নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের, ‘কর্ভাস’ -এর কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

কর্ভাস-রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী-বাংলা
Contents Show

‘কর্ভাস’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।

ভূমিকা – সাহিত্যের নামকরণ এক অবশ্যম্ভাবী অঙ্গ, যার মাধ্যমে সাহিত্যিক তাঁর সৃষ্টিকে পাঠকের সামনে নিয়ে আসেন আর পাঠক এই শিরোনামের মাধ্যমে মূল বিষয়ের একটা আভাস পান। খুব সচেতনভাবে সত্যজিৎ রায় তাঁর গল্পের নামকরণ করেছেন ‘কর্ভাস’। এই নামকরণটি চরিত্রকেন্দ্রিক। ‘কর্ভাস’ হল কাক জাতীয় পাখির লাতিন নাম। বস্তুত কর্ভাস তথা একটি সাধারণ কাককে কেন্দ্র করে এই গল্পে উন্মোচিত হয়েছে প্রফেসার শঙ্কুর পক্ষীবিষয়ক কৌতূহল, তাঁর বিদেশযাত্রার কথা, চতুর জাদুকর আর্গাসের ভয়ংকর লোভ ইত্যাদি বিষয়।

বিষয়বস্তু – পাখির বিচিত্র আচার-আচরণ বিজ্ঞানী প্রফেসারকে বরাবর বিস্মিত করত। সেই বিস্ময়ের সন্ধানে তিনি নির্মাণ করেন ‘অরনিথন’ যন্ত্রটি, যার দ্বারা পাখির মস্তিষ্কে মানবের বুদ্ধিবৃত্তির সঞ্চার ঘটানো যায়। তাঁর সেই গবেষণাগারে একটা সাধারণ কাক তথা কর্ভাস এসে সেই খাঁচার মধ্যে ঢুকলে তার প্রশিক্ষণ পর্ব শুরু হয়। শঙ্কু তার উপর মানব বুদ্ধিবৃত্তি সঞ্চার করার চেষ্টা করেন। কর্ভাস সহজেই বাংলা, ইংরেজি ভাষা আর ছোটো ছোটো সংখ্যা শিখে নেয়।

কর্ভাসকেন্দ্রিক গল্প – অধিগত শিক্ষার বিষয়গুলি কর্ভাস নানান অঙ্গভঙ্গি করে জানায়। হাবভাবে সব প্রকাশ করতে পারে। সেই কর্ভাসকে নিয়ে শঙ্কু পাড়ি দেন সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার চিলিতে বিশ্ব পক্ষীসম্মেলনে। তাঁর প্রবন্ধ আর কর্ভাসের বিভঙ্গ সমাগত অতিথিদের মুগ্ধ করে। কর্ভাসে আকৃষ্ট হয়ে বিখ্যাত জাদুকর আর্গাস বহু অর্থের বিনিময়ে সেই কর্ভাসের মালিক হতে চায়। কিন্তু এতকালের এই সম্পর্ক, প্রাণবন্ধু কর্ভাসকে শঙ্কু হারাতে চান না। তখন ধূর্ত লোভী জাদুকর আর্গাস তাকে চুরি করে পালিয়ে যায়। গোয়েন্দাগিরির সফল প্রয়োগে শঙ্কু অবশেষে উদ্ধার করেন কর্ভাসকে। অর্থাৎ সমগ্র গল্পটি কর্ভাসকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, আর তার জন্য শঙ্কুর পক্ষীপ্রীতির চমৎকার নিদর্শন প্রতিষ্ঠা পায়। তাই নামকরণে লাতিন এই শব্দের প্রয়োগে গোয়েন্দা গল্পের অনুষঙ্গে হেঁয়ালি তৈরি হয় বলে গল্পের ‘কর্ভাস’ নামকরণ চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণ হিসেবে সার্থক ও সুপ্রযুক্ত হয়েছে।

‘কর্ভাস’ গল্পটি অবলম্বনে প্রফেসার শঙ্কুর চরিত্রের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা আলোচনা করো।

ভূমিকা – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে তীক্ষ্মবুদ্ধি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার বিচিত্র প্রকাশে শিক্ষিত-রুচিশীল বাঙালি প্রফেসার শঙ্কু চরিত্রটি বেশ জনপ্রিয়। তাঁর চরিত্রের কয়েকটি দিক গল্পকার আলোচ্য গল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

পশুপ্রেম – শঙ্কু ছিলেন প্রকৃত অর্থেই পশুপ্রেমী। তাঁর ল্যাবরেটরিতে বহু সাধারণ পাখির অবাধ যাতায়াত ছিল। তাদের খাদ্য-আশ্রয়-প্রশ্রয়ে কোনো ঘাটতি ছিল না। এই সূত্রে তিনি পেয়েছিলেন কর্ভাসকে। তাছাড়া পোষ্য বিড়াল নিউটনের ওপরও তার সমান নজর ছিল।

অনুসন্ধান প্রবণতা – পক্ষীজগতের বিচিত্র আচরণ অধ্যয়ন করে শঙ্কু অন্য গবেষণার মধ্যেও পাখির মস্তিষ্ক নিয়ে সফল গবেষণা করেন। তার এই কাজের মধ্যে দিয়ে অনুসন্ধানী মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।

উদ্ভাবনী ক্ষমতা – পাখির মস্তিষ্কেও যে মানুষের বোধের সঞ্চালন সম্ভবপর, তা শঙ্কু দেখিয়েছিলেন তাঁর আবিষ্কৃত ‘অরনিথন’ যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। 

তাই বিজ্ঞানী-গবেষক প্রফেসার শঙ্কু তার আশ্চর্য সৃষ্টি নিয়ে বাংলা সাহিত্য ও সমাজে অমর হয়ে আছেন।

সৌজন্যবোধ – বন্ধু গ্রেনফেলের সঙ্গে পত্রালাপে এবং সন্দেহভাজন হলেও হোটেলে প্রথম পরিচয়ে আর্গাসকে আহ্বানে ও বিদায়ে শঙ্কুর সৌজন্যবোধের প্রকাশ ঘটেছে।

পরিমিতিবোধ ও সুবক্তা – কর্ভাসকে নিয়ে বিশ্ব-পক্ষীসম্মেলনে শঙ্কু নির্মেদ প্রবন্ধ পাঠ করেন আর ডিমন্সট্রেশনে তিনি কোনো বাড়তি সময় নেননি। তাঁর বক্তৃতা চলাকালীন উপস্থিত সকলে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন।

মানবিক উদারতা ও নির্লোভ মনোভাব – কর্ভাস ছিল শঙ্কুর বন্ধু-সঙ্গী-সন্তানতুল্য। তাই প্রভাবশালী জাদুকর আর্গাসের দশ হাজার এসকুডোয় অর্থাৎ প্রায় পনেরো হাজার টাকায় কর্ভাসকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাবকে তিনি গুরুত্ব দেননি। সর্বদা কর্ভাসের পাশে থেকেছেন নির্লোভ মন নিয়ে।

আত্মবিশ্বাস এবং দায়িত্বপরায়ণ – শঙ্কু কর্ভাসকে শেষ পর্যন্ত আর্গাসের হাত থেকে উদ্ধার করেছেন। কর্ভাস হারিয়ে যাওয়ায় হতাশ হননি, বিদেশ-বিভুঁই-এ বুদ্ধি আর আত্মবিশ্বাসে ভর করে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্যে তিনি কর্ভাসকে দেওয়া কথা রাখতে পেরেছেন।

‘কর্ভাস’ গল্পটি অবলম্বনে জাদুকর আর্গাসের চরিত্রের বর্ণনা দাও।

ভূমিকা – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, খলনায়ক আর্গাস। এই চরিত্রটি ‘কর্ভাস’ গল্পে কাঙ্ক্ষিত রহস্য-রোমাঞ্চের আবহ তৈরিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

জাদুতে দক্ষতা – বিশ্ব-পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে বিজ্ঞানীদের বিনোদনের জন্য ম্যাজিসিয়ান আর্গাসকে নির্বাচন করাই বলে দেয় ম্যাজিক দেখানোয় সে যথেষ্ট দক্ষ। হাঁস, কাকাতুয়া, পায়রা, মোরগ, সারস-ইত্যাদি পাখি নিয়ে জাদু দেখানোর দক্ষতায় সে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দুই আমেরিকার প্রতিটি শহরের প্রতিটি জাদুপ্রিয় লোকের কাছে তার পরিচিতিই তার দক্ষতার অন্যতম পরিচায়ক।

রহস্যময়তা – প্লাজা থিয়েটারে প্রথম দেখেই আর্গাসকে রহস্যময় মনে হয়েছিল। তার অদ্ভুত চেহারা ও হাবভাব, হাতের বিভিন্ন ভঙ্গিমায় দর্শকদের সম্মোহিত করার ধরন, কর্ভাসকে চুরি করে হোটেল থেকে পালানো এইসব ঘটনায় তাকে বেশ রহস্যপূর্ণ বলেই মনে হয়।

উচ্চাকাঙ্ক্ষী – চিলিয়ান জাদুকর আর্গাস ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষী পুরুষ, যার আসল নাম দ্যেমিনোগো বার্তেলেমে সারমিয়েনতো। যথেষ্ট জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তাঁর ম্যাজিককে আরও চমকপ্রদ করতে সে যেকোনো মূল্যে কর্ভাসকে পেতে চেয়েছে।

অহংকারী – আর্গাসের চরম আত্ম-অহংকার ছিল। প্রফেসার শঙ্কুকে বারবার সে তার বিত্ত-প্রাচুর্যের কথা বলেছে। কোটিপতি আর্গাস বলেছে তার চারটে ক্যাডিলাক গাড়ি, পঞ্চাশ কামরাবিশিষ্ট প্রাসাদ, ছাব্বিশজন চাকর আছে। সারা বিশ্বে ম্যাজিসিয়ান হিসেবে সে যে স্বীকৃতি লাভ করবে তা নিয়ে আগাম নিশ্চিত ছিল আর্গাস।

লোভী এবং জেদি – আকাঙ্ক্ষিত বস্তুটি পাওয়ার লোভ এবং জেদ খুব বেশি পরিমাণে ছিল আর্গাসের। ম্যাজিককে চমকপ্রদ করতে কর্ভাসকে সে পেতে চেয়েছিল- ‘আই ওয়ান্ট দ্যাট ক্লো!’ প্রয়োজনে প্রায় পনেরো হাজার টাকা দিতেও সে রাজি। তার এই লোভ এবং জেদ-ই তাকে শেষপর্যন্ত খলনায়কে পরিণত করেছে।

গ্রেনফেল ও কারেরাস চরিত্রের পরিচয় দাও।

ভূমিকা – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে যে পার্শ্বচরিত্রগুলি কাহিনির মুখ্য উদ্দেশ্য ও অভিযানকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে তাদের মধ্যে কারেরাস ও গ্রেনফেল অন্যতম। বস্তুত চিলির বিশ্ব-পক্ষীসম্মেলনে প্রফেসার শঙ্কুর যোগদান সম্ভব হয়েছে তার বন্ধুবর গ্রেনফেল -এর সক্রিয়তায়।

গ্রেনফেল চরিত্র – মিনেসোটা শহরের পক্ষীবিজ্ঞানী বন্ধু রিউফাস গ্রেনফেল ছিলেন শঙ্কুর বিদেশযাত্রার অন্যতম প্রেরণাদাতা। চিঠিতে বিশ্ব-পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনের নিমন্ত্রণের খবর তিনিই দিয়েছিলেন। তা ছাড়া চিলির রাজধানী শহর সানতিয়াগোতেও তিনি শঙ্কুকে সর্বক্ষণ সঙ্গ দিয়েছেন। আবার আর্গাসের দুর্ধর্ষ পরিকল্পনায় কর্ভাস চুরি হয়ে গেলে, বিপজ্জনক সেই কর্ভাস-উদ্ধারের অভিযানে শেষপর্যন্ত থেকে বন্ধুর প্রতি কর্তব্য নীরবে পালন করে গেছেন।

কারেরাস চরিত্র – অপরদিকে চিলির সানতিয়াগো শহরের সশস্ত্র পুলিশ ছিলেন কারেরাস। শঙ্কুর হোটেল থেকে যখন কর্ভাস নিরুদ্দেশ হল, যখন জানা গেল আর্গাস উধাও হয়ে গেছে কর্ভাসকে নিয়ে; তখন সম্মেলনের চেয়ারম্যান কোভারুবিয়াস -এর ব্যবস্থাপনায় দুজন দুর্ধর্ষ পুলিশ নিয়ে কর্ভাস সন্ধানে শঙ্কু অভিযান করেন। এই দুই সশস্ত্র পুলিশের একজন হলেন কারেরাস। কারেরাসের পুলিশি তৎপরতায় তথ্যসংগ্রহের ক্ষমতা চমৎকার। সে আর্গাসের গতিবিধি, তার গাড়ির বিবরণ সব জানে বলে বহুদূরে ধাওয়া করে অবশেষে ধরে ফেলে আর্গাসকে। মুখোমুখি হয়ে পুলিশি দৃঢ়তায় আর্গাসকে নির্দেশ দেয় বন্দুক ফেলে দিতে। অসম্ভব ক্ষিপ্রতায় নিজের রিভলবার থেকে গুলি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে আর্গাসকে ভয়ার্ত করে দেয়। ফলে কর্ভাসকে উদ্ধার করা সহজ হয়।

এই দুই পার্শ্বচরিত্রের সক্রিয়তায় ‘কর্ভাস’ গল্পে আকর্ষণ ও উত্তেজনা সঞ্চার করতে পেরেছেন গল্পকার সত্যজিৎ রায়।

কর্ভাসের প্রতি শঙ্কুর যে ভালোবাসা গল্পে ফুটে উঠেছে, তা আলোচনা করো।

ভূমিকা – সত্যজিৎ রায়ের কল্পবিজ্ঞাননির্ভর ও বিজ্ঞান-গবেষণামূলক ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এক অনালোকিত দিকের পরিচয় পাওয়া যায়। বস্তুত শঙ্কুর জীবনের এই বিশেষ পর্বে একটি সাধারণ কাক তথা কর্ভাস শুধু তার ছাত্রই নয়; সে তার সন্তানের মতো, তার বন্ধু, তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণার ফসল।

কর্ভাসের প্রতি ভালোবাসা – কর্ভাসের জন্য শঙ্কুর গভীর ভালোবাসার অন্ত ছিল না। শঙ্কুর ল্যাবরেটরিতে ‘কর্ভাসের’ সাধারণ কাক হিসেবে যেমন অবাধ যাতায়াত ছিল, তেমনি ‘অরনিথন’ যন্ত্রের সাহায্যে প্রশিক্ষিত হওয়ার পর সর্বক্ষণ শঙ্কু তাকে এক ভালোবাসার প্রশ্রয়ে রাখতেন। উভয়ের মধ্যে গভীর সখ্য তৈরি হয়েছিল। পরস্পর তারা একে অপরের ওপর দারুণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বিদেশযাত্রার সময় কর্ভাসের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য পরিবর্তনশীল আবহাওয়ায় তার মতো সহনীয় তাপমান নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র নির্মাণ করেন শঙ্কু। খাবার হিসেবে মুখরোচক ভিটামিন বড়ির ব্যবস্থা করেন।

কর্ভাস উদ্ধার – প্রশিক্ষিত কর্ভাসকে শঙ্কুর ঘর থেকে আর্গাস নিয়ে উধাও হলে শঙ্কু আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু এতদিনের সখ্য ও ভালোবাসাই কর্ভাসকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। এভাবেই বিবিধ ঘটনার বাঁকে বাঁকে উঠে এসেছে কর্ভাসের প্রতি প্রফেসার শঙ্কুর অকৃত্রিম ভালোবাসার পরিচয়।

‘অন্য প্রাণীর তুলনায় পাখির ক্ষমতা আরও বেশি আরও বিস্ময়কর’ – এই সত্যের প্রতিষ্ঠায় প্রফেসার শঙ্কু যে কাহিনিগুলি শুনিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

ভূমিকা – আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যে গোয়েন্দাপ্রধান গবেষণাধর্মী রচনাধারায় সত্যজিৎ রায় যথার্থ আধুনিকতা ও তীক্ষ্ণ মেধার বর্ণময় দ্যুতি উপহার দিলেন, লিখলেন ‘কর্ভাস’ -এর মতো গল্পমালা। ‘কর্ডাস’ গল্পে বৌদ্ধিক সেই অনুশীলনের নিবিড় অধ্যবসায় লক্ষ করা গেল, আর সেই অনুষঙ্গে এল ম্যালি-ফাউল ও গ্রিব নামের বিদেশি দুটি পাখির অশ্রুতপূর্ব জীবনাচরণের কথা।

ম্যানি-ফাউল পাখি – ব্যতিক্রমী পাখি অস্ট্রেলিয়ার ম্যালি-ফাউল বালি, মাটি, উদ্ভিজ্জ ইত্যাদি দিয়ে ঢিবি তৈরি করে বাসা বাঁধে মাটির ভিতরে। তারা ডিমে তা না দিয়ে অজ্ঞাতকৌশলে বাসার ভিতর 78° ফারেনহাইট -এর স্থির তাপমাত্রা রেখে দেয়, যার ফলে ডিম থেকে শাবকের জন্ম হয়। মাটির ভিতর বাসা তৈরির অনন্যকৌশল আর বাসার ভিতরে শাবক জন্মানোর উপযুক্ত তাপমান নিয়ন্ত্রণে পাখিটির বিশেষ ক্ষমতা সিনিয়র শঙ্কুকে আশ্চর্যান্বিত করেছে।

গ্রিব পাখি – রহস্য বাড়িয়েছে গ্রিব পাখিটিও। অজ্ঞাত কোনো জৈবিক তাড়নায় তারা “নিজেদের পালক ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় এবং শাবকদের খাওয়ায়।” এই পাখিটির আত্মরক্ষার উপায়টিও চমৎকার। অনন্য উপায়ে শরীরের বায়ু বার করে দিয়ে তারা বাড়িয়ে নেয় স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি। আর তার ফলে প্রয়োজনমতো ডুবে থাকে জলের ভিতর বা আধ-ডোবা অবস্থায় আত্মগোপন করে থাকে। পক্ষীজগতের এমন বিচিত্র আচার-আচরণ পাখি সম্বন্ধে বিজ্ঞানী-গবেষক শঙ্কুর কৌতূহলকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছিল।

এছাড়াও যাযাবর পাখির দিক নির্ণয় ক্ষমতা, ঈগল-বাজপাখির শিকার ক্ষমতা, শকুনের ঘ্রাণশক্তি, অন্যান্য বহু পাখির সংগীত প্রতিভার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শঙ্কু বলেছেন সহজাত ক্ষমতার বাইরে মানুষের জ্ঞান বা বুদ্ধি তার মধ্যে সঞ্চারিত করা যায় কি সে বিষয়ে তিনি সংশয়ান্বিত।

পাখি-পড়ানো যন্ত্র নিয়ে প্রফেসার শঙ্কু কীভাবে কাজ শুরু করেছিল?

‘অরনিথন’ নির্মাণ – বিজ্ঞানী-গবেষক প্রফেসার শঙ্কুর স্বভাবগত উদ্ভাবনী শক্তি ও অনন্য কর্মসক্রিয়তার কথা জানা যায় সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পটিতে। পাখিকে নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার মনে হয়েছে পাখির মস্তিষ্কে মানুষের বোধবুদ্ধি সঞ্চালিত করা সম্ভব আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করতেই তিনি বিশেষ যন্ত্র ‘অরনিথন’ নির্মাণ করেছিলেন।

যন্ত্রের বৈশিষ্ট্য – পাখিদের বিচিত্র প্রতিভায় সম্মোহিত হয়ে শঙ্কু পাখি পড়ানোর যন্ত্রনির্মাণের পরিকল্পনায় মন দেন। সহজসরল প্রযুক্তি প্রয়োগে নির্মিত এ যন্ত্রে দুটি অংশ- একটি খাঁচার মতো, যেখানে থাকবে পাখিটি; আর অন্যটি বৈদ্যুতিক সংযোগসম্পন্ন অংশ- যার মাধ্যমে জ্ঞান-বুদ্ধি চালিত হবে পাখিটির মস্তিষ্কে।

কর্ভাসের আগ্রহ – ল্যাবরেটরির খোলা জানলা দিয়ে ঢোকা পায়রা-ঘুঘু-টিয়া-কাক ইত্যাদি পাখিগুলিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করে শঙ্কু দেখেছেন অন্য পাখিদের চেয়ে সাধারণ একটি কাক তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সে ঠোঁটে পেনসিল নিয়ে টেবিলের ওপর আঁচড় কাটে, আধখোলা দেশলাই থেকে কাঠি বার করে জ্বালতে চেষ্টা করে-আবার ‘অরনিথনের’ প্রস্তুতিও সে বেশ মনোযোগ নিয়ে দেখে। তার শেখবার আগ্রহ শঙ্কুকে যন্ত্রনির্মাণে প্রেরণা দিয়েছে।

কর্ভাস সাধারণ থেকে কীভাবে আসাধারণ হয়ে উঠেছে তা লেখো।

অথবা, ‘কর্ডাস’ গল্পে কর্ভাসের আশ্চর্য প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তার কোন্ পরিচয় পাও?

‘অরনিথন’ আবিষ্কার – আবাল্য পক্ষীপ্রেম থাকলেও বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণার ভিড়ে পাখি নিয়ে চর্চা করা হয়ে ওঠেনি প্রফেসার শঙ্কুর। নিজের বাড়ির পোষা ময়না ও অন্যান্য সাধারণ পাখিদের বিচিত্র ও চমৎকার আচরণ দেখে অবশেষে শঙ্কু পক্ষীগবেষণায় ব্রতী হন। পাখিদের মস্তিষ্কে মানুষের বোধবুদ্ধি সঞ্চারিত করতে তৈরি করে ফেললেন ‘অরনিথন’ নামক যন্ত্র।

কর্ভাসের দক্ষতা – ল্যাবরেটরিতে পৃথক খাঁচা ও বৈদ্যুতিক সংযোগ সমন্বিত প্রকোষ্ঠযুক্ত পাখি পড়ানোর অরনিথন যন্ত্রটি তৈরির সময় খোলা জানলা দিয়ে পায়রা-চড়ুই-টিয়া ইত্যাদির সঙ্গে একটি কাকও ঢুকত। এই কাকটি শেখার আগ্রহ থেকেই সে খাঁচাটির মধ্যে ঢুকে পড়ে। আর শঙ্কু তখন যন্ত্র সক্রিয় করে দিলে চঞ্চল কাকটির রূপান্তর ঘটে যায়। এইভাবে হিউম্যান ইনটেলিজেন্সের অধিকারী হয়ে সে ঠোঁটে পেনসিল নিয়ে নিজের নাম C-O-R-V-U-S লিখে ফেলে, বলে দিতে পারে মাস, তারিখ, বার। বাংলা ভাষায় শিক্ষা শুরু হলেও পরে বিদেশে ডিমনসট্রেশনের জন্য ইংরেজিতেও সে রপ্ত হয়ে ওঠে।

কর্ভাসের উত্তরণ – সানতিয়াগোর পক্ষীবিজ্ঞানী সম্মেলনে প্রশিক্ষিত কর্ভাস তার অধিগত শিক্ষায় সমাগত অতিথিদের স্তম্ভিত করে দেয়, প্রশংসা বের হয় ‘কোরিয়েরে দেল সানতিয়াগো’ নামক দৈনিকে। সুটকেসের চাবির জোগান, পাসপোর্ট-এর কথা স্মরণ করানো, ল্যাম্প নিভিয়ে ধান্দাবাজ আর্গাসকে অসম্মান ও অবজ্ঞা করা, জাপানি বিজ্ঞানী মোরিমোতোর ক্লান্তিকর বক্তৃতায় বিরক্তি প্রকাশ করা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে সত্যই কর্ভাস তার মানবিক গুণের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে বজ্রাঘাতে মৃত কাকের জন্য যখন দল বেঁধে অন্যরা চেঁচামেচি করেছে – কর্ভাস তখন নীরবে নিমগ্নচিত্তে পেনসিল নিয়ে ‘প্রাইমনম্বর’ লিখতে ব্যস্ত থেকেছে। সচেতনভাবেই কর্ভাস স্বজাতি থেকে নিজের স্বাতন্ত্র্য তৈরি করেছে। সত্যজিৎ রায় সাধারণ কর্ভাসের অসাধারণ উত্তরণের চমকপ্রদ কাহিনির বর্ণনা করেছেন এই ‘কর্ভাস’ গল্পে।

‘আমার অরনিথন যন্ত্র আজ তৈরি শেষ হল’ – যন্ত্রটির পরিচয় দাও। এই যন্ত্রটির ব্যবহার কীভাবে শেষ হল?

কর্ভাসের মধ্যে ‘মানবসুলভ বুদ্ধি’ জেগে উঠেছে এমন দুটি ঘটনা উল্লেখ করো।

সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে ‘অরনিথন’ নামক শিক্ষাসহায়ক যন্ত্রের মাধ্যমে দু-সপ্তাহে প্রত্যহ এক ঘণ্টা করে ‘কর্ভাস’ নামক কাকটির নিবিড় শিক্ষা চলে শঙ্কুর তত্ত্বাবধানে। যন্ত্রটির মাধ্যমে কর্ভাসের মস্তিষ্কে মানবের বুদ্ধিকৌশল সঞ্চালিত করা সফল হয়। এর দুটি দৃষ্টান্ত হল –

প্রথম ঘটনা – প্রায় সকল বিষয়ে অতি শীঘ্র ব্যুৎপত্তি অর্জন পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যই নজিরবিহীন। পাখিটি অরনিথন যন্ত্রের প্রশিক্ষণে অঙ্ক, জ্যামিতি, ইতিহাস, ভূগোল, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ইত্যাদি সকল বিষয়ের বিবিধ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। সে প্রশ্নের সমাধান করে দেখায় কয়েকটি শব্দ আর সংখ্যা প্রয়োগের মধ্য দিয়ে।

দ্বিতীয় ঘটনা – আবার দেখা যায়, প্রশিক্ষিত কর্ভাস মানবসুলভ বুদ্ধির বিস্ময়কর সাক্ষ্য রেখেছে শত্রুকে সুটকেসের চাবি দিয়ে সহযোগিতা করার মধ্য দিয়ে। পক্ষীবিজ্ঞানীদের বিশ্বসম্মেলনে যোগদানের জন্য শঙ্কু চিলির রাজধানী-শহর সানতিয়াগোতে চলেছেন। সকালে সবকিছু গুছিয়ে সুটকেস বন্ধ করার জন্য চাবি খুঁজতে গিয়ে শঙ্কু দেখেন কর্ভাস সুটকেসের চাবিটা নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। অর্থাৎ তার মধ্যে যে ‘হিউম্যান ইনটেলিজেনস’ জেগে উঠেছে তা স্পষ্ট।

নভেম্বর দক্ষিণ আমেরিকা যাবার পথে প্লেনে বসে ডায়রিতে লেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

ভূমিকা – বিজ্ঞানের বিষয় ও তার গবেষণা সম্পর্কিত রচনাধারায় সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পটি বাংলা কথাসাহিত্যের অনন্য সম্পদ। এই গল্পে প্রফেসার শঙ্কু বিশ্ব-পক্ষীবিজ্ঞানী সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রশিক্ষিত কর্তাসকে নিয়ে চলেছেন চিলির রাজধানী-শহর সানতিয়াগোতে। 10 নভেম্বর সেই বিদেশযাত্রা বিষয়ে নানান অজানা কথা লিখেছেন তার ‘ডায়রি’-তে।

সম্মেলনে যাত্রা – প্লেনে বসে লেখা থেকে জানা যায়, সম্মেলনের আগেই যাতে কর্ভাসের চমকপ্রদ খবর কেউ না জানতে পারে তার জন্য কর্ভাসকে সাধারণ কাকের মতোই আচরণ করতে দেখা যায়। তা ছাড়া তিনি কর্ভাসের বিশেষত্ব নিয়ে কাউকে কিছু বলেননি। পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার মধ্যে যাত্রা করতে হবে বলে কৃত্রিম উপায়ে কর্ভাসের পক্ষে সহনীয় আবহাওয়াযুক্ত বিশেষ এক খাঁচায় তাকে নিয়ে চলেছেন। সেখানে কাকের পক্ষে পুষ্টিকর ভিটামিন দিয়ে হোমিওপ্যাথিক বড়ির মতো মুখরোচক বড়ি কর্ভাসকে দেওয়া হত।

মজার ঘটনা – কিন্তু বাড়ি থেকে প্রথম বেরোবার সময় এক মজার ঘটনা ঘটেছিল। সে খাঁচা থেকে বার হবার জন্য ছটফট করলে দরজা খুলে দিতেই কর্ভাস উড়ে যায় লেখকের রাইটিং টেবিলে। সেখানে বসে দেরাজে টোকা মারতে থাকলে প্রফেসার শঙ্কু দেখেন তার মধ্যে পাসপোর্ট-টা রয়ে গেছে। চমৎকার এই ঘটনার কথা শঙ্কুর দিনলিপির 10 নভেম্বর তারিখের বিবরণে পাওয়া যায়।

জাদুকর আর্গাসের ম্যাজিক ও চেহারার বর্ণনা শঙ্কু কীভাবে দিয়েছেন আলোচনা করো।

সানতিয়াগোর বিখ্যাত প্লাজা থিয়েটারে চিলিয়ান জাদুকর আর্গাসের ম্যাজিক দর্শনের কথা জানা যায় সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে। সম্মেলনের চেয়ারম্যান কোভারুবিয়াস -এর কাছে পাখি নিয়ে আর্গাসের ম্যাজিকের খবর শুনে বিশেষ আগ্রহেই তা দেখতে যান প্রফেসার শঙ্কু।

ম্যাজিকের বর্ণনা – চিলিয়ান জাদুকর আর্গাসের ম্যাজিকের বিশেষত্ব হল প্রদর্শনীতে পাখির ব্যবহার। ম্যাজিকে তিনি নানারকম পাখি ব্যবহার করেছেন, যেমন – হাঁস, কাকাতুয়া, পায়রা, মোরগ, তিন হাত লম্বা সারস আর এক ঝাঁক হামিং বার্ড। ম্যাজিকের কাজে লাগানো এই পাখিগুলিকে দেখে বোঝা যায়, আর্গাস পাখিগুলিকে বেশ দক্ষতার সঙ্গেই প্রশিক্ষিত করেছে। কিন্তু তাদের দক্ষতা কর্ভাসের চেয়ে অনেক নিম্নমানের।

চেহারার বর্ণনা – আর্গাসের চেহারা আর পোশাকও বেশ রহস্য-উদ্দীপক। টিয়াপাখির মতো নাক, মাঝখানে সিঁথি করা চকচকে কেশরাশি, চোখে মাইনাস কুড়ি পাওয়ারের পুরু কাচের চশমার লোকটি ছ-ফুটের বেশি লম্বা। কালো কোটের ভিতর দিয়ে ফ্যাকাশে শীর্ণ হাত দুটির সঞ্চালনে দর্শক সম্মোহিত হয়। ম্যাজিকের মান তেমন না হলেও আর্গাসের রোমাঞ্চকর উপস্থিতি দর্শকের শ্রম আর অর্থ পুষিয়ে দেয়।

‘ওই পাখি আমার চাই প্রোফেসর’ – বক্তা কে? কোন প্রসঙ্গে তাঁর এই উক্তি? শেষ পর্যন্ত তিনি কী করেছিলেন?

সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশের বক্তা হলেন বিখ্যাত চিলিয়ান জাদুকর আর্গাস।

প্রসঙ্গ – চিলির রাজধানী শহর সানতিয়াগোতে আয়োজিত বিশ্ব-পক্ষীবিজ্ঞানী সম্মেলনে কর্ভাসের অসামান্য ডিমনস্ট্রেশনের খবর স্থানীয় সংবাদপত্র ‘কোরিয়েরে দেল সানতিয়াগো’-তে প্রকাশিত হয়। সেই খবরে বিখ্যাত চিলিয়ান জাদুকর আর্গাস কর্ভাস সম্বন্ধে উৎসাহী হয়ে সেই রাতেই প্রফেসার শঙ্কুর হোটেলের ঘরে আসে। সেখানে কর্ভাসের বিশিষ্ট প্রতিভার খানিক পরিচয় পেয়ে তাকে অধিকার করার নগ্ন লোভ এবং আগ্রহে উদ্ধৃত উক্তিটি করে।

চুরি করার পদ্ধতি – সানতিয়াগোর বিশ্ব পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে কর্ভাসের অসামান্য ডিমনসট্রেশনের খবর স্থানীয় দৈনিকপত্র ‘কোরিয়েরে দেল সানতিয়াগো’-তে প্রকাশিত হলে আর্গাস কর্ভাস সম্বন্ধে বিশেষ উৎসাহী হয়ে ওঠে। প্লাজা থিয়েটারে ম্যাজিক প্রদর্শনী শেষে সে চলে আসে শঙ্কুর হোটেলে, দেখা করতে চেয়ে অনেক কাকুতি-মিনতি করে, রিসেপশন থেকে অনুমতি পেয়ে 71 নম্বর ঘরে অবশেষে দেখা করে। সেখানেই কর্ভাসের কীর্তি স্বচক্ষে দেখে। অনেক অনুরোধের পরেও শঙ্কু কর্ভাসকে বিক্রি করতে না চাইলে সে বিদায় নেয়। পরদিন দুপুরে কর্ভাসকে অরক্ষিত অবস্থায় রেখে প্রফেসার শঙ্কু লাঞ্চ করতে যায়। সেই অবকাশে আর্গাস হোটেল বয়দের ‘হিপনোটাইজড’ করে পৌঁছে যায় ওই ঘরে, সেলোফোনের বড়ো প্যাকেটে কর্ভাসকে পুরে সিলভার ক্যাডিলাক গাড়িতে বহু দূরে উধাও হয়ে যায়।

কর্ভাসকে কীজন্য এবং কীভাবে আর্গাস চুরি করেছিল?

অথবা, আর্গাস কোন দেশের জাদুকর? আর্গাস কীভাবে কর্ভাসকে চুরি করেছিল?

সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে রহস্যজনক চরিত্র চিলিয়ান জাদুকর আর্গাস জাদুবিদ্যা কাজে লাগিয়ে, নানা কৌশল অবলম্বন করে কর্ভাসের প্রতি লোভে মোহান্ধ ও বেপরোয়া হয়ে কর্ভাসকে চুরি করে উধাও হয়ে যায়। মূলত তার জাদুকে আরও চমকপ্রদ করতে মানবসুলভ বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী কর্ভাসকে তার প্রয়োজন ছিল।

চুরি করার কারণ – ‘অরনিথন’ যন্ত্রের সাহায্যে ‘হিউম্যান ইনটেলিজেন্স’ প্রাপ্ত কর্ভাস সকল বিষয়ে উত্তর দিয়ে, মানুষের মতো আচরণ করে সমাগত অতিথিদের স্তম্ভিত করে দেয়। এই খবরে কর্ভাসের প্রতি আর্গাসের নগ্ন লোভ ঠিকরে বেরিয়ে আসে। এই জাদুকর তার জাদুতে সারস, হামিং বার্ড, পায়রা, কাকাতুয়া ইত্যাদি হরেকরকম পাখি ব্যবহার করে। কিন্তু তাদের থেকে কর্ভাসের দক্ষতা অনেক বেশি, তাই সে পাখিটিকে প্রথমে কিনতে চায় বহু অর্থের বিনিময়ে। কিন্তু প্রফেসার শঙ্কু তাঁর ছাত্র-সাথি-বন্ধু-সন্তানসম কর্ভাসকে হাতছাড়া করবেন না জানালে আর্গাস বেপরোয়া হয়ে চুরি করবার মনস্থির করে এবং শেষে কর্ভাসকে চুরি করে উধাও হয়ে যায়।

চুরি করার পদ্ধতি – সানতিয়াগোর বিশ্ব পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে কর্ভাসের অসামান্য ডিমনসট্রেশনের খবর স্থানীয় দৈনিকপত্র ‘কোরিয়েরে দেল সানতিয়াগো’-তে প্রকাশিত হলে আর্গাস কর্ভাস সম্বন্ধে বিশেষ উৎসাহী হয়ে ওঠে। প্লাজা থিয়েটারে ম্যাজিক প্রদর্শনী শেষে সে চলে আসে শঙ্কুর হোটেলে, দেখা করতে চেয়ে অনেক কাকুতি-মিনতি করে, রিসেপশন থেকে অনুমতি পেয়ে 71 নম্বর ঘরে অবশেষে দেখা করে। সেখানেই কর্ভাসের কীর্তি স্বচক্ষে দেখে। অনেক অনুরোধের পরেও শঙ্কু কর্ভাসকে বিক্রি করতে না চাইলে সে বিদায় নেয়। পরদিন দুপুরে কর্ভাসকে অরক্ষিত অবস্থায় রেখে প্রফেসার শঙ্কু লাঞ্চ করতে যায়। সেই অবকাশে আর্গাস হোটেল বয়দের ‘হিপনোটাইজড’ করে পৌঁছে যায় ওই ঘরে, সেলোফোনের বড়ো প্যাকেটে কর্ভাসকে পুরে সিলভার ক্যাডিলাক গাড়িতে বহু দূরে উধাও হয়ে যায়।

কীভাবে প্রফেসার শঙ্কু কর্ভাসকে জাদুকর আর্গাসের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন তা আলোচনা করো।

কর্ভাস চুরি – রুদ্ধশ্বাস এক অভিযানের শেষে কর্ভাসের উদ্ধারের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে। ‘অরনিথন’ যন্ত্রের সহায়তায় এক সাধারণ কাক তথা কর্ভাসকে প্রশিক্ষিত করে সিনিয়র শঙ্কু সানতিয়াগোর বিশ্ব-পক্ষীসম্মেলনে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে কর্ভাসের তাক লাগানো ডিমনসট্রেশনের খবর বের হয় স্থানীয় দৈনিক ‘কোরিয়েরে দেল সানতিয়াগো’-র সান্ধ্য-সংস্করণে। সেই খবরে বিখ্যাত চিলিয়ান জাদুকর আর্গাস কর্ভাস সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে শঙ্কুর হোটেলের 71 নং ঘর থেকে কর্ভাসকে চুরি করে উধাও হয়ে যায়।

উদ্ধারকার্য – সম্মেলনের চেয়ারম্যান কোভারুবিয়াসের ব্যবস্থাপনায় দুই সশস্ত্র পুলিশ আর বন্ধু গ্রেনফেলকে নিয়ে শঙ্কুদের মারসেডিস ধাওয়া করে সিলভার ক্যাডিলাক গাড়িকে। চুরির তথ্য পাওয়া গিয়েছিল হোটেলের দ্বাররক্ষকের কাছে, যে সেলোফোনের ব্যাগ হাতে আর্গাসকে দেখেছে হোটেল। ছাড়তে ওই বিশেষ গাড়িটিতে। তা ছাড়া পুলিশ কারেরাসও তার সম্বন্ধে যথেষ্ট খবর রাখত।

কর্ভাস প্রাপ্তি – দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে, একটার পর একটা পেট্রল পয়েন্ট পার হয়ে হাইওয়ে ধরে তারা ভালপারাইজোর দিকে রওনা হয়। রিভলভারসহ আর্গাস মরিয়া হয়ে উঠতে পারে বলে গ্রেনফেল আশঙ্কা প্রকাশ করলেও শঙ্কু অভিযানে অটল থাকে। আর্গাসের মুখোমুখি হয়ে কারেরাস হুংকার দিয়ে আর্গাসকে অস্ত্র ফেলে দিতে বলে। নিরুপায় আর্গাস বন্দুক ফেলে, কর্ভাসকে কটুক্তি করে ধরা দিয়ে দেয়। নেড়া অ্যাকাসিয়া গাছের মাথায় দেখা যায় কর্ভাসকে। এইভাবে দুর্ধর্ষ এক অভিযান শেষে আর্গাসের হাত থেকে কর্ভাসের উদ্ধার সম্ভব হয়।

কর্ভাস উদ্ধারে কারেরাস যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তা আলোচনা করো।

প্রফেসার শঙ্কু, জাদুকর আর্গাস, আর-একটি কাক ‘কর্ভাস’ গল্পের মুখ্য চরিত্র হলেও গল্পের শেষ দিকে পুলিশ কারেরাসের অপ্রধান চরিত্রটি স্বল্প-পরিসরেই পাঠকমনে দাগ কেটে যায়। বিশেষত তার পুলিশি দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতায় সশস্ত্র আর্গাসের কবল থেকে কর্ভাসকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

কারেরাসের আগমন – সানতিয়াগোর বিশ্ব-পক্ষীসম্মেলনে তাক লাগানো ডিমনসট্রেশনের পরে শঙ্কুর ঘর থেকে কর্ভাসকে চুরি করে জাদুকর আর্গাস উধাও হয়ে যায়। স্বজন হারানোর উৎকণ্ঠায় দিশাহারা শঙ্কু চেয়ারম্যান কোভারুবিয়াসের শরণাপন্ন হন। চেয়ারম্যান দুজন স্থানীয় পুলিশ দিয়ে অভিযানে অকুণ্ঠ সাহায্য করেন-এদেরই একজন কারেরাস।

পুলিশি দক্ষতা – আর্গাস সম্বন্ধে আগাম তথ্য জোগাড় করার মধ্যে তার পেশাগত মুনশিয়ানার পরিচয় মেলে। বস্তুত সেই সূত্রে আর্গাসের গাড়ি সহজে চেনা যায়, সম্ভাব্য পথে ধাওয়া করা হয়। মুখোমুখি হয়ে আর্গাসকে ভয়ংকর হুংকারে ভীত করে কারেরাস। অভিযানকে এতটুকু শিথিল হতে দেয় না। দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় রিভলভার চালিয়ে, দৃঢ়ভাবে বন্দুক ফেলে দেবার নির্দেশ দিয়ে আর্গাসকে নিরস্ত্র হতে বাধ্য করে। কারেরাসের সাহস, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, তথ্য জোগাড়ের অভিপ্রায় এবং ঘটনার গুরুত্ব বুঝে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থাগ্রহণের অসামান্য দক্ষতা চরিত্রটিকে আকর্ষণীয় করেছে।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের, ‘কর্ভাস’ -এর কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

স্বর্ণপণী-লেখক পরিচিতি-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – লেখক পরিচিতি

কর্ভাস-ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

কর্ভাস-অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – লেখক পরিচিতি

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – বিষয়সংক্ষেপ