নবম শ্রেণি বাংলা – চিঠি – বিষয়সংক্ষেপ

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের পঞ্চম পাঠের দ্বিতীয় অধ্যায়, ‘চিঠি’ -এর বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করবো। এখানে প্রাবন্ধিক পরিচিতি, প্রবন্ধের উৎস, প্রবন্ধের পাঠপ্রসঙ্গ, প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ, প্রবন্ধের নামকরণ এবং এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এই আর্টিকেলটি আপনাদের ‘চিঠি’ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেবে এবং প্রবন্ধটি ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এছাড়া, নবম শ্রেণীর পরীক্ষায় এই অধ্যায় থেকে প্রাবন্ধিক পরিচিতি ও প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ সম্পর্কিত প্রশ্ন আসতে পারে, তাই এই তথ্যগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নবম শ্রেণি - বাংলা - চিঠি - বিষয়সংক্ষেপ

‘চিঠি’ প্রবন্ধের লেখক পরিচিতি

স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম –

1863 খ্রিস্টাব্দের 12 জানুয়ারি উত্তর কলকাতার সিমলাপাড়ার বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত, যিনি পরবর্তী সময়ে ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ নামে সমগ্র বিশ্বে পরিচিত হয়েছিলেন। নরেন্দ্রনাথের পিতা বিশ্বনাথ দত্ত হাইকোর্টের প্রতিষ্ঠিত অ্যাটর্নি ছিলেন, আর মাতা ছিলেন ধর্মপ্রাণ ভুবনেশ্বরী দেবী। নরেন্দ্রনাথের ডাকনাম ছিল বিলে।

স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা –

শৈশবে বিলে ছিল দুরন্ত এবং সাহসী। সব বিষয়েই তাঁর ছিল জানার অদম্য কৌতূহল ও একাগ্রতা। অত্যন্ত মেধাবী ও প্রখর বুদ্ধির অধিকারী ছিল বিলে। কৈশোরে মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হন। পরে ভরতি হন ‘জেনারেল এসেমব্লি’তে, বর্তমানে যা স্কটিশচার্চ কলেজ নামে পরিচিত। এখান থেকেই তিনি দর্শন শাস্ত্রে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সংগীতচর্চা, খেলাধুলা বা শরীরচর্চার প্রতিও ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ।

রামকৃষ্ণদেবের সান্নিধ্যলাভ –

যৌবনে নরেন্দ্রনাথের সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের যোগাযোগ ছিল। এমন সময় একদিন প্রতিবেশী সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের বাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হল। দুজনই দুজনকে দর্শন করে অভিভূত হন। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে দক্ষিণেশ্বরে আহ্বান জানান। নরেন্দ্রনাথের মনেও তখন ঈশ্বর জিজ্ঞাসার নানা প্রশ্ন। কোথাও তিনি তৃপ্তি পাচ্ছেন না, তাই আকুল হয়ে খুঁজছেন যথার্থ সত্যের স্বরূপ। তখন তাঁর জীবনে ঘটল রামকৃষ্ণদেবের সান্নিধ্য লাভ। এই সময়ে পিতার আকস্মিক মৃত্যু পরিবারে অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আসে। দক্ষিণেশ্বরে মাতৃমূর্তির কাছে অর্থ সম্পদ কামনা করতে গিয়েও তিনি চাইলেন শ্রদ্ধা, ভক্তি, জ্ঞান।

স্বামী বিবেকানন্দের ভারত পরিভ্রমণ –

1886 খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণদেবের মহাপ্রয়াণ ঘটে। রামকৃষ্ণদেবের আদর্শকে প্রচার করার উদ্দেশ্যে নরেন্দ্রনাথ ও কয়েকজন সহকর্মী সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। সন্ন্যাসজীবনে তাঁর নাম হয় বিবেকানন্দ। শুরু হল তাঁর ভারত পরিক্রমা। হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে তিনি পথে বের হন। পরিচিত হন হিন্দু, মুসলমান, চণ্ডাল, দরিদ্র, অজ্ঞ প্রমুখ সাধারণ জনগণের সঙ্গে। অনুভব করেন নির্যাতিত মানুষের হৃদয়ের যন্ত্রণা। তাঁর অগ্নিগর্ভ ভাষণে ঘুম ভাঙে সুপ্তিময় ভারতবাসীর। ভবিষ্যৎ ভারতের স্বপ্নদ্রষ্টা, ভারতপথিক বিবেকানন্দ শোনান নবজীবনের জাগরণ মন্ত্র – “নতুন ভারত বেরুক লাঙল ধরে, কুটির ভেদ করে, জেলে মালো মুচি মেথরের ঝুপড়ির মধ্যে থেকে, বেরুক মুদির দোকান থেকে, ভুনাওয়ালার উনোনের পাশ থেকে।”

স্বামী বিবেকানন্দের বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে বক্তৃতা প্রদান –

1893 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরে বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলন, কিন্তু কোনো আহ্বানপত্র এল না বিবেকানন্দের কাছে। তবুও ভক্তদের অনুরোধে পাথেয় সংগ্রহ করে আমেরিকায় পাড়ি দিলেন তিনি। ধর্মমহাসভায় অংশগ্রহণের ছাড়পত্র ছিল না তাঁর। তবে কয়েকজন সহৃদয় ব্যক্তির চেষ্টায় তিনি পাঁচ মিনিটের জন্য ধর্মসভায় ভাষণ দেবার সুযোগ পেলেন। বক্তৃতা মঞ্চে উঠে তিনি শ্রোতাদের সম্বোধন করে বলেন – ‘আমেরিকাবাসী ভাই ও বোনেরা’। উচ্ছ্বসিত করতালিতে অভিনন্দিত হয়েছিলেন সেদিন এই নবীন সন্ন্যাসী। ধর্মসভায় তিনি বলিষ্ঠ প্রত্যয়ে ঘোষণা করলেন ভাবীকালের মহামিলনের বার্তা। অভিভূত হয়েছিলেন সমবেত শ্রোতৃমণ্ডলী। তিনি শিষ্যারূপে পেলেন মিস মার্গারেট নোব্‌লকে, যিনি পরবর্তীকালে সকলের সম্মানীয়া ‘ভগিন নিবেদিতা’। 1896 খ্রিস্টাব্দে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন স্বামী বিবেকানন্দ।

স্বামী বিবেকানন্দের সাংগঠনিক কাজ ও সাহিত্যকর্ম –

স্বদেশে ফিরে বিবিধ সাংগঠনিক কাজে তিনি নিজেকে যুক্ত করেন। 1897 খ্রিস্টাব্দে মানবসেবার আদর্শে তিনি স্থাপন করেন ‘রামকৃষ্ণ মিশন’। নিরলস পরিশ্রমে তিনি ‘বেলুড় মঠ’ গড়ে তোলেন 1899 খ্রিস্টাব্দে। 1900 খ্রিস্টাব্দে বিশ্বধর্ম সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে প্যারিস যাত্রা করেন। তাঁর বৈপ্লবিক চিন্তাধারায় মুগ্ধ হয়েছিল বিশ্ববাসী। ইউরোপের বহুস্থান তিনি ভ্রমণ করে বিদেশিদের কাছে হিন্দু ধর্মের আদর্শকে তুলে ধরেন। অজস্র চিঠিপত্র, বিভিন্ন প্রবন্ধ ও ভাষণের মাধ্যমে তিনি তাঁর উদাত্ত বাণী ছড়িয়ে দেন জনমানসে। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ হল – ‘পরিব্রাজক’, ‘ভাববার কথা’, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’, ‘বর্তমান ভারত’ ইত্যাদি। এই সকল প্রবন্ধে রয়েছে তাঁর দেশপ্রেমের উজ্জ্বল ভাবনা, বাংলা ভাষার বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা এবং সমাজচেতনার বিশ্লেষণ। তিনি বাংলা চলিত গদ্য রীতিতে সঞ্চার করেছেন দুরন্ত গতি। শব্দপ্রয়োগে তিনি ছিলেন যেমন দুঃসাহসী, তেমনই তাঁর ভাষা ও রচনা ছিল যুক্তিনিষ্ঠ। সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ ধর্মের আবেগে যুক্তিকে কখনও খাটো করে দেখেননি।

স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যু –

হীনপ্রাণ, দুর্বল ভারতবাসীকে মানবতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করাই ছিল স্বামীজির জীবনসাধনা। বলিষ্ঠ ভারতবর্ষ গঠনই ছিল স্বামীজির স্বপ্ন। তিনি জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন – “আজ থেকে পঞ্চাশ বছর কাল আর কোনো দেবদেবী তোমাদের উপাস্য নয়, উপাস্য শুধু জননী জন্মভূমি এই ভারতবর্ষ।” 1902 খ্রিস্টাব্দের 4 জুলাই মাত্র 39 বছর বয়সে এই মহাতাপসের মহাপ্রয়াণ ঘটে।

‘চিঠি’ প্রবন্ধের উৎস

স্বামী বিবেকানন্দের ‘চিঠি’ রচনাটি ‘উদ্বোধন কার্যালয়’ থেকে প্রকাশিত (পৌষ, 1384 বঙ্গাব্দ) ‘পত্রাবলী’ (4র্থ সংস্করণ) নামক পত্র সংকলন গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে। এটি ‘পত্রাবলী’র 371 সংখ্যক পত্র, প্রকাশক স্বামী মুমুক্ষানন্দ। ‘পত্রাবলী’ (4র্থ সংস্করণ) গ্রন্থের মোট পত্র সংখ্যা 576টি। 12 আগস্ট, 1888 খ্রিস্টাব্দ থেকে 14ই জুন, 1902 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বামীজির নতুন ও পুরাতন পত্র এতে সংকলিত। পত্রগুলির মধ্যে 153টি বাংলায় লেখা, 3টি সংস্কৃতে, 418টি ইংরেজি ও 2টি ফরাসি ভাষায় লিখিত পত্রের অনুবাদ। বিবেকানন্দ 29 জুলাই, 1897 খ্রিস্টাব্দে শৈলশহর আলমোড়া থেকে মিস মার্গারেট ই নোব্‌ল্ অর্থাৎ ভগিনী নিবেদিতাকে আলোচ্য পত্রটি লেখেন।

‘চিঠি’ প্রবন্ধের পাঠপ্রসঙ্গ

সমাজসংস্কারক স্বামী বিবেকানন্দ 6 মে, 1897 খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বাগবাজার নিবাসী শশী ডাক্তারের পরামর্শে হাওয়া পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে শৈলনিবাস আলমোড়ায় যান। 5 মে, 1897 খ্রিস্টাব্দে স্বামী শুদ্ধানন্দকে তিনি একটি পত্রে লেখেন – “আগামীকাল আবার আর একটি শৈলনিবাসে যাচ্ছি, কারণ নিচে এখন বেজায় গরম।”

29 মে, 1897 খ্রিস্টাব্দে তিনি অনেকটাই সুস্থ ও স্বাভাবিক মনে করেছেন নিজেকে, তাই শশী ডাক্তারকে একটি পত্রে লেখেন –

“দার্জিলিং-এ আমার সবসময় মনে হতো আমি যেন কে আর একজন হয়ে গেছি। আর এখানে আমার মনে হয় আমার কোনো ব্যাধি নেই।”

1897 খ্রিস্টাব্দে আলমোড়া থেকে বিবেকানন্দ মেরি হেল, ব্রহ্মানন্দ, রামকৃষ্ণানন্দ, ওলি বুল, শুদ্ধানন্দ, শশী ডাক্তার, অখণ্ডানন্দ প্রমুখের পাশাপাশি তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম এবং অগ্রগণ্য মিস নোব্‌ল্ (মিস মার্গারেট নোব্‌ল্)-কে মোট 4টি চিঠি লেখেন। এ ছাড়া ওই একই বছরে শ্রীনগর ও জম্মু থেকে আরও দুটি এবং 1898 খ্রিস্টাব্দে আলমোড়া থেকে একটি চিঠি লেখেন মিস নোব্‌লকে।

স্থানসাল ও তারিখচিঠি সংখ্যাউদ্দিষ্ট ব্যক্তি
আলমোড়া1897, 3 জুন353মার্গারেট নোব্‌ল্
আলমোড়া1897, 20 জুন357মার্গারেট নোব্‌ল্
আলমোড়া1897, 4 জুলাই361মার্গারেট নোব্‌ল্
আলমোড়া1897, 29 জুলাই371মার্গারেট নোব্‌ল্
শ্রীনগর1897, 1 অক্টোবর386মার্গারেট নোব্‌ল্
জম্মু1897, 3 নভেম্বর394মার্গারেট নোব্‌ল্
আলমোড়া1898, 20 মে414মার্গারেট নোব্‌ল্

ইংরেজভক্ত মি. স্টার্ডির কাছ থেকে প্রাপ্ত পত্রে মিস নোব্‌ল্ -এর ভারতে আসার অভিলাষ ও সংস্কারমূলক মানসিকতার পরিচয় পেয়ে মিস নোব্‌লকে 29 জুলাই, 1897 খ্রিস্টাব্দ আলোচ্য পত্রটি লেখেন বিবেকানন্দ।

‘চিঠি’ প্রবন্ধের বিষয়সংক্ষেপ

1897 খ্রিস্টাব্দের 29 জুলাই শৈলশহর আলমোড়ায় বসে লেখা ‘চিঠি’ রচনায় বিবেকানন্দ মিস নোব্‌ল্ -এর প্রশংসা করেছেন। মি. স্টার্ডির একখানি চিঠিতে বিবেকানন্দ জানতে পেরেছেন যে, মিস মার্গারেট নোবেল তথা নিবেদিতা ভারতে আসতে ও ভারতের সমস্তই চাক্ষুষ দর্শন করতে দৃঢ়সংকল্প। বিবেকানন্দের মতে ভারতের জন্য, ভারতবর্ষের নারীসমাজের জন্য মিস নোবেলের মতো একজন ‘প্রকৃত সিংহীর’ প্রয়োজন। বিবেকানন্দ জানতেন মিস নোব্‌ল্ তাঁর শিক্ষা, ঐকান্তিকতা, পবিত্রতা, অসীম ভালোবাসা, দৃঢ়তা-সর্বোপরি তাঁর ধমনীতে প্রবাহিত কেল্টিক রক্তের জন্য ‘সেই রূপ নারী, যাকে আজ প্রয়োজন।’

কিন্তু ভারতবর্ষের অশিক্ষা, কুসংস্কার, দাসত্বের প্রাবল্য এতখানি যে পদে পদে বাধা উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা-এ কথা তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মিস নোব্‌লকে। শ্বেতাঙ্গরাও মিস নোব্‌লকে খামখেয়ালি মনে করবে। এ ছাড়া এদেশের জলবায়ুও গ্রীষ্মপ্রধান। এসব কিছু জেনেও মিস নোব্‌ল্ যদি কর্মে প্রবৃত্ত হন, তবে বিবেকানন্দ তাঁকে অবশ্যই সাহায্য করবেন।

বিবেকানন্দ তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁর কর্মে তিনি যদি বিফল হন কিংবা কর্মে বিরক্তি আসে, তখন তিনি (বিবেকানন্দ) অবশ্যই তাঁর পাশে থাকবেন। এমনকি ভারতবর্ষের জন্য কাজ যদি তিনি নাও করেন, বেদান্ত ধর্ম ত্যাগ করেন কিংবা ধরে রাখেন; বিবেকানন্দ সর্বদাই তাঁর পাশে থাকবেন – এই তাঁর প্রতিজ্ঞা। তবু মিস নোব্‌ল্ -এর একটু সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার, নিজের পায়ে দাঁড়ানো দরকার। মিস মুলার কিংবা অন্য কারোর আশ্রয় নিলে চলবে না। কারণ মিস মুলারের সঙ্গে নোব্‌ল্ -এর মানিয়ে চলা অসম্ভব।

মিস মুলার চমৎকার মহিলা। তিনি অমায়িক এবং সহৃদয়। তা সত্ত্বেও তাঁর মঠাধ্যক্ষসুলভ সংকল্প যে দুটি কারণে কখনও সফল হবে না, তা হল তাঁর রুক্ষ মেজাজ এবং অদ্ভুত অস্থিরচিত্ততা।

আবার মিসেস সেভিয়ার অত্যন্ত স্নেহময়ী এবং নারীকুলের রত্নবিশেষ। সেভিয়ার দম্পতি ইংরেজ হওয়া সত্ত্বেও এদেশীয়দের ঘৃণা করেন না। স্টার্ডিও সেরকম মনোভাবাপন্ন। তাঁদের কোনো নির্দিষ্ট কার্যপ্রণালী না থাকায় সহকর্মীরূপে মিস নোব্‌ল্ তাঁদের পেতে পারেন, এতে উভয়েরই সুবিধা হবে।

বিবেকানন্দ আমেরিকার সংবাদে জেনেছেন, তাঁর দুই বন্ধু – মিস ম্যাকলাউড ও মিসেস বুল শরৎকালে ভারত ভ্রমণে আসছেন। মিস ম্যাকলাউডের সঙ্গে যে মিস নোব্‌ল্ -এর লন্ডনে সাক্ষাৎ হয়েছে তা মিস নোব্‌লকে জানিয়েছেন বিবেকানন্দ। মিসেস বুলের বয়স প্রায় পঞ্চাশ। বিবেকানন্দের উপদেশে তাঁরা যেহেতু ইউরোপ থেকে এদেশে আসছেন, তাই মিস নোব্‌ল্ তাদের সঙ্গে এলে পথের একঘেয়েমি অনেকটা দূর হবে। স্টার্ডির কাছ থেকে চিঠি পাওয়ায় তিনি খুব সুখী কিন্তু তিনি অনুমান করেছেন, লন্ডনে কাজ পণ্ড হয়ে যাওয়ায় স্টার্ডি হয়তো হতাশ হয়েছেন।

‘চিঠি’ প্রবন্ধের নামকরণ

ভূমিকা –

বিশ্বকবি একদা তাঁর ‘কাব্যের উপেক্ষিতা’ প্রবন্ধে জানিয়েছিলেন, নাম কে যাঁরা নামমাত্র মনে করেন, তিনি তাঁদের দলে পড়েন না। সাহিত্যে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণের মধ্যে বিষয়সত্য আভাসিত হলে সাহিত্য সম্পূর্ণতা লাভ করে। কিন্তু নামকরণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রীতি প্রচলিত নেই। আলংকারিকেরা সাহিত্যের নামকরণকে চরিত্রকেন্দ্রিক, বিষয়কেন্দ্রিক ও ব্যঞ্জনাধর্মী এই ত্রিবিধ সূত্রের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছেন।

উক্ত নামকরণ –

স্বামী বিবেকানন্দের ‘চিঠি’ রচনাটি আদ্যন্তই একটি চিঠি। বিবেকানন্দ এর কোনো নামকরণ করেননি। তাঁর ‘পত্রাবলী’ পত্রসংকলনে সমস্ত পত্রই সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত। আলোচ্য পত্রটি 371 সংখ্যক পত্র, যা তিনি 1898 খ্রিস্টাব্দের 29 জুলাই আলমোড়া থেকে লিখেছেন মিস নোব্‌লকে। সংকলকগণ বিবেকানন্দের এই 371 সংখ্যক পত্রের নামকরণ করেছেন ‘চিঠি’।

পত্ররচনা রীতিতে যে বৈশিষ্ট্য গুলি বজায় থাকে, তা হল –

  • সম্বোধন।
  • উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি সম্ভাষণ করে প্রেরকের উদ্বেগ প্রকাশ।
  • কোন্ অবস্থায় পত্র লেখার প্রয়োজন হয়েছে, তার কারণ ব্যাখ্যা।
  • প্রেরকের বিশেষ আবেদন-আকাঙ্ক্ষা ও অভিলাষ।

সার্থকতা –

আলোচ্য ‘চিঠি’ রচনার প্রারম্ভেই দেখি ‘কল্যাণীয়া মিস নোব্‌ল্’ বলে সম্বোধন, আবার শেষাংশে দেখি ‘ইতি’ লিখে ‘সদা ভগবৎ-পদাশ্রিত, বিবেকানন্দ’ কথাটি ব্যবহার করেছেন পত্র রচনাকার। রচনার ডানদিকে স্থান ও তারিখ লেখা, যা কেবল পত্র রচনা রীতিতেই ব্যবহৃত হয়। মিস নোব্‌ল্ -এর কথা বিবেকানন্দ মি. স্টার্ডির একখানি পত্র থেকেই জেনেছেন, জেনেছেন তাঁর ভারতে আসার আকাঙ্ক্ষা ও ভারতের সবকিছু চাক্ষুষ দেখার ইচ্ছা; যা পত্রপ্রেরক বিবেকানন্দের মনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভারতবর্ষ তখন কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে আছে। তাই এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য বিবেকানন্দ অনুভব করেছেন এক ‘প্রকৃত সিংহীর’ প্রয়োজনীয়তা, যিনি এসে পথের দিশা দেবেন। তবে পদে পদে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তাও বিবেকানন্দ মিস নোব্‌লকে জানিয়েছেন। তিনি আমরণ মিস নোব্‌ল্ -এর পাশে থাকবেন – এই আশ্বাস দিয়েছেন। মিস নোব্‌লকে সাহায্যের প্রসঙ্গে উঠে এসেছে সেভিয়ার দম্পতি, মিস মুলার, মিস ম্যাকলাউড এবং মিসেস বুলের কথা। প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মিস নোব্‌ল্ যাতে ভারতের দুরবস্থা দূর করতে পারেন – তারই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন লেখক। পত্রের শেষে ‘অনন্ত ভালোবাসা জানবে’ – লিখে তিনি পত্র সমাপ্তি ঘটিয়েছেন।

পত্ররচনা রীতির সমস্ত শর্ত পূরণ করেছে বিবেকানন্দের লেখা 371 সংখ্যক পত্রটি। সংকলকগণকৃত ‘চিঠি’ নামকরণটি এই বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে সার্থক ও সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠেছে।


এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের পঞ্চম পাঠের দ্বিতীয় অধ্যায়, ‘চিঠি’ -এর বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করবো। এখানে প্রাবন্ধিকের পরিচিতি, প্রবন্ধের উৎস, প্রবন্ধের পাঠপ্রসঙ্গ, প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ, প্রবন্ধের নামকরণ এবং এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই আর্টিকেলটি আপনাদের ‘চিঠি’ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দিয়েছে এবং প্রবন্ধটি ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এছাড়া, নবম শ্রেণীর পরীক্ষায় এই অধ্যায় থেকে প্রাবন্ধিক পরিচিতি, প্রবন্ধের নামকরণ ও কবিতার সারসংক্ষেপ সম্পর্কিত প্রশ্ন আসতে পারে, তাই এই তথ্যগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Please Share This Article

Related Posts

ভাস্বর বাতি, CFL বাতি ও LED বাতির মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ভাস্বর বাতি, CFL বাতি ও LED বাতির মধ্যে পার্থক্য লেখো।

নবম শ্রেণী ইতিহাস - প্রাককথন: ইউরোপ ও আধুনিক যুগ

নবম শ্রেণী ইতিহাস – প্রাককথন: ইউরোপ ও আধুনিক যুগ

নবম শ্রেণী ইতিহাস - বিপ্লবী আদর্শ,নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ - বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণী ইতিহাস – বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ – বিষয়সংক্ষেপ

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – রচনাধর্মী প্রশ্ন

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – স্তম্ভ মেলাও

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা