই প্রক্রিয়ার নাম সমীভবন।

সমীভবনের কটি ভাগ ও কী কী?

সমীভবনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –

  1. প্রগত সমীভবন – পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জন পূর্ব বা পূর্ববৎ ব্যঞ্জনে বদলে যায়। যেমন – চন্দন > চন্নন, বিশ্ব > বিশশ, সূত্র > সুত্ত, শুক্তো > শুত্তো, গল্দা > গল্লা, ছদ্ম > ছদ্দ ইত্যাদি।
  2. পরাগত সমীভবন – পরবর্তী ব্যঞ্জনের প্রভাবে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জন পূর্ব বা পূর্ববৎ ব্যঞ্জনে বদলে যায়। যেমন – জন্ম > জন্ম, ধর্ম > ধৰ্ম্ম, কর্ম > কৰ্ম্ম, পাঁচশের > পাঁশশের, দুর্গা > দুগ্‌গা, রাতদিন > রাদ্দিন, দুর্বা > দুব্বা, গল্প > গল্প, তর্ক > তক্ক, বড়ঠাকুর > বটঠাকুর, হরতাল > হত্তাল, পাঁচজন > পাঁজ্জন, সৎজন > সজ্জন ইত্যাদি।
  3. অন্যোন্য বা পারস্পরিক সমীভবন – পাশাপাশি অবস্থিত দুটি অসম ব্যঞ্জন রূপান্তরিত হয়ে এক বা একজাতীয় ব্যঞ্জনে বদলে যায়। যেমন – বৎস > বাচ্চা, মহোৎসব > মোচ্ছব, উৎশ্বাস > উচ্ছ্বাস, মৎস্য > মচ্ছ, বৎসর > বচ্ছর, কুৎসা > কেচ্ছা, সত্য > সাচ্চা ইত্যাদি।

সরলীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

সমীভবনের পর একজাতীয় ব্যঞ্জন দুটির একটাকে লোপ করে উচ্চারণকে আরও সহজ করা হলে, তাকে সরলীভবন বলে। যেমন – কর্ম > কম্ম > কাম, জন্ম > জন্ম > জাম, পূর্ব > পুব্ব > পুব, লক্ষ > লকখ > লাখ ইত্যাদি।

সমীভবনের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রক্রিয়ার নাম কী? এই প্রক্রিয়া আর কোন্ কোন্ নামে পরিচিত?

সমীভবনের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রক্রিয়ার নাম হল বিষমীভবন। এই প্রক্রিয়ার অপর নামগুলি হল – অসমীকরণ বা বিষমবর্ণতা।

বিষমীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

কোনো শব্দে একই ব্যঞ্জনধ্বনি পরপর দু-বার থাকলে আঞ্চলিক উচ্চারণে কোনো একটি ধ্বনি বদলে যায়। এই পরিবর্তনকেই বিষমীভবন বলে। যেমন – লাল > নাল, শরীর > শরীল।

ঘোষীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

কোনো সঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি যখন সঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনিতে পরিণত হয়, তখন তাকে ঘোষীভবন বলে। যেমন – চাকদহ > চাগ্দা।

অঘোষীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনিতে পরিণত হলে, তাকে অঘোষীভবন বলে। যেমন – ছাদ > ছাত।

মহাপ্রাণীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

নিকটস্থ বা সংযুক্ত কোনো মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে যদি কোনো অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি মহাপ্রাণরূপে উচ্চারিত হয়, তবে সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মহাপ্রাণীভবন। যেমন – স্তম্ভ > থাম।

অল্পপ্রাণীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

কোনো মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি যদি অল্পপ্রাণরূপে উচ্চারিত হয়, তবে তাকে অল্পপ্রাণীভবন বলে। যেমন – ভাই > বাই।

মূর্ধন্যীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

‘ঋ’, ‘র্’, ষ্’, এবং ‘ট্’, ‘ঠ্’, ‘ড্’ ইত্যাদি মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে সন্নিকটস্থ কোনো দন্ত্যব্যঞ্জনধ্বনি যদি মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনিতে পরিণত হয়, তবে সেই প্রক্রিয়াকে মূর্ধন্যীভবন বলে। যেমন – বৃদ্ধ > বুড্ঢ়্> বুড়া।

উম্মীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণকালে যদি শ্বাসবায়ু পূর্ণ বাধা না পেয়ে আংশিক বাধা পায়, তবে স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ার নাম হল উষ্মীভবন। যেমন – কালীপূজা > (চট্টগ্রামের উপভাষায় উচ্চারিত হয়) খালী ফুজা।

নাসিক্যীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

কোনো নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি যদি ক্ষীণ হতে হতে ক্রমশ লোপ পায় এবং তার প্রভাবস্বরূপ পূর্ববর্তী স্বরধ্বনিতে একটা অনুনাসিকতা যোগ হয়, তবে সেই প্রক্রিয়াকে নাসিক্যীভবন বলে। যেমন – দন্ত > দাঁত, হংস > হাঁস ইত্যাদি।

স্বতোনাসিক্যীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

শব্দমধ্যে নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি না থাকলেও অনেকসময় শব্দটি নিজে থেকেই অনুনাসিকভাবে উচ্চারিত হয়। এই পরিবর্তনকে স্বতোনাসিক্যীভবন বলে। যেমন – পেচক > পেঁচা, ঝাটা > ঝাঁটা ইত্যাদি।

সকারীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উষ্মীভবনের ফলে যদি খৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি ‘স্’, ‘শ্’ বা ‘জ্’ (z)-তে রূপান্তরিত হয়ে যায়, তবে সেই প্রক্রিয়াকে বলে সকারীভবন। যেমন – খেয়েছে > (পূর্ব বাংলার উচ্চারণে) খাইসে।

রকারীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

‘স্’ (s) ধ্বনিটি অনেকসময় পরিবর্তিত হয়ে প্রথমে সঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি ‘জ্’ (z) এবং পরে ‘র্’ ধ্বনিতে পরিণত হয়। সেই পরিবর্তনকে বলে রকারীভবন। যেমন – পঞ্চদশ > পনেরো।

সম্প্রকর্ষ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উচ্চারণের সুবিধার্থে বা উচ্চারণকে সংক্ষেপ করার জন্য শব্দমধ্যস্থিত স্বরধ্বনির বিলুপ্তি ঘটে যুক্তব্যঞ্জনে পরিণত হয়। এরূপ ধ্বনিপরিবর্তনকে সম্প্রকর্ষ বলে। যেমন – বসতি বস্তি, ভগিনী > ভগ্নী।

ধ্বনিদ্বিত্ব বা ব্যঞ্জনদ্বিত্ব কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

অর্থের গুরুত্ব বেশি বোঝানোর জন্য শব্দের মধ্যে কোনো ধ্বনির দ্বিত্ব করা হলে, তাকে ধ্বনিদ্বিত্ব বলা হয়। যেমন – সক্কাল সক্কাল চলে আসবে। বড় > বড্ড, মুলুক > মুল্লুক, পাকা পাক্কা, একেবারে> এক্কেবারে ইত্যাদি।

ধ্বনিবিকার কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উচ্চারণের সুবিধার্থে বা বিকৃতিতে বা ত্রুটিতে শব্দমধ্যস্থ মূল ধ্বনির বদল ঘটলে, তাকে ধ্বনিবিকার বলে। যেমন – কাক > কাগ, বিনতি > মিনতি, লুচি > নুচি, লেবু > নেবু, কবাট > কপাট ইত্যাদি।

ধ্বনির স্থানান্তর বলতে কী বোঝো? এটি কত প্রকার ও কী কী?

অসতর্কতাবশত বা দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দমধ্যই ধ্বনিগুলি নিজের স্থান বদল করে নেয়। ধ্বনিপরিবর্তনের এই রীতিকে ধ্বনির স্থানান্তর বলে।

ধ্বনির স্থানান্তর দু-ভাবে হয়। যথা –

  1. স্বরধ্বনির স্থানান্তর বা অপিনিহিতি।
  2. ব্যঞ্জনধ্বনির স্থানান্তর বা ধ্বনিবিপর্যয়।

অপিনিহিতি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

কোনো শব্দের দ্বিতীয় অক্ষরের ব্যঞ্জনের পর ‘ই’, ‘উ’ ধ্বনি থাকলে, ‘ই’ বা ‘উ’ ধ্বনিটিকে নির্দিষ্ট স্থানের পূর্বে উচ্চারণ করার রীতিকে অপিনিহিতি বলে। যেমন – করিয়া > কইর‍্যা, গাছুয়া > গাউছুয়া।

অপিনিহিতি কত প্রকার ও কী কী?

অপিনিহিতি পাঁচ প্রকার। যথা –

  1. ‘ই’ কারের অপিনিহিতি – আজি > আইজ, কালি > কাইল।
  2. ‘উ’ কারের অপিনিহিতি – সাধু সাউধ, মাছুয়া > মাউছুয়া > মাউছ্যা, গাছুয়া > গাউছুয়া > গাউচ্ছ্যা ইত্যাদি।
  3. ‘য’ ফলার অন্তর্গত ‘ই’ ধ্বনির অপিনিহিতি – সত্য > সইত্ত, বাক্য > বাইক্ক ইত্যাদি।
  4. ‘জ্ঞ’ ধ্বনির অন্তর্গত ‘ই’ ধ্বনির অপনিহিতি – যজ্ঞ > যইগ্‌গ্।
  5. ‘ক্ষ’ ধ্বনির অন্তর্গত ‘ই’ ধ্বনির অপিনিহিতি-চক্ষের > চইক্ষের, লক্ষ > লইকখো ইত্যাদি।

কোন্ কোন্ ধ্বনির অপিনিহিতি বাংলা ভাষায় দেখা যায়?

বাংলা ভাষায় সাধারণত ‘ই’, ‘উ’ ইত্যাদি ধ্বনির অপিনিহিতি দেখা যায়।

কোন্ সময়ের কাব্যে অপিনিহিতির প্রচলন লক্ষ করা যায়?

মধ্যযুগের বাংলা কাব্যে অপিনিহিতির প্রচলন লক্ষ করা যায়।

অপিনিহিতির প্রভাব কোন্ কোন্ বাংলা উপভাষায় দৃষ্ট?

বঙ্গালী উপভাষায় অপিনিহিতির প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি। কামরূপী ও বরেন্দ্রী উপভাষাতেও এর ব্যবহার আছে।

ধ্বনিবিপর্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

দ্রুত উচ্চারণের ফলে বা উচ্চারণের ত্রুটি বা বিকৃতিতে শব্দমধ্যস্থ ধ্বনি পরস্পর স্থান বিনিময় করলে, তাকে ধ্বনিবিপর্যয় বা বিপর্যাস বলে। যেমন – পিশাচ > পিচাশ।

‘বিপর্যাস’ নামকরণের কারণ কী?

‘বিপর্যাস’ শব্দের অর্থ ‘বিনিময়’। এই জাতীয় ক্ষেত্রে ধ্বনিগুলি পরস্পর স্থানবিনিময় করে বলে এমন নাম। যেমন – বাতাসা > বাসাতা ইত্যাদি।

সঠিক উত্তর নির্বাচন করো

ধ্বনিপরিবর্তনের একটি কারণ –

  1. লিখন ক্ষমতার ত্রুটি
  2. অনুকরণ প্রবণতা
  3. সন্নিহিত ধ্বনির প্রভাব
  4. দৃষ্টির ক্ষীণতা

উত্তর – 3. সন্নিহিত ধ্বনির প্রভাব

ধ্বনিপরিবর্তনের ধারাকে ভাগ ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানীরা করেছেন –

  1. দুটি ধারায়
  2. তিনটি ধারায়
  3. চারটি ধারায়
  4. বারোটি ধারায়

উত্তর – 3. চারটি ধারায়

ধ্বন্যাগমের দুটি ভাগ –

  1. স্বরভক্তি ও স্বরাগম
  2. ব্যঞ্জনসংগতি ও ব্যঞ্জনাগম
  3. স্বরাগম ও ব্যঞ্জনাগম
  4. স্বরসংগতি ও ব্যঞ্জনাগম

উত্তর – 3. স্বরাগম ও ব্যঞ্জনাগম

মধ্যস্বরাগমের অন্য দুটি নাম –

  1. স্বরভক্তি ও স্বরাগম
  2. স্বরভক্তি ও সম্প্রকর্ষ
  3. স্বরভক্তি ও বিপ্রকর্ষ
  4. স্বরাগম ও অপিনিহিতি

উত্তর – 3. স্বরভক্তি ও বিপ্রকর্ষ

‘বিপ্রকর্ষ’ শব্দের অপর অর্থ হল –

  1. দূরত্ব
  2. নিকটস্থ
  3. ধ্বনি
  4. স্বর

উত্তর – 1. দূরত্ব

শব্দের তিনটি দিক –

  1. আদি-মধ্য-অন্ত
  2. ঊর্ধ্ব-নিম্ন-মধ্য
  3. নিকট-দূর-সম্মুখ
  4. স্বাভাবিক-বিকৃত-প্রাপ্ত

উত্তর – 1. আদি-মধ্য-অন্ত

শ্রুতিধ্বনি প্রকৃতার্থে –

  1. মধ্য স্বরাগম
  2. মধ্য ব্যঞ্জনাগম
  3. মধ্য স্বরলোপ
  4. মধ্য ব্যঞ্জনলোপ

উত্তর – 2. মধ্য ব্যঞ্জনাগম

স্বরলোপ কত প্রকার? –

  1. এক প্রকার
  2. দুই প্রকার
  3. তিন প্রকার
  4. চার প্রকার

উত্তর – 3. তিন প্রকার

ব্যঞ্জনলোপ কত প্রকার? –

  1. এক প্রকার
  2. দুই প্রকার
  3. তিন প্রকার
  4. চার প্রকার

উত্তর – 3. তিন প্রকার

উচ্চারণকালে পাশাপাশি স্থিত সমধ্বনির একটি লোপ পেলে, তাকে বলে –

  1. সমলোপ
  2. সমধ্বনি লোপ
  3. সমাক্ষরলোপ
  4. সমবর্ণ লোপ

উত্তর – 3. সমাক্ষরলোপ

শব্দের মধ্যে পাশাপাশি দুটি সমবর্ণ লেখার বানানে লোপ পেয়েও উচ্চারণে ঠিক থাকলে তাকে বলে –

  1. স্বরলোপ
  2. ব্যঞ্জনলোপ
  3. সমাক্ষরলোপ
  4. সমধ্বনিলোপ

উত্তর – 4. সমধ্বনিলোপ

স্বরসংগতির অপর নামটি হল –

  1. স্বরের গতিপ্রাপ্তি
  2. স্বরের সমতাপ্রাপ্তি
  3. স্বরের আনুকূল্য
  4. স্বরের উচ্চতাসাম্য

উত্তর – 4. স্বরের উচ্চতাসাম্য

ধ্বনিপরিবর্তনের গতিমুখ অনুসারে স্বরসংগতিকে কটি ভাগে ভাগ করা যায়? –

  1. এক ভাগে
  2. দুই ভাগে
  3. তিন ভাগে
  4. চার ভাগে

উত্তর – 3. তিন ভাগে

‘অভিশ্রুতি’ কোন্ জাতীয় ধ্বনি পরিবর্তনের রীতির অন্তর্গত? –

  1. ধ্বনির আগম
  2. ধ্বনির লোপ
  3. ধ্বনির রূপান্তর
  4. ধ্বনির স্থানান্তর

উত্তর – 3. ধ্বনির রূপান্তর

অভিশ্রুতি –

  1. অনেকগুলি পরিবর্তনের যোগফল
  2. অপিনিহিতির পরবর্তী ভাগ
  3. শব্দ প্রসারের মাধ্যম
  4. অপিনিহিতির অপর নাম

উত্তর – 2. অপিনিহিতির পরবর্তী ভাগ

ব্যাঞ্জনসংগতি –

  1. সমস্থানীয় ব্যঞ্জনের সমতাবিধান
  2. অসমব্যঞ্জনের সমতাবিধান
  3. ব্যঞ্জনের যোগফল
  4. ব্যঞ্জনের বিয়োগ করা

উত্তর – 2. অসমব্যঞ্জনের সমতাবিধান

ব্যঞ্জনসংগতি বা সমীভবন কত প্রকার? –

  1. এক প্রকার
  2. দুই প্রকার
  3. তিন প্রকার
  4. চার প্রকার

উত্তর – 3. তিন প্রকার

কোনো শব্দে একই ব্যঞ্জনধ্বনি পরপর দু-বার থাকলে আঞ্চলিক উচ্চারণে কোনো একটি ধ্বনি বদলে যায়। এই পরিবর্তনকে বলে –

  1. অভিশ্রুতি
  2. স্বরসংগতি
  3. ব্যাঞ্জনসংগতি
  4. বিষমীভবন

উত্তর – 4. বিষমীভবন

অল্পপ্রাণরূপে উচ্চারিত হলে কোনো মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি তাকে বলে –

  1. মহাপ্রাণীভবন
  2. অল্পপ্রাণীভবন
  3. নাসিক্যীভবন
  4. তালব্যীভবন

উত্তর – 2. অল্পপ্রাণীভবন

বর্ণদ্বিত্ব –

  1. অর্থের গুরুত্ব কমায়
  2. অর্থের গুরুত্ব বাড়ায়
  3. অর্থের গুরুত্ব বেশি বোঝাতে ব্যবহৃত
  4. অর্থের গুরুত্ব কম বোঝাতে ব্যবহৃত

উত্তর – 3. অর্থের গুরুত্ব বেশি বোঝাতে ব্যবহৃত

‘অপিনিহিতি’র অর্থ –

  1. ধ্বনিপরিবর্তন
  2. ধ্বনিসাম্য
  3. আগে এসে বসা
  4. পরে চলে যাওয়া

উত্তর – 3. আগে এসে বসা

অপিনিহিতি দেখা যায় –

  1. বঙ্গালি ও বরেন্দ্রী উপভাষায়
  2. বঙ্গালি ও রাঢ়ি উপভাষায়
  3. বঙ্গালি ও ঝাড়খণ্ডি উপভাষায়
  4. রাঢ়ি ও ঝাড়খন্ডি উপভাষায়

উত্তর – 1. বঙ্গালি ও বরেন্দ্রী উপভাষায়

‘বিপর্যয়’ শব্দের অর্থ হল –

  1. বিনিময়
  2. বিরুদ্ধ
  3. বিরূপতা
  4. বিকার

উত্তর – 1. বিনিময়

স্পর্ধা > আস্পর্ধা – এখানে কোন্ জাতীয় ধ্বনিপরিবর্তন ঘটেছে? –

  1. আদি স্বরাগম
  2. মধ্য স্বরাগম
  3. অন্ত্য স্বরাগম
  4. ব্যঞ্জনাগম

উত্তর – 1. আদি স্বরাগম

নয়ন > নয়ান – এখানে কোন্ জাতীয় ধ্বনিপরিবর্তন ঘটেছে? –

  1. আদি স্বরাগম
  2. মধ্য স্বরাগম
  3. অন্ত্য স্বরাগম
  4. ধ্বনিলোপ

উত্তর – 2. মধ্য স্বরাগম

বানর > বান্দর – কোন্ জাতীয় শ্রুতিধ্বনির অন্তর্গত? –

  1. য়-শ্রুতি
  2. ব-শ্রুতি
  3. হ-শ্রুতি
  4. দ-শ্রুতি

উত্তর – 4. দ-শ্রুতি

অলাবু > লাউ – এখানে কোন্ জাতীয় ধ্বনিপরিবর্তন ঘটেছে? –

  1. আদি স্বরলোপ
  2. মধ্য স্বরলোপ
  3. অন্ত্য স্বরলোপ
  4. ধ্বনিবিকার

উত্তর – 1. আদি স্বরলোপ

ফলাহার > ফলার – এটি যে জাতীয় ধ্বনি পরিবর্তনের উদাহরণ –

  1. আদি ব্যাঞ্জনলোপ
  2. আদি স্বরলোপ
  3. মধ্য বঞ্জনলোপ
  4. মধ্য স্বরলোপ

উত্তর – 3. মধ্য বঞ্জনলোপ

যদু > যোদো – কোন্ ধরনের ধ্বনির পরিবর্তনের উদাহরণ? –

  1. প্রগত স্বরসংগতি
  2. পরাগত স্বরসংগতি
  3. অন্যান্য স্বরসংগতি
  4. বিষমীভবন

উত্তর – 3. অন্যান্য স্বরসংগতি

পরাগত সমীভবনের উদাহরণ হল –

  1. চন্দন > চন্নন
  2. গল্প > গপ্প
  3. কুৎসা > কেচ্ছা
  4. বেটি > বিটি

উত্তর – 2. গল্প > গপ্প

শরীর > শরীল – কোন্ জাতীয় ধ্বনিপরিবর্তনের উদাহরণ? –

  1. সমীভবন
  2. বিষমীভবন
  3. ঘোষীভবন
  4. তালব্যীভবন

উত্তর – 2. বিষমীভবন

চাকদহ > চাগদা-র রূপান্তরে ঘটেছে –

  1. ঘোষীভবন
  2. তালব্যীভবন
  3. নাসিক্যীভবন
  4. উষ্মীভবন

উত্তর – 1. ঘোষীভবন

বন্ধ > বাঁধ -এর ক্ষেত্রে ঘটেছে –

  1. মহাপ্রাণীভবন
  2. অল্পপ্রাণীভবন
  3. স্বতোনাসিক্যীভবন
  4. নাসিক্যীভবন

উত্তর – 4. নাসিক্যীভবন

পেচক > প্যাঁচা – এই ক্ষেত্রে ঘটেছে যে জাতীয় পরিবর্তন –

  1. স্বতোনাসিক্যীভবন
  2. নাসিক্যীভবন
  3. তালব্যীভবন
  4. মূর্ধন্যীভবন

উত্তর – 1. স্বতোনাসিক্যীভবন

মূর্ধন্যীভবনের উদাহরণ হল-

  1. চন্দ্র > চাঁদ
  2. সন্ধ্যা > সঞঝা
  3. বৃদ্ধ > বুডঢ্ > বুড়া
  4. খেয়েছে > খাইসে

উত্তর – 3. বৃদ্ধ > বুডঢ্ > বুড়া

খেয়েছে > খাইসে কী জাতীয় পরিবর্তনের উদাহরণ?

  1. সকারীভবন
  2. রকারীভবন
  3. তালব্যভীবন
  4. মূর্ধন্যীভবন

উত্তর – 1. সকারীভবন

ধ্বনিবিকারের উদাহরণ হল –

  1. পাকা > পাক্কা
  2. লুচি > নুচি
  3. পিশাচ > পিচাশ
  4. সাধু > সাউধ

উত্তর – 2. লুচি > নুচি

কালি > কাইল – কোন্ জাতীয় ধ্বনিপরিবর্তনের উদাহরণ? –

  1. অভিশ্রুতি
  2. স্বরসংগতি
  3. অপিনিহিতি
  4. ধ্বনিবিকার

উত্তর – 3. অপিনিহিতি

বাক্য > বাইক্ক – কোন্ জাতীয় ধ্বনিপরিবর্তনের উদাহরণ? –

  1. ধ্বনিবিকার
  2. স্বরসংগতি
  3. অপিনিহিতি
  4. সমীভবন

উত্তর – 3. অপিনিহিতি

বিপর্যাসের উদাহরণ হল –

  1. তলোয়ার > তরোয়াল
  2. বড় > বড্ড।
  3. কবাট > কপাট
  4. যজ্ঞ > যইজ্ঞ

উত্তর – 1. তলোয়ার > তরোয়াল

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

নীচের শব্দগুলিতে ধ্বনিপরিবর্তনের কোন্ কোন্ নিয়ম কাজ করেছে তা নির্ণয় করো।

  • অম্বল – অম্ল > অম্বল (মধ্য ব্যঞ্জনাগম)।
  • অশথ – অশ্বত্থ > অশথ (মধ্য ব্যঞ্জনলোপ)।
  • আস্তাবল – স্টেবল > আস্তাবল (আদি স্বরাগম)।
  • আল্লা – আল্লাহ > আল্লা (অন্ত্য ব্যঞ্জনলোপ)।
  • আইজ – আজি > আইজ (অপিনিহিতি)।
  • আইলপানা – আলিপনা > আইলপনা (অপিনিহিতি)।
  • আঁচল – অঞ্চল > আঁচল (নাসিক্যীভবন)।
  • অ্যাদ্দিন – এতদিন > অ্যাদ্দিন (পরাগত সমীভবন)।
  • ইস্কুল – স্কুল > ইস্কুল (আদি স্বরাগম)।
  • ইস্কুপ – স্ক্রুপ > ইস্ক্রুপ (আদি স্বরাগম)।
  • ইস্ত্রি – স্ত্রী > ইস্ত্রি (আদি স্বরাগম)।
  • ইচ্ছে – ইচ্ছা > ইচ্ছে (প্রগত স্বরসংগতি)।
  • উনান – উনান > উনুন (প্রগত স্বরসংগতি)।
  • কাঁইচি – কাঁচি > কাঁইচি (অপিনিহিতি)।
  • কইলকাতা – কলিকাতা > কইলকাতা (অপিনিহিতি)।
  • কেটলি – কেটল > কেটলি (অন্ত্য স্বরাগম)।
  • কনে – কন্যা > কইন্যা > কনে (অভিশ্রুতি)।
  • কুমোর – কুমার > কুমোর (প্রগত স্বরসংগতি)।
  • গরবিত – গর্বিত > গরবিত (স্বরভক্তি)।
  • গপ্পো – গল্প > গপ্পো (পরাগত সমীভবন)।
  • গাঁইতি – গাঁতি > গাঁইতি (অপিনিহিতি)।
  • গেলাস – গ্লাস > গেলাস (স্বরভক্তি)।
  • গাসতলা – গাছতলা > গাসতলা (সকারীভবন)।
  • চন্নন – চন্দন > চন্নন (প্রগত সমীভবন)।
  • চাকুরি – চাকরি > চাকুরি (মধ্য স্বরাগম)।
  • ছোট্‌কা – ছোটোকাকা > ছোট্‌কা (সমাক্ষরলোপ)।
  • জুতো – জুতা > জুতো (প্রগত স্বরসংগতি)।
  • জেলে – জালুয়া > জাউলুয়া > জেলে (অভিশ্রুতি)।
  • ঠাকুরদা – ঠাকুরদাদা > ঠাকুরদা (সমাক্ষরলোপ)।
  • ডুমুর – উডুম্বর > ডুমুর (আদি স্বরলোপ)।
  • তরোয়াল – তলোয়ার > তরোয়াল (ধ্বনিবিপর্যয়)।
  • তিরিশ – ত্রিশ > তিরিশ (স্বরভক্তি)।
  • তিসি – অতসী > তিসি (আদি স্বরলোপ)।
  • দিশি – দেশি > দিশি (পরাগত স্বরসংগতি)।
  • দরশন – দর্শন > দরশন (স্বরভক্তি)।
  • দহ – হ্রদ > হদ > দহ (ধ্বনিবিপর্যয়)
  • দুগ্গা – দুর্গা > দুগ্‌গা (পরাগত সমীভবন)।
  • ধম্ম – ধর্ম > ধম্ম (পরাগত সমীভবন)।
  • ধুনুচি – ধুনাচি > ধুনুচি (প্রগত স্বরসংগতি)।
  • ধুনো – ধুনা > ধুনো (প্রগত স্বরসংগতি)।
  • নুড়ো – নুড়া > নুড়ো (প্রগত স্বরসংগতি)।
  • পদ্দ – পদ্ম > পদ্দ (প্রগত সমীভবন)।
  • পিচাশ – পিশাচ > পিচাশ (ধ্বনিবিপর্যয়)।
  • পরবাস – প্রবাস > পরবাস (স্বরভক্তি)।
  • পুজো – পূজা > পুজো (অন্যোন্য স্বরসংগতি)।
  • পরান – প্রাণ > পরান (স্বরভক্তি)।
  • পিরিতি – প্রীতি > পিরিতি (স্বরভক্তি)।
  • ফিলিম – ফিল্ম > ফিলিম (স্বরভক্তি)।
  • ফাগুন – ফাল্গুন > ফাগুন (মধ্য ব্যঞ্জনলোপ)।
  • বাসাতা – বাতাসা > বাসাতা (ধ্বনিবিপর্যয়)।
  • বাস্ক – বাক্স > বাস্ক (ধ্বনিবিপর্যয়)।
  • বউদি – বউদিদি > বউদি (সমাক্ষরলোপ)।
  • বড়দা – বড়দাদা > বড়দা (সমাক্ষরলোপ)।
  • বিকেল – বিকাল > বিকেল (প্রগত স্বরসংগতি)।
  • বাদশা – বাদশাহ্ > বাদশা (অন্ত্য ব্যঞ্জনলোপ)।
  • ভুরু – ভ্রূ > ভুরু (স্বরভক্তি)।
  • মেছো – মাছুয়া > মাউছুয়া > মেছো (অভিশ্রুতি)।
  • মালদা – মালদহ > মালদা (অন্ত্য ব্যঞ্জনলোপ)।
  • মুরতি – মূর্তি > মুরতি (স্বরভক্তি)।
  • মিছে – মিছা > মিছে (প্রগত স্বরসংগতি)।
  • মুখখু – মূর্খ > মুখখু (সমীভবন)।
  • মুটুক – মুকুট > মুটুক (ধ্বনিবিপর্যাস)।
  • মোচ্ছব – মহোৎসব > মোচ্ছব (অন্যোন্য সমীভবন)।
  • যতন – যত্ন > যতন (স্বরভক্তি)।
  • রিশকা – রিক্শা > রিশ্কা (ধ্বনিবিপর্যয়)।
  • রেখে – রাখিয়া > রাইখ্যা > রেখে (অভিশ্রুতি)।
  • রতন – রত্ন > রতন (স্বরভক্তি)।
  • রাইত – রাতি > রাইত (অপিনিহিতি)।
  • রাজপুত্তুর – রাজপুত্র > রাজপুত্তুর (স্বরভক্তি)।
  • রুপো – রূপা > রুপো (অন্যোন্য স্বরসংগতি)।
  • লাউ – অলাবু > লাউ (আদি স্বরলোপ)।
  • শেয়াল – শিয়াল > শেয়াল (পরাগত স্বরসংগতি)।
  • শোলোক – শ্লোক > শোলোক (স্বরভক্তি)।
  • সাউথ – সাধু > সাউধ (অপিনিহিতি)।
  • শরীল – শরীর > শরীল (বিষমীভবন)।
  • স্বর্ণ – সুবর্ণ > স্বর্ণ (স্বরলোপ)।
  • লিস্টি – লিস্ট > লিস্টি (অন্ত্য স্বরাগম)।
  • নাউটুয়া – নাটুয়া > নাউটুয়া (অপিনিহিতি)।
  • শাগ – শাক > শাগ (ঘোষীভবন)।
  • নারকেল – নারিকেল > নারকেল (মধ্য স্বরলোপ)।
  • স্বপন – স্বপ্ন > স্বপন (স্বরভক্তি)।
  • আনলা – আলনা > আনলা (অনিবিপর্যয়)।
  • পোথম – প্রথম > পোথম (আদি ব্যঞ্জনলোপ)।
  • পাঁক – পঙ্ক > পাঁক (নাসিক্যীভবন)।
  • সূরয – সূর্য > সূরয (স্বরভক্তি)।
  • গোষ্ঠ – গোষ্ঠ > গোঠ (মধ্য ব্যঞ্জনলোপ)।
  • আউশ – আশু > আউশ (অপিনিহিতি)।
  • মোরগ – মুর্গ > মোরগ (স্বরভক্তি)।
  • শিয়ালদা – শিয়ালদহ > শিয়ালদা (অন্ত্য ব্যঞ্জনলোপ)।
  • এলাচ – এলা > এলাচ (অন্ত্য ব্যঞ্জনাগম)।
  • মুল্লুক – মুলুক > মুল্লুক (ধ্বনিদ্বিত্ব)।
  • জোনাক – জোনাকি > জোনাক (অন্ত্য স্বরলোপ)।

প্রয়োগ ও নির্ণয়মূলক প্রশ্নোত্তর

কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি

1. মেঘে কৈল অন্ধকার।

কৈল = কহিল > কইল > কৈল – অভিশ্রুতি।

2. চারি মেঘে বরিষে মুষল ধারে জল।

বরিষে = বর্ষে > বরিষে – স্বরভক্তি।

3. আছুক শস্যের কার্য হেজ্যা গেল ঘর।

হেজ্যা = হেজিয়া > হেইজ্যা > হেজ্যা – অভিশ্রুতি।

4. ঈশানে উড়িল মেঘ সঘনে চিকুর

চিকুর = চিকুর > চিকুর – মধ্য ব্যঞ্জনলোপ (সমাক্ষর লোপ)।

নোঙর

1. সারারাত মিছে দাঁড় টানি।

মিছে = মিছা > মিছে – প্রগত স্বরসংগতি।
দাঁড় = দণ্ড > দাঁড় – নাসিক্যীভবন।

2. আমার বাণিজ্য-তরী বাঁধা পড়ে আছে।

বাঁধা = বন্ধ > বাঁধা – স্বতোনাসিক্যীভবন।

3. যতই তারার দিকে চেয়ে করি দিকের নিশানা।

চেয়ে = চাহিয়া > চাইয়া > চেয়ে – অভিশ্রুতি।

খেয়া

1. দোঁহা-পানে চেয়ে আছে দুইখানি গ্রাম।

চেয়ে = চাহিয়া > চাইয়্যা > চেয়ে – অভিশ্রুতি।

2. খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে।

করে = করিয়া > কইর‍্যা > করে – অভিশ্রুতি।

3. কেহ আসে ঘর হতে।

আসে = আসিয়া > আইস্যা > আসে – অভিশ্রুতি।

4. নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস।

গড়ে = গড়িয়া > গইড়্যা > গড়ে – অভিশ্রুতি।

5. সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে

ফুটে = ফুটিয়া > ফুইট্যা > ফুটে – অভিশ্রুতি।
টুটে = টুটিয়া > টুইট্যা > টুটে – অভিশ্রুতি।

6. রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে

উঠে = উঠিয়া > উইঠ্যা > উঠে – অভিশ্রুতি।

আকাশে সাতটি তারা

1. কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত।

ঝরে = ঝরিয়া > ঝইর‍্যা > ঝরে – অভিশ্রুতি।

আবহমান

1. লাউ মাচাটার পাশে।

লাউ = অলাবু > লাউ – আদি স্বরলোপ।

2. সারাটা রাত তারায় তারায়।

রাত = রাত্রি > রাতি > রাইত > রাত – অভিশ্রুতি।

3. কিন্তু মুড়য় না।

মুড়য় = মুড়ায় > মুড়য় – স্বরলোপ।

4. নেভে না যন্ত্রণা।

নেভে = নিভে > নেভে – পরাগত স্বরসংগতি।

5. কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে।

গিয়া > গিয়ে – প্রগত স্বরসংগতি।
ফিরে = ফিরিয়া > ফিইর‍্যা > ফিরে – অভিশ্রুতি।

6. তেমনি করেই সূর্য ওঠে।

করে = করিয়া > কইর‍্যা > করে – অভিশ্রুতি।

ভাঙার গান

1. গারদ গুলা জোরসে ধরে হেঁচকা টানে!

গারদ = গার্ড > গারদ – স্বরভক্তি।
ধরে = ধরিয়া > ধইর‍্যা > ধরে – অভিশ্রুতি।

2. কাটাবি কাল বসে কি?

কাল = কালি > কাইল > কাল – অভিশ্রুতি।
বসে = বসিয়া > বইস্যা > বসে – অভিশ্রুতি।

3. ওরে ও পাগলা ভোলা

ভোলা = ভুলা > ভোলা – পরাগত স্বরসংগতি।

আমরা

1. বিফল নহে এ বাঙালি জনম বিফল নহে এ প্রাণ।

জনম = জন্ম > জনম – স্বরভক্তি।

2. বেতালের মুখে প্রশ্ন যে ছিল আমরা নিয়েছি কেড়ে

কেড়ে = কাড়িয়া > কাইড়্যা > কেড়ে – অভিশ্রুতি।

3. জবাব দিয়েছি জগতের আগে ভাবনা ও ভয় ছেড়ে

ছেড়ে = ছাড়িয়া > ছাইড়্যা > ছেড়ে – অভিশ্রুতি।

4. সত্যে প্রণমি থেমেছে মনের অকারণ স্পন্দন।

প্রণমি = প্রণাম > প্রণমি – অন্ত্য স্বরাগম।

5. ভালে কাঞ্চন শৃঙ্গ মুকুট, কিরণে ভুবন আলা

আলা = আলো > আলা – প্রগত স্বরসংগতি।

6. সাগরের হাওয়া নিয়ে নিশ্বাসে গম্ভীরা নিশি কাটে।

নিশি = নিশা > নিশি – প্রগত স্বরসংগতি।

7. কোল-ভরা যার কনক-ধান্য

ধান্য = ধান > ধান্য – অন্ত্য ব্যঞ্জনাগম।

8. সাগর যাহার বন্দনা রচে

রচে = রচিয়া > রইচ্যা > রচে – অভিশ্রুতি।

9. ধেয়ানের ধনে মূর্তি দিয়েছে আমাদের ভাস্কর।

ধেয়ান = ধ্যান > ধেয়ান – স্বরভক্তি।

ইলিয়াস

1. ছোটোটি এমন এক ঝগড়াটে বউ বিয়ে করল যে তারা বাপের আদেশই অমান্য করতে শুরু করল।

করতে = করিতে > করতে – মধ্য স্বরলোপ।

2. ফলে প্রতি বছরই তার অবস্থার উন্নতি হতে লাগল

লাগল = লাগিল > লাগল – মধ্য স্বরলোপ।

3. পর্দা সরিয়ে বুড়ির দিকে তাকাল

তাকাল = তাকাইল > তাকাল – মধ্য স্বরলোপ।

4. ভেড়ি বুঝি ছানাগুলোকে চেপে মেরে ফেলল।

চেপে = চাপিয়া > চাইপ্যা > চেপে – অভিশ্রুতি।
মেরে = মারিয়া > মাইর‍্যা > মেরে – অভিশ্রুতি।

দাম

1. ফলার মত ঝকঝক্ করত চোখ।

ফলার = ফলাহার > ফলার – মধ্যব্যঞ্জনলোপ (হ-লোপ)।

2. দাঁতে দাঁত ঘষে বলছেন।

দাঁত = দন্ত > দাঁত – নাসিক্যীভবন।

নিরুদ্দেশ

1. পয়সাগুলো আমার খোলামকুচি কিনা, তাই নবাবপুত্তর যা খুশি তাই করছে।

নবাবপুত্তুর = নবাবপুত্র > নবাবপুত্তুর – স্বরভক্তি।

2. একটু বকুনি খেয়েছেন বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে এত বড়ো আস্পর্ধা

আস্পর্ধা = স্পর্ধা > আস্পর্ধা – আদি স্বরাগম।

3. ভেবে ভেবে চেহারাটা আজ কী হয়েছে দেখে আয়।

দেখে = দেখিয়া > দেইখ্যা > দেখে – অভিশ্রুতি।

4. বহু বছর আগে এখানকার একটি প্রধান সংবাদপত্রের পাতায় দিনের পর দিন একটি বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে।

বছর = বৎসর > বচ্ছর > বছর – মধ্য ব্যঞ্জনলোপ।

5. শোভন দেশে পৌঁছে সোজাসুজি বাড়ি ঢুকছিল, প্রথম তাকে বাধা দিলেন তাদের পুরানো নায়েব মশাই

মশাই = মহাশয় > মশাই – মধ্য ব্যঞ্জনলোপ।

রাধারাণী

1. খরচা ও ওয়াশিলাত দিতে নগদ যাহা ছিল, তাহাও গেল।

খরচা = খরচ > খরচা – অন্ত্য স্বরাগম।

2. আমি দুঃখি লোকের মেয়ে।

দুঃখি = দুঃখ > দুঃখি – অন্ত্য স্বরাগম।

3. বড় পিছল, তুমি আমার হাত ধর।

পিছল = পিচ্ছিল > পিছল – মধ্য ব্যঞ্জনলোপ।

4. মিষ্ট মিষ্ট কথাগুলি বলিয়া।

মিষ্ট = মিষ্টি > মিষ্ট – অন্ত্য স্বরলোপ।

5. ইহার দাম চারি পয়সা।

চারি = চার > চারি – অন্ত্য স্বরাগম।

6. সে কি আর না জেনে টাকা দিয়েছে।

জেনে = জানিয়া > জাইন্যা > জেনে – অভিশ্রুতি।

7. তা, আচ্ছা ঘরে গিয়ে প্রদীপ জ্বেলে যদি দেখি যে।

জ্বেলে = জ্বালিয়া > জ্বাইল্যা > জেলে – অভিশ্রুতি।

8. আঁচলটা নিঙড়ে পরিব এখন।

আঁচল = অঞ্চল > আঁচল – নাসিক্যীভবন।

9. তিনি কাপড় কিনে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

কিনে = কিনিয়া > কিইন্যা > কিনে – অভিশ্রুতি।

চন্দ্রনাথ

1. টেবিলের উপর টেবিল ল্যাম্পটা অকম্পিত প্রদীপ্ত জ্যোতিতে জ্বলিতেছে।

টেবিল = টেবল্ > টেবিল – মধ্য স্বরাগম।

2. কষে দেখবে।

কষে = কষিয়া > কইষ্যা > কষে – অভিশ্রুতি।

3. আমি বিনিথ মাই ডিগ্নিটি বলে মনে করি।

বলে = বলিয়া > বইল্যা > বলে – অভিশ্রুতি।

4. তর্ক করে ফল নেই।

করে = করিয়া > কইর‍্যা > করে – অভিশ্রুতি।

5. ক্ষমা চেয়ে পত্র লেখো।

চেয়ে = চাহিয়া > চাইয়‍্যা > চেয়ে – অভিশ্রুতি।

6. তোমার বউদি বলত।

বউদি = বউদিদি > বউদি – সমাক্ষর লোপ।

7. হেডমাস্টার মশায়ও ডেকে পাঠিয়েছিলেন।

ডেকে = ডাকিয়া > ডাইক্যা > ডেকে – অভিশ্রুতি।

8. তিনি আবার বলিলেন।

আবার = আরবার > আবার – মধ্য ব্যঞ্জনলোপ।

9. চন্দ্রনাথ কাঁধে লাঠির প্রান্তে পোঁটলা বাঁধিয়া সেই রাত্রেই জনহীন পথে একা চলিয়াছে।

কাঁধ = স্কন্ধ > কাঁধ – আদ্য ব্যঞ্জন স-ধ্বনির লোপ-সহ নাসিক্যীভবন।
বাঁধিয়া = বান্ধিয়া > বাঁধিয়া – নাসিক্যীভবন।
পথ = পন্থ > পথ – ব্যঞ্জন নাসিক্যধ্বনি লোপ।

10. আখড়ার তমাল গাছটার দিকে চাহিলেন।

আখড়ার = আখাড়ার > আখড়ার – মধ্য স্বরধ্বনি লোপ।

11. বিলেতে যেতে হবে তোমাকে।

বিলেত = বিলাতি > বিলাত > বিলেত – প্রগত স্বরসংগতি।

নব নব সৃষ্টি

1. কোনো নূতন চিন্তা, অনুভূতি কিংবা বস্তুর জন্য নবীন শব্দের প্রয়োজন হলে সংস্কৃত ধার করার কথা না ভেবে আপন ভাণ্ডারে অনুসন্ধান করে।

ভেবে = ভাবিয়া > ভাইব্যা > ভেবে – অভিশ্রুতি।

2. ‘আলাল’ ও ‘হুতোম’ -এর ভাষা বিশেষ উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল; সাধারণ বাংলা এ-স্রোতে গা ঢেলে দেবে না বলে তার উল্লেখ এ স্থলে নিষ্প্রয়োজন।

ঢেলে = ঢালিয়া > ঢাইল্যা > ঢেলে – অভিশ্রুতি।

3. অধুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে অনেক ছাত্রছাত্রীকে বাধ্য হয়ে পুরোনো বাংলা পড়াতে হয়।

পুরোনো = পুরানো > পুরোনো – প্রগত স্বরসংগতি।

4. এই পরিস্থিতির সামনে জীবস্মৃত এসব শব্দের একটা নূতন খতেন নিলে ভালো হয়।

খতেন = খতিয়ান > খতেন – স্বরসংগতি এবং ‘য়’ -এর লোপ।

হিমালয় দর্শন

1. যথাসময় যাত্রা করিয়া শিলিগুড়ি স্টেশনে আসিয়া পঁহুছিলাম।

করিয়া = করিয়া > কইর‍্যা > করে – অভিশ্রুতি।

চিঠি

1. শহরের বাইরে কোথাও।

বাইরে = বাহিরে > বাইরে – মধ্য ব্যঞ্জনলোপ।

2. কর্মে প্রবৃত্ত হতে সাহস কর।

হতে = হইতে > হতে – মধ্য স্বরলোপ।

3. কর্মে ঝাঁপ দেবার পূর্বে।

ঝাঁপ = ঝম্প > ঝাঁপ – নাসিক্যীভবন।

4. হাতি কা দাঁত।

হাতি = হস্তী > হাতি – ব্যঞ্জনলোপ।
দাঁত = দন্ত > দাঁত – নাসিক্যীভবন।

ধীবর বৃত্তান্ত

1. এই জেলে যমের বাড়ি গিয়ে আবার ফিরে এল।

ফিরে = ফিরিয়া > ফিইর‍্যা > ফিরে – অভিশ্রুতি।

2. প্রভু, অনুগৃহীত হলাম

হলাম = হইলাম > হলাম – মধ্য স্বরলোপ।

3. রাজা বিহ্বলভাবে চেয়ে রইলেন।

চেয়ে = চাহিয়া > চাইয়্যা > চেয়ে – অভিশ্রুতি।

4. শকুন্তলাকে বিয়ে করে রাজা দুষ্মন্ত রাজধানীতে ফিরে গেছেন।

ফিরে = ফিরিয়া > ফিইর‍্যা > ফিরে – অভিশ্রুতি।

5. আজ আমার সংসার চলবে কীভাবে?

আজ = আজি > আইজ > আজ – অভিশ্রুতি।

6. না হয় কুকুর দিয়ে খাওয়ানো হবে।

কুকুর = কুকুর > কুকুর – মধ্য ব্যঞ্জনলোপ (সমাক্ষর লোপ)।

7. আপনারা অনুগ্রহ করে শুনুন।

করে = করিয়া > কইর‍্যা > করে – অভিশ্রুতি।

8. তোর জীবিকা বেশ পবিত্র বলতে হয় দেখছি।

বলতে = বলিতে > বলতে – মধ্য স্বরলোপ।

9. এরকম বলবেন না।

বলবেন = বলিবেন > বলবেন – মধ্য স্বরলোপ।

10. তবে আংটি পাবার ব্যাপারে যা বলল তা একবার অনুসন্ধান করে দেখতে হবে।

বলল = বলিল > বলল – মধ্য স্বরলোপ।

11. অঞ্জলি দেওয়ার সময় হাত থেকে খুলে পড়ে গেছে শকুন্তলার।

পড়ে = পড়িয়া > পইড়্যা > পড়ে – অভিশ্রুতি।

12. এ যা বলেছে তা সব সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সত্যি = সত্য > সত্যি – অন্ত্যস্বরাগম।

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি

1. এক গাল হেসে হাতের গামছাটা দিয়ে অ্যাসিডটা মুছে ফেলল।

গামছা = গামোছা > গাম্ছা – মধ্য স্বরলোপ।

কর্ভাস

1. দুপুরবেলা সবেমাত্র আমি ইস্কুল থেকে ফিরছি।

ইস্কুল = স্কুল > ইস্কুল – আদি স্বরাগম।

2. রাত এগারোটা।

রাত = রাতি > রাইত > রাত – অভিশ্রুতি।

3. এক অব্যর্থ ঠোকরে ল্যাম্পটা নিবিয়ে দিল।

ঠোকর = ঠোক্কর > ঠোকর – সমাক্ষর লোপ।

স্বর্ণপণী

1. বেড়াল সাধারণত চোদ্দো পনেরো বছর বাঁচে।

বেড়াল = বিড়াল > বেড়াল – পরাগত স্বরসংগতি।

2. দু’মুঠো ভাতের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে।

মুঠো = মুঠি > মুঠো – প্রগত স্বরসংগতি।

3. চাকরি নেবার আড়াই বছর পরে।

চাকরি = চাকুরি > চাকরি – মধ্য স্বরলোপ।
বছর = বৎসর > বচ্ছর > বছর – মধ্য ব্যঞ্জনলোপ।

4. তিন কোশ উত্তরে আছে।

কোশ = ক্রোশ > কোশ – মধ্য ব্যঞ্জনলোপ।

5. সেই ঝরনার পাশে গজায় সোনেপত্তীর গাছ।

ঝরনা = ঝর্না > ঝরনা-স্বরভক্তি।

6. সেটা থলি থেকে বার করে কাজে লেগে গেলাম।

বার = বাহির > বার – মধ্য – ব্যঞ্জনলোপ।

7. প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ।

দরজা = দরোজা > দরজা – মধ্য স্বরলোপ।

8. অবিশ্যি আমার কিছু চেনা ডাক্তার ও বৈজ্ঞানিকদের খবরটা জানিয়ে দেব।

অবিশ্যি = অবশ্য > অবিশ্যি – স্বরাগম।

9. আমি জিজ্ঞেস করলাম।

জিজ্ঞাসা = জিজ্ঞাসা > জিজ্ঞেস – স্বরসংগতি।

10. তার দিকে তাগ করে রিভলবার চালালে।

তাগ = তাক > তাগ – ঘোষীভবন।

11. আজকের মতোই নানান নিয়মকানুন।

নানান = নানা > নানান – অন্ত্য ব্যঞ্জনাগম।

12. গেলাসে জল ঢেলে আমার সামনে এসে দাঁড়াল।

গেলাস = গ্লাস > গেলাস – স্বরভক্তি।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণের “ব্যাকরণ ও নির্মিতি” থেকে “ধ্বনি, ধ্বনি পরিবর্তন ও সন্ধি” -এর উপবিভাগ “ধ্বনিপরিবর্তনের কারণ ও পরিবর্তনের বিভিন্ন রীতি” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই অংশটি নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ব্যাকরণ ও নির্মিতি-ধ্বনি, ধ্বনি পরিবর্তন ও সন্ধি-সন্ধি-নবম শ্রেণী

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যাকরণ ও নির্মিতি – সন্ধি

ব্যাকরণ ও নির্মিতি-ধ্বনি, ধ্বনি পরিবর্তন ও সন্ধি-নবম শ্রেণী

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যাকরণ ও নির্মিতি – ধ্বনি, ধ্বনির প্রকারভেদ

স্বর্ণপণী-রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যাকরণ ও নির্মিতি – সন্ধি

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যাকরণ ও নির্মিতি – ধ্বনিপরিবর্তনের কারণ ও পরিবর্তনের বিভিন্ন রীতি

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যাকরণ ও নির্মিতি – ধ্বনি, ধ্বনির প্রকারভেদ

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর