নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের, ‘কর্ভাস’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

কর্ভাস-ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী-বাংলা
Contents Show

কর্ভাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

পরিচয় – ‘কর্ভাস’ হল কাক জাতীয় পাখির ল্যাটিন নাম। সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পের মুখ্য ভূমিকায় আছে একটি সাধারণ কাক। অন্যান্য পাখিদের চেয়ে এই কাকটি বিশেষভাবে শঙ্কুর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তার ডান চোখের নীচে থাকা সাদা ফুটকির দ্বারা শঙ্কু তাকে চিনতে পারতেন। সে পেনসিল ঠাঁটে নিয়ে টেবিলে আঁচড় কাটতে এবং দেশলাই কাঠি নিয়ে বাক্সের দেওয়ালে খচ-খচ করে ঘষতে পারত। সাধারণ কাকের তুলনায় তার গলার আওয়াজটিও অন্যরকম, অদ্ভুত। শঙ্কু তাকে ‘কা’ নয়, ‘কি’ বলতে শুনেছিলেন। পাখির মস্তিকে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি সঞ্চারিত করার উদ্দেশ্যে শঙ্কু এই কাকটিকে ব্যবহার করেছিলেন। এবং এই আবিষ্কার সফল হয়েছিল তাঁর তৈরি ‘অরনিথন’ যন্ত্রের মাধ্যমে।

“পাখি সম্পর্কে কৌতূহলটা আমার অনেক দিনের।” – কে কেন পাখি সম্পর্কে কৌতূহলী?

যে, যে-কারণে কৌতূহলী – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু ছিলেন পাখি সম্পর্কে কৌতূহলী। শঙ্কু ছেলেবেলায় বাড়িতে পোষা ময়না পাখিকে একশোর বেশি বাংলা শব্দের স্পষ্ট উচ্চারণ করতে শুনেছিলেন। সেই পাখিই ভূমিকম্পের কম্পন বুঝতে পেরে ‘ভূমিকম্প’ বলায় বিস্মিত হয়েছিলেন তিনি। তিনি অনুভব না করলেও পাখিটি যে কম্পন বুঝতে পেরেছিল। তার প্রমাণ তিনি পেয়েছিলেন পরের দিন খবরের কাগজে প্রকাশিত ভূমিকম্পের খবরে। ময়না, বাবুই, ম্যালি-ফাউল, গ্রিব কিংবা যাযাবর পাখি, ঈগল-বাজ-শকুন-ইত্যাদি পাখির নানান দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে পাখি সম্পর্কে একটা কৌতূহল তৈরি হয়েছিল প্রফেসার শঙ্কুর।

প্রফেসার শঙ্কুর পোষা ময়নাটি কীভাবে তাকে অবাক করে দিয়েছিল?

যেভাবে অবাক করেছিল – সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কুর শৈশবে তাঁর বাড়িতে একটি পোষা ময়না পাখি ছিল। পাখিটিকে তিনি একশোর বেশি বাংলা শব্দ উচ্চারণ করতে শিখিয়েছিলেন। পাখিটি সব শব্দগুলি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে পারত। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পর শঙ্কু শুনেছিলেন পাখিটি ‘ভূমিকম্প’ বলে চেঁচিয়ে উঠেছিল। কোনো কম্পন সেদিন টের না পেলেও প্রফেসার শঙ্কু পরদিন খবরের কাগজে ঘটনার সত্যতার কথা জানতে পারেন। পাখিটির এই ক্ষমতায় সেদিন আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন প্রফেসার শঙ্কু।

‘সেই থেকে পাখিদের বুদ্ধির দৌড় সম্পর্কে মনে একটা অনুসন্ধিৎসা রয়ে গেছে’ – ‘সেই থেকে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

যা বোঝানো হয়েছে – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু ছেলেবেলায় তাঁদের বাড়িতে পোষা ময়না পাখিকে একশোর উপর বাংলা শব্দ শিখিয়েছিলেন। পাখিটি পরিষ্কারভাবে সব শব্দগুলি উচ্চারণ করতে পারত। একদিন শঙ্কু স্কুল থেকে ফিরলে পাখিটি ‘ভূমিকম্প’ ‘ভূমিকম্প’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে। কোনো কম্পন সেদিন টের না পেলেও প্রফেসার শঙ্কু পরদিন খবরের কাগজে ঘটনার সত্যতার কথা জানতে পারেন। অর্থাৎ পাখিটির এই সহজাত ক্ষমতা বুঝতে পারার সময় থেকেই তাঁর মনে পাখিদের বুদ্ধির দৌড় সম্পর্কে একটা অনুসন্ধিৎসা তৈরি হয়েছিল।

কেন পাখি নিয়ে পূর্বে চর্চা করার সুযোগ পাননি প্রফেসার শঙ্কু?

কারণ – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কুর ছেলেবেলা থেকেই পাখিদের বুদ্ধি সম্পর্কে বিস্ময় ও কৌতূহল ছিল। কিন্তু অন্যান্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং আবিষ্কার নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি পাখি নিয়ে চর্চা করার সময় পাননি। তা ছাড়া শঙ্কুর পোষা বেড়াল নিউটনও পাখি পছন্দ করত না। ফলে নিউটনকে অখুশি করে প্রফেসার পাখি নিয়ে গবেষণা করার কথা ভাবেননি। পাখিদের প্রতি ভালোবাসা এবং তাদের সহজাত বুদ্ধির দৌড়ের সঙ্গে পরিচিত থাকলেও তাই প্রফেসার শঙ্কু পাখি নিয়ে চর্চা করার সুযোগ পাননি।

“প্রত্যেক প্রাণীরই কিছু কিছু নির্দিষ্ট সহজাত ক্ষমতা থাকে।” – প্রফেসার শঙ্কুর চোখে পাখিদের সহজাত ক্ষমতাগুলি কেমনভাবে ধরা পড়েছে?

যেভাবে ধরা পড়েছে – সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্প থেকে জানা যায়, প্রফেসার শঙ্কু ছোটোবেলায় দেখেছিলেন বাড়ির পোষা ময়নাটি কত অনায়াসে একশোর ওপর বাংলা শব্দ শিখেছিল। বাবুই পাখির বাসা বানানোর আশ্চর্য দক্ষতা শঙ্কুকে বিস্মিত করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার ম্যালিফাউল পাখির মাটির ওপর বাসা তৈরি করে ভিতরের উত্তাপ বাড়িয়ে তোলার ক্ষমতা কিংবা গ্রিব পাখির শত্রুর আগমন আগাম বুঝতে পারার শক্তির কথা জানতেন শঙ্কু। এ ছাড়া যাযাবর পাখির দিকনির্ণয় ক্ষমতা, ঈগল-রাজের শিকার ক্ষমতা, শকুনের ঘ্রাণশক্তি, অনেক পাখির আশ্চর্য সংগীত প্রতিভা-ইত্যাদি শঙ্কুকে পাখিদের সম্পর্কে কৌতূহলী করে তুলেছিল।

‘ম্যালি-ফাউল’ পাখির বিশেষত্ব কী?

‘ম্যালি-ফাউলের’ বিশেষত্ব – সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু নানান পাখির বিশেষত্ব আলোচনা করেছিলেন। তিনি পাখিদের সহজাত ক্ষমতার উদাহরণ দিতে গিয়ে ম্যালিফাউল পাখির বাসা তৈরির অদ্ভুত কৌশলের কথা বলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার এই পাখি বালি-মাটি আর উদ্ভিজ্জ নানা সামগ্রী দিয়ে মাটিতে একটা ঢিপির মতো বাসা তৈরি করে। তার গায়ে একটা গর্ত থাকে, ভিতরে ঢোকার জন্যে। তারা এক অজ্ঞাত কৌশলে বাসার ভিতরের তাপমাত্রা আটাত্তর ডিগ্রি ফারেনহাইট করে রাখতে পারে। বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক, বাসার ভিতরের তাপমাত্রার রদবদল হয় না। এর ফলে বাসার ভিতর তাদের ডিমে তা দিতে হয় না। ভিতরের উত্তাপে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

গ্রিব পাখির মধ্যে কী রহস্যময়তা লক্ষ্য করেছেন শঙ্কু?

গ্রিব পাখির রহস্যময়তা – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পের প্রফেসার শঙ্কু গ্রিব পাখি সম্পর্কে বলেছিলেন, তারা রহস্যজনকভাবে নিজেদের পালক ছিঁড়ে খায় এবং শাবকদের খাওয়ায়। আবার এই পাখি জলে ভাসমান অবস্থায় শত্রুর আগমনের ইঙ্গিত বুঝতে পারে এবং নিজের দেহ ও পালক থেকে কোনো এক অজ্ঞাত উপায়ে বায়ু বার করে দিয়ে শরীরের স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি বাড়িয়ে গলা অবধি জলে ডুবে ভেসে থাকতে পারে। এটি গ্রিব পাখির সহজাত ক্ষমতা।

পাখি নিয়ে প্রফেসার শঙ্কু নতুন কী করতে চান?

যা করতে চান – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু পাখিদের সহজাত বুদ্ধির বাইরে তাদের কতদূর পর্যন্ত নতুন কিছু শেখানো যায় তা গবেষণা করে দেখতে চেয়েছিলেন। মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধি পাখির মধ্যে সঞ্চারিত করে পাখির চরিত্রে পরিবর্তন ঘটাতে চেয়েছিলেন। পাখির মধ্যে মানবিক লক্ষণ ফুটিয়ে তুলতে তিনি একটি যন্ত্র আবিষ্কার করতে চেয়েছেন, যার সাহায্যে তিনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারবেন।

পাখি নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার কথা কেন ভেবেছেন শঙ্কু?

ভাবনার কারণ – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে ছেলেবেলা থেকেই পাখিদের বুদ্ধির দৌড় সম্পর্কে প্রফেসার শঙ্কুর মনে অনুসন্ধিৎসা তৈরি হয়েছিল। বাড়ির পোষা ময়নাটির শেখানো কথা বলা এবং ‘ভূমিকম্প’ অনুভব করে চেঁচিয়ে ওঠায় আশ্চর্য হয়েছিলেন তিনি। পাখিদের সহজাত ক্ষমতা তাঁকে বিস্মিত করেছিল। বাবুই-এর বাসা বানানো, ম্যালিফাউলের বাসার ভিতরে তাপমাত্রা বাড়ানোর ক্ষমতা, গ্রিব পাখির শত্রুর আগমন বুঝতে পারা, যাযাবর পাখির দিকনির্ণয় ক্ষমতা, ঈগল-বাজের শিকার ক্ষমতা ইত্যাদি তাকে পাখি সম্পর্কে কৌতূহলী করে। নানা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যস্ত থাকার কারণে এবং পোষা বেড়াল নিউটনের পাখি পছন্দ নয় বলে প্রথমদিকে পাখি নিয়ে গবেষণা করার কথা ভাবেননি শঙ্কু। কিন্তু বয়সের কারণে নিউটন পাখি সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়লে শঙ্কু নতুন করে পাখিদের নিয়ে গবেষণা করার কথা ভেবেছিলেন।

পাখি পড়ানো যন্ত্রটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

যন্ত্রের পরিচয় – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কুর তৈরি পাখি পড়ানো যন্ত্রটির নাম – ‘অরনিথন’। এই যন্ত্রটির দুটি অংশ। একটি অংশ খাঁচার মতো, যার মধ্যে থাকবে পাখি। খাঁচার সঙ্গে বৈদ্যুতিক যোগ থাকবে দ্বিতীয় অংশটির। দ্বিতীয় অংশ থেকে খাঁচায় থাকা পাখির মস্তিষ্কে জ্ঞান-বুদ্ধি চালনা করা হবে। প্রফেসার শঙ্কু যেহেতু সহজপথে বিশ্বাসী, তাই তাঁর তৈরি যন্ত্রটিও হবে জলের মতো সহজ।

কেমনভাবে কর্ভাসের শিক্ষা শুরু হল?

কর্ভাসের শিক্ষার শুরু – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু কর্ভাসের শেখার আগ্রহ আছে বুঝতে পেরে তাকে প্রথমে ভাষা শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। সহজ বাংলা ভাষা শিক্ষা দিয়ে কাকটির শিক্ষা শুরু হয়। তারপর বিভিন্ন বিষয় যন্ত্রের বিভিন্ন বোতামের মধ্যে রেকর্ড করে রেখে পাখির মস্তিষ্কে চালনা করা হতে থাকে।

‘অরনিথন’ যন্ত্রে কাকটিকে কীভাবে শিক্ষা দেওয়া হত?

সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু একটি কাককে পড়ানোর উদ্দেশ্যে অরনিথন যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন।

যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হতো – ‘অরনিথন’ যন্ত্রের খাঁচার মতো অংশে কর্ভাসকে রেখেছিলেন শঙ্কু এবং অন্য অংশ থেকে জ্ঞান-বুদ্ধি পাঠানো হত বৈদ্যুতিক যোগাযোগের মাধ্যমে। বোতাম টেপা ছাড়া আর কোনো কিছুই করতে হত না শঙ্কুকে। শেখার বিষয় আগে থেকেই রেকর্ড করা থাকত। বিভিন্ন চ্যানেলে বিভিন্ন বিষয়, প্রত্যেকটার আলাদা আলাদা নম্বর। বোতাম টিপলেই কাকটার চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসত এবং নড়াচড়া যেত বন্ধ হয়ে। এভাবেই পাখিটি মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি লাভকরার শিক্ষা পেতে থাকে।

পক্ষীবিজ্ঞানীদের কনফারেনস্-এ শঙ্কু যেতে চেয়েছেন কেন?

কারণ – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু নভেম্বর মাসে চিলির রাজধানী সানতিয়াগো শহরে সারা বিশ্বের পক্ষীবিজ্ঞানীদের যে কনফারেনস্ হতে চলেছে সেখানে যেতে চেয়েছেন। তাঁর আবিষ্কৃত ‘অরনিথন’ যন্ত্রের সাহায্যে ‘কর্ভাস’ নামের কাকটিকে তিনি যে মানবসুলভ আচরণে অভ্যস্ত করিয়েছেন এবং মানুষের বুদ্ধি তার মধ্যে সঞ্চারিত করতে পেরেছেন, তা বিশ্বের দরবারে প্রকাশ করতে চাওয়াই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। পাখি সম্পর্কিত এই বিশ্বসম্মেলনে শঙ্কু কর্ভাসকে নিয়ে ডিমন্সট্রেশনসহ একটা বক্তৃতাও দিতে চেয়েছিলেন।

গ্রেনফেল কে? তাকে শঙ্কু কেন তাকে চিঠি লেখেন? তিনি কী উত্তর দেন?

সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্পে বর্ণিত রিউফাস গ্রেনফেল হলেন মিনেসোটা নিবাসী পক্ষী বিজ্ঞানী। তিনি ছিলেন প্রফেসার শঙ্কুর বন্ধু।

কারণ – প্রফেসার শঙ্কু কর্ভাসকে নিয়ে নভেম্বর মাসে চিলির রাজধানী সানতিয়াগো শহরে অনুষ্ঠিত সারা বিশ্বের পক্ষীবিজ্ঞানী সম্মেলনে যেতে চান এবং নিজের আবিষ্কার সর্বসমক্ষে প্রমাণ করতে চান। এ উদ্দেশ্যেই তিনি গ্রেনফেলকে চিঠি লেখেন যাতে গ্রেনফেল তাঁকে ওই সম্মেলনে যাবার ব্যবস্থা করে দেন।

উত্তর – প্রফেসার শঙ্কুর চিঠির উত্তরে গ্রেনফেল জানান তিনি ওই পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে শঙ্কুকে নিমন্ত্রণ পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। তিনি বলেন শঙ্কু যেন কর্ভাস তথা কাক-সমেত সানতিয়াগোতে চলে আসেন।

নিউটন কে? কোন ঘটনায় কর্ভাসের সঙ্গে নিউটনের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের পরিণত হয় বলে শঙ্কু মনে করেছেন?

সত্যজিৎ রায় রচিত ‘কর্ভাস’ গল্পের মূল চরিত্র প্রফেসার শঙ্কুর পোষা বিড়ালের নাম নিউটন।

ঘটনাটির পরিচয় – প্রথম জীবনে শঙ্কু নিউটনের পাখি সম্পর্কে অপছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে পাখি নিয়ে গবেষণা করেননি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিউটনের পাখি সম্বন্ধে উদাসনীতা তৈরি হয়। সে কর্ভাসকে দিব্যি মেনে নিয়েছে বলেই মনে হয় শঙ্কুর। একদিন দুপুরে একটা সদ্য কাটা মাছের টুকরো ঠোঁটে নিয়ে কর্ভাস সেটা ফেলেছিল চেয়ারের পাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে থাকা নিউটনের সামনে। এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে শঙ্কুর মনে হয়েছিল কর্ভাস ও নিউটনের সম্পর্ক বন্ধুত্বে পরিণত হয়েছে।

“দুসপ্তাহে অভাবনীয় প্রোগেস।” – কার ‘প্রোগেসে’র কথা বলা হয়েছে? তার কী প্রোগ্রেস হয়েছিল?

সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে কর্ভাস নামের কাকটির শিক্ষাগ্রহণে অভাবনীয় উন্নতি হওয়ায় শঙ্কু কাকটির ‘প্রোগ্রেসের’ কথা বলেছিলেন।

‘কর্ভাসের প্রোগেস’ – শঙ্কু লক্ষ করেছিলেন কাকটি আগেই বাংলা ভাষা রপ্ত করেছিল। ঠোঁটে পেনসিল নিয়ে ইংরাজি শব্দ ও সংখ্যা লিখতে পারছে। ইংরাজিতে নিজের নাম লিখেছে C-O-R-V-U-S। সহজ যোগ বিয়োগ করার সঙ্গে বলে দিয়েছে ইংল্যান্ডের রানির নাম, শঙ্কুর পদবি। তারিখও নির্ভুলভাবে লিখে দিয়েছে সে।

খাওয়ার ব্যাপারে কর্ভাসের কী বুদ্ধির পরিচয় পেয়েছেন শঙ্ক?

বুদ্ধির পরিচয় – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু ‘অরনিথন’ যন্ত্রের সাহায্যে কর্ভাস নামের কাকটিকে শিক্ষা দেওয়ার পর তার আচরণে অভাবনীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। একটা পাত্রে রুটি ও টোস্টের টুকরো এবং অন্য একটা পাত্রে পেয়ারার জেলি দিয়ে কর্ভাসের সামনে রেখেছিলেন শঙ্কু। এরপর তিনি দেখেছেন যে কর্ভাস রুটির টুকরোগুলো মুখে পোরার আগে প্রতিবারই ঠোঁট দিয়ে খানিকটা জেলি মাখিয়ে নিয়েছিল।

কর্ভাস যে সাধারণ কাকের থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে চায় তার প্রমাণ কীভাবে পেয়েছেন শঙ্কু?

প্রমাণ যেভাবে পেয়েছেন – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু তার ‘অরনিথন’ যন্ত্র প্রয়োগ করার পর লক্ষ করেছিলেন কর্ভাস অন্য কাকের থেকে আলাদা থাকছে। সাধারণত একটা কাকের মৃত্যুতে অনেক কাক হাজির হয়। একদিন দুপুরে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিতে শঙ্কু খেয়াল করেন একটা শিমুল গাছ থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এরপর বিকেলে বৃষ্টি থামার পর প্রচণ্ড কাকের কোলাহল শুরু হয়। তিনি তাঁর চাকর প্রহ্লাদকে খবর আনতে পাঠালে প্রহ্লাদ জানায়, বজ্রাঘাতে একটি কাকের মৃত্যু হয়েছে। শঙ্কু দেখেছিলেন এমন ঘটনায় সব কাক যখন বাইরে কোলাহল করছে তখন নিজেকে আলাদা রাখতে কর্ভাস ঘরে বসে একমনে লিখে চলছে প্রাইম নাম্বারস্ -2, 3, 4, 5, 7, 11, 13 ….. ।

“অরনিথন যন্ত্রের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।” – কেন?

কারণ – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে ‘অরনিথন’ যন্ত্রের সাহায্যে প্রফেসার শঙ্কু কর্ভাসকে বাংলা-ইংরাজি ভাষা এবং অঙ্ক-জ্যামিতি-ইতিহাস-ভূগোল-পদার্থবিদ্যা-রসায়ন ইত্যাদি সব বিষয়েই জ্ঞান-বুদ্ধি শিখিয়ে দিতে পেরেছিলেন। কর্ভাস অল্প কয়েকটি শব্দ ও সংখ্যার সাহায্যে এইসব বিষয়ে করা প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছিল। শঙ্কু পাখিটিকে যা শেখাতে চেয়েছিলেন তা সফল হয়েছে জেনে বলেছিলেন ‘অরনিথন’ যন্ত্রের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।

কর্ভাসের ‘মানবসুলভ বুদ্ধি’ বা ‘হিউম্যান ইনটেলিজেনস’ -এর একটি নিদর্শন দাও।

বুদ্ধির নির্দশন – কর্ভাস সাধারণ কাক হলেও অন্যান্য কাক এবং পাখিদের থেকে অনেকটাই আলাদা। ‘অরনিথন’ যন্ত্রের সাহায্যে প্রফেসার শঙ্কু তার মধ্যে মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি সঞ্চার করেছিলেন। চিলির সানতিয়াগোতে অনুষ্ঠিত পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে যাবেন বলে শঙ্কু সুটকেস গোছানো শেষ করে যখন বাক্সের ঢাকনা বন্ধ করছেন, তিনি দেখেন কর্ভাস সুটকেসের চাবি ঠোঁটে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এই ঘটনাই তার ‘মানবসুলভ বুদ্ধি’ তথা ‘হিউম্যান ইনটেলিজেনস’ -এর পরিচায়ক।

“সেটাই হবে সম্মেলনে আমার পেপার।” – কোন্ সম্মেলনে কার কী পেপারের কথা এখানে বলা হয়েছে?

যার, যে পেপারের কথা বলা হয়েছে – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্প থেকে গৃহীত প্রশ্নোধৃত অংশটিতে নভেম্বর মাসে চিলির রাজধানী সানতিয়াগো শহরে অনুষ্ঠিত সারা বিশ্বের পক্ষীবিজ্ঞানী সম্মেলনের কথা বলা হয়েছে। এখানে প্রফেসার শঙ্কু তাঁর আবিষ্কৃত ‘অরনিথন’ ও কর্ভাসকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। প্রফেসার শঙ্কু দু-মাস গবেষণা করে পাখির মস্তিষ্কের বিষয়ে যে জ্ঞান্ সঞ্চয় করেছেন সেই বিষয়টি তার সম্মেলনে আলোচনার প্রবন্ধ বা ‘পেপার’।

“একটিমাত্র ঘটনাই লেখার আছে।” – এখানে কোন ঘটনার কথা বলা হয়েছে?

ঘটনাটির বিবরণ – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু সারাবিশ্বের পক্ষীবিজ্ঞানী সম্মেলনে যোগ দিতে যখন সানতিয়াগোর পথে রওনা দেবেন তখন খাঁচার ভিতর কর্ভাস প্রচণ্ড ছটফট করতে থাকে। কোনো কিছু না বুঝে শঙ্কু খাঁচার দরজা খুলে দিলে কর্ভাস সটান উড়ে গিয়ে শঙ্কুর রাইটিং টেবিলে বসে ঠোঁট দিয়ে উপরের দেরাজটায় ভীষণ ব্যস্তভাবে টোকা মারতে থাকে। এরপর দেরাজ খুলে শঙ্কু তার পাসপোর্ট পান। কর্ভাসের এই মানবসুলভ বুদ্ধিবৃত্তির ঘটনাই শঙ্কু লেখার কথা বলেছেন।

“কর্ভাসের জন্য একটা নতুন ধরনের খাঁচা বানিয়ে নিয়েছি। – খাঁচাটির নতুনত্ব কোথায়?

খাঁচাটির নতুনত্ব – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কুর অত্যাশ্চর্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নিদর্শন পাওয়া যায়। সানতিয়েগো যাবার জন্য প্লেনে চড়া প্রয়োজন। একথা মাথায় রেখে শঙ্কু কর্ভাসের জন্য যে খাঁচাটি বানিয়েছিলেন, তার ভিতর যে তাপমাত্রায় কর্ভাস আরামে থাকবে, কৃত্রিম উপায়ে সেই আবহাওয়া বজায় রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। আর খাবার জন্য তৈরি করে নিয়েছিলেন কাকের পক্ষে পুষ্টিকর ভিটামিন দিয়ে বানানো হোমিওপ্যাথিক বড়ির মতো মুখরোচক বড়ি।

পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলন বক্তৃতার সময় কর্ভাসের কী আচরণ শঙ্কু লক্ষ্য করেছিলেন?

যে আচরণ শঙ্কু লক্ষ করেছিলেন – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘কর্ভাস’ গল্পে সানতিয়াগোতে পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে বক্তৃতা করার সময় প্রফেসার শঙ্কু কর্ভাসকে খাঁচা থেকে বের করে প্রকাণ্ড লম্বা মেহগনির টেবিলে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি লক্ষ করেছিলেন, বক্তৃতা চলাকালীন কর্ভাস এক পাও নড়েনি। মাঝে মাঝে ঘাড় কাত করে ও মাথা উপর নীচ করে বুঝিয়ে দিয়েছে সে মনোযোগের সঙ্গে বক্তৃতা শুনছে এবং বুঝতে পারছে। বক্তৃতা শেষ হবার পর শ্রোতাদের হাততালির শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঠোঁট দিয়ে টেবিলে আওয়াজ করে কর্ভাস শঙ্কুকে অবাক করে দিয়েছিল।

পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে শঙ্কুর ডিমনসট্রেশনের পর কেমন প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল?

প্রতিক্রিয়া – প্রফেসার শঙ্কু দু-মাস ধরে কর্ভাসের মস্তিষ্ক নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যা আবিষ্কার করেছেন পাখিটিসহ তা ‘ডিমনসট্রেট’ করায় সকলেই অবাক হয়ে গেছে। কর্ভাস গত দু-মাসে যা শিখেছে সবই দেখিয়েছে অভ্যাগতদের সামনে। সকলেই শঙ্কুর এই আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সাধুবাদ জানিয়েছে। এমন অকল্পনীয় ঘটনার খবর প্রকাশ করেছে ‘কোরিয়েরে দেল সানতিয়াগো’-র সান্ধ্য সংস্করণ। মোটকথা বিজ্ঞানের নতুন একটি দিক উন্মোচন করে শঙ্কু বন্দিত হয়েছেন পক্ষীবিজ্ঞানীসহ সমগ্র বিশ্বে।

আর্গাস কে? তার ম্যাজিকের বিশেষত্ব কী?

সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে এক বিখ্যাত চিলিয়ান জাদুকরের নাম আর্গাস।

বিশেষত্ব – আর্গাসের বিশেষত্ব হল তিনি ম্যাজিকে নানারকম পাখি ব্যবহার করেন। হাঁস, কাকাতুয়া, পায়রা, মোরগ, তিনহাত লম্বা সারস, এক ঝাঁক হামিংবার্ড-এসব পাখিকেই তিনি বেশ দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেন তাঁর ম্যাজিকে। সাড়ে ছ-ফুটেরও বেশি উচ্চতার এই মানুষটির হিপনোটাইজ করার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। শহরের এই অন্যতম ধনী ব্যক্তি লোভী এবং কর্ভাসের সঙ্গে অমানবিক আচরণের জন্য আলোচ্য গল্পে তিনি খলচরিত্রে পরিণত হয়েছেন।

জাদুকর ব্যক্তিটিকে প্রথম দর্শনে শঙ্কু কেমন দেখেছিলেন?

যেমন দেখেছিলেন – সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্পে চিলির সানতিয়াগোর প্লাজা থিয়েটারে আর্গাসের ম্যাজিক দেখতে গিয়ে জাদুকর ব্যক্তিটিকে বেশ ‘ইনটারেস্টিং’ মনে হয়েছিল শঙ্কুর। জাদুকর লোকটি ছ-ফুটের বেশি লম্বা। তার টিয়া পাখির মতো নাক, মাঝখানে সিঁথি করা, টান করে পিছনে আঁচড়ানো নতুন গ্রামোফোন রেকর্ডের মতো চকচকে চুল, চোখে মাইনাস পাওয়ারের চশমা, তার কাচ এত পুরু যে, মণি দুটোকে তীক্ষ্ণ বিন্দুর মতো দেখায়। শঙ্কু দেখেছিলেন জাদুকরের চকচকে কালো কোটের আস্তিনের ভিতর থেকে দুটো শীর্ণ ফ্যাকাশে হাত বেরিয়ে আছে, সেই হাতের বিভিন্ন ভঙ্গিমাই দর্শকদের সম্মোহিত করে রাখে।

‘এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠল।’ – কোন্ সময়ের কথা বলা হয়েছে?

যে সময়ের কথা বলা হয়েছে – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘কর্ভাস’ গল্পে সানতিয়াগোর পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে বক্তৃতার পর প্লাজা থিয়েটারে চিলিয়ান জাদুকর আর্গাসের ম্যাজিক দেখে হোটেলে ফিরছিলেন শঙ্কু। তারপর রাত ন-টায় ডিনার এবং অতি উপাদেয় চিলিয়ান কফি খেয়ে গ্রেনফেলের সঙ্গে হোটেলের বাগানে সময় কাটিয়েছিলেন কিছুক্ষণ। সেখান থেকে ঘরে এসে বাতি নিবিয়ে বিছানায় শুতেই টেলিফোন বেজে উঠেছিল।

“একজন জাদুকরের পক্ষে নামটা বেশ মাননসই।” – কে, কাকে কেন একথা বলেছে?

যে, যাকে যে-কারণে একথা বলেছে – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু চিলিয়ান জাদুকর আর্গাসকে প্রশ্নোদ্ধৃত কথাটি বলেছেন। গ্রিক উপকথায় আর্গাস নামক একজন কীর্তিমান পুরুষের কথা পড়েছিলেন শঙ্কু। সেই কাহিনি অনুযায়ী গ্রীক দেবী হেরা আর্গাসের চোখগুলি তুলে ময়ূরের পুচ্ছে বসিয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকেই ময়ূরের লেজে চাকা চাকা দাগ। চিলিয়ান জাদুকর যেহেতু পাখি নিয়ে ম্যাজিক দেখানোয় বিশেষ পারদর্শী, তাই তাকে শঙ্কু গ্রিক পুরাণের প্রসঙ্গটি মনে করিয়ে দিয়েছেন।

আর্গাসকে প্রথমবার দেখে কর্ভাসের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

কর্ভাসের প্রতিক্রিয়া – সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্পে পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে ডিমনসট্রেশনের পর ক্লান্ত ছিলেন প্রফেসার শঙ্কু ও কর্ভাস। জাদুকর আর্গাস সেই রাতেই শঙ্কুর হোটেলের ঘরে উপস্থিত হয় এবং শঙ্কুর কাছে আবদার করে পাখিটিকে দেখার। শঙ্কু কর্ভাসের খাঁচার দরজা খুলে দিলে, সে খাঁচা থেকে বেরিয়ে ডানার তিন ঝাপটায় খাটের পাশে টেবিলে এসে ঠোঁটের অব্যর্থ ঠোকরে ল্যাম্পটা নিভিয়ে দেয়। তারপর ডানা ঝটপটিয়ে খাঁচায় ফিরে গিয়ে ঠোঁট দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তার এই আচরণ থেকে শঙ্কু বুঝতে পারেন কর্ভাস ঘরে আলো পছন্দ করছে না, সে ঘুমোতে চায়।

“আই ওয়ানট্ দ্যাট, ক্রো!” – কে, কেন এই কথা বলেছে?

যে, যে-কারণে বলেছে – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে বিখ্যাত চিলিয়ান জাদুকর আর্গাস শঙ্কুর পোষা কাক কর্ভাসকে পাওয়ার ইচ্ছে থেকে প্রশ্নোধৃত কথাটি বলেছেন। জাদুকরের বিশেষত্ব হল তিনি ম্যাজিক দেখানোর সময় নানা ধরনের পাখি ব্যবহার করেন। পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে কর্ভাসসহ শঙ্কুর বক্তৃতার খবর ‘কোরিয়েরে দেল, সানতিয়াগো’-র সান্ধ্য সংস্করণে প্রকাশিত হলে আর্গাস উৎসাহিত হয়ে হোটেলে আসেন পাখিটিকে দেখতে। কর্ভাসের সঙ্গে প্রথম পরিচয়েই তিনি তার মানবসুলভবুদ্ধিবৃত্তির পরিচয় পান। কর্ভাসের চমকপ্রদ আচরণে আর্গাস অভিভূত হয়ে বলে ওঠেন-‘আই ওয়াটন্‌ট্ দ্যাট, ক্রো।’

‘আমার ক্ষমতা এবার স্বীকৃত হবে সারা বিশ্বে।’ – কার কোন্ ক্ষমতা সারা বিশ্বে স্বীকৃত হবে?

যার, যে ক্ষমতা বিশ্বে স্বীকৃত হবে – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্প থেকে গৃহীত প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটিতে চিলিয়ান জাদুকর আর্গাসের পাখি নিয়ে চমকপ্রদ ম্যাজিক দেখানোর আশ্চর্য দক্ষতা সারা বিশ্বে স্বীকৃতি পাবে বলে তিনি মনে করেছেন। আমেরিকার প্রতিটি শহরের জাদুপ্রিয় মানুষের অত্যন্ত পছন্দের জাদুকর হলেন আর্গাস। রোম-ম্যাড্রিড-প্যারিস-লন্ডন- অ্যাথেনস-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তিনি ম্যাজিক দেখানোর সুযোগ পেয়েছেন। ভারতীয় কাক কর্ভাসের মানবসুলভ বুদ্ধিবৃত্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার কারণে তিনি মনে করেছেন কর্ভাসকে অধিগত করতে পারলেই ম্যাজিক আরও চমকপ্রদ হয়ে উঠবে।

“ওই পাখি আমার চাই…আমার চাই…আমার চাই…” – কে, কেন পাখিটিকে চেয়েছেন?

যে, যে-কারণে পাখিটিকে চেয়েছেন – সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্পে বিখ্যাত চিলিয়ান জাদুকর আর্গাস তার ম্যাজিককে আরও চমকপ্রদ করে তুলতে শঙ্কুর কাছে তার পোষা কর্ভাসকে চেয়েছেন। দুই আমেরিকার প্রতিটি শহরের জাদুপ্রিয় মানুষের কাছে পাখি নিয়ে ম্যাজিক দেখানোর বিশেষত্বের জন্য আর্গাস পরিচিত। আর্গাস ডাক পেয়েছেন রোম-ম্যাড্রিড-প্যারিস-লন্ডন-অ্যাথেন্সসহ পৃথিবীর বিভিন্নপ্রান্তে। বিশ্বে তার জাদুক্ষমতা স্বীকৃত হবে শীঘ্রই। তার আগেই তিনি পরিচিত হয়েছেন কর্ভাসের মানবসুলভ বুদ্ধিবৃত্তির সঙ্গে। তার মনে হয়েছে কর্ভাসের প্রতিভায় তাঁর জাদু বিশ্বের প্রতিটি দেশে স্বীকৃত পাবে। এই কারণে আর্গাস যেমনভাবেই হোক কর্ভাসকে পেতে চেয়েছেন।

কর্ভাসকে চেয়ে আর্গাসের নাছোড় অনুরোধের উত্তরে শঙ্কু কী বলেছিলেন?

শঙ্কুর উত্তর – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে বিখ্যাত চিলিয়ান জাদুকর আর্গাসের পরিচয় পাওয়া যায়। বিশ্বের দরবারে ম্যাজিককে আরও চমকপ্রদ করে তুলতে ও স্বীকৃতি দিতে আর্গাস কর্ভাসকে পেতে চেয়েছেন। শঙ্কু কোনোভাবেই তাঁর এই বায়স বন্ধুটিকে তুলে দিতে চাননি জাদুকরের হাতে। শঙ্কু বলেছেন কর্ভাস শুধু তাঁর ছাত্রই নয়, সে তাঁর সন্তানের মতো, বন্ধুও বটে। শঙ্কু অক্লান্ত পরিশ্রম করে কর্ভাসকে মানবসুলভ আচরণ আয়ত্ত করিয়েছেন। তাই কোনোভাবে, কোনো প্রলোভনেই তিনি কর্ভাসকে দিতে রাজি নন।

‘আর্গাস এবার একটা শেষ চেষ্টা করল।” – চেষ্টাটি কী?

চেষ্টাটির পরিচয় – সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্পে কর্ভাসকে পাওয়ার জন্য জাদুকর আর্গাস প্রফেসার শঙ্কুকে প্রথমে হিপনোটাইজ করার চেষ্টা করেন। পরে শঙ্কুকে বুঝিয়ে, টাকার লোভ দেখিয়ে কাকটিকে নেওয়ার চেষ্টাও করেন। কিন্তু শঙ্কু তাঁর সন্তানতুল্য বায়স বন্ধু কর্ভাসকে দিতে রাজি না হলে আর্গাস গ্রীক পুরাণের প্রসঙ্গ তুলে একবার শেষ চেষ্টা করেন। ‘আর্গাস’ আর ‘কর্তাস’-নামের এই অদ্ভুত মিলের কথা স্মরণ করিয়ে জাদুকর এই কাকতালীয় ব্যাপারটিকে ভারতীয় অলৌকিকতা দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। যে-কোনো মূল্যে তিনি যে কর্ভাসকে পেতে চান তাঁর এই আচরণে বোঝা যায়।

‘একটা চরম বিপদের আশঙ্কা আমার রক্ত জল করে দিল’ – বিপদের আশঙ্কাটি কী?

আশঙ্কা – সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্পে সানতিয়াগোতে পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে এক অদ্ভুত জাদুকরের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন শঙ্কু। পাখি নিয়ে ম্যাজিক দেখানোয় বিখ্যাত আর্গাস যে-কোনো মূল্যে যখন কর্ভাসকে পেতে চেয়েছেন তখন থেকেই একটা বিপদের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল শঙ্কুর মনে। একদিন দুপুরে হোটেলে অন্যান্য ডেলিগেটদের সঙ্গে লাঞ্চ সেরে নিজের ঘরে ফিরে শঙ্কু দেখেন দরজার তালা খোলা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আশঙ্কা করেন নিশ্চয়ই কর্ভাসকে কেউ নিয়ে গিয়েছে। ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকে তিনি দেখেছিলেন তাঁর আশঙ্কাটি সঠিক।

“শেষটায় হোটেলের দ্বাররক্ষকদের কাছে গিয়ে আসল খবর পাওয়া গেল।” – আসল খবরটি কী?

আসল খবর – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু তার বায়সবন্ধু কর্ভাসকে হারিয়ে শঙ্কু হোটেলের দ্বারক্ষকদের কাছে গিয়ে জানতে পারেন আধ ঘণ্টা আগে একটা সিলভার ক্যাডিলাক গাড়িতে আর্গাস এসেছিলেন হোটেলে। তার দশ মিনিট বাদে একটা সেলোফোনের ব্যাগ নিয়ে তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান। অর্থাৎ প্রফেসার শঙ্কু যা আশঙ্কা করেছিলেন তাই সত্য হয়ে যায়।

কারেরাস আর্গাস সম্পর্কে শঙ্কুকে কী বলেছিল?

কারেরাস যা বলেছে – সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্পে সানতিয়াগোর সশস্ত্র পুলিশ কারেরাস আর্গাস সম্বন্ধে বেশ ভালো খবর রাখে। সে শঙ্কুকে জানিয়েছিল সানতিয়াগো এবং আশপাশে আর্গাসের নাকি একাধিক আস্তানা আছে। আর্গাস এককালে জিপসিদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছিল এবং উনিশ বছর বয়স থেকে সে ম্যাজিক দেখানো শুরু করেছিল। তবে পাখি নিয়ে বছর চারেক আগে থেকে আর্গাস ম্যাজিক দেখাতে শুরু করে। আর্গাস ভয়ানক কঞ্জুস এবং কাউকে বিশ্বাস করে না। আর আর্গাসকে সত্যি রিভলভার ব্যবহার করতে দেখেছে কারেরাস।

কর্ভাসকে না দেখতে পেয়ে আর্গাস কী বলেছিলেন?

যা বলেছিল – হাইওয়ের গাছের গুঁড়িতে ধাক্কা মেরে আর্গাস গাড়ি থেকে রিভলভার হাতে নেমে পড়েছিলেন কর্ভাসকে খুঁজতে। বুদ্ধিমান কর্ভাস আর্গাসের চোখ থেকে পুরু লেন্সের চশমাটি খুলে নেওয়ায় এমন বিপত্তি ঘটে। আর্গাস ভীষণ রাগে কর্কশ কণ্ঠে স্প্যানিশ ভাষায় শয়তান বলে কর্ভাসকে গালি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন – ‘কোথায় গেল সে শয়তান পাখি? কর্ভাস! কর্ভাস! মূর্খ পাখি! শয়তান পাখি। নরকবাস আছে তোর কপালে। নরকবাস।।’


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের, ‘কর্ভাস’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

কর্ভাস-অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

কর্ভাস-লেখক পরিচিতি-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – বিষয়সংক্ষেপ

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি-রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর