নবম শ্রেণি – বাংলা – নিরুদ্দেশ – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Gopi

প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা নিরুদ্দেশ নবম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তকের একটি গুরুত্বপূর্ণ গল্প। এই গল্পে এক যুবকের জীবনের দুঃখ, দুর্দশা ও সংগ্রামকে তুলে ধরা হয়েছে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম নরেশ। সে একজন দরিদ্র যুবক। তার বাবা মারা যাওয়ার পর সে তার মায়ের সাথে থাকে। তার মা একটি ছোট দোকান করে সংসার চালায়। নরেশের পড়াশোনা ভালো। সে কলেজে পড়ে। কিন্তু তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। সে চাকরি খুঁজতে থাকে। কিন্তু চাকরি পাওয়া তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। সে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু কোথাও তার স্থায়ী ঠিকানা হয় না। সে হয়ে ওঠে নিরুদ্দেশ।

Table of Contents

নবম শ্রেণি – বাংলা – নিরুদ্দেশ

নিরুদ্দেশ – এর এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে কিন্তু আমার হাসি পায়। — বক্তা কে? নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনগুলো তার হাসির উদ্রেক করে কেন? 

বক্তা – প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা কথক স্বয়ং।
হাসির উদ্রেকের কারণ – এক বৃষ্টি বিঘ্নিত শীতের দিনে বন্ধু সোমেশের সামনে খবরের কাগজটা ফেলে দিয়ে কথক বলেছিলেন যে, সেদিনের কাগজে একসঙ্গে সাতটা নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই এইসব নিরুদ্দেশ আসলে সাময়িক এবং ফিরে আসাটাই সেখানে অনিবার্য। একটা ঘটনার উল্লেখ করে কথক জানান যে, থিয়েটার দেখে রাত করে বাড়ি ফেরার জন্য ক্রুদ্ধ বাবা রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ছেলেকে বেড়িয়ে যেতে বলেন। ছেলেও তৎক্ষণাৎ বাবার আদেশ পালন করে। এবার মায়ের উপরে বাবার দোষারোপ, মা-এর ছেলের জন্য তাহার নিদ্রা ত্যাগ, বাবার খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিতে যাওয়া—এসব ঘটনা ঘটতে থাকে। এরকম সময়ে ছেলে গোটাকয়েক বই নেওয়ার অজুহাতে বাড়িতে ফিরে আসে। মা-এবার ছেলেকে বাবার শরীরের কথা তুলে বকতে শুরু করেন। আর বাবা তাঁকে নিষেধ করেন। সবকিছুর মধ্যে দিয়ে ছেলেটির ফিরে আসা নিশ্চিত হয় ৷ আর অর্থহীন হয়ে যায় নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন। এ কারণেই কথক বলেছেন যে, নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে তাঁর হাসি পায়।

কতটা রাগ দেখানো উচিত ঠিক করতে না পেরে বলার মাত্রাটা একটু বেশি হয়ে পড়ে। — মন্তব্যটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করো। বলার মাত্রা বেশি হওয়ায় কী ঘটনা ঘটেছিল?

প্রসঙ্গ – প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে খবরের কাগজের নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনসূত্রে কথক একটি ছেলের নিখোঁজ হওয়ার কাহিনি বন্ধু সোমেশকে বলেন। সেই কাহিনিতে ছেলেটি গভীর রাতেও বাড়ি না ফেরায় তার বাবা ছেলেটির মায়ের কাছে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটতে থাকে। তীব্র বিরক্তির সঙ্গে তিনি বলেন, পয়সাগুলো আমার খোলামকুচি কিনা, তাই নবাবপুত্তুর যা খুশি তাই করছেন। বাড়ি ফিরলে ছেলেকে দূর করে দেওয়ার কথাও তিনি জানিয়ে রাখেন। বাবার এই ক্ষোভ মৌখিক আস্ফালনেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারত, কিন্তু তা হয় না, কারণ ঠিক সেই সময়েই ছেলে বাড়ি ঢোকে। এত রাগ প্রকাশের পরে ছেলেকে সামনাসামনি কিছু না বলাটাও হাস্যকর হয়ে যেত — নিজের কাছে মান রাখবার জন্যেও কিছু বলতে হয়। তাৎক্ষণিকভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ছেলেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। এই প্রসঙ্গেই মন্তব্যটি করা হয়েছে।
বলার মাত্রা বেশি হওয়ার প্রভাব – এমন ছেলের আমার দরকার নেই — বেরিয়ে যা। — ভীষণ রেগে গিয়ে বাবা এই কথা বললে অভিমানী ছেলে তখনই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।

এ অশান্তির চেয়ে বনবাস ভালো। বক্তা কেন এ কথা বলেছিলেন? অশান্তি এড়াতে তিনি কী করেছিলেন?

বক্তার এ কথা বলার কারণ – প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে বেশি রাত করে বাড়ি ফেরায় ছেলেকে তার বাবা রেগে গিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। ছেলেও সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে যায়। ছেলের শোকে মা সেই রাত থেকেই খাওয়া ছেড়ে দেন। শীতের সারাটা রাত ছেলে কীভাবে কাটিয়েছে, সে ঝোঁকের বশে কিছু অনর্থ ঘটিয়ে বসবে কি না ইত্যাদি ভেবে মা আকুল হয়ে পড়েন। পরদিন সন্ধ্যাবেলা অফিস থেকে ফিরে বাবা দেখেন যে, ছেলে তখনও ফেরেনি আর তার মা বিছানা নিয়েছেন। এই ঘটনা উদ্বিগ্ন ও পরিশ্রান্ত বাবার কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। তখনই তিনি প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন।
অশান্তি এড়াতে বক্তার কৃতকর্ম – এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বাবা যান খবরের কাগজের অফিসে। সেখানে কাগজের কর্মচারীকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রস্তাব দেন এবং জানান যে, বিজ্ঞাপনে নিরুদ্দিষ্ট ছেলেকে ফিরে আসার অনুরোধ জানানো হবে। কাগজের কর্মচারীর কথামতো ছেলের নাম, পরিচয় ইত্যাদি লিখে দেন তিনি। তাঁর বিনীত অনুরোধ ছিল — একটু ভালো করে লিখে দেবেন। ওর মা কাল থেকে জল গ্রহণ করেনি। এরপর কাগজের কর্মচারীর কথায় আশ্বস্ত হয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন।

ছেলে বিশাল পৃথিবীতে নিরুদ্দেশ যাত্রায় বেরিয়ে পড়ে। — ছেলের নিরুদ্দেশ যাত্রায় বেরিয়ে পড়ার কারণ কী? তার ঘরে ফেরা পর্যন্ত ঘটনার বিবরণ দাও।

নিরুদ্দেশ যাত্রায় বেরিয়ে পড়ার কারণ – প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে খবরের কাগজের নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন দেখে কথক একটি ছেলের নিখোঁজ হওয়ার কাহিনি বন্ধু সোমেশকে বলেন। সেই কাহিনি অনুসারে একটি ছেলে গভীর রাতেও বাড়ি না ফেরায় ছেলেটির বাবা মায়ের কাছে তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রেগে গিয়ে বলেন — পয়সাগুলো আমার খোলামকুচি কিনা, তাই নবাবপুত্তুর যা খুশি তাই করছেন। এইরকম চিৎকার-চ্যাঁচামেচির সময়েই সেখানে ছেলে এসে পৌঁছায়, আর বাবাও রাগপ্রকাশের মাত্রা বজায় রাখতে পারেন না। ছেলেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। অভিমানী ছেলেও সঙ্গে সঙ্গেই সেই আদেশ পালন করতে উদ্যত হয়। ছেলে বেরিয়ে পড়ে নিরুদ্দেশ যাত্রায়।
ঘরে ফেরা পর্যন্ত ঘটনাক্রম – ছেলের নিরুদ্দেশের পর মা সেই রাত থেকেই খাওয়া ছেড়ে দেন। ছেলেকে নিয়ে ভাবনায় তিনি আকুল হয়ে ওঠেন। পরদিন সন্ধ্যাবেলা অফিস থেকে ফিরে বাবা দেখেন যে ছেলে ফেরেনি, আর মা বিছানা নিয়েছেন। পরিশ্রান্ত বাবা এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চলে যান খবরের কাগজের অফিসে। সেখানে নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন দিয়ে বাড়িতে ফিরে এসে দেখেন ছেলে ফিরে এসেছে। তবে পাকাপাকিভাবে থাকার জন্য নয়, কয়েকটি বই নেওয়ার জন্য। এবার কিন্তু বাড়ি ছাড়ার জন্য মা ছেলেকে কুলাঙ্গার বললেও, বাবাই বরং তাকে বকাবকি করতে নিষেধ করেন।

অধিকাংশ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাসই এই। — বিজ্ঞাপনের কোন্ ইতিহাসের কথা এখানে বলা হয়েছে নিজের ভাষায় লেখো।

বিজ্ঞাপনের ইতিহাস – প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে খবরের কাগজে প্রকাশিত নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন দেখে কথক এর পিছনের ঘটনাকে নিজের মতো করে প্রকাশ করতে চেয়েছেন।
একটি ছেলে সম্ভবত থিয়েটার দেখার জন্য মাঝেমধ্যেই বেশি রাত করে বাড়ি ফেরায় তার বাবা ক্ষুব্ধ হন। আগের বছরে ফেল করা ছেলে যে এবারেও পাস করতে পারবে না বাবা তা বুঝতে পারেন। এরকমই একদিন তিনি বাড়িতে রাগারাগি করেন ও ছেলেকে বাড়ি থেকে দূর করে দেওয়ার কথা বলেন। এসময়েই ছেলে বাড়ি ফিরে আসে। রাগ চেপে রাখতে না পেরে ছেলেকে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন এবং ছেলেও তক্ষুনি বেরিয়ে যায়। এই নিয়ে বাবার সঙ্গে চাপান-উতোরের মধ্যেই মা ছেলের শোকে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেন। পরদিন অফিস থেকে ফিরে তাঁকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে বাবা বিব্রত হয়ে পড়েন। তিনি চলে যান খবরের কাগজের অফিসে বিজ্ঞাপন দিতে। কিন্তু বাড়ি ফিরে বাবা দেখেন বিজ্ঞাপন বেরোনোর আগেই ছেলে এসে হাজির হয়েছে। তবে পাকাপাকি থাকার জন্য নয়, কয়েকটা বই নেওয়ার জন্য। এবারে ছেলেকে পেয়ে বাবা ও মা-র ভূমিকা অদ্ভুতভাবে পালটে যায়। মা ছেলেকে সামান্য বকুনির জন্য গৃহত্যাগের কারণে তিরস্কার করেন, তাকে কুলাঙ্গার বলেও সম্বোধন করেন। কিন্তু বাবা তাঁকে বকাবকি করতে নিষেধ করেন। অধিকাংশ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাসই এই বলে কথক মন্তব্য করেছেন।

ফিরে আসারই ভয়ানক একটা ট্র্যাজিডির কথা আমি জানি। — বক্তা কে? তিনি যে ঘটনার কথা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

অথবা, এই বিজ্ঞাপনের পেছনে অনেক সত্যকার ট্র্যাজিডি থাকে। — এই ট্র্যাজিডির পরিচয় দাও।

বক্তা – প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটির বক্তা গল্পকথকের বন্ধু সোমেশ।
ঘটনার বিবরণ – একটি পুরোনো প্রধান খবরের কাগজের পাতায় দিনের পর দিন ধরে প্রকাশিত হয়েছিল একটি নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপনটিতে প্রথমে ছিল ছেলেকে ফিরে আসার জন্য মায়ের কাতর অনুরোধ, তারপরে মায়ের অসুস্থতার খবর জানিয়ে ফিরে আসার আহ্বান। এতে ফল না পাওয়ায় এরপর প্রকাশিত হয় একটি সাধারণ বিজ্ঞপ্তি—যেখানে চেহারা ও বয়সের বর্ণনা দিয়ে সন্ধান দিতে পারলে পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়। শোভন বাড়ি ছেড়েছিল সংসারে তার বিশেষ আকর্ষণ ছিল না বলে। কিন্তু মায়ের শরীর খারাপ জানিয়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেলে তার উদাসীন মন যে-কোনো কারণেই হোক বিচলিত হয়। দু-বছর পরে শোভন বাড়িতে ফিরে আসে। কিন্তু কর্মচারীরা তাকে চিনতে পারে না, বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয়। তাকে এর আগে আসা অন্য দুজনের মতোই প্রতারক বলে ভাবা হয়। তাদের কাছে তখন সোমেশের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছে গেছে, তারা তা বিশ্বাসও করেছে। বৃদ্ধ বাবাও তাকে চিনতে পারেন না। কিন্তু শোভনের জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। বাড়ি চলে যেতে বলেও নায়েবমশাই তার হাতে নোটের তাড়া গুঁজে দিয়ে তাকে বলেন, মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের সামনে শোভনের ভূমিকায় কিছুক্ষণ অভিনয় করার জন্য। ফিরে আসা এভাবে ট্র্যাজিক হয়ে ওঠে শোভনের জন্য।

এত গেল বিজ্ঞাপনের উপাখ্যান। – বিজ্ঞাপনটি কীসের জন্য? এই বিজ্ঞাপনের উপাখ্যানের পরিচয় দাও।

বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য – প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়েছিল নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া পুত্র শোভনকে ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়ে বা তার সন্ধান জানতে চেয়ে।
বিজ্ঞাপনের উপাখ্যান – বহু বছর আগে একটি প্রধান সংবাদপত্রের পাতায় দিনের পর দিন প্রকাশিত হয়েছিল একটি বিজ্ঞাপন। দিনের পর দিন ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞাপনটি পড়ে গেলে একটা সম্পূর্ণ কাহিনি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তখন সেটিকে আর বিজ্ঞাপন মনে হয় না, যেন গল্প হয়ে যায় ৷ প্রথমদিকে তাতে দেখা যায় ছেলের প্রতি ফিরে আসবার জন্য মায়ের কাতর অনুরোধ। ধীরে ধীরে এই কাতর অনুরোধ দীর্ঘশ্বাসে রূপান্তরিত হয় এবং একসময় পিতা’র কণ্ঠস্বর শোনা যায়। বাবা গম্ভীর কিন্তু শান্ত ও ধীর কণ্ঠে শোভনকে ফিরে আসার কথা বলেন এবং তারপর তার মা-র অসুস্থতার কথা জানিয়ে দেন। এরপরেও বিজ্ঞাপন থামে না। বাবার গলার আওয়াজ যেন ক্রমশ ভারী হয়ে আসে এবং জানিয়ে দেওয়া হয় যে, ফিরে না এলে মাকে আর দেখতে পাওয়া যাবে না। কিন্তু শোভন এতেও যখন ফিরল না তখন বৃদ্ধের গলার আওয়াজে শুধু অসহায় কাতরতাই ফুটে উঠল। শেষপর্যন্ত বিজ্ঞাপন হয়ে গেল হাহাকার। তখন শোভনকে উদ্দেশ্য করে আর কিছু লেখা হল না, পরিবর্তে চেহারার বর্ণনা দিয়ে সন্ধান চেয়ে বিজ্ঞপ্তিমাত্র প্রকাশিত হল। থাকল পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি। পুরস্কারের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে লাগল। আচমকা একদিন মায়ের গুরুতর অসুস্থতার কথা জানিয়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হল। এই ছিল বিজ্ঞাপনের উপাখ্যান।

হঠাৎ শোভনের কাছে সমস্ত ব্যাপারটা ভয়ংকরভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠল। — শোভনের কাছে কী স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল? সে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছিল কি?

শোভনের কাছে স্পষ্ট হওয়া বিষয় – প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে কাগজের বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেলে শোভন বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু বাড়িতে ঢুকতে গেলে পুরোনো নায়েবমশাই তাকে বাধা দেন। মা ভালো আছেন কি না বা তাঁর কিছু হয়েছে কি না — এসব প্রশ্নের স্পষ্ট বা স্বচ্ছ উত্তর দেওয়া হয় না তাকে। এমনকি অতিপরিচিত খাজাঞিমশাইয়ের গলার স্বরও কেমন অস্বাভাবিক মনে হয় তার। শোভন জোর করে ভিতরে যেতে চাইলে নায়েবমশাই দরজার সামান্য কাছে এগিয়ে গিয়ে বলেন — মিছিমিছি কেলেংকারি করে লাভ নেই। আর এতেই শোভনের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এই লোকগুলি তাকে বাড়ির নিরুদ্দিষ্ট ছেলে শোভন বলে মেনে নেয়নি।
সমস্যা থেকে মুক্তি, এই সমস্যা থেকে শোভনের মুক্তি ঘটেনি। এর কারণ হল, সাত দিন আগে পাওয়া শোভনের মৃত্যুর খবর তারা বিশ্বাস করে নিয়েছে। শোভনের বৃদ্ধ বাবাও তাকে চিনতে পারেনি। কিন্তু পরিস্থিতি এক দুঃসহ আকার নেয় যখন শোভনকে নোটের তাড়া ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়, তারই বৃদ্ধা মা-র সামনে তাকে শোভনের ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য। সমস্যা থেকে মুক্তির পরিবর্তে ফিরে এসেও এক ট্র্যাজিক চরিত্র হয়ে যায় শোভন।

সকলের দৃষ্টিতে অবিশ্বাস। — কাদের কথা বলা হয়েছে? এই অবিশ্বাসের কারণ আলোচনা করো।

উদ্দিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ – প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পের আলোচ্য অংশে শোভনের বাড়ির নায়েবমশাই ও অন্যান্য কর্মচারীদের কথা বলা হয়েছে।
অবিশ্বাসের কারণ – বছর দুয়েক শোভন নিরুদ্দেশ থাকার পর বাড়িতে ফিরে এলে চেহারা ও মুখশ্রীর বেশ পরিবর্তন হওয়ায় তাকে পুরস্কারপ্রত্যাশীদেরই আর-একজন বলে বাড়ির কর্মচারীরা মনে করে। সেই কারণে বারবাড়িতে তার বসার ব্যবস্থা করা হয়। শোভন জোর করে বাড়ির ভিতরে যেতে চাইলে তাকে স্পষ্টই বলা হয় — মিছিমিছি কেলেংকারি করে লাভ নেই! তাতে ফল হবে না কিছু। এমনকি শোভন তার ছোটোবেলার ফোটো দেখে চিনতে পারলেও তার বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয় না। নায়েবমশাই ছবির সঙ্গে শোভনের কিছু মিল পেলেও তাকে মনে করিয়ে দেন যে, আগে আরও দুজনের সঙ্গে এই মিল ছিল, এমনকি জড়ুল পর্যন্ত। কিন্তু শুধু পুরস্কারপ্রত্যাশীদের ভিড়, আর শোভনের দীর্ঘ অনুপস্থিতিই সবার মনে এই অবিশ্বাসকে তৈরি করেনি, ইতিমধ্যে পাওয়া শোভনের মৃত্যুসংবাদও এই অবিশ্বাসের বড়ো কারণ। খবর এসেছে যে, সাত দিন আগে গাড়ি চাপা পড়ে শোভন মারা গিয়েছে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং হাসপাতালসূত্রে এই ধারণা সমর্থিতও হয়েছে। এই কারণে শোভন বাড়ি ফিরে এলেও কেউ তাকে বিশ্বাস করতে চায়নি।

শোভন এই অবস্থাতে না হেসে পারলে না, – শোভন কে? এখানে কোন্ অবস্থার কথা বলা হয়েছে? শোভন কেন হেসে উঠেছিল?

শোভেনের পরিচয় – নিরুদ্দেশ গল্পে শোভন ছিল একটি প্রাচীন জমিদার বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী, যে নিরুদ্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
উদ্দিষ্ট অবস্থা – দু-বছর পরে ফিরে এসে শোভন নিজের বাড়িতে প্রবেশাধিকার পায় না। তাকে বারবাড়িতে থাকতে বলা হয়। সে ভিতরের দিকে এগোতে চাইলে তার গতি রোধ করে বলা হয় — মিছিমিছি কেলেংকারি করে লাভ নেই। তাকে জানানো হয় শোভন হওয়ার দাবি নিয়ে এর আগে আরও দু-জন এসেছে। এই পরিস্থিতি শোভনকে উদ্‌ভ্রান্ত করে তোলে।
হাসির কারণ – শোভন মা-বাবার কাছে যেতে চাইলে নায়েবমশাই তাকে নিবৃত্ত করার জন্য বলেন যে, শোভন সাত দিন আগেই মারা গিয়েছে। উদ্‌ভ্রান্ত শোভন এই কথা শুনেই হেসে ফেলে। সে নিজে সশরীরে উপস্থিত, আর তাকেই কি না তার মৃত্যুসংবাদ শোনানো হচ্ছে—এই ঘটনা শোভনকে হাসতে বাধ্য করে। কণ্ঠস্বরে বিদ্রুপ মিশিয়ে তাই সে জানতে চায় শোভন কীভাবে মারা গেল।

নায়েবমশাই নোটের তাড়াটা শোভনের হাতে গুঁজে দিলেন। — নায়েমশাই কেন নোটের তাড়া শোভনের হাতে গুঁজে দিয়েছিলেন?

নোট দেওয়ার কারণ – প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে প্রায় দু-বছর শোভন নিরুদ্দেশ থাকার পর বাড়িতে ফিরে এলেও জমিদারির কর্মচারীরা তাকে চিনতে পারেননি। ইতিমধ্যে অবশ্য শোভনের চেহারায় ও মুখশ্রীতে বেশ অনেকটাই পরিবর্তন চলে এসেছিল। তাকে বারবাড়িতে বসতে বলা হয়। ভিতরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। বরং শোভনকে জানানো হয়, এরকম আরও অনেকেই শোভন হওয়ার দাবি নিয়ে সেখানে এসে ঘুরে গেছে, কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হল শোভন সাত দিন আগে গাড়িচাপা পড়ে মারা গেছে। শোভনের দুর্ভাগ্য, তার বৃদ্ধ বাবাও তাকে চিনতে পারেন না। আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া শোভনের চেতনা ফেরে যখন গলার আওয়াজে মিনতি, আর অনেকগুলো টাকার নোট হাতে নিয়ে নায়েবমশাই শোভনকে অনুরোধ করেন যে, তাকে একটা কাজ করতে হবে। সেটি হল শোভনকে বাড়ির মৃতপ্রায় কর্ত্রীর সামনে তাঁর হারানো ছেলে হয়ে একবার দেখা দিতে হবে। কারণ হারানো ছেলের সঙ্গে সত্যিই তার চেহারার মিল আছে। প্রায় মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া মানুষটিকে এই শেষ সান্ত্বনাটুকু দেওয়ার জন্য জমিদার নিজে তাকে অনুরোধ করেছেন। এই ভূমিকা পালনের পারিশ্রমিক হিসেবেই নায়েবমশাই নোটের তাড়াটা শোভনের হাতে গুঁজে দিয়েছিলেন।

সেই জন্যেই গল্প বানানো সহজ হলো। — এই মন্তব্যের আলোয় মূল বিষয়টি আলোচনা করো।

মূল বিষয়ের ব্যাখ্যা – প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে সোমেশকে পাওয়া যায় গল্পকথকের বন্ধু হিসেবে। শীতের দুপুরে বাদলা পরিবেশে কথকের নিরুদ্দেশের কল্পিত কাহিনির পরে সোমেশ একটি নিরুদ্দেশ হওয়া ছেলের ও তার ফিরে আসার ট্র্যাজিক কাহিনি শোনান। সেই গল্পের নায়ক শোভন বাড়ি থেকে নিরুদ্দিষ্ট হলেও বছর দু-এক পরে একসময় ফিরে আসে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পুরোনো নায়েবমশাই কিংবা খাজাঞিবাবু কেউই তাকে শোভন বলে মানতে চান না। তাকে ভাবা হয় সম্পত্তির দাবিদার হিসেবে আসা এক আগন্তুক হিসেবেই। এমনকি শোভনের বাবাও তাকে চিনতে পারেন না। জোর করে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে গেলে তাকে চলে যেতে বলা হয়। তবে সব থেকে মর্মান্তিক হল কাহিনির শেষ দিকে শোভনের হাতে নোটের তাড়া গুঁজে দিয়ে বলা হয় মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের কাছে তাকে শোভন সেজে যেতে হবে। এভাবে শোভনের জীবনে এক ভয়ংকর ট্র্যাজেডি তৈরি হয়। আসল চরিত্র হয়েও তাকে নকল হয়ে যেতে হয়। সোমেশের গল্প শেষ হলে দেখা যায়, কাহিনির শোভনের মতোই সোমেশের কানের কাছেও একটা জঙুল আছে। গল্পটা বানানো সহজ হল বলে সোমেশ ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চাইলেও গল্পকথক বোঝেন, আসলে সে-ই গল্পের শোভন।

নিরুদ্দেশ গল্পটি একটি মানবিক গল্প। এটি আমাদের জীবনের দুঃখ-কষ্ট, অনিশ্চয়তা, এবং স্বপ্নভঙ্গের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই গল্পটি আমাদেরকে জীবনের প্রতি সত্যবাদী হতে এবং কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হতে শেখায়।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer